‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির শুটিংয়ের সময় কয়েকবার পালামৌ যেতে হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটকে। একবার সৌমিত্র ইউনিটের সঙ্গে যেতে পারেননি। ভেবেছিলেন এক দিন পর কলকাতা থেকে রাঁচি এক্সপ্রেসে করে জায়গামতো পৌঁছে যাবেন। কিন্তু সে সময় ছিল কলকাতার বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যাম। স্ট্র্যান্ড রোড ও হাওড়া ব্রিজের ট্রাফিক জ্যাম অতিক্রম করে স্টেশনে পৌঁছে সৌমিত্র দেখলেন ট্রেন চলে গেছে। আবার যানজট ঠেলে রাত ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরে ছবির প্রযোজককে তিনি জানালেন, পালামৌ যেতে পারেননি। পরদিন যেন রাঁচি পর্যন্ত একটা এয়ার টিকিটের বন্দোবস্ত করা হয়। সেই মতো টিকিট জোগাড় হয়ে গেল। সেই প্লেনে যাচ্ছিলেন ছবির অন্যতম নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর আর বন্ধু মোহন বিশ্বাস।
প্লেন তো ছাড়ল, কিন্তু ঝোড়ো হাওয়ার জন্য তা রাঁচিতে না নেমে নামল পাটনায়। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বন্যাপ্লাবিত রাস্তা দিয়ে চিপাদর পর্যন্ত পৌঁছালেন। তখন বিকেল। সৌমিত্রের সংকোচ হতে লাগল। সত্যজিৎ রায় বা মানিকদা নিশ্চয়ই পুরো ইউনিট নিয়ে শুটিংয়ের অপেক্ষা করছেন। লাঞ্চের আগেই পৌঁছানোর কথা ছিল সৌমিত্রের। কিন্তু চিপাদরেই তো বিকেল! সেদিন শর্মিলার কোনো
শুটিং ছিল না।
লোকেশনে পৌঁছে কুণ্ঠিত গলায় যানজট, ট্রেন মিস, রাঁচির প্লেন পাটনায় ইত্যাদি বলা শুরু করলেন সৌমিত্র। সত্যজিতের মাথায় তার কিছুই ঢুকল না, তিনি শুরুতেই বললেন, ‘এসে গেছো, তা তুমি এখন শট দিতে পারবে? শরীর ঠিক আছে তো?’
কোনো মেকআপ নেই। শুধু পথের কাপড় বদলে নিয়ে শুরু হয়ে গেল শুটিং। ছবিটি দেখলে অনেকেরই মনে পড়ে যাবে সেদিনের সংলাপগুলো:
‘সানসেট! এ রকম সানসেট কোথায় দেখা যায় বলো তো?’
‘পৃথিবীর যেকোনো জায়গায়, কলকাতায় তো বটেই।’
‘ওয়েস্টার্ন বইয়ে, নারে হরি?
‘বার্ট ল্যাংকেস্টারের একটা বইয়ে ছিল।’
কী মনে পড়ছে?
সূত্র: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মানিকদার সঙ্গে, ৪৩-৪৪
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে