Ajker Patrika

বন্যায় ভাসছে দেশ, গুজবে সয়লাব ফেসবুক

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২: ১০
বন্যায় ভাসছে দেশ, গুজবে সয়লাব ফেসবুক

ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল; তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের উজান থেকে ছুটে আসা পানির তোড়। সব মিলিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও কোমরপানি, কোথাও ঘরের চালা ছুঁই ছুঁই; তলিয়েছে সড়ক–মহাসড়ক, রেলপথও। ডুবেছে ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে চাষের মাছ। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত দেশের অন্তত ৯ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর বাসিন্দারা আকস্মিক বন্যায় পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক, পুরোনো ভিডিও, ছবি। এসব ছবি, ভিডিওর কোনো কোনোটি দেখা হয়েছে লাখের ওপরে, শেয়ার হয়েছে হাজারের বেশি। আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে এমন সাতটি দাবি চিহ্নিত করেছে। 

চলমান বন্যায় ভারতীয় চলচ্চিত্র বাহুবলির বাস্তব দৃশ্য দেখা যাওয়ার দাবিতে ছড়াল পুরোনো ছবি

বিস্তীর্ণ জল, অদূরেই দেখা যাচ্ছে নৌকা। এক শিশুকে পানির নিচ থেকে ওপরে তুলে রেখেছে দুটি হাত–এমন দৃশ্যের একটি ছবি গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘এটা বাহুবলির কোনো দৃশ্য নয়।’ ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নোটিশ বোর্ড (National University Notice board)’ নামের ৯ লাখ সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে একই ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এটা “বাহুবলি ২” মুভিতে দেখেছিলাম। বাস্তবে দেখব তা কখনো ভাবিনি।’

চলমান বন্যায় ভারতীয় চলচ্চিত্র বাহুবলির বাস্তব দৃশ্য দেখা যাওয়ার দাবিতে ছড়াল পুরোনো ছবি। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকআজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছবিটির সঙ্গে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কোনো সম্পর্কই নেই। এটি ২০১৭ সালে নাফিস ইমতিয়াজ নামে একজন চিত্রগ্রাহকের তোলা। তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘ছবিটি আমার তোলা ২০১৭ সালে। এটি কোনো বন্যার ছবি নয়। মুন্সিগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী থেকে তোলা, শিশুটি তার ভাইয়ের সঙ্গে খেলা করছিল মাত্র।’ 

ফেনীতে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গরু–ছাগল, পশু–পাখি, ভাইরাল ভিডিওটি মেক্সিকোর

‘রং pencil’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বুধবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘ফেনীতে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গরু–ছাগল, পশু–পাখি।’ ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পানির তীব্র স্রোতে গবাদিপশু ভেসে যাচ্ছে। ভিডিওটি আজ শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত তিন হাজার শেয়ার হয়েছে। দেখা হয়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার বার। 

ফেনীতে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে গরু–ছাগল, পশু–পাখি, ভাইরাল ভিডিওটি মেক্সিকোর। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকঅনুসন্ধানে দেখা যায়, পানির তীব্র স্রোতে গবাদিপশু ভেসে যাওয়ার ভাইরাল ভিডিওটি মেক্সিকোর। রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ‘এফ্রেন গ্র্যান্ডে টেপিক’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ২৮ জুলাই চ্যানেলটিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি সম্পর্কে জানা যায়, এটি মেক্সিকোর লাস ভারাস, কম্পোস্টেলা থেকে ধারণ করা। ওই সময় দেশটিতে হান্না নামের একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এর ফলে দেশটিতে তীব্র বন্যার ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশে বন্যাকবলিত মানুষের অসহায় অবস্থা দাবিতে ছড়াল পাকিস্তানের ভিডিও

‘চারদিকে ঘোলা পানি, হাজারের মতো মানুষ সে পানিতে ভাসছেন’—১২ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সালমান আহমেদ’ নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘একটু মাটির খুঁজে পানিতে দাঁড়িয়ে মানুষ...।’ ভিডিওটি আজ শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৭২ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে ৪৬ হাজার। 

বাংলাদেশে বন্যাকবলিত মানুষের অসহায় অবস্থা দাবিতে ছড়াল পাকিস্তানের ভিডিও। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে ‘ওয়েদার আপডেটস করাচি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত ১৬ জুলাই ভিডিওটি পেজে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল, ‘করাচির সমুদ্রসৈকতে নিষেধাজ্ঞার পর কালরি লেকে ভিড় করছেন মানুষ।’ ইউটিউবেও একই স্থানের একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশে চলমান বন্যার কোনো সম্পর্ক নেই। 

আবেগঘন ক্যাপশনে ফেনীর বন্যার দৃশ্য দাবিতে ছড়াল চার মাসের পুরোনো ভিডিও

‘গুরুজী’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত রাতে ২৩ সেকেন্ডের একটি পোস্ট করে আবেগঘন ক্যাপশনে ইংরেজি ভাষায় লেখা হয়, ‘এটি টাইটানিক চলচ্চিত্রের কোনো দৃশ্য নেই। এটি ফেনী।’ ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি বদ্ধ কামরার সিঁড়িতে প্রবল ঢেউ এসে বারবার আছড়ে পড়ছে। ভিডিওটি আজ শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৭ হাজার বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে প্রায় ৪ হাজার।

আবেগঘন ক্যাপশনে ফেনীর বন্যার দৃশ্য দাবিতে ছড়াল চার মাসের পুরোনো ভিডিও। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটির সঙ্গে চলমান বন্যা বা ফেনীর কোনো সম্পর্ক নেই। রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ইনস্টাগ্রামে ভিডিওটি পাওয়া যায়। গত ১৮ মে ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ভিডিও। ‘ইয়ান’ নামের একটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরের ঢেউ সিঁড়িতে আছড়ে পড়ছিল। 

পাকিস্তানের বাঁধের ভিডিওকে ভারতের দাবিতে প্রচার 

বাংলাদেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়াকে। বলা হচ্ছে, ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় এ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও নয়াদিল্লি এ দাবি ঠিক নয় বলে জানিয়েছে। এমন আলোচনার মধ্যে একটি বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি ভারতের বাঁধ। ‘ভ্লগ ভিলা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গত বুধবার (২১ আগস্ট) এমন একটি বাঁধের ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ৬৯ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে সাড়ে ৬৪ হাজার। 

পাকিস্তানের বাঁধের ভিডিওকে ভারতের দাবিতে প্রচার। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫ আগস্ট ‘হামিদ ৯৫’ নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি থেকে জানা যায়, বাঁধটি ভারতের নয়। এটি পাকিস্তানের টারবেলা বাঁধ। গুগল ম্যাপ থেকেও স্থানটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

গলা অবধি পানিতে ডুবে আছে শিশু, চোখে করুণ চাহনি; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি ভাইরাল 

বন্যার জলে গলা অবধি পানিতে ডুবে আছে শিশু, দুই চোখে তার করুণ চাহনি–এমন একটি ছবি গত বুধবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দেন অভিনেত্রী চিত্র নায়িকা পরীমনি। পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘আল্লাহ! কি করবো আমি! বুকের ভিতর দুমড়ে–মুচড়ে যাচ্ছে। এই চোখের দিকে তাকিয়ে কি করে ঘুমাব!’ তাঁর পোস্ট ছাড়াও ছবিটি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। 

গলা অবধি পানিতে ডুবে আছে শিশু, চোখে করুণ চাহনি; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি ভাইরাল। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকআজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গলা অবধি পানিতে ডুবে থাকা ভাইরাল শিশুর ছবিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ছবি শনাক্তকারী অন্তত দুটি ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণের ফলাফলে ছবিটি এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া ছবিটিতে অন্তত দুটি অসংগতি দেখা যায়। 

অসংগতিগুলো হলো—
১. শিশুটির কপালের অস্বাভাবিক ভাঁজ। এ ধরনের ভাঁজ সাধারণত কপালের মাঝ বরাবর থাকে। ভাইরাল ছবিটিতে এটি চোখের ওপর দেখা যাচ্ছে। 
২. শিশুটির মুখাবয়বে নাক, ঠোঁটের অবস্থানও সাধারণ মানুষের তুলনায় কিছুটা অস্বাভাবিক। এসব অসংগতি ছবিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরির দাবিকে আরও পাকাপোক্ত করে। 

দিগন্ত বিস্তৃত পানি, গাছ আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা, দুই বছরের পুরোনো ভিডিও ভাইরাল 

দিগন্ত বিস্তৃত পানি, আশপাশে কোথাও মাটির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই একটি নারিকেল সদৃশ গাছে ওঠে বেশ কয়েকজন মানুষ বাঁচার চেষ্টা করছেন। মুহাম্মদ আরমান হোসাইন নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১১ সেকেন্ডের এমন এক ভিডিও চলমান বন্যার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ শুক্রবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ৯২ হাজার বার দেখা হয়েছে। 

দিগন্ত বিস্তৃত পানি, গাছ আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা, দুই বছরের পুরোনো ভিডিও ভাইরাল। ছবি: আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেকভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, একই ভিডিও ইতিপূর্বে পাকিস্তান, আরব আমিরাত, মিয়ানমারের ঘটনা দাবিতে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটির সবচেয়ে পুরোনো সংস্করণ পাওয়া যায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাইয়ে ‘লাক্সারি কার ভিডিওজ’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত