Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

আল মামুন জীবন ও শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ১ দিন পেরিয়ে গেলেও পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে এখন পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে অফিসের ফাইলপত্র জ্বলছে, উঠছে ধোঁয়া। 

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় জেলা শহরের প্রবেশদ্বার করতোয়া বীজ সংলগ্ন পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। এ দিকে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বেশ কিছু ব্যক্তির বাড়িতে এখন পর্যন্ত কয়লা থেকে ধোয়া উড়তে দেখা গেছে। 

দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিম পাশে পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের পুলিশ বক্স পুড়ে গেছে। ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করা জানালার কাচ বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অফিসের ভেতরে থাকা মোটরসাইকেল, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবপত্র এবং ফাইল পুড়ে গেছে। 

ট্রাফিক অফিসে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রট্রাফিক অফিসে এসব ভাঙচুর ও পুড়ে যাওয়া কয়লা দেখছিলেন নিমনগর গ্রামের শাওন আলী নামে এক যুবক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরপরে আমরা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি ভয়ে। সকাল থেকেও আতঙ্কে ছিলাম। বিকেলের পর পুলিশ, বিজিবিকে রাস্তায় দেখে বের হয়েছি। শুনেছিলাম ট্রাফিক পুলিশের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন এসে দেখলাম আগুন এখনো জ্বলছে, ফাইলপত্র পুড়ছে। কিছু ফাইলপত্র এখনো রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কেউ আসেনি।’

ট্রাফিক অফিস দেখতে আসা রহিমুল্লাহ নামের অপর এক যুবক বলেন, ‘আমি এখানে আসার আধা ঘণ্টা হলো। অফিসের কাউকে দেখিনি। অফিসের সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দেয়াল আর টিন ছাড়া কিছুই বাদ যায়নি।’

পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী কামরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ৭টি মোটরসাইকেল,১টি কম্পিউটারসহ ৬টি কক্ষে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র, সরকারি ফাইল এবং কাপড়চোপড় পুড়ে গেছে। গতকাল থেকে সকলেই অফিসের বাইরে। আমি এখন অফিসের দিকে যাচ্ছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরপঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আমরা পুরো টিম সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। কোনো স্থানে আগুনের খবর দিলে আমরা যাব, যদি পুলিশের নিরাপত্তা পাই।’ 

এ দিকে পঞ্চগড় শহর থেকে ‍দুই কিলোমিটার দুরে আহমাদিয়া গ্রাম, শালসিড়ি ও ফুলতলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাড়ির সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। অনেক বাড়ির আংশিক জ্বললেও ভেঙে ফেলা হয়েছে টিনের বেড়া, দরজা ও জানালা। কিছু বাড়ির পোড়া কয়লা থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। 

ফুলতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হানিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা, তখন আমরা সবাই সালানা জলসার মাঠে ছিলাম। ভয়ে বের হয়নি। সকাল ১০টার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এলাকায় আসার পর আমরা নিজ বাড়িতে ফিরেছি। যে কাপড় পড়ে সালানা জলসায় গিয়েছিলাম। সেটা ছাড়া সবই পুড়ে গেছে। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ 
 
তাঁর মতো ওই এলাকার প্রত্যেকটি বাড়ি সবকিছু পুড়ে গেছে। অনেকের গরু-ছাগল, নগদ টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যেসব নিতে পারেনি সেগুলো জ্বালিয়ে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে শনিবার বিকেল ৪টায় পঞ্চগড়ের সালানা জলসার মাঠে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আহমদিয়া মুসলিম জমা’ত এর গণযোগাযোগ, প্রেস ও মিডিয়া বিভাগের বহিঃসম্পর্ক সম্পাদক আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ির কোনো কিছুই রক্ষা করা যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে। সেটা আমরা লোক পাঠিয়ে নিরূপণ করছি। পরে আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারব।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরশনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও শহরের চৌরঙ্গীর মোড়, ধাক্কামারার মোড়, গোল চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যান চলাচলসহ লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে বেরোচ্ছেন না কেউ। আর কঠোর টহলে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও যাত্রীসংকটে অলস সময় পার করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ রিকশা ও ইজিবাইকের চালকেরা। 

উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩) নামের দুই তরুণ নিহত হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ৯ সদস্য ও ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। 

নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়লে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন আরিফুরকে উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার বিকেলে তাঁর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

অপর দিকে নিহত জাহিদ হাসান নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলার চিরোইল নোটাবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাঁকে করতোয়া নদীর ধারে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া জামাতের সালানা। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের নতুন কমিটি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের নতুন কমিটি

দেশের স্বাস্থ্যখাতের সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৬–২৭ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি পদে প্রতীক ইজাজ (দেশ রূপান্তর) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মো. মোজাহিদুল ইসলাম শুভ (এখন টেলিভিশন) নির্বাচিত হয়েছেন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বিএইচআরএফ নির্বাচন–২০২৬ এর চেয়ারম্যান আবুল খায়ের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল ও কবির আহমেদ খান। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৬–২৭ আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে।

কমিটিতে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন—মোহাম্মদ আয়নাল হোসেন (সিটিজেন জার্নাল) ও মোহাম্মদ আল আমিন (ডেইলি সান)। যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন মাহমুদ কমল (মাছরাঙা টিভি)। অর্থ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আজাদুল আদনান (আমার দেশ), সাংগঠনিক সম্পাদক তবিবুর রহমান (সমকাল), দপ্তর সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম (ঢাকা পোস্ট) এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদুল হাসান (কালবেলা)।

কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন শামিমুজ্জামান চৌধুরী (মোহনা টিভি), বুদ্ধদেব কুন্ডু (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি), তাওসিয়া তাজমিম (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড—টিবিএস) এবং নেসার উদ্দিন আহাম্মদ।

এর আগে, বিএইচআরএফের সদ্য বিদায়ী সভাপতি রাশেদ রাব্বির সভাপতিত্বে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল ও সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. বায়েজদী মুন্সী বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে কর্মীদের মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মানববন্ধন শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।

আজ শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কার্যালয়ের সামনে ‘প্রথম আলোর ওপর আক্রমণের প্রতিবাদ’ লেখা ব্যানার হাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এতে অংশ নেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকসহ সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

প্রথম আলোর ওপর হামলার নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে এর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘গত ২৭ বছরে এই প্রথম আজকে আমাদের পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। পত্রিকার অনলাইন ভার্সনও বন্ধ রয়েছে। প্রথম আলোর ওপরে হামলাকে আমরা বাংলাদেশের বাক্‌স্বাধীনতা, ভিন্নমতের প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরে কঠিন আক্রমণ হিসেবেই দেখছি।’

সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করেই বলতে চাই, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে নস্যাৎ ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এবং আগামী নির্বাচনকে পথভ্রষ্ট করার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে খুঁজে বের করা হোক।’

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সাজ্জাদ শরিফ বক্তব্য দেওয়ার সময় কয়েকজন ব্যক্তি হট্টগোল শুরু করেন। তাঁরা প্রথম আলোর উদ্দেশে গালিগালাজ করেন।

এ পরিস্থিতিতে কর্মসূচি দ্রুত শেষ করে প্রথম আলোর কর্মীরা বিক্ষোভস্থল থেকে চলে যান। এরপর পুলিশ হট্টগোলকারীদের কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের দিকে সরিয়ে দেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উপকূলীয় স্বাস্থ্যসেবায় ‘শহীদ ওসমান হাদি’ ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
উপকূলীয় ও দুর্গম চরাঞ্চলবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় চালু হয়েছে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়
উপকূলীয় ও দুর্গম চরাঞ্চলবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় চালু হয়েছে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

দেশের উপকূলীয় ও দুর্গম চরাঞ্চলবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি আধুনিক ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স চালু করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের উদ্যোগে মনপুরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়।

আজ শুক্রবার সকালে ভোলার মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘শহীদ ওসমান হাদি’ নামে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির স্মরণে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ ওসমান হাদি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স’। ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সটির মাধ্যমে নদী ও সাগরবেষ্টিত দুর্গম এলাকায় রোগী পরিবহন, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তরের সময় শরিফ ওসমান হাদির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

উপদেষ্টা জানান, ওসমান হাদির নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ কঠোর শাস্তি প্রদানে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ছিলেন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে একজন আপসহীন ও সাহসী কণ্ঠস্বর। তাঁর আত্মত্যাগ ও আদর্শ মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। উপকূলীয় মানুষের জীবন রক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের মতো মানবিক উদ্যোগের সঙ্গে তাঁর নাম যুক্ত করতে পেরে আমরা গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, সরকার উপকূলীয় ও দুর্গম অঞ্চলের জনগণের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নদী ও সাগরনির্ভর জনপদের বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের মতো উদ্যোগ মানুষের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও মনপুরা উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁর নিজ জেলা ঝালকাঠিতে আবারও বিক্ষোভ-মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী।

আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজ শেষে ঝালকাঠি ঈদগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ-মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরিশাল–খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি কলেজ মোড়ে এসে রাস্তা অবরোধ করে। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তবে অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, ওষুধ বহনকারী যানসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

এ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন এবং হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

মহাসড়ক অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকেরা।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলমান থাকবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও জানান তাঁরা।

একই ইস্যুতে জেলার নলছিটি উপজেলায়ও জুমার নামাজের পরে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, ওসমান হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত