রক্তের লোহিত কণিকার সঙ্গে বিশেষ একটি প্রোটিন যুক্ত থাকে, যা হিমোগ্লোবিন নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে রক্ত আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে। দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়াই রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া।
প্রসূতিদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটারে ১১ গ্রাম বা এর কম থাকাকে মাতৃত্বকালীন রক্তশূন্যতা বলা হয়।
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার কারণ
- গর্ভাবস্থায় শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। অপর্যাপ্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া রক্তশূন্যতার কারণ।
- প্রসূতিদের শরীরে রক্ত তরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকে। ফলে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা কমে যায় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনের জন্য ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি-১২ প্রয়োজনীয়। এর স্বল্পতার কারণে রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে।
- কোনো প্রসূতির শরীরে আগে থেকে আয়রনের মাত্রা কম থাকলে তাঁর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
- যাঁদের জন্মগত হিমোগ্লোবিনজনিত রোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট বা হিমোগ্লোবিনপ্যাথিস আছে, গর্ভাবস্থায় তাঁরা রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
- গর্ভবতী ক্রিমি সংক্রমণজনিত রক্তশূন্যতা থেকে আক্রান্ত হতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতার উপসর্গ
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি ভাব
- শরীরের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- মাথাব্যথা
- হাত ঠান্ডা থাকা
- বুক ধড়ফড় করা
- শ্বাসকষ্ট
- পায়ে বা সারা শরীরে পানি জমা
- খাদ্য নয়, এমন বস্তু খাওয়ার আসক্তি হওয়া।
মাতৃত্বকালীন রক্তশূন্যতার প্রভাব
গর্ভকালীন রক্তশূন্যতা মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। ফলে মায়ের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, প্রসবপূর্ব রক্তক্ষরণ, হার্ট ফেইলিউর, অকালে প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। গর্ভস্থ শিশু ওজনহীনতা, জন্মগত ত্রুটি, জন্মগত রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।
প্রতিকার
- গর্ভকালীন নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুসারে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
- এ সময়ে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেতে হবে।
- সন্তান নেওয়ার আগে মায়ের কোনো রক্তরোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
- একটি থেকে আরেকটি সন্তান নেওয়া মধ্যবর্তী সময়ে বিরতি দিতে হবে।
- প্রয়োজনে প্রসূতিকে রক্ত দিতে হবে।
লেখক: প্রভাষক, প্যাথলজি,বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে