মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে কনটেইনারের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক বাংলাদেশি কিশোরকে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালি কনটেইনারে লুকিয়ে কেলাং বন্দরে পৌঁছায় ওই কিশোর। এ ঘটনা এবারই প্রথম নয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ও জাহাজে লুকিয়ে গত এক যুগে মোট ৯ জন গেছে বিদেশে। তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে মালয়েশিয়ায় কনটেইনারের ভেতর থেকে কিশোরের চিৎকার শুনে নাবিকেরা এগিয়ে গেলে জাহাজের ক্যাপ্টেনের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর ১৭ জানুয়ারি জরুরি ভিত্তিতে জাহাজটি কেলাং বন্দরে বার্থিং করে কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোর বর্তমানে চিকিৎসাধীন। বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে দিয়ে কনটেইনার ও জাহাজে লুকিয়ে বিদেশ যাওয়ার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলেছে। ছয়জন জীবিত ফিরতে সক্ষম হয়েছে। সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকা থেকে কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ইন্টিগ্রা জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জানায়, জাহাজটি ১ হাজার ৩৩৭ টিইইউস (২০ ফুট হিসেবে) কনটেইনার নিয়ে ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩ টিইইউস ছিল খালি। ১৬ জানুয়ারি জাহাজটি পোর্ট কেলাং পৌঁছার পর একটি কনটেইনার থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে নাবিকেরা ক্যাপ্টেনকে জানান। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হয়। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, খালি কনটেইনারে করেই ওই কিশোর পোর্ট কেলাং পৌঁছায়। কিন্তু সে খালি কনটেইনারে ডিপো থেকে উঠল, নাকি বাইরে থেকে এল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা শুনেছি চট্টগ্রাম থেকে একটি জাহাজের খালি কনটেইনারে যাওয়া একজনকে উদ্ধার হওয়ার কথা। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। মালেশিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের এখনো কিছু জানায়নি। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে।’
গত বছরের ১০ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পেনাং সমুদ্রবন্দরে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া খালি কনটেইনারের ভেতর একজনের লাশ পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল সিঙ্গাপুর বন্দরে একটি খালি কনটেইনার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুজন অস্থায়ী শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে দ্বীন ইসলাম ছিলেন কঙ্কালসার এবং আল আমিন নামের আরেক শ্রমিক ছিলেন মৃত।
২০১৭ সালের ৩১ জুলাই যুক্তরাজ্যগামী পোশাকের একটি কনটেইনার থেকে বাবুল ত্রিপুরা নামের এক শ্রমিককে উদ্ধার করেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা।
২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে একটি খালি কনটেইনার থেকে রোহান হোসেন নামের এক বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। রোহানের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে ছিল।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া জাহাজে করে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার সময় ধরা পড়েন মো. রিপন। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল এমভি টাম্পা বে নামের শ্রীলঙ্কার কলম্বোগামী একটি জাহাজে লুকিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় বরিশালের আকতার আলীকে আটক করেন বন্দরকর্মী ও নাবিকেরা।
২০১০ সালের ৮ জুন অবৈধভাবে বন্দরে ঢুকে সোয়েব রিপন নামের এক যুবক ‘এমভি হ্যানসা ক্যালিডোনিয়া’ জাহাজে লুকিয়ে থাকেন। সিঙ্গাপুরে যাত্রাপথে একজন নাবিক জাহাজে তাঁকে শনাক্ত করেন। পরে তাঁকে একই জাহাজে করে চট্টগ্রামে ফেরত আনা হয়।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে