Ajker Patrika

সামাজিক মাধ্যম কি গতির মধ্যে দুর্গতি

মো. গোলাম রহমান
সামাজিক মাধ্যম কি গতির মধ্যে দুর্গতি

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার যেভাবে বেড়েছে, ঠিক একইভাবে সামাজিক মাধ্যম নিয়ে জনগণের দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অ্যালগরিদমের কাছে ব্যক্তিসত্তা ভুলে সর্বসাধারণ যেন ক্রীড়নক হয়ে পড়ছে।

সামাজিক মাধ্যম বা নিউ মিডিয়ার যে দোর্দণ্ড প্রতাপ, তা ভালো-মন্দের বিবেচনায় না রেখে ব্যবহারকারীদের মগ্নতা এবং তাদের এনগেজমেন্টের বিষয়টিকে আজ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। সামাজিক মাধ্যম যেভাবে মানুষের মনোজগতের ওপর দখল নিয়েছে এবং গভীর প্রভাব ফেলছে, তাতে এখন যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো কনটেন্টের বৈচিত্র্য ও ইন্টার‍্যাক্টিভ কনটেন্টের ওপর জোর দিচ্ছে। তাতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা সফলতার মুখ দেখছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অ্যালগরিদম কম্পিউটারে নেট ব্যবহারকারীদের পছন্দ-অপছন্দকে শ্রেণিভুক্ত করে আজকাল ধাপে ধাপে নতুন চাহিদা তৈরি করে দেয়, তাদের পছন্দগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিন্যস্ত করে এগিয়ে দেয়। যেমন একজন নেট ব্যবহারকারী কোনো বিষয়ে কথা বলছে কিংবা মেসেজ দিচ্ছে, সেখানে ‘কি ওয়ার্ড’গুলো অনুসরণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদম সেই নেট ব্যবহারকারীকে সাজেশন দিচ্ছে। কোনো পণ্য বা কোনো সেবা তার লাগবে কি না, তা তুলে ধরছে। বন্ধু নির্বাচনে ব্যক্তিবিশেষের বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করে দিচ্ছে। নেট ব্যবহারকারীর মন বুঝে তাকে সহায়তা করছে।

গণমাধ্যমের ব্যবসায়িক সাফল্য অবশ্যই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠতেই পারে যে রেডিও-টিভিসহ ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ওপর মানুষের যে ঝোঁক তৈরি হয়েছে, তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ধীরে ধীরে এই সব মানুষ সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে নিজেদের সমর্পণ করে এক আলাদা ভুবনে নিমজ্জিত হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদমের ক্রীড়নক হয়ে সে তার নিজের কাজকর্ম ভুলে যাচ্ছে, নিজের কাজকর্মের দায়বদ্ধতার প্রতি উদাসীন হচ্ছে, পড়াশোনা বা পেশার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছে, ব্যক্তি-মান উন্নয়নের প্রতি খেয়াল করতে পাচ্ছে না, পরিবার কিংবা সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতা হেলাফেলায় অস্বীকার করছে।

ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিজের অধিকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদমের দাসে পরিণত হচ্ছে। সমাজ ও দেশের প্রতি নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নের যে ভূমিকা, তা-ও কার্যকর করা যাচ্ছে না। সমাজ যেন বৃত্তাবস্থায় তার নিজের একটি বলয় তৈরি করে ফেলছে, যেখানে সময়ের গতিময়তায় নতুন নতুন সৃষ্টি এবং সৃজনশীলতার স্বাক্ষর না রেখে সে নিজেই একটি স্থবির সমাজব্যবস্থা তৈরি করছে। অবশ্য সবাই এই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেবে না। ব্যতিক্রম তো আছেই।

নিউ মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তার অডিয়েন্সকে নানা ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে। সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সন্তুষ্টি প্রদান করা এবং তার বিনিময়ে তার মূল্যমান আদায় করে ব্যবসা নিশ্চিত করছে। নারী-পুরুষের বিভিন্ন বয়স, পেশা, নেশা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন এসব প্রবণতা সার্বক্ষণিক ট্র্যাক করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদম কাজ করে এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে সামাজিক মাধ্যমে লেগে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব কিংবা গোপনীয় আর কিছু অবশিষ্ট থাকছে না।

ব্যবহারকারীর মনের অভ্যন্তরে এসে এক জাদুকরী ডিমান্ড তৈরি করছে, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হিসেবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাকে প্রলোভন দেখিয়ে সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর আগে মানুষের মনের কথা প্রকাশ কিংবা কারও সঙ্গে শেয়ার করার এত বেশি সুযোগ ছিল না। গণমাধ্যমে কনটেন্ট পরিবেশনকারী নির্দিষ্টসংখ্যক সাংবাদিক/লেখক/শিল্পীর মধ্যে তাঁদের যোগাযোগ সীমিত ছিল। সাংবাদিক তথা অন্যরা যা ভালো মনে করেন শুধু তা-ই উপস্থাপন করেন, কালে-ভদ্রে দু-একজন দর্শক-শ্রোতা-পাঠক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চিঠি লিখে বা ফোন করে তাঁদের মতামত জানান।

ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তি সব সীমারেখা পেরিয়ে ‘মাল্টিডিরেকশনাল’ বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করে। কোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থান থেকে বিশ্বের অন্য যেকোনো প্রান্তে তার মনের কথা ব্যক্ত কিংবা মতপ্রকাশ করে চলেছে তার পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষের কাছে। কখনো কখনো সেগুলো শুধু মতামত নয়, প্রেরণাদায়ক এবং সচেতনতামূলক কিংবা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক। কখনো আবার নিরেট বিনোদনধর্মী। বিনোদন কিংবা নির্মল আনন্দ দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যম যথেষ্ট অবদান রাখছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও ব্যবহার নিশ্চিতভাবে মানুষকে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।

শিক্ষামূলক ও গবেষণালব্ধ অনেক তথ্য খুব সহজে পাওয়া যাচ্ছে। এসবের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ-প্রগতির ধারা যেমন অব্যাহত থাকে, তেমনি ব্যক্তিজীবনও অনেক কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। এদিকে চ্যালেঞ্জ থেকে যায় যে একজন ব্যক্তি ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহারে নিজেকে কীভাবে পরিচালনা করবে। অনেক ক্ষেত্রেই সময়ের অপব্যবহার, প্রযুক্তির এ সম্ভাবনাকে হালকা বিনোদন কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের কারণে তার মেধা-মনন-সময় এই সবকিছুর অপব্যবহারই হয়। ব্যক্তিজীবনের নিয়ন্ত্রণ কিংবা শৃঙ্খলাবোধ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনধারাকে হুমকির মুখোমুখি করে তোলে। দিনরাত্রির ব্যবধান চুকে যায়। মানবদেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও গতিময়তা দিবারাত্রির নির্দিষ্টতায় চলার কথা। দিনে কাজকর্ম, রাতে ঘুম আবশ্যিক এক ধারাবাহিকতা। এর ব্যত্যয় হলে দেহমনে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।

আজকাল সামাজিক মাধ্যমের অধিক ও অসতর্ক ব্যবহার এক বিশৃঙ্খল সমাজ তৈরি করে চলছে। মানুষে মানুষে হানাহানি, অসামাজিক কার্যক্রমে অবাধ অংশগ্রহণ এবং স্বাস্থ্যহানি উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে।

যেকোনো গণমাধ্যমকে সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে, তা পত্রিকা হোক, টিভি বা রেডিও হোক। একই সঙ্গে এসব গণমাধ্যম ও আজকাল দর্শক-শ্রোতা হারাচ্ছে। অনলাইনের জয়জয়কার অব্যাহত গতিতে চলছে, চলবেও। তাহলে মুদ্রিত সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ কী? এশিয়ার দেশগুলোতে এখনো মুদ্রিত সংবাদপত্রের ব্যবহার বিদ্যমান, একই সঙ্গে অনলাইনে পাঠকের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সহাবস্থান হয়তো আরও কয়েক বছর চলবে। অডিয়েন্সের এই মিশ্র আচরণ হয়তো গণমাধ্যম পেশাজীবীদের নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে। কর্মরত সাংবাদিকেরা কনটেন্ট তৈরিতে নতুন থেকে নতুনতর বিষয়াবলি ও আঙ্গিকগত পরিবর্তন নিয়ে আবির্ভূত হবেন। শুধু ঘটনা বা ইভেন্ট কভার করে সাংবাদিকদের আর দিন চলবে না।

যিনি যত নতুন বিষয়কে নতুন করে তুলে ধরতে পারবেন কিংবা বিনোদনধর্মী বিষয়-আশয়কে প্রাধান্য দিয়ে পাঠক আকর্ষণ করতে পারবেন, তাঁদের জন্যই ভবিষ্যৎ। সংবাদপত্র হয়তো পাঠকদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এক অনন্যসাধারণ ফোরাম হয়ে গড়ে উঠবে। হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক ও আদর্শিকভাবে পাঠক সাধারণ একত্র হয়ে কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর অনেক ক্ষেত্রে জনগণের অনাগ্রহ এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে একটি ধারা গড়ে উঠতে পারে। এটি আমার একান্তই নিজস্ব ভাবনা।

ভবিষ্যৎই এর জবাব দেবে। আবার এই ধারার সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের গভীর মেলবন্ধনও তৈরি হতে পারে। প্রতিটি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের আজকাল অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের মধ্যে গভীর প্রণয় বা ভাব লক্ষ করা যায়।

একই সঙ্গে প্রযুক্তির সম্ভাবনা এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনাচার যদি দ্বন্দ্বে পরিণত হয়, সে ক্ষেত্রে আপসরফা কীভাবে সম্ভব। ব্যক্তিমানসে এই দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত আমাদের বিচারমূলক (জাজমেন্টাল) পরিস্থিতি তৈরি করছে। আমরা এত বেশি প্রভাবিত হচ্ছি যে আমাদের নিজস্ব চিন্তাচেতনার বৈশিষ্ট্য লোপ পেতে চলেছে। যন্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর সংস্কৃতির প্রভাবে মানব মনের সৃজনশীল কিংবা উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে।

এদিকে যন্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধি ব্যতীত হ্রাস পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ‘ফিরিয়ে দাও আমার এই অরণ্য’ বলে চিৎকার শুধু প্রতিধ্বনিত হবে, এর বেশি কিছু প্রত্যাশা করে লাভ কী? সামাজিক মাধ্যম যে গতিতে এগোচ্ছে এবং নেট ব্যবহারকারীদের নেশাগ্রস্ত করে তুলছে, তাতে এর বিস্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

মানবজীবনের আচার-আচরণে কতখানি সময় প্রযুক্তি আর কতখানি সময় এর ব্যতিরেকে চলতে পারে, তার কোনো আদর্শিক মাপকাঠি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।তবে এই দুটোর ভারসাম্য রক্ষা করে তার আদর্শিক সংমিশ্রণ মানবজীবনে জরুরি হয়ে পড়েছে। গতিময়তায়ও একরকম সংযম প্রয়োজন।

লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত