Ajker Patrika

এআই পাওয়ারহাউস হবে সৌদি আরব, ১ ট্রিলিয়ন ডলারে বানাচ্ছে ডেটা সেন্টার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ‘হিউমেইন’। ছবি: এএফপি
সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ‘হিউমেইন’। ছবি: এএফপি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) পাওয়ারহাউস হতে বিশাল বাজি ধরেছে অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব। তেলবাণিজ্যে নির্ভরশীল দেশটি এখন নজর দিয়েছে প্রযুক্তির দিকে। এআই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে দেশটি। ‘হিউমেইন’-এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশ বড় উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশটি।

‘হিউমেইন’ হলো সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ডেটা সেন্টার, ক্লাউড অবকাঠামো, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ও অ্যাপ্লিকেশনের পরিপূর্ণ এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করছে দেশটি। আর এ প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবের প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মালিকানাধীন।

গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের আগে হিউমেইনের উদ্বোধন করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সপ্তাহে একই শহরে আয়োজিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে প্রকল্পটির পরিসর, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিশাল আর্থিক সক্ষমতা আরও স্পষ্টভাবে সামনে আসে।

হিউমেইনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) তারেক আমিন জানান, তাঁর লক্ষ্য সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এআই বাজারে পরিণত করা। শিল্পে নবাগত হয়েও তিনি বিশ্বাস করেন, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হলো এর প্রচুর ও স্বল্পমূল্যের জ্বালানি সম্পদ, যা আধুনিক কম্পিউটিং শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।

তিনি সিএনএন–এর বেকি অ্যান্ডারসনকে বলেন, “সৌদি আরবে আমাদের বড় সুবিধা হলো এর শক্তিশালী বিদ্যুৎ অবকাঠামো। হিউমেইনকে আলাদা করে সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে না। এর মানে, ‘১৮ মাসে বছর’ হওয়ার সমস্যায় পড়তে হবে না। ”

২০৩৪ সালের মধ্যে সৌদি আরবজুড়ে ছয় গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে হিউমেইন। এ প্রকল্পে তাদের অংশীদার হিসেবে রয়েছে এনভিডিয়া, এএমডি, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, কোয়ালকম ও সিসকোর মতো বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত মঙ্গলবার হিউমেইন ঘোষণা দিয়েছে, তারা সৌদি আরবে নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রাইভেট ইকুইটি জায়ান্ট ব্ল্যাকস্টোন-এর সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে।

একই দিনে তারা এআইচালিত অপারেটিং সিস্টেম ‘হিউমেইন ওয়ান’ (Humain One) উন্মোচন করেছে। এই অপারেটিং সিস্টেমে প্রচলিত সিস্টেম উইন্ডোজ বা আইওএসের মতো মাউস ক্লিক বা আইকন ব্যবহারের বদলে ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারকে ভয়েস বা টেক্সটের মাধ্যমে নির্দেশ দিতে পারবেন।

এরইমধ্যে হিউমেইন মানবসম্পদ (এইচআর), অর্থ, আইন, পরিচালন ও আইটি বিভাগে ব্যাপকভাবে এই এআই সিস্টেমটি ব্যবহার করছে। সিইও তারেক আমিন জানান, এখন তাঁর পে–রোল (বেতন ব্যবস্থাপনা) বিভাগে মাত্র একজন কর্মী আছেন, বাকি সব কাজই পরিচালনা করছে এআই এজেন্টরা।

‘ভিশন ২০৩০’ অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিকল্পনার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে সৌদি আরব। তবে দেশটি বর্তমানে তেলের দামের পতন এবং নিওম–এর মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের বিলম্বের কারণে নতুন চাপে পড়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এআইকে কেন্দ্র করে দেশের এই নতুন উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে কাছের প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর এআই প্রতিষ্ঠান ‘জি ৪২’ (G 42)-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে সৌদি আরবকে। সম্প্রতি ‘স্টারগেট ইউএই’ (Stargate UAE) নামে ৫০০ বিলিয়নের এক বিশাল ডেটা সেন্টার প্রকল্প নির্মাণে ইউএই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টার হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্পে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত রয়েছে ওপেনএআই, ওরাকল, এনভিডিয়া ও সিসকো।

এ প্রসঙ্গে আমিন জানান, তিনি এআইকে গণতান্ত্রিককরণের পক্ষে, একই সঙ্গে হিউমেইনের দৃঢ় পরিচালন ক্ষমতাকেও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য ভালো যে জ্ঞান তা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে ছড়িয়ে থাকাই উচিত। তাই ইউএইতে যা হচ্ছে, তা ভালো। সৌদি আরবে যা হচ্ছে, তাও খুব ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন... হিউমেইন একটি হোল্ডিং কোম্পানি নয়। আমরা একটি অপারেটিং কোম্পানি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রযুক্তির দখল কার হাতে

পল্লব শাহরিয়ার
প্রযুক্তির দখল কার হাতে

একসময় বিশ্বক্ষমতার হিসাব কষা হতো অস্ত্রের সংখ্যা কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই সমীকরণ বদলে গেছে। এখন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিপ, রোবট, মহাকাশ, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও তথ্যের নিয়ন্ত্রণ। এই প্রযুক্তির ময়দানেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে দুই পরাশক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রতীক হয়ে উঠেছে বহু দশক ধরে। অন্যদিকে চীন দেখিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা আর গতির সমন্বয়ে কত দ্রুত প্রযুক্তিকে বাস্তব শক্তিতে রূপ দেওয়া যায়। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এই দুই দেশের প্রযুক্তি ব্যবসা আর উদ্ভাবনের চিত্র দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এটা কোনো একতরফা লড়াই নয়। যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে মৌলিক গবেষণা, এআই সফটওয়্যার ও স্টার্টআপ সংস্কৃতিতে। আবার চীন এগিয়ে রয়েছে উৎপাদন, বাস্তব প্রয়োগ এবং প্রযুক্তিকে জাতীয় কৌশলের অংশ বানানোয়।

এআই প্রযুক্তিতে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, পিছিয়ে থেকেও বিপজ্জনক চীন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন প্রযুক্তির বড় যুদ্ধক্ষেত্র। কে আগে ভালো এআই বানাবে, সেটা এখন আর শুধু ব্যবসার প্রশ্ন নয়; এটা ক্ষমতা, নিরাপত্তা আর ভবিষ্যৎ প্রভাবেরও প্রশ্ন। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে যদি যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের দিকে তাকাই, তাহলে একটা অদ্ভুত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা চোখে পড়ে। আর তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে এআই প্রযুক্তিতে এগিয়ে রয়েছে।

এ ছাড়া চীন পিছিয়েও ভীষণভাবে বিপজ্জনক!এআই উদ্ভাবনের মূল শিকড় এখনো মূলত যুক্তরাষ্ট্রে। বড় ভাষা মডেল, জেনারেটিভ এআই, মাল্টিমোডাল সিস্টেম—এই ধারণাগুলোর জন্ম, বিকাশ আর পরিপক্বতা বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে। শুধু প্রযুক্তি নয়, এর পেছনে আরও আছে গবেষণা, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পের সংযোগ, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস এবং বিশাল বিনিয়োগ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এআই দ্রুত গবেষণা থেকে পণ্যে রূপ নেয়। নতুন কোনো ধারণা জন্মানোর পর সেটাকে স্টার্টআপ, সফটওয়্যার বা প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে খুব বেশি সময় লাগে না।

এআই সফটওয়্যারগুলোর নিয়ন্ত্রণ, বিশ্বের প্রভাবশালী এআই প্ল্যাটফর্ম, ডেভেলপার টুলস আর ক্লাউড অবকাঠামোর বড় অংশই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। এর মানে শুধু ভালো এআই বানানো নয়, বরং বিশ্ব কীভাবে এআই ব্যবহার করবে, সেটার মানদণ্ডও তারা ঠিক করছে। কিন্তু চীনের এআই যাত্রা একেবারে ভিন্ন পথে। চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মতো সবচেয়ে উন্নত কিংবা সৃজনশীল এআই এখনো বানাতে পারেনি। কিন্তু তারা যেটা করেছে, সেটাই তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক করে তুলেছে। এআই প্রযুক্তিকে তারা দ্রুত, ব্যাপক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাস্তবে নামিয়েছে।

চীনে এআই কোনো পরীক্ষাগারের বিষয় নয়; এটা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায়, কারখানায় উৎপাদনে, সরকারি প্রশাসনে, নজরদারি ব্যবস্থায় আর সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঢুকে গেছে। বিশাল জনসংখ্যা আর ডেটার সুবিধা নিয়ে চীন এআই প্রশিক্ষণ ও প্রয়োগে এমন স্কেল তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনেক সময় সম্ভব হয় না।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীনে এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন শুধু ব্যবসার হাতে নেই। রাষ্ট্র সরাসরি এই খেলায় আছে। এতে গতি বেড়েছে, সিদ্ধান্ত দ্রুত হয়েছে, আর প্রযুক্তি সরাসরি জাতীয় কৌশলের অংশ হয়ে উঠেছে। ঠিক এখানেই চীন পিছিয়ে থেকেও হয়ে গেছে বিপজ্জনক।

চিপ যুদ্ধ: এই লড়াই এআইয়ের ভবিষ্যৎ কেন ঠিক করবে

এআই নিয়ে সব কথা এসে ঠেকে যায় যে বিষয়ে, তার নাম চিপ। যত বুদ্ধিমান অ্যালগরিদমই বানানো হোক, শক্তিশালী চিপ ছাড়া এআই আসলে অচল। তাই যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল যুদ্ধটা হচ্ছে এই সেমিকন্ডাক্টর কিংবা চিপ নিয়ে।

এ মুহূর্তে বাস্তবতা হলো, চিপের দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আছে; বিশেষ করে এআইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর, ডিজাইন সফটওয়্যার আর আর্কিটেকচারের বড় অংশ এখনো আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। ফলে বিশ্বজুড়ে যত আধুনিক এআই তৈরি হচ্ছে, তার মস্তিষ্কের বড় অংশই কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।

এই এগিয়ে থাকার কারণ শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম। গবেষণা, ডিজাইন, সফটওয়্যার টুল, ক্লাউড অবকাঠামো—দেশটিতে সব একসঙ্গে কাজ করছে। ফলে নতুন এআই মডেল তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে দ্রুততা ও স্থায়িত্ব—দুটোই।

চীনের সমস্যা শুরু এখানেই, আর তাই এখান থেকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। কারণ, চীন খুব ভালোভাবে বুঝে গেছে যে তারা যদি চিপের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে, তাহলে এআইতে সত্যিকারের স্বাধীনতা কখনোই আসবে না। তাই ২০২৫ সালে চীন যা করছে, সেটা হলো সরাসরি প্রযুক্তিগত বাধা ভাঙার চেষ্টা না করে; বরং বিকল্প পথ তৈরি করা।

চীন এখন চিপের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে স্বনির্ভর হওয়ার কৌশল নিয়েছে। উন্নত চিপে সীমাবদ্ধতা থাকলেও তারা মাঝারি ক্ষমতার চিপকে বড় পরিসরে ব্যবহার করে এআই চালানোর পদ্ধতি তৈরি করছে। এটা আপাতদৃষ্টে দুর্বলতা মনে হলেও আসলে এটা ভিন্নধর্মী শক্তি। এতে চীন এমন এআই সিস্টেম বানাতে শিখছে, যেগুলো কম খরচে, কম রিসোর্সে কাজ করতে পারে। ভবিষ্যতে এই দক্ষতাই বড় সুবিধা হয়ে উঠতে পারে; বিশেষ করে উন্নয়নশীল বাজারে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। চীনে চিপ উন্নয়ন শুধু বেসরকারি খাতের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। সরাসরি অর্থ, নীতি আর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে রাষ্ট্র। এতে ফল আসতে সময় লাগলেও ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে না। এই চিপ যুদ্ধের প্রভাব সরাসরি এআইয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে। কারণ, যে দেশ বেশি শক্তিশালী ও সহজলভ্য চিপ বানাতে পারবে, সে দেশই বেশি এআই প্রশিক্ষণ চালাতে পারবে, দ্রুত নতুন মডেল আনতে পারবে এবং বিশ্ববাজারে নিজের মানদণ্ড চাপিয়ে দিতে পারবে।

ডিফেন্স টেক ও সাইবার নিরাপত্তা

প্রযুক্তির আরও একটি ক্ষেত্র আছে, যা সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে আঘাত বা শক্তি দিতে পারে। এটি হলো ডিফেন্স টেক ও সাইবার নিরাপত্তা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা এখানেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি এখানে এসেছে দুটো দিক থেকে। প্রথমত, উচ্চমানের গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ওপর ভিত্তি করে। এআই-চালিত ড্রোন, নজরদারি প্রযুক্তি, আধুনিক স্যাটেলাইট সিস্টেম এবং প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত সেন্সর—এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বনেতা। দ্বিতীয়ত হলো, অভিজ্ঞতা। দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ইতিহাস এবং বহুজাতিক সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে রেখেছে; বিশেষ করে জটিল সাইবার ডিফেন্স এবং মহাকাশভিত্তিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।

অন্যদিকে চীনের কৌশল আলাদা। তারা এখানে দ্রুততা ও পরিসরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন দ্রুত নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তায় চীন এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর কার্যক্রম চালাচ্ছে। এটি শুধু আক্রমণাত্মক নয়, প্রতিরক্ষা ও নজরদারিতেও সমানভাবে শক্তিশালী।

ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দৌড়ে কারা এগিয়ে

২০২৫ সালে প্রযুক্তি লড়াই শুধু উদ্ভাবনের নয়; এটি ক্ষমতা, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় কৌশলের প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিযোগিতা অনেকটা দুই ভিন্ন পথের গল্প—একটি দেশ স্বাধীন উদ্ভাবন ও স্টার্টআপের ওপর নির্ভরশীল, অন্যটি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়নের কৌশলে এগিয়ে।

এই দ্বন্দ্ব একে অপরকে বাতিল করে না; বরং দুই দেশের প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা আরও ধারালো ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন + বাস্তবায়ন + নিরাপত্তা—এই তিনের সমন্বয় যে দেশ ভালো করতে পারবে, সেই দেশ আগামী দশকের প্রযুক্তিগত প্রভাব নির্ধারণ করবে। সংক্ষেপে, ২০২৫ সালের প্রযুক্তি মানচিত্র বলছে, উদ্ভাবনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র, বাস্তব প্রয়োগের দিক থেকে চীন, আর বিশ্ব এই দুই শক্তির প্রতিযোগিতার মধ্যে টেকসই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুগলের নতুন এআই টুল

টি এইচ মাহির 
গুগলের নতুন এআই টুল

গুগল তাদের সফটওয়্যার ও ডিজিটাল সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহারে আরও জোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে গুগলের অনেক অ্যাপে এআই যুক্ত হয়েছে। এসব এআই টুলের কাজ আলাদা আলাদা। সম্প্রতি গুগল পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নতুন এআই টুল চালু করেছে, যেগুলো এখনো সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হয়নি।

google

ডিসকো

ওয়েব ব্রাউজারের জন্য গুগল সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে নতুন এআই টুল ডিসকো। এই টুল মূলত ইন্টারনেট ব্রাউজিং সহজ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় একসঙ্গে অনেক ট্যাব খুলতে হয়। এতে কাজ এলোমেলো হয়ে যায়। ডিসকো এই সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। এটি একাধিক খোলা ট্যাবকে একসঙ্গে গুছিয়ে কাজ করার সুযোগ দেবে। এমনকি খোলা ট্যাবগুলো থেকে আলাদা ওয়েব অ্যাপও তৈরি করতে পারবে। ডিসকো গুগলের জেমিনি থ্রি এআই দিয়ে পরিচালিত।

এই টুল ট্যাবগুলোকে জেনট্যাবস নামে আলাদা ওয়েব অ্যাপে রূপান্তর করবে। গুগলের মতে, এতে ব্রাউজার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও সহজ ও কার্যকর হবে; বিশেষ করে শিক্ষার্থী, গবেষক ও পেশাজীবীদের জন্য এটি বেশ উপকারী হতে পারে। তবে টুলটি এখনো সবার জন্য উন্মুক্ত হয়নি।

ভাইব কোডিং

গুগল তাদের এআই স্টুডিওতে ভাইব কোডিং নামে নতুন একটি সুবিধা যুক্ত করেছে। এই টুলের মাধ্যমে কোডিং না জেনেও অ্যাপ তৈরি করা যাবে। ব্যবহারকারীকে শুধু সাধারণ ভাষায় বলতে হবে, তিনি কোন ধরনের অ্যাপ তৈরি করতে চান। এরপর গুগল এআই স্টুডিও নিজেই সেই ধারণা অনুযায়ী একটি সম্পূর্ণ অ্যাপ তৈরি করে দেবে। এই অ্যাপে থাকবে ডিজাইন, প্রয়োজনীয় ফিচার এবং কোড। ব্যবহারকারী চাইলে পরে কোড পরিবর্তন করতে পারবেন। অ্যাপ তৈরির সময় এআই থেকে বিভিন্ন পরামর্শও পাওয়া যাবে। কোডিং বা প্রযুক্তিগত জটিলতা ছাড়া সহজে অ্যাপ বানানো সম্ভব হবে। এতে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট আরও সহজ হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

mixboard

মিক্সবোর্ড

গুগলের জনপ্রিয় এআই টুলগুলোর একটি হলো ন্যানো বানানা। এই টুল ব্যবহার করে প্রতিদিন অনেক এআই ছবি তৈরি করা হচ্ছে। ছবি তৈরির ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর একটি টুল। ন্যানো বানানার ওপর ভিত্তি করেই গুগল চালু করেছে নতুন টুল মিক্সবোর্ড। এটি একটি পরীক্ষামূলক এআই-চালিত আইডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে চিন্তা, পরিকল্পনা

ও ধারণাগুলো সহজে সাজিয়ে উপস্থাপন করা যায়। মিক্সবোর্ডে পিডিএফ, ছবি ও ভিডিও আপলোড করা যাবে। এরপর একটি ছোট নির্দেশনা লিখতে হবে। এরপর এআই সেই বিষয় অনুযায়ী একটি ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন কিংবা সাজানো রিপোর্ট তৈরি করে দেবে।

গবেষণা, পরিকল্পনা তৈরি অথবা উপস্থাপনার কাজে এই টুল ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে গুগলের এই নতুন এআই টুল যুক্তরাষ্ট্রে বেটা সংস্করণে চালু রয়েছে।

সূত্র: গুগল ব্লগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বৈদ্যুতিক জাহাজ নির্মাণশিল্পে চীনের আধিপত্য

ফিচার ডেস্ক
বৈদ্যুতিক জাহাজ নির্মাণশিল্পে চীনের আধিপত্য

বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি উৎপাদনে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে কনটেম্পরারি অ্যাম্পেরেক্স টেকনোলজি (সিএটিএল) এবং গোশন হাই টেক নামের চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে এবার জাহাজ নির্মাণে নামছে। ফলে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ও নতুন শক্তিচালিত জাহাজে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চীন বৈশ্বিক জাহাজনির্মাণ শিল্পে নিজেদের আধিপত্য আরও শক্ত করছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ জোরদার হওয়ার কারণে সমুদ্রের জাহাজেও এখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এই পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীনের ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

আগামী তিন বছরে সমুদ্রে নামবে বৈদ্যুতিক জাহাজ

বিশ্বের বড় ইভি ব্যাটারি নির্মাতা সিএটিএল জানিয়েছে, তাদের তৈরি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক জাহাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে সমুদ্রে চলাচল শুরু করবে। বর্তমানে বৈশ্বিক ইভি ব্যাটারি বাজারের প্রায় ৩৮ শতাংশ সিএটিএলের দখলে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে জাহাজে ব্যাটারি ব্যবহারের প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৯০০টি নৌযানে ব্যাটারি সরবরাহ করেছে তারা। তাদের ব্যাটারি সংযুক্ত চীনের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক ক্রুজ জাহাজ ‘ইউজিয়ান ৭৭’ চলতি বছরের জুলাই থেকে চালু হয়েছে।

কনটেইনার জাহাজে গোশনের ব্যাটারি

গোশন হাই টেক জানিয়েছে, তাদের তৈরি ব্যাটারি প্যাক ব্যবহার করে ১৩২টি স্ট্যান্ডার্ড কনটেইনার বহনে সক্ষম একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক জাহাজ সফলভাবে চালানো সম্ভব হয়েছে। ‘পাফার ফিশ ব্লু ০১’ নামের জাহাজটি যৌথভাবে তৈরি করেছে চীনের উহু শিপইয়ার্ড ও সানদিয়ানশুই নিউ এনার্জি টেকনোলজি। জাহাজটি এরই মধ্যে চায়না ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত সনদ পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছর এই জাহাজ বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করবে।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা

২০২৩ সালের শেষে বিশ্বের প্রথম ৭০০ কনটেইনার বহনে সক্ষম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক কনটেইনার জাহাজ সরবরাহ করে চীন। ক্লার্কসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষের দিকে বৈশ্বিক জাহাজ নির্মাণ অর্ডারের ৬৫ শতাংশ ছিল চীনা প্রতিষ্ঠানের দখলে।

গভীর সমুদ্রের এখনো সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক জাহাজ চালু হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো ব্যাটারির অতিরিক্ত ওজন, যা জাহাজের ধারণক্ষমতা ও কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে চলাচল করার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত চার্জিং অবকাঠামো এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে আশা করা যাচ্ছে, ২০২৬ সালে চীন এই বাজারে সবার আগে প্রবেশ করবে।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা কতটুক: জেনে নিন বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা কতটুক: জেনে নিন বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড

এক্সপ্রেস-ভিপিএন এবং পোলফিশের সমীক্ষা বলছে, একজন গড়পড়তা মানুষ ছয়টি ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। আরও অবাক করার বিষয় হলো, ৪৩ শতাংশ মানুষ স্বীকার করেছেন, তাঁদের পাসওয়ার্ড তাঁদের প্রিয়জনেরা সহজে আন্দাজ করে ফেলতে পারবে। ৪২ শতাংশের বেশি মানুষ তাঁদের প্রথম নাম ব্যবহার করেন, আর প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ তাঁদের পাসওয়ার্ডে পোষা প্রাণীর নাম অথবা জন্মতারিখ জুড়ে দেন। এমনকি ২৬ শতাংশ মানুষ তাঁদের প্রাক্তনের নামও পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন। অথচ ৮১ শতাংশ মানুষ বেশ আত্মবিশ্বাসী যে তাঁদের পাসওয়ার্ড খুব নিরাপদ। নর্ডপাসের ২ দশমিক ৫ টেরাবাইট লিক হওয়া ডেটা বলছে ভিন্ন কথা। তারা জানিয়েছে, বেশির ভাগ পাসওয়ার্ড ভাঙতে ১ সেকেন্ডও লাগে না।

মহাদেশভেদে মানুষের এই পাসওয়ার্ড নির্বাচনের অদ্ভুত খেয়ালগুলো দেখে নেওয়া যাক।

ইউরোপে ফুটবল, আভিজাত্য ও কি-বোর্ডের কারসাজি

ইউরোপীয়দের কাছে কি-বোর্ডের বিন্যাস আর ফুটবলপ্রেমই পাসওয়ার্ডের প্রধান উৎস। যুক্তরাজ্যে জনপ্রিয় পাসওয়ার্ডগুলোর মধ্যে password, ashley এবং ফুটবল ক্লাব liverpool তালিকায় বেশ ওপরের দিকে।

ফ্রান্সে কি-বোর্ড সাজানো থাকে azerty ঢঙে, তাই সেখানে 123456-এর পরেই এর রাজত্ব। পাশাপাশি doudou বা marseille-এর মতো ফরাসি শব্দও জনপ্রিয় পাসওয়ার্ড হিসেবে। জার্মানিতে passwort এবং dragon শব্দটি দেখা যায় পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে।

ইতালিতে নিজের প্রিয় ফুটবল দলের প্রতি ভালোবাসা এতটাই যে Juventus শব্দটি সেখানে পাসওয়ার্ডের তালিকায় চতুর্থ। তবে তারা কিছুটা সৃজনশীলও বটে। অনেকে cambiami ব্যবহার করেন। এর অর্থ আমাকে পরিবর্তন করো।

স্পেনে দেশপ্রেম প্রবল। তাই পাসওয়ার্ড হিসেবে সেখানে España শব্দটি বেশ জনপ্রিয়। পর্তুগালে আবার ফুটবল ক্লাব benfica বা sporting শব্দ দুটি পাসওয়ার্ডের তালিকায় আধিপত্য বিস্তার করে আছে।

উত্তরের দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্কে webhompass বা hejmeddig (হ্যালো ইউ) এবং সুইডেনে hejsan শব্দগুলোর আধিপত্য আছে পাসওয়ার্ড হিসেবে। ফিনল্যান্ডে পাসওয়ার্ড হিসেবে জনপ্রিয় শব্দ salasana-এর ইংরেজে অর্থই হলো পাসওয়ার্ড। পোল্যান্ডে দেশপ্রেম ফুটে ওঠে polska শব্দে। এটি সে দেশে পাসওয়ার্ডের শব্দ হিসেবে জনপ্রিয়। সুইজারল্যান্ডে পর্তুগিজ অভিবাসীদের প্রভাবে Portugal শব্দটি পাসওয়ার্ড হিসেবে আছে ১৫ নম্বরে। এ ছাড়া অস্ট্রিয়ায় michael, বেলজিয়ামে azerty, নেদারল্যান্ডসে welkom01, আয়ারল্যান্ডে liverpool এবং চেক প্রজাতন্ত্রে martin কিংবা veronika-এর মতো সাধারণ শব্দগুলো পাসওয়ার্ড হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।

আমেরিকায় যা গোপন কিন্তু প্রকাশ্য

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাসওয়ার্ডে ব্যবহৃত জনপ্রিয় শব্দ হলো secret। কী অদ্ভুত পরিহাস, যা গোপন করার কথা, তা-ই পাসওয়ার্ড! আমেরিকানরা baseball ও iloveyou শব্দ দুটি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে ভালোবাসে। কানাডায় আবার জাতীয় খেলা hockey-এর জয়জয়কার। মেক্সিকোতে alejandro বা carlos-এর মতো শব্দ এবং ব্রাজিলে brasil বা rental শব্দ দুটি পাসওয়ার্ড হিসেবে জনপ্রিয়। চিলিতে তাদের ফুটবল দল colocolo পাসওয়ার্ড হিসেবে জনপ্রিয়, আর কলম্বিয়ায় পাসওয়ার্ড হিসেবে দেশের নাম Colombia-ই শেষ কথা।

সংখ্যাতত্ত্ব ও সংস্কৃতির প্রভাব এশিয়া এবং ওশেনিয়ায়

এশিয়ায় পাসওয়ার্ড নির্বাচনে সংখ্যাতত্ত্বের প্রভাব স্পষ্ট। জাপানে 123456789 সংখ্যার এই সিরিজ পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের শীর্ষে রয়েছে।

আর তারা কি-বোর্ড প্যাটার্ন 1qaz2wsx-ও পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করে। চীনে জনপ্রিয় wangyut2 আর হংকংয়ে 5201314। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আবেগের ছোঁয়া বেশি। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় sayang পাসওয়ার্ডটি বেশ ওপরের দিকে দেখা যায়।

এর অর্থ প্রিয়তম। ফিলিপাইনেও দেখা যায় iloveyou-এর আধিপত্য। থাইল্যান্ডে 221225-এর মতো সংখ্যা বেশ ব্যবহৃত হয় পাসওয়ার্ড হিসেবে।

ভারতে মানুষ সরলতা পছন্দ করে। তাই 123456 বা india123 এবং Indya123-ই মানুষের প্রথম পছন্দ। তুরস্কে এক অদ্ভুত ধরনের ঘটনা দেখা যায়। দেশটিতে ব্রিটিশ ব্যান্ড Anathema এতই জনপ্রিয় যে এটি পাসওয়ার্ডের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অভিবাসীদের প্রভাবে pakistan শব্দটি পাসওয়ার্ড হিসেবে ১১ নম্বরে রয়েছে। ওশেনিয়া অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়ায় পাসওয়ার্ড হিসেবে password শব্দটির ব্যবহারের চল বেশি। এর পাশাপাশি pokemon বা lizottes শব্দ দুটিও পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আফ্রিকায় ভালোবাসার সহজ পাঠ

দক্ষিণ আফ্রিকায় পাসওয়ার্ড হিসেবে মানুষ 123456 এই সংখ্যার সেট থেকে বেরিয়ে কিছুটা রোমান্টিক হয়ে 123love ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

সূত্র: নর্ডপাস, ইভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত