Ajker Patrika

প্রসঙ্গ আওয়ামী লীগ

রাজনীতিতে সংকটের ছায়া

  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যে দলগুলোর বিরূপ প্রতিক্রিয়া
  • জুলাই অভ্যুত্থানের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে
  • নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে হাসনাতের পোস্ট। কৌশলে ভুল দেখছেন বিশ্লেষকেরা
  • মন্তব্য করবে না আইএসপিআর। রাজধানীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী ও শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৯: ৩৮
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনসহ নানা ঘটনার জেরে তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। এর জেরে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনসহ নানা ঘটনার জেরে তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। এর জেরে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জোরালো হচ্ছিল। সেই সময়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে—এমন আশঙ্কা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকেও জড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না এলে রাজনীতিতে নতুন সংকটের ছায়া দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসানের পর পরিস্থিতি থিতিয়ে আসতে সময় চলে গেছে প্রায় সাত মাস। এখন চলছে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ। জাতীয় সংসদ, গণপরিষদ, নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন—কোনটি আগে হবে, তা নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ পুরোনো দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ আছে। আর তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মূল চাওয়া —গণহত্যাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংবিধান পুনর্লিখনের জন্য আগে গণপরিষদ নির্বাচন অথবা একই সঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংস্কার প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে এমন মতবিরোধের মধ্যেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি রাজনীতিতে নতুন ইস্যু হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর বেশির ভাগ আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় না; সরাসরি নির্বাচনে তো নয়ই। কিন্তু কী উপায়ে দলটিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে, সে বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কৌশল ও হিসাবে গড়বড় থাকতে পারে। এই অবস্থা কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টায়ও আছে বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী। ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে কেউ কেউ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রসঙ্গও টেনে আনছেন। এতে সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় তিনি তরুণদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এখন তরুণেরা যে পথে চলেছে, সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে কথা বলছে, সেটি ‘ভুল’ হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘একটি দলকে নিষিদ্ধ করা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এতে জনমত গঠন এবং আইন-আদালতের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগ তিনটি নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি, তাই তরুণেরা নির্বাহী আদেশে তিন নির্বাচনে দলটি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারে। সেটা না করে তারা যে পথে নামছে, সেটা ঠিক কৌশল নয়।’

অধ্যাপক দিলারা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কৌশলে ভুল হলে সংস্কার ও নির্বাচন—দুই ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি আছে।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, সেনাবাহিনীকে সবকিছুতে টেনে আনা ঠিক নয়। সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে গেলে স্থান, কাল ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হয়। তা না হলে ঝামেলা দেখা দেয়।

রাজনীতিতে এই নতুন উত্তাপ শুরু হয় মূলত ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই’—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন মন্তব্যের পর। ড. ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের কাছে মন্তব্যটি করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের বিচার করা হবে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তর পাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।’

এই পোস্টের ঘণ্টাখানেক পর আরেকটি বড় পোস্টে হাসনাত বলেন, ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনিসহ তিনজনের কাছে সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে পরিশোধিত (রিফাইন্ড) আওয়ামী লীগকে সামনে আনার পরিকল্পনা গত ১১ মার্চ বেলা ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উপস্থাপন করা হয়। পরিকল্পনাটি কে উপস্থাপন করেছেন, তা হাসনাত বলেননি। তাঁর দাবি, তিনি তৎক্ষণাৎ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দলটির বিচার নিয়ে কাজ করার জন্য পরিকল্পনা উপস্থাপনকারীদের অনুরোধ করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল দুপুরের পর ফেসবুকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, ‘সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটো (আপত্তি) ছিল যে, ড. ইউনূস কেন? কেন অন্য কোনো ব্যক্তি নয়। ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কীভাবে একটি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে!’

আসিফ ভিডিওতে সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে কিছু লোক একেবারেই দেখতে (পছন্দ করতে) পারছে না। কিন্তু দেশের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। দেশের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ লোকের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত কি।’

আসিফের দাবি, সেনাপ্রধান সর্বশেষ তাঁদের বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) ‘বুকে পাথর চাপা দিয়ে’ ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তটি মেনে নেন।

আসিফ মাহমুদ গতকাল দুপুরের পর ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, গণহত্যার বছর না ঘুরতেই আওয়ামী লীগকে ফেরানোর খায়েস বিপজ্জনক। এর আড়াই ঘণ্টা পর আরেকটি পোস্টে ফেসবুকে তিনি বলেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে—এসব আশঙ্কার কথা বলে কেউ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে জনতার ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না।

সেনাপ্রধান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও ক্যান্টনমেন্টের প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে গতকাল বলেন, ‘কোনো ধরনের মন্তব্য নেই।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দেশ একটি স্পর্শকাতর সময় পার করছে। এই অবস্থায় সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে যত কম আলোচনা হয়, তত ভালো। কারণ, বৈরী মনোভাবাপন্ন বিদেশি শক্তিগুলো পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেনাপ্রধান যখন কারও সঙ্গে কথা বলেন, তখন পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য কাউকে হয়তো আস্থায় নিয়ে কথা বলেন। সবাই তাঁর অবস্থানের সঙ্গে একমত না-ও হতে পারেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কী কথা হলো, তা বাইরে না আসা ভালো।’

সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান সম্পর্কে মন্তব্য থেকে দেশের ভেতরে বিভাজন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি আছে, এমনটা উল্লেখ করে শাহেদুল আনাম খান বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন মহল নিজেদের স্বার্থে তা নস্যাতের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, এখন বিভাজন নয়, সংহতির সময়।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গতকাল ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের জনগণকে সংযত, সতর্ক এবং ঐক্যবদ্ধ থেকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গতকাল বিকেল পর্যন্ত দলের দুই নেতার তিনটি পুরোনো ভিডিও ক্লিপে দেওয়া বক্তব্য তুলে ধরে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির একটি ভিডিও অনুযায়ী, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিয়ে কোনো কৌশল অন্তর্বর্তী সরকার করলে আমরা মেনে নেব না; জনগণ মেনে নেবে না।’

এদিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গতকাল দুপুরের পর এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘গত ৫৩ বছরে জামায়াতে ইসলামীকে বারংবার রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই এই অবৈধ কাজ সম্পন্ন হয়। সেনা-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল লুটকারী জিয়া জনগণের অভিপ্রায় তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে এই অবৈধ শক্তিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়।’

নাসীরুদ্দীন কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে অভিযোগ তোলেন ‘ক্যান্টনমেন্টের ষড়যন্ত্রকারীরা’ ছাত্র-নাগরিকদের গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার অভিপ্রায়ে হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ‘দেশবিরোধী চক্রান্তকে’ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার লড়াইয়ে বিএনপি, জামায়াত ও প্রশাসনের বাংলাদেশের পক্ষের অংশকে ছাত্র-নাগরিকদের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গতকালও বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। মিছিল ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের এলাকা, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, হাইকোর্ট, সার্ক ফোয়ারা, সংসদ ভবন, রামপুরা টিভি স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। এসব এলাকায় জলকামান, এপিসি ও টহল টিম মোতায়েন ছিল। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করতেও দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।

গতকাল দুপুরে নাইটিঙ্গেল মোড়ে তিনটি গাড়িসহ সেনাবাহিনীর একটি প্লাটুন (২৫-৩০ জন) অবস্থান নেয়। টহল গাড়ির ওপর রাইফেল তাক করা ছিল এবং জনসমাগম হলে সেটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হচ্ছিল। পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদেরও সেখানে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।

এদিকে শাহবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ চললেও পাশেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল এবং সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চালায়। কেউ ছবি ভিডিও করতে দিলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

নিরাপত্তা তৎপরতা প্রসঙ্গে পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪১
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ। শুক্রবার ভোরে তাঁকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রওনা হওয়ার কথা থাকলেও এই সূচি ঠিক থাকছে না। দুপুর নাগাদ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা ছাড়তে পারে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছে। আর নির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আরেকটি পাঠাবে কাতার। সেকারণেই এই দেরি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি রাতের মধ্যেই ঢাকা এসে পৌঁছাবে এবং সম্ভবত খুব ভোরেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাবে। তবে সন্ধ্যা বেলায় বিএনপি মহাসচিব এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটির কথা জানান।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কারিগরি ত্রুটি ধরার পর দ্রুত তা মেরামত সম্ভব হয়নি। এরপর নতুন আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেটি ঢাকা পৌঁছাতেই বেশ কয়েক ঘণ্টা দেরি হবে।

এ দিকে খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায় সঙ্গী হতে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন পুত্রবধু ডা. জুবাইদা রহমান। বৃহস্পতিবার সস্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার পর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি লন্ডন ছেড়েছেন।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা আজকের পত্রিকাকে জানান, জুবাইদা রহমান এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন ফিরবেন তিনি।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. জাহিদ হোসেন, ডা. এনামুল হক চৌধুরী (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা), ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. সাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. মো. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন থাকবেন।

চিকিৎসক দলের বাইরে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, তারেক রহমানের সহকারী মো. আব্দুল হাই মল্লিক, খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদুর রহমান এবং গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার ছাড়াও এসএসএফের দুজন সদস্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তখনইস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। সেদিন থেকে হাসপাতালেই রয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারক করছেন। চীন ও যুক্তরাজ্য থেকেও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে এসে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এই মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তেই খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লন্ডন থেকে ঢাকার পথে জোবাইদা রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৯
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে যুক্তরাজ্য থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে বাংলাদেশের পথে যাত্রা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার পর তাঁকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইট (বিজি-৩০২) হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে নেওয়ার জন্য কাতারের আমিরের যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ রাতে ঢাকায় আসার কথা ছিল, সেটি আসতে বিলম্ব হচ্ছে।

কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ রাতে ঢাকায় পৌঁছাবে—আজ বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা বলেছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর দলটির মিডিয়া উইং জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কিছু টেকনিক্যাল (কারিগরি) সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে এর যাত্রা বিলম্বিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির নামে ২৮০০ সিসির ডিজেল ইঞ্জিন ‘হার্ড জিপ’ নিবন্ধন দিল বিআরটিএ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সাদা রঙের, সাত আসনের ও ২ হাজার ৮০০ সিসির একটি টয়োটা ‘হার্ড জিপ’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নামে নিবন্ধন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস অনুমোদন দিয়েছে।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনী প্রচারণায় নিরাপত্তার স্বার্থে দলটিকে দুটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিআরটিএ দেওয়া রেজিস্ট্রেশনের বিস্তারিত রিপোর্টের নথি এসেছে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের হাতে।

রেজিস্ট্রেশনের তথ্য বলছে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন আইডি ২-৬২৮৪৬১৯ এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৬-৬৫২৮। গাড়িটি কোনো ব্যক্তির নামে নয়, বরং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নামে নিবন্ধিত। মালিকের ঠিকানা হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ‘২৮/১ নয়াপল্টন’ উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়িটি আমদানি করেছে ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইমপোর্টস লিমিটেড।

রেজিস্ট্রেশনের দিনই (২ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক সাবিকুন নাহার গাড়িটির ফিটনেস সনদ অনুমোদন করেন। ফিটনেসের মেয়াদ ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য, যা আগামী বছরের ১ ডিসেম্বর শেষ হবে।

গাড়িটির সাধারণ ওজন ২ হাজার ৭৯০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ওজন ৩ হাজার ৮৫ কেজি। গাড়িটি জাপানের টয়োটা মোটর করপোরেশনের তৈরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘কারিগরি সমস্যা’, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা হতে পারে কিছুটা বিলম্বিত

  • কাতার আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার পথে
  • খালেদার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে থাকবেন চিকিৎসকসহ ১৪ জন
  • দেশের পথে চিকিৎসার কেন্দ্রে থাকা ডা. জোবাইদা রহমান।
  • আজ ভোরের মধ্যেই ওড়ার কথা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ০৫
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। কাতার থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেশে আসার পর একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁকে লন্ডন নেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আজ শুক্রবার ভোরের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র বলছে, আজ বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ২টায় কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকা আসার কথা। তবে এই সময়ের কিছু হেরফের হতে পারে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার পর ‘ফ্লাইট ইন্সপেকশনে’ ঘণ্টাখানেক সময় লাগতে পারে। ভোরের দিকে খালেদা জিয়াকে হেলিকপ্টারে এনে বিমানবন্দরে আনা হবে।

এদিকে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দেওয়া তা ঢাকায় পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হতে পারে।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর সঙ্গে কারা লন্ডন যাবেন, তা ঠিক করে তাদের ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে শেষ করেছে বিএনপি। শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান দেশে ফিরছেন। তবে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জোবাইদা রহমান বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন। তাঁর ফ্লাইটটি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হলে হয়তো তাঁর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ফিরে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।

আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ করা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডামের সঙ্গে একটি চিকিৎসক দল যাচ্ছে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অত্যন্ত আধুনিক। এর মধ্যে অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাই রয়েছে।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এয়ারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী লন্ডনের একটি হাসপাতালের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে ডা. জাহিদ হোসেন, ডা. এনামুল হক চৌধুরী (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা), ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. মো. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন থাকবেন। চিকিৎসক দলের বাইরে খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান, তারেক রহমানের সহকারী মো. আব্দুল হাই মল্লিক, খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব মো. মাসুদের রহমান এবং গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার ছাড়াও এসএসএফের দুজন সদস্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাকবেন।

উপদেষ্টা পরিষদ ২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্য দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) দেওয়ার ব্যবস্থা হয়। ২ ডিসেম্বর থেকেই এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যরা এভারকেয়ার এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন। এসএসএফ নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের দুটি মাঠে গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টার মহড়া দেয়।

দলীয় সূত্র বলেছে, খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হতে পারে। তবে হেলিকপ্টারে করেই নাকি সড়কপথে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কাছে নেওয়া হবে, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অনুরোধ করে গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় কাতারের রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দেয় বিএনপি। পরদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাতার দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে কাতার দূতাবাস জানায়, কূটনৈতিক পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে তার দেশের সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে।

গত মাসে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে দলের উদ্বিগ্ন নেতা-কর্মীরা হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন। গতকালও হাসপাতালের সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়।

দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। এদিন ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারক করছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন চিকিৎসকও মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এ ছাড়া চীন ও যুক্তরাজ্য থেকে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত কয়েক দিনে সশরীর বাংলাদেশে এসে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার রাতে হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন। আগের দিন তিন বাহিনীর প্রধানদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এভারকেয়ারে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। এনসিপিসহ আরও কিছু দলের নেতাও এভারকেয়ারে গিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত