Ajker Patrika

রাজনীতিতে আলোচনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০৮: ৩৫
রাজনীতিতে আলোচনায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

কথাটা প্রথম তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে গত ১৩ মে তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা দেবে, আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না।’ এরপর থেকে বিদেশি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হচ্ছিল বিভিন্ন দিক থেকে। এর মধ্যে সরকারের দুই মন্ত্রী গতকাল রোববার আবার বললেন নিষেধাজ্ঞার কথা।

যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে? কী হতে পারে নিষেধাজ্ঞা? কারা পড়তে পারেন মার্কিনদের এই খাঁড়ায়? র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর বহাল আছে দেড় বছর আগের নিষেধাজ্ঞা। এসব বিষয় নিয়ে অনেকটা খোলামেলা কথা হচ্ছে সরকারে এবং সরকারের বাইরে বিভিন্ন মহলে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। বহু পরিবার দেশটিতে প্রতিবছর ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠায়। দেশটিতে হাজার হাজার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ আছেন। এই অবস্থায় মার্কিনরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে এবং দেশের রপ্তানি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে এমন আলোচনাও আছে। ই-মেইলে গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানিয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা আছে কি না।

বিকেলে ফিরতি ই-মেইলে দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কাউন্সেলর শন ম্যাকিনটশ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তৃত ও গভীর সম্পর্ক বজায় রাখে। আমরা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই।’

এমন আলোচনার মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে। 
২০২৪ সালের জানুয়ারি অথবা তার আগেই নির্বাচন হতে পারে এবং এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো এরই মধ্যে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভসহ নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেছে জানিয়ে দূতাবাস বলেছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততই এসব কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকবে।

মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে দূতাবাস বলেছে, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ যেকোনো সময় সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। তাই বড় সমাবেশ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে তাঁদের।

তবে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হয় না বলে মনে করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বার্তা সংস্থা বাসসের  খবরে বলা হয়, সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে অনেকেই স্যাংশন দিয়ে রেখেছে।

ইরানের সরকার তো পড়ে যায় নাই, বহাল তবিয়তে আছে। বহু বছরের স্যাংশনেও কিউবাকে টলানো যায় নাই, সরকারও পরিবর্তন হয় না।’হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে বহু স্যাংশন, সেখানকার সরকারও পরিবর্তন হয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে বহু স্যাংশন, সেগুলো অমান্য করেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অনেকে তাদের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করছে। অর্থাৎ, এগুলো দিয়ে আসলে লাভ হয় না।’

তবে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক অবশ্য মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না।গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা তো কাউকে গ্রেপ্তার করি না, বাধাও দেওয়া হয় না। মানুষ পূর্ণ বাক্‌স্বাধীনতা ভোগ করছে। আমি বুঝি না নিষেধাজ্ঞা কেন দেবে? আমার ধারণা, তারা নিষেধাজ্ঞা দেবে না, বাস্তবতা বুঝবে।’

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার যে আভাস, তা অনেক দিন ধরেই আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। র‍্যাবের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞায় দেশটি কানাডা ও যুক্তরাজ্যকে সম্পৃক্ত করেছিল। তবে দেশ দুটি শেষ পর্যন্ত তাতে সাড়া না দিলেও এবার মার্কিনরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে পশ্চিমা অন্য দেশ ও জোটগুলো যুক্ত হলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমারা অনেক দিন ধরে সরকারের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে এবং এ নিয়ে উভয় পক্ষে ‘চাপা উত্তেজনা’ আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির। দেশগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলোর কথা বলছে, তা যদি বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পথে না যায়, তাহলে সংঘাতের আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পথ না খুললে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে দেশটি কঠোর হলেও হতে পারে। নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে চাপ যে শুধু সরকারের ওপর আসতে পারে তা নয়, পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হলে, বিরোধী বিএনপির ওপরও চাপ আসতে পারে নির্বাচনে অংশ নিতে।

প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়াসহ পশ্চিমাদের কাছে অনেক রকম হাতিয়ার আছে বলে মনে করেন প্রবীণ এই কূটনীতিক।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নে বিইআইয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ থেকে আমদানির ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা কম। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি বাণিজ্যিক সুবিধা জিএসপি পিছিয়ে দেয়, তাতেও কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই উদ্যোগে নিকট প্রভাবশালী প্রতিবেশী ভারত ও অন্য পরাশক্তি চীন অন্তত প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ থাকবে বলে মনে করেন (বিইআই) প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ভারত ও চীন পরস্পরবিরোধী হলেও দুই দেশই নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়।

সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে কোনো লাভ হবে না। এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরির মাধ্যমে সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই সমাধানের পথ খোঁজা উত্তম।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার রপ্তানির মধ্যে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রেই গেছে ১ হাজার ৪২ কোটি ডলারের পণ্য।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। গত বছর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে সৌদি আরব থেকে, ৪৫৪ কোটি ডলার। এরপরই আছে যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, ৩৪৪ কোটি ডলার ও ২০৭ কোটি ডলার।

জাতিসংঘের চলতি বছরের ৩১ মার্চের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সৈন্য, পুলিশ ও বিশেষজ্ঞ—সব মিলিয়ে বিশ্ব সংস্থার শান্তি মিশনগুলোয় সর্বোচ্চসংখ্যক ৭ হাজার ২৩৭ জনশক্তির জোগান দিচ্ছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ডলার-রুবলে শোধ করতে না পারায় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ঋণ পরিশোধ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় দেশটির মুদ্রা ইউয়ানে দায় শোধের সর্বশেষ উদ্যোগেও বাগড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রোসাটমের কয়েকটি সহযোগী সংস্থার ওপর গত ১২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের জারি করা নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস পরদিন এক কূটনৈতিক পত্রে চীনা মুদ্রায় রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে আপত্তি জানায়।

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং ব্যক্তি হিসেবে সংস্থার সাবেক ও তদানীন্তন সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কর্মকর্তারা হলেন পুলিশের তদানীন্তন মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক ও র‍্যাবের তদানীন্তন মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের তদানীন্তন অতিরিক্ত মহাপরিচালক খান মোহাম্মদ আজাদ, তিন সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আনোয়ার লতিফ ও র‍্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদ।

তাঁদের কারও কারও ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, কারও কারও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কথা নিষেধাজ্ঞায় বলা আছে। এরপর বাংলাদেশ সরকার গত দেড় বছরে দফায় দফায় অনুরোধ করে এবং মার্কিন তদবিরকারক (লবিস্ট) নিয়োগ করার পরও এই নিষেধাজ্ঞা মার্কিনরা তুলে নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত