রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার হাজতে ছেলে। খবর পেয়ে দেখা করতে এসেছেন মধ্যবয়সী এক মা। হাজতের লোহার গ্রিলের দুই পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মা-ছেলে। এ সময় হাজতখানায় এক আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়। মা ছেলেকে বলেন, ‘উনি তো বেঁচে নেই।’ ছেলে বলে, ‘আরে আমি জানি, আমি তো ওই মামলায় গ্রেপ্তার হইনি। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছি। তুমি চিন্তা করো না।’
মা-ছেলের এমন কথোপকথন হাজতখানার নিরাপত্তারক্ষী একটু দূরে দাঁড়িয়ে অস্পষ্টভাবে শোনেন। এবার তিনি তাঁদের কাছে এসে দাঁড়ান। আরও কিছু শোনার চেষ্টা করেন।
ওই নিরাপত্তারক্ষী বুঝতে পারেন, কোনো হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলছেন মা-ছেলে। নিরাপত্তারক্ষী তাঁর সন্দেহের কথা থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। পরে সাক্ষাৎ শেষে মা চলে গেলে হাজতে থাকা ছেলেকে যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশ জেরা করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, যাত্রাবাড়ীতে গত শনিবার রাতে ছুরিকাঘাতে নিহত পোশাকশ্রমিক খলু মিয়া ওরফে খলিলকে (২৮) হত্যা করেন তিনি। এরপর হাজতে থাকা তরুণকে খলিল হত্যায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম আরিফ (২৩)।
যাত্রাবাড়ী থানা-পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শনিবার যাত্রাবাড়ীর ধলপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত পোশাকশ্রমিক খলিল ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। এই ছিনতাইয়ের নেতৃত্বে ছিলেন আরিফ। সোমবার আদালতের একটি পরোয়ানায় আরিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আরিফের মা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। হাজতে মা ও ছেলের কথোপকথনের সূত্র ধরে খলিল হত্যার সঙ্গেও তাঁর সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুরো ছিনতাই চক্রের সন্ধান পায় পুলিশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুরো চক্রকে গ্রেপ্তারে কাজ করছে থানা-পুলিশ।
শনিবার রাতে পোশাকশ্রমিক খলিল তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের বাসায় ফিরছিলেন। যাত্রাবাড়ীর ধলপুরের বউবাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। তাঁকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে খলিলকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে