রাজধানীর ভাটারার প্রগতি সরণি এলাকায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের বাসচাপায় নর্দান ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাদিয়া আক্তার (২৪) নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। শিক্ষার্থীরা আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থানাধীন কাওলা এলাকায় বিকেল পাঁচটার দিকে মহাসড়কের উভয় পাশে অবরোধ করেন সহপাঠীরা। এতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশের অনুরোধে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সরে যান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী হত্যার বিচার চাই। বিচারের দাবিতে আমরা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। প্রতিনিয়তই মহাসড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে। এর আগেও শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে নেমে আন্দোলন করেছে, কিন্তু মহাসড়কে মৃত্যু কমেনি। আজ আমাদের সহপাঠীকে হারিয়েছি। কাল হয়তো অন্য কোনো মা-বাবা তাঁদের সন্তান হারাবেন। আবার সন্তানেরা হারাবেন তাঁদের বাবা-মাকে। সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল আর কত কাল চলবে।’
বাসচালককে অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সড়কে আর কেউ প্রাণ হারাক, তা আমরা চাই না।’
মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীর আন্দোলন প্রসঙ্গে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নাদিয়া নামের এক ছাত্রী বাসচাপায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন। পরে পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে।’
মহাসড়কে যানজট প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার কারণে মহাসড়কের যানজট ছিল। বিকেলে যখন যানজট স্বাভাবিক করা হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ফলে আবার যানজটের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে সড়কের চারদিকে যানজট লেগে গেছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কখন যান চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা বলা যাচ্ছে না।’
ভাটারা থানার সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার এএসআই আকলিমা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিহত ছাত্রীর মরদেহ সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
উল্লেখ্য, আজ বেলা পৌনে ১টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে রাজধানীর ভাটারার প্রগতি সরণি এলাকায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনের বাসচাপায় নর্দান ইউনিভার্সিটির ছাত্রী নাদিয়া নিহত হন।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নাদিয়া তাঁর বন্ধুর মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। এ সময় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।’
ওসি বলেন, ‘নাদিয়ার বন্ধু মোটরসাইকেলচালক অক্ষত আছেন। তাঁকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঘটনার পরপরই বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী সারোয়ার নামের এক পথচারী বলেন, ‘বাসটি প্রথমে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল থেকে মেয়েটি ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় বাসচালক তাঁর গায়ের ওপর দিয়ে বাসটি চালিয়ে দেন। চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে