কিশোরগঞ্জে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় রুপালী আক্তার (২২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পর স্বজনেরা জানতে পারেন, মৃত্যুর পর প্রসূতির লাশ গুম করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এরপর খবর পেয়ে আরেক হাসপাতালের মাঠ থেকে ওই প্রসূতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাতে সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ‘আল-হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটাল’ নামের একটি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
রুপালী সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের বড়খালের পাড় গ্রামের মো. পলিন ইসলামের স্ত্রী।
রুপালীর মামাশ্বশুর মো. শরীফ, দেবর পাভেল জানান, চিকিৎসক আক্তার নাহার জ্যোতিকে দেখানোর জন্য রুপালীকে আল-হেরা ক্লিনিকে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর বলা হয়, পেটের বাচ্চা বড় হয়ে গেছে। রুপালীর বাচ্চা কোনোভাবেই নরমালে হবে না, সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিজার করানোর জন্য রোববার বিকেলে রুপালীকে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে চিকিৎসক আক্তার নাহার জ্যোতি (৩০), চিকিৎসক নাজমুল হাসান সোহেল (৪০), চিকিৎসক মাহমুদাসহ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন নারী ও পুরুষ এসে রুপালীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে এক ব্যক্তি বের হয়ে বলে, সিজার সম্পন্ন হয়েছে এবং ছেলে বাচ্চা হয়েছে। তারপর প্রসূতি রুপালীর কথা জিজ্ঞেস করলে সুস্থ আছে বলে তাড়াহুড়ো করে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়েন।
স্বজনেরা আরও জানান, এরপর দু-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও রুপালীকে দেখতে পারেননি তাঁরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্বজনেরা জানতে পারেন, রুপালী ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন এবং তাঁর মরদেহ গুম করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পালিয়ে গেছে। পরে স্বজনেরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে রুপালীর মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাঠ থেকে উদ্ধার করে।
প্রসূতির মামা আতিকুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মেয়ের লাশ মৃত্যুর পর আমাদেরকে না জানিয়ে হাসপাতালের লোকজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাঠে রেখে পালিয়ে যায়। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।’
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে আল হেরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেনি তারা।
এদিকে প্রসূতির মরদেহ ও শিশুকে উদ্ধারের পর পাঠানো হয় কিশোরগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে একটি নবজাতক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে রুপালী নামের এক নারীর মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে এলে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’
বিএমএর সাধারণ সম্পাদক বাদল ওয়াহাব বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, মরদেহ মর্গে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।’
সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আল হেরা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হসপিটালটি অনুমোদনহীন। এরই মধ্যে হাসপাতালটিকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। নবজাতককে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠাই। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি, রুপালীর মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাঠে রয়েছে। আমরা গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করি।’
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলার অভিযোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে