এস এম মাসুম বিল্লাহ

‘যাইবার কোনো জায়গা তো নাই রে. .
নাই আর কোন মান-সম্মান...
চন্দ্র-সূর্য যত বড়
আমার দুঃখ তার সমান...’
—শহীদুল্লাহ ফরায়জী/বারী সিদ্দিকী।
পরীমণিকে তৃতীয় দফা ‘রিমান্ডে’ নেওয়া হয়েছে। এই তৃতীয় দফা রিমান্ডের আইনি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংবিধানিকতা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। একদিক দিয়ে দেখলে পরীমণির দুঃখ ‘চন্দ্র-সূর্যের সমান’। তাঁর মান-সম্মান নিয়েও চলছে টানাটানি।
কথাটা পাড়ার অজুহাত ওই মান-সম্মানের জায়গায়। তাঁর মান-সম্মানের ক্ষতি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগপ্রসূত ক্ষতির চেয়েও বেশি। আমি আইনের ছাত্র। আইনের অ-আইনসুলভ প্রয়োগে ব্যথিত হই, ছাত্রদের সামনে সংবিধান ক্লাসে হাজির হওয়ার মনের জোর কমে। বইয়ে লেখা আইন আর প্রায়োগিক আইনের কোনো মিল পাই না। ছাত্রদের সামনে কথা হাতড়াই।
আমরা ওই ১৭৬৫ সালেই আছি। ওই বছর বাড়ি তল্লাশি করার আইনি পরিধি (পাঠক একটু ‘পান’ যুক্ত করার জন্য ‘পরী-ধি’ পড়তে পারেন) সংক্রান্ত মামলায় লর্ড ক্যামডেন তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি করেন, ‘কোনো আইন, আইন কিনা, তা নিরূপণে দেখতে হবে সেটা আইনি কেতাবে আছে কিনা। যদি থাকে, তবে তা আইন। আর যদি না থাকে, তবে তা আইন নয়।’
ইংল্যান্ডের এই মামলা আইনের বাজারে অ্যান্টিক ভার্সেস ক্যারিংটন (১৭৬৫) নামে নাজেল আছে। বাংলাদেশের আইনের তালেবে-এলেমরা তাঁদের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইনের ক্লাসে ওই মামলা যত্ন করে জপ করেন। মার্কিন সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীতে ক্যামডেন-দর্শনের প্রভাব আছে বলে অনেক পণ্ডিত নিবেদন করে থাকেন।
এবার দেখি আমাদের আইনে কী আছে। রাষ্ট্রের একটা সর্বোচ্চ মান-আইন থাকে। সেখানে যা লেখা থাকে, তাকে ‘মান-মন্দির’ বলা যায়। কারণ সংবিধানে বিধৃত কথাকে ইংরেজিতে বলে ‘এন-শ্রাইন’! পুরোনো আচারের লোকজন একে ‘শাসনতন্ত্র’ আর কলিকালের লোকজন একে ভালোবেসে ডাকেন ‘সংবিধান’ বলে। রক্ত, ঘাম ও অশ্রু দিয়ে ১৯৭২ সালে লেখা আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও একটি সংবিধান রয়েছে। উক্ত সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে আমরা লিখেছি, ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও মানব মর্যাদা এবং ব্যক্তিসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা হবে।’
মানব মর্যাদা পরম সুন্দর একটি জিনিস। এগারোর ভাষা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, মানব মর্যাদা নিজেই যেমন একটা গুণ, তেমনি একটা রাষ্ট্রিক মূল্যবোধ। ভারতের নমস্য বিচারপতি কৃষ্ণা আয়ার ১৯৮০ সালে ‘প্রেম শংকর বনাম দিল্লি প্রশাসন’ মামলায় ‘মানব মর্যাদার নিশ্চয়তাকে ভারতের সাংবিধানিক সংস্কৃতির অংশ’ বলে মন্তব্য করেন। আমাদের ঐতিহ্যও এর আলাদা কিছু হওয়ার নয়। দুঃখজনকভাবে, মানব সত্তার মর্যাদা, মৌলিক অধিকার নামের নকশিকাঁথা আমরা ভালোভাবে বুনতে পারিনি।
এখন দেখি সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ কী বলতে চাইছে। সেখানে বলা আছে—আইন অনুযায়ী খাতির (ব্যবহার) পাওয়ার অধিকার সবার আছে। শাস্ত্রমতে, আইনও আইন, আইনের ব্যবহারটাও আইন। তাই এর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ‘ট্রিট’। আর আইনবিজ্ঞানের আরেক নাম ‘ব্যবহারশাস্ত্র’। পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। তাই আমরা স্বাধীন হয়ে নিজেদের বানানো সংবিধানে ভালো ব্যবহারকেও আইনের অংশ করেছি। এর অন্যথা হলে তা আমাদের ‘প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার’ (প্রস্তাবনা, সংবিধান) সঙ্গে যায় না।
একত্রিশ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (in accordance with law) কথাটা দুবার বলা আছে। দুবার বলার অর্থ হলো আইনটিকে যেমন ভালো হতে হবে, আইনের ব্যবহারবিধিও ভালো হতে হবে। বিশেষ করে বলা আছে—আইনের বিধান ব্যতিরেকে মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, শরীর, সুনাম ও সম্পত্তির জন্য হানিকর কোনো কাজ রাষ্ট্র করবে না। আগেই বলেছি, এই আইনকে সাংবিধানিক মানদণ্ডে পদ্ধতিগত ও মৌলিক মানে উত্তীর্ণ হতে হয়। মার্কিন মুলুকে এর নাম ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট রাইট বা ডিউ প্রসেস ক্লজ। ব্রিটেনে পরিচয় ‘রুল অব ল’ বলে। আর ভারতে এটি জারি আছে আইনের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুসৃত হওয়ার অধিকার হিসেবে (procedure established by law—অনুচ্ছেদ ২১, ভারতীয় সংবিধান)।
আমাদের সংবিধানবিজ্ঞানের প্রধান পুরোহিত মাহমুদুল ইসলাম তাঁর ‘বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন’ (মল্লিক ব্রাদার্স, ২০১২) বইয়ে লিখেছেন, একত্রিশ নম্বরের আওতা ও পরিধি আমেরিকার ডিউ প্রসেস থেকেও ব্যাপক ও বেশি ইঙ্গিতপূর্ণ।
এর পর আমরা নজর দিই আমাদের সংবিধানের তেতাল্লিশ নম্বর অনুচ্ছেদে। সেখানে আমরা লিখেছি, জন নৈতিকতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রশ্নে যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে একজন নাগরিক তার বাড়িতে প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক হতে সুরক্ষিত থাকবেন। জন নৈতিকতার কোনো সংজ্ঞা সেখানে নেই। তবে ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে গণিকাবৃত্তি ও জুয়া খেলাকে জন নৈতিকতা বিরোধী কাজের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। আর আরোগ্যের প্রয়োজনে বা আইন অনুমোদিত অন্য প্রয়োজনে মদ্য, মাদক পানীয় ও স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজ ব্যবহার করাকে জনস্বাস্থ্য বিরুদ্ধ কাজের উদাহরণ হিসেবে ১৮ অনুচ্ছেদে দেখানো হয়েছে। পশ্চিমা দার্শনিক নোম চমস্কি জন নৈতিকতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি—এ ধরনের অজুহাতকে ‘পাওয়ারফুল সেমান্টিক টুলস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এমনিতেই আমাদের সমাজের মানুষ ‘মদ’ শব্দটাকেই ম্লেচ্ছ মনে করেন। কিন্তু যখন একে কেউ ‘শরাব’ বলেন, তখন তাতে তারা কাব্য খুঁজে পান। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ ‘বুক’ বললে নারীর ক্ষেত্রে সেটাকে ‘স্তন’ বোঝেন, দুধ বললেও নারীর ক্ষেত্রে তাঁরা ‘স্তন’-কেই বোঝেন। বহু নিরীহ শব্দকেও এই সমাজে ভাষিক সহিংসতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি নারী হন তাহলে ঠেকায় কে?
পুলিশ কর্তৃক মদ উদ্ধারের খবর বা ভুল শব্দ প্রয়োগ তাই ‘রগরগে’ বিচারের (erotic justice) ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। ‘মিনিবার’ শব্দটাও এই সমাজ-মানসে সমান অবমাননাকর। এদিক দিয়ে ভাবলে বলা যায়, এহেন সমাজে জন-নৈতিকতার মতো কোনো দোদুল্যমান মতবাদকে মাপকাঠি ধরার কোনো সুযোগ নেই। যদি থাকেও, সেটাকে হতে হবে বিচারিক মন প্রয়োগ করে আরও সুনির্দিষ্ট, সুসংহত ও যুক্তিপূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত।
তাহলে পরীমণির ঘরে যদি ‘মদ’ থেকে থাকে, এবং তিনি যদি অনুমোদনের ক্ষেত্রগুলো দেখাতে ব্যর্থ হন, তাঁর বিরুদ্ধে স্বাভাবিক আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কিছুদিন আগে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন আগ্রাসনের অভিযোগ এনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা, ঘরে অবস্থানরত মা–বাবাহীন এক নারীর বাসায়, বিনা ওয়ারেন্টে সিভিল পোশাকে পরিচয় যথার্থভাবে না দিয়েই ঘরে ঢুকে পুলিশি (RAB) তল্লাশি করা এবং তাঁকে আটক করা—প্রতিষ্ঠিত গ্রেপ্তার সংক্রান্ত আইন সমর্থন করে না। ফৌজদারি আইনে (১৮৯৮) আছে, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পরোয়ানা নিয়ে বা শর্ত সাপেক্ষে পরোয়ানা ছাড়া একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা যাবে। কিন্তু আইনে যা নেই, তা হলো—
(১) সাদা পোশাকে একজনকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া;
(২) বাড়ি প্রবেশ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানানো;
(৩) গৃহে প্রবেশের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে না চাওয়া;
(৪) ওয়ারেন্টসহ এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের মধ্যে কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য পার্থক্য না করে হরহামেশা এর যত্র-তত্র ব্যবহার করা;
(৫) তল্লাশি চলাকালে বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সরাসরি মিডিয়াতে প্রচার করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটা ‘মিডিয়াক্র্যাসি’ তৈরি করা;
(৬) তল্লাশি শেষ হওয়ার আগেই জব্দ আলামতের মোবাইল ক্লিপ সাংবাদিকদের সরবরাহ করা;
(৭) ভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি থেকে যৌনতা সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র উদ্ধার করে সেগুলোকে একজন নারীসহ-অভিযুক্তের বাসা থেকে জব্দ দ্রব্যের সঙ্গে একাকার করে রেখে গণমাধ্যমে ডিসপ্লে (media parade) করতে দেওয়া;
(৮) পুলিশি হেফাজতে ২৪ ঘণ্টা রাখতে পারার যে আইনি সুবিধা আছে, তার সুযোগ নিয়ে খোদ রাজধানীতেই গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোনো রেকর্ডেড কারণ ছাড়াই থানা-হেফাজতে (RAB Headquarter) কড়ায়-গন্ডায় পূর্ণ করে ২৪ ঘণ্টা (বা তার কিছু কম–বেশি) রাখা।
আর যেটা সংবিধানে নেই তা হলো, সংশোধন ধাঁচের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনকে (২০১৮) শাস্তি জর্জরিত ফৌজদারি আইন হিসেবে প্রণয়ন করে, তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারে মানুষ মেরে ফেলা।
তাহলে আইনে কী আছে, আর কী নেই—তা আপনারা জানলেন। যেহেতু ‘নেই’–এর তালিকা দীর্ঘ, এবং এর এমনকি মাত্র একটির সদুত্তরও যদি রাষ্ট্রের কাছে না থাকে, তাহলে পরীমণির গ্রেপ্তার আইনসম্মত হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়। স্মরণ রাখা দরকার—পরীমণির বাসা তন্ন তন্ন (ransack) করাকে র্যাব ও মিডিয়ার ভাষায় ‘অভিযান’ (তল্লাশি নয়) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানের জনকগণ তাঁদের কানুনি কল্পনায় ‘অভিযান’–এর ধারণাকে আনতেই পারেননি।
তাই লর্ড ক্যামডেন-এর থিওরিতে পুলিশ-প্রসূত এই ফৌজদারি আইন, আইন নয়। আগেই উল্লেখ করেছি, মানব-মর্যাদার অধিকার ও সুনামের অধিকার আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত স্বতন্ত্র মৌলিক অধিকার। সে জন্যে ফৌজদারি আইনের গ্রেপ্তার–সংক্রান্ত বিধান দিয়ে এগুলোকে কেড়ে নেওয়া যায় না। বরং ওই গ্রেপ্তার পদ্ধতি মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ না হওয়ায় সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিত্যাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সম্প্রতি এক মামলায় ওয়ারেন্ট ছাড়া বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আমাদের দেশেও এটা হওয়া প্রয়োজন। যেমন বিনা ওয়ারেন্টে বাড়ি তল্লাশির একটা গ্রহণযোগ্য ক্ষেত্র হলো জঙ্গি দমন অভিযান। হয়তো ক্ষেত্রগুলো কিছুটা সুনির্দিষ্ট করা আছেও, আমি গভীরভাবে খতিয়ে দেখে পড়ার সময় পাইনি।

এটা শুধু পরীর কারণে নয়, বরং ভবিষ্যতে যাতে এর ব্যবহার ‘ক্রসফায়ার’–এর ব্যবহারের মতো স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত না হয়, সে জন্যে করা দরকার। র্যাব কর্তৃক সংজ্ঞায়িত এবং পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মীয় মতবাদ প্রাধান্যময় সমাজে রাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী ক্ষমতা একজন নারী-শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে হইহই রৈরবে—এটা সমাজে ভুল বার্তা দেবে। কেউই আমরা এর কুফল এড়াতে পারব না; সে আজ হোক বা কাল।
পরীকে আটকের দিন এক টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন দেশের বিচারকেরা বলে রেখেছেন, গ্রেপ্তার যদি নির্দিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ না করে, তবে তা গ্রেপ্তার নয়। এটা পুলিশি কার্যক্রমের গোড়ায় আঘাত করে এবং পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই অর্থহীন করে ফেলে।
আমাদের আইনি সংস্কৃতিতে আরেক অদ্ভুত জিনিসের নাম ‘রিমান্ড’। সংবিধানে নেই, ফৌজদারি আইনে নেই, কিন্তু বিচারের হাটে রয়েছে এর সানন্দ উপস্থিতি। নাটকের অঙ্কের মতো পুলিশ আসামি ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে। পাঁচ-দশদিন ‘রিমান্ড’ চায়। ম্যাজিস্ট্রেট প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে ‘পরী-মিতি’ বোধের পরিচয় না দিয়েই অব্যর্থভাবে প্রার্থিত সময়ের চেয়ে দু–একদিন কমিয়ে আসামিকে রিমান্ড দেন। আর গণমাধ্যমে রটে যায় আদালত ‘রিমান্ড’ মঞ্জুর করেছেন! কত মানুষকে যে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তার হিসাব নেই! অথচ উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন কীভাবে, কখন একজন অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়া যাবে (দেখুন, ব্লাস্ট মামলা, ২০১৬)। সরকার মানেনি। সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়ে আপিল করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল রিমান্ড অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সুরক্ষার গাইডলাইনগুলোকে।
তো এভাবে চলছে। আচ্ছা, পরীমণিকে কি তাঁর আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ? সেটাই তো হওয়ার কথা ছিল, নাকি? যে কর্মকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, তিনি কি রাগী, নাকি তিনি সুন্দর করে কথার জাল বুনে পরীকে ফাঁদে ফেলতে পারেন? এভাবে প্রাপ্ত সাক্ষ্যের সাক্ষ্যগত মূল্য কী? সে সত্য কি কাননের বিষাক্ত বৃক্ষের ফল (fruit of the poisonous tree), নাকি টিভি-স্ক্রলে ঘন ঘন মিটির মিটির উঠতে-নামতে থাকা ব্রেকিং নিউজ? ব্যক্তিজীবনের ‘অনৈতিকতা’ খারাপ, কিন্তু সেটা রোধে রাষ্ট্রের ‘পরহেজগারি’ সমানভাবে খারাপ। এর পরিধি ঠিক না করতে পারলে সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য খারাপ পরিণাম ডেকে আনে, এবং আনবে। ফৌজদারি আইন ও সাংবিধানিক আইন বৈরী কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক তাঁর একটা লেখায় যথার্থই বলেছেন (বিলিয়া, ২০০৭), ‘আমাদের সাংবিধানিক ফৌজদারি আইন (constitutional criminal law) চর্চা করার দরকার পড়েছে।’
পরীর সংগ্রামী জীবন ও অভিনয় দক্ষতায় আমি কিছু ক্ষেত্রে মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষ করে তাঁর নৃত্য-শৈলী এবং ‘স্বপ্নজাল’ ও ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিতে অভিনয় দক্ষতা আমাকে অবাক করেছে। তিনি অসাধারণ সুন্দরী এবং সম্ভাবনাময়ী এক প্রাণপ্রাচুর্যময় শিল্পী। তাঁর ‘প্রীতিলতা’ দেখতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তাঁর এবং তাঁর কাজের প্রতি আমার মুগ্ধতা প্রকাশ করছি। এবং আশা করছি এই আইনি লড়াইটাও তিনি জিতবেন।
ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ: শিক্ষক, তুলনামূলক সাংবিধানিক আইন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘যাইবার কোনো জায়গা তো নাই রে. .
নাই আর কোন মান-সম্মান...
চন্দ্র-সূর্য যত বড়
আমার দুঃখ তার সমান...’
—শহীদুল্লাহ ফরায়জী/বারী সিদ্দিকী।
পরীমণিকে তৃতীয় দফা ‘রিমান্ডে’ নেওয়া হয়েছে। এই তৃতীয় দফা রিমান্ডের আইনি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংবিধানিকতা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। একদিক দিয়ে দেখলে পরীমণির দুঃখ ‘চন্দ্র-সূর্যের সমান’। তাঁর মান-সম্মান নিয়েও চলছে টানাটানি।
কথাটা পাড়ার অজুহাত ওই মান-সম্মানের জায়গায়। তাঁর মান-সম্মানের ক্ষতি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগপ্রসূত ক্ষতির চেয়েও বেশি। আমি আইনের ছাত্র। আইনের অ-আইনসুলভ প্রয়োগে ব্যথিত হই, ছাত্রদের সামনে সংবিধান ক্লাসে হাজির হওয়ার মনের জোর কমে। বইয়ে লেখা আইন আর প্রায়োগিক আইনের কোনো মিল পাই না। ছাত্রদের সামনে কথা হাতড়াই।
আমরা ওই ১৭৬৫ সালেই আছি। ওই বছর বাড়ি তল্লাশি করার আইনি পরিধি (পাঠক একটু ‘পান’ যুক্ত করার জন্য ‘পরী-ধি’ পড়তে পারেন) সংক্রান্ত মামলায় লর্ড ক্যামডেন তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি করেন, ‘কোনো আইন, আইন কিনা, তা নিরূপণে দেখতে হবে সেটা আইনি কেতাবে আছে কিনা। যদি থাকে, তবে তা আইন। আর যদি না থাকে, তবে তা আইন নয়।’
ইংল্যান্ডের এই মামলা আইনের বাজারে অ্যান্টিক ভার্সেস ক্যারিংটন (১৭৬৫) নামে নাজেল আছে। বাংলাদেশের আইনের তালেবে-এলেমরা তাঁদের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইনের ক্লাসে ওই মামলা যত্ন করে জপ করেন। মার্কিন সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীতে ক্যামডেন-দর্শনের প্রভাব আছে বলে অনেক পণ্ডিত নিবেদন করে থাকেন।
এবার দেখি আমাদের আইনে কী আছে। রাষ্ট্রের একটা সর্বোচ্চ মান-আইন থাকে। সেখানে যা লেখা থাকে, তাকে ‘মান-মন্দির’ বলা যায়। কারণ সংবিধানে বিধৃত কথাকে ইংরেজিতে বলে ‘এন-শ্রাইন’! পুরোনো আচারের লোকজন একে ‘শাসনতন্ত্র’ আর কলিকালের লোকজন একে ভালোবেসে ডাকেন ‘সংবিধান’ বলে। রক্ত, ঘাম ও অশ্রু দিয়ে ১৯৭২ সালে লেখা আমাদের বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও একটি সংবিধান রয়েছে। উক্ত সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে আমরা লিখেছি, ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও মানব মর্যাদা এবং ব্যক্তিসত্তার প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করা হবে।’
মানব মর্যাদা পরম সুন্দর একটি জিনিস। এগারোর ভাষা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, মানব মর্যাদা নিজেই যেমন একটা গুণ, তেমনি একটা রাষ্ট্রিক মূল্যবোধ। ভারতের নমস্য বিচারপতি কৃষ্ণা আয়ার ১৯৮০ সালে ‘প্রেম শংকর বনাম দিল্লি প্রশাসন’ মামলায় ‘মানব মর্যাদার নিশ্চয়তাকে ভারতের সাংবিধানিক সংস্কৃতির অংশ’ বলে মন্তব্য করেন। আমাদের ঐতিহ্যও এর আলাদা কিছু হওয়ার নয়। দুঃখজনকভাবে, মানব সত্তার মর্যাদা, মৌলিক অধিকার নামের নকশিকাঁথা আমরা ভালোভাবে বুনতে পারিনি।
এখন দেখি সংবিধানের ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদ কী বলতে চাইছে। সেখানে বলা আছে—আইন অনুযায়ী খাতির (ব্যবহার) পাওয়ার অধিকার সবার আছে। শাস্ত্রমতে, আইনও আইন, আইনের ব্যবহারটাও আইন। তাই এর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ‘ট্রিট’। আর আইনবিজ্ঞানের আরেক নাম ‘ব্যবহারশাস্ত্র’। পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। তাই আমরা স্বাধীন হয়ে নিজেদের বানানো সংবিধানে ভালো ব্যবহারকেও আইনের অংশ করেছি। এর অন্যথা হলে তা আমাদের ‘প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্ক্ষার’ (প্রস্তাবনা, সংবিধান) সঙ্গে যায় না।
একত্রিশ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী (in accordance with law) কথাটা দুবার বলা আছে। দুবার বলার অর্থ হলো আইনটিকে যেমন ভালো হতে হবে, আইনের ব্যবহারবিধিও ভালো হতে হবে। বিশেষ করে বলা আছে—আইনের বিধান ব্যতিরেকে মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, শরীর, সুনাম ও সম্পত্তির জন্য হানিকর কোনো কাজ রাষ্ট্র করবে না। আগেই বলেছি, এই আইনকে সাংবিধানিক মানদণ্ডে পদ্ধতিগত ও মৌলিক মানে উত্তীর্ণ হতে হয়। মার্কিন মুলুকে এর নাম ফিফথ অ্যামেন্ডমেন্ট রাইট বা ডিউ প্রসেস ক্লজ। ব্রিটেনে পরিচয় ‘রুল অব ল’ বলে। আর ভারতে এটি জারি আছে আইনের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুসৃত হওয়ার অধিকার হিসেবে (procedure established by law—অনুচ্ছেদ ২১, ভারতীয় সংবিধান)।
আমাদের সংবিধানবিজ্ঞানের প্রধান পুরোহিত মাহমুদুল ইসলাম তাঁর ‘বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন’ (মল্লিক ব্রাদার্স, ২০১২) বইয়ে লিখেছেন, একত্রিশ নম্বরের আওতা ও পরিধি আমেরিকার ডিউ প্রসেস থেকেও ব্যাপক ও বেশি ইঙ্গিতপূর্ণ।
এর পর আমরা নজর দিই আমাদের সংবিধানের তেতাল্লিশ নম্বর অনুচ্ছেদে। সেখানে আমরা লিখেছি, জন নৈতিকতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রশ্নে যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে একজন নাগরিক তার বাড়িতে প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক হতে সুরক্ষিত থাকবেন। জন নৈতিকতার কোনো সংজ্ঞা সেখানে নেই। তবে ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে গণিকাবৃত্তি ও জুয়া খেলাকে জন নৈতিকতা বিরোধী কাজের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা আছে। আর আরোগ্যের প্রয়োজনে বা আইন অনুমোদিত অন্য প্রয়োজনে মদ্য, মাদক পানীয় ও স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজ ব্যবহার করাকে জনস্বাস্থ্য বিরুদ্ধ কাজের উদাহরণ হিসেবে ১৮ অনুচ্ছেদে দেখানো হয়েছে। পশ্চিমা দার্শনিক নোম চমস্কি জন নৈতিকতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি—এ ধরনের অজুহাতকে ‘পাওয়ারফুল সেমান্টিক টুলস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এমনিতেই আমাদের সমাজের মানুষ ‘মদ’ শব্দটাকেই ম্লেচ্ছ মনে করেন। কিন্তু যখন একে কেউ ‘শরাব’ বলেন, তখন তাতে তারা কাব্য খুঁজে পান। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ ‘বুক’ বললে নারীর ক্ষেত্রে সেটাকে ‘স্তন’ বোঝেন, দুধ বললেও নারীর ক্ষেত্রে তাঁরা ‘স্তন’-কেই বোঝেন। বহু নিরীহ শব্দকেও এই সমাজে ভাষিক সহিংসতার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি নারী হন তাহলে ঠেকায় কে?
পুলিশ কর্তৃক মদ উদ্ধারের খবর বা ভুল শব্দ প্রয়োগ তাই ‘রগরগে’ বিচারের (erotic justice) ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। ‘মিনিবার’ শব্দটাও এই সমাজ-মানসে সমান অবমাননাকর। এদিক দিয়ে ভাবলে বলা যায়, এহেন সমাজে জন-নৈতিকতার মতো কোনো দোদুল্যমান মতবাদকে মাপকাঠি ধরার কোনো সুযোগ নেই। যদি থাকেও, সেটাকে হতে হবে বিচারিক মন প্রয়োগ করে আরও সুনির্দিষ্ট, সুসংহত ও যুক্তিপূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত।
তাহলে পরীমণির ঘরে যদি ‘মদ’ থেকে থাকে, এবং তিনি যদি অনুমোদনের ক্ষেত্রগুলো দেখাতে ব্যর্থ হন, তাঁর বিরুদ্ধে স্বাভাবিক আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে কিছুদিন আগে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন আগ্রাসনের অভিযোগ এনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা, ঘরে অবস্থানরত মা–বাবাহীন এক নারীর বাসায়, বিনা ওয়ারেন্টে সিভিল পোশাকে পরিচয় যথার্থভাবে না দিয়েই ঘরে ঢুকে পুলিশি (RAB) তল্লাশি করা এবং তাঁকে আটক করা—প্রতিষ্ঠিত গ্রেপ্তার সংক্রান্ত আইন সমর্থন করে না। ফৌজদারি আইনে (১৮৯৮) আছে, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পরোয়ানা নিয়ে বা শর্ত সাপেক্ষে পরোয়ানা ছাড়া একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা যাবে। কিন্তু আইনে যা নেই, তা হলো—
(১) সাদা পোশাকে একজনকে গ্রেপ্তার করতে যাওয়া;
(২) বাড়ি প্রবেশ করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানানো;
(৩) গৃহে প্রবেশের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতে না চাওয়া;
(৪) ওয়ারেন্টসহ এবং ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তারের মধ্যে কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য পার্থক্য না করে হরহামেশা এর যত্র-তত্র ব্যবহার করা;
(৫) তল্লাশি চলাকালে বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সরাসরি মিডিয়াতে প্রচার করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটা ‘মিডিয়াক্র্যাসি’ তৈরি করা;
(৬) তল্লাশি শেষ হওয়ার আগেই জব্দ আলামতের মোবাইল ক্লিপ সাংবাদিকদের সরবরাহ করা;
(৭) ভিন্ন ব্যক্তির বাড়ি থেকে যৌনতা সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র উদ্ধার করে সেগুলোকে একজন নারীসহ-অভিযুক্তের বাসা থেকে জব্দ দ্রব্যের সঙ্গে একাকার করে রেখে গণমাধ্যমে ডিসপ্লে (media parade) করতে দেওয়া;
(৮) পুলিশি হেফাজতে ২৪ ঘণ্টা রাখতে পারার যে আইনি সুবিধা আছে, তার সুযোগ নিয়ে খোদ রাজধানীতেই গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোনো রেকর্ডেড কারণ ছাড়াই থানা-হেফাজতে (RAB Headquarter) কড়ায়-গন্ডায় পূর্ণ করে ২৪ ঘণ্টা (বা তার কিছু কম–বেশি) রাখা।
আর যেটা সংবিধানে নেই তা হলো, সংশোধন ধাঁচের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনকে (২০১৮) শাস্তি জর্জরিত ফৌজদারি আইন হিসেবে প্রণয়ন করে, তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে বিনা বিচারে ক্রসফায়ারে মানুষ মেরে ফেলা।
তাহলে আইনে কী আছে, আর কী নেই—তা আপনারা জানলেন। যেহেতু ‘নেই’–এর তালিকা দীর্ঘ, এবং এর এমনকি মাত্র একটির সদুত্তরও যদি রাষ্ট্রের কাছে না থাকে, তাহলে পরীমণির গ্রেপ্তার আইনসম্মত হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়। স্মরণ রাখা দরকার—পরীমণির বাসা তন্ন তন্ন (ransack) করাকে র্যাব ও মিডিয়ার ভাষায় ‘অভিযান’ (তল্লাশি নয়) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানের জনকগণ তাঁদের কানুনি কল্পনায় ‘অভিযান’–এর ধারণাকে আনতেই পারেননি।
তাই লর্ড ক্যামডেন-এর থিওরিতে পুলিশ-প্রসূত এই ফৌজদারি আইন, আইন নয়। আগেই উল্লেখ করেছি, মানব-মর্যাদার অধিকার ও সুনামের অধিকার আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত স্বতন্ত্র মৌলিক অধিকার। সে জন্যে ফৌজদারি আইনের গ্রেপ্তার–সংক্রান্ত বিধান দিয়ে এগুলোকে কেড়ে নেওয়া যায় না। বরং ওই গ্রেপ্তার পদ্ধতি মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ না হওয়ায় সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিত্যাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস সম্প্রতি এক মামলায় ওয়ারেন্ট ছাড়া বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আমাদের দেশেও এটা হওয়া প্রয়োজন। যেমন বিনা ওয়ারেন্টে বাড়ি তল্লাশির একটা গ্রহণযোগ্য ক্ষেত্র হলো জঙ্গি দমন অভিযান। হয়তো ক্ষেত্রগুলো কিছুটা সুনির্দিষ্ট করা আছেও, আমি গভীরভাবে খতিয়ে দেখে পড়ার সময় পাইনি।

এটা শুধু পরীর কারণে নয়, বরং ভবিষ্যতে যাতে এর ব্যবহার ‘ক্রসফায়ার’–এর ব্যবহারের মতো স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত না হয়, সে জন্যে করা দরকার। র্যাব কর্তৃক সংজ্ঞায়িত এবং পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মীয় মতবাদ প্রাধান্যময় সমাজে রাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী ক্ষমতা একজন নারী-শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে হইহই রৈরবে—এটা সমাজে ভুল বার্তা দেবে। কেউই আমরা এর কুফল এড়াতে পারব না; সে আজ হোক বা কাল।
পরীকে আটকের দিন এক টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন দেশের বিচারকেরা বলে রেখেছেন, গ্রেপ্তার যদি নির্দিষ্ট ধাপগুলো অনুসরণ না করে, তবে তা গ্রেপ্তার নয়। এটা পুলিশি কার্যক্রমের গোড়ায় আঘাত করে এবং পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই অর্থহীন করে ফেলে।
আমাদের আইনি সংস্কৃতিতে আরেক অদ্ভুত জিনিসের নাম ‘রিমান্ড’। সংবিধানে নেই, ফৌজদারি আইনে নেই, কিন্তু বিচারের হাটে রয়েছে এর সানন্দ উপস্থিতি। নাটকের অঙ্কের মতো পুলিশ আসামি ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে। পাঁচ-দশদিন ‘রিমান্ড’ চায়। ম্যাজিস্ট্রেট প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে ‘পরী-মিতি’ বোধের পরিচয় না দিয়েই অব্যর্থভাবে প্রার্থিত সময়ের চেয়ে দু–একদিন কমিয়ে আসামিকে রিমান্ড দেন। আর গণমাধ্যমে রটে যায় আদালত ‘রিমান্ড’ মঞ্জুর করেছেন! কত মানুষকে যে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, তার হিসাব নেই! অথচ উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন কীভাবে, কখন একজন অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়া যাবে (দেখুন, ব্লাস্ট মামলা, ২০১৬)। সরকার মানেনি। সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়ে আপিল করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল রিমান্ড অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে মানবাধিকার সুরক্ষার গাইডলাইনগুলোকে।
তো এভাবে চলছে। আচ্ছা, পরীমণিকে কি তাঁর আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ? সেটাই তো হওয়ার কথা ছিল, নাকি? যে কর্মকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, তিনি কি রাগী, নাকি তিনি সুন্দর করে কথার জাল বুনে পরীকে ফাঁদে ফেলতে পারেন? এভাবে প্রাপ্ত সাক্ষ্যের সাক্ষ্যগত মূল্য কী? সে সত্য কি কাননের বিষাক্ত বৃক্ষের ফল (fruit of the poisonous tree), নাকি টিভি-স্ক্রলে ঘন ঘন মিটির মিটির উঠতে-নামতে থাকা ব্রেকিং নিউজ? ব্যক্তিজীবনের ‘অনৈতিকতা’ খারাপ, কিন্তু সেটা রোধে রাষ্ট্রের ‘পরহেজগারি’ সমানভাবে খারাপ। এর পরিধি ঠিক না করতে পারলে সুশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য খারাপ পরিণাম ডেকে আনে, এবং আনবে। ফৌজদারি আইন ও সাংবিধানিক আইন বৈরী কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। অধ্যাপক রিদওয়ানুল হক তাঁর একটা লেখায় যথার্থই বলেছেন (বিলিয়া, ২০০৭), ‘আমাদের সাংবিধানিক ফৌজদারি আইন (constitutional criminal law) চর্চা করার দরকার পড়েছে।’
পরীর সংগ্রামী জীবন ও অভিনয় দক্ষতায় আমি কিছু ক্ষেত্রে মুগ্ধ হয়েছি। বিশেষ করে তাঁর নৃত্য-শৈলী এবং ‘স্বপ্নজাল’ ও ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিতে অভিনয় দক্ষতা আমাকে অবাক করেছে। তিনি অসাধারণ সুন্দরী এবং সম্ভাবনাময়ী এক প্রাণপ্রাচুর্যময় শিল্পী। তাঁর ‘প্রীতিলতা’ দেখতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তাঁর এবং তাঁর কাজের প্রতি আমার মুগ্ধতা প্রকাশ করছি। এবং আশা করছি এই আইনি লড়াইটাও তিনি জিতবেন।
ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ: শিক্ষক, তুলনামূলক সাংবিধানিক আইন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
৭ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
৭ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে।
২১ আগস্ট ২০২১
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
৭ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
৭ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে।
২১ আগস্ট ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
৭ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
৭ ঘণ্টা আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে।
২১ আগস্ট ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
৭ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
৭ ঘণ্টা আগেসাদিয়া সুলতানা রিমি

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

টিভি উপস্থাপক সরেজমিনে থাকা এক রিপোর্টারকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘পরীমণিকে (চারতলা থেকে) নামানো হবে কখন?’ জবাবে রিপোর্টার বলেন, ‘জানি না, তবে (হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি) একটু পরই নামানো হবে।’ আসলেই তো। পরীকে আইনি ভাষায় সেদিন ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়নি। তাঁকে নামিয়ে মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে গাড়িতে ‘তুলে’ আনা হয়েছে।
২১ আগস্ট ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
৭ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
৭ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
৭ ঘণ্টা আগে