মামুনুর রশীদ

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?
মামুনুর রশীদ

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা দেয় সুর, লেখায় নতুন কথা, অভিনয়ে নতুন পথ, হাতের তুলিতে এক নতুন ছবি, দেহ দিয়ে তৈরি করেন এক অভিনব নৃত্যভঙ্গিমা।
এই মানুষগুলো কোথাও অবহেলার পাত্র আবার কোথাও জনবন্দনা, ভালো লাগার একটা বিষয়ে পরিণত হন। সেই শিল্পীদের আবার প্রয়োজন হয় স্বাধীনতার। কতটুকু স্বাধীনতার প্রয়োজন? সমাজভেদে সেই স্বাধীনতার মাত্রাও নির্ধারিত হয়। তবে দেখা যায়, যে সমাজে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই, সেই সমাজে তাঁদের স্বাধীনতাও সংকুচিত। পরিবার থেকেই তাঁরা বুঝতে শেখেন, সবকিছু বলা যাবে না, সবকিছু করা যাবে না। করতে গেলেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। এভাবেই তাঁরা বড় হতে তাকেন।
কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যাঁরা শাস্তির ভয় করেন না, অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের অধিকারী। কিন্তু রাষ্ট্রব্যবস্থা সব সময়ই এই দুরন্ত সাহসের অধিকারীদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকে, তাদের পরিবার, সমর্থক সবাই মিলে নানা ব্যবস্থা করে শুধু শিল্পীদের নয়, বিরুদ্ধবাদীদের জন্যও রেখে দিয়েছে নানা শাস্তি। আধুনিক কালে কারাগার ছাড়াও নানা ব্যবস্থা আছে। সে ব্যবস্থার মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণ, শিল্পীর প্রকাশের নানা পথ রুদ্ধ করার আয়োজন। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আসলে সবই—যেমন গণমাধ্যম, নানা কালাকানুন, বিচারব্যবস্থাসহ বিরুদ্ধবাদীদের সব ধরনের কণ্ঠরোধের কৌশল।
আমাদের মতো দেশে প্রথমেই দেখা যায়, জনপ্রিয় শিল্পীদের জন্য গণমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া। অদ্ভুত ব্যাপার—যাঁরা জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, ভিন্নমতের কারণে তাঁদের উপস্থিতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরাও আছেন। যেসব সরকারি প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেখানেও তাঁরা নিষিদ্ধ হয়ে যান। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁদের লেখা প্রকাশিত হলেও বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আছে। সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বের বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণেও ওই সব শিল্পীর কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েই থাকে। রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও শিল্পী স্বাধীন হন না।
আজকের দিনে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন চ্যানেল, সংগীতের রেকর্ডিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরাগভাজন হতে চায় না কেউ। তাই তাদের চারণক্ষেত্রটাও কালে কালে সংকুচিত হতে থাকে। শিল্প সৃষ্টির আরেকটি বড় ব্যাপার হলো প্রকাশ করা। প্রকাশের পথটাই যদি রুদ্ধ হয়ে যায়, তখন শিল্পী বিমর্ষ হন, হতাশ হন এবং একসময় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে থাকেন। এমনি করে গণতন্ত্রহীন তৃতীয় বিশ্বের অনেক জায়গায়ই অসংখ্য শিল্পী কর্মহীন হয়ে পড়েন।
কিন্তু যেখানে গণতন্ত্র আছে সেখানে সরকার ভিন্নমুখী বিষয়কেও প্রয়োজনীয় মনে করে। এই যে ভিন্নতা, তাতে সমাজের তো নয়ই, ক্ষমতাবানদেরও কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যারা একমুখী প্রচার বা মতবাদে বিশ্বাস করে, তারা বন্ধুত্ববাদেও বিশ্বাস করে না। তাই সংকীর্ণতার এক গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ক্ষমতাটাও হারায়। নানা মতবাদ দর্শন থেকে শিল্পীরাও একটা রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্বাস করতে থাকেন। এই বিশ্বাসের ওপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই বিশ্বাস কখনো জলাবদ্ধতার জন্ম দেয়। তাই নিজের বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে মানতে চায় না। আর অন্যের বিশ্বাসকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সে আর বাধা দেয় না, বরং সমর্থন করতে থাকে।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের শিল্পীরা বিরোধী দলের কোনো শিল্পীকে যদি গণমাধ্যমে সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। এটা যে শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। একজন ভালো চিকিৎসক যদি অন্য মতের হন, তাঁকেও যথাযোগ্য জায়গায় স্থান দেওয়া হয় না। আমলাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। তাই সরকারের চারপাশ ভরে যায় তাঁবেদারে। এই প্রবণতা যে শুধু রাজনীতিবিদদের মধ্যেই ঘটে তা নয়, সর্বত্র তা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ৫৫ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা-ই ঘটেছে। এই ঘটে যাওয়ার ফলাফলে সমাজে শুধু আলোচনা যে রুদ্ধ হয়েছে, তা-ই নয়, সব জায়গায়ই একটা সংকীর্ণতার সৃষ্টি হয়েছে, যা সামষ্টিক প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে কিন্তু মানবিক শক্তি ক্রমেই কমে এসেছে। প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন। মানুষ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে, কিন্তু তার ব্যবহারের জন্য যে সংস্কৃতিটা প্রয়োজন, তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যদি সংস্কৃতিতে উন্নত না হয়, তাহলে এসবের সুফল সমাজের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। পরমতসহিষ্ণুতার কথা পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও যদি সামাজিক চর্চায় স্থান না পায়, তাহলে তার লাভ দেখা যায় না। বরং এসবের অভাবে মানুষ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে।
আমরা দেখতে পেয়েছি দুটি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মারমুখী হয়ে অন্য কলেজের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। এটি একটি সংস্কৃতিগত সমস্যা। ওই শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতির শিক্ষা পায়নি। শিক্ষকেরাও তাঁদের আচরণ ও শিক্ষাপদ্ধতি সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাবিত করতে পারেননি। কাজেই সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রচার যেমন হচ্ছে না, তেমনি অনুষ্ঠানে নানা মত, নানা জনের শিল্পীদের আমন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারের ইশারার দিকে তারা তাকিয়ে থাকে।
আমরা সব সময়ই একটা পরিবর্তনের আশায় থাকি। এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকে মূলত কিছু আদর্শিক পরিবর্তন, যা জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে। নানা ধরনের সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু যদি সংস্কারকাজটি সমাজে যথার্থ মূল্যবোধের সৃষ্টি না করে, তাহলে তা অর্থহীন প্রচেষ্টাতেই বিলীন হয়ে যাবে। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ এখন সরকারে বিলীন হয়ে গেছে। এই তিনটিরও পৃথক সত্তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি সবারই জানা কিন্তু সচেতন হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে স্পষ্ট গুরুত্ব দেবেন কি?

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা...
২৪ এপ্রিল ২০২৫
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা...
২৪ এপ্রিল ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা...
২৪ এপ্রিল ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

শিল্পীর জীবনটা অন্য রকম কিছু নয়। মানুষের মতোই সে জন্মে স্বাধীন হয়ে কিন্তু কালে কালে তার হাত-পায়ে শৃঙ্খল পড়তে থাকে। মূল্যবোধের, শৃঙ্খলার, অনুশাসনের এবং রাষ্ট্রের নিয়মকানুন সবকিছুর শৃঙ্খল। এর মধ্যে কিছু মানুষ অন্য রকম করে ভাবতে শুরু করেন, প্রথাগত আর দশজনের মতো নয় তাঁদের সেই ভাবনা। তাঁদের কণ্ঠে ধরা...
২৪ এপ্রিল ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
১৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
১৬ ঘণ্টা আগে