Ajker Patrika

সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন দুদকের শরীফ উদ্দিন

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৯
সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন দুদকের শরীফ উদ্দিন

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কারণেই চাকরি হারিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহাকারী পরিচালন মো. শরীফ উদ্দিন। এমনটাই মনে করছেন অনেকে। যদিও দুদক স্পষ্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের কথা বলছে না। তবে জানা যাচ্ছে, এসবের বাইরে সিনিয়রদেরও বিরাগভাজন হয়েছিলেন শরীফ উদ্দিন।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি দুর্নীতিবিরোধী সভায় যান দুদকের তৎকালীন সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। সেখানে সপরিবারে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলে দুই রাত কাটিয়ে লক্ষাধিক টাকা বিল করেছিলেন। তাঁর যাবতীয় বিল পরিশোধ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও দুদকের অধস্তনেরা। এই বিল নিয়ে শুরুতেই আপত্তি জানিয়েছিলেন সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি তখন সচিবের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন।

সচিবের ওই ঘটনা নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে শরীফের মনোমালিন্য তৈরি হয়। এর পরই গত বছরের ১৬ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এক আদেশে তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।

অনেকে ধারণা করছেন, দুদক কর্মকর্তার হঠাৎ বদলির পেছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে সচিবের বিল পরিশোধ না করাও একটি। আজ শুক্রবার শরীফ উদ্দিনও একই ধারণার কথা আজকের পত্রিকাকে জানান।

দুদকের তৎকালীন সচিবের ওই সফর নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, দুদক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সফরসংশ্লিষ্ট অন্তত চারজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সফরে এসে সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার কক্সবাজারের দুটি হোটেলে ছিলেন। প্রথমে ছিলেন সৈকত এলাকার পাঁচ তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টে। পরে ওঠেন হোটেল সেন্ট মার্টিন রিসোর্টে। সচিব সেখানে সপরিবারে ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে সচিবের প্রটোকলের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন এনডিসি সহকারী কমিশনার মাখন চন্দ্র সূত্রধর। অন্যদিকে রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দুই কর্মকর্তার হাত দিয়ে সচিবের বিলের টাকা পরিশোধ করা হয়। আর দুদকের পক্ষ থেকে বিলের একটি অংশ পরিশোধ করেন শরীফ উদ্দিন। দুদক সচিবের হোটেল দুটিতে থাকা এবং বাইরে খাওয়া বাবদ সব বিলই কক্সবাজার ডিসির নামে করা হয়।

জানা যায়, সচিবের হোটেল সেন্টমার্টিন রিসোর্টে থাকা বাবদ ৩৫ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করেন দুদকের কর্মকর্তা শরীফ। এ ছাড়া হোটেল সায়মন রিসোর্টে একটি ভ্যাটের চালানে দেখা যায়, হোটেলটির ৭৩ হাজার ৯৬১ টাকার বিল পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নামে পরিশোধ হয়। সফরকালে দুদক সচিবের খাবারের বিল বাবদ ৩৮ হাজার ৩৬০ টাকাও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নামে হয়েছিল।

জানা গেছে, এসব টাকা সচিবের ব্যক্তিগত খরচ হওয়ায় প্রথমে দুদকের প্রটোকল কর্মকর্তা বিলগুলো পরিশোধে আপত্তি জানান।

সফরসংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, সচিবের সঙ্গে পরিবারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাও ছিলেন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তৎকালীন রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি তখন ছিলাম না।’ ওই সফরের পর দুদক সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান জাফর সাদিক।

তৎকালীন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচিবের প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা মাখন চন্দ্র সূত্রধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিব মহোদয়ের থাকা বাবদ হোটেলগুলোর বিলের টাকা পুরোটাই জেলা প্রশাসন পরিশোধ করেনি, কিছু বিল পরিশোধ করেছে। আর কত টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এটা জেনে বলতে হবে। কারণ ওই ঘটনার পর আমি এসি (ল্যান্ড) হিসেবে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে এসেছি। আমি কক্সবাজারের বর্তমান এনডিসির নম্বরটা দিচ্ছি। ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বর্তমান এনডিসি ইমরান জাহিদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সফরে আসা কোনো সচিব বা কর্মকর্তার হোটেলে থাকা বাবদ বিল আমার জানামতে ডিসি অফিস থেকে পরিশোধ করা হয় না। আমার চাকরিজীবনে কখনো এভাবে বিল পরিশোধ করতে দেখিনি।’

এনডিসি বলেন, ‘দুদক সচিবের সফরকালে আমার জায়গায় তখন অন্যজন দায়িত্বে ছিলেন। সেই বিল কীভাবে পরিশোধ হয়েছিল তা উনিই (তৎকালীন এনডিসি) বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুদক সচিবের দুটি হোটেলের বিল বাবদ ১ লাখ ১২ হাজার টাকার মতো পরিশোধ করতে বলা হয়েছিল। এসব টাকা ওনার ব্যক্তিগত খরচ ছিল। কিন্তু বিলটি পরিশোধের বিষয়ে আমি আপত্তি জানাই। ব্যক্তিগত খরচের টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে কেন পরিশোধ করা হবে? পরে সিনিয়রদের মধ্যস্থতায় আমরা একটি হোটেলের বিলের টাকা পরিশোধ করি। শুনেছি, বাকি বিল জেলা প্রশাসন থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।’

সচিব সফরের তিন মাসের মধ্যে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে দুদক সচিবের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ জাফর সাদেক চৌধুরী। পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে মাখন চন্দ্র সূত্রধর নিজ বিভাগে সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে পদায়ন পান।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নগর সভাপতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতারুল কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি সফরে আমলাদের জন্য সার্কিট হাউসগুলো বরাদ্দ থাকে। সার্কিট হাউসগুলো কোনো কারণে খালি না থাকলে সরকারি, আধা সরকারিসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রাজকীয় রেস্ট হাউস রয়েছে। কিন্তু সরকারি সফরে যাওয়া কোনো কর্মকর্তা বাংলাদেশের মধ্যে ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে থাকার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অধীন হলে তা ভিন্ন কথা।’

আখতারুল কবির বলেন, ‘এখানে নয়ছয় হয়েছে। আমলাতান্ত্রিকতার এমন চর্চার রাশ টেনে ধরা জরুরি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনার বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি দুদকের সচিব হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের ডিসেম্বরে এক বছরের মাথায় তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলি হন।

এ বিষয়ে ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত