Ajker Patrika

ড. ইউনূস বাংলাদেশের আকাশে নক্ষত্র: জয়নুল আবদিন ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ০৭
ড. ইউনূস বাংলাদেশের আকাশে নক্ষত্র: জয়নুল আবদিন ফারুক

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কুচক্রীরা, আওয়ামী লীগ প্রেতাত্মারা বাংলাদেশের এই সরকারকে অস্থিতিশীল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের আকাশে একটা নক্ষত্র। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল করে তুলেছেন।’ 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র ফোরাম আয়োজিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও আওয়ামী দোসরদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘যেভাবে ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশের মানচিত্র পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে ওঠানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি, সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান আপনি স্বাধীনতার কোথায় যুদ্ধ করেছিলেন? আপনার দল কোথায় যুদ্ধ করেছে? কোন সেক্টরে আপনার লোক যুদ্ধ করেছে? আপনার লোকেরা কলকাতায় বসেছিল। সেই লোকেরাই ১৬ বছর এই দেশের মানুষের ওপর চেপে বসে মানুষের কণ্ঠকে চিবিয়ে চিবিয়ে হত্যা করেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রিয় নেতা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। যারা মায়ের বুক খালি করেছে, আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যাবে না। আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করেন না কেন, আপনারা বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দিনও আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে আসতে পারবেন না।’ 

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘আপনি মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করে ভারতের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। সীমান্তে যখন আমার ভাইদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেই কথাগুলো আপনি কখনোই আমাদের সংসদে বলার সুযোগ দেননি। আপনি এখন দাপটের সঙ্গে হিন্দুস্তানে বসে আছেন।’ 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে  ফারুক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই, কিন্তু আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে। বাংলাদেশকে কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। বাংলাদেশের মানুষ সজাগ। ২০১৩ সালে যে চুক্তি করেছেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে হবে। যদি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী আপনি হয়ে থাকেন, বন্দী চুক্তি যদি স্বাক্ষর করে থাকেন, তাহলে শেখ হাসিনাকে দেশে হস্তান্তর করুন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচ শর অধিক মামলা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দিল্লিতে বসে মা-মেয়ে যুক্তি করে বাংলাদেশে ড. ইউনূসের সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, বাংলাদেশের মানুষ সেটা কখনোই মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, ভারতের বিরুদ্ধেও মানুষ সজাগ হচ্ছে।’ 

নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ড. ইউনূস কয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে, কখন নির্বাচন হবে, সেটা রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আমাদের আত্মবিশ্বাস হচ্ছে বিএনপি। আমাদের নেতা তারেক রহমান। আমাদের নেতা বলেছেন, বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে চাই. যে নির্বাচন দিনে হবে, যে নির্বাচনে মৃত ব্যক্তি ভোট দেবে না, যে নির্বাচন কমিশন হাসিনার কথায় নির্বাচন করেছে, এমন নির্বাচন কমিশন যাতে বাংলাদেশে আর কোনো দিন না হয়।’ 

তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে ভয় করার কারণ জানিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘১৯৮০ সালে যখন জিয়াউর রহমান ভারত সফরে যান। তখন ইন্দিরা গান্ধী জিয়াউর রহমানকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত নেন, তার সম্পত্তি ফেরত দেন। তখন আমার নেতা জিয়াউর রহমান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল, সে (শেখ হাসিনা) দেশে আসুক, তার সকল সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে। আপনি (শেখ হাসিনা) দেশে এসেছিলেন, এরপর জিয়াউর রহমান কেন খুন হয়েছেন, সেটা জানার ইচ্ছা আমাদের জাগে।’ 

গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শেখ হাসিনা সরকার কেড়ে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আপনাদের ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি। আপনাদের গুলি করেছে, আপনাদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। আপনাদের পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আপনাদের চ্যানেলগুলোকে ডিজিএফআই দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমরা আশা করছি, ড. ইউনূসের এই সরকারের অধীনে আপনারা বুক ফুলিয়ে স্বাধীনভাবে, স্বাধীন কলমে লিখবেন। আপনাদের লেখনী দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ১৬ বছরের অত্যাচার, গুমের, মায়ের বুক খালি হওয়ার ইতিহাস আপনারা তুলে ধরবেন। আমরা এইটুকু আপনাদের কাছে চাই।’

গণতন্ত্র ফোরামের সভাপতি ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও গণতন্ত্র ফোরামের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টার-ছায়ানটে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছায়ানটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানায় সংগঠনটি।

এতে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার আততায়ীদের গুলিতে আহত জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম কাণ্ডারি ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এমনকি হেনস্তার শিকার হন প্রবীণ সম্পাদক নূরুল কবীরও। জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানোত্তর নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের পূর্বপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনা অনভিপ্রেত ও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি। তাই সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা এই মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি ও গুরুতর আঘাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আদর্শ, রাজনীতি ও চিন্তাধারা থাকতে পারে এবং তা নিয়ে মতভেদ ও সমালোচনাও থাকতে পারে। কিন্তু তা প্রকাশ করতে হবে গণতান্ত্রিক উপায়ে, কোনো সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে নয়।

আমরা আরও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, গতকাল ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাস নামের এক গার্মেন্টস শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নিঃসন্দেহে ধর্ম অবমাননা একটি চরম অন্যায় ও গর্হিত কাজ। কিন্তু বিচার নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থা এবং সেই বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। তাই নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনাও গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশপন্থী সাংস্কৃতিক লড়াই এবং আধিপত্যবাদবিরোধী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতীক। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা, তখন একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে উগ্র ও নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তারা জুলাইবিরোধী শক্তি। একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট, এসব ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের অতিদ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মিডিয়াসহ সব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত যে নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও শহীদ ওসমান হাদির স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যেমন আমরা ছাত্র-জনতা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তেমনি মিডিয়াসহ সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রক্ষায়ও জুলাইয়ের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাই দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কেউ যেন জাতিকে বিভক্ত করতে না পারে, সে বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাইয়ের সব ছাত্র-জনতাকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শুক্রবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
আজ শুক্রবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সৃষ্ট নৈরাজ্যকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ মনে করছে বিএনপি। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দলটির পক্ষ থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার রাতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। এর আগে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ‍্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চাচ্ছে। সরকারের নাকের ডগায়ই তারা এই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণও মনে করে, সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশ-বিদেশে সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে চলেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ধরনের ন‍্যক্কারজনক হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করি। শান্তিকামী দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশকে আমরা ধ্বংস হতে দেব না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নৈরাজ্যবিরোধী সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যে ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ফ‍্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নির্বাচন আদায় করেছি, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে আজ আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্যের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার মাঝরাতে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ অগ্নিসংযোগ করেছে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত‍্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক ও ফ‍্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সাহসী ব্যক্তিত্ব দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয়েছে। আমরা এই ঘৃণ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

হাদির হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানায় বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির তীব্র নিন্দা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপির তীব্র নিন্দা

দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এই নিন্দা জানায়।

এতে বলা হয়, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কাপুরুষোচিত এই হত্যাকাণ্ডের আমরা তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের জন‍্য আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল মাঝরাতে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ অগ্নিসংযোগ করেছে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত‍্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক ফ‍্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সাহসী ব‍্যক্তিত্ব দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা করা হয়েছে। আমরা এই ঘৃণ্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং ঘৃণা প্রকাশ করছি।

‘যে ঘটনা প্রমাণ করে, একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ‍্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চাচ্ছে। সরকারের নাকের ডগায়ই তারা এই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণও মনে করে, সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশ-বিদেশে সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়ে চলেছে।

‘উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সব দল প্রতিবাদ করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে চলছে।

‘হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এরূপ পরিস্থিতিতে এ ধরনের ন‍্যক্কারজনক হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করি।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শান্তিকামী দেশবাসীর পক্ষ থেকে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশকে আমরা ধ্বংস হতে দেব না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নৈরাজ্যবিরোধী সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির আজ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

‘যে ঐক্যের মাধ্যমে আমরা ফ‍্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নির্বাচন আদায় করেছি, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে আজ আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ’

বিএনপি হাদির মৃত্যুর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি তালিকাও দিয়েছে:

১) খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারতের হাইকমিশনের কার্যালয় ও বাসভবনে হামলা।

২) প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ঢাকার প্রধান কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

৩) ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আবারও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর।

৪) ছায়ানটের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

৫) ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।

৬) উত্তরাতে ৩২টি দোকান ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

৭) রাজশাহীতে ডেইলি স্টার-প্রথম আলোর কার্যালয় ভাঙচুর।

৮) ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ময়মনসিংহে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা!

৯) চট্টগ্রামের প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় পুনরায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর।

১০) সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ।

১১) নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পরিদর্শনে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ফার্মগেট এলাকায় দ্য ডেইলি স্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের নেতারা।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রথম আলো ভবন পরিদর্শনে করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা ডেইলি স্টারে যান।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ‍্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।

গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওসমান হাদি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি।

মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের উদ্যোগে তাঁকে গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত