Ajker Patrika

প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

মাসুদ রানা
প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের স্কলার হিসেবে মাস্টার্স করেন। পরে পিএইচডি ডিগ্রি নেন জাপানেরই ফেরিস ইউনিভার্সিটি থেকে মনবুশো স্কলার হিসেবে। বর্তমানে প্রেষণে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সদস্য। তিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফর নিয়ে আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।

আজকের পত্রিকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর তিন দেশ সফরকে আপনি কীভাবে দেখছেন? 
দেলোয়ার হোসেন: নিশ্চিতভাবে এই সফরটা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন এবং নির্বাচন ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, প্রধানমন্ত্রীর কূটনীতির ক্ষেত্রে সফররত দেশগুলোতে আমাদের দেশের স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের যে সম্পর্ক, সেটা ১৯৭২ সালে জাপান যখন বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেখান থেকে সম্পর্কটা এখন পর্যন্ত সচল রয়েছে। তখন থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী অবস্থায় আছে। এই সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা এবং বৈচিত্র্য অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন। যেহেতু বিশ্বব্যাংকের অন্যতম পার্টনার হলো যুক্তরাষ্ট্র। তাই বিশ্বব্যাংকের এই অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। আর যুক্তরাজ্য আমাদের পুরোনো এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার।

তাই এই তিন দেশ সফর বাংলাদেশের জন্য সব সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশ যে ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিভিন্নভাবে এই অঞ্চলে একটা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে—সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রতি এসব দেশের আগ্রহ বেড়েছে। ২০২৩ সালের সফরের সঙ্গে ১৫-২০ বছরের আগের সফরের একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের যে সাফল্য এবং অন্যান্য দিকে যে উন্নয়নের গতি চলমান রয়েছে, আর নির্বাচন নিয়ে অনেক ধরনের বিতর্ক ও আলোচনা আছে, সেই জায়গা থেকে এ রকম একটি সফরের মাধ্যমে সেসব দেশের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করা সম্ভব হবে। জাপান জানিয়েছে, এই সফরটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য। সরকারের সাফল্যের ইতিবাচক দিকগুলো এই সফরের মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নির্বাচন বাদেও এই সফরের গুরুত্ব অনেক বেশি বাংলাদেশের জন্য।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ২০২৬ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে নতুন বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করে উন্নত দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যে স্বপ্ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এ সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

আজকের পত্রিকা: জাপানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তির বিশেষ তাৎপর্য কী? 
দেলোয়ার হোসেন: আমার কাছে মনে হয়, এটি একটি ডেট চেঞ্জিং আইডিয়া। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্কটা একটা নতুন বাস্তবতায় পৌঁছে গেছে। যে ৮টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, একজন আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক হিসেবে বলব, এককথায় বিরল। প্রতিটি চুক্তিই ব্যতিক্রমধর্মী এ জন্য যে শুধু বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো বন্ধুরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জাপান বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে কৌশলগত অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা হবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের নতুন ধারা সূচিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে সংলাপ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে, সেটি এককথায় নতুন ধারণা। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব রয়েছে।

জাপানের হাত ধরেই বাংলাদেশ নতুন রেলযোগাযোগে প্রবেশ করেছে। মেট্রোরেল বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। সেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন জাপানের সহযোগিতায়। এটাকে আরও সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী করার জন্য সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাহাজভাঙা শিল্প। এর জন্য সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তারপর বাংলাদেশে ভবিষ্যতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ নিয়ে তাদের সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। কৃষি নিয়ে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক একটা সেক্টর নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর নিয়ে এক সফরেই ৮টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব চুক্তি স্বাক্ষর ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী, গতিশীল এবং পরস্পরকে কাছাকাছি নিয়ে আসবে।

বাংলাদেশকে উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাতে যে ধরনের শিল্প উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা দরকার, সেই বিষয়েও একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রি ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়েও একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

জাপান পৃথিবীর অন্যতম উন্নত রাষ্ট্র। একসময় জাপানকে বলা হতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম পরাশক্তি। এ রকম একটা অগ্রসর রাষ্ট্রের সঙ্গে যখন ইন্ডাস্ট্রি ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ চুক্তি হয়, সেটা অবশ্যই বাংলাদেশকে অনেকভাবে লাভবান করবে।

আজকের পত্রিকা: গত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য রেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে তার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন?
দেলোয়ার হোসেন: জাপানের রাষ্ট্রদূতের যে মন্তব্য ছিল, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তাঁর এই মন্তব্যের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রীয় পলিসির কোনো সম্পর্ক নেই। জাপান বরাবরই তার উন্নয়ন-সহযোগী এবং বন্ধুরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আমরা জানি, বাহাত্তর সাল থেকে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দিয়ে আসছে জাপান। বিশ্বের অন্য দেশগুলোও সাহায্য দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য জাপানের সাহায্য ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর জাপান সাধারণত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অবস্থান গ্রহণ বা মন্তব্য করে না। তাই বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে বিরাজমান সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, সে কারণে বাংলাদেশের জন্য যা ক্ষতিকর, তা নিয়ে জাপান কোনো কাজ করবে, তা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।

আমার কাছে মনে হয়, জাপান অতীতে যেভাবে কোনো ধরনের অপতৎপরতার মধ্যে ছিল না, বর্তমানেও তা হবে না। তাই জাপানের রাষ্ট্রদূতের যে বক্তব্য, তা ছিল একেবারেই বিচ্ছিন্ন একটা মন্তব্য। এরপর আমরা লক্ষ করেছি, তা নিয়ে পরে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এ রকম একটি সফল রাষ্ট্রীয় সফরের মাধ্যমে জাপান আবার প্রমাণ করেছে, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে সরকারিভাবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো কর্মসূচি নেই। তারপরও এই দুই দেশের মধ্যে বিশেষ কোনো আলোচনার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন? 
দেলোয়ার হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে কোনো সরকারি কর্মসূচি দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনার চেয়ে বিভিন্ন ধরনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় কূটনৈতিক ভূমিকা থাকে। কিছুদিন আগে আমরা যেমন দেখলাম হঠাৎ করে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে নতুনভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। অথচ এটা নিয়ে এর আগে কোনো ধরনের কথাই শোনা যায়নি। চীন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চীন এটা কীভাবে করেছে, কত ধরনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা তাদের মধ্যে হয়েছে, সেসব বিষয়ের আমরা কিছুই জানি না। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা তো হতেই পারে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটা সম্পর্ক আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলতে পারি, ভিন্ন ধরনের একটা সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশের জন্য। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক আগামী চার বছরের জন্য ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

আর যুক্তরাজ্যে নতুন রাজা আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন। সেই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকা মানেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে উষ্ণতা ও গভীরতা, সেটাই স্পষ্ট করে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করার মানেই হলো, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার মাধ্যমেই সম্পর্কের মাত্রা, বাংলাদেশের প্রতি আস্থা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ বলতে হবে।

আমার মনে হয়, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়ে কথা হবে। বিশাল বাংলাদেশি প্রবাসী জনগোষ্ঠী সেখানে আছে, তাদেরও অনেক ভূমিকা আছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। সবকিছু মিলিয়ে এই দুই দেশ সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বন্দ্বমূলক। কিন্তু চারটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। এটা 
কীভাবে সম্ভব? 
দেলোয়ার হোসেন: এটা আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে এটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশের কূটনীতির যে মূল মন্ত্র, সেটা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে কূটনৈতিক আদেশ, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। এটা বাংলাদেশের জন্মের সময় একটা স্লোগান ছিল। বাংলাদেশ তার আচরণে, নীতিতে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। অনেক দেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে এটা শুধু ফাঁকা বুলি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশ সত্যি সত্যি মনে করে, যদি আমরা শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নতি অর্জন করতে চাই, তাহলে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের কাজ করা উচিত। আমরা সেটা করেও দেখেছি।

আমরা সবার সঙ্গে একটা ভারসাম্যপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ সম্পর্ক বজায় রাখছি। কয়েক বছরের মধ্যে দেখছি, বিশ্বের বেশ কিছু দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত বজায় রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো সংঘাত থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পেরেছে। পৃথিবীর অনেক ছোট ছোট রাষ্ট্র কিন্তু বৈশ্বিক জোটের রাজনীতির মধ্যে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সময়ও সেই জায়গায় যায়নি এবং এখনো সেটা করছে না। এটার একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রতিটি দেশ খেয়াল করছে।

বাংলাদেশ তার পলিসি, পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো আচরণ করছে না, যার জন্য কোনো রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়টি বাংলাদেশ সচেতনভাবে মেনে চলছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটি অন্য দেশের ক্ষতির কারণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। বলা সহজ, করা কঠিন—এ জায়গাটায় বাংলাদেশ তা করে দেখাতে পেরেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আজ বাংলাদেশের প্রতি আস্থা আছে, যতই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলুক না কেন। জাপান, রাশিয়া, চীন, ভারতের আস্থা আছে বাংলাদেশের প্রতি। এ জায়গাটি তৈরির জন্য আর একটি উপায় হলো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তৈরি করা। বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্যান্য দেশের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানে আমরা পরিবর্তন আনতে পেরেছি।

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দেলোয়ার হোসেন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত