নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
গণ-অবস্থানের কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। একই সঙ্গে কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। দুপুর ২টায় এই কর্মসূচির শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিএনপির পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে গণ-অবস্থানের কর্মসূচি পালন করছে দলটির সমমনা জোট ও দলগুলোও। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালন শুরু হলো।
সকাল ১০টায় গণ-অবস্থান শুরুর কথা থাকলেও খুব সকাল থেকেই নয়াপল্টনে এসে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি ও প্ল্যাকার্ড হাতে খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন তাঁরা। বিএনপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কের এক পাশ বন্ধ রয়েছে। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল থেকে গণ-অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করে দলটি।

১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
গণ-অবস্থানের কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব, সিনিয়র নেতারাসহ দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। একই সঙ্গে কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও। দুপুর ২টায় এই কর্মসূচির শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিএনপির পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে গণ-অবস্থানের কর্মসূচি পালন করছে দলটির সমমনা জোট ও দলগুলোও। এর মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালন শুরু হলো।
সকাল ১০টায় গণ-অবস্থান শুরুর কথা থাকলেও খুব সকাল থেকেই নয়াপল্টনে এসে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি ও প্ল্যাকার্ড হাতে খণ্ড-খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন তাঁরা। বিএনপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কের এক পাশ বন্ধ রয়েছে। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল থেকে গণ-অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা ও গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখাও ঘোষণা করে দলটি।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
১৯ মিনিট আগে
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে শেরেবাংলা নগরে। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়। খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
বাসভবনে মা খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হলে সেখানে কফিনের পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতে দেখা গেছে। আজ বুধবার সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তারেক রহমানের কোরআন তিলাওয়াতরত ভিডিও পোস্ট করা হয়।
আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজায় প্রবেশ করে। এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মরদেহ বাসার ভেতরে নেওয়া হলে স্বজনদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, রেজা কিবরিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাসার বাইরে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ভিড় করে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখার চেষ্টা করেন অনেকে। পুরো ফিরোজা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
বাসভবনে মা খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হলে সেখানে কফিনের পাশে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতে দেখা গেছে। আজ বুধবার সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তারেক রহমানের কোরআন তিলাওয়াতরত ভিডিও পোস্ট করা হয়।
আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজায় প্রবেশ করে। এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মরদেহ বাসার ভেতরে নেওয়া হলে স্বজনদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, রেজা কিবরিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাসার বাইরে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ভিড় করে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখার চেষ্টা করেন অনেকে। পুরো ফিরোজা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
১১ জানুয়ারি ২০২৩
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে শেরেবাংলা নগরে। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়। খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা



১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
১১ জানুয়ারি ২০২৩
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
১৯ মিনিট আগে
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়। খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি।
২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়।
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়।
খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়েছে তাঁর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়।
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়।
খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এবং নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
১১ জানুয়ারি ২০২৩
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
১৯ মিনিট আগে
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে শেরেবাংলা নগরে। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি।
২ ঘণ্টা আগেখালেদা জিয়ার প্রয়াণ
কামরুল হাসান, ঢাকা

জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি। জেল-জুলুম, নির্যাতন, হিংসা-বিদ্বেষ, শত লাঞ্ছনাতেও তিনি ছিলেন অটল, অবিচল।
সেই আপসহীন নেত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবনের পরম সত্যের কাছে সঁপে দিলেন নিজেকে। এবার আর তিনি নিজে কাঁদলেন না; কোটি কোটি মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দীর্ঘদিনের বন্দিদশায় মনে ও শরীরে ভেঙে পড়েছিলেন আপসহীন নেত্রী। কারাগারে থাকার সময় বিগত সরকার তাঁকে চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগও দেয়নি। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন তিনি। এরপর চিকিৎসা নিতে লন্ডনে যান চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি। লন্ডনে চিকিৎসায় তাঁর অনেকটা শারীরিক উন্নতি হয়। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেন। দেশে ফিরে আসেন ৬ মে। সেদিন লাখো মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীর প্রত্যাবর্তন উদ্যাপন করছিলেন। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাঁকে পৌঁছতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তবে ফিরে আসার পর থেকে প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন তিনি। বয়সও ছিল অনেকটা প্রতিকূল। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর, রোববার, শেষবারের মতো এভারকেয়ার হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। এরপর ৩৮ দিন লড়াই করে মেনে নিলেন পরম সত্য। দেশবাসীর কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন তাঁদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
এত দিন ধরে খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবার, দল ও সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রচেষ্টা ছিল না, যা করা হয়নি। তাঁকে ঘিরে চলছিল উন্নত চিকিৎসা, নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ আর দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত পরামর্শ। এর বাইরে পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন চোখ ভিজিয়েছেন প্রার্থনায়। সমর্থকেরা হাসপাতালের বাইরে অশ্রুসিক্ত হয়ে অপেক্ষায় থেকেছেন তাঁর সুস্থতা কামনায়। সারা দেশে সাধারণ মানুষ প্রিয় নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন মসজিদ-মন্দির-গির্জায়। দেশীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকেরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, যেন সংকটের এই গভীর অন্ধকার ভেদ করে তিনি ফিরতে পারেন জীবনের আলোয়। সবার আকুতি ছিল একটাই—খালেদা জিয়া বেঁচে থাকুন, সুস্থ হয়ে আবার উঠে দাঁড়ান।
হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়াকে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছিল সরকার। তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হয়েছিল এসএসএফ। কিন্তু পৃথিবীর কোনো পাহারার কি সাধ্য আছে মৃত্যুদূতকে ঠেকানোর? হয়তো রোগশয্যায় শুয়ে তিনিও লড়াই করে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে। যে লড়াইয়ে মানুষের হারই হয় অনিবার্য।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। শোক জানায় খালেদা জিয়ার নিজের দল বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও শোক জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনের দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
মায়ের মৃত্যুর পর বড় ছেলে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’
রাজনীতিবিদদের দীর্ঘ যাত্রাপথে উত্থান-পতন ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, কারাবাস, জিঘাংসা কিংবা অন্ধ বিদ্বেষ—এর সবই রাজনীতিকদের জীবনে বারবার ফিরে আসে। খালেদা জিয়ার জীবন এসব ঝড়ঝাপটার মাঝে কঠিন এক পথরেখা এঁকে দিয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী-সন্তান হারানোর অসহনীয় শোক, অকারণ অপবাদ, দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা—এসবের ভারও তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে নিঃশব্দ দৃঢ়তায়।
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার জীবনে নেমে এসেছিল এক গভীর অন্ধকার। মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধের অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে প্রায় তিন শ সৈনিক নিয়ে বাসভবনের পাশ দিয়ে চলে যান। স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগটুকুও পাননি। ছোট দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে বিপন্ন সময়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নিঃসীম অপেক্ষায় থেকেছেন খালেদা জিয়া। এরপর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসা, ঠিকানা বদলে আত্মগোপন করা আর অদৃশ্য আতঙ্কের সঙ্গে ছিল তাঁর প্রতিদিনের লড়াই। সবই তাঁর পিছু নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর বন্দী অবস্থায় একাকী কাটাতে হয় যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো। সময় স্বয়ং যেন তাঁর সহনশীলতার পরীক্ষা নিচ্ছিল।
স্বাধীনতার পরও খালেদা জিয়ার পথ ছিল অনাবৃত কণ্টকময়। মতাদর্শের দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অসংখ্য দুর্বিনীত মন্তব্য—সবই তাঁকে বারবার আহত করেছে অন্তরে-বাইরে। বহু স্মৃতিবিজড়িত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর উচ্ছেদের মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁকে দেখা গিয়েছিল অশ্রুসিক্ত চোখে, অবিচল চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক দৃঢ়মানবী হিসেবে। এমন অজস্র ক্ষত-বিক্ষত ঘটনার ভিড়েও তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। সময়ের নির্মম আঘাত ও মানবিক নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে তাঁর নীরব প্রতিরোধ ছিল ধৈর্যের, মর্যাদার এবং নিজের ওপর অনিঃশেষ আস্থার। অনমনীয় দৃঢ়তায় তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন, মানুষ যখন অন্তর্দীপ জ্বালিয়ে রাখে, তখন বাইরের ঝড় তাকে নত করতে পারে না।
খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের আদি বাস ছিল ফেনী জেলার পরশুরাম থানার শ্রীপুর গ্রামে। পেশায় চা ব্যবসায়ী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ব ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে চায়ের ব্যবসা বন্ধ করে তিনি স্থায়ীভাবে চলে আসেন বাংলাদেশের দিনাজপুরে। তার আগে জলপাইগুড়িতেই ১৯৪৬ সালে জন্ম হয় খালেদার। মা ছিলেন তৈয়বা বেগম।
এস্কান্দার মজুমদারের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে খালেদা তৃতীয়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় খালেদা খানম। তবে পরিবারের লোকেরা ডাকতেন ‘পুতুল’ নামে। দিনাজপুরের সেন্ট যোসেফ কনভেন্ট, দিনাজপুর সরকারি স্কুল এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে তাঁর ছিল ফুলের প্রতি নিবিড় অনুরাগ। পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। পরিমিত আহার করতেন, ফল খেতেন বেশি। সাদা ভাত, সবজি, মসুর ডাল আর মাছ ছিল প্রিয় খাবার।
গ্রাম-বাংলার আর দশটা বালিকার মতো খালেদাও ফুল কুড়িয়ে বেড়ানো কিশোরী বয়স পেরোতে পারেননি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। স্বামী তরুণ ও চৌকস সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান। ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট দিনাজপুরের মুদিপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিতি পান।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দম্পতির দুই ছেলে—জ্যেষ্ঠ তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর এবং কনিষ্ঠ আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট। কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মারা যান। সেদিন কান্না ভুলে শোকে পাথর হয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া।
তবে খালেদা জিয়ার সুখের খবর ছিল, বড় ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরে আসা। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান যেদিন ফিরে আসেন, সেদিন তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। সে সময় খাল খননসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে হাত দেন তিনি। এরপর ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে শহীদ হন। ৩৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া মাত্র ২১ বছরের দাম্পত্যজীবন কাটিয়ে অকালবৈধব্য বরণ করেন। শুরু হয় তাঁর আরেক জীবন।
চট্টগ্রাম থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয় ঢাকায়। ১৯৮১ সালের ২ জুন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সেই জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়। সে সময় সবার দাবি ছিল, বিএনপি যেন ভেঙে না পড়ে। বাধ্য হয়ে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি দলের সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণ করেন। শুরু হয় আটপৌরে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়ার আরেক জীবন। ১৯৮৪ সালে তিনি দলটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন। নিজের ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ৪১ বছরই দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর নানা টানাপোড়েনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। শুরু হয় এরশাদবিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭-দলীয় ঐক্যজোট। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতির কাছে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেন। এরপরই তিনি জাতির কাছে হয়ে ওঠেন আপসহীন নেত্রী। এ সময় এরশাদ সরকার তাঁকে একাধিকবার আটক ও গৃহবন্দী করে রাখে। তবু এতটুকু টলেননি তিনি।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জিতে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় এবং ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া ২৩টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করেছেন। কোনোটিতে কখনো পরাজিত হননি।
রাজনৈতিক জীবনে অনেক সাফল্য থাকলেও কিছু সমালোচনাও রয়েছে খালেদা জিয়ার। ক্ষমতায় থাকার সময় দুর্নীতি দমনে তিনিও সফল হননি। তাঁর আমলে দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী (২০০১-২০০৫) টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে বাংলাদেশ। এর বাইরে সার কেলেঙ্কারি, কানসাট হত্যাকাণ্ড, হাওয়া ভবন, ১০ ট্রাক অস্ত্রসহ বেশ কিছু ঘটনার কালিমা লাগে বিএনপির গায়ে। খালেদা জিয়াকেও তার মাশুল দিতে হয়।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল বিক্ষত ইতিহাসের দীর্ঘ পদ্য; যেখানে বারবার ফিরে এসেছে বন্দিত্বের অন্ধকার অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সেই দিনে ২ জুলাই থেকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত তিনি সেনানিবাসের দেয়ালে আটকে ছিলেন এক নীরব প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আবারও সেই সেনানিবাসের ঘর তাঁকে বন্দী করে শোক আর শূন্যতার মাঝে।
‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে কালচক্রের দুর্বিষহ পর্বে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দিত্বের আরেক অন্ধ গহ্বরে—প্রথমে সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাড়ি; পরে সংসদ ভবনের একটি নিরালা স্থাপনাকে সাবজেল ঘোষণার পর, সেখানে কাটাতে হয় এক বছর। সেই দিনগুলো ছিল অবরুদ্ধ বায়ুর মতো ভারী, নিশ্বাসহীন।
কিন্তু সবচেয়ে কঠিন সময় যেন অপেক্ষা করছিল পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত পুরোনো কারাগারে। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়’ ২০১৮ সালে, সেখানে বিশেষ কারাগার ঘোষণা করে তাঁকে বন্দী করা হয়। নির্জন, কঠোর, শীতল সেই দেয়ালগুলো তাঁর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার সাক্ষী হয়ে থাকে। তাঁকে দেওয়া হয় ১৭ বছরের দণ্ড; স্লো পয়জনিংয়ের অভিযোগে ঘনীভূত হয় আশঙ্কার কালোমেঘ। বিদেশে চিকিৎসার আবেদন একের পর এক নাকচ হয়, আর তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থতার ভারে নুয়ে পড়েন।
মানবিক কারণে ২০২০ সালে দেওয়া হয় গৃহবন্দী অবস্থায় থাকার অনুমতি। তবু শর্ত ছিল রাজনীতির আলোয় না ফেরার। আর গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তাঁর দণ্ড মওকুফ হয়। কারা অন্তরাল ভেঙে তিনি ফিরে আসেন মুক্তির আলোয়।
এই জীবনগাথা শুধু একজন রাজনীতিকের নয়; এটি অগ্নিদগ্ধ সময়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক দৃঢ়চেতা নারীর সংগ্রামের কবিতা। যিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না বহু আকাঙ্ক্ষার পৃথিবীতে। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে, ধানের শীষে; জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে।

জীবদ্দশায় জনসমক্ষে মাত্র দুবার কেঁদেছিলেন তিনি। প্রথমবার, যেদিন চট্টগ্রাম থেকে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয়েছিল ঢাকায়। দ্বিতীয়বার, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর। সেদিন দেশবাসী দেখেছিল তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। এরপর আর কোনো দিন কেউ তাঁকে কাঁদতে দেখেনি। জেল-জুলুম, নির্যাতন, হিংসা-বিদ্বেষ, শত লাঞ্ছনাতেও তিনি ছিলেন অটল, অবিচল।
সেই আপসহীন নেত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবনের পরম সত্যের কাছে সঁপে দিলেন নিজেকে। এবার আর তিনি নিজে কাঁদলেন না; কোটি কোটি মানুষকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন পরপারে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দীর্ঘদিনের বন্দিদশায় মনে ও শরীরে ভেঙে পড়েছিলেন আপসহীন নেত্রী। কারাগারে থাকার সময় বিগত সরকার তাঁকে চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগও দেয়নি। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের বিদায়ের পর সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন তিনি। এরপর চিকিৎসা নিতে লন্ডনে যান চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি। লন্ডনে চিকিৎসায় তাঁর অনেকটা শারীরিক উন্নতি হয়। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেন। দেশে ফিরে আসেন ৬ মে। সেদিন লাখো মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীর প্রত্যাবর্তন উদ্যাপন করছিলেন। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাঁকে পৌঁছতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। তবে ফিরে আসার পর থেকে প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তেন তিনি। বয়সও ছিল অনেকটা প্রতিকূল। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর, রোববার, শেষবারের মতো এভারকেয়ার হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। এরপর ৩৮ দিন লড়াই করে মেনে নিলেন পরম সত্য। দেশবাসীর কাছ থেকে চিরবিদায় নিলেন তাঁদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।
এত দিন ধরে খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবার, দল ও সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো প্রচেষ্টা ছিল না, যা করা হয়নি। তাঁকে ঘিরে চলছিল উন্নত চিকিৎসা, নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ আর দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত পরামর্শ। এর বাইরে পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন চোখ ভিজিয়েছেন প্রার্থনায়। সমর্থকেরা হাসপাতালের বাইরে অশ্রুসিক্ত হয়ে অপেক্ষায় থেকেছেন তাঁর সুস্থতা কামনায়। সারা দেশে সাধারণ মানুষ প্রিয় নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন মসজিদ-মন্দির-গির্জায়। দেশীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকেরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, যেন সংকটের এই গভীর অন্ধকার ভেদ করে তিনি ফিরতে পারেন জীবনের আলোয়। সবার আকুতি ছিল একটাই—খালেদা জিয়া বেঁচে থাকুন, সুস্থ হয়ে আবার উঠে দাঁড়ান।
হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়াকে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছিল সরকার। তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োগ করা হয়েছিল এসএসএফ। কিন্তু পৃথিবীর কোনো পাহারার কি সাধ্য আছে মৃত্যুদূতকে ঠেকানোর? হয়তো রোগশয্যায় শুয়ে তিনিও লড়াই করে যাচ্ছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে। যে লড়াইয়ে মানুষের হারই হয় অনিবার্য।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো দেশ। শোক জানায় খালেদা জিয়ার নিজের দল বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও শোক জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং আজ বুধবার খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনের দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
মায়ের মৃত্যুর পর বড় ছেলে তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’
রাজনীতিবিদদের দীর্ঘ যাত্রাপথে উত্থান-পতন ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, কারাবাস, জিঘাংসা কিংবা অন্ধ বিদ্বেষ—এর সবই রাজনীতিকদের জীবনে বারবার ফিরে আসে। খালেদা জিয়ার জীবন এসব ঝড়ঝাপটার মাঝে কঠিন এক পথরেখা এঁকে দিয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী-সন্তান হারানোর অসহনীয় শোক, অকারণ অপবাদ, দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা—এসবের ভারও তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে নিঃশব্দ দৃঢ়তায়।
মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার জীবনে নেমে এসেছিল এক গভীর অন্ধকার। মেজর জিয়াউর রহমান যুদ্ধের অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে প্রায় তিন শ সৈনিক নিয়ে বাসভবনের পাশ দিয়ে চলে যান। স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগটুকুও পাননি। ছোট দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে বিপন্ন সময়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নিঃসীম অপেক্ষায় থেকেছেন খালেদা জিয়া। এরপর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পালিয়ে আসা, ঠিকানা বদলে আত্মগোপন করা আর অদৃশ্য আতঙ্কের সঙ্গে ছিল তাঁর প্রতিদিনের লড়াই। সবই তাঁর পিছু নিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর একটি বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এরপর বন্দী অবস্থায় একাকী কাটাতে হয় যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলো। সময় স্বয়ং যেন তাঁর সহনশীলতার পরীক্ষা নিচ্ছিল।
স্বাধীনতার পরও খালেদা জিয়ার পথ ছিল অনাবৃত কণ্টকময়। মতাদর্শের দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ, অসংখ্য দুর্বিনীত মন্তব্য—সবই তাঁকে বারবার আহত করেছে অন্তরে-বাইরে। বহু স্মৃতিবিজড়িত সেনানিবাসের বাড়ি থেকে ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর উচ্ছেদের মুহূর্তে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁকে দেখা গিয়েছিল অশ্রুসিক্ত চোখে, অবিচল চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক দৃঢ়মানবী হিসেবে। এমন অজস্র ক্ষত-বিক্ষত ঘটনার ভিড়েও তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। সময়ের নির্মম আঘাত ও মানবিক নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে তাঁর নীরব প্রতিরোধ ছিল ধৈর্যের, মর্যাদার এবং নিজের ওপর অনিঃশেষ আস্থার। অনমনীয় দৃঢ়তায় তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন, মানুষ যখন অন্তর্দীপ জ্বালিয়ে রাখে, তখন বাইরের ঝড় তাকে নত করতে পারে না।
খালেদা জিয়ার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের আদি বাস ছিল ফেনী জেলার পরশুরাম থানার শ্রীপুর গ্রামে। পেশায় চা ব্যবসায়ী। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ব ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে চায়ের ব্যবসা বন্ধ করে তিনি স্থায়ীভাবে চলে আসেন বাংলাদেশের দিনাজপুরে। তার আগে জলপাইগুড়িতেই ১৯৪৬ সালে জন্ম হয় খালেদার। মা ছিলেন তৈয়বা বেগম।
এস্কান্দার মজুমদারের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে খালেদা তৃতীয়। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় খালেদা খানম। তবে পরিবারের লোকেরা ডাকতেন ‘পুতুল’ নামে। দিনাজপুরের সেন্ট যোসেফ কনভেন্ট, দিনাজপুর সরকারি স্কুল এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে তাঁর ছিল ফুলের প্রতি নিবিড় অনুরাগ। পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। পরিমিত আহার করতেন, ফল খেতেন বেশি। সাদা ভাত, সবজি, মসুর ডাল আর মাছ ছিল প্রিয় খাবার।
গ্রাম-বাংলার আর দশটা বালিকার মতো খালেদাও ফুল কুড়িয়ে বেড়ানো কিশোরী বয়স পেরোতে পারেননি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। স্বামী তরুণ ও চৌকস সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমান। ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট দিনাজপুরের মুদিপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি ‘বেগম খালেদা জিয়া’ নামে পরিচিতি পান।
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দম্পতির দুই ছেলে—জ্যেষ্ঠ তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর এবং কনিষ্ঠ আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট। কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় মারা যান। সেদিন কান্না ভুলে শোকে পাথর হয়ে ছিলেন খালেদা জিয়া।
তবে খালেদা জিয়ার সুখের খবর ছিল, বড় ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরে আসা। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান যেদিন ফিরে আসেন, সেদিন তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমান ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। সে সময় খাল খননসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে হাত দেন তিনি। এরপর ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে শহীদ হন। ৩৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া মাত্র ২১ বছরের দাম্পত্যজীবন কাটিয়ে অকালবৈধব্য বরণ করেন। শুরু হয় তাঁর আরেক জীবন।
চট্টগ্রাম থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ আনা হয় ঢাকায়। ১৯৮১ সালের ২ জুন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সেই জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেয়। সে সময় সবার দাবি ছিল, বিএনপি যেন ভেঙে না পড়ে। বাধ্য হয়ে বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি দলের সাধারণ সদস্যপদ গ্রহণ করেন। শুরু হয় আটপৌরে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়ার আরেক জীবন। ১৯৮৪ সালে তিনি দলটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন। নিজের ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ৪১ বছরই দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেন।
জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর নানা টানাপোড়েনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। শুরু হয় এরশাদবিরোধী আন্দোলন। সেই আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় ৭-দলীয় ঐক্যজোট। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতির কাছে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করে জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেন। এরপরই তিনি জাতির কাছে হয়ে ওঠেন আপসহীন নেত্রী। এ সময় এরশাদ সরকার তাঁকে একাধিকবার আটক ও গৃহবন্দী করে রাখে। তবু এতটুকু টলেননি তিনি।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জিতে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় এবং ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া ২৩টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন করেছেন। কোনোটিতে কখনো পরাজিত হননি।
রাজনৈতিক জীবনে অনেক সাফল্য থাকলেও কিছু সমালোচনাও রয়েছে খালেদা জিয়ার। ক্ষমতায় থাকার সময় দুর্নীতি দমনে তিনিও সফল হননি। তাঁর আমলে দুর্নীতির ধারণা সূচক অনুযায়ী (২০০১-২০০৫) টানা পাঁচ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে বাংলাদেশ। এর বাইরে সার কেলেঙ্কারি, কানসাট হত্যাকাণ্ড, হাওয়া ভবন, ১০ ট্রাক অস্ত্রসহ বেশ কিছু ঘটনার কালিমা লাগে বিএনপির গায়ে। খালেদা জিয়াকেও তার মাশুল দিতে হয়।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল বিক্ষত ইতিহাসের দীর্ঘ পদ্য; যেখানে বারবার ফিরে এসেছে বন্দিত্বের অন্ধকার অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সেই দিনে ২ জুলাই থেকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত তিনি সেনানিবাসের দেয়ালে আটকে ছিলেন এক নীরব প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আবারও সেই সেনানিবাসের ঘর তাঁকে বন্দী করে শোক আর শূন্যতার মাঝে।
‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে কালচক্রের দুর্বিষহ পর্বে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় বন্দিত্বের আরেক অন্ধ গহ্বরে—প্রথমে সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাড়ি; পরে সংসদ ভবনের একটি নিরালা স্থাপনাকে সাবজেল ঘোষণার পর, সেখানে কাটাতে হয় এক বছর। সেই দিনগুলো ছিল অবরুদ্ধ বায়ুর মতো ভারী, নিশ্বাসহীন।
কিন্তু সবচেয়ে কঠিন সময় যেন অপেক্ষা করছিল পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত পুরোনো কারাগারে। ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়’ ২০১৮ সালে, সেখানে বিশেষ কারাগার ঘোষণা করে তাঁকে বন্দী করা হয়। নির্জন, কঠোর, শীতল সেই দেয়ালগুলো তাঁর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার সাক্ষী হয়ে থাকে। তাঁকে দেওয়া হয় ১৭ বছরের দণ্ড; স্লো পয়জনিংয়ের অভিযোগে ঘনীভূত হয় আশঙ্কার কালোমেঘ। বিদেশে চিকিৎসার আবেদন একের পর এক নাকচ হয়, আর তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থতার ভারে নুয়ে পড়েন।
মানবিক কারণে ২০২০ সালে দেওয়া হয় গৃহবন্দী অবস্থায় থাকার অনুমতি। তবু শর্ত ছিল রাজনীতির আলোয় না ফেরার। আর গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তাঁর দণ্ড মওকুফ হয়। কারা অন্তরাল ভেঙে তিনি ফিরে আসেন মুক্তির আলোয়।
এই জীবনগাথা শুধু একজন রাজনীতিকের নয়; এটি অগ্নিদগ্ধ সময়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক দৃঢ়চেতা নারীর সংগ্রামের কবিতা। যিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না বহু আকাঙ্ক্ষার পৃথিবীতে। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে, ধানের শীষে; জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে।

১০ দফা দাবি আদায়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান শুরু করেছে বিএনপি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়।
১১ জানুয়ারি ২০২৩
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মরদেহ আজ বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে সপরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকেন। পাশেই খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’।
১৯ মিনিট আগে
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হবে শেরেবাংলা নগরে। সেখানে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে।
১ ঘণ্টা আগে
আজ বুধবার সকাল ৯টার আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মরদেহবাহী গাড়ি ফিরোজার পথে রওনা হয়। খালেদা জিয়ার জানাজা রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে