নাব্যতা-সংকট, সরু চ্যানেল, পর্যাপ্ত নিরাপদ জেটি না থাকা—এ তিন কারণে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নদীবন্দর। ভাটার সময় নদীর পানি কমে গেলে জাহাজের তলা মাটিতে মিশে যায়। ফলে অনেক সময় জাহাজ কাত হয়ে পড়ে, ফাটল ধরে তলায়, ঘটে জাহাজডুবির ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এক দশকে ভৈরব নদে অর্ধশতাধিক জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি না হলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় নওয়াপাড়া নোনা ঘাট এলাকায় ভৈরব নদের ঘাটে এমভি সাকিব বিভা-২ নামে একটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার কয়লা ছিল। জানা গেছে, মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া থেকে ৬৮৫ টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি এসেছিল। নোঙরের জন্য ঘোরানোর সময় মাটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে তলদেশ ফেটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি ভাটপাড়া এলাকায় ভৈরব নদের ঘাটে ৮০০ টন কয়লা নিয়ে এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ নামের আরেকটি জাহাজ ডুবে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাটার সময় জাহাজটি কাত হয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে সেটি তলিয়ে যায়।
আমদানিকারকেরা জানান, নওয়াপাড়া বন্দরে জাহাজজটের চিত্র নিত্যদিনের। ঘাটে নোঙরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত। অপেক্ষমাণ জাহাজ ভেড়ার জন্য অপ্রতুল ঘাট, আর নাব্যতা-সংকটের কারণে মোংলা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলোর এই দীর্ঘ অপেক্ষা। বন্দর উন্নয়নে বারবার দাবি জানানো হলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সার ও খাদ্যশস্য আমদানিকারক আদিত্য মজুমদার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। নিজেরাই ঘাট তৈরি করে নিচ্ছি। পণ্য আমদানি বোঝাই জাহাজের হার বাড়লেও উন্নয়ন হচ্ছে না। শুধু ট্যাক্স দিয়েই যাচ্ছি। কোনো প্রকার সুবিধা পাচ্ছি না।’
নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, ‘ভৈরব নদকে ঘিরে নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। আমরা ঠিকমতো ট্যাক্স দিচ্ছি। কিন্তু নদীবন্দরের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে ছোট জাহাজ এলেও ঘাটে ভিড়তে পারে না। এ জন্য আমরা গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি করেছিলাম। কিন্তু তা করা হয়নি।’
খুলনা নৌপরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব থেকে বড় নদীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র নওয়াপাড়া বন্দরের এ অবস্থা দীর্ঘদিনের। নাব্যতা-সংকট, পানি কমতে কমতে ভৈরব নদ ছোট হয়ে আসছে। সঠিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বারবার বলেছি। তবে এর সমাধান হচ্ছে না।’
তবে বন্দরের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘একে নিয়ে আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন হলে আরও বেশি জাহাজ ভিড়তে পারবে।’
এ বিষয়ে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বন্দরের নানা সমস্যা সংসদে প্রতিমন্ত্রীর নজরে এনেছি। তিনিও দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা দ্রুত বন্দরকেন্দ্রিক সব সংগঠনকে এক জায়গায় করব। কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটা নিয়ে মতামত নেব।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে