Ajker Patrika

সিলেটে চিনি ছিনতাইকাণ্ডের ফোনালাপ ফাঁস, ছাত্রলীগের ২ কমিটি বিলুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
সিলেটে চিনি ছিনতাইকাণ্ডের ফোনালাপ ফাঁস, ছাত্রলীগের ২ কমিটি বিলুপ্ত

চিনি ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অপরাধের সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর শাখা কমিটি বিলুপ্ত করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। আজ শুক্রবার এই দুই ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা এবং বিয়ানীবাজার পৌর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধ করলে বিচার হবেই, কথা হচ্ছে দু-একজনের দায়ভার সবাইকে নিতে হলো। দীর্ঘ ২০-৩০ বছর পর কমিটি হয়েছিল বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌরসভার, সেই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত ছিল এই দায়িত্ব আরও বেশি সতর্কতার সঙ্গে বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে পালন করার। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে সবাই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন এবং সকল ধরনের অপকর্ম থেকে নিজে এবং নিজেদের কর্মীদের বিরত রাখতে সক্ষম হবেন, এটি কিন্তু সকলের জন্যই সতর্কবার্তা। সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানাই।’ 

এর আগে গত ৮ জুন বিয়ানীবাজারে সরকারি নিলামে কেনা ‘২৪ লাখ টাকার চিনি’ চিনি গোদামে নিয়ে আসার পথে লুট করে নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী। এই ঘটনাতেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নাম উঠে আসে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ১১ জনের নামে মামলা হয়েছে। ৮০ বস্তা চিনি উদ্ধারের পাশাপাশি পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক-সহসভাপতির ৬ মিনিট ২ সেকেন্ডের ফোনালাপ ভাইরালও হয়েছে। 

সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার এই ফোনালাপে চিনিকে তারা ‘মাল’ হিসেবে অভিহিত করছেন। কথোপকথনে জড়িত হিসেবে নাম এসেছে উপজেলা, পৌর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাদের। ছিনতাই পরবর্তী কে কত বস্তা চিনি নিয়েছেন, তাও অডিও রেকর্ডে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনা থেকে রেহাই পেতে একজন অপরজনের সহায়তা চেয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। কীভাবে মামলা থেকে বাঁচা যায়, তাও তাদের আলোচনায় স্থান পেয়েছে। ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের নিজেদের কথোপকথনে ওঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট অনেকের নাম। চিনি ছিনতাই এবং ফোনালাপ ভাইরাল হওয়ার ঘটনার আলোচনা এখন সিলেটবাসীর মুখে মুখে। 

শুধু এখানেই শেষ নয়, চিনি ছিনতাই পরবর্তী এর মালিক বদরুল ইসলামকে মামলা না দিতে কারা ভয়ভীতি দেখিয়েছেন, কারা বিষয়টি প্রভাবিত করতে চেয়েছেন কিংবা সমঝোতার নামে নাটক করেছেন কারা-তাও ভয়েস রেকর্ডে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সাগর, তাহমিদ, মুন্না, জুনেদ, সাব্বির, রুবেল, সালা উদ্দিন, সাকেল, নাবিলসহ চিনি ভাগাভাগিতে কারা ছিলেন তাদের নাম প্রকাশ পেয়েছে।

কথোপকথনের একপর্যায়ে একজন অন্যজনকে বলছেন, ‘ছোট গাড়ি অইলে খাইলিলে অসুবিধা আছিলনা। বড় গাড়ি হওয়ায় সমস্যা অই গেছে। তা ছাড়া সিএনজি ফোরষ্ট্রোকে বোঝাই করে চিনি নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।’ তাঁরা এও বলছেন, ‘৪০০ বস্তা চিনি থেকে যদি ২০০-২৫০ বস্তা ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আপাতত বাঁচা যাবে।’ 

মামলায় কোন আসামির নাম থাকবে আর কার নাম বাদ যাবে তাও বিয়ানীবাজার থানার ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে রেকর্ডে ফাঁস হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সুমন নামের একজনের নামও মধ্যস্থতায় এসেছে। সিলেট শহরে ৮০-১০০ বস্তা চিনি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই চিনি কার কাছে গেছে তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। 

চিনির মালিক বদরুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, ভিডিও ফুটেজ এবং কথোপকথনের এমন রেকর্ড থাকার পরও পুলিশ প্রকৃত আসামিদের মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন। বর্তমান মামলায় ভয়েস রেকর্ডে যাদের নাম এসেছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তিনি অবিলম্বে আত্মস্বীকৃত ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন। 

বদরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় চারখাই বাজারে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত কয়েক দিনে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী, বিভিন্ন স্থান থেকে ১ হাজার ৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। ওই চিনি থেকে ৪০০ বস্তা চিনি তিনি জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। শনিবার দুপুরে একটি ট্রাক বোঝাই করে বিক্রীত চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তিনি অভিযোগ করেন, ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী চক্র একটি প্রাইভেটকার, ৪টি মোটরসাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনি বোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। ছিনতাই হওয়া চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা। ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 

পুলিশ জানায়, ছিনতাই ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি, একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১১০৭০৯) উদ্ধার ও এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া) মো. খলিল মিয়ার ছেলে মো. লিটন মিয়া (২৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১)। এর মধ্যে লিটন পেশাদার অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় ডাকাতির আরও মামলা আছে। 

ফোনালাপে ‘মামলায় কোন আসামির নাম থাকবে, আর কে বাদ যাবে তাও থানার ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’ এমন কথার বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাদী এজাহার অনুযায়ী মামলা হয়েছে। এসব মিথ্যা কথা। ফোনালাপসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যাদের নাম আসছে, সব কটি নাম আমরা নোট করছি। সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি আওতায় আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত