
হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।
হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।

হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।
হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন সংবাদ সংস্থা রুখশানা মিডিয়া সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল হাবিবার সঙ্গে। ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছিল সাক্ষাৎকারটি। অনুবাদ করেছেন কাশফিয়া আলম ঝিলিক।
প্রশ্ন: তালেবান কেন নারীর অধিকারকে সম্মান করার অঙ্গীকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে?
উত্তর: তালেবানের কখনোই আফগানিস্তানের নারী, জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং এ বিষয়গুলোর প্রতি কোনো অঙ্গীকার ছিল না, এখনো নেই। শান্তি আলোচনাকে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। আমেরিকানদের সঙ্গে তালেবানের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে তাদের মাত্র চারটি প্রতিশ্রুতি ছিল। প্রতিশ্রুতিগুলো হলো—বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার, আন্তআফগান সংলাপ শুরু করা এবং আফগানিস্তান যাতে আবার সন্ত্রাসবাদের জায়গা না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো। এর বাইরেও যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে তা আফগান জনগণের কথা বিবেচনায় রেখে গোপন রাখা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং মার্কিন দূত মি খলিলজাদ ও তালেবানের মোল্লা বারাদারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরপর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আলোচনা শুরুও হয়েছিল। তারপর এক বছর চলে গেল, কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। পদ্ধতিগত বিষয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। আমরা যখন শুরু করেছি, তখন নারীর অধিকার ছিল অ্যাজেন্ডার একটি অংশ। যা-ই হোক, আমরা এটি নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি।
প্রশ্ন: এসব বিষয়ে আলোচনা হয়নি কেন? কারণটা কি সময়ের অভাব নাকি আগ্রহের কমতি?
উত্তর: যেকোনো আলোচনায় অনেক সময় লাগে। আমরা এজেন্ডায় বিভিন্ন বিষয় তৈরি করেছি। উভয় পক্ষের অনেক এজেন্ডা ছিল। অন্যান্য আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ক এজেন্ডা নিয়ে কথা হয়নি। অন্যদিকে, তালেবানরা আলোচনায় আগ্রহী ছিল না। তারা বেশির ভাগই কৌশলগত আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। রিপাবলিক দলের জন্য আলোচনাটি ছিল দায়িত্বের অংশ ও একটি মিশন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তালেবানদের জন্য আলোচনাটি মিশন বা দায়িত্ব কোনোটিই ছিল না। তাদের পরিবার দোহায় ছিল, সেখানে তাদের চাকরি ও ব্যবসা ছিল। কোনো কাজ না থাকলে তারা আলোচনার জন্য আসত এবং বিভিন্ন অজুহাত ও কৌশল অবলম্বন করত। তারপর আফগানিস্তানে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোর সঙ্গে এজেন্ডা আইটেমগুলোতে আলোচনার কোনো সুযোগ ছিল না।
প্রশ্ন: আপনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর ছিলেন। কিছুদিনের জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তালেবানের সঙ্গে ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তানের আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আপনি নারী অধিকার রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। কেন তালেবানদের কাছ থেকে নারী অধিকারের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়নি?
উত্তর: এটি এমন একটি বিষয়, যা আমি মনে করি, শুধু আমার জন্যই নয়। আফগানিস্তানের জনগণের জন্যও বেদনাদায়ক। নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, কখনোই আলোচনা হয়নি। আমি বলতে চাইছি, যে প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল, তা ফলপ্রসূ হয়নি। কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেখানে কিছু থাকতে পারে।
প্রশ্ন: আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের পতনের পর দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। তালেবানরা জনসাধারণের সব জায়গা থেকে সম্পূর্ণভাবে নারীদের সরিয়ে দিয়েছে। এখন, নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে, আলোচনার সময় নারীর অধিকার রক্ষার জন্য সঠিক কৌশল কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগান সংবিধান বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে সংবিধানের দ্বিতীয় অংশ যেখানে নাগরিকত্বের অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। নাগরিক অধিকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নারীসহ আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় কিন্তু স্বাক্ষরিত হয়নি। এটি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, না চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে আর না এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: নারী অধিকার কর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন তালেবানের অধীনে থাকা নারীদের দুর্দশার অচলাবস্থা ভাঙতে পারছে না?
উত্তর: বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভেতরে যে নারীরা থাকে তারা তাদের সাহস দেখিয়েছে এবং নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা নিজেদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে হোক বা জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে হোক, আফগানিস্তানের বাইরের লোকেরাও তাদের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনো বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ সদস্যের একটি দল আমরা সব সময় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। তবে আফগান নারীদের এমন অচলাবস্থার কারণ হলো, তালেবানদের অনমনীয় মানসিকতা। এই মানসিকতা নিয়ে তারা কোনোভাবেই অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় জড়াতে ইচ্ছুক নয়, তা সে আফগান নারী হোক, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হোক বা তালেবান চক্রের বাইরের কেউ হোক। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, অন্যান্য অনেক ইস্যুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আফগানিস্তান থেকে সরে গেছে। যেমন, ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি আমরা গাজার ইস্যুও দেখছি। তাই আফগানিস্তান এখন আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সেই অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, নিরাপত্তা পরিষদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় না। অন্যদিকে, তালেবানও সংলাপ ও আলোচনায় আগ্রহী নয়। বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে তারা মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রশ্ন: আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থাকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?
উত্তর: আফগানিস্তানে নারীরা বর্তমানে স্পষ্টতই লৈঙ্গিক ও বর্ণবৈষম্যের শিকার। শহুরে ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য প্রবল। এটা তালেবানদের মানসিকতার ফল।
প্রশ্ন: একজন নারী হিসেবে আপনি অনেক আলোচনায় তালেবান নেতাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সে সময় আপনার প্রতি তাদের আচরণ বিবেচনা করে, আপনি কি কখনো ভেবেছিলেন যে তারা এমন মিসজিনিস্ট রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে? অথবা আপনি কি ভেবেছেন যে সম্ভবত তালেবান কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে?
উত্তর: ’৯০ এর দশকে তালেবানেরা দেখিয়েছিল যে তারা মিসজিনিস্টিক মতাদর্শ মেনে চলে। ২০১৯ সালে আন্তঃআফগান সংলাপে অংশ নিয়েছিলাম আমিসহ কিছু নারী। সেটা প্রথমবারের মতো কাতারের দোহায় মি. খলিলজাদ এবং অন্যান্য দেশের কিছু রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল, জনগণকে দেখানো যে তালেবানেরা বদলে গেছে। যখন আমি তালেবানদের দেখেছি এবং তাদের সম্পর্ক, মানসিকতা ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম তালেবানেরা বদলায়নি। আলোচনার সময় তাদের আচরণে আমি এর প্রমাণও পেয়েছি। তাদের মতাদর্শ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানসিকতা প্রমাণ করে তারা কতটা মিসজিনিস্টিক। তারা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে তাদের মানসিকতা পরিবর্তিত হয়েছে। বোঝাতে চেয়েছিল যে তারা স্পষ্টতই নারী শিক্ষায় বিশ্বাস করে। কিন্তু শেষমেশ আমি প্রমাণ পেয়েছি তালেবানেরা বদলায়নি।
প্রশ্ন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে যে, তালেবানের সঙ্গে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় নারীর অধিকার। এই কথার কোনো বাস্তবায়ন দেখছেন?
উত্তর: সরকারের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত কূটনৈতিক বৈঠকে আলোচনায় আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে নারীর অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরি। তারা বলে, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তারা সে অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে। তারা যে তালেবানকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। কিছু দেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট বা বাণিজ্য সম্পর্কের নামে এক ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের নারী অধিকারের প্রতি কোনো অঙ্গীকার নেই। তাদের ক্ষেত্রে শুধু নিজেদের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠা করাই মুখ্য।
প্রশ্ন: তালেবান শাসন শুরুর পর থেকে দেশের ভেতরে অনেক নারী এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ করার জন্য নারীরা তালেবান কারাগারে রয়েছে। আফগানিস্তানের বাইরে, নারী অধিকার কর্মীদের কাছ থেকে তেমন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আফগানিস্তানের ভেতরে যুদ্ধরত সব নারীরা সত্যিই কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে এবং তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব নারী আফগানিস্তানের বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বের কাছে নারীদের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কারণ এটা সহজ কাজ নয়। যারা দেশ ছেড়েছে তারাও পশ্চিমে কোনোভাবেই সুখী নয়। আমাদের জন্য পশ্চিমে বাস করা জাহান্নামের মতো। অভিবাসীরা অস্থিতিস্থাপক জীবন যাপন করে। জাতিসংঘ এখনো তালেবানকে বৈধতা দেয়নি এবং তালেবান এখনো সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। একে আমরা নারীদের আন্দোলনের ফলাফল বলতে পারি। তবে এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা সফল হতে পারিনি। কারণ আফগানিস্তানের ভেতরের ও বাইরের লোকদের মধ্যে এখনো অবিশ্বাস রয়েছে। এটি স্বাভাবিক। কারণ দেশের ভেতরে নারীরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে তা আফগানিস্তানের বাইরের নারীদের অবস্থার থেকে একেবারেই আলাদা। অভ্যন্তরীণ নারীরা মনে করে, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তারা তাদের পরিত্যাগ করেছি। তাদের সত্যিকার অর্থে সেরকম ভাবার অধিকার আছে। অন্যদিকে, প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। প্রত্যেকেই একটি কারণে আফগানিস্তান ছেড়েছে। এটা আফগানিস্তানের ভেতরে থাকা নারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আস্থা থাকলে ভালো হয়। কারণ দেশের নারীদের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হলে অভিবাসী নারীরা তাদের কণ্ঠস্বর প্রসারিত করবে, যতক্ষণ না তাদের দাবি রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের কানে পৌঁছায়। আমরা সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারিনি, এটি এই অবিশ্বাসের একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যত বেশি সংলাপ হবে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা লোকদের সঙ্গে আমাদের তত বেশি যোগাযোগ হবে এবং বৃহত্তর আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, আফগান নারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি? তালেবান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের বাইরে কী করা যেতে পারে?
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আফগান নারীদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আফগানিস্তানের বাইরে যারা আছেন তাঁদের একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করা। আসুন, আমরা নারীদের ইস্যুকে প্রতিযোগিতায় পরিণত না করি। আসুন, আমরা প্রত্যেকে একটি ব্যানার ধরি যা আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। আসুন, আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লড়াই করি। প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষমতার প্রশংসা করা উচিত। আসুন একে অপরকে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এক গোষ্ঠীর মধ্যে যে শূন্যতা রয়েছে তা অন্যদের পূরণ করা উচিত। যাতে আমরা এক শক্তি হয়ে তালেবানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি।
প্রশ্ন: আপনি যখন নারীদের ওপর তালেবানের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে খবরের আপডেট শুনতে পান, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বাদে ব্যক্তিগতভাবে তখন আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
উত্তর: নারী সমস্যা রাজনীতি থেকে দূরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয় যাকে তালেবানরা আরও রাজনৈতিক করে তুলেছে। তালেবানরা নারী ইস্যু থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে। আফগানিস্তানের ভেতর থেকে আমরা যে খবর শুনি, তা শুধু নারীদেরই নয়, যুবক, সামরিক কর্মী, সংখ্যালঘু, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা, শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংসের খবর আমাদের হৃদয়ে ছুরি মারার মতো। এর বেশি খবর সামনে আসছে না যা খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনো আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? তারা আপনাকে কী বলে?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি যোগাযোগ করছি। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হয়। তারা কী বলে, তা বলা কঠিন। তারা সব সময় কষ্ট, বঞ্চনা, বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথা, সেই কষ্টের কথা তারা উল্লেখ করে। কারাগারে যারা ছিল, তারা কী সহ্য করেছিল, সে কথাও হয়। এটা খুব দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের এটা সহ্য করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি বামিয়ানকে কতটা মিস করেন? তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কি বুঝতে পারছেন যে তারা আরও বঞ্চনা ও দারিদ্র্যের শিকার?
উত্তর: আজকাল আমি বামিয়ান সম্পর্কে রিচার্ড হাল নামে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তার লেখা একটি বই পড়ছি। তিনি সেখানে কাটানো ছয় মাসের প্রায় প্রতিটি ঘটনা তাঁর বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। যখন আমি এই বইটি পড়ি, এটি আমাকে বামিয়ানে নিয়ে যায়। বইটির এক অংশে বর্ণনায় বামিয়ানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে একজন নারী এগিয়ে এসে তাঁকে ইংরেজিতে স্বাগত জানিয়ে নিজের পরিচয় দেন। যখন আমার পরিবার বামিয়ানে ছিল না, আমার ছুটির দিনগুলিতে আমি বামিয়ানের বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করে সেখানকার মানুষদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেছি। একবার আমি ব্যান্ড-ই আমিরের কাছে গিয়েছিলাম।সেখানে একদল যুবতী আমার চারপাশে জড়ো হয়েছিল। তারা বেশ উচ্ছল ছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, তাঁদের এই দৃশ্যটি দূর থেকে কিছু দাড়ি ওয়ালা পুরুষ পর্যবেক্ষণ করেছিল। নারীরা বলেছিলেন, ‘আমাদের গভর্নরের সঙ্গে দাঁড়ানোর এবং ছবি তোলার অধিকার আছে, যা আগে ছিল না।’ বামিয়ানের ওয়ারাস জেলায় ভ্রমণকালে একজন নারী আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছিলেন। খুশিতে কেঁদে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমাদের জীবন দিয়েছেন।’ একজন নারীকে নেতৃত্ব দিতে দেখে তিনি খুশি হন। তখন তাঁরা মনে করতেন, নারীরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৫ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৭ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৭ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৭ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।
কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া
বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।
ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।
চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন
বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া
কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।
বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।
সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।
কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া
বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।
ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।
চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন
বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া
কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।
বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।
সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভ
২২ মে ২০২৪
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৭ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৭ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৭ দিন আগেকাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট
এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।
এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’
কেন কমছে মেলার সংখ্যা
নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’
রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন
মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’
অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি
হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভ
২২ মে ২০২৪
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৫ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৭ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৭ দিন আগেআল আমিন

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।
২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।
খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।
রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভ
২২ মে ২০২৪
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৫ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৭ দিন আগে
পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র...
৭ দিন আগেফিচার ডেস্ক

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।
চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই
মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।
ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা
২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।
সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।
অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য
মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।
ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা
মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।
সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

হাবিবা সারাবি ছিলেন আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই প্রশাসনে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। হাবিবা সে সময় আফগান সরকারে তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনাকারী দলের সদস্য ছিলেন। আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভ
২২ মে ২০২৪
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।...
৫ দিন আগে
ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়...
৭ দিন আগে
ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের...
৭ দিন আগে