Ajker Patrika

গুলতেকিন ছাড়া হুমায়ূন বা নুহাশ কেউই এগোতে পারতেন না: নুহাশ হুমায়ূন

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১৭: ১৫
গুলতেকিন ছাড়া হুমায়ূন বা নুহাশ কেউই এগোতে পারতেন না: নুহাশ হুমায়ূন

বিতর্কটা শুরু হয়েছিল নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সঞ্চালিকার করা একটি প্রশ্নের সূত্রে। ওই সাক্ষাৎকারে নুহাশকে প্রশ্ন করা হয়, ‘যদি আপনি নুহাশ হুমায়ূন না হতেন, হুমায়ূনপুত্র না হতেন, তাহলে কি আপনি যেখানে ছিলেন সেখানে থাকতেন বলে মনে হয়?’ প্রশ্নটি ভালো লাগেনি নুহাশের। মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ স্ট্যাটাস পোস্ট করে বিরক্তি প্রকাশ করে নুহাশ। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল তর্ক চলছে। বিতর্ক যখন বিভিন্ন মোড় নিচ্ছিল, নানা আকার পাচ্ছিল, তখনই আরেকবার সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারস্থ হলেন নুহাশ। আরেকটি লম্বা স্ট্যাটাস পোস্ট করলেন বৃহস্পতিবার দুপুরে।

ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে নুহাশ হুমায়ূন লিখেছেন, ‘আমি বলতে দ্বিধা করব না, আমার বাবার অর্জনের পিছনেও আমার মার ভূমিকা অপরিসীম। আমার মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ বা নুহাশ হুমায়ূন কেউই সামনে এগিয়ে যেতে পারত না, গুলতেকিন খানকে ছাড়া। তাই আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ আমার জীবনে আমার বাবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করার সাথে সাথে মার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করুন।’

বৃহস্পতিবার দেওয়া ফেসবুক পোস্টে তাঁর জীবনে বাবা হুমায়ূন আহমেদ, মা গুলতেকিন খানের ভূমিকা, নিজের কাজ এবং সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন করার ধরন নিয়ে নানা কথা বলেছেন নুহাশ হুমায়ূন।

বিতর্কের শুরু যেভাবে
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে নুহাশ হুমায়ূনের একটি সিরিজ প্রকাশ পাচ্ছে। ‘পেটকাটা ষ’ নামের ওই ওয়েব সিরিজ নিয়ে কথা বলতে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনভিত্তিক শো ‘মেরিল ক্যাফে লাইভ’ অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার রাতে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন নুহাশ। যেটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয় মঙ্গলবার রাত ৮টায়। আয়োজনে সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন সারা ফ্যায়রুজ যাইমা। তিনি আলোচনা শুরু করেন নুহাশের নির্মিত নতুন সিরিজ ‘পেট কাটা ষ’ নিয়ে। ২৮ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের আয়োজনে ১১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডে সঞ্চালক নুহাশের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘যদি আপনি নুহাশ হুমায়ূন না হতেন, হুমায়ূনপুত্র না হতেন, তাহলে কি আপনি যেখানে ছিলেন সেখানে থাকতেন বলে মনে হয়?’

এ প্রশ্নে বিরক্ত হন নুহাশ। উত্তরে বলেন, ‘জানি না, আমি শেষ যে পাঁচটি ইন্টারভিউ করলাম, আমি খুব ইউজ টু হয়ে গেছি, এ জিনিসগুলো আসে না, খুবই আরাম লাগে। ইন্টারন্যাশনালি সবাই আমাকে আমার কাজের জন্য চেনে। এটা আমাদের কালচারাল একটা জিনিস, আমরা আমাদের আর্টিস্টদের কাজের থেকে তাঁদের পার্সোনাল লাইফে ইন্টারেস্টেটা বেশি। এ প্রশ্নটা মিডিয়া থেকে বেশি আসে। মিডিয়া এ রিপোর্টগুলো করতে পছন্দ করে বেশি, আর অ্যাকচুয়াল কাজের সাকসেস নিয়ে কথা বলে না। আমি ইন্টারনাশনালি সেলিব্রেটেড ফিল্মমেকার। ওখানে ফ্যামিলি ট্যামিলি নিয়ে ভাবার স্পেস নাই।’

এর পর রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে আবারও বিষয়টি তোলেন নুহাশ। লেখেন, ‘বাংলাদেশে রিপোর্টিং যদি আরেকটু সম্মানজনক হতো! একটু আগে আমি প্রথম আলোর লাইভ ইন্টারভিউতে ছিলাম; ভেবেছিলাম ষ নিয়ে কথা হবে। সেখানে আমাকে প্রশ্ন করা হলো, যদি আমার বাবা (হুমায়ূন আহমেদ) না হতেন, তাহলে আমি এই অবস্থানে আসতে পারতাম কি না? আমি সত্যিই জানি না আপনি (সঞ্চালক) কীভাবে একজন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত, পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতাকে এমন কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তোমাদের কি মনে হয় সানডান্স, বুসান, এসএক্সএসডব্লিউ, মার্শে দ্যু ফিল্ম বাপের নাম দেখে প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ করে?’

এরপরই মূলত বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নুহাশ হুমায়ূনের অবস্থানের পক্ষে-বিপক্ষে কথাবার্তা শুরু করেন নেটিজেনরা।

দ্বিতীয় ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন নুহাশ হুমায়ূন
(নুহাশ হুমায়ূনের বৃহস্পতিবারের ফেসবুক পোস্টের উল্লেখযোগ্য অংশ দেওয়া হলো)

‘আমার সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা জানানোর পর, অনেকেই আমাকে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দেখলাম, আমিই প্রথম এমন মানুষ না যে মিডিয়ার সামনে অপ্রস্তুত হয়েছি আর অপমানিত বোধ করেছি। এর মধ্যে ভালো লাগছে যে আমি আমার অনুভূতির কথা সরাসরি লিখেছি, অনেকে হয়তো তাঁদেরটা বলতে পারেননি। আবার খেয়াল করলাম, অনেক পেইজ, সঞ্চালকের ছবি দিয়ে অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করছেন। আমি কোনভাবেই এ ধরনের সাইবার বুলিং সমর্থন করি না। আমি মনে করি, কিছু প্রশ্ন আপত্তিকর ছিল, কিন্তু হয়তো এখন মিডিয়াতে এইটাই একটা প্রবণতা হয়ে গিয়েছে। এর সমাধান করতে চাইলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন তারা শ্রদ্ধাশীল থাকেন। কিন্তু কোনভাবেই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের উত্তর সেরকম ব্যবহার হওয়া উচিত না।

আমি চাই, ইন্টারভিউ এর আগে কি নিয়ে আলোচনা হবে, সেটার স্বচ্ছতা থাকুক। প্রথম আলো ক্যাফে লাইভের ইন্টারভিউয়ের আগে আমাকে বলা হয়েছে এটা মূলত ‘ষ’ নিয়ে আলোচনা। হয়তো কিছু কথা হবে বাবাকে নিয়ে। আমি সেটার জন্যই প্রস্তুত ছিলাম। অতীতে, আমার পরিবার নিয়ে আন্তরিকভাবেই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছি। সেখানে আমার জীবনে আমার মায়ের ভূমিকার কথা বলেছি, আমার বাবাকে নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এই ধরনের ইন্টারভিউয়ের জন্য আমার মানসিক প্রস্তুতি লাগে। আমি হঠাৎ করে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে অপ্রস্তুত হয়ে যাই।

নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন। ছবি: ফেসবুক থেকেএটা মনে করিয়ে দিতে পারি, আমি ১৯ বছর বয়সে আমার বাবাকে হারিয়েছি। আমি আমার বাবাকে ঠিকভাবে বিদায় জানাতে পারিনি, কারণ চারিদিকে ছিল ক্যামেরা আর সাংবাদিক। একটা মুহূর্ত একা তাঁর পাশে বসতে পারিনি তাঁকে শুইয়ে দেয়ার আগে! তাই হঠাৎ যদি লাইভ অনুষ্ঠানে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, বাবা আমার জীবনে না থাকলে সেটা কেমন হতো, আমি অপ্রস্তুত হয়ে যাই। আমার জন্য এই বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। এছাড়াও আমার মনে হয়, আমার জীবনে বাবার ভূমিকা নিয়ে কথা বলার জন্য বাবা জীবনে না থাকলে কি হতো/কেমন হতো এই প্রশ্নগুলি খুব একটা শ্রদ্ধাশীল নয়।

আমি আমার পরিবার নিয়ে প্রচণ্ডভাবে গর্বিত। আমি আমার বাবাকে ভালবাসি আর কখনোই আমার জীবনে তাঁর প্রভাবকে অস্বীকার করি না। ‘আলোর মশাল’ লেখাটায় আমি লিখেছিলাম, কীভাবে আমার বাবা আমার জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দিয়েছেন। আর কেমন করে ছোটবেলার আমি তাঁর মতন হবার চেষ্টা করতাম। কিভাবে আর কেনই বা আমি আমার বাবা বা মার প্রভাবকে অস্বীকার করব!

আমি যা কিছু তৈরি করি, সবকিছুতে আমি আমার মার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার তো বাবাকে কৃতজ্ঞতা জানানো লাগে না, আমার নামের সাথেইতো আছেন সব সময়। কিন্তু আমার মার নাম আছে আমার সমস্ত নির্মাণে, সব কিছুতেই। মাকে ছাড়া আমি কখনোই আজকের জায়গায় আসতে পারতাম না। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সিনেমাগুলো আমি দেখেছি আমার বাবার সাথে। বাবা আমার চলচিত্রের প্রতি ভালবাসা তৈরি করে দিয়েছেন। আমার মা, সেই ভালবাসার ছবি তৈরির পাশে আছেন। 

আমি বলতে দ্বিধা করবো না, আমার বাবার অর্জনের পিছনেও আমার মার ভূমিকা অপরিসীম। আমার মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ বা নুহাশ হুমায়ূন কেউই সামনে এগিয়ে যেতে পারতো না, গুলতেকিন খানকে ছাড়া। তাই আমার অনুরোধ থাকবে, কেউ আমার জীবনে আমার বাবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করার সাথে সাথে মার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করুন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিল্পকলায় নাট্যতীর্থের আয়োজনে ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
শিল্পকলায় নাট্যতীর্থের আয়োজনে ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’

আজ থেকে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে নাট্যতীর্থ আয়োজিত ‘নবীন প্রবীণ নাট্যমেলা’ শীর্ষক আট দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসবে প্রদর্শিত হবে আট দলের আটটি নাটক। ১৯ থেকে ২৬ ডিসেম্বর প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় দেখা যাবে নাটকগুলো। উৎসবে ছয়জন নাট্যব্যক্তিত্বকে দেওয়া হবে নাট্যবন্ধু সম্মাননা।

উৎসব শুরু হবে আজ সন্ধ্যা ৬টায়। উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ। সভাপতিত্ব করবেন নাট্যতীর্থের দলপ্রধান ও নাট্যমেলার আহ্বায়ক তপন হাফিজ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মঞ্চস্থ হবে তীরন্দাজ রেপার্টারির প্রযোজনা দীপক সুমনের নির্দেশিত ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’।

আগামীকাল শনিবার মঞ্চস্থ হবে আরণ্যক নাট্যদলের ‘রাঢ়াঙ’। রচনা ও নির্দেশনায় মামুনুর রশীদ। এদিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন সামিনা লুৎফা নিত্রা। সম্মাননা পদক দেওয়া হবে অধ্যাপক আবদুস সেলিমকে।

২১ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে বাতিঘরের প্রযোজনা ‘প্যারাবোলা’, নির্দেশনায় মুক্তনীল। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন আফজাল হোসেন ও সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন শাহীন খান।

২২ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে বহুবচনের প্রযোজনা আরহাম আলো নির্দেশিত ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। এদিন সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন সামিউন জাহান দোলা।

২৩ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে নাট্যতীর্থের প্রযোজনা ‘জুলিয়াস সিজার’, নির্দেশনায় তপন হাফিজ। সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন বাপ্পাদিত্য চৌধুরী। ২৪ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হবে ঢাকা থিয়েটার মঞ্চের প্রযোজনা গোলাম সরোয়ার নির্দেশিত ‘ঘর জামাই’। সম্মাননা দেওয়া হবে খন্দকার সাইফুল ইসলাম নিপুকে।

২৫ ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হবে পদাতিক নাট্য সংসদের (টিএসসি) প্রযোজনা ‘আলিবাবা এবং চল্লিশ চোর’। নির্দেশনা সুদীপ চক্রবর্তী। সম্মাননা পদক গ্রহণ করবেন মাহফুজা হিলালী। নাটক প্রদর্শনীর আগে এদিন বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রবীণের ঐতিহ্যালোকে নবীনের শিল্পযাত্রা’ শীর্ষক সেমিনার।

২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে নাট্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে নাট্যতীর্থের কর্মীদের মধ্য নির্বাচিত নাট্যকর্মীকে দেওয়া হবে ‘নাট্যতীর্থ সর্বোচ্চ উপস্থিতি সম্মাননা পদক’। সমাপনী অনুষ্ঠানের পর মঞ্চস্থ হবে আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত থিয়েটার প্রযোজনা ‘মেরাজ ফকিরের মা’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘রাক্ষস’-এর গল্প বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে সুস্মিতাকে

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত
সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

মেহেদী হাসান হৃদয়ের ‘রাক্ষস’ সিনেমা দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের। এ মাসের শুরুতেই শোনা গিয়েছিল এমন খবর। জানা গিয়েছিল দেশের বাইরে রাক্ষস সিনেমার দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ে যোগ দেবেন তিনি। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে গত বুধবার বিএফডিসিতে রাক্ষস সিনেমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় উপস্থিত হলেন নায়িকা। জানালেন রাক্ষসের গল্পই তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রাক্ষস সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কারণ জানিয়ে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্মাতা হৃদয়ের কাছ থেকে গল্পটা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গল্পের জন্যই এ সিনেমায় যুক্ত হওয়া। কারণ এই গল্পে নায়িকার অনেক কিছু করার আছে। চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে নিজের ২০০ ভাগ দিয়ে চেষ্টা করব।’

প্রথমবার ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি ভীষণ এক্সাইটেড, এই প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি, সিনেমায় অভিনয় করছি। এই দিনটা আমার কাছে ভীষণ স্পেশাল। অনেকবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। ভালো একটি টিমের সঙ্গে প্রথমবার বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করতে চলেছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।’

ঢাকাই সিনেমায় কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে করলেও সবার সহায়তায় সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করতে চান সুস্মিতা। পেতে চান বাংলাদেশের দর্শকদের ভালোবাসা। সুস্মিতা বলেন, ‘যখন সিনেমায় নাম লেখাই তখন কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কাউকেও চিনতাম না। অডিশন দিয়ে অনেক কষ্ট করে সিনেমায় এসেছি। ওটাও যেমন আমার জন্য কঠিন ছিল, তেমনি এই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও প্রথম কাজটা চ্যালেঞ্জিং হবে। কিন্তু এখানে এসে টিমের সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জটা উতরে যেতে পারব। তাঁরা একবারের জন্য আমাকে মনে করতে দিচ্ছে না যে আমি অন্য দেশ থেকে এসেছি। আমি এ দেশের দর্শকদের ভালোবাসা নিতে এসেছি, আশা করছি অনেক ভালোবাসা পাব।’

ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছেন সুস্মিতা। পড়াশোনায়ও ছিলেন খুব ভালো। তাই পরিবারের চাওয়া ছিল আগে পড়াশোনা শেষ হবে, তারপর অন্য কাজ। মা-বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন সুস্মিতা। পড়াশোনা শেষে বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরিও পেয়েছিলেন। কিন্তু চাকরিটা করা হয়নি। তিনি হেঁটেছেন ছোটবেলার স্বপ্নের দিকে, অভিনেত্রী হতে।

২০২১ সালে ‘প্রেম টেম’ সিনেমা দিয়ে টালিউডে অভিষেক হয় সুস্মিতার। এরপর কাজ করেছেন ‘চেঙ্গিজ’, ‘মানুষ’সহ একাধিক সিনেমায়। এবার নাম লেখালেন ঢাকাই সিনেমায়। রুপালি পর্দায় নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সুস্মিতা বলেন, ‘প্রেম টেম সিনেমার সুস্মিতা আর রাক্ষসের সুস্মিতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। চার বছর হয়ে গেছে প্রেম টেম সিনেমার। এই সময়ে অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে আমার কাজে, ব্যক্তিত্বে। আশা করছি পর্দায় সেটা বুঝতে পারবেন সবাই।’

রাক্ষস সিনেমায় সুস্মিতার বিপরীতে আছেন সিয়াম আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় সিনেমার অ্যানাউন্সমেন্ট টিজার। ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে ভয়ংকর এক সিয়ামকে দেখা গেল। ফ্লোরের চারদিকে রক্তের ছোপ, রক্তমাখা সাদা স্যুট পরা সিয়ামের এক হাতে চায়নিজ কুড়াল অন্য হাতে পিস্তল। কামড়ে ধরে আছেন একটি গোলাপ। হাতের অস্ত্র উঁচিয়ে বাথটাবে পড়ে থাকা একটি মৃত বাঘের দিকে গুলি ছুড়লেন।

টিজার দেখে বোঝাই যাচ্ছে বরবাদ সিনেমার মতো রাক্ষসেও ভরপুর অ্যাকশন, ভায়োলেন্স দেখাবেন নির্মাতা মেহেদী হাসান হৃদয়। নির্মাতা জানালেন, এ সিনেমায় একটি প্রেমের গল্প আছে, যে প্রেমের কারণে সিয়াম অভিনীত চরিত্রটি রাক্ষস হয়ে ওঠে। এতে আরও অভিনয় করছেন বাপ্পারাজ, আলীরাজ প্রমুখ। সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রিয়েল অ্যানার্জি প্রোডাকশনের ব্যানারে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে শুটিং। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের রোজার ঈদে মুক্তি পাবে রাক্ষস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় দুই কনসার্টে গাইলেন আতিফ আসলাম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত
ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে আতিফ আসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এ মাসে ঢাকায় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী আতিফ আসলামের দুটি কনসার্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শঙ্কা জেগেছিল অনুমতি নিয়ে। স্থগিত হওয়ার শঙ্কা আছে জেনে দুটি কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে যৌথভাবে ১৩ ডিসেম্বর একটি কনসার্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেইন স্টেজ ও স্পিরিটস অব জুলাই। তাতেও হয়নি শেষরক্ষা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয় সেই কনসার্ট। তবে কনসার্ট বাতিল হলেও ঢাকায় এসেছেন আতিফ আসলাম। একের পর এক প্রাইভেট কনসার্টে গান শোনাচ্ছেন তিনি।

গতকাল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি) আয়োজিত ‘মিউজিক বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ শীর্ষক কনসার্টে গান শোনান আতিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত এ কনসার্টে প্রবেশের সুযোগ ছিল শুধু এআইইউবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের। বহিরাগতদের প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি।

আতিফের কনসার্ট ঘিরে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল এআইইউবিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কনসার্ট দেখতে মাঠে প্রবেশ করতে ছিল দীর্ঘ লাইন। বেলা ২টায় অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত হলেও সকাল থেকেই কনসার্টের স্থলে ভিড় করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তিল ধরার জায়গা ছিল না মাঠে। আতিফও নিরাশ করেননি তাঁদের। গেয়ে শোনান তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো। আতিফের আগে এই কনসার্টে গান শোনান দেশের সংগীতশিল্পী মিনার রহমান।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘দ্য ফাইনাল নোট’ শিরোনামের আরেকটি কনসার্টে গান শোনান আতিফ আসলাম। ওই কনসার্টে শুধু গুলশান ক্লাবের সদস্যরাই আমন্ত্রিত ছিলেন। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকায় আতিফের ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রিকেট খেলায় মেতেছেন তিনি।

এর আগে পাকিস্তানের আলী আজমত ও ব্যান্ড কাভিশের কনসার্ট বাতিল হলেও তাঁরাও বাংলাদেশে এসেছিলেন। শোনা গেছে, তাঁরাও ঢাকায় একাধিক প্রাইভেট কনসার্টে পারফর্ম করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এ সপ্তাহের ওটিটি: ‘সাবা’সহ মুক্তির তালিকায় যেসব সিনেমা-সিরিজ

প্রতি সপ্তাহে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকদের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এ সপ্তাহেও মুক্তি পাচ্ছে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খোঁজ থাকছে এ প্রতিবেদনে।

বিনোদন ডেস্ক
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত
মিসেস দেশপান্ডে সিরিজে মাধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সাবা (বাংলা সিনেমা)

  • মুক্তি: হইচই (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মেহজাবীন চৌধুরী, মোস্তফা মনওয়ার, রোকেয়া প্রাচী
  • গল্পসংক্ষেপ: মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সাবা। বাবা গত হয়েছে। মা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মেয়ে সাবা। পরিবার আর মায়ের সেবায় নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে উঠতে পারেনি সাবা। অর্থের টানাটানিতে দিনরাত এক করে মাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা তার।

রাত আকেলি হ্যায়: দ্য বানসাল মার্ডারস (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, রাধিকা আপ্তে, চিত্রাঙ্গদা সিং
  • গল্পসংক্ষেপ: ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া ক্রাইম থ্রিলার ‘রাত আকেলি হ্যায়’ সিনেমার সিকুয়েল এটি। ইন্সপেক্টর জটিল যাদব এবার ফিরছে নতুন মামলা নিয়ে। কানপুরের ধনী ও প্রভাবশালী বানসাল পরিবারে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পড়ে জটিল যাদবের ওপর। ঘটনার অন্তরালের লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জাল উন্মোচন করে সে।

মিসেস দেশপান্ডে (হিন্দি সিরিজ)

  • মুক্তি: জিওহটস্টার (১৯ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: মাধুরী দীক্ষিত, প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি, সিদ্ধার্থ চান্দেকর
  • গল্পসংক্ষেপ: ফরাসি থ্রিলার ‘লা ম্যান্টে’র অনুপ্রেরণায় তৈরি এ সিরিজে মাধুরীকে দেখা যাবে একজন সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২৫ বছর সাজা হয় মিসেস দেশপান্ডের। তার খুন করার ধরন কপি করছে আরেকজন। তাকে ধরতে পুলিশ সহায়তা নেয় মিসেস দেশপান্ডের।

এমিলি ইন প্যারিস সিজন ৫ (ইংরেজি সিরিজ)

  • মুক্তি: নেটফ্লিক্স (১৮ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: লিলি কুপার, ফিলিপাইন লেরয়-বিউলিউ, অ্যাশলে পার্ক
  • গল্পসংক্ষেপ: চতুর্থ সিজনে এমিলি কুপারের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অনেক কিছু অমীমাংসিত ছিল। সেসব প্রশ্ন ও কৌতূহল নিয়েই শুরু হচ্ছে পঞ্চম সিজন। এবার শুধু প্যারিসে নয়, এমিলির জার্নি বিস্তৃত হবে রোম শহরেও।

থাম্মা (হিন্দি সিনেমা)

  • মুক্তি: প্রাইম ভিডিও (১৬ ডিসেম্বর)
  • অভিনয়: আয়ুষ্মান খুরানা, রাশমিকা মান্দানা, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
  • গল্পসংক্ষেপ: ভৌতিক গল্পের এ সিনেমার শুরুতে পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে গিয়ে বিপদে পড়ে অলোক নামের এক সাংবাদিক। পথ ভুলে পৌঁছায় এমন এক ডেরায়, যেখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির বাস। সেখানেই অলোকের দেখা হয় মানুষরূপী এ প্রেতাত্মার সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত