
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে