আপনি যদি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে যান, তাহলে ডাক্তার বা নার্সের দেখা না-ও পেতে পারেন। তার বদলে দেখতে পারেন কতিপয় কুকুর সেখানে অবস্থান করছে, হয় ডাক্তারের টেবিলে নয়তো রোগীর বিছানায়। ভুল করে পশু হাসপাতালে চলে এসেছেন কি না, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মানুষের চিকিৎসা করার জন্যই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি এমন একটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রোগীদের বিছানা এবং ডাক্তারের টেবিলের ওপর শুয়ে আছে কুকুর। যিনি ছবিটি তুলেছেন, সেই ব্যক্তি পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ছবির পেছনের গল্প বলেছেন। সেই সংবাদ ছাপা হয়েছে আজকের পত্রিকায়।
শুক্রবার রাতে তিনি একজন রোগীকে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। রাত একটার দিকে বিশেষ প্রয়োজনে তিনি নার্সের খোঁজ করেন। নার্সদের কক্ষের দরজা বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে গিয়ে তিনি ওই কুকুর-কাণ্ড দেখেন। তখন তিনি রোগীদের বিছানায় দুটি এবং ডাক্তারের টেবিলে একটি বিশ্রামরত কুকুরের ছবি তুলে নেন মোবাইল ফোনে। রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে সেই ছবি তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা দেখে ফেসবুকে পোস্ট করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
এরপর স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয়ে যায় সমালোচনা। হবেই-বা না কেন? জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যদি সেবাদানকারীরাই না থাকেন, তাহলে সাধারণের ক্ষুব্ধ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তাঁরা অভিযোগ করে ওই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের শাস্তি দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও জাহিদুল হক বলেছেন, এই ছবি সাম্প্রতিক সময়ে তোলা কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সাম্প্রতিক হোক কিংবা পুরোনো, ছবির পেছনের ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। চিকিৎসালয়ে চিকিৎসক ও অন্যান্য সেবাদানকারী থাকবেন; যেকোনো সময় জরুরি প্রয়োজনে যেন তাঁদের সাহায্য পাওয়া যায়, সে জন্য তাঁদের দায়িত্ব ও সময় ভাগ করে দেওয়া থাকে। তাহলে কেন প্রয়োজনের মুহূর্তে তাঁদের পাওয়া যাবে না, সেই জবাবদিহি কিন্তু তাঁদেরই করতে হবে।
যাঁরা চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই শুরুতে মানুষের সেবা করার শপথ নেন। কিন্তু প্রায়ই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খবর হয়ে প্রকাশ পায় যে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে যথাস্থানে ডাক্তার-নার্স পাওয়া যায়নি। তাই কিছু উদাসীন সেবকের ‘ফাঁকিবাজ’ না বললেই নয়। তাঁরা কি তাঁদের শিক্ষাজীবনে নেওয়া শপথের কথা ভুলে গেছেন?
মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা। এমন নয় যে মুফতে একজন চিকিৎসক কিংবা নার্সকে সেবা দিতে অনুরোধ করা হয়। মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার শপথটা তাঁদের ভুলে গেলে চলবে না। নইলে চতুষ্পদীরা এভাবেই তাঁদের জায়গা দখল করতে থাকবে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে