সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা জানিয়েছে নিয়াজিকে। অদক্ষতা, কাপুরুষতা, লাম্পট্য, পান-চোরাচালানে সংযুক্তি, কোনো কিছুরই অভাব দেখা যায়নি এই মহাবীরের কাজকর্মে। কিন্তু তিনিই আবার অন্যদের দুষেছেন তাঁদের ব্যর্থতার জন্য।
‘বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ নামে একটি বই লিখে তিনি পিন্ডিওয়ালাদের তো বটেই, রণাঙ্গনে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেও খারাপ খারাপ কথা বলেছেন। বলেছেন যে ‘২৫ মার্চ টিক্কা অহেতুক রক্তপাত ঘটিয়েছেন, এক রাত্রেই ৫০ হাজার মানুষ মেরে ফেলেছেন এবং নিজের আয়ত্তাধীন সব শক্তিকে এমনভাবে লেলিয়ে দিয়েছেন যেন নিজের দেশের বিপথে-পরিচালিত ও বিপথগামী মানুষদের সঙ্গে নয়, বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছেন।’
নিয়াজি জানাচ্ছেন যে টিক্কাকে লোকে চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, জেনারেল ডায়ার ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করেছে। ২০০২ সালে উর্দু ‘ডাইজেস্ট’ নামের একটি পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাও ফরমান আলী সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করেন যে ওই সেনা অফিসারটি ভারতীয়দের দেওয়া শর্তে দ্রুত আত্মসমর্পণ করে বাঙালিদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছিলেন, কারণ ২৫ মার্চের অভিযানে জড়িত থাকার দরুন বাঙালিরা তাঁকে ভীষণ ঘৃণা করত।
নিয়াজি কোন ধরনের মানুষ ছিলেন সে বিষয়ে খাদিম হোসেন রাজার সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি। সিদ্দিক সালিকের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ওই সেনাপতিটির বীরত্বের প্রমাণ। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিয়াজি মাটির নিচে তৈরি তাঁর হেডকোয়ার্টার্সে আশ্রয় নেন। ৪ ডিসেম্বর গুজব রটে গিয়েছিল যে পাকিস্তানি বাহিনী অমৃতসর দখল করে নিয়েছে। এই গুজব শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিয়াজি তাঁর চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে কুস্তিগিরের মতো নর্তনকুর্দন শুরু করেন। দ্রুত গভর্নরকে ফোন করে তিনি শুভ সংবাদটি জানালেন। পরে ওটি যখন গুজব বলে প্রমাণিত হলো, তখন সেই যে চুপসে গেলেন আর সতেজ হতে পারলেন না!
তবে ৭ ডিসেম্বর তাঁকে একবার আত্মপ্রকাশ করতে হয়েছিল, কেননা গভর্নর ডা. এম এ মালিক তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন গভর্নমেন্ট হাউসে। সেখানে গিয়ে নিয়াজি কোনো কথা বলছেন না দেখে মালিক সাহেব তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তখনই ঘটে মস্ত এক ঘটনা। জেনারেল সাহেবের নাদুসনুদুস দেহটি কেঁপে কেঁপে উঠল এবং তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। দু-হাতে মুখ ঢেকে তিনি শিশুর মতো ফোঁপাতে শুরু করলেন। ঠিক সেই সময়ে একজন বাঙালি ওয়েটার ট্রেতে করে কফি ও স্ন্যাকস সাজিয়ে নিয়ে কামরায় ঢুকে পড়ে। ‘কুকুরের মতো গর্জন’ করে তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হলো। ওয়েটারটি বের হয়ে এল ঠিকই, কিন্তু সে তার বাঙালি সহকর্মীদের জানাতে ভুল করল না যে সাহেবরা সবাই মিলে কান্নাকাটি করছেন।
১২ তারিখে নিয়াজি আবার বের হন, এবার তিনি সামরিক হাসপাতালে যান। সেখানে ছয়জন নার্স তাঁর কাছে কোনোমতে এসে বলতে সক্ষম হয় যে তারা মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে বাঁচার ব্যবস্থা চায়। জেনারেল সাহেব তাদের আশ্বস্ত করে বলেন যে ভয়ের কোনো কারণ নেই, কেননা খুব বড় রকমের সাহায্য (অর্থাৎ চীনারা) রওনা হয়ে গেছে। আর সাহায্য যদি না-ই আসে তাহলেও চিন্তা নেই: ‘মুক্তিবাহিনীর হাতে তোমাদের আমরা কিছুতেই পড়তে দেব না, তার আগে আমরাই তোমাদের মেরে ফেলব।’ ওই যাত্রাতেই সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘেরাও করে ফেলেন; তাঁদের কাছে তিনি দম্ভভরে বলেন, ‘ঢাকার পতন ঘটবে আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে।’ বলে নিজের বুক নিজেই চাপড়ে দিয়েছিলেন। সিদ্দিক সালিক জানাচ্ছেন যে ১৬ তারিখে খুব সকালে আহত মেজর জেনারেল রহিম ও আরও কয়েকজন যখন তিনটি হেলিকপ্টারে করে বার্মায় পাড়ি দিলেন, তখন তাতে নার্সদের নেওয়া গেল না, কারণ তাদেরকে তাদের হোস্টেল থেকে ‘সংগ্রহ করা’ সম্ভব হয়নি।
সিদ্দিক সালিকের বইটি তথ্যে সমৃদ্ধ। তাঁর দেওয়া একটি তথ্য তো বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। সেটি হলো ২৫ মার্চ রাতের। গণহত্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাকি বেতারে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করা স্বাধীনতার একটি ঘোষণা শোনা গিয়েছিল। এই তথ্যকে কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষণার অকাট্য প্রমাণ বলে ধরে নিয়েছিলেন, অন্যরা প্রশ্ন তুলেছেন অন্য কেউ যা শুনল না তিনি কী করে তা শুনলেন? একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে তথ্যটা তাঁর নিজের দেওয়া নয়, একজন বিদেশি সাংবাদিকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি মাত্র, এবং সে উৎসটি তিনি পাদটীকাতে উল্লেখও করেছেন, সেই সঙ্গে পরের প্যারাতেই তিনি জানাচ্ছেন যে ‘বেতার বার্তাটা আমি নিজে শুনিনি, আমি তখন কেবল রকেট-লঞ্চারের ভয়ংকর ভয়ংকর সব শব্দ শুনছিলাম। অন্যকিছু শোনা সম্ভব ছিল না।’ প্রশ্ন থাকে, নিজে যদি না-ই শুনে থাকেন তাহলে ওই তথ্য সরবরাহের কি কোনো প্রয়োজন ছিল? হ্যাঁ, ছিল। প্রয়োজন ছিল এটা বোঝাবার জন্য যে পাকিস্তানিরা সময়মতো আক্রমণ না করলে তারা নির্ঘাৎ আক্রান্ত হতো; আওয়ামী লীগ সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, স্বাধীনতার রেকর্ড করা একটি ঘোষণাসহ।
গভর্নমেন্ট হাউসে কুকুরের মতো গর্জন করে উঠেছিলেন যে সেনাকর্তারা, কিছুদিন পরেই সারমেয়দের যে অপর স্বভাব, লেজ গুটিয়ে পলায়ন, সেটিই তাঁদের করতে হয়েছে। সিদ্দিক সালিকের লেখায় অবশ্য আরেকটি কুকুরের কথা আছে, সেটি বাস্তবিক কুকুর, কিন্তু প্রতীকের রূপে মূর্তিমান। পঁচিশ তারিখের রাত্রি পোহানোর পর ছাব্বিশ তারিখের অতি প্রত্যুষের ঘটনা। টিক্কা খান সারা রাত ধরে সোফায় বসে অপারেশনের খবরাখবর নিয়ে ভোর ৫টায় সন্তোষের সঙ্গে নিজের অফিসে গেছেন, কিছুক্ষণ পর রুমালে চশমা মুছতে মুছতে তিনি দৃশ্যমান হয়েছেন এবং চারদিকে তাকিয়ে বলেছেন, ‘কোথাও তো কেউ নেই দেখছি।’
সিদ্দিক সালিক পাশেই ছিলেন। জেনারেলের স্বগতোক্তি শুনে নিজেও আশপাশে তাকিয়ে দেখেছেন, ঘটনা সত্যি, কেউ নেই, তবে একটি কুকুরকে দেখা গেল পেছনের দুই পায়ের নিচে লেজটি গুঁজে শহরের দিকে চলে যাচ্ছে, চুপিচুপি। যেন সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি!
সেভাবেই দেখেছিলেন তিনি, বিবরণ পাঠে তা-ই মনে হয়। কিন্তু হায়, বোঝেননি যে ৯ মাস পরে তাঁদের নিজেদেরও ওই একই দশা হবে; আর কেউ না দেখুক, ইতিহাস দেখবে। এবং দেখেছেও। আর কুকুর তো তখন ডাকতই। সন্ধ্যার পর, কারফিউ থাকুক আর না-ই থাকুক, মানুষ বের হতো না, তবে কুকুরদের ছিল অবাধ স্বাধীনতা।
যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ১৫ জন পদস্থ আমলা এসেছিলেন, প্রশাসন চালু রাখার জন্য। তাঁদের একজন হাসান জহীর। তিনিও একটি বই লিখেছেন, নাম দিয়েছেন ‘দি সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান: দি রাইজ অ্যান্ড রিয়ালাইজেশন অব বেঙ্গলি মুসলিম ন্যাশনালিজম’। দৃষ্টিভঙ্গিটা অস্পষ্ট নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মানতে প্রস্তুত নন, সঙ্গে মুসলিমের উপাদান যোগ করে স্বাদের কটুত্ব দূর করতে চাইছেন। হাসান জহীর তাঁর নিজের একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মিশন এসেছিল ঢাকায়; আপ্যায়নের জন্য গভর্নমেন্ট হাউসে ডিনারের আয়োজন করেছিলেন গভর্নর টিক্কা খান। তখন বাইরে প্রথমে শোনা গেল বোমার আওয়াজ, পরে মেশিনগানের এবং সেই সঙ্গে কুকুরের। বোমা ছুড়ছিল বাঙালিরা, মেশিনগান পাঞ্জাবিদের; আর কুকুর? পাঞ্জাবিরা তো কুকুর আনেনি সঙ্গে করে। কুকুরগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশেরই, চিৎকার করে তারা কী বলছিল? বলছিল কি যে ডাকাত পড়েছে? তা ডাকাত পড়েছিল বইকি। অমন ডাকাত কেউ কখনো দেখেনি।
তবে শাসকশ্রেণির প্রতিনিধিরা অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও অনেক সত্য স্বীকার করেছেন। তাঁদের ভেতর বাস্তববাদী যাঁরা, তাঁরা ভয় পেয়েছেন নিজেদের পরিণতির কথা ভেবে। সিদ্দিক লিখেছেন, ডিসেম্বরের ৮-৯ তারিখের দিকে ‘কাঁধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ধাতু বহনকারী’ দুজন অফিসার তাঁকে একা পেয়ে বলেছিলেন, ‘জেনারেল নিয়াজির কাছে তো তোমার যাতায়াত আছে, তাঁকে গিয়ে বলো না কেন বাস্তববাদী হতে? নইলে আমরা সবাই কুকুরের মতো মারা পড়ব।’ সালিক অবশ্য সেই বাণী বহন করে নিয়ে যেতে সাহস করেননি। তবে কুকুরেরা যে নানারূপে ঘোরাঘুরি করছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কর্তাব্যক্তিরা সর্বত্র ঘৃণা দেখতে পাচ্ছিলেন। খাদিম হোসেন পূর্ববঙ্গে প্রথম আসেন ১৯৬৮ সালে। সংক্ষিপ্ত সেই অবস্থানে তিনি বিস্ময় ও দুঃখের সঙ্গে দেখেন বাঙালিরা অবাঙালিদের সহ্য করতে পারছে না। ‘শালা পাঞ্জাবি’, ‘শালা বিহারি’ এসব বলছে। অবাঙালিদের কাছে জিনিসপত্র পর্যন্ত বিক্রি করছে না। তখনই তাঁর মনে হয়েছে যে নিজ দেশে তিনি পরবাসী হয়ে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানিরা হিসাব করে দেখতে পাচ্ছিল যে পূর্ববঙ্গে তাদের নিয়মিত বাহিনী ও ইপিআর মিলিয়ে সৈন্য হবে ২৫ হাজার; তাদের দিয়ে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে দাবিয়ে রাখবে কীভাবে? সৈন্য ও সরঞ্জাম বাড়ানো হচ্ছিল, কিন্তু কতটা বাড়ানো যাবে? বাঙালি ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ, কোনো বাহিনীর ওপরই নির্ভর করার উপায় ছিল না। তাদের শঙ্কা ছিল যে নিয়মিত বাহিনী ও ইপিআরের সদস্যরা হুকুম দিলে শুনবে না, বাঙালিদের তারা গুলি করে মারতে চাইবে না এবং শেখ মুজিব যদি ডাক দেন তবে তারা বিদ্রোহ করবে। অসহযোগের সময় বেসামরিক প্রশাসন আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী চলছিল, এমনকি সেনাছাউনির বেসামরিক কর্মচারীরাও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আগের মতো সহযোগিতা করছিল না। জ্বালানি, খাদ্য ও চলাফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতেই ইয়াহিয়ার নির্দেশে খাদিম হোসেন ও ফরমান আলী দুজনে মিলে হামলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন, নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’। কাজটা করতে হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। পরিকল্পনাটির মুখবন্ধে বলা হচ্ছে, ‘অ্যাজ আওয়ামী লীগ হ্যাজ ওয়াইডস্প্রেড সাপোর্ট ইভেন অ্যামাংস্ট দ্য ইস্ট পাকিস্তানি এলিমেন্টস ইন দ্য আর্মি, দ্য অপারেশন হ্যাজ টু বি লঞ্চড উইথ গ্রেট কানিংনেস, সারপ্রাইজ, ডিসেপশন অ্যান্ড স্পিড কম্বাইন্ড উইথ শক অ্যাকশন।’ (সেনাবাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানি সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সমর্থন আছে। তাই অভিযানটি অত্যন্ত সুচিন্তিত কৌশলে পরিচালনা করতে হবে, যাতে দ্রুততার সঙ্গে প্রচণ্ড আঘাত করে শত্রুপক্ষকে সম্পূর্ণ হতবাক ও পর্যুদস্ত করা যাবে।)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা জানিয়েছে নিয়াজিকে। অদক্ষতা, কাপুরুষতা, লাম্পট্য, পান-চোরাচালানে সংযুক্তি, কোনো কিছুরই অভাব দেখা যায়নি এই মহাবীরের কাজকর্মে। কিন্তু তিনিই আবার অন্যদের দুষেছেন তাঁদের ব্যর্থতার জন্য।
‘বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান’ নামে একটি বই লিখে তিনি পিন্ডিওয়ালাদের তো বটেই, রণাঙ্গনে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেও খারাপ খারাপ কথা বলেছেন। বলেছেন যে ‘২৫ মার্চ টিক্কা অহেতুক রক্তপাত ঘটিয়েছেন, এক রাত্রেই ৫০ হাজার মানুষ মেরে ফেলেছেন এবং নিজের আয়ত্তাধীন সব শক্তিকে এমনভাবে লেলিয়ে দিয়েছেন যেন নিজের দেশের বিপথে-পরিচালিত ও বিপথগামী মানুষদের সঙ্গে নয়, বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমেছেন।’
নিয়াজি জানাচ্ছেন যে টিক্কাকে লোকে চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, জেনারেল ডায়ার ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করেছে। ২০০২ সালে উর্দু ‘ডাইজেস্ট’ নামের একটি পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাও ফরমান আলী সম্পর্কে তিনি অভিযোগ করেন যে ওই সেনা অফিসারটি ভারতীয়দের দেওয়া শর্তে দ্রুত আত্মসমর্পণ করে বাঙালিদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছিলেন, কারণ ২৫ মার্চের অভিযানে জড়িত থাকার দরুন বাঙালিরা তাঁকে ভীষণ ঘৃণা করত।
নিয়াজি কোন ধরনের মানুষ ছিলেন সে বিষয়ে খাদিম হোসেন রাজার সাক্ষ্য আমরা পেয়েছি। সিদ্দিক সালিকের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে ওই সেনাপতিটির বীরত্বের প্রমাণ। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিয়াজি মাটির নিচে তৈরি তাঁর হেডকোয়ার্টার্সে আশ্রয় নেন। ৪ ডিসেম্বর গুজব রটে গিয়েছিল যে পাকিস্তানি বাহিনী অমৃতসর দখল করে নিয়েছে। এই গুজব শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিয়াজি তাঁর চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে কুস্তিগিরের মতো নর্তনকুর্দন শুরু করেন। দ্রুত গভর্নরকে ফোন করে তিনি শুভ সংবাদটি জানালেন। পরে ওটি যখন গুজব বলে প্রমাণিত হলো, তখন সেই যে চুপসে গেলেন আর সতেজ হতে পারলেন না!
তবে ৭ ডিসেম্বর তাঁকে একবার আত্মপ্রকাশ করতে হয়েছিল, কেননা গভর্নর ডা. এম এ মালিক তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন গভর্নমেন্ট হাউসে। সেখানে গিয়ে নিয়াজি কোনো কথা বলছেন না দেখে মালিক সাহেব তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তখনই ঘটে মস্ত এক ঘটনা। জেনারেল সাহেবের নাদুসনুদুস দেহটি কেঁপে কেঁপে উঠল এবং তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। দু-হাতে মুখ ঢেকে তিনি শিশুর মতো ফোঁপাতে শুরু করলেন। ঠিক সেই সময়ে একজন বাঙালি ওয়েটার ট্রেতে করে কফি ও স্ন্যাকস সাজিয়ে নিয়ে কামরায় ঢুকে পড়ে। ‘কুকুরের মতো গর্জন’ করে তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হলো। ওয়েটারটি বের হয়ে এল ঠিকই, কিন্তু সে তার বাঙালি সহকর্মীদের জানাতে ভুল করল না যে সাহেবরা সবাই মিলে কান্নাকাটি করছেন।
১২ তারিখে নিয়াজি আবার বের হন, এবার তিনি সামরিক হাসপাতালে যান। সেখানে ছয়জন নার্স তাঁর কাছে কোনোমতে এসে বলতে সক্ষম হয় যে তারা মুক্তিবাহিনীর হাত থেকে বাঁচার ব্যবস্থা চায়। জেনারেল সাহেব তাদের আশ্বস্ত করে বলেন যে ভয়ের কোনো কারণ নেই, কেননা খুব বড় রকমের সাহায্য (অর্থাৎ চীনারা) রওনা হয়ে গেছে। আর সাহায্য যদি না-ই আসে তাহলেও চিন্তা নেই: ‘মুক্তিবাহিনীর হাতে তোমাদের আমরা কিছুতেই পড়তে দেব না, তার আগে আমরাই তোমাদের মেরে ফেলব।’ ওই যাত্রাতেই সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘেরাও করে ফেলেন; তাঁদের কাছে তিনি দম্ভভরে বলেন, ‘ঢাকার পতন ঘটবে আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে।’ বলে নিজের বুক নিজেই চাপড়ে দিয়েছিলেন। সিদ্দিক সালিক জানাচ্ছেন যে ১৬ তারিখে খুব সকালে আহত মেজর জেনারেল রহিম ও আরও কয়েকজন যখন তিনটি হেলিকপ্টারে করে বার্মায় পাড়ি দিলেন, তখন তাতে নার্সদের নেওয়া গেল না, কারণ তাদেরকে তাদের হোস্টেল থেকে ‘সংগ্রহ করা’ সম্ভব হয়নি।
সিদ্দিক সালিকের বইটি তথ্যে সমৃদ্ধ। তাঁর দেওয়া একটি তথ্য তো বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। সেটি হলো ২৫ মার্চ রাতের। গণহত্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নাকি বেতারে শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের কণ্ঠে রেকর্ড করা স্বাধীনতার একটি ঘোষণা শোনা গিয়েছিল। এই তথ্যকে কেউ কেউ স্বাধীনতা ঘোষণার অকাট্য প্রমাণ বলে ধরে নিয়েছিলেন, অন্যরা প্রশ্ন তুলেছেন অন্য কেউ যা শুনল না তিনি কী করে তা শুনলেন? একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে তথ্যটা তাঁর নিজের দেওয়া নয়, একজন বিদেশি সাংবাদিকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি মাত্র, এবং সে উৎসটি তিনি পাদটীকাতে উল্লেখও করেছেন, সেই সঙ্গে পরের প্যারাতেই তিনি জানাচ্ছেন যে ‘বেতার বার্তাটা আমি নিজে শুনিনি, আমি তখন কেবল রকেট-লঞ্চারের ভয়ংকর ভয়ংকর সব শব্দ শুনছিলাম। অন্যকিছু শোনা সম্ভব ছিল না।’ প্রশ্ন থাকে, নিজে যদি না-ই শুনে থাকেন তাহলে ওই তথ্য সরবরাহের কি কোনো প্রয়োজন ছিল? হ্যাঁ, ছিল। প্রয়োজন ছিল এটা বোঝাবার জন্য যে পাকিস্তানিরা সময়মতো আক্রমণ না করলে তারা নির্ঘাৎ আক্রান্ত হতো; আওয়ামী লীগ সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, স্বাধীনতার রেকর্ড করা একটি ঘোষণাসহ।
গভর্নমেন্ট হাউসে কুকুরের মতো গর্জন করে উঠেছিলেন যে সেনাকর্তারা, কিছুদিন পরেই সারমেয়দের যে অপর স্বভাব, লেজ গুটিয়ে পলায়ন, সেটিই তাঁদের করতে হয়েছে। সিদ্দিক সালিকের লেখায় অবশ্য আরেকটি কুকুরের কথা আছে, সেটি বাস্তবিক কুকুর, কিন্তু প্রতীকের রূপে মূর্তিমান। পঁচিশ তারিখের রাত্রি পোহানোর পর ছাব্বিশ তারিখের অতি প্রত্যুষের ঘটনা। টিক্কা খান সারা রাত ধরে সোফায় বসে অপারেশনের খবরাখবর নিয়ে ভোর ৫টায় সন্তোষের সঙ্গে নিজের অফিসে গেছেন, কিছুক্ষণ পর রুমালে চশমা মুছতে মুছতে তিনি দৃশ্যমান হয়েছেন এবং চারদিকে তাকিয়ে বলেছেন, ‘কোথাও তো কেউ নেই দেখছি।’
সিদ্দিক সালিক পাশেই ছিলেন। জেনারেলের স্বগতোক্তি শুনে নিজেও আশপাশে তাকিয়ে দেখেছেন, ঘটনা সত্যি, কেউ নেই, তবে একটি কুকুরকে দেখা গেল পেছনের দুই পায়ের নিচে লেজটি গুঁজে শহরের দিকে চলে যাচ্ছে, চুপিচুপি। যেন সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিনিধি!
সেভাবেই দেখেছিলেন তিনি, বিবরণ পাঠে তা-ই মনে হয়। কিন্তু হায়, বোঝেননি যে ৯ মাস পরে তাঁদের নিজেদেরও ওই একই দশা হবে; আর কেউ না দেখুক, ইতিহাস দেখবে। এবং দেখেছেও। আর কুকুর তো তখন ডাকতই। সন্ধ্যার পর, কারফিউ থাকুক আর না-ই থাকুক, মানুষ বের হতো না, তবে কুকুরদের ছিল অবাধ স্বাধীনতা।
যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ১৫ জন পদস্থ আমলা এসেছিলেন, প্রশাসন চালু রাখার জন্য। তাঁদের একজন হাসান জহীর। তিনিও একটি বই লিখেছেন, নাম দিয়েছেন ‘দি সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান: দি রাইজ অ্যান্ড রিয়ালাইজেশন অব বেঙ্গলি মুসলিম ন্যাশনালিজম’। দৃষ্টিভঙ্গিটা অস্পষ্ট নয়, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মানতে প্রস্তুত নন, সঙ্গে মুসলিমের উপাদান যোগ করে স্বাদের কটুত্ব দূর করতে চাইছেন। হাসান জহীর তাঁর নিজের একটি বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মিশন এসেছিল ঢাকায়; আপ্যায়নের জন্য গভর্নমেন্ট হাউসে ডিনারের আয়োজন করেছিলেন গভর্নর টিক্কা খান। তখন বাইরে প্রথমে শোনা গেল বোমার আওয়াজ, পরে মেশিনগানের এবং সেই সঙ্গে কুকুরের। বোমা ছুড়ছিল বাঙালিরা, মেশিনগান পাঞ্জাবিদের; আর কুকুর? পাঞ্জাবিরা তো কুকুর আনেনি সঙ্গে করে। কুকুরগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশেরই, চিৎকার করে তারা কী বলছিল? বলছিল কি যে ডাকাত পড়েছে? তা ডাকাত পড়েছিল বইকি। অমন ডাকাত কেউ কখনো দেখেনি।
তবে শাসকশ্রেণির প্রতিনিধিরা অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও অনেক সত্য স্বীকার করেছেন। তাঁদের ভেতর বাস্তববাদী যাঁরা, তাঁরা ভয় পেয়েছেন নিজেদের পরিণতির কথা ভেবে। সিদ্দিক লিখেছেন, ডিসেম্বরের ৮-৯ তারিখের দিকে ‘কাঁধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ধাতু বহনকারী’ দুজন অফিসার তাঁকে একা পেয়ে বলেছিলেন, ‘জেনারেল নিয়াজির কাছে তো তোমার যাতায়াত আছে, তাঁকে গিয়ে বলো না কেন বাস্তববাদী হতে? নইলে আমরা সবাই কুকুরের মতো মারা পড়ব।’ সালিক অবশ্য সেই বাণী বহন করে নিয়ে যেতে সাহস করেননি। তবে কুকুরেরা যে নানারূপে ঘোরাঘুরি করছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কর্তাব্যক্তিরা সর্বত্র ঘৃণা দেখতে পাচ্ছিলেন। খাদিম হোসেন পূর্ববঙ্গে প্রথম আসেন ১৯৬৮ সালে। সংক্ষিপ্ত সেই অবস্থানে তিনি বিস্ময় ও দুঃখের সঙ্গে দেখেন বাঙালিরা অবাঙালিদের সহ্য করতে পারছে না। ‘শালা পাঞ্জাবি’, ‘শালা বিহারি’ এসব বলছে। অবাঙালিদের কাছে জিনিসপত্র পর্যন্ত বিক্রি করছে না। তখনই তাঁর মনে হয়েছে যে নিজ দেশে তিনি পরবাসী হয়ে যাচ্ছেন।
পাকিস্তানিরা হিসাব করে দেখতে পাচ্ছিল যে পূর্ববঙ্গে তাদের নিয়মিত বাহিনী ও ইপিআর মিলিয়ে সৈন্য হবে ২৫ হাজার; তাদের দিয়ে সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে দাবিয়ে রাখবে কীভাবে? সৈন্য ও সরঞ্জাম বাড়ানো হচ্ছিল, কিন্তু কতটা বাড়ানো যাবে? বাঙালি ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ, কোনো বাহিনীর ওপরই নির্ভর করার উপায় ছিল না। তাদের শঙ্কা ছিল যে নিয়মিত বাহিনী ও ইপিআরের সদস্যরা হুকুম দিলে শুনবে না, বাঙালিদের তারা গুলি করে মারতে চাইবে না এবং শেখ মুজিব যদি ডাক দেন তবে তারা বিদ্রোহ করবে। অসহযোগের সময় বেসামরিক প্রশাসন আওয়ামী লীগের নির্দেশ অনুযায়ী চলছিল, এমনকি সেনাছাউনির বেসামরিক কর্মচারীরাও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আগের মতো সহযোগিতা করছিল না। জ্বালানি, খাদ্য ও চলাফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতেই ইয়াহিয়ার নির্দেশে খাদিম হোসেন ও ফরমান আলী দুজনে মিলে হামলার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন, নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’। কাজটা করতে হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। পরিকল্পনাটির মুখবন্ধে বলা হচ্ছে, ‘অ্যাজ আওয়ামী লীগ হ্যাজ ওয়াইডস্প্রেড সাপোর্ট ইভেন অ্যামাংস্ট দ্য ইস্ট পাকিস্তানি এলিমেন্টস ইন দ্য আর্মি, দ্য অপারেশন হ্যাজ টু বি লঞ্চড উইথ গ্রেট কানিংনেস, সারপ্রাইজ, ডিসেপশন অ্যান্ড স্পিড কম্বাইন্ড উইথ শক অ্যাকশন।’ (সেনাবাহিনীর পূর্ব পাকিস্তানি সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সমর্থন আছে। তাই অভিযানটি অত্যন্ত সুচিন্তিত কৌশলে পরিচালনা করতে হবে, যাতে দ্রুততার সঙ্গে প্রচণ্ড আঘাত করে শত্রুপক্ষকে সম্পূর্ণ হতবাক ও পর্যুদস্ত করা যাবে।)
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৫ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৫ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১২ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’। একই সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের পরিকল্পনার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরলেন। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাধ্য হয়ে প্রবাসে থাকার পর তাঁর এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক নতুন পর্বের সূচনা বলেই অনেকে দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। উঠেছে কিছু প্রশ্নও।
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো গণতন্ত্র, ঐক্য, উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। আমরা চাই, সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন।’
দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাঁর কণ্ঠে এই সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে বক্তব্যের ভাষা খুবই আশাব্যঞ্জক হলেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা ঘটানো সম্ভব হবে, সেটাই হলো এখনকার আসল চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তারেক রহমান। তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতা অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। ফলে তারেক রহমানের সামনে বড় দায়িত্ব হলো—এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে কেবল অতীতের রাজনৈতিক স্মৃতি বা আবেগ দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এখন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্মকে ভালোভাবে বোঝা।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। সেটা হলো সংলাপ-সমঝোতা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ। রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন হয় ধারাবাহিক আচরণ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করার মধ্য দিয়ে। সভার মঞ্চে বক্তব্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও অবস্থান যদি বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ নেয়, তবেই তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এখন সেটাই করে দেখাতে হবে তারেক রহমান ও তাঁর দল বিএনপিকে।
তবে এ-ও মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ ও জনগণের দায়িত্বও কম নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন টেকসই হয় না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন সেই বৃহত্তর আলোচনাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি অপার সম্ভাবনা যেমন তৈরি করেছে, তেমনি দায়িত্বশীল রাজনীতির দাবিও জোরালো করেছে। সকলের প্রত্যাশা, এই প্রত্যাবর্তন যেন কেবল একটি প্রতীকী ঘটনা হয়ে না থাকে; বরং এটি যেন সত্যিই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেশবাসীর সামনে প্রতিফলিত হয়।

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’। একই সঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশে নিজের পরিকল্পনার কথাও সংক্ষেপে তুলে ধরলেন। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন এবং জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় বাধ্য হয়ে প্রবাসে থাকার পর তাঁর এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ের এক নতুন পর্বের সূচনা বলেই অনেকে দেখছেন। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। উঠেছে কিছু প্রশ্নও।
তারেক রহমানের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, তা হলো গণতন্ত্র, ঐক্য, উন্নয়ন, আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা। তিনি বলেছেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। আমরা চাই, সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব আমরা, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন।’
দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তাঁর কণ্ঠে এই সমঝোতা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে বক্তব্যের ভাষা খুবই আশাব্যঞ্জক হলেও, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটা ঘটানো সম্ভব হবে, সেটাই হলো এখনকার আসল চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বাইরে ছিলেন তারেক রহমান। তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক বাস্তবতা অনেক কিছুই বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। ফলে তারেক রহমানের সামনে বড় দায়িত্ব হলো—এই পরিবর্তিত বাস্তবতাকে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। বর্তমানে দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে কেবল অতীতের রাজনৈতিক স্মৃতি বা আবেগ দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এখন একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বর্তমান প্রজন্মকে ভালোভাবে বোঝা।
তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। সেটা হলো সংলাপ-সমঝোতা, আত্মসমালোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ। রাজনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন হয় ধারাবাহিক আচরণ, স্বচ্ছতা এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করার মধ্য দিয়ে। সভার মঞ্চে বক্তব্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও অবস্থান যদি বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ নেয়, তবেই তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এখন সেটাই করে দেখাতে হবে তারেক রহমান ও তাঁর দল বিএনপিকে।
তবে এ-ও মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ ও জনগণের দায়িত্বও কম নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের ন্যায্য প্রয়োগ নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন টেকসই হয় না। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন সেই বৃহত্তর আলোচনাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘটনা দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি অপার সম্ভাবনা যেমন তৈরি করেছে, তেমনি দায়িত্বশীল রাজনীতির দাবিও জোরালো করেছে। সকলের প্রত্যাশা, এই প্রত্যাবর্তন যেন কেবল একটি প্রতীকী ঘটনা হয়ে না থাকে; বরং এটি যেন সত্যিই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেশবাসীর সামনে প্রতিফলিত হয়।

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
২৬ মার্চ ২০২৫
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৫ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১২ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে ফেরা নতুন প্রত্যাশার সূচনা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম কেবল দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত নয়; এটি একটি আদর্শিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শন তিনি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক চর্চা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ধারণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ছিল না; বরং এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নৈতিক লড়াই।
সংগঠক থেকে নেতৃত্বে উত্তরণ
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে একটি তৃণমূলভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মীদের মূল্যায়নের ধারা দলের শক্তি দৃঢ় করে। এই কার্যকর সংগঠক সত্তা পরবর্তী সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও পরিপক্বতা আনতে সহায়তা করেছে। তিনি সব সময় দলীয় নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ কখনো নয়।
এক-এগারো ও নির্বাসনের রাজনীতি
২০০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মুখেও তিনি আপসহীন ছিলেন। চিকিৎসার অজুহাতে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলেও বাস্তবে এটি রাজনৈতিক নির্বাসনই ছিল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তিনি বিএনপিকে শুধু টিকিয়ে রাখেননি; দলকে ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। একাধিকবার দলকে নেতৃত্বশূন্য করার বা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে দল ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়; সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক রাজনীতি
তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক করেছেন। তাঁর মতে, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দলকে আদর্শিক পথে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শাসক বা সরকারের কাজ হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা; যারা এর বিপরীতে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণই শেষ সত্তা। তাই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সর্বদা জনগণকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
তারেক রহমান সব সময়ই তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষিত, মেধাবী ও চিন্তাশীল তরুণদের রাজনীতিতে আনার আহ্বান দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৌশল নির্ধারণ, সময়োপযোগী কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরা—এই নেপথ্যের নেতৃত্ব বিএনপিকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রেখেছে। তরুণদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন ধারণা, উদ্ভাবনী কৌশল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারে—এটাই তাঁর বার্তা।
২৫ ডিসেম্বর: একটি প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
গতকাল ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপি যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দীর্ঘ অপেক্ষা, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফুট এলাকায় প্রস্তুতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীদের আগমন প্রমাণ করে—তারেক রহমান আজও দলের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা, মাঠের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা—সবই তাঁর সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্ভব। পাশাপাশি, এটি সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভারসাম্য স্থাপন করবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে, ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর তাঁর উপস্থিতি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পুনর্গঠন এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নিশ্চয়ই সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্রহীন বাস্তবতা বড় বাধা। তবে দীর্ঘ সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আপসহীন অবস্থান তাঁকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। যদি প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়; এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ, নতুন নেতৃত্বের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের আশা—সবকিছুর একক চিহ্ন। এইসব প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক নবজাগরণের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে ফেরা নতুন প্রত্যাশার সূচনা করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের নাম কেবল দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত নয়; এটি একটি আদর্শিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শন তিনি উত্তরাধিকারের মাধ্যমে নয়, বরং রাজনৈতিক চর্চা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ধারণ করেছেন। তাঁর কাছে রাজনীতি কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ছিল না; বরং এটি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি নৈতিক লড়াই।
সংগঠক থেকে নেতৃত্বে উত্তরণ
তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি দলকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, সাংগঠনিক দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে একটি তৃণমূলভিত্তিক সংগঠনে পরিণত করেন। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ জোরদার করা এবং কর্মীদের মূল্যায়নের ধারা দলের শক্তি দৃঢ় করে। এই কার্যকর সংগঠক সত্তা পরবর্তী সময়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় আরও পরিপক্বতা আনতে সহায়তা করেছে। তিনি সব সময় দলীয় নীতি ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ কখনো নয়।
এক-এগারো ও নির্বাসনের রাজনীতি
২০০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক বাস্তবতায় দেশের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়লেও গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও জোরপূর্বক রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার মুখেও তিনি আপসহীন ছিলেন। চিকিৎসার অজুহাতে তাঁকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হলেও বাস্তবে এটি রাজনৈতিক নির্বাসনই ছিল। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তিনি বিএনপিকে শুধু টিকিয়ে রাখেননি; দলকে ভাঙনের হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। একাধিকবার দলকে নেতৃত্বশূন্য করার বা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তাঁর ধৈর্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে দল ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন—নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়; সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক রাজনীতি
তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকেন্দ্রিক করেছেন। তাঁর মতে, দেশের চলমান সংকটের মূল কারণ জনগণের ভোটাধিকার হরণ। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া টেকসই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।
তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণমুক্ত করার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এটি রাজনৈতিক দলকে আদর্শিক পথে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
শাসক বা সরকারের কাজ হলো জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা; যারা এর বিপরীতে কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণই শেষ সত্তা। তাই তারেক রহমানের রাজনীতিতে সর্বদা জনগণকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়।
তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ
তারেক রহমান সব সময়ই তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার পক্ষে ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। শিক্ষিত, মেধাবী ও চিন্তাশীল তরুণদের রাজনীতিতে আনার আহ্বান দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কৌশল নির্ধারণ, সময়োপযোগী কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংকট তুলে ধরা—এই নেপথ্যের নেতৃত্ব বিএনপিকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রেখেছে। তরুণদের অংশগ্রহণ দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে নতুন ধারণা, উদ্ভাবনী কৌশল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণ ঘটাতে পারে—এটাই তাঁর বার্তা।
২৫ ডিসেম্বর: একটি প্রতীকী প্রত্যাবর্তন
গতকাল ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে বিএনপি যে সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দীর্ঘ অপেক্ষা, আবেগ এবং রাজনৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফুট এলাকায় প্রস্তুতি এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীদের আগমন প্রমাণ করে—তারেক রহমান আজও দলের রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা, মাঠের রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা—সবই তাঁর সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে সম্ভব। পাশাপাশি, এটি সরকারবিরোধী রাজনীতিতে ভারসাম্য স্থাপন করবে। তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন সাধারণ জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে, ভোটাধিকার ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে। দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার পর তাঁর উপস্থিতি দলের ভেতরে নেতৃত্ব পুনর্গঠন এবং সংহতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নিশ্চয়ই সামনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং গণতন্ত্রহীন বাস্তবতা বড় বাধা। তবে দীর্ঘ সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও আপসহীন অবস্থান তাঁকে এগিয়ে যেতে শক্তি দেবে। যদি প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়; এটি গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ, নতুন নেতৃত্বের শক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের আশা—সবকিছুর একক চিহ্ন। এইসব প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক নবজাগরণের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
২৬ মার্চ ২০২৫
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৫ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১২ ঘণ্টা আগেবিধান রিবেরু

ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওদার্নো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা জানেন। তো মধ্যযুগীয় সেই বর্বর সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। সামাজিক উদ্বেগ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অর্থনৈতিক করুণাবস্থা, মহামারি সামাল দিতে না পারা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা। সবকিছু মিলিয়ে তখন সমাজের মানুষের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছিল, পাশাপাশি তাদের ছিল না জ্ঞানের আলো, কাজেই খুব সহজে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল নারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের। তবে সপ্তদশ শতকের শেষ দিক থেকে যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটছে, যখন আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে এবং যখন মানুষ ধর্মের অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করেছে, তখন ইউরোপীয় সমাজে পুড়িয়ে মারার প্রবণতাও কমে এসেছে। তারপরও বলা যাবে না, তারা পুরোপুরি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একবিংশ শতকের বাংলাদেশে ইউরোপের সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে এল কেন?
এই প্রশ্নটির উত্তর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫০০ বছর আগের বাস্তবতার ভেতরেই এর উত্তর নিহিত রয়েছে। সেই উত্তর মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া, গণমাধ্যমে আসা কিছু ভয়াবহ ঘটনা উল্লেখ করা যাক। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও আগুন লাগায় মিছিল নিয়ে আসা একদল লোক। তো এই মব বা দঙ্গল, যাই বলি না কেন, তাদের কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সেখান থেকে বিদেশিসহ ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক ঘটনা হলো, এই মব নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং পরে তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে পোড়ানো হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটূক্তির নজির তারা পায়নি।
এই ঘটনার পরদিনই, ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘরের ভেতর আগুনে পুড়ে মারা যায় ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের মেয়ে। এ ছাড়া ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে আগুনে দগ্ধ হন।
এসব ঘটনার ভেতর আরও এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত, বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়তো লেখা হয়ে যেত কালো অধ্যায়টির নাম, শিরোনাম হতো ‘পুড়িয়ে মারা হলো ৩০ জন সাংবাদিককে’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর এই আয়োজনটাই করা হয়েছিল। সেদিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার—এই দুই পত্রিকা অফিসের সামনে আগে মব জড়ো হয় এবং পরে অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ভেতরে আটকে পড়াদের যখন ফায়ার সার্ভিস বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় এই দঙ্গলবাজরা। উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, যেন ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক পুড়ে মারা যান। নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে এই সাক্ষ্য দেন।
একই সময়ে (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছায়ানট ভবনেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ভবনের ভেতর থাকা নালন্দা স্কুলের শিশুদের জন্য রাখা আসবাব ও বইপত্রও রেহাই পায়নি। ঠিক পরদিনই (১৯ ডিসেম্বর) আগুন লাগানো হয় আরেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসে। সৌভাগ্যের বিষয় যে, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ের ভেতরে কেউ ছিল না।
বলা হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাকি পত্রিকা অফিস ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাট করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ওসমান হাদি। প্রচারের সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের জীবনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি, বিশেষ করে প্রশাসন। ১২ ডিসেম্বর হাদিকে গুলি করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালান। তাঁর দাবি, এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিলেন।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। তবে সবচেয়ে বেশি বর্বরতা বোধ হয় ছবি ও পরিচয় জানার পরও প্রধান আসামিদের ধরতে না পারা। যারা হাদিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলো এবং হত্যাকারীদের ধরতে পারল না, রাগ-ক্ষোভ তাদের ওপর হলো না, রাগ হলো বইপত্র, হারমোনিয়াম ও তবলার ওপর!
একেই বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে। হাদিকে হত্যার পেছনে রয়েছে জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। হাদির ওপর রাজনৈতিক হামলা ও হত্যার বিচার সবাই চান, কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে কেন গণমাধ্যম বা সাংস্কৃতিক সংগঠন আক্রান্ত হবে? কেনই-বা সেগুলোর ভেতর লুটপাট চালানো হবে, সেটা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।
নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না, তেমনি যারা আগুন নিয়ে খেলছে, তাদের হাতও যে অরক্ষিত থাকবে, সেটিও হলফ করে বলা যায় না। চট্টগ্রামেও আমরা দেখি, পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে চারটি হিন্দু পরিবারের ঘরের দরজা আটকে বাইরে থেকে আগুন দেওয়া হয়। সবশেষ ২৩ ডিসেম্বর ভোরে রাউজান উপজেলার পৌর শহরে পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আগুনের পর আক্রান্তরা টিন ও বাঁশের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির ভেতর বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, পূর্বের ভয়ের সংস্কৃতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে সচেতনভাবে। কখনো রগ কেটে, কখনো গুম-খুন করে, কখনোবা পুড়িয়ে মেরে এই ভীতির রাজনীতি সচল রাখা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। স্বাধীন মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, এখন কেউ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের সামনে এসে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে লোকজন বলছে ঘরে ঘরে গিয়ে সাংবাদিকদের হত্যা করার কথা। প্রশাসন নির্বিকার! মোটা দাগে দেখলে, এমন হুমকি, নৃশংসতা ও বর্বরতার পেছনে বর্তমান সময়ের ঝঞ্ঝামুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। তা ছাড়া আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার অবস্থাও করুণ। আসল কথা হলো, জ্ঞানের আলো থেকে এখনকার সাধারণ মানুষ বহুদিন ধরেই বঞ্চিত। এই বঞ্চনা একদিকে মানুষের ভেতর হিংস্রতার জন্ম দিচ্ছে, আরেক দিকে তাদের ভেতর যুক্তিসিদ্ধ চিন্তা করার ক্ষমতাও লোপ করে দিচ্ছে। তারা পরিণত হচ্ছে হিংস্র জড় পদার্থে। তাই মানুষকে কুকুর-বিড়ালের মতো পিটিয়ে মেরে, পুড়িয়ে ফেলতে তাদের একবিন্দুও আটকাচ্ছে না। আদতে তারা আর মানুষ নেই। মানুষ গড়ার কারিগর যারা, সেই শিক্ষকেরাও আজ চরমভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হচ্ছেন। যে সমাজে শিক্ষকদের সঙ্গে নির্বিচারে অসম্মান করা হয়, রাষ্ট্র ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষ থেকে, সে দেশে মানুষ গড়বে কে? আর মানুষই-বা হবে কারা? গভীর সংকটে বাংলাদেশ।

ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওদার্নো ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কথা জানেন। তো মধ্যযুগীয় সেই বর্বর সময়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করেছে। সামাজিক উদ্বেগ, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অর্থনৈতিক করুণাবস্থা, মহামারি সামাল দিতে না পারা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা। সবকিছু মিলিয়ে তখন সমাজের মানুষের ভেতর প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছিল, পাশাপাশি তাদের ছিল না জ্ঞানের আলো, কাজেই খুব সহজে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিল নারী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের। তবে সপ্তদশ শতকের শেষ দিক থেকে যখন বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটছে, যখন আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার হচ্ছে এবং যখন মানুষ ধর্মের অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করেছে, তখন ইউরোপীয় সমাজে পুড়িয়ে মারার প্রবণতাও কমে এসেছে। তারপরও বলা যাবে না, তারা পুরোপুরি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই একবিংশ শতকের বাংলাদেশে ইউরোপের সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরে এল কেন?
এই প্রশ্নটির উত্তর নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। ৫০০ বছর আগের বাস্তবতার ভেতরেই এর উত্তর নিহিত রয়েছে। সেই উত্তর মাথায় নিয়ে, বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ঘটে যাওয়া, গণমাধ্যমে আসা কিছু ভয়াবহ ঘটনা উল্লেখ করা যাক। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও আগুন লাগায় মিছিল নিয়ে আসা একদল লোক। তো এই মব বা দঙ্গল, যাই বলি না কেন, তাদের কয়েকজন নিচতলায় পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে হোটেলটির কয়েকটি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সেখান থেকে বিদেশিসহ ২১ জনের দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘তৌহিদি জনতা’ পরিচয়ে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার কবর, বাড়ি ও দরবার শরিফে হামলার ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক ঘটনা হলো, এই মব নুরুল হকের মরদেহ কবর থেকে তুলে মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং পরে তাঁকে গাছে ঝুলিয়ে পোড়ানো হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটূক্তির নজির তারা পায়নি।
এই ঘটনার পরদিনই, ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ঘরের ভেতর আগুনে পুড়ে মারা যায় ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের মেয়ে। এ ছাড়া ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে আগুনে দগ্ধ হন।
এসব ঘটনার ভেতর আরও এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত, বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়তো লেখা হয়ে যেত কালো অধ্যায়টির নাম, শিরোনাম হতো ‘পুড়িয়ে মারা হলো ৩০ জন সাংবাদিককে’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর এই আয়োজনটাই করা হয়েছিল। সেদিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার—এই দুই পত্রিকা অফিসের সামনে আগে মব জড়ো হয় এবং পরে অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ভেতরে আটকে পড়াদের যখন ফায়ার সার্ভিস বাঁচাতে এগিয়ে আসে, তাদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় এই দঙ্গলবাজরা। উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট, যেন ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক পুড়ে মারা যান। নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর নিজের দেখা অভিজ্ঞতা থেকে এই সাক্ষ্য দেন।
একই সময়ে (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ছায়ানট ভবনেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ভবনের ভেতর থাকা নালন্দা স্কুলের শিশুদের জন্য রাখা আসবাব ও বইপত্রও রেহাই পায়নি। ঠিক পরদিনই (১৯ ডিসেম্বর) আগুন লাগানো হয় আরেক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অফিসে। সৌভাগ্যের বিষয় যে, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ের ভেতরে কেউ ছিল না।
বলা হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাকি পত্রিকা অফিস ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে আগুন ও লুটপাট করা হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ওসমান হাদি। প্রচারের সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সময়ে নিজের জীবনের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি, বিশেষ করে প্রশাসন। ১২ ডিসেম্বর হাদিকে গুলি করা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্যে থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালান। তাঁর দাবি, এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচারণার টিমে যোগ দিয়েছিলেন।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বর্বরোচিত। তবে সবচেয়ে বেশি বর্বরতা বোধ হয় ছবি ও পরিচয় জানার পরও প্রধান আসামিদের ধরতে না পারা। যারা হাদিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলো এবং হত্যাকারীদের ধরতে পারল না, রাগ-ক্ষোভ তাদের ওপর হলো না, রাগ হলো বইপত্র, হারমোনিয়াম ও তবলার ওপর!
একেই বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে। হাদিকে হত্যার পেছনে রয়েছে জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এর পরিবর্তন হওয়া জরুরি। হাদির ওপর রাজনৈতিক হামলা ও হত্যার বিচার সবাই চান, কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে কেন গণমাধ্যম বা সাংস্কৃতিক সংগঠন আক্রান্ত হবে? কেনই-বা সেগুলোর ভেতর লুটপাট চালানো হবে, সেটা একটু ভাবলেই বোঝা যায়।
নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না, তেমনি যারা আগুন নিয়ে খেলছে, তাদের হাতও যে অরক্ষিত থাকবে, সেটিও হলফ করে বলা যায় না। চট্টগ্রামেও আমরা দেখি, পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে চারটি হিন্দু পরিবারের ঘরের দরজা আটকে বাইরে থেকে আগুন দেওয়া হয়। সবশেষ ২৩ ডিসেম্বর ভোরে রাউজান উপজেলার পৌর শহরে পশ্চিম সুলতানপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আগুনের পর আক্রান্তরা টিন ও বাঁশের বেড়া কেটে ঘর থেকে বের হয়ে যান।
যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির ভেতর বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার, পূর্বের ভয়ের সংস্কৃতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে সচেতনভাবে। কখনো রগ কেটে, কখনো গুম-খুন করে, কখনোবা পুড়িয়ে মেরে এই ভীতির রাজনীতি সচল রাখা হচ্ছে কয়েক দশক ধরে। স্বাধীন মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, এখন কেউ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা পর্যন্ত পাচ্ছে না। পত্রিকা অফিসের সামনে এসে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে লোকজন বলছে ঘরে ঘরে গিয়ে সাংবাদিকদের হত্যা করার কথা। প্রশাসন নির্বিকার! মোটা দাগে দেখলে, এমন হুমকি, নৃশংসতা ও বর্বরতার পেছনে বর্তমান সময়ের ঝঞ্ঝামুখর রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। তা ছাড়া আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার অবস্থাও করুণ। আসল কথা হলো, জ্ঞানের আলো থেকে এখনকার সাধারণ মানুষ বহুদিন ধরেই বঞ্চিত। এই বঞ্চনা একদিকে মানুষের ভেতর হিংস্রতার জন্ম দিচ্ছে, আরেক দিকে তাদের ভেতর যুক্তিসিদ্ধ চিন্তা করার ক্ষমতাও লোপ করে দিচ্ছে। তারা পরিণত হচ্ছে হিংস্র জড় পদার্থে। তাই মানুষকে কুকুর-বিড়ালের মতো পিটিয়ে মেরে, পুড়িয়ে ফেলতে তাদের একবিন্দুও আটকাচ্ছে না। আদতে তারা আর মানুষ নেই। মানুষ গড়ার কারিগর যারা, সেই শিক্ষকেরাও আজ চরমভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হচ্ছেন। যে সমাজে শিক্ষকদের সঙ্গে নির্বিচারে অসম্মান করা হয়, রাষ্ট্র ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষ থেকে, সে দেশে মানুষ গড়বে কে? আর মানুষই-বা হবে কারা? গভীর সংকটে বাংলাদেশ।

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
২৬ মার্চ ২০২৫
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৫ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৫ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী।
১২ ঘণ্টা আগেতারেকের প্রত্যাবর্তন: অভিমত
অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে, আজ থেকে ছয় দশক আগে। বাবা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মা বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাই জন্মসূত্রে তারেক বিরল ভাগ্যের অধিকারী। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছেন, সেদিন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা তিনি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছেন। বহু প্রতিভার অধিকারী বাবা জিয়াউর রহমান কীভাবে চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করে দেশকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তাও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। মা খালেদা জিয়া হলেন তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু। রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদ প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন বিএনপির খুব দুঃসময়। হাল ধরলেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন, নবাগত তাঁর মা কীভাবে ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। তৃণমূল সম্মেলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হন, যা ছিল তাঁর জন্য মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাঁর পরিবার থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার ঝুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার কাজে সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। অতঃপর এই অঙ্গনে তাঁর কর্মকাণ্ড ছিল নিরন্তর প্রবহমান। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশব্যাপী প্রচার-কার্যক্রম পরিচালনার পাঠ গ্রহণ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে আধুনিক ও কার্যকর প্রচারের কৌশল প্রণয়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিএনপির অমিত সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুদয় ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। ২০০৯ সালে দলের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও যুবসমাজকে রাজনীতির প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দলের ভেতরে ও দেশবাসীর কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার কারাবন্দী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্থলে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে রয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। কখনো সংগ্রাম সফলতার মুখ দেখে, আবার কখনো-বা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নেতাকে অপশক্তির রোষানলে পড়তে হয়। কৈশোরের অনুরূপ তারেক রহমানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পথ চলাও নিয়ত সরলরৈখিক হয়নি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে যে সেনা সরকার এসেছিল, তা জরুরি অবস্থা জারি করে বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনী এবং টাস্কফোর্সের নামে হামলা-মামলা, জুলুম ও নির্যাতন চালায়। দেশনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই নির্যাতন ও জুলুমের শিকার নেতা-কর্মীদের মধ্যে তারেক রহমানের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের মাত্রা ও ধরন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ৭ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেপ্তারের পর তাঁর ওপর নেমে আসে পৈশাচিক নির্যাতন। এই আক্রমণ তাঁর প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছিল। তিনি ভাগ্যক্রমে এবং দেশবাসীর দোয়ায় বেঁচে যান। ৭ মার্চ ২০০৭ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এটি তাঁর জন্য একদিক থেকে যেমন নির্বাসনের যন্ত্রণা ভোগের শামিল, অন্যদিক থেকে দুঃসময়ের মুখোমুখি হয়ে তাঁর নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করার একটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। রাজনৈতিক জীবনের এই আঁকাবাঁকা পথ চলায় তিনি যে জীবনমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা তাঁর বর্তমান পথ চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব পালন করার সময় তাঁর এই অভিজ্ঞতার সুবাদে সূচিত হতে পারে বাংলাদেশে সুস্থ রাজনীতির গতিধারা। পৃথিবীর স্বনামধন্য রাজনীতিকগণের জীবন ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, তাঁদের অনেকেরই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা ও চড়াই-উতরাই পার হওয়ার করুণ কাহিনি। সুখ-দুঃখের এই মিশ্র অভিজ্ঞতাগুলো তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে। তারেক রহমানের রয়েছে নির্যাতনের দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করার অভিজ্ঞতা। রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সফলতম রাষ্ট্রনায়ক পিতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের করুণ কাহিনি প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা। আরও রয়েছে মা খালেদা জিয়ার ৪০ বছর যাবৎ বসবাস করা নিজ বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হওয়ার করুণ অভিজ্ঞতা। প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের ওপর ঘটে যাওয়া অসংখ্য নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি তো রয়েছেই। এই অভিজ্ঞতাগুলো তারেক রহমানকে করে তুলেছে এক সর্বংসহা রাজনীতিক হিসেবে। তাঁর মধ্যে এমন এক বোধ তৈরি হয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য করে তুলেছে।
সুতরাং বলা যায়, যে অভিজ্ঞতাগুলো একজন মানুষকে ব্যক্তি, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অন্তর্নিহিত মর্মার্থ উপলব্ধিতে সাহায্য করে, তারেক রহমান সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতির পঙ্কিল পথে নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার-আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণে এর চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে কি? বোধ করি নেই।
এখন প্রয়োজন হলো, এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হওয়া, যার স্বপ্ন নিয়ে এ দেশ রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছিল এবং যার সূচনা করেছিলেন তাঁরই পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন, সেদিন থেকেই এই স্বপ্ন পূরণের বাস্তব এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। প্রতিশোধের অগণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে তারেক রহমান জাতির উদ্দেশ্যে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকবে, সেটাই জাতির প্রত্যাশা। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির ফিরে আসা নয় বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে এক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের এক সুবর্ণ সুযোগ।
অন্তর্বর্তী সরকার তারেক রহমানসহ সকল রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে এই সুযোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা উচিত। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বজায় থাকলে প্রতিহিংসার বিপরীতে গণতান্ত্রিক ইতিবাচক প্রতিযোগিতার বিজয় অনিবার্য।
লেখক: অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
২৬ মার্চ ২০২৫
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে এলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের মাটিতে নেমেই কিংবদন্তিপ্রতিম মার্কিন নাগরিক অধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিংয়ের (জুনিয়র) অনুকরণে বললেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি’।
৫ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘ ১৭ বছর ৩ মাস ১৫ দিনের নির্বাসিত জীবন শেষে গতকাল ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি শুধুই একজন রাজনৈতিক নেতার স্বদেশে ফেরা নয়; এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এক প্রতীকী মুহূর্ত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নির্যাতন ও নির্বাসনের পর তাঁর দেশে...
৫ ঘণ্টা আগে
ইউরোপে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত ডাইনি শিকার বা উইচ হান্টের নামে ৫০-৬০ হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। যাদের মারা হয়, লক্ষ করার বিষয়, সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণি। নারী, সংখ্যালঘু বা ভিন্নমতের মানুষদেরই পুড়ে মরতে হয়েছে বেশি। আপনারা নিশ্চয়ই ষোড়শ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয় দার্শনিক...
৫ ঘণ্টা আগে