Ajker Patrika

রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন থাকতেও অস্ত্র নিয়ে রোগী দেখতেন রায়হান

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৪: ৩০
রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন থাকতেও অস্ত্র নিয়ে রোগী দেখতেন রায়হান

শ্রেণিকক্ষে ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় গ্রেপ্তার সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক)। তিনি ছিলেন রামেক শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি রামেক হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করেছেন। এ ছাড়া পরে কিছুদিন গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছিলেন। এসব হাসপাতালে তিনি অস্ত্র নিয়েই রোগী দেখতেন। অস্ত্র দেখিয়ে অনেককে ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে তিনি রামেক হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করেন। ওই সময়ই তাঁর হাতে একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। একাধিকবার তিনি অস্ত্র উঁচিয়েছেন রোগীর স্বজনদের দিকে। তবে কথায় কথায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট কর্মসূচির কারণে জিম্মি হাসপাতাল কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যদিও রায়হান শরীফের কারণে রামেক হাসপাতাল উত্তপ্ত হয়েছে বারবার। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রামেক ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন শফিকুল ইসলাম অপু। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কামাল হোসেন। তাদের কমিটিরই সহসভাপতি ছিলেন রায়হান শরীফ। রায়হান শরীফ সভাপতি শফিকুল ইসলামের অনুসারী ছিলেন। সে সময় রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্রলীগের হাতে। ছাত্রলীগ আর ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ এক হয়ে হাসপাতালে কথায় কথায় রোগীর স্বজনদের পেটাত। ওই সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মুখপাত্রও ছিলেন ডা. রায়হান শরীফ। 

অস্ত্রবাজ রায়হান ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন ওই ওয়ার্ডে জয় (১৮) নামের এক রোগী মারা যান। তখন রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন, জয়কে হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বারবার ডাকা হলেও কেউ যাননি। 

বিনা চিকিৎসায় জয়ের মৃত্যুর পর স্বজনেরা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রামেক ছাত্রলীগের সহসভাপতি রায়হান শরীফের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি তাঁদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে অস্ত্র বের করেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের আরও ১০-১২ জন নেতা-কর্মী চলে আসেন। তাঁরা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করেন। 

এর এক সপ্তাহ পর ১৩ নভেম্বর হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহসিন আলী (৭৫) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে বিনা চিকিৎসায়। এই ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন রামেক ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু। মহসিনের মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০) ও আনারুল ইসলাম (৩০) হাসপাতালে আহাজারির সঙ্গে চিকিৎসকদের অভিশাপ দেন। 

এ সময় শফিকুল ইসলাম অপু এই রায়হান শরীফসহ আরও ১০-১২ জন ইন্টার্ন চিকিৎসককে ফোন করে ডাকেন। রায়হান শরীফ সেদিনও দুই ভাইয়ের দিকে অস্ত্র তাক করেন। এ সময় তাঁদের মা রহিমা বিবি (৬৫) দুই ছেলের মাঝে দাঁড়িয়ে যান। পরে দুই ভাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সেদিন পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

পরে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রহিমা বিবি বলেছিলেন, ‘একজন ইন্টার্নির হাতে পিস্তল ছিল। সে আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন ছেলেরা বলছে, ‘মারেন, বাপরে মারলেন, আমরাকেও মারেন।’ ’ পরে গুলি না করে আমার ছেলেদের পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাদের পুলিশে দেওয়া হয়। তাদের বাবার লাশ মর্গে পড়ে থাকে।’ 

এ ঘটনার দুই দিন পর ১৫ নভেম্বর হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নাহিদ হোসেন (২৬) ও সাদ্দাম হোসেন (৩০) নামে রোগীর দুই স্বজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের পর পুলিশের হাতে তুলে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। ভর্তির এক দিন পরও রোগী জয়নাল হোসেনের (৭০) চিকিৎসা হচ্ছিল না বলে সেদিন ওই দুজন ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ছাত্রলীগের কর্মী কে এম সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। এ সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তাঁদের মারধর করা হয়। সেদিনও সালাউদ্দিনের পক্ষে ওয়ার্ডে গিয়ে দুজনকে মারধর করেন রায়হান শরীফ। 

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রায়হান শরীফ ছাত্রজীবনেই একটা মেশিন (অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র) সংগ্রহ করে কাছে রাখত। ওই সময় শিবির দমনে তার অবদান ছিল। সে কারণে ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতাদের সুনজরে থাকত। রায়হানের সাহসে সে সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও খুব বেপরোয়া ছিল। কয়েক দিন পরপরই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ঝামেলা হতো। রায়হান অস্ত্র দেখিয়ে বেড়াত। কলেজেও তখন শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ছিল। ছাত্রলীগের এই গ্রুপটা প্রভাবশালী এক চিকিৎসক ও শিক্ষককে সমর্থন দিত। তাই হাসপাতালে যত ঝামেলা হতো ওই শিক্ষকই সব ম্যানেজ করতেন।’ 

রামেক ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন এখন সরকারি চাকরিজীবী। গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রজীবনে রায়হানের অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রায়হান ভাই আমার এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন। তাই আমি বেশি কিছু জানি না। তবে সংগঠন করতে গেলে অনেক কিছুই রাখা লাগে। তিনি একটু পাগলাটে-রগচটা টাইপের মানুষ ছিলেন। পার্টি টাইমে মজা-মাস্তি করতেন। পরে বিসিএস দিয়ে তো স্বাভাবিক হচ্ছিলেন। হঠাৎ কাল নিউজে দেখলাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রকে গুলি করার ঘটনা।’ 

রামেক ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু বলেন, ‘রায়হান শরীফ ছাত্রলীগের জন্য নিবেদিত ছিলেন। ছাত্রজীবনে সবারই কিছু না কিছু ঘটনা থাকে। পরে তো রায়হান বিসিএস ক্যাডার হলেন। বিয়েও করেছিলেন। পরে বিয়েটা ডিভোর্স হয়ে যায়। অনেক দিন তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। এখন তাঁকে নিয়ে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে দেখছি।’ 

রায়হান শরীফ ২০২১ সালে বিশেষ বিসিএস দিয়ে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হন। সেখানে শুরু থেকেই তিনি অস্ত্র দেখিয়ে বেড়াতেন। প্রকাশ্যেই চলাফেরা করতেন অস্ত্র নিয়ে। গত সোমবার শ্রেণিকক্ষে তিনি আরাফাত আমিন তমাল (২২) নামের এক ছাত্রকে গুলি করেন। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। 

এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম তাঁর অস্ত্রটি লাইসেন্স করা। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করার প্রয়োজন মনে করিনি। ছাত্রকে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর এখন শুনছি তার অস্ত্র অবৈধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২৭-৩০ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলী টানেলে নিয়ন্ত্রিত হবে যান চলাচল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হবে।

আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা শিকদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় প্রয়োজন অনুযায়ী ‘পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা’ অথবা ‘আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা’ টিউবের ট্রাফিক ডাইভারসনের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখা হবে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যমান ট্রাফিকের চাপ অনুযায়ী টানেলের উভয়মুখে যাত্রীদের সর্বনিম্ন ৫ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এদিকে কর্ণফুলী টানেলের নিরাপদ ও কার্যকর রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে যাত্রী ও চালকদের সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যৌনকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ, কুয়াকাটায় জামায়াত নেতা বহিষ্কার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত
বহিষ্কার করা জামায়াত নেতা আ. হালিম। ছবি: সংগৃহীত

নিজের বাড়িতে যৌনকর্মীদের (পতিতা) আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কুয়াকাটা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. শহীদুল ইসলাম।

জামায়াত নেতারা বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিশেষ রোকন বৈঠক আহ্বান করা হয়। বৈঠকে উত্থাপিত অভিযোগ ও প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিষয়টি জামায়াতে ইসলামীর নীতিমালা ও আদর্শ পরিপন্থী। তাই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আ. হালিমকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান, লতাচাপলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির রাসেল মুসুল্লি, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আল আমিন মৃধা, যুব জামায়াতের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সিকদার এবং জামায়াতের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন ফরাজি।

কুয়াকাটা পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মোহাম্মদ মাঈনুল ইসলাম মন্নান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। এখানে ব্যক্তির চেয়ে সংগঠনের আদর্শ ও নৈতিকতা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো নেতার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠলে তা দলীয়ভাবে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সংগঠনের সুনাম ও আদর্শ রক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ রোকন বৈঠক ডেকে কুয়াকাটা পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী করতে হলে অবশ্যই সাংগঠনিক নিয়মকানুন ও দলীয় নীতিমালা মেনে চলতে হয়।’

তবে অভিযুক্ত মো. আ. হালিম তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাসায় ছয়টি পরিবার ভাড়া থাকে। এর মধ্যে একটি বাসা মা-মেয়ে পরিচয়ে চারজন নারী দুই মাস আগে ভাড়া নেন। তাঁরা কোথায় কী কাজ করেন, তা আমার জানার বিষয় নয়। আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি শিগগির সংবাদ সম্মেলন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দলবদলেও রক্ষা পেলেন না ছাত্রলীগ নেতা, ডিবির হাতে আটক

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ শাহীন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপিতে যোগদানের এক দিন পার না হতেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কুমিল্লা উত্তর জেলার সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মিয়াকে (৩৪) আটক করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলার ১ নম্বর বড়শালঘর ইউনিয়নের সৈয়দপুর বাজারে তাঁর নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘শাহীন ফার্মেসি’ থেকে ডিবি ও থানা-পুলিশের যৌথ অভিযানে তাঁকে আটক করা হয়।

মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বড়শালঘর গ্রামের মৃত শহিদ মেম্বারের ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং কুমিল্লা-৪ দেবিদ্বার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের আস্থাভাজন ছিলেন।

এর আগে গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার পৌর এলাকার গুনাইঘরে ‘শহীদ জিয়া মিলনায়তনে’ আনুষ্ঠানিকভাবে শালঘর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপিতে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, টানা চারবারের সাবেক এমপি ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির হাতে তাঁরা বিএনপির পতাকা তুলে দেন। যোগদানকারীদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহীন মিয়াও ছিলেন।

ওই যোগদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয় আওয়ামী লীগের বড়শালঘর ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম জারু চেয়ারম্যানের নির্দেশে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য আলম হাজারীর নেতৃত্বে। যোগদানকারীরা সবাই সাবেক আওয়ামী লীগ এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সমর্থক ছিলেন।

এ বিষয়ে সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী ইউপি সদস্য আলম হাজারী বলেন, ‘শাহীনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেন তাঁকে আটক করা হলো, সেটিও আমরা জানি না।’

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রেজভিউল আহসান মুন্সি বলেন, ‘মোহাম্মদ শাহীন মিয়া আমাদের পুরোনো কর্মী। বিগত সরকারের আমলে নিরাপত্তার কারণে তিনি ভিন্নভাবে চলাফেরা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার শাহীন মিয়াকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। অভিযানে থাকা ওসি (তদন্ত) মঈনুদ্দিনের কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।

মঈনুদ্দিন বলেন, ‘শাহীনকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। কোন মামলায় তাঁকে আটক দেখানো হয়েছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।’

এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মো. শামসুল আলম শাহ বলেন, গ্রেপ্তারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎আরমানিটোলায় বহুতল ভবনে আগুন‎, ৪০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

‎রাজধানীর আরমানিটোলার বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠতলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট। সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে আজ সকালে খুদে বার্তায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।

‎‎ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া যায়। খবর পাওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস
বাবুবাজার এলাকায় হাজী টাওয়ার নামের ১৪ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: ফায়ার সার্ভিস

হাজী টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সদরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে ২টি, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে ৫টি এবং সূত্রাপুর ফায়ার স্টেশন থেকে ২টিসহ মোট ৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে। পরে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।‎

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত