Ajker Patrika

লোডশেডিংয়ের জীবনযুদ্ধে কে এগিয়ে গেল?

অর্ণব সান্যাল
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ২০: ২৬
লোডশেডিংয়ের জীবনযুদ্ধে কে এগিয়ে গেল?

জীবনের সঙ্গে যখন যুদ্ধের সন্ধি হয়, তখনই সেটি হয়ে যায় ‘জীবনযুদ্ধ’। যখনই কোনো কিছু যুদ্ধের সমতুল্য হয়ে ওঠে, তখনই তাতে থাকে প্রতিযোগিতা। আর এমন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার বা পিছিয়ে পড়ার হিসাব তো থাকেই! 

জীবনকে যুদ্ধরূপ মনে করানোর ক্ষেত্রে কিছু উপাদান কাজ করে। অর্থাৎ, সেসব উপাদানের প্রভাবেই জীবনযুদ্ধে পরিণত হয়। আমাদের দেশে একেক সময় একেক উপাদান জীবনকে যুদ্ধে পরিণত করার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। অনেক সময় আবার একাধিক উপাদানের মধ্যেও এক ধরনের ইঁদুর–বিড়াল খেলা চলে। কখনো তেল চালকের আসনে বসে, আবার কখনো সেই স্থান নিয়ে নেয় চাল। এবার অবশ্য তেল বা চালকে পুরোপুরি পার্শ্বনায়ক বানিয়ে প্রধান নায়কের চরিত্র বাগিয়ে নিয়েছে লোডশেডিং

সম্প্রতি দেশে সময়সূচি পরিবর্তন করে ‘নির্দিষ্ট’ সময়ে লোডশেডিংয়ের কাল শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট শব্দটির আগে–পরে এই যে দুটো ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার করা হলো, এর মাজেজা ক্রমশ প্রকাশ্য। কারণ একবারে যদি সব বলে ফেলি, তবে লেখাটা বড় হবে কী করে! 

এর আগে কোনো ঘোষণা না দিয়েই যখন–তখন ‘চলে যাওয়ার’ অধিকার ছিল বিদ্যুতের। এবার সেই অধিকারে বাঁধ টানা হয়েছে। সমস্যা হলো, সেই বাঁধ সুনামগঞ্জের মতো। প্রতি বরষায় যেমন নিয়ম করে সুনামগঞ্জের বাঁধ ভেঙে বা ভেসে যাওয়ার খবর আমরা পাই, তেমনি ‘নির্দিষ্ট’ রুটিনের লেবাস গায়ে জড়িয়ে ইচ্ছামৃত্যুর মতো কাজকারবার করছে লোডশেডিং। তুড়ি মেরে রুটিন উড়িয়ে দিয়ে চলছে সেই ‘অনির্দিষ্ট’ লোডশেডিং। অবস্থা এমন হয়েছে, হয়তো সময় দেখে ঘড়ি অনুযায়ী ভ্যাপসা গরমে সিদ্ধ হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম, কিন্তু গেল না! দু–দশ মিনিট, এমনকি মিনিট তিরিশেকও অপেক্ষা করা যায়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের সময়সূচি মেনে চলার ‘শৃঙ্খলা’ এতটাই ‘নিয়মানুবর্তী’ যে, ‘সে যে গেল না, গেল না’ প্যারোডি গাইতে গাইতে ঠিক যে সময়টায় মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠতে যাবে একটি দিনের জন্য হলেও জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায়, ঠিক তখনই সব অন্ধকার!

বুঝলেন, ঠিক ওই সময়টায় কি যে অনুভূতি হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। যেন একপক্ষীয় প্রেম নিবেদনের পর পাল্টা ‘লাভ ইউ’ শুনব শুনব করেও আর শোনা হলো না! ওদিকে বাংলা সিনেমার মতো ‘তোকে ভালোবাসতেই হবে’ বলার মতো মানসিক অবকাঠামোও নেই। সবাই তো আর অন্যের মন না বুঝেই যখন–তখন মেইন সুইচ অফ করে দেওয়ার মতো সর্বগ্রাসী ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে চান না। তেমনটা হলে তো কবেই এতদঞ্চলে সবারই ‘পিনিক’ উঠে যেত! দেশের হ-য-ব-র-ল অবস্থা উল্টে হয়ে যেত ল-র-ব-য-হ।

এখন কথা হলো, এত প্রতিকূলতার মধ্যেও কীভাবে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া যায়? 

এর জন্য প্রথমেই আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনযুদ্ধে আমরা কম–বেশি সবাই আছি। এ দেশে জীবনযুদ্ধে সাধারণ মানুষদের মধ্যে কে নেই বলুন? সবাই যুদ্ধে যে যার মতো লড়ে চলেছে। তবে অসাধারণদের বিষয় আলাদা, সে ক্ষেত্রে জীবনযুদ্ধের ময়দান বেশ কুসুমাস্তীর্ণ। বল্লমের খোঁচা সেথায় গোলাপের পাপড়ির মতো ঠেকে! কিন্তু যা অ–সাধারণ, তা নিয়ে সাধারণদের অত মাথা না ঘামালেও চলবে।

সুতরাং, শুরুতেই যুদ্ধের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে ফেলার পর পরবর্তী ধাপে পা রাখতে হবে। পায়ে সমস্যা থাকলে হামাগুড়ি স্টাইলে হাত রাখবেন। এতে করেই জীবনযুদ্ধের রেসে যে কেউ একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে। সকল পরীক্ষায় প্রস্তুতি একটা বড় বিষয়। সেটি হয়ে গেলে এরপর এগিয়ে যাওয়া ঠেকানো কঠিন বেশ! 

প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পর এবার লোডশেডিংয়ের যে কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি মন ও ফোন থেকে মুছে ফেলুন। মেনে নিন যে—আপনার চারপাশে যে কোনো সময় অন্ধকার নেমে আসতে পারে, যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাখা। এতে দেখবেন, হিন্দি বা নিদেনপক্ষে বর্তমানের ট্রেন্ডি বাংলা সিরিয়ালের সর্বংসহা গৃহবধূর চরিত্রের মতো করে আপনার এক ধরনের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে। আর তখনই কোনো আঘাতই আপনাকে দুমড়ে–মুচড়ে দিতে পারবে না। আর কে না জানে, মনের সান্ত্বনাই বড় সান্ত্বনা! 

এরপর নিতে হবে কিছু নিনজা টেকনিক। ধরুন, বিদ্যুৎ চলে গেল ভাতের হাঁড়ি উনুনে চড়ানোর পর। তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে বোঝাতে হবে যে—বিদ্যুৎ গেছে, গ্যাস তো যায়নি! এরপর উনুনের আগুনে মোম জ্বালিয়ে ফেলতে হবে। ফ্যানের ঘূর্ণনের অভাবে শরীর ভিজে গেলে, প্রচুর পরিমাণে টিস্যু পেপার গায়ে জড়িয়ে নিতে হবে। এতে করে এ দেশের শ্রমিকের ঘামের মতো আপনার ঘামও পারিশ্রমিক পাওয়ার আগেই শুকিয়ে যাবে। তখন আর আক্ষেপ বোধ হবে না। 

এভাবে আরও কিছু নিনজা টেকনিক বের করে নিতে হবে। সব তো আর গাইড বইয়ের মতো গিলিয়ে দেওয়া যায় না। কিছু সৃষ্টিশীলতা নিজেকেও দেখাতে হবে বাপু।

সুতরাং, সৃষ্টিশীল হয়ে উঠুন, ঘরে সৃষ্টির আলোয় লণ্ঠন জ্বালান। প্রথমে একজন–দুজন করে হয়তো সফল হবেন। তারা জীবনযুদ্ধে এগিয়েও যাবেন তরতরিয়ে। তবে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে একসময় দেখা যাবে দেশে আর লণ্ঠন জ্বালাতে কেরোসিন লাগছে না। আর তখনই আমরা সৃষ্টির আলোয় সামগ্রিকভাবে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে পারব। 

উফ, খুব ক্লান্ত লাগছে, বুঝলেন! এগিয়ে যাওয়ার এতগুলো পথ বাতলে দিয়ে আসলে জীবনযুদ্ধে কে এগিয়ে গেল? হা…হা…হা… কি, হিংসে হয়? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডে এক ব্যক্তি হীরাখচিত লকেট চুরি করেছেন এমন এক উপায়ে, যা শুনলে সিনেমার দৃশ্যই মনে হয়। দোকানদারেরা টের পাওয়ার আগেই তিনি লকেটটি গিলে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, গিলে ফেলা ফ্যাবারজে এগ লকেট, যার মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (১৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার) এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে পারট্রিজ জুয়েলার্সে পুলিশ ডাকা হলে ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

জুয়েলারির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে ফ্যাবারজে এগ চুরি করা হয়েছে, তাতে রয়েছে ৬০টি সাদা হীরা এবং ১৫টি নীল নীলা। ডিমটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ছোট্ট অক্টোপাস।

ডিমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অক্টোপাসি এগ’, যা ১৯৮৩ সালের একই নামের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত; যার কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক জটিল ফ্যাবারজে এগ চুরির ঘটনা।

ফ্যাবারজে দুই শতাব্দীর বেশি আগে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এক বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড, যা রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ডিম-আকৃতির শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত।

বিবিসি জানিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির। তিনি গত ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরির অভিযোগেও অভিযুক্ত। পরদিন ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কারের সামগ্রী ও পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণের পণ্য চুরির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি

সদ্য মা হয়েছেন জর্জিয়া ব্যারিংটন। কিন্তু মেয়ে ওটিলিকে তিনি জন্ম দেননি। জন্ম দিয়েছেন তাঁর প্রিয় বন্ধু ডেইজি হোপ; যিনি কিশোর বয়সে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে জর্জিয়ার হয়ে সন্তানের জন্ম দেন।

দুই বন্ধু ছোটবেলা থেকেই অবিচ্ছেদ্য। তাঁরা নিজেদের ‘সোল সিস্টার্স’ বলে ডাকেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। তাঁদের বাবারাও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

শৈশবের সেই বন্ধনই একদিন হয়ে ওঠে জীবন বদলে দেওয়া উদারতার ভিত্তি।

১৫ বছর বয়সে জর্জিয়া এমন কিছু জানতে পারেন, যা কোনো অল্প বয়সী মেয়ে আশা করে না। তিনি জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কোনো দিন সন্তান ধারণ করতে পারবেন না।

মেয়ার-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার সিনড্রোম বিরল এক জন্মগত রোগ, যা প্রতি ৫ হাজার নারীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। জর্জিয়ার মনে হয়েছিল, একমুহূর্তে তাঁর ভবিষ্যৎটা যেন বদলে গেল।

১৫ বছর বয়সকালের সেই ঘটনা মনে করে জর্জিয়া বলেন, ‘আমার গোটা পৃথিবীই ভেঙে পড়েছিল। আমি সব সময় ভেবে বড় হয়েছি, আমি একজন মা হব আর সেটা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। আমি যা কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম, সবই শেষ হয়ে গেল।’

সে সময় ডেইজি খুব মাতৃত্বপ্রবণ ছিলেন না। কিন্তু তিনি বন্ধুর রোগ নির্ণয়ের কথা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন। তাঁর কাছে ‘অন্যায়’ মনে হয়েছিল—যে বন্ধু মাতৃত্বের স্বপ্ন দেখতেন, তিনি কিনা মা হতে পারবেন না!

এমা বার্নেটের সঙ্গে ‘রেডি টু টক’ অনুষ্ঠানে ডেইজি বলেন, ‘আমি তাঁকে ভরসা দিতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে চেয়েছিলাম—পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। তাই বলেছিলাম, একদিন আমি তাঁর হয়ে সন্তান ধারণ করব। তখন হয়তো বুঝিনি কথাটার গভীরতা কতটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম, জর্জিয়ার জন্য আমি এটা করবই।’

১০ বছরের বেশি সময় পরে ডেইজি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ২০২৩ সালে দুই বন্ধু মিলে আইভিএফ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

জর্জিয়া একজন ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নিজেকে এমন এক জগতে নিমজ্জিত করেছিলেন, যে জগতে তিনি হয়তো কোনো দিন অংশ নিতে পারবেন না বলে ভয় পেয়েছিলেন।

জর্জিয়া বলেন, ‘একবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এটা কি আমার জন্য সঠিক পেশা? কিন্তু আসলে এটা আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। আর অন্তর থেকে জানতাম—কোনো না কোনোভাবে আমি মা হবই।’

কয়েক বছর পরে ডেইজি তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। আর সেই প্রসবে ধাত্রী ছিলেন জর্জিয়াই।

ডেইজি বলেন, ‘আমার সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা অনুভব করেছি, তা ছিল অসাধারণ। তখন মনে হয়েছিল, প্রত্যেকেরই তো এই অনুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিড়ালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল নিউজিল্যান্ড সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০৫০ সালের মধ্যে বন্য বিড়াল বা মালিকহীন বিড়াল নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির সংরক্ষণমন্ত্রী তামা পোতাকা গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্য বিড়ালকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বস্বীকৃত ‘প্রিডেটর-ফ্রি ২০৫০’ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় কিছু শিকারি প্রাণীকে যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ চালু হওয়ার পর প্রথমবার কোনো নতুন শিকারিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হলো।

দীর্ঘদিন ধরেই নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় বন্য বিড়াল ধরা ও মেরে ফেলা হচ্ছিল। তবে তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এবার তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত জাতীয় পর্যায়ের অভিযানে নামবে সরকার—যার মধ্যে থাকবে বৃহৎ আকারের নির্মূল কর্মসূচি ও বিশেষ গবেষণা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে।

নিউজিল্যান্ডের বনভূমি ও উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি বন্য বিড়াল ও মালিকহীন বিড়ালের বিচরণ। লেজসহ এসব বিড়ালের দৈর্ঘ্য এক মিটার এবং ওজন প্রায় সাত কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এসব বন্য বিড়াল দেশটির দুর্লভ প্রাণিজগৎ ধ্বংসের মূল কারণগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে একধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাউন্ট রুয়াপেহু এলাকায় তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ বাদুড় শিকার করায় সে প্রজাতিও হুমকিতে।

রেডিও নিউজিল্যান্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংরক্ষণমন্ত্রী পোতাকা বন্য বিড়ালকে আখ্যা দেন ‘স্টোন-কোল্ড কিলার’ বা নির্দয় শিকারি হিসেবে। তিনি বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনভূমির সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এসব হত্যাকারীকে সরিয়ে ফেলতেই হবে।’

বন্য বিড়ালকে তালিকায় যুক্ত করা নিয়ে বহু বছর ধরে প্রচারণা চললেও অতীতে বিষয়টি নিয়ে প্রবল জনমত-বিরোধিতা দেখা গেছে। পরিবেশবিদ গ্যারেথ মরগান ২০১৩ সালে ‘ক্যাটস টু গো’ প্রচারণা শুরু করলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে এবার সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খসড়া কৌশল নিয়ে জনমতের ৯০ শতাংশই বন্য বিড়াল নির্মূল করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এদিকে, গৃহপালিত বিড়াল এ তালিকায় না থাকলেও সেগুলোও দেশটির জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালনের দিক থেকে নিউজিল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত