মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে—কেউ পারছে, কেউ পারছে না, কেউ বড়লোক হয়ে উঠছে, কেউ কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে, কেউ নানা বিশ্বাস, অবিশ্বাস, আশাবাদ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। অথচ ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রশ্ন এলে অনেকেই এর উত্তর যার যার মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু সবাই যে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নিয়ে দেশের তাবৎ সমস্যা সম্পর্কে উত্তর দিতে পারছে, তেমনটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব জটিল বিষয়ের উত্তর খুব সোজা নয়, আবার মনগড়াভাবে দিলেও হওয়ার নয়। কিন্তু আমরা তো হরহামেশাই যাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার আশা করি, তারাই তো আজ এক কথা, কাল অন্য কথা, এ দল এক কথা, ও দল অন্য কথা, এ বিশেষজ্ঞ এক কথা, অন্য বিশেষজ্ঞ ভিন্ন কথা বলেন। তাহলে সঠিক জবাব বা কারণ জানা হবে কীভাবে?
বিভ্রান্তির বালুচরে অনেকেই আটকে পড়ে আছে। চিন্তার দিক থেকে অনেকেই এগোতেই পারছে না। ব্যাখ্যার নামে নানা অপব্যাখ্যায় বিশ্বাস, আস্থা ও ধারণার জগৎকে এতটাই অস্বচ্ছ ও সংকীর্ণ করে ফেলেছে যে আমাদের দেশ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এই বাস্তবতা নিয়ে ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটি দেশকে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়তো ইউটোপীয় চিন্তা বলেই মনে হতে পারে; জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশা করা গেলেও বাস্তবটা মনে হয় বহু বহু দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
প্রায়শই আমরা বলে থাকি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণেই দেশের রাজনীতিতে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথাটি দৃশ্যত সত্য, কিন্তু ভেতরের কারণটা আমরা ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা দিয়ে যতক্ষণ না বোঝার চেষ্টা করব, ততক্ষণ মূল সমস্যাকে দেখার ধারেকাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখি না। প্রায়ই অনেকে বলে থাকেন, আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। প্রত্যাশাটা খুবই সংগত, কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, কীভাবে সম্ভব, তার উত্তরে বোধহয় এখন বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন প্রশ্নের মুখে আমাদের পড়তে হবে। সেই সব প্রশ্নের জবাব কি আমাদের জানা আছে বা আমরা কি সেগুলোর সমাধান খুঁজে পাব? হারিয়ে যাওয়া কোনো বস্তু খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দূরে ঠেলে রেখে এখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা করছি, সেটি পূরণ করা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চেয়েও কঠিন বললে খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে না। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে একবার যদি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, তাহলে সবাই এমন সব দূর অজানায় ধাবিত হতে থাকে যে সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়।
এবার ভাবুন তো, ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তখন একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘটেছিল। তার পরও সমাজের একটি অংশ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, একটি অংশ নীরব ছিল, আরেকটি অংশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তিতে ছিল। একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়েই যদি জাতীয় ঐক্যের মধ্যে এমন ছোট ছোট বিভাজন, বিরোধিতা, সমর্থনহীনতা, বিভ্রান্তি ও নীরবতা বিরাজ করতে পারে, তাহলে প্রাপ্ত স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর পথচলাটা কতখানি বিভাজিত এবং জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে চলে যেতে পারে, তা একবার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
অনেকেই বলে থাকেন, সত্তরের নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ মানুষ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। বাকি ২৫ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। স্বায়ত্তশাসন নিয়েই যেখানে এমন বিভ্রান্তি ও বিভাজন পাকিস্তান রাষ্ট্রে সত্তর সালে দেখতে হয়েছিল, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেটি কমিয়ে আনার জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানুষের মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য একটি পরিকল্পিত ধারাবাহিক বিকাশ ও উত্তরণের রাষ্ট্রীয় পথচলার সময় অতিবাহিত করা ছাড়া এটি অর্জন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। ১৯৭০ সালে যে ২৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করছিল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের হয়তো একটি অংশের পরিস্থিতি ও বাস্তবতাবোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আবার যে ৭৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সবাই স্বাধীনতার সক্রিয় সমর্থক ছিল কি না, তার উত্তর পাওয়া একটি জটিল বিষয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যটা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। যেটুকু দূরত্ব ভেতরে ছিল, সেটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারাবাহিক বিকাশের মাধ্যমেই কেবল ভেতর থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারত, সেটিই বিজ্ঞানসম্মত উপায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় ইতিহাস ভয়ানক এক রাজনৈতিক দুঃখজনক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর থেকে গতিপথ বহুধাবিভক্তির মধ্যে বিলীন হতে থাকে। এ যেন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়া এক অদৃশ্য শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়া। ১৯৭২ সালে আমাদের জাতীয় ঐক্য নানা দুর্বলতার মধ্যেও অনেকটা কাছাকাছি ছিল। বঙ্গবন্ধু জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যে সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রটিকে আধুনিক চরিত্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি আমাদের জন্য ছিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
আমাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রবোধের বিশাল ঘাটতি নিয়েই সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেটি আমাদের মনোজগতে ভীষণভাবে গেঁথেও ছিল। সেই সব বিশ্বাস, অবিশ্বাস, অন্ধত্ব আর রাজনীতির নামে নানা বিশ্বাসের অবস্থানকে বর্জন কিংবা ত্যাগ করে ’৭২-পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি ছিল অনেক জটিল ও কঠিন। বাস্তব সম্ভাবনা কেবল সে পথেই অর্জন করার ছিল। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ড আমাদের সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে নেয়। অন্ধবিশ্বাস, কুৎসা, অপপ্রচার আর সাম্প্রদায়িকতায় নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যে চরিত্রদান করা হলো, সেটি আর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথে থাকেনি। বরং সাম্প্রদায়িক, বিভাজিত এক পশ্চাৎপদ সমাজ ও বিভাজিত রাজনীতির রাষ্ট্রচরিত্রে হারিয়ে যাওয়ার পথেই টেনে নিয়ে গেল।
সেই পথে জাতি গঠনের শিক্ষানীতি কার্যকর হলো না। শিক্ষাব্যবস্থাকে নানা ধারা-উপধারায় এমনভাবে পরিচালিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হলো যেখানে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানচিন্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতির অত্যাবশ্যকীয় জটিল চিন্তাগুলো পরিত্যাজ্য হলো। মানুষকে অন্ধবিশ্বাস আর বিভাজিত জাতি সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠার এক অবৈজ্ঞানিক ভাবাদর্শে বুঁদ হয়ে থাকার অবস্থান নিশ্চিত করা হলো। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি অসাম্প্রদায়িকতাকে দূর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, বিভ্রান্ত করা হলো এটি পশ্চিমা সংস্কৃতি, ধর্মের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বলে। এমন বিশ্বাস আর প্রচারের চক্রের আবর্তে গোটা জাতি দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় আধুনিক জাতি বিশ্ববাস্তবতা, সম্প্রদায়গত অবস্থান এবং নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক রূপদানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেকটাই দুর্বল কিংবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেই বোধ, সচেতনতা, রাজনীতিতে ফিরে আসার উপায় কী? গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই তো সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট যুক্তি, মানবতা, আধুনিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও মানবদক্ষতার গুরুত্ব হারিয়ে বসে আছে।
’৭৫-পরবর্তী রাজনীতি মূলত শক্তি অর্জন করেছিল অপরাজনীতিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, শিক্ষানীতি, কল্যাণবাদী রাষ্ট্রচিন্তা কোনো কালেই এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করার অবশিষ্ট বজায় রাখেনি। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে পুনরুজ্জীবিত হলেও এর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের দর্শন হালে পানি পাচ্ছিল না। ১৯৯৬ সালের পর থেকে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে প্রকৃত বিভাজিত চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে গেল। ’৭৫-পরবর্তী অপশক্তি ২০০১-০৬ সালে অসাম্প্রদায়িকতা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার কিছুই বাকি রাখেনি। রাজনীতির বিভাজন সেই সময়ে আরও প্রকট ও দূরের বিষয় হয়ে গেল। ২০০৯ সালের পর সেটি অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা, অসাম্প্রদায়িকতাকে ফিরিয়ে আনতে না দেওয়া, যেখানে রাজনীতির মাঠে এখন বড় দৃশ্যমান বিষয় সেখানে জাতীয় ঐক্য গঠনের চিন্তা কল্পবিলাস আর বিলাপের বিষয় হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি আরও দূরেই কেবল সরে যেতে থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে—কেউ পারছে, কেউ পারছে না, কেউ বড়লোক হয়ে উঠছে, কেউ কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে, কেউ নানা বিশ্বাস, অবিশ্বাস, আশাবাদ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। অথচ ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রশ্ন এলে অনেকেই এর উত্তর যার যার মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু সবাই যে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নিয়ে দেশের তাবৎ সমস্যা সম্পর্কে উত্তর দিতে পারছে, তেমনটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব জটিল বিষয়ের উত্তর খুব সোজা নয়, আবার মনগড়াভাবে দিলেও হওয়ার নয়। কিন্তু আমরা তো হরহামেশাই যাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার আশা করি, তারাই তো আজ এক কথা, কাল অন্য কথা, এ দল এক কথা, ও দল অন্য কথা, এ বিশেষজ্ঞ এক কথা, অন্য বিশেষজ্ঞ ভিন্ন কথা বলেন। তাহলে সঠিক জবাব বা কারণ জানা হবে কীভাবে?
বিভ্রান্তির বালুচরে অনেকেই আটকে পড়ে আছে। চিন্তার দিক থেকে অনেকেই এগোতেই পারছে না। ব্যাখ্যার নামে নানা অপব্যাখ্যায় বিশ্বাস, আস্থা ও ধারণার জগৎকে এতটাই অস্বচ্ছ ও সংকীর্ণ করে ফেলেছে যে আমাদের দেশ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এই বাস্তবতা নিয়ে ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটি দেশকে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়তো ইউটোপীয় চিন্তা বলেই মনে হতে পারে; জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশা করা গেলেও বাস্তবটা মনে হয় বহু বহু দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
প্রায়শই আমরা বলে থাকি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণেই দেশের রাজনীতিতে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথাটি দৃশ্যত সত্য, কিন্তু ভেতরের কারণটা আমরা ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা দিয়ে যতক্ষণ না বোঝার চেষ্টা করব, ততক্ষণ মূল সমস্যাকে দেখার ধারেকাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখি না। প্রায়ই অনেকে বলে থাকেন, আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। প্রত্যাশাটা খুবই সংগত, কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, কীভাবে সম্ভব, তার উত্তরে বোধহয় এখন বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন প্রশ্নের মুখে আমাদের পড়তে হবে। সেই সব প্রশ্নের জবাব কি আমাদের জানা আছে বা আমরা কি সেগুলোর সমাধান খুঁজে পাব? হারিয়ে যাওয়া কোনো বস্তু খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দূরে ঠেলে রেখে এখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা করছি, সেটি পূরণ করা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চেয়েও কঠিন বললে খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে না। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে একবার যদি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, তাহলে সবাই এমন সব দূর অজানায় ধাবিত হতে থাকে যে সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়।
এবার ভাবুন তো, ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তখন একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘটেছিল। তার পরও সমাজের একটি অংশ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, একটি অংশ নীরব ছিল, আরেকটি অংশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তিতে ছিল। একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়েই যদি জাতীয় ঐক্যের মধ্যে এমন ছোট ছোট বিভাজন, বিরোধিতা, সমর্থনহীনতা, বিভ্রান্তি ও নীরবতা বিরাজ করতে পারে, তাহলে প্রাপ্ত স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর পথচলাটা কতখানি বিভাজিত এবং জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে চলে যেতে পারে, তা একবার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
অনেকেই বলে থাকেন, সত্তরের নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ মানুষ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। বাকি ২৫ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। স্বায়ত্তশাসন নিয়েই যেখানে এমন বিভ্রান্তি ও বিভাজন পাকিস্তান রাষ্ট্রে সত্তর সালে দেখতে হয়েছিল, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেটি কমিয়ে আনার জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানুষের মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য একটি পরিকল্পিত ধারাবাহিক বিকাশ ও উত্তরণের রাষ্ট্রীয় পথচলার সময় অতিবাহিত করা ছাড়া এটি অর্জন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। ১৯৭০ সালে যে ২৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করছিল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের হয়তো একটি অংশের পরিস্থিতি ও বাস্তবতাবোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আবার যে ৭৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সবাই স্বাধীনতার সক্রিয় সমর্থক ছিল কি না, তার উত্তর পাওয়া একটি জটিল বিষয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যটা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। যেটুকু দূরত্ব ভেতরে ছিল, সেটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারাবাহিক বিকাশের মাধ্যমেই কেবল ভেতর থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারত, সেটিই বিজ্ঞানসম্মত উপায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় ইতিহাস ভয়ানক এক রাজনৈতিক দুঃখজনক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর থেকে গতিপথ বহুধাবিভক্তির মধ্যে বিলীন হতে থাকে। এ যেন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়া এক অদৃশ্য শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়া। ১৯৭২ সালে আমাদের জাতীয় ঐক্য নানা দুর্বলতার মধ্যেও অনেকটা কাছাকাছি ছিল। বঙ্গবন্ধু জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যে সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রটিকে আধুনিক চরিত্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি আমাদের জন্য ছিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
আমাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রবোধের বিশাল ঘাটতি নিয়েই সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেটি আমাদের মনোজগতে ভীষণভাবে গেঁথেও ছিল। সেই সব বিশ্বাস, অবিশ্বাস, অন্ধত্ব আর রাজনীতির নামে নানা বিশ্বাসের অবস্থানকে বর্জন কিংবা ত্যাগ করে ’৭২-পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি ছিল অনেক জটিল ও কঠিন। বাস্তব সম্ভাবনা কেবল সে পথেই অর্জন করার ছিল। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ড আমাদের সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে নেয়। অন্ধবিশ্বাস, কুৎসা, অপপ্রচার আর সাম্প্রদায়িকতায় নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যে চরিত্রদান করা হলো, সেটি আর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথে থাকেনি। বরং সাম্প্রদায়িক, বিভাজিত এক পশ্চাৎপদ সমাজ ও বিভাজিত রাজনীতির রাষ্ট্রচরিত্রে হারিয়ে যাওয়ার পথেই টেনে নিয়ে গেল।
সেই পথে জাতি গঠনের শিক্ষানীতি কার্যকর হলো না। শিক্ষাব্যবস্থাকে নানা ধারা-উপধারায় এমনভাবে পরিচালিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হলো যেখানে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানচিন্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতির অত্যাবশ্যকীয় জটিল চিন্তাগুলো পরিত্যাজ্য হলো। মানুষকে অন্ধবিশ্বাস আর বিভাজিত জাতি সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠার এক অবৈজ্ঞানিক ভাবাদর্শে বুঁদ হয়ে থাকার অবস্থান নিশ্চিত করা হলো। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি অসাম্প্রদায়িকতাকে দূর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, বিভ্রান্ত করা হলো এটি পশ্চিমা সংস্কৃতি, ধর্মের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বলে। এমন বিশ্বাস আর প্রচারের চক্রের আবর্তে গোটা জাতি দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় আধুনিক জাতি বিশ্ববাস্তবতা, সম্প্রদায়গত অবস্থান এবং নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক রূপদানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেকটাই দুর্বল কিংবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেই বোধ, সচেতনতা, রাজনীতিতে ফিরে আসার উপায় কী? গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই তো সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট যুক্তি, মানবতা, আধুনিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও মানবদক্ষতার গুরুত্ব হারিয়ে বসে আছে।
’৭৫-পরবর্তী রাজনীতি মূলত শক্তি অর্জন করেছিল অপরাজনীতিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, শিক্ষানীতি, কল্যাণবাদী রাষ্ট্রচিন্তা কোনো কালেই এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করার অবশিষ্ট বজায় রাখেনি। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে পুনরুজ্জীবিত হলেও এর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের দর্শন হালে পানি পাচ্ছিল না। ১৯৯৬ সালের পর থেকে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে প্রকৃত বিভাজিত চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে গেল। ’৭৫-পরবর্তী অপশক্তি ২০০১-০৬ সালে অসাম্প্রদায়িকতা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার কিছুই বাকি রাখেনি। রাজনীতির বিভাজন সেই সময়ে আরও প্রকট ও দূরের বিষয় হয়ে গেল। ২০০৯ সালের পর সেটি অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা, অসাম্প্রদায়িকতাকে ফিরিয়ে আনতে না দেওয়া, যেখানে রাজনীতির মাঠে এখন বড় দৃশ্যমান বিষয় সেখানে জাতীয় ঐক্য গঠনের চিন্তা কল্পবিলাস আর বিলাপের বিষয় হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি আরও দূরেই কেবল সরে যেতে থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে—কেউ পারছে, কেউ পারছে না, কেউ বড়লোক হয়ে উঠছে, কেউ কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে, কেউ নানা বিশ্বাস, অবিশ্বাস, আশাবাদ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। অথচ ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রশ্ন এলে অনেকেই এর উত্তর যার যার মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু সবাই যে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নিয়ে দেশের তাবৎ সমস্যা সম্পর্কে উত্তর দিতে পারছে, তেমনটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব জটিল বিষয়ের উত্তর খুব সোজা নয়, আবার মনগড়াভাবে দিলেও হওয়ার নয়। কিন্তু আমরা তো হরহামেশাই যাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার আশা করি, তারাই তো আজ এক কথা, কাল অন্য কথা, এ দল এক কথা, ও দল অন্য কথা, এ বিশেষজ্ঞ এক কথা, অন্য বিশেষজ্ঞ ভিন্ন কথা বলেন। তাহলে সঠিক জবাব বা কারণ জানা হবে কীভাবে?
বিভ্রান্তির বালুচরে অনেকেই আটকে পড়ে আছে। চিন্তার দিক থেকে অনেকেই এগোতেই পারছে না। ব্যাখ্যার নামে নানা অপব্যাখ্যায় বিশ্বাস, আস্থা ও ধারণার জগৎকে এতটাই অস্বচ্ছ ও সংকীর্ণ করে ফেলেছে যে আমাদের দেশ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এই বাস্তবতা নিয়ে ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটি দেশকে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়তো ইউটোপীয় চিন্তা বলেই মনে হতে পারে; জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশা করা গেলেও বাস্তবটা মনে হয় বহু বহু দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
প্রায়শই আমরা বলে থাকি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণেই দেশের রাজনীতিতে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথাটি দৃশ্যত সত্য, কিন্তু ভেতরের কারণটা আমরা ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা দিয়ে যতক্ষণ না বোঝার চেষ্টা করব, ততক্ষণ মূল সমস্যাকে দেখার ধারেকাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখি না। প্রায়ই অনেকে বলে থাকেন, আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। প্রত্যাশাটা খুবই সংগত, কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, কীভাবে সম্ভব, তার উত্তরে বোধহয় এখন বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন প্রশ্নের মুখে আমাদের পড়তে হবে। সেই সব প্রশ্নের জবাব কি আমাদের জানা আছে বা আমরা কি সেগুলোর সমাধান খুঁজে পাব? হারিয়ে যাওয়া কোনো বস্তু খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দূরে ঠেলে রেখে এখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা করছি, সেটি পূরণ করা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চেয়েও কঠিন বললে খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে না। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে একবার যদি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, তাহলে সবাই এমন সব দূর অজানায় ধাবিত হতে থাকে যে সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়।
এবার ভাবুন তো, ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তখন একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘটেছিল। তার পরও সমাজের একটি অংশ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, একটি অংশ নীরব ছিল, আরেকটি অংশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তিতে ছিল। একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়েই যদি জাতীয় ঐক্যের মধ্যে এমন ছোট ছোট বিভাজন, বিরোধিতা, সমর্থনহীনতা, বিভ্রান্তি ও নীরবতা বিরাজ করতে পারে, তাহলে প্রাপ্ত স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর পথচলাটা কতখানি বিভাজিত এবং জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে চলে যেতে পারে, তা একবার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
অনেকেই বলে থাকেন, সত্তরের নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ মানুষ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। বাকি ২৫ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। স্বায়ত্তশাসন নিয়েই যেখানে এমন বিভ্রান্তি ও বিভাজন পাকিস্তান রাষ্ট্রে সত্তর সালে দেখতে হয়েছিল, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেটি কমিয়ে আনার জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানুষের মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য একটি পরিকল্পিত ধারাবাহিক বিকাশ ও উত্তরণের রাষ্ট্রীয় পথচলার সময় অতিবাহিত করা ছাড়া এটি অর্জন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। ১৯৭০ সালে যে ২৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করছিল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের হয়তো একটি অংশের পরিস্থিতি ও বাস্তবতাবোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আবার যে ৭৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সবাই স্বাধীনতার সক্রিয় সমর্থক ছিল কি না, তার উত্তর পাওয়া একটি জটিল বিষয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যটা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। যেটুকু দূরত্ব ভেতরে ছিল, সেটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারাবাহিক বিকাশের মাধ্যমেই কেবল ভেতর থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারত, সেটিই বিজ্ঞানসম্মত উপায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় ইতিহাস ভয়ানক এক রাজনৈতিক দুঃখজনক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর থেকে গতিপথ বহুধাবিভক্তির মধ্যে বিলীন হতে থাকে। এ যেন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়া এক অদৃশ্য শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়া। ১৯৭২ সালে আমাদের জাতীয় ঐক্য নানা দুর্বলতার মধ্যেও অনেকটা কাছাকাছি ছিল। বঙ্গবন্ধু জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যে সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রটিকে আধুনিক চরিত্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি আমাদের জন্য ছিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
আমাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রবোধের বিশাল ঘাটতি নিয়েই সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেটি আমাদের মনোজগতে ভীষণভাবে গেঁথেও ছিল। সেই সব বিশ্বাস, অবিশ্বাস, অন্ধত্ব আর রাজনীতির নামে নানা বিশ্বাসের অবস্থানকে বর্জন কিংবা ত্যাগ করে ’৭২-পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি ছিল অনেক জটিল ও কঠিন। বাস্তব সম্ভাবনা কেবল সে পথেই অর্জন করার ছিল। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ড আমাদের সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে নেয়। অন্ধবিশ্বাস, কুৎসা, অপপ্রচার আর সাম্প্রদায়িকতায় নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যে চরিত্রদান করা হলো, সেটি আর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথে থাকেনি। বরং সাম্প্রদায়িক, বিভাজিত এক পশ্চাৎপদ সমাজ ও বিভাজিত রাজনীতির রাষ্ট্রচরিত্রে হারিয়ে যাওয়ার পথেই টেনে নিয়ে গেল।
সেই পথে জাতি গঠনের শিক্ষানীতি কার্যকর হলো না। শিক্ষাব্যবস্থাকে নানা ধারা-উপধারায় এমনভাবে পরিচালিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হলো যেখানে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানচিন্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতির অত্যাবশ্যকীয় জটিল চিন্তাগুলো পরিত্যাজ্য হলো। মানুষকে অন্ধবিশ্বাস আর বিভাজিত জাতি সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠার এক অবৈজ্ঞানিক ভাবাদর্শে বুঁদ হয়ে থাকার অবস্থান নিশ্চিত করা হলো। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি অসাম্প্রদায়িকতাকে দূর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, বিভ্রান্ত করা হলো এটি পশ্চিমা সংস্কৃতি, ধর্মের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বলে। এমন বিশ্বাস আর প্রচারের চক্রের আবর্তে গোটা জাতি দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় আধুনিক জাতি বিশ্ববাস্তবতা, সম্প্রদায়গত অবস্থান এবং নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক রূপদানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেকটাই দুর্বল কিংবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেই বোধ, সচেতনতা, রাজনীতিতে ফিরে আসার উপায় কী? গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই তো সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট যুক্তি, মানবতা, আধুনিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও মানবদক্ষতার গুরুত্ব হারিয়ে বসে আছে।
’৭৫-পরবর্তী রাজনীতি মূলত শক্তি অর্জন করেছিল অপরাজনীতিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, শিক্ষানীতি, কল্যাণবাদী রাষ্ট্রচিন্তা কোনো কালেই এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করার অবশিষ্ট বজায় রাখেনি। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে পুনরুজ্জীবিত হলেও এর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের দর্শন হালে পানি পাচ্ছিল না। ১৯৯৬ সালের পর থেকে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে প্রকৃত বিভাজিত চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে গেল। ’৭৫-পরবর্তী অপশক্তি ২০০১-০৬ সালে অসাম্প্রদায়িকতা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার কিছুই বাকি রাখেনি। রাজনীতির বিভাজন সেই সময়ে আরও প্রকট ও দূরের বিষয় হয়ে গেল। ২০০৯ সালের পর সেটি অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা, অসাম্প্রদায়িকতাকে ফিরিয়ে আনতে না দেওয়া, যেখানে রাজনীতির মাঠে এখন বড় দৃশ্যমান বিষয় সেখানে জাতীয় ঐক্য গঠনের চিন্তা কল্পবিলাস আর বিলাপের বিষয় হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি আরও দূরেই কেবল সরে যেতে থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছে—কেউ পারছে, কেউ পারছে না, কেউ বড়লোক হয়ে উঠছে, কেউ কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে, কেউ নানা বিশ্বাস, অবিশ্বাস, আশাবাদ নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। অথচ ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রশ্ন এলে অনেকেই এর উত্তর যার যার মতো করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
কিন্তু সবাই যে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা নিয়ে দেশের তাবৎ সমস্যা সম্পর্কে উত্তর দিতে পারছে, তেমনটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব জটিল বিষয়ের উত্তর খুব সোজা নয়, আবার মনগড়াভাবে দিলেও হওয়ার নয়। কিন্তু আমরা তো হরহামেশাই যাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাওয়ার আশা করি, তারাই তো আজ এক কথা, কাল অন্য কথা, এ দল এক কথা, ও দল অন্য কথা, এ বিশেষজ্ঞ এক কথা, অন্য বিশেষজ্ঞ ভিন্ন কথা বলেন। তাহলে সঠিক জবাব বা কারণ জানা হবে কীভাবে?
বিভ্রান্তির বালুচরে অনেকেই আটকে পড়ে আছে। চিন্তার দিক থেকে অনেকেই এগোতেই পারছে না। ব্যাখ্যার নামে নানা অপব্যাখ্যায় বিশ্বাস, আস্থা ও ধারণার জগৎকে এতটাই অস্বচ্ছ ও সংকীর্ণ করে ফেলেছে যে আমাদের দেশ, সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। এই বাস্তবতা নিয়ে ১৭-১৮ কোটি মানুষের একটি দেশকে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়তো ইউটোপীয় চিন্তা বলেই মনে হতে পারে; জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশা করা গেলেও বাস্তবটা মনে হয় বহু বহু দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
প্রায়শই আমরা বলে থাকি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের কারণেই দেশের রাজনীতিতে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কথাটি দৃশ্যত সত্য, কিন্তু ভেতরের কারণটা আমরা ঐতিহাসিক, সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতা দিয়ে যতক্ষণ না বোঝার চেষ্টা করব, ততক্ষণ মূল সমস্যাকে দেখার ধারেকাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ দেখি না। প্রায়ই অনেকে বলে থাকেন, আমাদের একটি জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। প্রত্যাশাটা খুবই সংগত, কিন্তু এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, কীভাবে সম্ভব, তার উত্তরে বোধহয় এখন বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন প্রশ্নের মুখে আমাদের পড়তে হবে। সেই সব প্রশ্নের জবাব কি আমাদের জানা আছে বা আমরা কি সেগুলোর সমাধান খুঁজে পাব? হারিয়ে যাওয়া কোনো বস্তু খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দূরে ঠেলে রেখে এখন আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা করছি, সেটি পূরণ করা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার চেয়েও কঠিন বললে খুব বেশি অত্যুক্তি করা হবে না। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে একবার যদি মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়, তাহলে সবাই এমন সব দূর অজানায় ধাবিত হতে থাকে যে সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা মোটেও সহজ কাজ নয়।
এবার ভাবুন তো, ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তখন একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ঘটেছিল। তার পরও সমাজের একটি অংশ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, একটি অংশ নীরব ছিল, আরেকটি অংশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তিতে ছিল। একটি দেশের স্বাধীনতা নিয়েই যদি জাতীয় ঐক্যের মধ্যে এমন ছোট ছোট বিভাজন, বিরোধিতা, সমর্থনহীনতা, বিভ্রান্তি ও নীরবতা বিরাজ করতে পারে, তাহলে প্রাপ্ত স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর পথচলাটা কতখানি বিভাজিত এবং জাতীয় ঐক্যবিরোধী অবস্থানে চলে যেতে পারে, তা একবার গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত।
অনেকেই বলে থাকেন, সত্তরের নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ মানুষ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। বাকি ২৫ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। স্বায়ত্তশাসন নিয়েই যেখানে এমন বিভ্রান্তি ও বিভাজন পাকিস্তান রাষ্ট্রে সত্তর সালে দেখতে হয়েছিল, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে সেটি কমিয়ে আনার জন্য রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানুষের মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য একটি পরিকল্পিত ধারাবাহিক বিকাশ ও উত্তরণের রাষ্ট্রীয় পথচলার সময় অতিবাহিত করা ছাড়া এটি অর্জন করা মোটেও সম্ভব ছিল না। ১৯৭০ সালে যে ২৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করছিল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাদের হয়তো একটি অংশের পরিস্থিতি ও বাস্তবতাবোধ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আবার যে ৭৫ শতাংশ মানুষ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সবাই স্বাধীনতার সক্রিয় সমর্থক ছিল কি না, তার উত্তর পাওয়া একটি জটিল বিষয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্যটা বাস্তবতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। যেটুকু দূরত্ব ভেতরে ছিল, সেটি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারাবাহিক বিকাশের মাধ্যমেই কেবল ভেতর থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারত, সেটিই বিজ্ঞানসম্মত উপায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় ইতিহাস ভয়ানক এক রাজনৈতিক দুঃখজনক ট্র্যাজেডির ভেতর দিয়ে স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছর পর থেকে গতিপথ বহুধাবিভক্তির মধ্যে বিলীন হতে থাকে। এ যেন ব্ল্যাক হোলের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়া এক অদৃশ্য শক্তির ভেতরে ঢুকে পড়া। ১৯৭২ সালে আমাদের জাতীয় ঐক্য নানা দুর্বলতার মধ্যেও অনেকটা কাছাকাছি ছিল। বঙ্গবন্ধু জাতি-রাষ্ট্র গঠনের যে সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা নিয়ে রাষ্ট্রটিকে আধুনিক চরিত্রদানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটি আমাদের জন্য ছিল একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
আমাদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রবোধের বিশাল ঘাটতি নিয়েই সেই যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেটি আমাদের মনোজগতে ভীষণভাবে গেঁথেও ছিল। সেই সব বিশ্বাস, অবিশ্বাস, অন্ধত্ব আর রাজনীতির নামে নানা বিশ্বাসের অবস্থানকে বর্জন কিংবা ত্যাগ করে ’৭২-পরবর্তী সময় থেকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জটি ছিল অনেক জটিল ও কঠিন। বাস্তব সম্ভাবনা কেবল সে পথেই অর্জন করার ছিল। ’৭৫-এর হত্যাকাণ্ড আমাদের সেই কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে নেয়। অন্ধবিশ্বাস, কুৎসা, অপপ্রচার আর সাম্প্রদায়িকতায় নিক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে যে চরিত্রদান করা হলো, সেটি আর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের পথে থাকেনি। বরং সাম্প্রদায়িক, বিভাজিত এক পশ্চাৎপদ সমাজ ও বিভাজিত রাজনীতির রাষ্ট্রচরিত্রে হারিয়ে যাওয়ার পথেই টেনে নিয়ে গেল।
সেই পথে জাতি গঠনের শিক্ষানীতি কার্যকর হলো না। শিক্ষাব্যবস্থাকে নানা ধারা-উপধারায় এমনভাবে পরিচালিত হতে সুযোগ করে দেওয়া হলো যেখানে যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানচিন্তা, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংস্কৃতির অত্যাবশ্যকীয় জটিল চিন্তাগুলো পরিত্যাজ্য হলো। মানুষকে অন্ধবিশ্বাস আর বিভাজিত জাতি সম্প্রদায়ে বেড়ে ওঠার এক অবৈজ্ঞানিক ভাবাদর্শে বুঁদ হয়ে থাকার অবস্থান নিশ্চিত করা হলো। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি অসাম্প্রদায়িকতাকে দূর দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, বিভ্রান্ত করা হলো এটি পশ্চিমা সংস্কৃতি, ধর্মের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ বলে। এমন বিশ্বাস আর প্রচারের চক্রের আবর্তে গোটা জাতি দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় আধুনিক জাতি বিশ্ববাস্তবতা, সম্প্রদায়গত অবস্থান এবং নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক রূপদানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেকটাই দুর্বল কিংবা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সেই বোধ, সচেতনতা, রাজনীতিতে ফিরে আসার উপায় কী? গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই তো সাম্প্রদায়িকতায় দুষ্ট যুক্তি, মানবতা, আধুনিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও মানবদক্ষতার গুরুত্ব হারিয়ে বসে আছে।
’৭৫-পরবর্তী রাজনীতি মূলত শক্তি অর্জন করেছিল অপরাজনীতিকে রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, শিক্ষানীতি, কল্যাণবাদী রাষ্ট্রচিন্তা কোনো কালেই এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করার অবশিষ্ট বজায় রাখেনি। আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে পুনরুজ্জীবিত হলেও এর জাতি-রাষ্ট্র গঠনের দর্শন হালে পানি পাচ্ছিল না। ১৯৯৬ সালের পর থেকে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে প্রকৃত বিভাজিত চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে গেল। ’৭৫-পরবর্তী অপশক্তি ২০০১-০৬ সালে অসাম্প্রদায়িকতা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার কিছুই বাকি রাখেনি। রাজনীতির বিভাজন সেই সময়ে আরও প্রকট ও দূরের বিষয় হয়ে গেল। ২০০৯ সালের পর সেটি অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা, অসাম্প্রদায়িকতাকে ফিরিয়ে আনতে না দেওয়া, যেখানে রাজনীতির মাঠে এখন বড় দৃশ্যমান বিষয় সেখানে জাতীয় ঐক্য গঠনের চিন্তা কল্পবিলাস আর বিলাপের বিষয় হতে পারে। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব পশ্চাৎপদতা অতিক্রম করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত কাছাকাছি অবস্থানে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি আরও দূরেই কেবল সরে যেতে থাকবে।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছ
২৬ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছ
২৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছ
২৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

শুধু নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই নয়; পরেও দেশের রাজনীতিতে বিরোধ, অনৈক্য, এমনকি সংঘাত-সংঘর্ষ দেখে দেখে বড় হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণদের অনেকেই দেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে, অনেকে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আবার অনেকে দেশে যে যার মতো করে সুখ খোঁজার চেষ্টা করছ
২৬ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫