Ajker Patrika

মেকি হাসি চেনার উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সব হাসি এক নয়। ছবি: সংগৃহীত
সব হাসি এক নয়। ছবি: সংগৃহীত

হাসি মানুষের সহজাত এক অভিব্যক্তি। কখনো তা আনন্দের, কখনো সৌজন্যের, আবার কখনো নিছক সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করা একপ্রকার মুখোশ। আমরা প্রতিদিনই নানা ধরনের হাসিমাখা মুখ দেখি। তবে সব হাসিই আসল হাসি নয়। অনেক সময় মুখে হাসি থাকলেও চোখে থাকে না এক ফোঁটা উষ্ণতা। ঠিক তখনই আমাদের মন বলে ওঠে—‘কিছু একটা গড়বড় আছে।’ আসল আর নকলের এই সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। হাসিকে আসল বা মেকি বলে মনে হওয়ার পেছনের কারণটি লুকিয়ে আছে মুখের পেশি, স্নায়ুবিজ্ঞান আর আবেগের আন্তরিকতায় এক চমকপ্রদ মিশেলে।

আসল বনাম কৃত্রিম হাসি

সব হাসি এক নয়। বিজ্ঞানের ভাষায়, অন্তত দুটি আলাদা ধরনের হাসি আছে। একটিকে বলে ডুশেন স্মাইল (Duchenne smile), যেটা আসে মনের গভীর থেকে। আরেকটি ‘নন-ডুশেন স্মাইল (non-Duchenne smile), যা সামাজিক সৌজন্য বা কৌশলগত কারণে করা হয়।

ডুশেন হাসির নামকরণ করা হয়েছে ফরাসি স্নায়ুবিজ্ঞানী গিয়োম ডুশেন দ্য বুলোনির নামে। এই হাসিতে দুটি মূল পেশি কাজ করে।

প্রথমত, মুখের কোণের দিকে থাকা ‘রিজোরিয়াস’ ও ‘জাইগোমেটিকাস মেজর’ নামের পেশিগুলো ঠোঁটকে টেনে তোলে।

দ্বিতীয়ত, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ‘অরবিকুলারিস অকুলি’—চোখের চারপাশের পেশি, যা সংকুচিত হয়ে চোখে কুঁচকে রেখা তৈরি করে।

কৃত্রিম হাসিতে সাধারণত শুধু মুখের পেশি সক্রিয় হয়। চোখ থাকে নিরাবেগ। তাই এমন হাসি দেখে মনে হয় যান্ত্রিক—ভদ্রতা বা চাপা আবেগের মুখোশমাত্র।

হাসির স্নায়ুবিজ্ঞান

দুই ধরনের হাসিই মুখের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণকারী সপ্তম করোটির স্নায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে পার্থক্যটা হয় উৎসে। আসল হাসি আসে মস্তিষ্কের আবেগ-নিয়ন্ত্রক অংশ ‘লিম্বিক সিস্টেম’ থেকে, বিশেষ করে ‘অ্যামিগডালা’ নামক অংশ থেকে।

অন্যদিকে কৃত্রিম হাসি আসে সচেতন নিয়ন্ত্রণে ‘মোটর কর্টেক্স’ থেকে। মানে হলো, সত্যিকারের হাসি ইচ্ছা করলেও কৃত্রিম বানানো যায় না। চোখের আশপাশের অরবিকুলারিস অকুলি পেশি কেবল তখনই সঠিকভাবে সংকুচিত হয়, যখন অভ্যন্তরীণ আবেগ তা সৃষ্টি করে। এ জন্য অভিনেতারাও বাস্তব অভিজ্ঞতা মনে করে বা ‘মেথড অ্যাক্টিং’-এর মাধ্যমে সে আবেগকে ডাকতে হয়।

চোখেই লুকিয়ে সত্য

মানুষের মস্তিষ্ক দারুণভাবে পারদর্শী সত্যিকারের আবেগ চিনতে। এমনকি ১০ মাস বয়সী শিশুদের মাঝেও গবেষণায় দেখা গেছে, তারা আসল আর নকল হাসির পার্থক্য বুঝতে পারে।

এই দক্ষতা আমাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে টিকে থাকার উপায় ছিল—কে বন্ধু, কে প্রতারক, তা বোঝার জন্য।

মুখাবয়ব পড়তে ও অভিব্যক্তি বিশ্লেষণ করতে ‘ফুসিফর্ম গাইরাস’ ও ‘সুপেরিয়র টেম্পোরাল সালকাস’ নামক মস্তিষ্কের অংশ একসঙ্গে কাজ করে।

সামাজিক হাসির গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

নকল হাসি মানেই খারাপ কিছু নয়। বরং এগুলো সমাজে শান্তি বজায় রাখে, সৌজন্য রক্ষা করে, বিবাদ ঠেকায়, সম্মান দেখায়।

তবে দীর্ঘদিন এই ধরনের আবেগবিহীন হাসি ‘পরিধান’ করলে মানসিক চাপ বাড়ে। একে বলা হয় ‘ইমোশনাল লেবার’।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা চাকরিতে জোর করে হাসতে বাধ্য হন—বিশেষ করে কাস্টমার সার্ভিসে—তাদের মানসিক চাপ, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ও অবসাদ বেড়ে যায়।

কৃত্রিম মুখ ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

এখন এআই যুগে কৃত্রিম মুখ তৈরি হচ্ছে—চ্যাটবট, ভার্চুয়াল সহকারী ইত্যাদি। তাদের মুখে হাসি বসানো সহজ, তবে চোখে কৃত্রিম সেই রেখা দেওয়া কঠিন। সে জন্য এখনো মানবদেহের অরবিকুলারিস অকুলিই রয়ে গেছে সত্যিকারের হাসির মানদণ্ড। পরের বার যখন কারও হাসি বিশ্লেষণ করবেন—মুখের দিকে নয়, চোখের দিকে তাকান।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে বেরোচ্ছে সোনা—২০২৫ সালে আরও যা জানা গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ২৮
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী ছিল উত্তপ্ত ম্যাগমায় ঢাকা এক অনাবাসযোগ্য পাথুরে গ্রহ। আজকের নীল-সবুজ, প্রাণে ভরপুর পৃথিবীতে তার রূপান্তরের ইতিহাস এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। তবে ২০২৫ সালে একের পর এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমাদের এই গ্রহের অতীত, গভীরতা ও অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে নতুন জানালা খুলে দিয়েছে।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিলার বয়স নির্ধারণ করেছেন, গভীর সমুদ্রের তলদেশে আবিষ্কার করেছেন জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র, চৌম্বক উত্তর মেরুর গতিপথে বড় পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন এবং এমনকি পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে সোনা বেরিয়ে আসার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিলা

কানাডার উত্তর কুইবেকের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ‘নুভভুয়াগিত্তুক’ শিলা গঠনকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত ভূত্বকের অংশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত জুনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, এই শিলার বয়স প্রায় ৪১৬ কোটি বছর, যা পৃথিবীর প্রথম ভূতাত্ত্বিক যুগ ‘হেডিয়ান’-এর অন্তর্গত।

এই সময় পৃথিবী ছিল অস্থির, উত্তপ্ত ও প্রায় নরকের মতো। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই শিলায় সেই যুগের সম্ভাব্য জীবনের চিহ্নও সংরক্ষিত রয়েছে। তবে শিলাটিতে ‘জিরকন’ খনিজ না থাকায় এর বয়স নির্ধারণ নিয়ে এখনো বৈজ্ঞানিক বিতর্ক রয়ে গেছে।

‘মাইক্রোলাইটনিং’ ও জীবনের উৎস

লোককথায় পরিচিত ‘উইল-ও-দ্য-উইস্প’ বা জলাভূমির ওপর ভেসে থাকা রহস্যময় আলো বহু শতাব্দী ধরে মানুষের কৌতূহল জাগিয়েছে। ২০২৫ সালে বিজ্ঞানীরা জানান, এই আলো তৈরি হয় মিথেন গ্যাসের ক্ষুদ্র বুদ্‌বুদের মধ্যে সৃষ্ট ‘মাইক্রোলাইটনিং’ থেকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত পানির বুদ্‌বুদ ও মিথেনের মিথস্ক্রিয়ায় ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ ঝলক তৈরি হয়। গত মার্চে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে এই ধরনের মাইক্রোলাইটনিং জীবনের মৌলিক রাসায়নিক উপাদান তৈরিতে ভূমিকা রেখেছিল।

সরে যাচ্ছে চৌম্বক উত্তর মেরু

পৃথিবীর চৌম্বক উত্তর মেরু স্থির নয়; এটি ক্রমাগত সরে যাচ্ছে। ১৯৯০-এর পর এর গতি হঠাৎ বেড়ে যায়, পরে ২০১৫ সালের পর আবার ধীর হয়। ২০২৫ সালে বিজ্ঞানীরা ‘ওয়ার্ল্ড ম্যাগনেটিক মডেল’ হালনাগাদ করেছেন, যা বিমান ও জাহাজ চলাচলের জিপিএস ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ম্যাগনেটিক মডেল থেকে জানা গেছে, বর্তমানে চৌম্বক উত্তর মেরু কানাডা থেকে সরে রাশিয়ার দিকে যাচ্ছে। তবে এর গতি ভবিষ্যতে আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরে আবিষ্কৃত প্রাণীরা সূর্যালোক ছাড়াই বাঁচতে পারে। ছবি: সিএনএন
সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরে আবিষ্কৃত প্রাণীরা সূর্যালোক ছাড়াই বাঁচতে পারে। ছবি: সিএনএন

সমুদ্রের আরও গভীরে জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র

রাশিয়া ও আলাস্কার মধ্যবর্তী গভীর সমুদ্র খাদে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৫ হাজার ৮০০ থেকে ৯ হাজার ৫০০ মিটার নিচে বসবাসকারী এই প্রাণীরা সূর্যালোক নয়, বরং মিথেন ব্যবহার করে টিকে থাকে।

গভীর এই অঞ্চলের জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া মিথেন উৎপাদন করে, যা ঝিনুক ও টিউবওয়ার্ম জাতীয় প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে কাজ করে; এটি জীববিজ্ঞানের জন্য একটি বড় চমক।

কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসেছে সোনা

২০২৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি এসেছে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর কঠিন অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের ঘূর্ণন দিক বদলেছে এবং এর গঠনেও বিকৃতি দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা সোনা ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠে আসছে। হাওয়াইয়ের শিলায় পাওয়া রাসায়নিক সংকেত থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অতি সামান্য হলেও কেন্দ্র থেকে লিক হয়ে ভূত্বকের দিকে সোনা বেরিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে পৃথিবীর গভীর থেকে আরও মূল্যবান ধাতু ওপরে উঠে আসতে পারে।

২০২৫ সাল তাই প্রমাণ করেছে, পৃথিবী এখনো তার রহস্য উন্মোচন করছে, আর প্রতিটি আবিষ্কারই আমাদের গ্রহকে নতুন করে চিনতে শেখাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের প্রথম জিনগতভাবে পরিবর্তিত ভেড়া এক বছরে পা দিল, কেমন আছে সে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রথম জিনগতভাবে পরিবর্তিত ভেড়াটি সম্প্রতি এক বছর পূর্ণ করেছে। সে ভালোই আছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

ভারতশাসিত কাশ্মীরে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ভেড়াটির জন্ম হয়। এর নাম রাখা হয় তারমিম; আরবি ভাষায় যার অর্থ পরিবর্তন বা সম্পাদনা।

শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেড়াটিকে একটি আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছে তার জিনগতভাবে অপরিবর্তিত যমজ বোনটিও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ভেড়াটি পরিবর্তনে তারা ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এটি ডিএনএ পরিবর্তনের একটি আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি।

সহজভাবে বললে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কাঁচির মতো ডিএনএর এমন অংশ কেটে ফেলতে পারেন, যেগুলো দুর্বলতা বা রোগ সৃষ্টি করে।

গবেষক ড. সুহাইল মাগরে বিবিসিকে বলেন, ‘গর্ভবতী ভেড়ার শরীর থেকে আমরা বেশ কয়েকটি ভ্রূণ সংগ্রহ করি এবং একটি নির্দিষ্ট জিন–যাকে মায়োস্টাটিন জিন বলা হয়, সম্পাদনা করি। এই জিনটি পেশির বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।’

নিষিক্ত ডিম্বাণু বা ভ্রূণগুলোকে দুই থেকে তিন দিন ল্যাবরেটরির নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রাখা হয়। এরপর সেগুলো একটি স্ত্রী ভেড়ার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাকে ফস্টার রিসিপিয়েন্ট বলা হয়।

ড. সুহাইল মাগরে বলেন, ‘এরপর প্রকৃতি তার কাজ করেছে। প্রায় ১৫০ দিন পর বাচ্চা জন্ম নেয়। আমাদের লক্ষ্য ছিল ভেড়ার পেশির পরিমাণ বাড়ানো। মায়োস্টাটিন জিন নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে আমরা তা সফলভাবে করতে পেরেছি।’

চলতি মাসের শুরুতে তারমিম এক বছর পূর্ণ করার পর প্রকল্পটির প্রধান গবেষক ও অধ্যাপক রিয়াজ শাহ বিবিসিকে ভেড়াটির বর্তমান অবস্থা জানান।

তিনি বলেন, ‘তারমিম ভালোভাবে বেড়ে উঠছে। এর শারীরবৃত্তীয়, জৈব-রাসায়নিক ও শারীরিক সব সূচকই স্বাভাবিক রয়েছে। প্রত্যাশিতভাবে তারমিমের পেশির বৃদ্ধি তার অ-সম্পাদিত যমজ বোনের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পার্থক্য আরও বাড়তে পারে বলে আমরা মনে করি।’

অধ্যাপক শাহ বলেন, ভেড়াটির স্বাস্থ্য ও টিকে থাকার সক্ষমতা যাচাই করতে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কঠোর নজরদারির মধ্যে নিরাপদ পরিবেশে ভেড়াটিকে রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, গবেষণার জন্য সরকারি অর্থায়ন পেতে তারা একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।

গবেষণা ও চিকিৎসার লক্ষ্যে বহু দশক ধরে ভেড়ার জিনগত পরিবর্তন এবং জিন সম্পাদনা করা হচ্ছে। নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাজ্যের ট্রেসি নামের ভেড়াটি ছিল এর বড় উদাহরণ; যা তার দুধের মাধ্যমে বিশেষ প্রোটিন তৈরি করতে পারত। বর্তমানে ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেশির বৃদ্ধি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্রজননক্ষমতার মতো বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।

তারমিমের জন্য ভারতের আট সদস্যের গবেষক দল টানা সাত বছর ধরে কাজ করছে।

অধ্যাপক শাহ বলেন, ‘শুরুর দিকে কিছু ব্যর্থতা ছিল। আমরা একাধিক কৌশল প্রয়োগ করেছি। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাফল্য আসে। আমরা সাতটি আইভিএফ প্রক্রিয়া চালাই। এর মধ্যে পাঁচটি জীবিত বাচ্চা জন্ম নেয় এবং দুটি গর্ভপাত ঘটে। জিন সম্পাদনা সফল হয়েছে কেবল একটির ক্ষেত্রে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম। এখন পুরো প্রক্রিয়াটি মানসম্মতভাবে স্থির করা গেছে। ভবিষ্যতে সাফল্যের হার অনেক বেশি হবে বলে আমি আশাবাদী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত
ডেনমার্কে সংরক্ষিত ২ হাজার বছর আগের হিয়র্টস্প্রিং নৌকা। ছবি: সংগৃহীত

দশকের পর দশক কিংবা শতাব্দীকাল ধরে মানবসভ্যতার নানা অধ্যায়ে জমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিশ্বজুড়ে এ বছর গবেষকেরা যেন গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব, জেনেটিক বিজ্ঞান, মাইক্রোবায়োলজি ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ২০২৫ সালে উন্মোচিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক রহস্য।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিদায়ী এই বছরটিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইস্টার আইল্যান্ডের একটি খনিতে পড়ে থাকা অসমাপ্ত পাথরের মূর্তিগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, প্রাচীন পলিনেশীয়রা কীভাবে পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে বিশাল মোয়াই মূর্তি তৈরি করত।

এদিকে, ইতালির পম্পেই নগরীতে নতুন করে খননকাজ শুরু হওয়ার পর একটি পাথরের সিঁড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ভয়াবহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হওয়ার আগে শহরটি দেখতে কেমন ছিল তা জানতে সহায়তা করেছে।

পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫ হাজার ২০০টি গর্ত নিয়েও নতুন ধারণা দিয়েছেন গবেষকেরা। এই গর্তগুলোর নির্মাতা কারা এবং কেন এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল—ড্রোন ফুটেজ ও উদ্ভিদকণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

কিছু গবেষণা আবার নতুন প্রশ্নও উসকে দিয়েছে। যেমন—চিকিৎসা নথি না থাকায় বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জেন অস্টেনের মৃত্যুর কারণ জানতে গবেষকেরা তাঁর লেখার ভাষা ও শব্দচয়ন বিশ্লেষণ করছেন।

রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন
রহস্যময় এই মমিটির পরিচয় উদ্ঘাটন হয়েছে। ছবি: সিএনএন

এ বছর ঐতিহাসিক বিষয়ে আলোচিত আবিষ্কারগুলোর একটি হলো, অস্ট্রিয়ার প্রত্যন্ত গির্জায় সংরক্ষিত রহস্যময় একটি মমি। ১৭০০ সাল থেকে ‘বাতাসে শুকানো যাজক’ নামে পরিচিত এই দেহটির পরিচয় দীর্ঘদিন অজানা ছিল। আধুনিক স্ক্যান ও রেডিওকার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি ছিলেন ফ্রাঞ্জ জাভের সিডলার ফন রোজেনেগ নামে একজন অভিজাত ব্যক্তি। পরবর্তীতে তিনি গির্জার যাজক হয়েছিলেন। গবেষকেরা তাঁর দেহ সংরক্ষণের এক অজানা পদ্ধতি ও মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণও চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে ডেনমার্কে সংরক্ষিত হিয়র্টস্প্রিং নৌকাটির উৎস নিয়েও রহস্যের পর্দা উঠেছে। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় আগের এই নৌকাটি অস্ত্রে ভরা ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় এটি দ্বীপে আক্রমণ করার উদ্দেশে যোদ্ধাদের বহন করছিল। বিশ্লেষণে একটি আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এটিকে তৎকালীন কোনো নাবিকের সরাসরি প্রমাণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রমাণ মিলেছে—অভিযাত্রী আর্নেস্ট শ্যাকলটনের জাহাজ এইচএমএস অ্যান্ডিউরেন্স ভাঙা স্টিয়ারিং নয়, বরং কাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ডুবে গিয়েছিল।

১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন
১৪ হাজার বছর আগের এই দুটি প্রাণীকে ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছিল। ছবি: সিএনএন

১৪ হাজার বছর আগে বরফ যুগের ‘টুমাট পাপিজ’ নামে পরিচিত দুটি সংরক্ষিত শাবককে এত দিন গৃহপালিত কুকুর মনে করা হলেও নতুন জেনেটিক গবেষণায় জানা গেছে, এগুলো আসলে নেকড়ে শাবক ছিল এবং মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এ ছাড়া ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান নিয়েও নতুন তথ্য মিলেছে। সেই সময়ে নিহত ফরাসি সেনাদের দাঁতের নমুনা বিশ্লেষণ করে টাইফাসের পাশাপাশি প্যারাটাইফয়েড ও রিল্যাপসিং ফিভারের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা ওই বাহিনীর বিপুল প্রাণহানির অন্যতম কারণ হতে পারে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বিজ্ঞানের হাত ধরে ইতিহাসের বহু অন্ধকার কোণ আলোকিত করেছে এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ ও জটিল পথচলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত