Ajker Patrika

পদ কি, আপদ না বিপদ? 

ফজলুল কবির
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০: ৪৭
পদ কি, আপদ না বিপদ? 

কিছুদিন ধরেই মাথায় কেবল ‘পদ’ ঘুরছে। এ নিয়ে মনে মনে বিড়ম্বনাও কম নয়। কারণ, পদ নিয়ে বিপদের তো শেষ নেই। এ এক বিরাট আপদ বলা যায়। ভাবুন না, পদধারীদের কত তটস্থ থাকতে হয় পদ হারানোর ভয়ে। পান থেকে চুন খসলেই উঠে যেতে পারে পদত্যাগের দাবি। কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় যেমনটা হলো। দেশে দেশে এমনটা তো প্রায়ই হয়। আবার পদপ্রত্যাশীদের থাকতে হয় দুর্ভাবনায়—পাব তো? 

পদ কই না থাকে। দেহ বস্তুটি পরিবহনের একমাত্র দায় এই পদ বা পায়ের। আবার খাবার টেবিলেও আছ সে মহাসমারোহে হরেক রকম পদ হয়ে। এমনকি এই যে বাক্যটি লেখা হলো—সেখানেও আছে পদ। ঘরে বা বাইরে হাজারটা সংকট তো বিপদ হয়েই আসে, যেমনটা আসে জঙ্গলে শ্বাপদের ভয়ে। আবার অনাহূত অনেকেই তো মাঝেমধ্যেই ‘আপদ’ শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দেয় নিজ গুণে। পদ সত্যিই...। 

তা এই পদের অর্থ কী? হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ বলছেন, ‘পদ’ অর্থ চরণ বা পা। তাহলে? হ্যাঁ, এর পর এই শব্দের অর্থের হাজারটা বিস্তৃতি হয়েছে। কিছু উদাহরণ তো আগেই দেওয়া হলো। 

কিন্তু এর ধাতুমূলে গেলে অর্থ কী দাঁড়ায়? ‘পদ’ শব্দের ধাতুমূল ‘পদ্’, যার অর্থ—গতি, প্রাপ্তি। আচ্ছা পদ্ অর্থ তবে প্রাপ্তিও! এ কারণেই কি কারও সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পদক দেওয়া হয়? হতে পারে। 

পদ নিয়ে আলাপে তো মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় দেখা যাচ্ছে। এর থেকে কত শব্দ যে তৈরি হয়েছে, কোনোটার অর্থ ইতি, তো কোনোটা নেতি। পত্রিকার পাতা খুলে যেমন ‘পদস্থ’ কর্মকর্তাদের বিবৃতি, উদ্ধৃতিতে চোখ আটকায়, তেমনি বিরাট অগণন জনতার পদে পদে ‘অপদস্থ’ হওয়ার খবরও তো কম মেলে না। এই যেমন পদস্থরা সিদ্ধান্ত নিলেন, জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর সুফল যাত্রী সাধারণের পাওয়া উচিত। ফলে তাঁরা সড়কে প্রতি কিলোমিটারে ৫ পয়সা, আর নৌপথে আরও বড় সুবিধা দিয়ে প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা করে ভাড়া কমালেন। এর মাধ্যমে পদস্থরা কাকে ঠিক অপদস্থ করলেন, ঠিক বোঝা গেল না। 

সে যাক। আবার পদে ফেরা যাক। পদ অর্থ চারণ, যা গতি আনে। আর গতিহীনের তো প্রাপ্তি নাই। ফলে পদসঞ্চালন ছাড়া আর গতি কি? ঠিকঠাক ‘পদক্ষেপ’ নিলে জীবন-খাতায় ‘সম্পদ’-এর সংযোজন হয় জানিয়ে কতজনই তো শত পরামর্শ দিয়ে গেলেন। সেসব শুনে কতজন তার দেখা পেল, তার অবশ্য কোনো হিসাব রাখা হয়নি। 

পদক্ষেপে সাবধান থাকতে হয়, কারণ পা হড়কালেই বিপদ। এদিকে আবার চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত সতর্কবার্তা। পাহাড়ের ঢাল থেকে পা হড়কালো তো গেল সব। আবার অনেক গুরু ও নমস্য ব্যক্তির ‘পদস্খলন’ বলে দেয়, পা হড়কানো সব সময় পা হড়কানোও নয়, গোটা মানুষটারই হড়কে যাওয়া। সঙ্গে বড় আয়োজনে বা ভূমিকম্পে বা কনসার্টে কিংবা ফি-বছর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের জাকাত বা দান-খয়রাতের আয়োজনে পদদলনের ভয় তো আছেই। পা নিয়ে তাই তটস্থ না থেকে উপায় থাকে না। 

আবার আছে পাপের ভয়ও। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ‘লোটাকম্বল’-এ লিখছেন—পা থেকেই পাপের শুরু। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল ওটা ছিল প্রেমেরও শুরু। কৈশোরে পড়া সে বই প্রেম প্রশ্নে তাই রীতিমতো ধন্ধে ফেলে দিয়েছিল। 

পদ নিয়ে টিটকারি বা তির্যক মন্তব্যও কম করা হয় না। ‘পা-চাটা’ বা আরও ভদ্রভাব আনতে ‘পদলেহী’ বলা হলে সেখানে পদের মান থাকে কই। যদিও পদলেহীগণ যুগে যুগে ‘সম্মানিত’ পদস্থদেরই পদলেহন করে এসেছেন। আবার এই পদ-এর সঙ্গে যখন সেবা যোগ করা হয়, তখন কেমন একটা ভক্তিভাব জাগ্রত হয়। এই ভক্তি থেকেই গুরুজনের পদধূলি নেওয়া। দেবতার অর্ঘ্যও তো পায়েই নিবেদন করা হয়। সেখানেই আশ্রয় নেয় ভক্ত। রামপ্রসাদ যেমন শ্যামাসংগীতে বলছেন—পদের মতো পদ পাই তো সে পদ লয়ে বিপদ সারি। 

যদি এই পদ আসে ব্যাকরণের আঙিনায়, তবে কারও কারও আবার গা-হিম হয়ে আসে। কারণ, চেনা শব্দগুলো বাক্যে ঢুকে ‘পদ’ নাম নিয়ে কেমন যেন মুখ ভ্যাংচাতে থাকে। কত ধরনের পদ যে আছে—বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া। এই সব পদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে যখন কবি বসেন কবিতা লিখতে, তখন তো তিনি নাকি আবার ‘পদ’-ই রচনা করেন। বাংলার প্রাচীন গ্রন্থ চর্যা তো এই পদেরই সমষ্টি। আর যখন আসে শিশুতোষের প্রশ্ন, তখন পদে পদে মিল না দিলে কি আর হয়! 

আবার ‘পদ’-যুক্ত একই ধাঁচের শব্দ কত ভিন্ন অর্থ নির্দেশ করে। এই যেমন পদব্রজে কেউ যাচ্ছে শুনলে মনে হয় অনন্ত একটা পথ যেন সামনে। সেখানে কেন, কী, ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় আসে কম। অথচ পদযাত্রা শুনলে মনে হয়, কোনো ঘেরাও-টেরাওয়ের বিষয় আছে নিশ্চয়। প্রশ্ন আসে—কেন পদযাত্রা, কে করছে, কার বিরুদ্ধে। সঙ্গে একটা ঔৎসুক্যও কাজ করে যে, এই পদযাত্রাদল কোথায় গিয়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হবে। 

তাই এই ‘পদ’ নিয়ে বিপদেই আছে বাঙালি। এই পদকে সে কোথায় রাখবে, তা নিয়ে তার যেন অস্বস্তির সীমা নেই। ‘দেখা হলো ভালোবাসা, বেদনায়’ কবিতায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজের বয়ঃসন্ধিকালের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখছেন, ‘এইসব দেখে, শুনে, দৌড়িয়ে, জিরিয়ে।/আমার কণ্ঠস্বর ভাঙে, হাফপ্যান্টের নীচে বেরিয়ে থাকে/একজোড়া বিসদৃশ ঠ্যাং’। নিজের পদযুগল নিয়ে বয়ঃসন্ধির সুনীলের অস্বস্তিটা দৃশ্যমান। বাঙালি যেন বুঝেই পাচ্ছে না, এই পদকে সে কোথায় রাখবে। নিজের পদই যেন তার আপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। একে কখনো আদর-কদর করে, তো কখনো ধুর-ছাই করে, যেন সে অস্পৃশ্য। অথচ পদত্যাগ নিয়ে কত আপত্তি, ওজোর, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা, আন্দোলন। অথচ পদ আঁকড়ে থাকায় কত জানবাজি। দলে বা প্রশাসনে পদোন্নতির জন্য পদপ্রার্থীদের উচ্চপদস্থদের কত পদসেবা, কখনো কখনো পদলেহন করতে দেখা যায়। কখনো স্বপদে বহাল থাকতেও এমন মহাজাগতিক পদলেহন করতে হয়। তারও দেখা মেলে খবরের ভাঁজে ভাঁজে। সে কথা আর না বলি। 

এদিকে পদের পরিধেয় হওয়ার দরুন একই ভাগ্য জুটেছে জুতার কপালে। এই যুগে মোটামুটি সামর্থ্য থাকলেই কেউ জুতার কথা না ভেবে পারে না। শুধু ভাবনা কেন, পরতেও হয়। অথচ কাউকে অপমান করার জন্য জুতাই যেন তার শেষ অবলম্বন হয়ে ওঠে। জুনিয়র বুশের দিকে ছুড়ে দেওয়া জুতার কথা তো মনে আছে? এই দেখে-শুনে বা খবরের কাগজে এর ছবি ও খবর দেখে-পড়ে একেবারে মহাজাগতিক ঢি ঢি পড়ে গেল। সে কথা তো ভুলবার নয়। এই অপমান ও অপমান-উদ্ভূত কষ্ট দুইই তো পায়ের পরিধেয় হওয়ার কারণেই। জুতার মর্যাদা তো গেল শুধু পায়ে স্থান হওয়ার কারণেই। 

এই তো কয়েক দিন আগে এই রাজধানীতেই শুরু হওয়া এক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে গিয়ে এক শিল্পকর্মে জুতার স্থান দেখে চমকে যেতে দেখা গেল কত কত বোদ্ধাদের। অথচ তাঁরা কেউ খালি পায়ে ছিলেন না। কেউ কেউ জুতার প্রতি বেশ যত্নশীল, সেও বোঝা গেল। শিল্পকর্মটা ছিল একটা গোল আয়না ঘিরে বেশ কিছু ছোট-বড় জুতা দিয়ে তৈরি মালার। একটা লকেটের মতোও ছিল। বলা যায়, একটা ফটোফ্রেম। ‘নভেরার খোঁজে’ শীর্ষক সেই প্রদর্শনীতে দীপ্তি দওর এই কাজ যেন অন্য সব সুন্দর-পেলব কাজের মাঝখানে অনাহূত ঢুকে পড়েছে। নভেরাকে খুঁজতে হলে এমন কাজই তো থাকার কথা। কিন্তু ছিল না আর। আর হ্যাঁ ছিলেন শিল্পী প্রিমা, যিনি চমকে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন জেগেছিল—সপ্রশ্ন দৃষ্টি ও দৃশ্যায়ন নিয়ে কেন আর কেউ নেই? এককালের ব্রাত্য, দ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত এবং অভিমানে দেশত্যাগ করা নভেরাও কি তবে একটা উপলক্ষ হয়ে উঠছেন শুধু? অর্ঘ্য দেওয়ার ছলে তিনিও তবে বন্দী হচ্ছেন একটু একটু করে বেদির চৌহদ্দিতে? সে যাক এসব অন্য বিষয়। কথা হলো সেই জুতা-সাঁটানো শিল্পকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতেই শুরু হলো আরেক ক্রিয়া। বোঝা গেল, অন্যায় হয়ে গেছে। প্রশ্ন জাগল—যতজন এবার আহত বোধ করলেন, ততজন কি ওই শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দেখে আহত হয়েছিলেন, প্রতিবাদ করেছিলেন, নাকি জুতার বদলে যদি-কিন্তুর মালা গেঁথেছেন? 

এসব আলাপে কাজ নেই, আমরা বরং পদ নিয়ে থাকি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মদের দোকানে তাণ্ডব, বাথরুমে পাওয়া গেল মাতাল র‍্যাকুন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
মদ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল একটি র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

সকালে দোকানের শাটার খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অ্যাশল্যান্ডের একটি সরকারি মদের দোকানের কর্মীদের। দোকানের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে শত শত ভাঙা কাচের টুকরা। মেঝে ভেসে গেছে দামি বিলেতি মদে! প্রাথমিকভাবে সবাই বড় কোনো চুরির আশঙ্কা করলেও কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি; বরং দোকানের বাথরুমের কমোড আর ডাস্টবিনের চিপায় উদ্ধার হলো আসল ‘অপরাধী’। সেখানে অঘোরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল এক বুনো র‍্যাকুন!

ঘটনার সূত্রপাত হয় থ্যাংকসগিভিংয়ের ছুটিতে। দোকান বন্ধ থাকার সুযোগে এই ‘মুখোশধারী ডাকাত’ সিলিংয়ের টাইলস ভেঙে দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পশুপালন দপ্তরের কর্মকর্তা সামান্থা মার্টিন গণমাধ্যমকে জানান, ভেতরে ঢুকেই র‍্যাকুনটি পুরোদস্তুর তাণ্ডব শুরু করে। তবে তার প্রধান আকর্ষণ ছিল নিচের দিকের তাকগুলোতে সাজিয়ে রাখা স্কচ হুইস্কির বোতলগুলো। বেশ কয়েকটি বোতল ভেঙে, প্রচুর পরিমাণে স্কচ সাবাড় করে র‍্যাকুনটি মাতাল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নেশার ঘোরে সে বাথরুমে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জ্ঞান হারায়।

খবর পেয়ে সামান্থা মার্টিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে র‍্যাকুনটিকে উদ্ধার করেন। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘পশু সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার জীবনে এটা আর দশটা দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন!’

পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত
পুরো মদের দোকান তছনছ করেছিল বুনো র‍্যাকুন। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাকুনটি এতটাই নেশাগ্রস্ত ছিল যে সেটিকে ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য’ হ্যানোভার কাউন্টি অ্যানিমেল প্রটেকশন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশি কাস্টডিতে নয়, বরং তার নেশা কাটানোর জন্যই এই ব্যবস্থা।

বেশ কয়েক ঘণ্টা একটানা ঘুমের পর যখন র‍্যাকুনটি হ্যাংওভার কাটে। শারীরিক কোনো চোট পাওয়া যায়নি। এটি নিশ্চিত হয়েই তাকে সসম্মানে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে এক রহস্যময় ছায়ামূর্তির তাণ্ডব দেখা গেলেও র‍্যাকুনটি ঠিক কতটা স্কচ হজম করেছিল, তা অজানাই রয়ে গেছে। দোকানের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি মজার পোস্ট দিয়ে জানানো হয়, র‍্যাকুনটিকে নিরাপদে ‘সোবার রাইড’, অর্থাৎ নেশামুক্ত অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞ!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে প্রায় কোটি টাকার এক হিরা খুঁজে পেলেন ‘শৈশবের দুই বন্ধু’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি
সতীশ ও সাজিদের পাওয়া এই হিরাটি ১৫.৩৪ ক্যারেটের। ছবি: বিবিসি

ভারতের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় হঠাৎ পাওয়া একটি হিরার খোঁজ দুই বন্ধুর জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলায় সম্প্রতি এক শীতের সকালে শৈশবের বন্ধু সতীশ খাটিক ও সাজিদ মোহাম্মদের হাতে ধরা পড়েছে ১৫.৩৪ ক্যারেটের মূল্যবান ওই হিরাটি। এটির বাজারমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, পান্না জেলা ভারতের অন্যতম হিরা উত্তোলন অঞ্চল। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ আগে লিজ নেওয়া একটি জমিতে কাজ করতে গিয়ে চকচকে পাথরটির সন্ধান পান সতীশ ও সাজিদ। পরে সেটি শহরের সরকারি হিরা মূল্যায়ন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেলে নিশ্চিত হওয়া যায়—এটি উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক হিরা।

সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি
সতীশের হাতে খুঁজে পাওয়া হিরাটি, পাশে সাজিদ। ছবি: বিবিসি

মূল্যায়ন কর্মকর্তা অনুপম সিং জানান, হিরাটির সম্ভাব্য দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। শিগগিরই এটিকে সরকারি নিলামে তোলা হবে। এই নিলামে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা অংশ নেবেন। তিনি আরও জানান, হিরার দাম নির্ভর করে ডলারের বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক রাপাপোর্ট রিপোর্টের মানদণ্ডের ওপর।

২৪ বছর বয়সী সতীশ খাটিক একটি মাংসের দোকান চালান, আর ২৩ বছরের সাজিদ মোহাম্মদ ফল বিক্রি করেন। দুজনই দরিদ্র পরিবারের সন্তান এবং পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের পরিবার পান্নায় হিরা খোঁজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত দিন কোনো বড় সাফল্য আসেনি।

উন্নয়ন সূচকে পান্না জেলা পিছিয়ে থাকা একটি এলাকা। এখানে দারিদ্র্য, পানির সংকট ও বেকারত্ব নিত্যদিনের বাস্তবতা। তবে এই জেলাতেই ভারতের অধিকাংশ হিরা মজুত রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়।

সাজিদের বাবা নাফিস জানান, বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি করেও তাঁরা পেয়েছেন শুধু ধুলো আর কাঁচের টুকরো। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অবশেষে আমাদের ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফল দিয়েছেন।’ সংসারের ক্রমবর্ধমান খরচ ও বিয়ের ব্যয় মেটাতে না পেরে হতাশা থেকেই জমিটি লিজ নিয়েছিলেন সাজিদ।

হিরা খোঁজার কাজ সহজ নয়। দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা ছুটির সময় মাটি খুঁড়ে, পাথর ধুয়ে, চালুনিতে ছেঁকে হাজারো কণার ভিড় থেকে সম্ভাব্য হিরা আলাদা করতেন সতীশ ও সাজিদ। পান্নার জেলা খনি কর্মকর্তা রবি প্যাটেল বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর তারা জমিটি লিজ নেয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এমন মানের হিরা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।’

এখনো নিলামের টাকা হাতে না পেলেও দুই বন্ধু আশাবাদী। বড় শহরে চলে যাওয়া বা ব্যবসা বাড়ানোর চিন্তা আপাতত তাঁরা বাদ দিয়েছেন। তাঁদের একটাই লক্ষ্য—এই অর্থ দিয়ে নিজেদের বোনদের বিয়ে দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লিংকডইনে গার্লফ্রেন্ড চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর যা ঘটল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১২
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।
‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। ছবি: লিংকডইন থেকে নেওয়া।

চাকরি খোঁজার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। সেখানে কর্মীরা চাকরি খোঁজেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মীদের বাছাই করে থাকে। এই প্ল্যাটফর্মে এবার ‘গার্লফ্রেন্ড’ বা নারীবন্ধুর খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ভারতের এক ব্যক্তি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ।

ভারতের হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীনেশ বৈরাগী। ‘পূর্ণকালীন’ চাকরির অফার দিয়ে নারীবন্ধু খুঁজেছেন লিংকডইনে। ওই বিজ্ঞাপনের বিবরণে সম্ভাব্য ‘গার্লফ্রেন্ড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় নানা গুণাবলির কথাও উল্লেখ করেছেন দীনেশ।

টেক মাহিন্দ্রার সাবেক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট দীনেশ চাকরির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, ‘গুরগাঁওয়ে পূর্ণকালীন গার্লফ্রেন্ডের পদ খালি আছে। সরাসরি দেখা করা এবং দূর থেকে দায়িত্ব পালন দুটোই করতে হবে।’

প্রযুক্তিখাতে অভিজ্ঞ এই যুবক চাকরির বিজ্ঞাপনে আরও লিখেছেন, ‘এই ভূমিকায় শক্তিশালী আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা, অর্থবহ কথোপকথনে অংশ নেওয়া, সঙ্গ দেওয়া, পারস্পরিক সমর্থন এবং সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম বা শখে যুক্ত থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘সক্রিয় যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান ও বোঝাপড়া এই ভূমিকাটির ভিত্তি হবে। পাশাপাশি যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ইতিবাচক ও সহায়ক সম্পর্কের পরিবেশ গড়ে তোলাও এর অন্তর্ভুক্ত।’

দীনেশ চাকরিপ্রার্থীর যোগ্যতার ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার আবেগগত বুদ্ধিমত্তা, শোনার সক্ষমতা, সহমর্মিতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া তিনি জানান, এমন একজনকে তিনি খুঁজছেন, যাঁর মধ্যে রসবোধ, দয়া এবং ইতিবাচক মানসিকতা থাকবে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও যৌথ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। শখ, কার্যক্রমে আগ্রহ বা একসঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার মানসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের ভেতরে পারস্পরিক সমর্থন ও বিকাশে আগ্রহী হতে হবে।’

লিংকডইনে দেওয়া এই চাকরি খোঁজার মতো করে গার্লফ্রেন্ড খোঁজার পোস্টটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি নিয়ে রসিকতার বন্যা বইয়ে দেন নেটিজেনরা। অনেকেই এই অদ্ভুত চাকরির বিজ্ঞাপন নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা করেন, আবার কেউ কেউ সরাসরি পারিশ্রমিক বা বেতন প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে চান।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ওহ, এখন সব পরিষ্কার! তাহলে আমার প্রাক্তন আমার সঙ্গে ছয় মাস গার্লফ্রেন্ড হিসেবে ইন্টার্নশিপ করেছিল, এরপর অন্য কোথাও ফুলটাইম গার্লফ্রেন্ডের চাকরি পেয়ে চলে গেছে।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘আপনি যদি আসলেই ভারতীয় হন, তাহলে যেকোনো অ্যাপই ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে ফেলবেন।’

তৃতীয় একজন লিখেছেন, ‘পদের বিবরণ দেখে বেশ চমকপ্রদই লাগছে, কিন্তু স্যালারি কত?’

একজন ব্যবহারকারী প্রশ্ন করেন, ‘তিনি কি লিংকডইনের পোস্টের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা চালাচ্ছেন?’ উত্তরে দীনেশ বলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি প্রকৃত শূন্যপদ। প্রোফাইলটি ভালোভাবে বোঝার জন্য আমি চাকরির বিবরণ দেখার পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া কেউ যদি আগ্রহী ও যোগ্য হন, তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।’

শেষ আপডেট অনুযায়ী দীনেশ জানিয়েছেন, এই ‘চাকরির’ জন্য এরইমধ্যে ২৬ জন আবেদন করেছেন। এখন নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টার বেশি সময় টয়লেটে কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে ১৪ বার টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরে তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তাঁর সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতি নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি-এর পদে কাজ করার জন্য তাঁকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচার পর্বের পর আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং লি-এর কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তাঁর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করান।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালেও জিয়াংসু প্রদেশের আরেক ব্যক্তিকে একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল এক দিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত