সম্পাদকীয়

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এখানে শুধু একটি বড় প্রশ্ন তুলেই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কি তাহলে পুঁজে ভরা এসব জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি? বরং তা আরও ভয়ংকর হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে তছনছ করে দিচ্ছে?
নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ একটা চিরাচরিত ব্যাপার। মাদকের প্রতি আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যদি মাদকের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকে। কোথাও বাধা না পেয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনায়াসে যদি মাদক ঢোকে, তাহলে তা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, এতে আর সন্দেহ কী? তাই আমাদের দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে, কৌতূহল থাকলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করায় কোনো বাধা নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে মূলত তারুণ্যের মেধা ও শক্তির বিনাশ ঘটা অসম্ভব নয়। একই দিনের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বরিশালে মামা-ভাগনের একত্রে ইয়াবা সেবনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াবার থাবা যে গুরু-শিষ্য মানে না, সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
মূল প্রতিবেদনটি পড়ার পর মনে হলো, এই বিশাল সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই শক্ত। একদিকে কোটি টাকার হাতছানি, অন্যদিকে শাস্তিবিহীন অসততার জয়গান ইয়াবার রাজ্যকে ক্রমেই শক্তিশালী করে চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের সদস্যরা যখন ইয়াবা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সে ব্যবস্থা? প্রতিবেদনটি থেকেই উদাহরণ নেওয়া যাক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটকের পর তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেকবার পড়ুন: তাঁদের ‘প্রত্যাহার করা হয়’। এই হলো শাস্তি! প্রত্যাহার করা হয় মানে, তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ব্যস! কাজ শেষ! এঁরা এখন মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু যে কাজটি তাঁরা করেছেন, তার শাস্তি কি ‘প্রত্যাহার’-এ সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ব্যবস্থা কি আদৌ ফল দেবে?
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের প্রবেশ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। প্রশাসনে থাকা মানুষেরাও মাদকদ্রব্যে টাকার গন্ধ পেয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি মাদকদ্রব্য কারবারের গডফাদারদের অভয় দেয়, তাহলে মাদকদ্রব্য কারবারিদের ঠেকাবে কে? মাঝে মাঝে ইয়াবার চালান লোকদেখানোভাবে ধরা পড়ে বটে, কিন্তু তা যে আইওয়াশ হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাদক রাজ্যের চুনোপুঁটিদের কখনো কখনো ধরা হচ্ছে বটে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যেসব লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করা না হলে এই গডফাদাররা কি ধরা পড়বে? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এখানে শুধু একটি বড় প্রশ্ন তুলেই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কি তাহলে পুঁজে ভরা এসব জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি? বরং তা আরও ভয়ংকর হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে তছনছ করে দিচ্ছে?
নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ একটা চিরাচরিত ব্যাপার। মাদকের প্রতি আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যদি মাদকের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকে। কোথাও বাধা না পেয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনায়াসে যদি মাদক ঢোকে, তাহলে তা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, এতে আর সন্দেহ কী? তাই আমাদের দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে, কৌতূহল থাকলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করায় কোনো বাধা নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে মূলত তারুণ্যের মেধা ও শক্তির বিনাশ ঘটা অসম্ভব নয়। একই দিনের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বরিশালে মামা-ভাগনের একত্রে ইয়াবা সেবনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াবার থাবা যে গুরু-শিষ্য মানে না, সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
মূল প্রতিবেদনটি পড়ার পর মনে হলো, এই বিশাল সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই শক্ত। একদিকে কোটি টাকার হাতছানি, অন্যদিকে শাস্তিবিহীন অসততার জয়গান ইয়াবার রাজ্যকে ক্রমেই শক্তিশালী করে চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের সদস্যরা যখন ইয়াবা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সে ব্যবস্থা? প্রতিবেদনটি থেকেই উদাহরণ নেওয়া যাক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটকের পর তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেকবার পড়ুন: তাঁদের ‘প্রত্যাহার করা হয়’। এই হলো শাস্তি! প্রত্যাহার করা হয় মানে, তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ব্যস! কাজ শেষ! এঁরা এখন মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু যে কাজটি তাঁরা করেছেন, তার শাস্তি কি ‘প্রত্যাহার’-এ সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ব্যবস্থা কি আদৌ ফল দেবে?
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের প্রবেশ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। প্রশাসনে থাকা মানুষেরাও মাদকদ্রব্যে টাকার গন্ধ পেয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি মাদকদ্রব্য কারবারের গডফাদারদের অভয় দেয়, তাহলে মাদকদ্রব্য কারবারিদের ঠেকাবে কে? মাঝে মাঝে ইয়াবার চালান লোকদেখানোভাবে ধরা পড়ে বটে, কিন্তু তা যে আইওয়াশ হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাদক রাজ্যের চুনোপুঁটিদের কখনো কখনো ধরা হচ্ছে বটে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যেসব লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করা না হলে এই গডফাদাররা কি ধরা পড়বে? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।
সম্পাদকীয়

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এখানে শুধু একটি বড় প্রশ্ন তুলেই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কি তাহলে পুঁজে ভরা এসব জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি? বরং তা আরও ভয়ংকর হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে তছনছ করে দিচ্ছে?
নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ একটা চিরাচরিত ব্যাপার। মাদকের প্রতি আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যদি মাদকের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকে। কোথাও বাধা না পেয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনায়াসে যদি মাদক ঢোকে, তাহলে তা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, এতে আর সন্দেহ কী? তাই আমাদের দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে, কৌতূহল থাকলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করায় কোনো বাধা নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে মূলত তারুণ্যের মেধা ও শক্তির বিনাশ ঘটা অসম্ভব নয়। একই দিনের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বরিশালে মামা-ভাগনের একত্রে ইয়াবা সেবনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াবার থাবা যে গুরু-শিষ্য মানে না, সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
মূল প্রতিবেদনটি পড়ার পর মনে হলো, এই বিশাল সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই শক্ত। একদিকে কোটি টাকার হাতছানি, অন্যদিকে শাস্তিবিহীন অসততার জয়গান ইয়াবার রাজ্যকে ক্রমেই শক্তিশালী করে চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের সদস্যরা যখন ইয়াবা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সে ব্যবস্থা? প্রতিবেদনটি থেকেই উদাহরণ নেওয়া যাক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটকের পর তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেকবার পড়ুন: তাঁদের ‘প্রত্যাহার করা হয়’। এই হলো শাস্তি! প্রত্যাহার করা হয় মানে, তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ব্যস! কাজ শেষ! এঁরা এখন মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু যে কাজটি তাঁরা করেছেন, তার শাস্তি কি ‘প্রত্যাহার’-এ সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ব্যবস্থা কি আদৌ ফল দেবে?
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের প্রবেশ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। প্রশাসনে থাকা মানুষেরাও মাদকদ্রব্যে টাকার গন্ধ পেয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি মাদকদ্রব্য কারবারের গডফাদারদের অভয় দেয়, তাহলে মাদকদ্রব্য কারবারিদের ঠেকাবে কে? মাঝে মাঝে ইয়াবার চালান লোকদেখানোভাবে ধরা পড়ে বটে, কিন্তু তা যে আইওয়াশ হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাদক রাজ্যের চুনোপুঁটিদের কখনো কখনো ধরা হচ্ছে বটে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যেসব লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করা না হলে এই গডফাদাররা কি ধরা পড়বে? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। এখানে শুধু একটি বড় প্রশ্ন তুলেই ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করা যায়। গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর কি তাহলে পুঁজে ভরা এসব জায়গার কোনো পরিবর্তন হয়নি? বরং তা আরও ভয়ংকর হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে তছনছ করে দিচ্ছে?
নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ একটা চিরাচরিত ব্যাপার। মাদকের প্রতি আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যদি মাদকের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকে। কোথাও বাধা না পেয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনায়াসে যদি মাদক ঢোকে, তাহলে তা ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে, এতে আর সন্দেহ কী? তাই আমাদের দেশে মাদক সহজলভ্য হয়ে গেছে, কৌতূহল থাকলেই মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করায় কোনো বাধা নেই। এমন অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে মূলত তারুণ্যের মেধা ও শক্তির বিনাশ ঘটা অসম্ভব নয়। একই দিনের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বরিশালে মামা-ভাগনের একত্রে ইয়াবা সেবনের একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ইয়াবার থাবা যে গুরু-শিষ্য মানে না, সেটাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
মূল প্রতিবেদনটি পড়ার পর মনে হলো, এই বিশাল সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই শক্ত। একদিকে কোটি টাকার হাতছানি, অন্যদিকে শাস্তিবিহীন অসততার জয়গান ইয়াবার রাজ্যকে ক্রমেই শক্তিশালী করে চলেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের সদস্যরা যখন ইয়াবা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, তখন প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কী সে ব্যবস্থা? প্রতিবেদনটি থেকেই উদাহরণ নেওয়া যাক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১০ কোটি টাকার ইয়াবা আটকের পর তা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগির অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। আরেকবার পড়ুন: তাঁদের ‘প্রত্যাহার করা হয়’। এই হলো শাস্তি! প্রত্যাহার করা হয় মানে, তাঁদের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। ব্যস! কাজ শেষ! এঁরা এখন মাঠে-প্রান্তরে দৌড়ে টাকার ভাগাভাগিতে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু যে কাজটি তাঁরা করেছেন, তার শাস্তি কি ‘প্রত্যাহার’-এ সীমাবদ্ধ থাকবে? এই ব্যবস্থা কি আদৌ ফল দেবে?
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবাসহ মাদকের প্রবেশ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। প্রশাসনে থাকা মানুষেরাও মাদকদ্রব্যে টাকার গন্ধ পেয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন যদি মাদকদ্রব্য কারবারের গডফাদারদের অভয় দেয়, তাহলে মাদকদ্রব্য কারবারিদের ঠেকাবে কে? মাঝে মাঝে ইয়াবার চালান লোকদেখানোভাবে ধরা পড়ে বটে, কিন্তু তা যে আইওয়াশ হতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাদক রাজ্যের চুনোপুঁটিদের কখনো কখনো ধরা হচ্ছে বটে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যেসব লোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, তাঁদের সমূলে উৎপাটন করা না হলে এই গডফাদাররা কি ধরা পড়বে? সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য।
১৪ ঘণ্টা আগেহুসাইন আহমদ

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।

এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
যৌথতা, আধুনিকায়ন ও কার্যকারিতার নামে একটি রাষ্ট্রকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক সামরিক আধিপত্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার লিখিত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণের সামনে ‘সামরিক পুনর্গঠন’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও পরিবর্তনকে একেবারে ‘সংবিধানপ্রণোদিত সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা’ বলছেন বিশ্লেষকেরা।
গত বৃহস্পতিবার আইনে পরিণত হওয়া সংবিধানের এই সংশোধনীর মাধ্যমে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে সর্বময় সামরিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানের জনগণের জন্য কিছুটা ভরসার জায়গা বিচার বিভাগকেও দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
পারমাণবিক ক্ষমতাধর পাকিস্তানে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নতুন নয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ার নজির বহু আছে। জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া-উল-হক তাঁর উদাহরণ। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সামরিক ক্ষমতাকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর স্থান দেওয়ার এই ঘটনা নজিরবিহীন ও সুদূরপ্রসারী।
১. সংবিধানের এই সংশোধীর ফলে সেনাপ্রধান আসিম মুনির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (সিডিএফ) হলেন। অর্থাৎ তিন বাহিনী, কৌশলগত কমান্ড, এমনকি পারমাণবিক বাহিনী তত্ত্বাবধানকারী কাঠামোর ওপরও তাঁর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। এর ফলে কার্যত তিন বাহিনীর ভেতরের ভারসাম্য ভেঙে গেল। তিন বাহিনীর যৌথ নেতৃত্বের দীর্ঘ ৫ দশকের প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা বাতিল হয়ে সেনাপ্রধানের একনায়ক হওয়ার পথ তৈরি হলো।
এই পরিবর্তনকে ‘আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনে নেওয়া পদক্ষেপ’ বলে দাবি করছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে সর্বময় ক্ষমতা পেয়েছেন সেনাপ্রধান— প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের ভূমিকা, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অত্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছে; তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর পার্লামেন্টের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখা হয়নি এবং এই পদের দায়িত্ব ও বাহিনীর কাঠামো ঠিক নির্ধারণের দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়নি। এই পরিবর্তন পাকিস্তানের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা দুর্বল করে সামরিক কাঠামোকে আরও বেশি ব্যক্তিনির্ভর করে তুলেছে।
বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আব্বাস খট্টাক ডনকে বলেছেন, আধুনিক যুদ্ধের বাস্তবতা বলে, বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর স্বাধীনতা ও সমন্বয়ই শক্তির উৎস। কিন্তু পাকিস্তান উল্টোপথে হাঁটছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্বমানের চর্চা থেকে সরে যাই, তাহলে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা ভবিষ্যতে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়াবে।’
বিশেষ করে নতুন ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের অধীনে তিন বাহিনীর পারমাণবিক ডেলিভারি সিস্টেম এক ছাতার নিচে আনা হলে বিমান ও নৌবাহিনীর কৌশলগত স্বাধীনতা আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিল শাহ খোলাখুলি বলেছেন, ‘এটি মুনিরের ক্ষমতার দখলকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। পার্লামেন্ট এমনভাবে একজন সামরিক প্রধানের আধিপত্যকে বৈধতা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।’ (দ্য গার্ডিয়ান) শাহের মতে, বিচার বিভাগ ও সংসদ উভয়কেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে প্রান্তে—যা গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
২. পাকিস্তানের পারমাণবিক কাঠামো এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলেও সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কর্তৃত্বের ভারসাম্য বদলে গেছে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি–এনসিএ কাঠামোগতভাবে এখনও বেসামরিক নেতৃত্বাধীন। কিন্তু ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডারের (সিএনএসসি) নিয়োগ, পুনঃনিয়োগ ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এখন নির্ভর করবে কেবলমাত্র সিডিএফের সুপারিশের ওপর।
কেবল তাই নয়, কফিনে শেষ পেরেক ঠুকার মতো এই সিদ্ধান্তের ওপর বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশোধিত সংবিধানের ধারা ৮ই (২) অনুযায়ী, সিএনএসসির নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এটা পাকিস্তানের সংবিধানের ৪, ৯ ও ১৯৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার সাংবিধানিক অধিকার।
পাকিস্তানের সাবেক সামরিক আইন কর্মকর্তা ইনাম-উর-রহিম বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর যেকোনো সিদ্ধান্ত, যদি তা অনিয়ম বা কর্তৃত্ববহির্ভূত হয়, তা উচ্চ আদালতে বিচারযোগ্য— এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি।’
এটা পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর প্রভাবকে আরও স্থায়ী করে তুলছে, যা আইনের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
৩. সামরিক কাঠামোর এই পুনর্গঠনের অন্যতম ফল হলো ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রে একজন ব্যক্তির দীর্ঘায়িত মেয়াদ। প্রতিরক্ষা বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর প্রধানের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা ২০৩৫ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। অর্থাৎ পাকিস্তানের পুরো প্রতিরক্ষা কাঠামো প্রায় এক দশকজুড়ে এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হবে।
সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে দীর্ঘায়িত ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি কোনো অপরাধে গ্রেপ্তর ও বিচার থেকেও আজীবন দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আসিফ ইয়াসিন মালিক এই বিষয়ে কড়া মন্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এক ব্যক্তির জন্য আইন করা হলো, প্রাতিষ্ঠানিক কল্যাণের জন্য নয়।’ (ডন)
তাঁর মতে, তিন বাহিনীর প্রয়োজনে নয়, একজন ব্যক্তিকে সামনে রেখে এই আইন প্রণীত হলো। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধির মতে, ‘এই আইনি পুনর্গঠন শুধু সামরিক ক্ষমতা বাড়ায়নি, পাকিস্তানের বিচার কাঠামোকেও দুর্বল করে দিয়েছে।’
৪. নিজ বাহিনীর ভেতরে পদোন্নতি-বদলির বিষয়ে বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানের ক্ষমতা খর্ব হলো। এখন এই বাহিনী প্রধানদের হাতে কেবল থ্রি স্টার অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও নিচের পদমর্যাদার পদোন্নতি-বদলির ওপর ক্ষমতা থাকল। ফোর স্টার সব নিয়োগ ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে ‘আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে’ হবে। অর্থাৎ বাকি দুই বাহিনী প্রধানদের ভূমিকা ও প্রভাব কমল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পুরনো কাঠামোতে সমস্যা থাকলেও নতুন কাঠামো কোনো সমাধান নয়। সিজেসিএসসি বহু বছর ধরেই আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে ছিল এবং তিন বাহিনী কার্যত সমান্তরাল আমলাতন্ত্রের মতো চলত। কিন্তু যেভাবে পাকিস্তানে সেনাপ্রধানকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলো, সেই পথটি উল্টো। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের মতো দেশও তিন বাহিনীতে যৌথতা এনেছে, তবে স্বাধীন যৌথ কমান্ড গড়ে তুলে।
বাস্তবে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের অধীনে সামরিক কাঠামো এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে— বাহিনীসমূহের ভারসাম্য দুর্বল, বিচার বিভাগের ভূমিকা সংকুচিত, পারমাণবিক স্থাপত্যে সেনাবাহিনীর আধিপত্য সুসংহত, এবং প্রতিরক্ষা নীতি-পরিকল্পনা কার্যত একজন ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এমন পরিবর্তনে উদ্বেগ তুলে ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মজিদ নিজামী আল জাজিরাকে বলেন, সিডিএফের নতুন ভূমিকা অস্পষ্ট এবং তিন বাহিনীর কৌশলগত সমন্বয় বিপর্যস্ত হতে পারে। কাঠামোর অস্পষ্টতা ভবিষ্যতের সংঘাতে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি ডেকে আনতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়োগ–বদলি ও কৌশলগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হলে রাষ্ট্র প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারাবে। সেই মুহূর্তে একনায়কতন্ত্র আর সম্ভাবনার পর্যায়ে থাকে না, তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। পাকিস্তান সেই রূপান্তরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। কারণ, পার্লামেন্ট যে আইন পাস করেছে, তা শুধু প্রশাসনিক কাঠামো পাল্টায়নি, রাষ্ট্রকে কার্যত এক ব্যক্তিনির্ভর সামরিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার কি তার কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? সেনাবাহিনীর তিন শাখার মধ্যে ভারসাম্য কি বজায় থাকবে? বিচার বিভাগ ও সংসদ কি একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হবে? সময় জবাব দেবে এসব প্রশ্নের।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য।
১৪ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর তারাই পর্যায়ক্রমে নিজেদের মধ্যে দ্বিমতের এক অমোচনীয় দূরত্ব সৃষ্টি করল। অবশ্য তাদের কারও কারও দাবি অনুযায়ী, এই দূরত্ব ও দ্বিমত সৃষ্টির জন্য দায়ী অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্যেও তারা সেই দায়ের উপাদান দেখেছে। ফলে দ্বিমতের অবসান যেমন হলো না, তেমনি ঐকমত্য কমিশন গঠন করে দীর্ঘদিনের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ার যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছিল, তা-ও অধরা এক সোনার হরিণ হয়েই রইল।
বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দেওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে সেটি গেজেট আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক দাবিগুলোর একটি। কিন্তু সেটি যখন আইনানুগভাবে সম্পন্ন হলো, তখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাকে অভিহিত করল জাতির দুর্ভাগ্য বলে। কারণ, সেটি আইনি ভিত্তি পেয়েছে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে। তাদের দাবি ছিল, আদেশটি জারি করতে হবে প্রধান উপদেষ্টাকে।
কিন্তু তা যে সম্ভব নয়, সেটা তারা বুঝতে চায়নি জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটে। যদিও এখন সে কথা বলে কোনো লাভ নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন থেকে শুরু করে সবই তো হয়েছে দেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে। সুতরাং এনসিপি যা চায় তা পেতে হলে তাদেরকে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করতে হবে, যা দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদ, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে গিয়ে সাংবিধানিক সংস্কারের পথেই হাঁটতে হবে। জনগণের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ছাড়া এর অন্যথা হওয়ার নয়।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে এনসিপি অবশ্য আর কোনো মৌলিক প্রশ্ন তোলেনি। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের অপর দুই নিয়ামক শক্তি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী তুলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন। তবে রাতে সে জায়গা থেকে সরে গিয়ে এটাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্বাক্ষর করেছেন, সেটা তিনি তাঁর ভাষণের মাধ্যমে লঙ্ঘন করেছেন। কীভাবে? প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, জাতির সামনে তা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করে ১৮০ দিনের মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করবেন। সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদের আপত্তি এখানেই। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত। এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই (যা প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে করেছেন)। এ ছাড়া ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে যে বডি, সেটি জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয়ই ছিল না। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। এই পর্যায়ে এসে বিএনপি এই নতুন ধারণাটিকে কীভাবে দেখবে, সেটা অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। সেটি জানা বা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, জনগণের অভিপ্রায় ও গণদাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। সংবিধান সংস্কার এবং অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। গণভোটে জনগণকে কিসে ‘হ্যাঁ’ আর কিসে ‘না’ বলতে হবে, সেটি নির্বাচনের আগেই জানতে হবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের বিষয়ে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। ভোটাররা সেই বিষয়ে জানার পরই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত দেবেন। কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে একজন ভোটারকে গণভোট দিতে হবে আবার প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটও দিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেওয়ার ঘোষণায় একটা সংকট তৈরি হলো। এই সংকট নিরসনের জন্যই জামায়াতসহ আটটি রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, তা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানানো হয়। এর অর্থ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমত ও অনৈক্যের বিন্দুমাত্রও নিরসন হওয়ার লক্ষণ নেই।
গণভোটে চারটি বিষয়, প্রশ্ন একটি!
এদিকে, গণভোটে প্রশ্ন-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে জনপরিসরে যে আলোচনা চলছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে তারও নিরসন হয়নি। তিনি তাঁর ভাষণে বলেছেন, চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণ মতামত জানাবেন। চারটি বিষয়ে একটি প্রশ্নে হ্যাঁ কিংবা না বলতে হবে, বিষয়টা ভাবতেই কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে। তো কী হবে সেই চারটি বিষয় ও একমাত্র প্রশ্নটি! প্রধান উপদেষ্টা নিম্নোক্তভাবে তা পাঠ করে শুনিয়েছেন।
‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই চারটির প্রথম বিষয়টি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় মীমাংসা হয়েছে। কিন্তু অন্য তিনটি বিষয়ের মধ্যে তো ৩০টির বেশি বিষয় রয়েছে! কাজেই এ বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না বলতে হলে বিষয়গুলো ভোটারদের জানতে হবে, যা শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবেচনায়ও অসম্ভবই বটে। তা ছাড়া, এগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতিবাচকতা প্রবল। সুতরাং ফলাফল অজ্ঞাত।

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর তারাই পর্যায়ক্রমে নিজেদের মধ্যে দ্বিমতের এক অমোচনীয় দূরত্ব সৃষ্টি করল। অবশ্য তাদের কারও কারও দাবি অনুযায়ী, এই দূরত্ব ও দ্বিমত সৃষ্টির জন্য দায়ী অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্যেও তারা সেই দায়ের উপাদান দেখেছে। ফলে দ্বিমতের অবসান যেমন হলো না, তেমনি ঐকমত্য কমিশন গঠন করে দীর্ঘদিনের অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ার যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছিল, তা-ও অধরা এক সোনার হরিণ হয়েই রইল।
বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্নে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দেওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে সেটি গেজেট আকারেও প্রকাশিত হয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়টি ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক দাবিগুলোর একটি। কিন্তু সেটি যখন আইনানুগভাবে সম্পন্ন হলো, তখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাকে অভিহিত করল জাতির দুর্ভাগ্য বলে। কারণ, সেটি আইনি ভিত্তি পেয়েছে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে। তাদের দাবি ছিল, আদেশটি জারি করতে হবে প্রধান উপদেষ্টাকে।
কিন্তু তা যে সম্ভব নয়, সেটা তারা বুঝতে চায়নি জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটে। যদিও এখন সে কথা বলে কোনো লাভ নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন থেকে শুরু করে সবই তো হয়েছে দেশের বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে। সুতরাং এনসিপি যা চায় তা পেতে হলে তাদেরকে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করতে হবে, যা দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদ, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে গিয়ে সাংবিধানিক সংস্কারের পথেই হাঁটতে হবে। জনগণের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ছাড়া এর অন্যথা হওয়ার নয়।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বিষয়ে এনসিপি অবশ্য আর কোনো মৌলিক প্রশ্ন তোলেনি। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের অপর দুই নিয়ামক শক্তি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী তুলেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন। তবে রাতে সে জায়গা থেকে সরে গিয়ে এটাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্বাক্ষর করেছেন, সেটা তিনি তাঁর ভাষণের মাধ্যমে লঙ্ঘন করেছেন। কীভাবে? প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, জাতির সামনে তা উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করে ১৮০ দিনের মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করবেন। সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদের আপত্তি এখানেই। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত। এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই (যা প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে করেছেন)। এ ছাড়া ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে যে বডি, সেটি জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয়ই ছিল না। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। এই পর্যায়ে এসে বিএনপি এই নতুন ধারণাটিকে কীভাবে দেখবে, সেটা অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। সেটি জানা বা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, জনগণের অভিপ্রায় ও গণদাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। সংবিধান সংস্কার এবং অন্যান্য সংস্কার বিষয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিকে জানাতে হবে। গণভোটে জনগণকে কিসে ‘হ্যাঁ’ আর কিসে ‘না’ বলতে হবে, সেটি নির্বাচনের আগেই জানতে হবে উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভোটারদের গণভোটের বিষয়ে স্টাডি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের বিষয়ে বিস্তারিত ওয়েবসাইটে দিতে হবে। ভোটাররা সেই বিষয়ে জানার পরই গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ মতামত দেবেন। কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে একজন ভোটারকে গণভোট দিতে হবে আবার প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটও দিতে হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে দেওয়ার ঘোষণায় একটা সংকট তৈরি হলো। এই সংকট নিরসনের জন্যই জামায়াতসহ আটটি রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, তা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানানো হয়। এর অর্থ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমত ও অনৈক্যের বিন্দুমাত্রও নিরসন হওয়ার লক্ষণ নেই।
গণভোটে চারটি বিষয়, প্রশ্ন একটি!
এদিকে, গণভোটে প্রশ্ন-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে জনপরিসরে যে আলোচনা চলছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে তারও নিরসন হয়নি। তিনি তাঁর ভাষণে বলেছেন, চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণ মতামত জানাবেন। চারটি বিষয়ে একটি প্রশ্নে হ্যাঁ কিংবা না বলতে হবে, বিষয়টা ভাবতেই কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে। তো কী হবে সেই চারটি বিষয় ও একমাত্র প্রশ্নটি! প্রধান উপদেষ্টা নিম্নোক্তভাবে তা পাঠ করে শুনিয়েছেন।
‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
এই চারটির প্রথম বিষয়টি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় মীমাংসা হয়েছে। কিন্তু অন্য তিনটি বিষয়ের মধ্যে তো ৩০টির বেশি বিষয় রয়েছে! কাজেই এ বিষয়ে হ্যাঁ কিংবা না বলতে হলে বিষয়গুলো ভোটারদের জানতে হবে, যা শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবেচনায়ও অসম্ভবই বটে। তা ছাড়া, এগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতিবাচকতা প্রবল। সুতরাং ফলাফল অজ্ঞাত।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২ ঘণ্টা আগে
হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য।
১৪ ঘণ্টা আগেসৌভিক রেজা

হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সবকিছু মেনে নিয়েও লেখক হাসান আজিজুল হকের শৈল্পিক সামর্থ্যের দিকটিকে তো আমরা কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস হাসান আজিজুল হকদের বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব নয়, সে চেষ্টা যেন কখনো আমাদের না করতে হয়! কেননা, আমাদের সেই হাসান, যিনি তাঁর লেখক-জীবনের একেবারে শুরু থেকে এমন কোনো মুহূর্ত যায়নি যখন তিনি দেশের সর্বজনকে নিয়ে ভাবেননি, তাদের দুঃখ-দুর্দশায় বিচলিত বোধ করেননি।
২.
সাহিত্যের জগতে লেখকদের প্রবল প্রতাপের পাশাপাশি তাঁদের প্রস্তুতির নানা কথাও আমরা শুনতে পাই। হাসান আজিজুল হকের সাহিত্য-পরিক্রমায় যেকোনো নিবিষ্ট পাঠকই এটি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, আমাদের সাহিত্যে এতটা প্রস্তুতি নিয়ে হাসানের মতো খুব বেশি লেখক আসেননি। অনেকেরই কাছে এটি নিছক আবেগে ভর দিয়ে বলা কথা মনে হতে পারে। কিন্তু দার্শনিক রুশো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সরদার ফজলুল করিম আমাদের জানিয়েছেন, ‘মানুষের আবেগকে যুক্তি দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। আবেগকে বুঝতে আবেগের গভীরে যেতে হয়।’ হাসানের শৈল্পিক সামর্থ্যের কথা আমরা বলেছি। কী বোঝায় এই কথা দিয়ে? একজন লেখকের শৈল্পিক সামর্থ্য বিচারের মাপকাঠিইবা কী? চেখভ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছিলেন, এই লেখক সারা জীবন একধরনের সংগ্রাম করে গেলেন। কিসের সংগ্রাম? শৈল্পিক জীবনযাপনের জন্য সংগ্রাম।
হাসানের সংগ্রাম ঠিক সেই শিল্পিত জীবনের পক্ষে আর কদর্যতার বিরুদ্ধেই। সাধারণ মানুষের জীবন-ধারণ, তাদের সংগ্রামের পরাজয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা—এসব নিয়েই হাসানের সাহিত্যের জগৎ নির্মিত হয়েছে। প্রবলভাবে রাজনীতিসচেতন ছিলেন হাসান, তিনি একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সত্তাকে সার্থকভাবে মিলিয়ে দিতে পারতেন তাঁর শৈল্পিক সত্তার সঙ্গে। জীবনের এই দিকটাতে হাসান কখনোই আপস করেননি। করেননি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে, হাসান চেতনার গভীর থেকেই মনে করতেন, শিল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে পাঠকগোষ্ঠীকে নানাভাবে ‘প্রভাবিত করা, আঘাত করা’ এবং ‘কোনো সমগ্রতায়’ পাঠককে পৌঁছে দেওয়া। এর পাশাপাশি তাকে শৈল্পিক ‘সত্যের বিচ্ছুরণ দেখিয়ে দেওয়া’। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, ‘শিল্পকলা শিল্পিতকে ডিঙিয়ে আপনার স্বাতন্ত্র্যকেই মুখ্য করে তোলে। কেননা, তার মধ্যেও আছে সৃষ্টির প্রেরণা।’ সেইসব উপলব্ধিকে হাসান কখনোই অস্বীকার করেননি।
৩.
বুদ্ধদেব বসু তাঁর একটি প্রবন্ধে অকপটে স্বীকার করেছিলেন, ‘যৌবনে...মানুষের যত রকম অবস্থা আছে, তার মধ্যে নিঃসঙ্গতাকেই তখন সবচেয়ে বেশি ভয় পেতুম।’ তাঁর মতে, ‘শুধু সঙ্গীহীনতাকেই নিঃসঙ্গতা বলে না, মনকে নিবিষ্ট করার উপায়ের অভাবকেই বলে নিঃসঙ্গতা।’ হাসান আজিজুল হকও আরও অনেকেরই মতো এই নিঃসঙ্গতাকে সম্ভবত ভয় পেতেন। সব সময়ই জনমানুষের মধ্যে থাকতে চাইতেন। এইভাবেই হয়তো জীবনের উত্তাপ সংগ্রহ করে নিতেন, গুরুত্ব দিয়েছিলেন সমকালকেও। কেননা, তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে হাসানের মনে হয়েছে, ‘সমকালের জন্যে কোনো মায়া বা স্বপ্ন রচনা করা কথাসাহিত্যের একটা কাজ হতে পারে। তবে দূর অতীত কিংবা দূর ভবিষ্যৎকে নিয়ে স্বপ্ন তৈরি করা যতটা সহজ, বর্তমানকে নিয়ে ততটা নয়। কারণ, বর্তমান তিক্ত এবং সাধারণত বর্ণহীন।’ সেই তিক্ত এবং বর্ণহীন বর্তমানের ওপর ভর দিয়েই হাসান তাঁর কথাসাহিত্যের জগৎটাকে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই একটানা পরিশ্রম এবং কষ্টের কাজ ছিল এটি; কিন্তু সাহিত্যিকের কর্তব্য তো সেই কঠিনকেই শিল্পের অবয়ব দেওয়া, যা হাসানের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। এখানেই হাসান আজিজুল হকের সামর্থ্যের চিহ্ন, যা কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় থাকে না। তাঁর ‘সাক্ষাৎকার’ গল্পের শেষাংশে এসে চরিত্রের স্বগতোক্তি আমাদের পাঠ করতে হয়—‘মানুষ যে সামাজিক, সে নিজের ইতিহাস জানিতে চাহিয়াছে, তাহাতে সর্বদাই অন্ধকার নর্তনকুর্দন করিতেছে। তবু আমি মানুষের কাছে প্রার্থনা জানাইব—কারণ মানুষেই মানুষের গা ঘেঁসিয়া থাকে—যদিও ঐ দেখা যায় না।’ এখানেই কথাগুলো শেষ হতে পারত, কিন্তু হয় না।
আইনস্টাইন শুধুই একজন বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, সেই সঙ্গে একজন মানুষ হিসেবেও ‘ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, সৌন্দর্য এবং ঐক্যের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে যেসব আদর্শের জন্ম হয়েছে’, তাতে আস্থা রাখতেন। লেখক হিসেবে হাসান আজিজুল হককে সেই আস্থায় পরিণত হতে দেখতে পাওয়া যায়। যে কারণে তাঁর ওই গল্পের চরিত্র একদম শেষ বাক্যে এসে বলেছিলেন, ‘কোথাও কিছু পাই নাই বলিয়াই বাধ্য হইয়া আমি শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছেই আবেদন জানাইব। ইতিমধ্যে সবকিছু চমৎকার ঘটিয়াছে। অবশ্য অনেক কিছুই বাকিও রহিয়া গেল কারণ কিছুই শেষ হইবার নহে।’ একজন লেখক তাঁর কাহিনির নবায়নে শিল্পিত ব্যাপ্তিতে কতটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, সেটি হাসান আজিজুল হক আমাদের দেখিয়ে দিলেন! তাঁর কথাসাহিত্যের মানুষদের তিনি সব সময়ই এই মর্যাদাবোধে, সহিষ্ণুতায়, ভালোবাসায় আমৃত্যু অভিসিঞ্চিত করে গিয়েছেন। ১৫ নভেম্বর হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।

হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সবকিছু মেনে নিয়েও লেখক হাসান আজিজুল হকের শৈল্পিক সামর্থ্যের দিকটিকে তো আমরা কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না। বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস হাসান আজিজুল হকদের বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব নয়, সে চেষ্টা যেন কখনো আমাদের না করতে হয়! কেননা, আমাদের সেই হাসান, যিনি তাঁর লেখক-জীবনের একেবারে শুরু থেকে এমন কোনো মুহূর্ত যায়নি যখন তিনি দেশের সর্বজনকে নিয়ে ভাবেননি, তাদের দুঃখ-দুর্দশায় বিচলিত বোধ করেননি।
২.
সাহিত্যের জগতে লেখকদের প্রবল প্রতাপের পাশাপাশি তাঁদের প্রস্তুতির নানা কথাও আমরা শুনতে পাই। হাসান আজিজুল হকের সাহিত্য-পরিক্রমায় যেকোনো নিবিষ্ট পাঠকই এটি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, আমাদের সাহিত্যে এতটা প্রস্তুতি নিয়ে হাসানের মতো খুব বেশি লেখক আসেননি। অনেকেরই কাছে এটি নিছক আবেগে ভর দিয়ে বলা কথা মনে হতে পারে। কিন্তু দার্শনিক রুশো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সরদার ফজলুল করিম আমাদের জানিয়েছেন, ‘মানুষের আবেগকে যুক্তি দিয়ে সব সময় বোঝা যায় না। আবেগকে বুঝতে আবেগের গভীরে যেতে হয়।’ হাসানের শৈল্পিক সামর্থ্যের কথা আমরা বলেছি। কী বোঝায় এই কথা দিয়ে? একজন লেখকের শৈল্পিক সামর্থ্য বিচারের মাপকাঠিইবা কী? চেখভ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছিলেন, এই লেখক সারা জীবন একধরনের সংগ্রাম করে গেলেন। কিসের সংগ্রাম? শৈল্পিক জীবনযাপনের জন্য সংগ্রাম।
হাসানের সংগ্রাম ঠিক সেই শিল্পিত জীবনের পক্ষে আর কদর্যতার বিরুদ্ধেই। সাধারণ মানুষের জীবন-ধারণ, তাদের সংগ্রামের পরাজয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, হতাশা—এসব নিয়েই হাসানের সাহিত্যের জগৎ নির্মিত হয়েছে। প্রবলভাবে রাজনীতিসচেতন ছিলেন হাসান, তিনি একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সত্তাকে সার্থকভাবে মিলিয়ে দিতে পারতেন তাঁর শৈল্পিক সত্তার সঙ্গে। জীবনের এই দিকটাতে হাসান কখনোই আপস করেননি। করেননি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে, হাসান চেতনার গভীর থেকেই মনে করতেন, শিল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে পাঠকগোষ্ঠীকে নানাভাবে ‘প্রভাবিত করা, আঘাত করা’ এবং ‘কোনো সমগ্রতায়’ পাঠককে পৌঁছে দেওয়া। এর পাশাপাশি তাকে শৈল্পিক ‘সত্যের বিচ্ছুরণ দেখিয়ে দেওয়া’। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, ‘শিল্পকলা শিল্পিতকে ডিঙিয়ে আপনার স্বাতন্ত্র্যকেই মুখ্য করে তোলে। কেননা, তার মধ্যেও আছে সৃষ্টির প্রেরণা।’ সেইসব উপলব্ধিকে হাসান কখনোই অস্বীকার করেননি।
৩.
বুদ্ধদেব বসু তাঁর একটি প্রবন্ধে অকপটে স্বীকার করেছিলেন, ‘যৌবনে...মানুষের যত রকম অবস্থা আছে, তার মধ্যে নিঃসঙ্গতাকেই তখন সবচেয়ে বেশি ভয় পেতুম।’ তাঁর মতে, ‘শুধু সঙ্গীহীনতাকেই নিঃসঙ্গতা বলে না, মনকে নিবিষ্ট করার উপায়ের অভাবকেই বলে নিঃসঙ্গতা।’ হাসান আজিজুল হকও আরও অনেকেরই মতো এই নিঃসঙ্গতাকে সম্ভবত ভয় পেতেন। সব সময়ই জনমানুষের মধ্যে থাকতে চাইতেন। এইভাবেই হয়তো জীবনের উত্তাপ সংগ্রহ করে নিতেন, গুরুত্ব দিয়েছিলেন সমকালকেও। কেননা, তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে হাসানের মনে হয়েছে, ‘সমকালের জন্যে কোনো মায়া বা স্বপ্ন রচনা করা কথাসাহিত্যের একটা কাজ হতে পারে। তবে দূর অতীত কিংবা দূর ভবিষ্যৎকে নিয়ে স্বপ্ন তৈরি করা যতটা সহজ, বর্তমানকে নিয়ে ততটা নয়। কারণ, বর্তমান তিক্ত এবং সাধারণত বর্ণহীন।’ সেই তিক্ত এবং বর্ণহীন বর্তমানের ওপর ভর দিয়েই হাসান তাঁর কথাসাহিত্যের জগৎটাকে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবেই একটানা পরিশ্রম এবং কষ্টের কাজ ছিল এটি; কিন্তু সাহিত্যিকের কর্তব্য তো সেই কঠিনকেই শিল্পের অবয়ব দেওয়া, যা হাসানের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। এখানেই হাসান আজিজুল হকের সামর্থ্যের চিহ্ন, যা কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় থাকে না। তাঁর ‘সাক্ষাৎকার’ গল্পের শেষাংশে এসে চরিত্রের স্বগতোক্তি আমাদের পাঠ করতে হয়—‘মানুষ যে সামাজিক, সে নিজের ইতিহাস জানিতে চাহিয়াছে, তাহাতে সর্বদাই অন্ধকার নর্তনকুর্দন করিতেছে। তবু আমি মানুষের কাছে প্রার্থনা জানাইব—কারণ মানুষেই মানুষের গা ঘেঁসিয়া থাকে—যদিও ঐ দেখা যায় না।’ এখানেই কথাগুলো শেষ হতে পারত, কিন্তু হয় না।
আইনস্টাইন শুধুই একজন বিজ্ঞানী হিসেবে নয়, সেই সঙ্গে একজন মানুষ হিসেবেও ‘ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, সৌন্দর্য এবং ঐক্যের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে যেসব আদর্শের জন্ম হয়েছে’, তাতে আস্থা রাখতেন। লেখক হিসেবে হাসান আজিজুল হককে সেই আস্থায় পরিণত হতে দেখতে পাওয়া যায়। যে কারণে তাঁর ওই গল্পের চরিত্র একদম শেষ বাক্যে এসে বলেছিলেন, ‘কোথাও কিছু পাই নাই বলিয়াই বাধ্য হইয়া আমি শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছেই আবেদন জানাইব। ইতিমধ্যে সবকিছু চমৎকার ঘটিয়াছে। অবশ্য অনেক কিছুই বাকিও রহিয়া গেল কারণ কিছুই শেষ হইবার নহে।’ একজন লেখক তাঁর কাহিনির নবায়নে শিল্পিত ব্যাপ্তিতে কতটা দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, সেটি হাসান আজিজুল হক আমাদের দেখিয়ে দিলেন! তাঁর কথাসাহিত্যের মানুষদের তিনি সব সময়ই এই মর্যাদাবোধে, সহিষ্ণুতায়, ভালোবাসায় আমৃত্যু অভিসিঞ্চিত করে গিয়েছেন। ১৫ নভেম্বর হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য।
১৪ ঘণ্টা আগেমামুনুর রশীদ

সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য। আমরা যাঁরা গত শতাব্দীর পঞ্চাশ এবং ষাট দশকের ছাত্র, তাঁরা দেখেছি অধিকাংশ শিক্ষক এক অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে এই মহান কাজটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সময়ই আমাদের পাঠ্যপুস্তকে তালেব মাস্টার কবিতাটি পড়তে হতো।
প্রাথমিকের কিছু স্কুল সরকারীকরণ হলেও সেসবের বেতন হতো অনিয়মিত। অনেক দিন পর পর বেতন পেতেন শিক্ষকেরা। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মান ছিল। একধরনের ব্রত নিয়ে তাঁরা কাজ করতেন। আবার কিছু মানুষ সম্পন্ন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকেও এই পেশায় আসতেন। কিন্তু শিক্ষক তাঁর কর্তব্যে অবহেলা করতেন না, শিক্ষাকে যতটা সম্ভব আনন্দময় করার চেষ্টা করতেন। সমাজের ন্যায়-অন্যায়ের পাহারাদারও ছিলেন তাঁরা।
কালক্রমে যখন অর্থই সামাজিক মর্যাদার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াল, তখন থেকেই শিক্ষকের সম্মানেও ভাটা পড়ল। সরকারি অফিসের পিয়ন এবং শিক্ষকের বেতন একই স্কেলে এসে পড়ল। এই অপমান নিয়েও তাঁরা কাজ করে গেছেন। কোনো এক আমলা-মন্ত্রীর সদিচ্ছায় বেতন-ভাতা একটু বাড়ল। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসার জন্য একটু চেষ্টা-চরিত্রও হলো। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনে একটা আমলাতন্ত্রও চাপিয়ে দেওয়া হলো, যেখানে শিক্ষকেরা নেই। থানা থেকে জেলা পর্যন্ত সরকারি নিয়োগের মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলো, যাঁরা কখনোই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
অবমাননাকর এই ব্যবস্থা শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি প্রবলভাবে ঢুকে যাওয়ার কারণও এটি। রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও এই ব্যবস্থায় স্কুল ম্যানেজমেন্টে একটা স্থায়ী আসন পেয়ে গেলেন। আমাদের শাসকগোষ্ঠী শিক্ষার বিষয়ে কখনো মনোযোগী ছিল না। মেধাবী ছাত্রদের প্রাথমিক শিক্ষায় আকর্ষণ করার কোনো চেষ্টাই করেনি। শিক্ষার বিষয়ে সব মনোযোগ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, যেখান থেকে কলেজ পর্যন্ত তার বিস্তৃতি। দলীয় রাজনীতির বৃত্তে নিয়ে আসার এক মরণপণ সংগ্রাম সেখানে। অথচ কিছু শিক্ষাবিদ (!) যাঁরা সরকার কর্তৃক মনোনীত দলীয় আনুগত্যের কারণেই তাঁরা নিয়োগ পান। তাঁদের তৈরি সিলেবাসও পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়। কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনও সেখানে অবহেলিত। ক্ষতবিক্ষত সংবিধানের মতোই পাঠ্যক্রমও রাজনৈতিক দলের অভিলাষেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শিক্ষকদের মধ্যেও একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে থাকে।
আমি আজ থেকে ৪০ বছর আগে জাপানে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রাথমিক স্কুলগুলো দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। লেখাপড়ার মধ্যে সৃজনশীল মাধ্যম যেমন সংগীত, কাব্য, নাটক, ছবি আঁকা—এসব ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানের কঠিন সূত্রগুলোও সৃজনশীল মাধ্যমের দ্বারা বোঝানো হয়। স্কুলগুলোতে নিয়মিত ক্রীড়ার অনুশীলনও হয়ে থাকে। শিক্ষকেরা সম্মানজনক বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি পেয়ে থাকেন এবং সব সময় শিক্ষাবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত শিক্ষকেরাই নিয়ে থাকেন।
তার আগে এবং পরেও অনেক দেশের স্কুলগুলোতেও অনুরূপ ব্যবস্থা দেখেছি। আমাদের দেশেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে একই রকমভাবে সৃজনশীল মাধ্যমগুলো ব্যবহারের জন্য পিটিআই বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ব্যবস্থা থাকলেও মাঠপর্যায়ে এসবের ব্যবহার কোনো কার্যকর অবস্থায় যেতে পারেনি। জাপান থেকে ফিরে এসে এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে বিভিন্ন দুয়ারে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ইউনিসেফ সাড়া দিল, তা-ও একজন বড় কর্মকর্তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। প্রাইমারি অধিদপ্তরের সঙ্গে ইউনিসেফ এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ৬৪ জেলায় কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণটি দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষক এবং সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণ সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে বিষয়টি উত্থাপিত করা হয়নি। কিছু আর্থিক বিষয় ছিল বলে দুর্নীতিও ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে ঢুকে গেছে নানা স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা। ইংরেজি শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়; ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা এবং আরও একধরনের শিক্ষা হয়ে থাকল ক্যাডেট কলেজ। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই একধরনের পশ্চিমা আমলের শ্রেণিবিন্যাস করা হলো। কিন্তু কোটি কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার প্রবেশদ্বারেই থেকে গেল অবহেলিত।
প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নত দেশে নারী শিক্ষকদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন এবং সে ব্যবস্থাও সেখানে আছে। আর এরই মধ্যে শিক্ষায় অভিশাপ হিসেবে এসেছে কোচিং। অল্পবিত্তের মানুষের সন্তানসন্ততিদের যতই মেধা থাকুক না কেন, তাদের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার ব্যবস্থা। স্কুলে লেখাপড়া হচ্ছে না, কোচিং সেন্টারে রমরমা ব্যবসার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক আছেন, যাঁরা এই ব্যবস্থায় পা দেননি, কিন্তু তাঁরা একঘরে।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়াতেই হবে এবং সরকারি শ্রেণিবিন্যাসের একটা জায়গায় নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। ব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষকতা মানে একটা চাকরি শুধু নয়, একটা মহান পেশার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার কাজটিও তাঁদের করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিভাবক, ভালো শিক্ষক, জনগণ, এমনকি ছাত্রদেরও অনেক অভিযোগের পাহাড় জমেছে। দেশের বিদ্যমান অপরাজনীতির অংশ হিসেবে শিক্ষকেরাও যেন ব্যবহৃত না হন, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকা জরুরি। শাসকগোষ্ঠী এবং সচেতন জনগণকেও বিষয়টি এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা প্রয়োজন।

সম্প্রতি শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ঢাকার রাজপথে শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। শত শত ছাত্রের শিক্ষাগুরুদের আন্দোলনকে দমন করতে পুলিশকেও সক্রিয় হতে দেখা গেছে। আন্দোলনটি বেতন-ভাতা ও সম্মানের জন্য। মূলত বেতন-ভাতাটিই মুখ্য। আমরা যাঁরা গত শতাব্দীর পঞ্চাশ এবং ষাট দশকের ছাত্র, তাঁরা দেখেছি অধিকাংশ শিক্ষক এক অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে এই মহান কাজটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। সেই সময়ই আমাদের পাঠ্যপুস্তকে তালেব মাস্টার কবিতাটি পড়তে হতো।
প্রাথমিকের কিছু স্কুল সরকারীকরণ হলেও সেসবের বেতন হতো অনিয়মিত। অনেক দিন পর পর বেতন পেতেন শিক্ষকেরা। কিন্তু শিক্ষকদের সম্মান ছিল। একধরনের ব্রত নিয়ে তাঁরা কাজ করতেন। আবার কিছু মানুষ সম্পন্ন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকেও এই পেশায় আসতেন। কিন্তু শিক্ষক তাঁর কর্তব্যে অবহেলা করতেন না, শিক্ষাকে যতটা সম্ভব আনন্দময় করার চেষ্টা করতেন। সমাজের ন্যায়-অন্যায়ের পাহারাদারও ছিলেন তাঁরা।
কালক্রমে যখন অর্থই সামাজিক মর্যাদার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াল, তখন থেকেই শিক্ষকের সম্মানেও ভাটা পড়ল। সরকারি অফিসের পিয়ন এবং শিক্ষকের বেতন একই স্কেলে এসে পড়ল। এই অপমান নিয়েও তাঁরা কাজ করে গেছেন। কোনো এক আমলা-মন্ত্রীর সদিচ্ছায় বেতন-ভাতা একটু বাড়ল। উচ্চশিক্ষিত তরুণদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসার জন্য একটু চেষ্টা-চরিত্রও হলো। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনে একটা আমলাতন্ত্রও চাপিয়ে দেওয়া হলো, যেখানে শিক্ষকেরা নেই। থানা থেকে জেলা পর্যন্ত সরকারি নিয়োগের মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলো, যাঁরা কখনোই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
অবমাননাকর এই ব্যবস্থা শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি প্রবলভাবে ঢুকে যাওয়ার কারণও এটি। রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও এই ব্যবস্থায় স্কুল ম্যানেজমেন্টে একটা স্থায়ী আসন পেয়ে গেলেন। আমাদের শাসকগোষ্ঠী শিক্ষার বিষয়ে কখনো মনোযোগী ছিল না। মেধাবী ছাত্রদের প্রাথমিক শিক্ষায় আকর্ষণ করার কোনো চেষ্টাই করেনি। শিক্ষার বিষয়ে সব মনোযোগ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, যেখান থেকে কলেজ পর্যন্ত তার বিস্তৃতি। দলীয় রাজনীতির বৃত্তে নিয়ে আসার এক মরণপণ সংগ্রাম সেখানে। অথচ কিছু শিক্ষাবিদ (!) যাঁরা সরকার কর্তৃক মনোনীত দলীয় আনুগত্যের কারণেই তাঁরা নিয়োগ পান। তাঁদের তৈরি সিলেবাসও পাঠ্যক্রমে যুক্ত হয়। কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনও সেখানে অবহেলিত। ক্ষতবিক্ষত সংবিধানের মতোই পাঠ্যক্রমও রাজনৈতিক দলের অভিলাষেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শিক্ষকদের মধ্যেও একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ হতে থাকে।
আমি আজ থেকে ৪০ বছর আগে জাপানে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রাথমিক স্কুলগুলো দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। লেখাপড়ার মধ্যে সৃজনশীল মাধ্যম যেমন সংগীত, কাব্য, নাটক, ছবি আঁকা—এসব ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানের কঠিন সূত্রগুলোও সৃজনশীল মাধ্যমের দ্বারা বোঝানো হয়। স্কুলগুলোতে নিয়মিত ক্রীড়ার অনুশীলনও হয়ে থাকে। শিক্ষকেরা সম্মানজনক বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি পেয়ে থাকেন এবং সব সময় শিক্ষাবিষয়ক সব সিদ্ধান্ত শিক্ষকেরাই নিয়ে থাকেন।
তার আগে এবং পরেও অনেক দেশের স্কুলগুলোতেও অনুরূপ ব্যবস্থা দেখেছি। আমাদের দেশেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে একই রকমভাবে সৃজনশীল মাধ্যমগুলো ব্যবহারের জন্য পিটিআই বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ব্যবস্থা থাকলেও মাঠপর্যায়ে এসবের ব্যবহার কোনো কার্যকর অবস্থায় যেতে পারেনি। জাপান থেকে ফিরে এসে এই ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে বিভিন্ন দুয়ারে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ইউনিসেফ সাড়া দিল, তা-ও একজন বড় কর্মকর্তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে। প্রাইমারি অধিদপ্তরের সঙ্গে ইউনিসেফ এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। ৬৪ জেলায় কর্মশালার মাধ্যমে প্রশিক্ষণটি দেওয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষক এবং সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণ সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে বিষয়টি উত্থাপিত করা হয়নি। কিছু আর্থিক বিষয় ছিল বলে দুর্নীতিও ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে ঢুকে গেছে নানা স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা। ইংরেজি শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়; ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা এবং আরও একধরনের শিক্ষা হয়ে থাকল ক্যাডেট কলেজ। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই একধরনের পশ্চিমা আমলের শ্রেণিবিন্যাস করা হলো। কিন্তু কোটি কোটি শিক্ষার্থী শিক্ষার প্রবেশদ্বারেই থেকে গেল অবহেলিত।
প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নত দেশে নারী শিক্ষকদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন এবং সে ব্যবস্থাও সেখানে আছে। আর এরই মধ্যে শিক্ষায় অভিশাপ হিসেবে এসেছে কোচিং। অল্পবিত্তের মানুষের সন্তানসন্ততিদের যতই মেধা থাকুক না কেন, তাদের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হওয়ার ব্যবস্থা। স্কুলে লেখাপড়া হচ্ছে না, কোচিং সেন্টারে রমরমা ব্যবসার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক আছেন, যাঁরা এই ব্যবস্থায় পা দেননি, কিন্তু তাঁরা একঘরে।
শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়াতেই হবে এবং সরকারি শ্রেণিবিন্যাসের একটা জায়গায় নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। ব্যবস্থাটাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষকতা মানে একটা চাকরি শুধু নয়, একটা মহান পেশার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার কাজটিও তাঁদের করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিভাবক, ভালো শিক্ষক, জনগণ, এমনকি ছাত্রদেরও অনেক অভিযোগের পাহাড় জমেছে। দেশের বিদ্যমান অপরাজনীতির অংশ হিসেবে শিক্ষকেরাও যেন ব্যবহৃত না হন, সে ব্যাপারেও সচেতন থাকা জরুরি। শাসকগোষ্ঠী এবং সচেতন জনগণকেও বিষয়টি এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা প্রয়োজন।

ইয়াবা কারবারের যে একটা সিন্ডিকেট আছে, সেই সিন্ডিকেটের ভেতরে যে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ রয়েছেন, সে কথা নতুন নয়। সেই অর্থে গত শনিবারের আজকের পত্রিকায় ইয়াবা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জানা ঘটনারই পুনরাবৃত্তি।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
এক নতুন সামরিক–রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করল পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যেদিন সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস হলো। সিনেটে সামান্য হই হই চই এবং দুজন বিচারকের পদত্যাগ ছাড়া অনেকটা নিরবেই পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোয় ঐতিহাসিক রূপান্তর ঘটে গেল।
২ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার দ্বিমতের অবসান ঘটাতে পারল না। জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে মাঠে নেমেছিল। তারা ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থেকে গণতন্ত্রের নতুন পথ তৈরির যুগপৎ ঘোষণা দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল।
১৩ ঘণ্টা আগে
হাসান আজিজুল হক প্রয়াত হয়েছেন খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। কিন্তু এরই মধ্যে টের পাওয়া যায় যে তাঁকে নিয়ে পাঠকদের, বিশেষভাবে তরুণ পাঠকদের আগ্রহের টানে বেশ খানিকটা ভাটা পড়েছে। কারণগুলো খুব যে অযৌক্তিক, সেটা বলাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
১৩ ঘণ্টা আগে