Ajker Patrika

ঘুষ নেওয়া ও সেবা না দেওয়ার অভিযোগ ইসলামপুর থানার এসআইয়ের বিরুদ্ধে

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৩: ৫৯
ঘুষ নেওয়া ও সেবা না দেওয়ার অভিযোগ ইসলামপুর থানার এসআইয়ের বিরুদ্ধে

জামালপুরের ইসলামপুর থানায় কর্মরত এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকাজে ঘুষ নেওয়া ও সেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতিকার চেয়ে গত সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বরাবর এক ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ইসলামপুর থানায় কর্মরত অভিযোগ ওঠা এসআই হলেন মো. আব্দুল কাদির খন্দকার। অভিযোগ দেওয়া ব্যবসায়ী হলেন আকুল হোসেন। তিনি ইসলামপুর পৌর শহরের মার্কাজ মসজিদ রোডের বিজয় ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এবং পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলার দুরমোঠ ইউনিয়নের কলাবাঁধা গ্রামের খোরশেদ আলীর ছেলে। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের হাড়িয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মলমগঞ্জ পোলট্রি ফার্মের মালিক জাহাঙ্গীর আলম সম্রাট পৌর শহরের মার্কাজ মসজিদ রোডের আকুল হোসেনের বিজয় ট্রেডার্স নামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে মুরগি ব্যবসা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মালামাল নগদ টাকায় এবং বাকিতে কিনে আসছিলেন। একপর্যায়ে মালামাল কেনা বাবদ জাহাঙ্গীর আলম সম্রাটের কাছে ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পান আকুল হোসেন। কিন্তু তাঁকে পাওনা টাকা দিতে বিভিন্ন টালবাহানা করে আসছিলেন সম্রাট। টাকা চাওয়ার একপর্যায়ে আকুল হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি দেন সম্রাট। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলম সম্রাটকে বিবাদী করে জামালপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসলামপুর সিআর আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আকুল হোসেন। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান এসআই আব্দুল কাদির। তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আকুল হোসেনের কাছে এসআই আব্দুল কাদির ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে কাজ হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন। আকুল হোসেন প্রথমে ২ হাজার টাকা এসআই আব্দুল কাদিরকে দেন। কিন্তু কম টাকায় কাজ হবে না বলে আকুল হোসেনকে জানিয়ে দেন ওই এসআই। একপর্যায়ে অনেকটাই বাধ্য হয়ে আকুল হোসেন ওই এসআইকে ৬ হাজার টাকা দেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দেওয়ায় বিবাদীর পক্ষাবলম্বন করে মামলায় সাক্ষীদের মতামত না নিয়ে এসআই আব্দুল কাদির আদালতে মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অভিযোগপত্র সূত্রে আরও জানা গেছে, চারটি ধারায় বিবাদীর বিরুদ্ধে আকুল হোসেন মামলা করলেও মাত্র একটি ধারা বিবাদীর বিরুদ্ধে গত ২১ ফেব্রুয়ারি আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিবাদী সম্রাটের কাছে বকেয়া ৭ লাখ ৪৭ টাকার বদলে ১ লাখ ১৩ টাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করলেও বিবাদীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ধারা আনেননি এসআই আব্দুল কাদির খন্দকার। তবে বিবাদীর বিরুদ্ধে ৫০৬ ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। টাকা নিয়েও সঠিক প্রতিবেদন না দেওয়ার বিষয়ে কথা বলায় আকুল হোসেনকে এসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতির হুমকি দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। 

ভুক্তভোগী অভিযোগকারী ব্যবসায়ী আকুল হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে আমার কাছে এসআই আব্দুল কাদির ২০ হাজার টাকা দাবি করলে অনেকটাই বাধ্য হয়ে দুই দফায় তাঁকে ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। কিন্তু দাবি অনুযায়ী ঘুষের টাকা না দেওয়ায় বিবাদীর পক্ষাবলম্বন করে মামলার সাক্ষীদের মতামত গ্রহণ না করে আদালতে মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এসআই আব্দুল কাদির খন্দকার। এতে আমি ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ নিয়ে আইনি প্রতিকার চেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’ 

অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ইসলামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদির খন্দকার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আইন অনুযায়ী তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমি নির্দোষ।’ 

ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিত দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসআই আব্দুল কাদির খন্দকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অনেকগুলো অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা অভিযোগকারীকে ডাকব। অভিযোগের বিষয়ে বাদীসহ সাক্ষীদের কাছে বিস্তারিত শুনব। তারপর আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতাকে মাথায় গুলি, অবস্থা গুরুতর

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০০
জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদার (৪০)। ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদার (৪০)। ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির প্রতিনিধি মো. মোতালেব শিকদারকে (৪০) দুর্বৃত্তরা গুলি করেছে।

আজ সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা বেসরকারি গাজী মেডিকেলের সামনে তাঁকে গুলি করা হয়।

গুলিবিদ্ধ মোতালেবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুলি তার মাথায় বিদ্ধ হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনিমেষ মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতাল পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা বিস্তারিত পরে জানাব।

বিস্তারিত আসছে...

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণা, নেতৃত্বে রিয়াজ-সজল

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমান সজল। ছবি: সংগৃহীত
আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব আনিসুর রহমান সজল। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে ২১৬ সদস্যবিশিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে উন্মুক্ত কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব করা হয়েছে আনিসুর রহমান সজলকে। কমিটিতে বাদ পড়েছেন সাবেক সদস্যসচিব সোহেল রানা। কাজী রিয়াজ আগের কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া আনিসুর রহমান সজল আগের কমিটির মুখ্য সংগঠক ছিলেন।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, আহ্বায়ক রিফাত রশিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। আগামী ছয় মাসের জন্য এই কমিটির মেয়াদ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আজ সোমবার সকালে নতুন কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেন আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ।

২১৬ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল চৌধুরী, মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব সাজ্জাদ হোসেন, মুখ্য সংগঠক মোহাম্মদ সোহেল ইসলাম ও সিনিয়র সংগঠক শাহীন বাশার। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন ৪০ জন, যুগ্ম সদস্যসচিব ৩৭, সহমুখপাত্র ৩২, সংগঠক ৪০ এবং সদস্য রয়েছেন ৬০ জন।

নতুন করে সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আনিসুর রহমান সজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই কমিটির সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ফরিদপুরে জুলাইয়ের চেতনাকে টিকিয়ে রাখা। জুলাই যোদ্ধাদের আবেগ, অনুভূতি, চাওয়া ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাব আমরা। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ফরিদপুর জেলাকে বৈষম্য মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া আমাদের প্রত্যয়।’

কমিটির অগ্রযাত্রা নিয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে কাজী রিয়াজ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম অনেক শহীদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে সৃষ্টি এবং এর দায়বদ্ধতা অনেক। কমিটিতে যারা আসছে, তারা ইনশা আল্লাহ সুন্দর এবং জবাবদিহিমূলক এক বাংলাদেশ গড়তে কাজ করে যাবে। এই প্ল্যাটফর্ম অরাজনৈতিক, কিন্তু বৈপ্লবিক ঘরানার কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখবে। কমিটিতে যাদের নাম আসছে বা আসে নাই, তাদের সকলের সহযোগিতা চাই।’

উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ছয় মাসের জন্য ৬০৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন কাজী রিয়াজ ও সদস্যসচিব ছিলেন সোহেল রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল, অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি 
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সরকারি খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক স মিলমালিকের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার রশিদ ফকিরের ব্রিজ থেকে সাহেবেরহাট সড়কের রত্নপুর ইউনিয়নের ঐচারমাঠ প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে আকুল বালার মালিকানাধীন স মিলের পূর্ব পাশে একটি সরকারি খালের মধ্যে প্রায় ১০০ হাত দীর্ঘ দোকানঘর নির্মাণ শুরু করেন তিনি। প্রায় দুই মাস আগে নির্মাণকাজ শুরু হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে।

এরপর রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারীকে সরেজমিন পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে সময় দোকানঘর নির্মাণ না করার মর্মে স মিলমালিকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও নেওয়া হয়। তবে কিছুদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর আবারও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন আকুল বালা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণ করা হলে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধানখেতে পানি সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অভিযুক্ত আকুল বালা বলেন, ‘খালের মধ্যে ব্যবসার জন্য দোকান ঘর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অফিস থেকে দোকান ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। তাই আমি বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছি।’

স্থানীয় হরেন বালা, হরশিদ রায় জানান, খালের মধ্যে ১০০ হাত লম্বা একটি ঘর দুই মাস আগে নির্মাণ শুরু করেছিলেন আকুল বালা। প্রশাসন ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়ায় পরেও তাঁদের বাধা উপেক্ষা করে আকুল বালা নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রত্নপুর ইউনিয়নের সরকারি ভূমি কর্মকর্তা উত্তম ব্যাপারী বলেন, খালের মধ্যে দোকানঘর নির্মাণের কাজ আগে একবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার কাজ হলে সরেজমিন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজীদ সরদার জানান, বন্ধ করে দেওয়া দোকানঘর পুনরায় নির্মাণ করা হলে সরেজমিন পরিদর্শন করে তা ভেঙে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা ওয়াসার দুর্নীতি: ঘুষে বন্ধ বকেয়া বিলের চাপ

  • ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি
  • সংস্থাটির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা
  • কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা ওয়াসার ৪৪ হাজার ১১ জন গ্রাহক। এর মধ্যে ১০ হাজার গ্রাহকই পানির বিলের একটি পয়সাও পরিশোধ করেননি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব মিলিয়ে সংস্থাটির বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ঘুষ নিয়ে ফিরে আসেন। ফলে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। এ সময় বিল পরিশোধে গ্রাহকদের সতর্ক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো বকেয়া আদায়ে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। এ সুযোগটি নিচ্ছেন সাধারণ কর্মচারীরা। তাঁরা কর্মকর্তাদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ ফাঁকি দেওয়াসহ নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশও মানছেন না।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, কিছু গ্রাহক বিল কিস্তি করে নিয়ে গেলেও সেই কিস্তি পরিশোধ করেন না। অনেকের নাম-ঠিকানা ভুয়া থাকায় তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রাহকসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই বিল পরিশোধ করেন না। অনাদায়ি গ্রাহকের অধিকাংশ উচ্চবিত্ত। এ ছাড়া বয়রা মহিলা হোস্টেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের বিল বকেয়া রয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের গঠিত আদায়কারী টিমের সদস্য ও বিল প্রদানকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় লাখ থেকে ২ লাখের বেশি টাকা বকেয়া রয়েছে। প্রতি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠানো হলেও তারা আদায়কারীদের ৩-৪ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ প্রতিটি গ্রাহকের বাসাবাড়িতে মিটার রিডিং এবং বিল পৌঁছে দেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। অথচ এরা ঠিকমতো বিল পৌঁছান না। আবার তিন-চার মাসের বিল একসঙ্গে পাঠিয়ে ঘুষ-বাণিজ্য করেন, এই অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ‘আমির সুলতান’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প কর্মকর্তা সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘আগে দুর্নীতি হতো কি না জানি না। তবে এখন ডিজিটাল হওয়ায় সেই সুযোগ নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি গ্রাহকের মিটারের ছবি তুলে অনলাইনে এন্ট্রি দেওয়া এবং প্রতি মাসে পানির বিল গ্রাহকদের হাতে পৌঁছানো। আর এ কাজের জন্য চারজন সুপারভাইজারসহ ৩৪ জন কর্মী কাজ করছে।’

প্রকল্প কর্মকর্তা স্বীকার করে বলেন, ‘অনেক সময় অফিস থেকে আদায়কারীরা গেলে গ্রাহকেরা মাঝেমধ্যে আমাদের ফোন দেন। এটা কোনো অন্যায় নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠান বিল আদায় করে না, কাজেই আমরা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে ওয়াসার বাণিজ্য ব্যবস্থাপক খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘বকেয়া আদায়ে নিয়মিত মাইকিং, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, নোটিশ প্রদান এবং বাড়ি বাড়ি লোক পাঠানো হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার দু-একটি অভিযোগ পাওয়া গেলেও তা প্রমাণিত হয়নি।’

খাদেমুল আরও বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ বকেয়া ২ লাখের বেশি নয়। বকেয়া অনাদায়ির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ে গ্রাহকেরা গভীর নলকূপ স্থাপন করছে। এ ক্ষেত্রে ওয়াসার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না। গভীর নলকূপে মাসে খরচ হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা। আর ওয়াসাকে দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। সে কারণে কিছু গ্রাহক এখন অনুমোদন ছাড়াই গভীর নলকূপ বসাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওয়াসা।’

ওয়াসার পরিচালক শেখ দিদারুল আলম বলেন, ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওয়াসার বোর্ড সভায় বিষয়টি তোলা হয়েছিল। সেখানে আউটসোর্সিং ঠিকাদার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। অনেকেই পানির বিল দেয় না। বিল পরিশোধের জন্য সতর্ক করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত