Ajker Patrika

ঝড়-বন্যা থেকে রেহাই পেতে যা করেন ফিলিপাইনের আদিবাসীরা

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ০১
ঝড়-বন্যা থেকে রেহাই পেতে যা করেন ফিলিপাইনের আদিবাসীরা

ফিলিপাইনের জলাভূমি অঞ্চলে বাস মানোবো আদিবাসীদের। প্রতিবছর কয়েক ডজন ঝড়-বন্যার মুখোমুখি হয় তারা। কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো সামলেও নেয়। কিন্তু কী কৌশল ব্যবহার করে সফল হচ্ছে মানোবোরা? এখান থেকে কী অন্যদেরও শেখার কিছু আছে? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন অবলম্বনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে এ লেখাটিতে।

দক্ষিণ ফিলিপাইনের মানোবো আদিবাসীদের একজন দলনেত্রী মারিতেস বাবানতোর মনের পর্দায় এখনো উজ্জ্বল ২০১২ সালে তাঁদের গ্রামে আঘাত হানা টাইফুনের স্মৃতি।

নদী, হ্রদ আর জলা নিয়ে গঠিত আগুসান মার্শল্যান্ডে বাবানতো এবং তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেদের বাস। ওই সময় প্রবল বৃষ্টিতে জলাভূমির পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ১০ মিটার (৩৩ ফুট)। অর্থাৎ একটি তিনতলা দালানের সমান। তবে গ্রামবাসীর বাড়িগুলো এই পরিস্থিতিতেও জলের ওপর ভেসে থাকে। প্রাচীন পন্থাই তাদের বাঁচিয়ে দিল ডুবে যাওয়া থেকে।

‘আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা কখনো এমন ঝড় দেখিনি। বাতাসের গর্জন ছিল প্রচণ্ড। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল। বেশি নিরাপত্তার আশায় সবাইকে ভাসমান হলের মধ্যে জড়ো করেছিলাম আমরা।’ বলেন মারিতেস বাবানতো।

বারোতো নামে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ক্যানু বা নৌকা চালাচ্ছেন এক মানাবো নারী।টাইফুন বোফা কিংবা টাইফুন পাবলো নামে পরিচিত প্রবল ওই ঝড়ে দুই হাজারের মানুষের প্রাণ যাওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোসহ বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয় ফিলিপাইন। কিন্তু বাবানতো এবং তাঁর প্রতিবেশীরা ঝড়ের পরে আবিষ্কার করেন তাঁদের ঘরগুলো অক্ষত আছে। স্বাভাবিক ঝড়-বন্যা মোকাবিলায় ভাসমান প্ল্যাটফর্ম বা মাচার ওপর তৈরি করা হয় এগুলো। তাঁদের কৌশল এমনকি প্রবল শক্তিশালী টাইফুনের বিরুদ্ধেও কাজে লেগে যায়।

মানোবোদের ভাসমান বাড়িসহ অন্য উদ্ভাবন এবং অনুশীলন তাদের ডাঙা ও জলের রাজ্যের মিশ্রণে গড়ে ওঠা আশ্চর্য এক অঞ্চলে বাস করতে সহায়তা করে। গবেষকদের এর প্রতি আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। অন্য সম্প্রদায়ের জন্যও বৈরী আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে এবং এর জন্য প্রস্তুতি নিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তাঁরা।

আগুসান মার্শল্যান্ডে ভাসমান একটি বাড়ি।আগুসান মার্শল্যান্ডে ২ লাখ ৯০ হাজারের মতো মানোবোর বাস। জলাভূমি আর জলকে ঘিরেই আবর্তিত হয় তাদের জীবন। এখানে কোনো রাস্তা নেই। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি কিংবা জায়গার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করছে নদী আর হ্রদ।

বাবানতোর দিন শুরু হয় বারোতো নামে পরিচিত তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্যানু বা নৌকা নিয়ে যাত্রার মাধ্যমে। একটার পর একটা বাড়ি, আদিবাসীদের একত্রিত হওয়ার হল, স্কুল, উপাসনালয়, পশুর খোঁয়াড়কে পাশ কাটিয়ে নৌকা চালান তিনি। আর তার পেরিয়ে আসা প্রতিটি কাঠামোই ভাসমান। নৌকাতে চেপেই নিজের হাঁস, মুরগি ও শূকরের ছোট খোঁয়াড়গুলোয় যান খাবার দিতে। ভাগনে ও ভাগনিদের তাঁদের ছোট ছোট বারাতোতে চাপিয়ে পাঠান স্কুলে।

এ ধরনের জলা জায়গায় বসবাস করা সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য বন্যা একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা। বৃষ্টির মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পানির উচ্চতা যায় বেড়ে। এদিকে শুকনো মৌসুমে পানির উচ্চতা কমে যায়। পানির এই ওঠানামার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো ভেলার মতো প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চের ওপর নিজেদের একতলা বা দোতলা ঘরগুলো তৈরি করে মানোবোরা। এই মঞ্চগুলো ভেসে থাকে, সেই সূত্রে ভেসে থাকে ঘরগুলিও।

বারোতো নৌকা চালানোর দক্ষ মানাবো শিশুরাও।প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চগুলো ভারী দড়ি ও লতা ব্যবহার করে বাংকাল নামের একধরনের গাছের চারপাশে নোঙর করা হয়। জলাভূমির এ ধরনের গাছগুলো বন্যা উপদ্রুত এসব হ্রদ ও জলার মাঝখানে জন্মে।

বাবানতো জানান, নিয়মিত বন্যার চেয়ে বরং ক্রমেই বাড়তে থাকা বাতাসের গতি নিয়ে বেশি আতঙ্কে থাকেন। বন্যার একটি উপকারও তাঁর চোখে পড়ে, ‘পানি যত বেশি থাকে, তত বেশি মাছ আমরা ধরতে পারি।’

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝড় ও বন্যাকে আরও তীব্র, শক্তিশালী এবং নিয়মিত ঘটনায় পরিণত করেছে। সে ক্ষেত্রে ভাসমান বাড়ির সম্ভাব্য সুবিধাগুলো এগুলোর উদ্ভাবক সম্প্রদায়টির বাইরে অন্যদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করছে। এমন ভাসমান বাড়ি বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্বীপদেশগুলোতে হুমকির মুখে থাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাম তেলের চাহিদার আগুসান মার্শল্যান্ডের নতুন নতুন এলাকায় বাগান করা হচ্ছে।ফিলিপাইনের স্থপতি ও নগর নকশা গবেষক ফ্রান্সিসকা মেজিয়া চাকরি করেন নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে। তাঁর মতে, বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলা করার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে মানোবোর মতো আদিবাসীদের সংস্কৃতির দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। তবে তিনি এটাও মনে করিয়ে দেন, ভাসমান বাড়িগুলোর মতো আদিবাসী উদ্ভাবনগুলোর সঙ্গে তাদের প্রকৃতি এবং জমির সংরক্ষণের বিষয়টি জড়িত। কাজেই গোটা বিষয়টি উপলব্ধি করাটাই এ ক্ষেত্রে জরুরি।

ফিলিপাইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ মিন্দানাওয়ের কেন্দ্রে জলাভূমি, পিটল্যান্ড ও ৫৯টি হ্রদের সমন্বয়ে ১৪ হাজার ৮০০ হেক্টরের আগুসান মার্শল্যান্ড বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের অবস্থান। আর এখানে বাস ভাসমান এই বসতির।

মানোবো এবং জলাভূমির অন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে মাছ ধরা হলো জীবিকার প্রধান উৎস। এখানকার বাস্তুতন্ত্র এবং এতে তাদের নিজস্ব জায়গাকে সম্মান জানানো আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনও এর সঙ্গে জড়িত। তারা গান ও প্রার্থনার মাধ্যমে তাদের চারপাশের জলাভূমির প্রাণীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।

বাড়ি, স্কুল, উপাসনালয় সবকিছুই তৈরি হয় ভেসে থাকতে সক্ষম এমন প্ল্যাটফর্ম বা মাচার ওপরে।‘আমাদের পূর্বপুরুষ, আত্মা ও দেবতাদের মতোই লোনা পানির কুমির, মিঠা পানির মাছ এবং পরিযায়ী পাখিরা জলাভূমির আদি বাসিন্দা। তারা এই জলের ওপর নির্ভর করে।’ বলেন বেনোনি হ্রদের গভীরে অবস্থিত বসতির মানোবো গোত্র প্রধান দাতু দুরাঙ্গো।

তাদের বাড়িঘর ঝড় ও বন্যা প্রতিরোধ করলেও মানোবোরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিস্তৃত পরিণতির বাইরে নয়। গবেষকেরা দীর্ঘায়িত খরার মতো হুমকির কথা বলেছেন। যেমন পাম তেলের চাহিদার কারণে পিটল্যান্ডগুলো (গাছপালা পচে মাটির সঙ্গে মিশে যে গাঢ় বাদামি জমি তৈরি হয়) বাগানে পরিণত হয়েছে। কাঠ চোরাচালান বিপন্ন এবং স্থানীয় গাছকে হুমকির সম্মুখীন করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মানোবোরা, যাদের গোটা অস্তিত্ব পানির ওপর নির্ভরশীল, আরেকটি হুমকির মুখে পড়েছে। সেটি বছরের কখনো কখনো পানির স্বল্পতা।

উচ্চ তাপের কারণে সৃষ্ট খরায় আশপাশের ভাসমান আবাসস্থল এবং মূলভূমির বিভিন্ন বাজার, খামার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলপথে চলাচলে সমস্যায় পড়ছে।

আগুসান জলাভূমির পানলাবুহাস হ্রদের মানাবো বসতির ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে গোত্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন দাতু বয়েস রেয়েজ। তিনি মানোবো ছাড়া অন্যদেরও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে যত্নবান হওয়ার এবং এটি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে তা উপলব্ধির চেষ্টা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি মনে করিয়ে দেন, অন্যরা যে ঘরগুলো তৈরি করে তা এখনো একই মাটি, গাছ ও জল থেকে আসে। ‘যদি আমরা পানিকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে বের করি, তাহলে এটিও আমাদের সাহায্য করার উপায় খুঁজে নেবে। এটিই এর প্রকৃতি।’ বলেন তিনি, ‘কারণ জলাভূমিটির নামের অর্থ এটাই, আগুসান মানে যেখানে জল প্রবাহিত হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

  • ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও
  • অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে কোটি কোটি মানুষ
  • ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ১০ শতাংশের সমপরিমাণ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ (আইজিপি-এইচএফ) অঞ্চলের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে। এতে বছরে এই অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে অঞ্চলটির অর্থনীতিতে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। এই দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও।

বিশ্বব্যাংকের ‘এ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গেঞ্জেটিক প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইজিপি-এইচএফ অঞ্চলে বায়ুদূষণ এখনো অন্যতম বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিলে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এতে একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুটোরই উন্নতি হবে।

গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের অংশবিশেষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের বায়ুদূষণের প্রধান পাঁচটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রান্না ও ঘর গরম করার কাজে লাকড়িজাতীয় কঠিন বস্তু ব্যবহার, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) ও বায়োম্যাসের ফিল্টার ছাড়া অদক্ষ ব্যবহার, অনুন্নত প্রযুক্তির ইঞ্জিনের যানবাহন চালানো, কৃষকদের খেতের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং রাসায়নিক সার ও গোবরের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং গৃহস্থালি ও কারখানার বর্জ্য পোড়ানো।

দূষণ কমাতে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এগুলো হলো–বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না, শিল্পকারখানার বয়লার, ফার্নেস ও ইটভাটার আধুনিকায়ন, নন-মোটরাইজড ও বৈদ্যুতিক পরিবহনব্যবস্থার প্রসার, কৃষিবর্জ্য ও পশুবর্জ্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য পৃথক্‌করণ ও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

প্রতিবেদনে নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার কৌশলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. দূষণের উৎসেই নির্গমন কমানোর ব্যবস্থা। ২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া। ৩. কার্যকর আইন, বাজারভিত্তিক প্রণোদনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, ‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার সমাধানগুলো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবার, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সুযোগ তৈরি করে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে ‘চারটি আই’ (ইংরেজি আদ্যক্ষর)—তথ্য, প্রণোদনা, প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্ন বিকল্পে বিনিয়োগে প্রণোদনা, কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলাই এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার বলেন, স্থানীয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নির্মল বায়ু অর্জন সম্ভব নয়। সরকারগুলো একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল দূষণ কমানো, লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং সবার জন্য নিরাপদ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, আজও দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বেশ কিছুদিন ধরে দিল্লির বাতাসের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। আজ বৃহস্পতিবার দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৯০। যা নির্দেশ করে ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশ কিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— কল্যাণপুর (২৬০), দক্ষিণ পল্লবী (২৫৬), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (১৯৬), গোড়ান (১৯৬) ও বেচারাম দেউরি (১৯০)।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। শহরটির একিউআই স্কোর ৩১০। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৭০, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারাজেভ (২২৭, খুব অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে মিসরের কায়রো (১৯৪, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পৌষ মাসের তৃতীয় দিন আজ। শীতের মৌসুম চলে এলেও রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে তাপমাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকালের আবহাওয়া বুলেটিনে দেখা যায়, গতকালের তুলনায় আজ সকালে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত