ফজলুল কবির

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। ব্যক্তি দিয়ে যেহেতু সমাজ-দেশ ইত্যাদি তৈরি হয়, সেহেতু দেশ বা রাষ্ট্রেরও তো এ কথা জানা থাকার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বৈশ্বিক পরাশক্তি সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ। যুদ্ধে সে সময়ের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকা তো বটেই, ইউরোপেরও নেতা হিসেবে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই নেতৃত্ব গোটা বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, যেখানে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই দ্বিমেরু বিশ্ব কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে হাজির হয় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো, যাদের শক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে এখনো আছে ওয়াশিংটন।
এই হয়ে ওঠা কিন্তু ‘হঠাৎ পাওয়া’ কিছু ছিল না। বলা যায়, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ীই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বমোড়লের আসনটিতে বসেছিল। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক রেডিও বার্তায় বলেন, ‘গণতন্ত্রের মহত্তম অস্ত্রে পরিণত হতে হবে আমেরিকাকে’। নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ তো বটেই, নিজেকে রক্ষার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি এই অস্ত্রে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। এর এক বছর পর যখন পার্ল হারবারে হামলা চালাল জাপান, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলো যুদ্ধকালীন উৎপাদনে সম্পূর্ণ নিয়োজিত হয়। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল ডেট্রয়েটের গাড়ি উৎপাদনকারী কারখানাগুলো।
একটু উদাহরণ দেওয়া যাক। হিস্ট্রি ডটকম ও ন্যাশনালডব্লিউডব্লিউ ২ মিউজিয়াম ডটওআরজি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, পার্ল হারবার আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাঁকবদল করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে এই যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে যায়। তাদের প্রতিটি কারখানা তো বটেই, প্রতিটি কর্মকাণ্ডই তখন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে শুরু করে। এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় বেকারত্ব, সামরিক-বেসামরিক মানুষের জীবন থেকে শুরু করে সবকিছু। সেসব অন্য আলোচনার বিষয়। এখানে শুধু অস্ত্র নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ডেট্রয়েটের গাড়ি তৈরি কারখানাগুলো সে সময় রাতারাতি পরিণত হয় অস্ত্র উৎপাদনকারী কারখানায়। ডেট্রয়েটের ওল্ডসমোবাইলে শুরু হয় কামানের উৎপাদন, ক্যাডিলাকে ট্যাংক, ক্রিসলারে মেশিন-গান উৎপাদন। আর বিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানি শুরু করে বি-২৪ বোম্বার তৈরি।
আজকের রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে মার্কিন সরকার ও কারখানাগুলো কি একই বাস্তবতায় এসে দাঁড়িয়েছে? সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের সক্ষমতা কি চাহিদা বিবেচনায় বেড়েছে বলা যাবে? সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মিত্রদের সহায় হওয়ার একক ক্ষমতা কি যুক্তরাষ্ট্রের আছে, নাকি কোথাও কিছু ক্ষয় হয়েছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দেখা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে এখন কী চলছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আট দশক পর আজকের এই সময়ে রুজভেল্টের সেই চেয়ারে বসে আছেন জো বাইডেন। না পার্ল হারবার এখনো হয়নি, তেমনটা কেউ চায়ও না। কিন্তু যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা ভালো, শুরু থেকেই যুদ্ধের গোড়াটি আগলে বসে আছে যুক্তরাষ্ট্র। না প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষে। হোয়াইট হাউসের ভাষায়, ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে যেকোনো মূল্যে জয়ী দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ এই যেকোনো মূল্যটা কী?
একটু পেছনে ফেরা যাক, যুদ্ধের এক সপ্তাহের ভেতরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনায় বসার জন্য জেরবার হয়ে উঠেছিলেন। বলেছিলেনও সে কথা। কিন্তু বাকি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে সে আলোচনা আর হয়নি, যুদ্ধও থামেনি। দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ক্ষয় ও মৃত্যু দেখছে বিশ্ব। কিন্তু জেলেনস্কিকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র অনড়, অনড় রাশিয়াও। এ তাদের দুই দেশের মর্যাদা ও টিকে থাকার লড়াই। রাশিয়া যেমন খোলাখুলি বলছে, যুদ্ধের এই পর্যায় থেকে পিছু হটলে রাশিয়া নামে কিছু আর থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র তেমন খোলাখুলি না বললেও, ঘটনা একই। না, যুদ্ধ কোনো একটি দেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা হবে না নিশ্চিত। কিন্তু পরাশক্তির কাতার থেকে তাদের নাম খসে যেতে পারে পরাজয় বা পিছু হটার সূত্র ধরে। ইউক্রেনের সে ভয় না থাকলেও এ যুদ্ধের ময়দান সে-ই।
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া। যেকোনোভাবে তারা এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাশিয়া নতি স্বীকার করে। আর রাশিয়া তার যুদ্ধের কারণগুলোর মীমাংসা চায়। যুদ্ধের ময়দানে সে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র তার দাবিগুলো মেনে না নিচ্ছে। দুটি পক্ষই অনড় অবস্থানে দাঁড়িয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৮ এপ্রিল দেশটির কংগ্রেসের কাছে ইউক্রেন সংকট সামাল দিতে আরও ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার চেয়েছেন। বলে রাখা ভালো, চলতি বছরই এই সংকটের প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস ১৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল অনুমোদন দিয়েছিল। এর বাইরে বাড়তি এই টাকা চাওয়া হয়েছে। কোন পথে ব্যয় হবে এই অর্থ, সে হিসাবও দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা বলছে, এই তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেন ও ইউরোপে মার্কিন মিত্রদের সামরিক সহায়তা খাতে ব্যয় হবে। বাইডেন বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ ব্যয়বহুল; কিন্তু এই আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার আরও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।’
বাইডেনের এই বক্তব্য কি পার্ল হারবার ঘটনার আগে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটা মিলে যায় না? ১৯৪০ সালে বসে যখন রুজভেল্ট সে বক্তব্য দেন, তখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আক্রান্ত বা আক্রমণকারীর ভূমিকায় নেই। এবারও নেই। দুবারই যুক্তরাষ্ট্র ঘটনার আগে থেকেই মিত্রদের প্রতি সামরিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ সামনে আসে। আট দশক আগের যুক্তরাষ্ট্রে তা সম্ভব হয়েছিল। এখনকার যুক্তরাষ্ট্র কি একইভাবে সাড়া দিতে পারবে?
এবারের চ্যালেঞ্জটা আরেকটু বড়। এবার যুদ্ধ ময়দান ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম পাঠালেই শুধু চলবে না, সঙ্গে নিজেদের ও ইউরোপের মিত্রদেরও একইভাবে পুনঃসামরিকীকরণ করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলোর সামরিকীকরণের ধরন আর আগের মতো নেই। ফলে পুরো বিষয়টি এখন মার্কিননির্ভর হয়ে আছে। অস্ত্রাগারের মজুত বৃদ্ধির লক্ষ্যে পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগোলে আবার রয়েছে অন্য শঙ্কা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি পরাশক্তির লড়াইয়ের সংকেত দেবে। যুক্তরাষ্ট্র কি শেষ পর্যন্ত এত বড় ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকাতে হবে ইউক্রেন সংকটের শুরুর দিনগুলোর দিকে। সে সময় জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি কখনোই সেখানে সেনা পাঠানোর কথা ভাবতে পারেন না। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে আসবে বিশ্বের অন্যতম বড় সামরিক শক্তি রাশিয়া।
তাহলে কি রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর—হ্যাঁ এবং না। এই যুদ্ধ চলুক— যুক্তরাষ্ট্র এটা চায়, তা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষেত্রে তার দ্বিধা রয়েছে। এ কারণেই মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এবং অনেক তরুণ যুদ্ধে যোগ দিতে ইউক্রেন এলেও নিয়মিত বাহিনীর কেউ সেখানে জড়ায়নি। আবার রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, ইউক্রেনকে সহায়তা করে যুদ্ধকে নিজের পছন্দমতো একটি পরিণতির দিকে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, নিজের অস্ত্রীকরণ নিয়েই এখন চিন্তিত ‘গণতন্ত্রের মহত্তম অস্ত্র’ দেশটি।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টসের গবেষক থমাস মানকিন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে পারাটা আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা কে দেবে? কেউ না।’
হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিকে তারা ৫ হাজার ৫০০ জ্যাভেলিন ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হয় দিয়েছে, নয়তো দেশটির কাছে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয় এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে জ্যাভেলিন ছাড়াও অন্য ধরনের আরও ১৪ হাজার অ্যান্টি-আর্মার সিস্টেম, একজন সেনার বহনক্ষম ১৪০০ স্টিঙ্গার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, ৭০০ সুইচব্লেড (ব্যাকপ্যাকে বহনক্ষম একধরনের বোমা, যা ছোড়ার পর নির্দিষ্ট টার্গেটে গিয়ে উড়োজাহাজের মতো ক্র্যাশ করে এবং ভেতরে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়), ৯০টি ছোট নলের কামান, ১৫৫ মিলিমিটার ব্যাসের ১ লাখ ৮৩ হাজার কামানের গোলা, ১৬টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, ১৪টি কাউন্টার-আর্টিলারি, চারটি কাউন্টার-মর্টার ও দুটি এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডারসহ আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছে।
এই যুদ্ধ যে সমীকরণের প্রকাশ ঘটিয়েছে, তাতে শুধু ইউক্রেনে যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোই আর যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে চালকের আসনে বসতে হলে তার সব মিত্রকেই নিরাপদ রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সে চেষ্টা করছেও। তবে এই চেষ্টা তার করতে হচ্ছে, ট্রাম্প জমানায় আহত ন্যাটো ও ইউরোপকে সঙ্গে নিয়ে। যে কারণে জার্মানিতে যখন দেশটি ৪০টি দেশের বৈঠক ডাকে, তখন তাকে অনেক কিছুই বিবেচনায় নিতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মুখোমুখি বসার সময় তাকে আফগান যুদ্ধ, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় হওয়া যুদ্ধ, চীন, ভারত-চীন দ্বৈরথ ইত্যাদি অনেক কিছুকেই বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। এই সবগুলো অঞ্চলকে নিজের আয়ত্তে রেখে দরকারি পক্ষগুলোর সশস্ত্রীকরণ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের পয়সাতেই করতে হচ্ছে। কারণ, এটি এখন তার ‘মর্যাদার’ আবরণে ‘পরাশক্তি’ পরিচয় টিকিয়ে রাখার লড়াই।
এখন পর্যন্ত এসব অস্ত্র দেশটি তার মজুত থেকেই দিতে পারছে। কিন্তু সামনের চাহিদা পূরণ করতে হলে আট দশক আগের মতো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে হবে। কিন্তু মার্কিন কারখানাগুলো খুব দ্রুতই এমন উৎপাদনে যেতে পারবে না বলে মত দিয়েছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটি জ্যাভেলিন আছে, তা জানা নেই। ১৯৯৬ সালে এটি বাজারে আসার পর দেশটির সরকার ৩৪ হাজার ৫০০ জ্যাভেলিন কিনেছে বলে ধারণা করা যায়। এর মধ্যে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৭ হাজার জ্যাভেলিন ব্যবহার হয়েছে। এই হিসাব ঠিক ধরলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২০২১ সাল নাগাদ ১৭ থেকে ২২ হাজার জ্যাভেলিন ছিল। ইউক্রেন সংকটে এই মজুতের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি বের হয়ে গেল। রইল আর কত? তবে ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, এই হিসাবে মার্কিন মেরিনের কেনা ২৪০০ জ্যাভেলিনকে যেমন ধরা হয়নি, তেমনি ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যবহৃত ৫০০০ জ্যাভেলিনকেও ধরা হয়নি।
সে যাই হোক, জ্যাভেলিন বিবেচনায় নিলেও যুদ্ধ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ও মিত্রদের অস্ত্রাগার ভরতে রীতিমতো লড়তে হবে। এ কথা যুক্তরাষ্ট্র জানে বলে ৩ মে আলাবামার ট্রয়ে অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনে গেছেন স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্ট। ওই কারখানায় বছরে ২১০০টি জ্যাভেলিন উৎপাদন হয়। ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতেই এই কারখানার তিন-চার বছর লাগবে। আর মিত্রদের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্ব পেলে এ সময় আরও বেশি লাগবে। এই কারখানার সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা বছরে সাড়ে ৬ হাজার। কিন্তু এই সর্বোচ্চ সীমায় যেতে হলে এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে লাগবে কাঁচামালের সরবরাহ। কিন্তু এই সরবরাহেই রয়েছে সংকট। একই অবস্থা স্টিঙ্গার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। ১৯৮১ সালে বাজারে আসা এই অস্ত্রের শেষ চালান যুক্তরাষ্ট্র কিনেছিল ২০০৩ সালে। গত বছর এর মার্কিন উৎপাদন বন্ধ হলেও চলতি বছর তা আবার চালু করা হয়। মুশকিল হলো এই অস্ত্র তৈরির কিছু উপকরণ এখন বাজারে পাওয়া কঠিন।
ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলোও কিছু কিছু দিকে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সবার তো উৎপাদন সক্ষমতা নেই। জার্মানির থাকলেও তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতায় নানা বিধিনিষেধে রুদ্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধকে সামনে রেখে সে সক্ষমতা আবার অর্জন করতে চায় জার্মানি। এরই মধ্যে ট্যাংক পাঠানোর কথা জানিয়ে জার্মানি বলেছে, তারা এর চেয়ে বেশি সহায়তা করতে চাইলে কারখানাগুলো চালু করতে হবে।
আকাশ-যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো একটু পিছিয়েই আছে। আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অস্ত্রগুলোই চাওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জার্মানি বড় সহায় হতে পারে। ফ্রান্সেরও সে সক্ষমতা আছে। কিন্তু পুরোনো ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোকে ফের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সম্মতি ও সহায়তা দেওয়ার ঝুঁকি কি যুক্তরাষ্ট্র নেবে? তার অভিজ্ঞতা তো ভালো নয়। আবার আকাশ-যুদ্ধে পশ্চিমের দুর্বলতা লুকানো কিছু নয়। ২০১১ সালে লিবিয়া এবং সিরিয়া যুদ্ধে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার যুক্ত হওয়ার পর এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতাও প্রকাশ্য হয়েছিল। ফলে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কীভাবে এগোবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে নিজের ও মিত্রদের অস্ত্রীকরণ সক্ষমতা এক বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের। এক-মেরু বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়াত্ব তাকে এদিকে অনেক দিন তাকাতে দেয়নি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তার দক্ষতা ও সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জোট ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের (এনডিআইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাশিল্প ক্ষয়ের পথে। সবচেয়ে বড় সংকট হলো দক্ষ কর্মীর অভাব। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদানের সরবরাহ সংকট। আছে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগের দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর অভাব। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে নিজেদের করা জরিপের বরাত দিয়ে এনডিআইএ বলেছে, মোট প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশই তাদের বলেছে, পেন্টাগনে সুনির্দিষ্ট কিছু অস্ত্রের একমাত্র জোগানদাতা তারাই। অর্থাৎ, এক কারখানার ঘাটতি অন্যকে দিয়ে মেটানো কঠিন হবে। প্রয়োজনের মুহূর্তে দক্ষ কর্মী ও প্রযুক্তির সংকট বড় হয়ে সামনে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সংকটগুলো থাকলেও নেই সেই একই ভিত ও প্রেক্ষাপট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বৈশ্বিক যুদ্ধে প্রথম যুক্ত হওয়া। তার মন্দাপীড়িত অর্থনীতি এবং কারখানাগুলো যুদ্ধকালীন উৎপাদনের জন্য মুখিয়ে ছিল সে সময়। সে তখনো পরাশক্তি হয়ে ওঠেনি। পরাশক্তি হওয়ার বাসনা তার মধ্যে প্রবল। তার গণমনস্তত্ত্বও তখন এর পক্ষে ছিল। কারণ, যুদ্ধ-পালানো শরণার্থী, অভিবাসী বা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্রই ছিল তখনকার দৃশ্যপটে। আর আজকের যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধক্লান্ত এক পরাশক্তি। তারও যুদ্ধস্মৃতি থাকলেও গণমনস্তত্ত্বে এর অভিঘাত ক্লান্তিই শুধু। কোভিড সাময়িক মন্দার সময় তৈরি করলেও বেকারত্ব ও বন্ধ কারখানার সংখ্যা এত উচ্চ নয় যে, চাইলেই হুট করে যুদ্ধকালীন উৎপাদন শুরু করতে পারবে সে। তেমনটি করলে ভেতর থেকেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে তাকে পড়তে হতে পারে।
সব মিলিয়ে রাশিয়া সরাসরি যুক্ত—এমন একটি যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা অপ্রস্তুতই বলতে হবে। প্রশ্ন হলো—এমন পরিস্থিতির জন্য বিশ্বমোড়ল কেন অপ্রস্তুত হলো? এর কারণ কি তার অহমিকার মধ্যে লুকিয়ে আছে তবে? সে ভেবেছিল তার দুই মূল বিরোধী শক্তি রাশিয়া ও চীন কখনোই তার বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়াবে না বা তার ঘোষিত মিত্র দেশে সামরিক অভিযান চালাবে না। তার আশা ছিল, সামরিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধ পক্ষ হিসেবে যুদ্ধ ময়দানে ঢুকতে কেউই চাইবে না। ২০১৯ সালে প্রকাশিত মার্কিন পত্রিকা ফরেন অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণেও এমন আশাই প্রকাশ করা হয়েছিল। সঙ্গে মিত্রদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা নিয়েও সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নটি জ্যান্ত থাকলেও আশাটি মিইয়ে গেছে। কারণ, ইউক্রেনকে সামনে রেখে সংকটই এখন বাস্তব। আর বাস্তব এ সংকটে শুধু ইউক্রেন নয় উলুখাগড়ার কাতারে এসে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক দেশ। বর্তমান বা ভবিষ্যৎ মোড়লের মতো কোনো সুবিধা ভোগ করবে না জানলেও অতীতের মতোই তাকে কাতারে কাতারে উজাড় হতে হচ্ছে। তার ফল কী হবে, সেটা কেউ জানে না। তবে এটা নিশ্চিত যে, মার্কিন এ অহমিকার মূল্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অজস্র দেশ ও মানুষকে মেটাতে হচ্ছে এবং হবে। দুঃখ এই যে, মার্কিন এই অহমিকা বৈশ্বিক অহমিকা না হলেও তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সবার জন্যই আজ শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। ব্যক্তি দিয়ে যেহেতু সমাজ-দেশ ইত্যাদি তৈরি হয়, সেহেতু দেশ বা রাষ্ট্রেরও তো এ কথা জানা থাকার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বৈশ্বিক পরাশক্তি সমীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ। যুদ্ধে সে সময়ের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আমেরিকা তো বটেই, ইউরোপেরও নেতা হিসেবে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্র। এই নেতৃত্ব গোটা বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, যেখানে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়ায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই দ্বিমেরু বিশ্ব কাঠামোয় যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষিত মিত্র হিসেবে হাজির হয় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো, যাদের শক্তির ভরকেন্দ্র হয়ে এখনো আছে ওয়াশিংটন।
এই হয়ে ওঠা কিন্তু ‘হঠাৎ পাওয়া’ কিছু ছিল না। বলা যায়, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ীই যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বমোড়লের আসনটিতে বসেছিল। ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক রেডিও বার্তায় বলেন, ‘গণতন্ত্রের মহত্তম অস্ত্রে পরিণত হতে হবে আমেরিকাকে’। নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ তো বটেই, নিজেকে রক্ষার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি এই অস্ত্রে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। এর এক বছর পর যখন পার্ল হারবারে হামলা চালাল জাপান, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলো যুদ্ধকালীন উৎপাদনে সম্পূর্ণ নিয়োজিত হয়। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছিল ডেট্রয়েটের গাড়ি উৎপাদনকারী কারখানাগুলো।
একটু উদাহরণ দেওয়া যাক। হিস্ট্রি ডটকম ও ন্যাশনালডব্লিউডব্লিউ ২ মিউজিয়াম ডটওআরজি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, পার্ল হারবার আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাঁকবদল করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে সঙ্গে এই যুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে যায়। তাদের প্রতিটি কারখানা তো বটেই, প্রতিটি কর্মকাণ্ডই তখন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে শুরু করে। এর সঙ্গে জড়িয়ে যায় বেকারত্ব, সামরিক-বেসামরিক মানুষের জীবন থেকে শুরু করে সবকিছু। সেসব অন্য আলোচনার বিষয়। এখানে শুধু অস্ত্র নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ডেট্রয়েটের গাড়ি তৈরি কারখানাগুলো সে সময় রাতারাতি পরিণত হয় অস্ত্র উৎপাদনকারী কারখানায়। ডেট্রয়েটের ওল্ডসমোবাইলে শুরু হয় কামানের উৎপাদন, ক্যাডিলাকে ট্যাংক, ক্রিসলারে মেশিন-গান উৎপাদন। আর বিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানি শুরু করে বি-২৪ বোম্বার তৈরি।
আজকের রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে মার্কিন সরকার ও কারখানাগুলো কি একই বাস্তবতায় এসে দাঁড়িয়েছে? সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের সক্ষমতা কি চাহিদা বিবেচনায় বেড়েছে বলা যাবে? সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মিত্রদের সহায় হওয়ার একক ক্ষমতা কি যুক্তরাষ্ট্রের আছে, নাকি কোথাও কিছু ক্ষয় হয়েছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে দেখা যাক, যুক্তরাষ্ট্রে এখন কী চলছে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আট দশক পর আজকের এই সময়ে রুজভেল্টের সেই চেয়ারে বসে আছেন জো বাইডেন। না পার্ল হারবার এখনো হয়নি, তেমনটা কেউ চায়ও না। কিন্তু যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা ভালো, শুরু থেকেই যুদ্ধের গোড়াটি আগলে বসে আছে যুক্তরাষ্ট্র। না প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষে। হোয়াইট হাউসের ভাষায়, ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে ইউক্রেনকে যেকোনো মূল্যে জয়ী দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।’ এই যেকোনো মূল্যটা কী?
একটু পেছনে ফেরা যাক, যুদ্ধের এক সপ্তাহের ভেতরেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনায় বসার জন্য জেরবার হয়ে উঠেছিলেন। বলেছিলেনও সে কথা। কিন্তু বাকি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে সে আলোচনা আর হয়নি, যুদ্ধও থামেনি। দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ক্ষয় ও মৃত্যু দেখছে বিশ্ব। কিন্তু জেলেনস্কিকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র অনড়, অনড় রাশিয়াও। এ তাদের দুই দেশের মর্যাদা ও টিকে থাকার লড়াই। রাশিয়া যেমন খোলাখুলি বলছে, যুদ্ধের এই পর্যায় থেকে পিছু হটলে রাশিয়া নামে কিছু আর থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র তেমন খোলাখুলি না বললেও, ঘটনা একই। না, যুদ্ধ কোনো একটি দেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা হবে না নিশ্চিত। কিন্তু পরাশক্তির কাতার থেকে তাদের নাম খসে যেতে পারে পরাজয় বা পিছু হটার সূত্র ধরে। ইউক্রেনের সে ভয় না থাকলেও এ যুদ্ধের ময়দান সে-ই।
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া। যেকোনোভাবে তারা এ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাশিয়া নতি স্বীকার করে। আর রাশিয়া তার যুদ্ধের কারণগুলোর মীমাংসা চায়। যুদ্ধের ময়দানে সে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র তার দাবিগুলো মেনে না নিচ্ছে। দুটি পক্ষই অনড় অবস্থানে দাঁড়িয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৮ এপ্রিল দেশটির কংগ্রেসের কাছে ইউক্রেন সংকট সামাল দিতে আরও ৩৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩০০ কোটি) মার্কিন ডলার চেয়েছেন। বলে রাখা ভালো, চলতি বছরই এই সংকটের প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস ১৩ বিলিয়ন ডলারের তহবিল অনুমোদন দিয়েছিল। এর বাইরে বাড়তি এই টাকা চাওয়া হয়েছে। কোন পথে ব্যয় হবে এই অর্থ, সে হিসাবও দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা বলছে, এই তহবিল থেকে ২ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেন ও ইউরোপে মার্কিন মিত্রদের সামরিক সহায়তা খাতে ব্যয় হবে। বাইডেন বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ ব্যয়বহুল; কিন্তু এই আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার আরও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।’
বাইডেনের এই বক্তব্য কি পার্ল হারবার ঘটনার আগে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে অনেকটা মিলে যায় না? ১৯৪০ সালে বসে যখন রুজভেল্ট সে বক্তব্য দেন, তখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আক্রান্ত বা আক্রমণকারীর ভূমিকায় নেই। এবারও নেই। দুবারই যুক্তরাষ্ট্র ঘটনার আগে থেকেই মিত্রদের প্রতি সামরিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ সামনে আসে। আট দশক আগের যুক্তরাষ্ট্রে তা সম্ভব হয়েছিল। এখনকার যুক্তরাষ্ট্র কি একইভাবে সাড়া দিতে পারবে?
এবারের চ্যালেঞ্জটা আরেকটু বড়। এবার যুদ্ধ ময়দান ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম পাঠালেই শুধু চলবে না, সঙ্গে নিজেদের ও ইউরোপের মিত্রদেরও একইভাবে পুনঃসামরিকীকরণ করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুযুদ্ধের পর ইউরোপের দেশগুলোর সামরিকীকরণের ধরন আর আগের মতো নেই। ফলে পুরো বিষয়টি এখন মার্কিননির্ভর হয়ে আছে। অস্ত্রাগারের মজুত বৃদ্ধির লক্ষ্যে পূর্ণ শক্তি নিয়ে এগোলে আবার রয়েছে অন্য শঙ্কা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি পরাশক্তির লড়াইয়ের সংকেত দেবে। যুক্তরাষ্ট্র কি শেষ পর্যন্ত এত বড় ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকাতে হবে ইউক্রেন সংকটের শুরুর দিনগুলোর দিকে। সে সময় জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি কখনোই সেখানে সেনা পাঠানোর কথা ভাবতে পারেন না। কারণ, সে ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে আসবে বিশ্বের অন্যতম বড় সামরিক শক্তি রাশিয়া।
তাহলে কি রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর—হ্যাঁ এবং না। এই যুদ্ধ চলুক— যুক্তরাষ্ট্র এটা চায়, তা আগেই বলা হয়েছে। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষেত্রে তার দ্বিধা রয়েছে। এ কারণেই মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এবং অনেক তরুণ যুদ্ধে যোগ দিতে ইউক্রেন এলেও নিয়মিত বাহিনীর কেউ সেখানে জড়ায়নি। আবার রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, ইউক্রেনকে সহায়তা করে যুদ্ধকে নিজের পছন্দমতো একটি পরিণতির দিকে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, নিজের অস্ত্রীকরণ নিয়েই এখন চিন্তিত ‘গণতন্ত্রের মহত্তম অস্ত্র’ দেশটি।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড বাজেটারি অ্যাসেসমেন্টসের গবেষক থমাস মানকিন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘ইউক্রেনীয়দের বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে পারাটা আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা কে দেবে? কেউ না।’
হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিকে তারা ৫ হাজার ৫০০ জ্যাভেলিন ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হয় দিয়েছে, নয়তো দেশটির কাছে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয় এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে জ্যাভেলিন ছাড়াও অন্য ধরনের আরও ১৪ হাজার অ্যান্টি-আর্মার সিস্টেম, একজন সেনার বহনক্ষম ১৪০০ স্টিঙ্গার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, ৭০০ সুইচব্লেড (ব্যাকপ্যাকে বহনক্ষম একধরনের বোমা, যা ছোড়ার পর নির্দিষ্ট টার্গেটে গিয়ে উড়োজাহাজের মতো ক্র্যাশ করে এবং ভেতরে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়), ৯০টি ছোট নলের কামান, ১৫৫ মিলিমিটার ব্যাসের ১ লাখ ৮৩ হাজার কামানের গোলা, ১৬টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, ১৪টি কাউন্টার-আর্টিলারি, চারটি কাউন্টার-মর্টার ও দুটি এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডারসহ আরও অনেক কিছু পাঠিয়েছে।
এই যুদ্ধ যে সমীকরণের প্রকাশ ঘটিয়েছে, তাতে শুধু ইউক্রেনে যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোই আর যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে চালকের আসনে বসতে হলে তার সব মিত্রকেই নিরাপদ রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সে চেষ্টা করছেও। তবে এই চেষ্টা তার করতে হচ্ছে, ট্রাম্প জমানায় আহত ন্যাটো ও ইউরোপকে সঙ্গে নিয়ে। যে কারণে জার্মানিতে যখন দেশটি ৪০টি দেশের বৈঠক ডাকে, তখন তাকে অনেক কিছুই বিবেচনায় নিতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মুখোমুখি বসার সময় তাকে আফগান যুদ্ধ, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় হওয়া যুদ্ধ, চীন, ভারত-চীন দ্বৈরথ ইত্যাদি অনেক কিছুকেই বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। এই সবগুলো অঞ্চলকে নিজের আয়ত্তে রেখে দরকারি পক্ষগুলোর সশস্ত্রীকরণ যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের পয়সাতেই করতে হচ্ছে। কারণ, এটি এখন তার ‘মর্যাদার’ আবরণে ‘পরাশক্তি’ পরিচয় টিকিয়ে রাখার লড়াই।
এখন পর্যন্ত এসব অস্ত্র দেশটি তার মজুত থেকেই দিতে পারছে। কিন্তু সামনের চাহিদা পূরণ করতে হলে আট দশক আগের মতো পুরোদমে উৎপাদনে যেতে হবে। কিন্তু মার্কিন কারখানাগুলো খুব দ্রুতই এমন উৎপাদনে যেতে পারবে না বলে মত দিয়েছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটি জ্যাভেলিন আছে, তা জানা নেই। ১৯৯৬ সালে এটি বাজারে আসার পর দেশটির সরকার ৩৪ হাজার ৫০০ জ্যাভেলিন কিনেছে বলে ধারণা করা যায়। এর মধ্যে পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৭ হাজার জ্যাভেলিন ব্যবহার হয়েছে। এই হিসাব ঠিক ধরলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২০২১ সাল নাগাদ ১৭ থেকে ২২ হাজার জ্যাভেলিন ছিল। ইউক্রেন সংকটে এই মজুতের এক-তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি বের হয়ে গেল। রইল আর কত? তবে ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, এই হিসাবে মার্কিন মেরিনের কেনা ২৪০০ জ্যাভেলিনকে যেমন ধরা হয়নি, তেমনি ইরাক ও আফগানিস্তানে ব্যবহৃত ৫০০০ জ্যাভেলিনকেও ধরা হয়নি।
সে যাই হোক, জ্যাভেলিন বিবেচনায় নিলেও যুদ্ধ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ও মিত্রদের অস্ত্রাগার ভরতে রীতিমতো লড়তে হবে। এ কথা যুক্তরাষ্ট্র জানে বলে ৩ মে আলাবামার ট্রয়ে অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনে গেছেন স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্ট। ওই কারখানায় বছরে ২১০০টি জ্যাভেলিন উৎপাদন হয়। ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতেই এই কারখানার তিন-চার বছর লাগবে। আর মিত্রদের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্ব পেলে এ সময় আরও বেশি লাগবে। এই কারখানার সর্বোচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা বছরে সাড়ে ৬ হাজার। কিন্তু এই সর্বোচ্চ সীমায় যেতে হলে এর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে লাগবে কাঁচামালের সরবরাহ। কিন্তু এই সরবরাহেই রয়েছে সংকট। একই অবস্থা স্টিঙ্গার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। ১৯৮১ সালে বাজারে আসা এই অস্ত্রের শেষ চালান যুক্তরাষ্ট্র কিনেছিল ২০০৩ সালে। গত বছর এর মার্কিন উৎপাদন বন্ধ হলেও চলতি বছর তা আবার চালু করা হয়। মুশকিল হলো এই অস্ত্র তৈরির কিছু উপকরণ এখন বাজারে পাওয়া কঠিন।
ন্যাটোভুক্ত অন্য দেশগুলোও কিছু কিছু দিকে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু সবার তো উৎপাদন সক্ষমতা নেই। জার্মানির থাকলেও তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বাস্তবতায় নানা বিধিনিষেধে রুদ্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধকে সামনে রেখে সে সক্ষমতা আবার অর্জন করতে চায় জার্মানি। এরই মধ্যে ট্যাংক পাঠানোর কথা জানিয়ে জার্মানি বলেছে, তারা এর চেয়ে বেশি সহায়তা করতে চাইলে কারখানাগুলো চালু করতে হবে।
আকাশ-যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো একটু পিছিয়েই আছে। আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অস্ত্রগুলোই চাওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জার্মানি বড় সহায় হতে পারে। ফ্রান্সেরও সে সক্ষমতা আছে। কিন্তু পুরোনো ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোকে ফের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সম্মতি ও সহায়তা দেওয়ার ঝুঁকি কি যুক্তরাষ্ট্র নেবে? তার অভিজ্ঞতা তো ভালো নয়। আবার আকাশ-যুদ্ধে পশ্চিমের দুর্বলতা লুকানো কিছু নয়। ২০১১ সালে লিবিয়া এবং সিরিয়া যুদ্ধে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার যুক্ত হওয়ার পর এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতাও প্রকাশ্য হয়েছিল। ফলে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আসলে কীভাবে এগোবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে নিজের ও মিত্রদের অস্ত্রীকরণ সক্ষমতা এক বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের। এক-মেরু বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়াত্ব তাকে এদিকে অনেক দিন তাকাতে দেয়নি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তার দক্ষতা ও সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জোট ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের (এনডিআইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাশিল্প ক্ষয়ের পথে। সবচেয়ে বড় সংকট হলো দক্ষ কর্মীর অভাব। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদানের সরবরাহ সংকট। আছে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রয়োগের দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর অভাব। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে নিজেদের করা জরিপের বরাত দিয়ে এনডিআইএ বলেছে, মোট প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশই তাদের বলেছে, পেন্টাগনে সুনির্দিষ্ট কিছু অস্ত্রের একমাত্র জোগানদাতা তারাই। অর্থাৎ, এক কারখানার ঘাটতি অন্যকে দিয়ে মেটানো কঠিন হবে। প্রয়োজনের মুহূর্তে দক্ষ কর্মী ও প্রযুক্তির সংকট বড় হয়ে সামনে আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সংকটগুলো থাকলেও নেই সেই একই ভিত ও প্রেক্ষাপট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বৈশ্বিক যুদ্ধে প্রথম যুক্ত হওয়া। তার মন্দাপীড়িত অর্থনীতি এবং কারখানাগুলো যুদ্ধকালীন উৎপাদনের জন্য মুখিয়ে ছিল সে সময়। সে তখনো পরাশক্তি হয়ে ওঠেনি। পরাশক্তি হওয়ার বাসনা তার মধ্যে প্রবল। তার গণমনস্তত্ত্বও তখন এর পক্ষে ছিল। কারণ, যুদ্ধ-পালানো শরণার্থী, অভিবাসী বা তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্রই ছিল তখনকার দৃশ্যপটে। আর আজকের যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধক্লান্ত এক পরাশক্তি। তারও যুদ্ধস্মৃতি থাকলেও গণমনস্তত্ত্বে এর অভিঘাত ক্লান্তিই শুধু। কোভিড সাময়িক মন্দার সময় তৈরি করলেও বেকারত্ব ও বন্ধ কারখানার সংখ্যা এত উচ্চ নয় যে, চাইলেই হুট করে যুদ্ধকালীন উৎপাদন শুরু করতে পারবে সে। তেমনটি করলে ভেতর থেকেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে তাকে পড়তে হতে পারে।
সব মিলিয়ে রাশিয়া সরাসরি যুক্ত—এমন একটি যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা অপ্রস্তুতই বলতে হবে। প্রশ্ন হলো—এমন পরিস্থিতির জন্য বিশ্বমোড়ল কেন অপ্রস্তুত হলো? এর কারণ কি তার অহমিকার মধ্যে লুকিয়ে আছে তবে? সে ভেবেছিল তার দুই মূল বিরোধী শক্তি রাশিয়া ও চীন কখনোই তার বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়াবে না বা তার ঘোষিত মিত্র দেশে সামরিক অভিযান চালাবে না। তার আশা ছিল, সামরিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধ পক্ষ হিসেবে যুদ্ধ ময়দানে ঢুকতে কেউই চাইবে না। ২০১৯ সালে প্রকাশিত মার্কিন পত্রিকা ফরেন অ্যাফেয়ার্সের বিশ্লেষণেও এমন আশাই প্রকাশ করা হয়েছিল। সঙ্গে মিত্রদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা নিয়েও সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নটি জ্যান্ত থাকলেও আশাটি মিইয়ে গেছে। কারণ, ইউক্রেনকে সামনে রেখে সংকটই এখন বাস্তব। আর বাস্তব এ সংকটে শুধু ইউক্রেন নয় উলুখাগড়ার কাতারে এসে দাঁড়াচ্ছে একের পর এক দেশ। বর্তমান বা ভবিষ্যৎ মোড়লের মতো কোনো সুবিধা ভোগ করবে না জানলেও অতীতের মতোই তাকে কাতারে কাতারে উজাড় হতে হচ্ছে। তার ফল কী হবে, সেটা কেউ জানে না। তবে এটা নিশ্চিত যে, মার্কিন এ অহমিকার মূল্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অজস্র দেশ ও মানুষকে মেটাতে হচ্ছে এবং হবে। দুঃখ এই যে, মার্কিন এই অহমিকা বৈশ্বিক অহমিকা না হলেও তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সবার জন্যই আজ শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৬ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
০৭ মে ২০২২
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৬ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
০৭ মে ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৬ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
০৭ মে ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

শত বছর আগে চাণক্য বলে গেছেন, ‘অহংকারের মতো শত্রু আর হয় না।’ অবশ্য চাণক্য এ কথা বিশেষভাবে বলে না গেলেও হতো। এ সত্য তো সবাই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে। যুক্তরাষ্ট্রের কি জানা ছিল না? প্রশ্নটি উঠছে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের অবস্থা বিবেচনা করে।
০৭ মে ২০২২
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
২ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৬ দিন আগে