Ajker Patrika

মহাবিশ্বের অতীত যেভাবে তুলে ধরে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়েব যখন কোনো দূরবর্তী গ্যালাক্সির ছবি তোলে, তখন আসলে আমরা ওই গ্যালাক্সির কোটি কোটি বছর আগের অবস্থা দেখি। ছবি: নাসা
ওয়েব যখন কোনো দূরবর্তী গ্যালাক্সির ছবি তোলে, তখন আসলে আমরা ওই গ্যালাক্সির কোটি কোটি বছর আগের অবস্থা দেখি। ছবি: নাসা

বহু শতাব্দী ধরে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে জানতে চেয়েছে—মহাবিশ্বের শুরুতে ঠিক কী ঘটেছিল। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানের পথ এখন অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে নাসার তৈরি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের রঙিন ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল টেলিস্কোপটি। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি যেন এক ‘টাইম মেশিন’, যার চোখ দিয়ে দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্বের জন্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গঠিত গ্যালাক্সিগুলোকে।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে উৎক্ষেপণের পর থেকে এই টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১০ লাখ মাইল দূরে কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তুলে আনছে মহাশূন্যের শ্বাসরুদ্ধকর চিত্র।

তবে কীভাবে কাজ করে এই অসাধারণ যন্ত্র? কীভাবে এতটা দূর পর্যন্ত দেখতে পায়? এর উত্তর লুকিয়ে আছে এর শক্তিশালী ক্যামেরা এবং আলো দেখার ব্যতিক্রমী ক্ষমতায়।

টাইম মেশিনের মতো টেলিস্কোপ

ওয়েব যখন কোনো দূরবর্তী গ্যালাক্সির ছবি তোলে, তখন আসলে আমরা ওই গ্যালাক্সির কোটি কোটি বছর আগের অবস্থা দেখি। কারণ সেই আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে সময় নিয়েছে এতটাই দীর্ঘ সময়।

বিশাল আয়নার মাধ্যমে এই প্রাচীন আলো সংগ্রহ করে টেলিস্কোপটি। মহাবিশ্বের অজানা অনেক গোপন রহস্য।

হাবল টেলিস্কোপ বা সাধারণ ক্যামেরা দৃশ্যমান আলোতে ছবি তোলে। তবে ওয়েব টেলিস্কোপ কাজ করে ‘ইনফ্রারেড’ নামের বিশেষ ধরনের আলো নিয়ে। এই আলো সাধারণভাবে মানুষ দেখতে পারে না।

ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর চেয়ে বেশি। এ কারণে আমরা তা দেখতে না পারলেও বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে তা শনাক্ত করা সম্ভব। যেমন: নাইট ভিশন গগলস বা থার্মাল ক্যামেরা। ওয়েব ঠিক সেই প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ।

যখন কোনো গ্যালাক্সির দৃশ্যমান আলো মহাবিশ্ব পেরিয়ে আমাদের দিকে আসে, তখন মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে সেই আলো প্রসারিত হয়ে ইনফ্রারেডে রূপান্তরিত হয়। ফলে সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সিগুলো আর দৃশ্যমান আলোয় নয় বরং ইনফ্রারেডে ঝলমল করে। ওয়েব ঠিক এই রূপান্তরিত আলো ধরতেই তৈরি।

ওয়েব টেলিস্কোপের সবচেয়ে বড় শক্তি তার বিশাল সোনালি আয়না। আয়নাটির ব্যাস ২১ ফুট (৬ দশমিক ৫ মিটার) এবং এটি ১৮টি ছোট ছোট আয়নার সংমিশ্রণে তৈরি, দেখতে অনেকটা মৌচাকের মতো।

এ আয়নায় রয়েছে সোনার আবরণ। তবে এই আবরণ শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং সোনা ইনফ্রারেড আলো খুব ভালোভাবে প্রতিফলিত করে। আয়না যত বড়, তত বেশি আলো সংগ্রহ করে। আর তত বেশি দূরে দেখা যায়। এটি মহাকাশে পাঠানো সবচেয়ে বড় আকারের আয়না।

টেলিস্কোপের ‘চোখ’ হিসেবে কাজ করে দুটি বিশেষ যন্ত্র–‘এনআইআরক্যাম (NIRCam) এবং ‘এমআইআরআই (MIRI)

নিয়ার–ইনফারেড ক্যামেরা (এনআইআরক্যাম)

ওয়েবের মূল ক্যামেরা এটি। গ্যালাক্সি ও নক্ষত্রের মনোমুগ্ধকর ছবি তোলে। এতে রয়েছে ‘করোনাগ্রাফ’ নামের এক প্রযুক্তি, যা উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো ঢেকে দেয়। এর ফলে পাশের ক্ষীণ বস্তুগুলো স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। যেমন: উজ্জ্বল নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকা গ্রহ।

এই ক্যামেরা ইনফ্রারেড আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিভাজন ঘটায়। ফলে কোনো বস্তু শনাক্তের পাশাপাশি তার গঠন ও উপাদান বুঝতেও সাহায্য করে।

মিড ইনফারেড ইনস্ট্রুমেন্ট (‘এমআইআরআই)

এই যন্ত্র আরও দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড দেখে। বিশেষ করে ঠান্ডা, ধুলোয় আচ্ছাদিত বস্তু। যেমন: গ্যাসীয় মেঘে তৈরি হতে থাকা নতুন নক্ষত্র খুঁজে পেতে ‘এমআইআরআই’ খুবই কার্যকর। এমনকি দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জীবনধারী অণুর উপস্থিতিরও ইঙ্গিত দিতে পারে।

দূরবর্তী, ক্ষীণ তাপ খুঁজে বের করার জন্য ওয়েবকে নিজেকে রাখতে হয় অত্যন্ত ঠান্ডা–প্রায় মাইনাস ৩৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস)

এ জন্য এর সঙ্গে রয়েছে একটি টেনিস কোর্টের আকারের পাঁচ-স্তর বিশিষ্ট ‘সান শিল্ড’, যা সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের তাপ রোধ করে।

এমআইআরআই যেহেতু আরও সংবেদনশীল সেটিকে রাখতে হয় আরও ঠান্ডা। প্রায় মাইনাস ৪৪৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (মাইনাস ২৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এ জন্য এতে রয়েছে নিজস্ব একধরনের বিশেষ রেফ্রিজারেটর ‘ক্রোয়কুলার’। সামান্য উষ্ণতাও ওয়েবের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।

আলো সংগ্রহের পর, তা ‘ডিটেক্টর’ নামের সেন্সরের ওপর পড়ে। ফোনের মতো সরাসরি ছবি তোলে না। বরং ইনফ্রারেড আলোকে ডিজিটাল তথ্য হিসেবে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীতে।

এরপর বিজ্ঞানীরা সেই তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করেন রঙিন ছবি। ইনফ্রারেড যেহেতু চোখে দেখা যায় না, তাই ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে নির্দিষ্ট রং দিয়ে চিত্রিত করা হয়। এতে করে বোঝা যায় গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রগুলোর গঠন, বয়স ও উপাদান।

তথ্যসূত্র: স্পেস ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক কিংবা শতাব্দীকাল ধরে মানবসভ্যতার নানা অধ্যায়ে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে এ বছর গবেষকেরা যেন গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব, জেনেটিক বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ২০২৫ সালে উন্মোচিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক রহস্য।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিদায়ী এই বছরটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইস্টার আইল্যান্ডের একটি খনিতে পড়ে থাকা অসমাপ্ত পাথরের মূর্তিগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, প্রাচীন পলিনেশীয়রা কীভাবে পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে বিশাল মোয়াই মূর্তি তৈরি করত।

এদিকে, ইতালির পম্পেই নগরীতে নতুন করে খননকাজ শুরু হওয়ার পর একটি পাথরের সিঁড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হওয়ার আগে শহরটি দেখতে কেমন ছিল তা জানতে সহায়তা করেছে।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ হাজার ২০০টি গর্ত নিয়েও নতুন ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। এই গর্তগুলোর নির্মাতা কারা এবং কেন এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল—ড্রোন ফুটেজ ও উদ্ভিদকণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

কিছু গবেষণা আবার নতুন প্রশ্নও উসকে দিয়েছে। যেমন—চিকিৎসা নথি না থাকায় বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেন অস্টেনের মৃত্যুর কারণ জানতে গবেষকেরা তাঁর লেখার ভাষা ও শব্দচয়ন বিশ্লেষণ করছেন।

রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন
রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন

এ বছর ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি হলো, অস্ট্রিয়ার প্রত্যন্ত গির্জায় সংরক্ষিত রহস্যময় একটি মমি। ১৭০০ সাল থেকে ‘বাতাসে শুকানো যাজক’ নামে পরিচিত এই দেহটির পরিচয় দীর্ঘদিন অজানা ছিল। আধুনিক স্ক্যান ও রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি ছিলেন ফ্রাঞ্জ জাভের সিডলার ফন রোজেনেগ নামে একজন অভিজাত ব্যক্তি। পরবর্তীতে তিনি গির্জার যাজক হয়েছিলেন। গবেষকেরা তাঁর দেহ সংরক্ষণের এক অজানা পদ্ধতি ও মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে ডেনমার্কে সংরক্ষিত হিয়র্টস্প্রিং নৌকাটির উৎস নিয়েও রহস্যের পর্দা উঠেছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের এই নৌকাটি অস্ত্রে ভরা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি দ্বীপে আক্রমণ করার উদ্দেশে যোদ্ধাদের বহন করছিল। বিশ্লেষণে একটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এটিকে তৎকালীন কোনো নাবিকের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রমাণ মিলেছে—অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ এইচএমএস অ্যান্ডিউরেন্স ভাঙা স্টিয়ারিং নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ডুবে গিয়েছিল।

১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

১৪ হাজার বছর আগে বরফ যুগের ‘টুমাট পাপিজ’ নামে পরিচিত দুটি সংরক্ষিত শাবককে এত দিন গৃহপালিত কুকুর মনে করা হলেও নতুন জেনেটিক গবেষণায় জানা গেছে, এগুলো আসলে নেকড়ে শাবক ছিল এবং মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এ ছাড়া ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান নিয়েও নতুন তথ্য মিলেছে। সেই সময়ে নিহত ফরাসি সেনাদের দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করে টাইফাসের পাশাপাশি প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা ওই বাহিনীর বিপুল প্রাণহানির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বিজ্ঞানের হাত ধরে ইতিহাসের বহু অন্ধকার কোণ আলোকিত করেছে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ ও জটিল পথচলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত