মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচারকেও এই ট্রাইব্যুনালের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের প্রায় ১০ মাস পর গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা ছিল বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমের ইতিহাসে অভূতপূর্ব বিষয়। আদালতের কার্যক্রমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচ্য একটি দিক ছিল আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বক্তব্য। তাঁর বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং এর সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব রয়েছে। যত কিছুই হোক এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার সকলেরই কাম্য। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার না হলে বাংলাদেশ যে কতটা পিছিয়ে যাবে সেটা ভাবনারও বাইরে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্ত ও বিচার কেমন হবে— তা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। আপাতত চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। চিফ প্রসিকিউটরের পেশাগত ও রাজনৈতিক দিক থেকে অতীতে যে সংশ্লিষ্টতা সেটি বিবেচনায় নিলে এই প্রশ্নগুলোকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি। কারণ বাংলাদেশে শোষণ, নিপীড়ন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হলে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের কোনো বিকল্প নেই।
জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৩টি ভলিউমে সাড়ে ৮ হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। শুনানি শুরুর আগে সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। তার এই সূচনা বক্তব্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে, যেগুলো এই মামলার গুরুত্ব এবং ভবিষ্যত গতিপথ বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। তবে সবচেয়ে খটকা লেগেছে তাঁর একটি মন্তব্যে— তিনি বলেছেন, ‘এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।’
টেলিভিশনে যখন সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল, তখন দেখা যাচ্ছিল তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ছিলেন। তাঁর মানে তিনি যথেষ্ট প্রস্তুতি সহকারে এই বক্তব্য লিখেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যদি বলতেন, এই বিচার কোনো অতীতের প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা, তাহলে কোনো প্রশ্ন উঠতো না। বরং রাজনৈতিক ও পেশাগত দিক থেকে তাঁর অতীতের সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে যে সন্দেহ, সেটির প্রতি একটি শক্ত বার্তা হতে পারতো। কিন্তু তিনি ‘কেবল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার মুখ থেকে নিঃসৃত বাক্যটির সোজাসাপ্টা অর্থ হয়, এটি শুধু অতীতের প্রতিশোধ নয়।
একজন আইনজীবী হিসেবে মামলার শুনানির সূচনা বক্তব্যে এ ধরনের মন্তব্য অনেকগুলো প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক, কারণ এরই মধ্যে অন্য একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রশ্ন আইনজীবী থেকে শুরু করে মামলার পর্যবেক্ষকরাও তুলেছেন। প্রশ্নটি উঠেছে জামায়াতে ইসলামী নেতা এটি এম আজহারুল ইসলামকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ড থেকে খালাস দেয়ার মামলায়। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের মামলায় যারা দণ্ডিত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ থাকলেও তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার যথাযথ না থাকার কারণে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ঠিক একইভাবে ৫ আগস্টের পর মানতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেভাবে হচ্ছে, সেটাও যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, প্রসিকিউটর নিয়োগে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অতীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালে বিচারাধীন জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম, আজহারুল ইসলামের পক্ষেও আইনি সহায়তা দিয়েছিলেন তিনি। আজহারুলের মামলায় তিনি সরাসরি আপিল বিভাগের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না, তবু তার নেতৃত্বাধীন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের পক্ষে আপিল বিভাগে লড়েছেন। এই ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত হয়েছে বলে মনে করেন বার্গম্যান ও জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
জনাব আজহারুলকে খালাস দেয়ার অনেক আগেই ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই প্রশ্নটি তোলা হয়েছিল। সেই নিবন্ধে আইনজীবী শাহদীন মালিকসহ অনেকে প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর বাদী হিসেবে থাকেন চিফ প্রসিকিউটর। এ কারণে আজহারুলের রিভিউ শুনানিতে তাজুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এখন এই মামলার বাদী। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে মামলাগুলোতে তিনি বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি হয়ে গেছেন বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী। অবশ্য চিফ প্রসিকিউটরের অফিস থেকে এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই ধরনের অপরাধে বা একই দলের বা গোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তির পক্ষে ডিফেন্স করেছেন বলে একজন আইনজীবী সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো ব্যক্তির প্রসিকিউশন করতে পারবেন না, এমন কোনো আইনগত বাধানিষেধ পৃথিবীর কোথাও নেই।
যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক দর্শন আছে। সেটি হলো, বিচারিক প্রক্রিয়ায় সব ধরনের নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যথাযথভাবে রক্ষা করা। কারণ ফৌজদারি মামলার বিচারের ক্ষেত্রে দেখা হয়, কোনো নিরাপরাধ মানুষ কিংবা কেউ যেন ক্ষোভ, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে শাস্তি না পান। অর্থাৎ আগে থেকে যেন এমন সন্দেহের উদ্রেক না হয় যাতে বিচারের ফলাফল অনুমান করা যায়। এটাকে বলা হয় অনিশ্চয়তা। এ অনিশ্চয়তা না থাকলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হবেন, নাকি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন, মানে তাদেরকে জোর করে দণ্ড দেয়া হবে কী হবে না এমন অনিশ্চয়তা না থাকলে বিষয়টি হয়ে পড়বে ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ প্রবাদের মতো। যেমন, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বিরোধী মতগুলোকে দমনের জন্য বহু মামলা করা হয়েছিল। খোদ এখনকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছিল, যেগুলোর মেরিট বা ভিত্তি নেই বললেই চলে। আবার ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল— এটি সত্যি। কিন্তু যেভাবে নিতান্তই গায়ের জোরে অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া বিগত সরকারের আমলে ছিল, সেটি থেকে এমন ধারণা হয়েছিল— বিচার প্রক্রিয়া যাই হোক শাস্তি অবধারিত। বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাব সত্ত্বেও অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়া হবে— এমন সন্দেহ থাকলে সেখানে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমনটাই স্বাভাবিক।
আইসিটিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মামলাটি ‘চিফ প্রসিকিউটর বনাম আসামি শেখ হাসিনা গং’ মামলা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। অতীতের যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোর বিচার যেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ, তাই অতীতের আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
এমন পরিস্থিতে চিফ প্রসিকিউটর যখন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা’, তখন সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দেয়। এখানে আরো একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। এখনও আইসিটিতে বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা যুদ্ধাপরাধের অনেকগুলো মামলা চলমান আছে। বলা ভালো, সেগুলো এখন হিমাগারে চলে গেছে। খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন তোলা কি খুব অমূলক হবে যে, যারা আগে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন তারা এখন রাষ্ট্র বা বাদীপক্ষের আইনজীবী হওয়ায় পাশার দান পুরো উল্টে গেছে? এটা তো সত্যি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। আগের আমলে বিচার প্রক্রিয়া যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে বর্তমান সরকারের উচিত বিদ্যমান মামলাগুলোর বিচার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
কিন্তু বর্তমানে আইসিটির প্রসিকিউশন টিমের যে রেকর্ড তাতে আব্দুল আলীমের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো মনে পড়ে যেতে পারে, ‘তুমি হাকিম হইয়া হুকুম কর পুলিশ হইয়া ধর, সর্প হইয়া দংশন কর ওঝা হইয়া ঝাড়।’ চিফ প্রসিকিউটর আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে চাই, একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।’ কিন্তু তাঁর অতীত ট্র্যাক রেকর্ড আর ‘কেবল’ জুড়ে দেয়া বাক্যটি এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সন্দেহটি আরো বাড়ে যখন শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটরের দেয়া বক্তব্য আমরা শুনি। শুনানিতে শেখ হাসিনাকে একজন ‘নিষ্ঠুর শাসক’ উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে তিনি (শেখ হাসিনা) এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। তার উদ্দেশ্য ছিল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকা। শেখ হাসিনা ছিলেন অপরাধের নিউক্লিয়াস। হাসিনা টিকে থাকলে তাঁরাও (আওয়ামী লীগের নেতা ও সে সময়ের মন্ত্রী) টিকে থাকবেন এ মানসিকতা ছিল তাদের। সে হিসেবে শেখ হাসিনা ছিলেন অপরাধের প্রাণভ্রোমরা। তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আর আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তা বাস্তবায়ন করেছেন।’
এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরাই হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ করেন চিফ প্রসিকিউটর। এত স্পর্শকাতর একটি মামলায় এমন ঢালাওভাবে অভিযোগ আনার অর্থ হলো প্রসিকিউশন মামলাটির তদন্ত ও উপস্থাপন গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না।
মেট্রো রেলে আগুন দেয়া প্রসঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়া এক সমন্বয়কের মন্তব্য গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে বেশ হই চই ফেলে দিয়েছিল। ‘যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো, যদি পুলিশদের না মারা হতো তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজে অর্জিত হতো না। ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না’— বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির ‘প্রযত্নে বাংলাদেশ’ টকশোতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম।
এমন বক্তব্যের জন্য সংগঠন থেকে তাকে শোকজও করা হয়েছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমরা এটাকে বিপ্লব বলছি বা গণঅভ্যুত্থান, যাই বলি না কেন, এটা কোনো সাংবিধানিক নিয়ম মেনে হয়নি, আইন মেনে হয়নি। আইন যদি মানতে যেতাম, তাহলে কিন্তু এই বিপ্লবগুলো হতো না। যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো, যদি পুলিশদের না মারা হতো তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজে অর্জিত হতো না। ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না। এখানে কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, পৃথিবীর সকল বিপ্লবই সংবিধান বা নিয়মের বাইরে যেয়ে হয়েছে। এ কারণে আইনের বাইরে যেয়ে বা সাংবাধানিক পদ শূন্য হবে এরকম কথা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে না।’
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রসিকিউশন চিফ আর সমন্বয়কের বক্তব্য পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। দুজনই কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য লড়ছেন। একজন আদালতে, আরেকজন রাজপথে। এমন সাংঘর্ষিক বক্তব্য অবশ্যই এই বিচার প্রক্রিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলবে। সেখানে যতই নিরপেক্ষতার দাবি করা হোক না কেন প্রসিকিউশন টিমের অতীত টেনে এনে তাঁদের ‘প্রতিশোধপরায়ণতা সম্পর্কে ধারণাকে’ অমূলক বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যদি আগুন দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের সমর্থনে পর্যাপ্ত ও অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করা না যায়, অথবা যদি প্রমাণগুলো পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
যদি বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে মনে হয়, অর্থাৎ যদি মনে হয় যে ক্ষমতার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ আনা হয়েছে এবং বিচারিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠবে। এক্ষেত্রে, ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। অভিযোগপত্রে জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ‘সমন্বিত নির্মূল পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা ‘ব্যাপক’ ও ‘পদ্ধতিগত’ ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন ও আন্দোলনকারীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ‘সিস্টেমেটিক’ অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না।
অভিযোগের শুনানিতে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয় বরং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন’, ‘রোম স্ট্যাটিউট অব দি আইসিসি’ এবং বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারেও বিচারযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানের বিচারের জন্য তদন্ত, প্রসিকিউশন, বিচার— সবকিছু আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। ডেভিড বার্গম্যানের একটি নিবন্ধ দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল গত বছরের ২৪ অক্টোবর। সেখানে তিনি আইসিটিতে নিয়োগকৃত বিচারকদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, যেগুলো বেশ যৌক্তিক যদি আমরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক মানের বিচার চাই। বার্গম্যান বলছেন, এই আদালতের বিচারকদের কারোরই কর্মজীবনে কোনো মামলায় আন্তর্জাতিক আইনের নীতি প্রয়োগ করার কোনো অভিজ্ঞতা আছে বলে মনে হয় না। আলোচ্য বিচারের সঙ্গে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং তাকে ঘিরে থাকা জটিল আইন জড়িত। তাই এই অভিজ্ঞতা বিচারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা বলে মনে হয়।
আবার এই আদালতের বেশিরভাগ বিচারক বেশ কয়েক বছরে কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলার বিচারক ছিলেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও, এর কার্যপদ্ধতি এবং বিচারিক মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যদি প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকে বা অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
শুরু থেকেই অনেকে বলছিলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হওয়াই ভাল। এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও তা বলা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করলে যদিও তার রায় পেতে সময় বেশি লাগতো, কিন্তু প্রক্রিয়াটি স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেতো, যেটি বিচারের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে তুলতো। এমনকি আইসিসি যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতো, তাহলে সেটির রাজনৈতিক প্রভাব অনেক ব্যাপক হতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল ঘটে, তাহলে রায়ের কোনো পরিবর্তন করা যেতো না।
‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না’— এই নীতিবাক্যটি গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি। তবে, এই নীতিকে বাস্তবায়িত করতে হলে বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই অস্থিতিশীল। এই অবস্থায় একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের নিঃসন্দেহে একটি সংবেদনশীল বিষয়।
এই ট্রাইব্যুনালের আগে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত হলেও এর এখতিয়ার ও কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক দেখা গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ধরন এবং তার আইনি প্রক্রিয়া এই ট্রাইব্যুনালের ভবিষ্যতের কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপরও প্রভাব ফেলবে। আদালতের বিচার কাজ সরাসরি সম্প্রচার করে, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে হয়তো এক পক্ষের বাহবা পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু সেটি কোনোভাবেই বিচারের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারে না। যদি ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে না পারে তাহলে আইনের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। দেশটির জাতীয় ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ওপর ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। [সিন্ডিকেটেড কনটেন্ট হিসেবে ডয়চে ভেলে থেকে প্রকাশিত]
লেখক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচারকেও এই ট্রাইব্যুনালের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের প্রায় ১০ মাস পর গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা ছিল বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমের ইতিহাসে অভূতপূর্ব বিষয়। আদালতের কার্যক্রমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচ্য একটি দিক ছিল আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের বক্তব্য। তাঁর বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং এর সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব রয়েছে। যত কিছুই হোক এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার সকলেরই কাম্য। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার না হলে বাংলাদেশ যে কতটা পিছিয়ে যাবে সেটা ভাবনারও বাইরে।
জুলাই হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্ত ও বিচার কেমন হবে— তা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। আপাতত চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। চিফ প্রসিকিউটরের পেশাগত ও রাজনৈতিক দিক থেকে অতীতে যে সংশ্লিষ্টতা সেটি বিবেচনায় নিলে এই প্রশ্নগুলোকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি। কারণ বাংলাদেশে শোষণ, নিপীড়ন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হলে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের কোনো বিকল্প নেই।
জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৩টি ভলিউমে সাড়ে ৮ হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। শুনানি শুরুর আগে সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। তার এই সূচনা বক্তব্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে, যেগুলো এই মামলার গুরুত্ব এবং ভবিষ্যত গতিপথ বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করতে পারে। তবে সবচেয়ে খটকা লেগেছে তাঁর একটি মন্তব্যে— তিনি বলেছেন, ‘এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।’
টেলিভিশনে যখন সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল, তখন দেখা যাচ্ছিল তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ছিলেন। তাঁর মানে তিনি যথেষ্ট প্রস্তুতি সহকারে এই বক্তব্য লিখেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যদি বলতেন, এই বিচার কোনো অতীতের প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা, তাহলে কোনো প্রশ্ন উঠতো না। বরং রাজনৈতিক ও পেশাগত দিক থেকে তাঁর অতীতের সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে যে সন্দেহ, সেটির প্রতি একটি শক্ত বার্তা হতে পারতো। কিন্তু তিনি ‘কেবল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার মুখ থেকে নিঃসৃত বাক্যটির সোজাসাপ্টা অর্থ হয়, এটি শুধু অতীতের প্রতিশোধ নয়।
একজন আইনজীবী হিসেবে মামলার শুনানির সূচনা বক্তব্যে এ ধরনের মন্তব্য অনেকগুলো প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক, কারণ এরই মধ্যে অন্য একটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠেছে। এ প্রশ্ন আইনজীবী থেকে শুরু করে মামলার পর্যবেক্ষকরাও তুলেছেন। প্রশ্নটি উঠেছে জামায়াতে ইসলামী নেতা এটি এম আজহারুল ইসলামকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ড থেকে খালাস দেয়ার মামলায়। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের মামলায় যারা দণ্ডিত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ থাকলেও তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার যথাযথ না থাকার কারণে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ঠিক একইভাবে ৫ আগস্টের পর মানতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেভাবে হচ্ছে, সেটাও যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যরিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, প্রসিকিউটর নিয়োগে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অতীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালে বিচারাধীন জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন তাজুল ইসলাম, আজহারুল ইসলামের পক্ষেও আইনি সহায়তা দিয়েছিলেন তিনি। আজহারুলের মামলায় তিনি সরাসরি আপিল বিভাগের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না, তবু তার নেতৃত্বাধীন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালের পক্ষে আপিল বিভাগে লড়েছেন। এই ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত হয়েছে বলে মনে করেন বার্গম্যান ও জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
জনাব আজহারুলকে খালাস দেয়ার অনেক আগেই ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই প্রশ্নটি তোলা হয়েছিল। সেই নিবন্ধে আইনজীবী শাহদীন মালিকসহ অনেকে প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোর বাদী হিসেবে থাকেন চিফ প্রসিকিউটর। এ কারণে আজহারুলের রিভিউ শুনানিতে তাজুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এখন এই মামলার বাদী। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যে মামলাগুলোতে তিনি বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি হয়ে গেছেন বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী। অবশ্য চিফ প্রসিকিউটরের অফিস থেকে এ সংক্রান্ত একটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই ধরনের অপরাধে বা একই দলের বা গোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তির পক্ষে ডিফেন্স করেছেন বলে একজন আইনজীবী সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো ব্যক্তির প্রসিকিউশন করতে পারবেন না, এমন কোনো আইনগত বাধানিষেধ পৃথিবীর কোথাও নেই।
যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক দর্শন আছে। সেটি হলো, বিচারিক প্রক্রিয়ায় সব ধরনের নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা যথাযথভাবে রক্ষা করা। কারণ ফৌজদারি মামলার বিচারের ক্ষেত্রে দেখা হয়, কোনো নিরাপরাধ মানুষ কিংবা কেউ যেন ক্ষোভ, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে শাস্তি না পান। অর্থাৎ আগে থেকে যেন এমন সন্দেহের উদ্রেক না হয় যাতে বিচারের ফলাফল অনুমান করা যায়। এটাকে বলা হয় অনিশ্চয়তা। এ অনিশ্চয়তা না থাকলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হবেন, নাকি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন, মানে তাদেরকে জোর করে দণ্ড দেয়া হবে কী হবে না এমন অনিশ্চয়তা না থাকলে বিষয়টি হয়ে পড়বে ‘বিচার মানি তালগাছ আমার’ প্রবাদের মতো। যেমন, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বিরোধী মতগুলোকে দমনের জন্য বহু মামলা করা হয়েছিল। খোদ এখনকার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা করা হয়েছিল, যেগুলোর মেরিট বা ভিত্তি নেই বললেই চলে। আবার ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল— এটি সত্যি। কিন্তু যেভাবে নিতান্তই গায়ের জোরে অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া বিগত সরকারের আমলে ছিল, সেটি থেকে এমন ধারণা হয়েছিল— বিচার প্রক্রিয়া যাই হোক শাস্তি অবধারিত। বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের অভাব সত্ত্বেও অভিযুক্তদের শাস্তি দেয়া হবে— এমন সন্দেহ থাকলে সেখানে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমনটাই স্বাভাবিক।
আইসিটিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মামলাটি ‘চিফ প্রসিকিউটর বনাম আসামি শেখ হাসিনা গং’ মামলা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। অতীতের যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোর বিচার যেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ, তাই অতীতের আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
এমন পরিস্থিতে চিফ প্রসিকিউটর যখন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা’, তখন সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দেয়। এখানে আরো একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। এখনও আইসিটিতে বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা যুদ্ধাপরাধের অনেকগুলো মামলা চলমান আছে। বলা ভালো, সেগুলো এখন হিমাগারে চলে গেছে। খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন তোলা কি খুব অমূলক হবে যে, যারা আগে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন তারা এখন রাষ্ট্র বা বাদীপক্ষের আইনজীবী হওয়ায় পাশার দান পুরো উল্টে গেছে? এটা তো সত্যি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বহু ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। আগের আমলে বিচার প্রক্রিয়া যদি নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে বর্তমান সরকারের উচিত বিদ্যমান মামলাগুলোর বিচার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
কিন্তু বর্তমানে আইসিটির প্রসিকিউশন টিমের যে রেকর্ড তাতে আব্দুল আলীমের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো মনে পড়ে যেতে পারে, ‘তুমি হাকিম হইয়া হুকুম কর পুলিশ হইয়া ধর, সর্প হইয়া দংশন কর ওঝা হইয়া ঝাড়।’ চিফ প্রসিকিউটর আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে চাই, একটি সভ্য সমাজ, যেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকবে, সেখানে গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধ সহ্য করা হবে না। যে দেশে বিচার থাকবে, সেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না।’ কিন্তু তাঁর অতীত ট্র্যাক রেকর্ড আর ‘কেবল’ জুড়ে দেয়া বাক্যটি এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সন্দেহটি আরো বাড়ে যখন শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটরের দেয়া বক্তব্য আমরা শুনি। শুনানিতে শেখ হাসিনাকে একজন ‘নিষ্ঠুর শাসক’ উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে তিনি (শেখ হাসিনা) এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। তার উদ্দেশ্য ছিল যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকা। শেখ হাসিনা ছিলেন অপরাধের নিউক্লিয়াস। হাসিনা টিকে থাকলে তাঁরাও (আওয়ামী লীগের নেতা ও সে সময়ের মন্ত্রী) টিকে থাকবেন এ মানসিকতা ছিল তাদের। সে হিসেবে শেখ হাসিনা ছিলেন অপরাধের প্রাণভ্রোমরা। তিনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আর আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তা বাস্তবায়ন করেছেন।’
এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরাই হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ করেন চিফ প্রসিকিউটর। এত স্পর্শকাতর একটি মামলায় এমন ঢালাওভাবে অভিযোগ আনার অর্থ হলো প্রসিকিউশন মামলাটির তদন্ত ও উপস্থাপন গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না।
মেট্রো রেলে আগুন দেয়া প্রসঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেয়া এক সমন্বয়কের মন্তব্য গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে বেশ হই চই ফেলে দিয়েছিল। ‘যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো, যদি পুলিশদের না মারা হতো তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজে অর্জিত হতো না। ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না’— বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসির ‘প্রযত্নে বাংলাদেশ’ টকশোতে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম।
এমন বক্তব্যের জন্য সংগঠন থেকে তাকে শোকজও করা হয়েছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমরা এটাকে বিপ্লব বলছি বা গণঅভ্যুত্থান, যাই বলি না কেন, এটা কোনো সাংবিধানিক নিয়ম মেনে হয়নি, আইন মেনে হয়নি। আইন যদি মানতে যেতাম, তাহলে কিন্তু এই বিপ্লবগুলো হতো না। যদি মেট্রোরেলে আগুন না দেওয়া হতো, যদি পুলিশদের না মারা হতো তাহলে এই বিপ্লবটা এত সহজে অর্জিত হতো না। ফ্যাসিবাদের পতন নিশ্চিত করা যেত না। এখানে কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, পৃথিবীর সকল বিপ্লবই সংবিধান বা নিয়মের বাইরে যেয়ে হয়েছে। এ কারণে আইনের বাইরে যেয়ে বা সাংবাধানিক পদ শূন্য হবে এরকম কথা বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে না।’
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, প্রসিকিউশন চিফ আর সমন্বয়কের বক্তব্য পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। দুজনই কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য লড়ছেন। একজন আদালতে, আরেকজন রাজপথে। এমন সাংঘর্ষিক বক্তব্য অবশ্যই এই বিচার প্রক্রিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলবে। সেখানে যতই নিরপেক্ষতার দাবি করা হোক না কেন প্রসিকিউশন টিমের অতীত টেনে এনে তাঁদের ‘প্রতিশোধপরায়ণতা সম্পর্কে ধারণাকে’ অমূলক বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যদি আগুন দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগের সমর্থনে পর্যাপ্ত ও অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন করা না যায়, অথবা যদি প্রমাণগুলো পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
যদি বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে মনে হয়, অর্থাৎ যদি মনে হয় যে ক্ষমতার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এই অভিযোগ আনা হয়েছে এবং বিচারিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠবে। এক্ষেত্রে, ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। অভিযোগপত্রে জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ‘সমন্বিত নির্মূল পরিকল্পনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা ‘ব্যাপক’ ও ‘পদ্ধতিগত’ ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন ও আন্দোলনকারীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ‘সিস্টেমেটিক’ অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না।
অভিযোগের শুনানিতে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই বিচার শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ই নয় বরং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন’, ‘রোম স্ট্যাটিউট অব দি আইসিসি’ এবং বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারেও বিচারযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানের বিচারের জন্য তদন্ত, প্রসিকিউশন, বিচার— সবকিছু আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। ডেভিড বার্গম্যানের একটি নিবন্ধ দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছিল গত বছরের ২৪ অক্টোবর। সেখানে তিনি আইসিটিতে নিয়োগকৃত বিচারকদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, যেগুলো বেশ যৌক্তিক যদি আমরা জুলাই হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক মানের বিচার চাই। বার্গম্যান বলছেন, এই আদালতের বিচারকদের কারোরই কর্মজীবনে কোনো মামলায় আন্তর্জাতিক আইনের নীতি প্রয়োগ করার কোনো অভিজ্ঞতা আছে বলে মনে হয় না। আলোচ্য বিচারের সঙ্গে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং তাকে ঘিরে থাকা জটিল আইন জড়িত। তাই এই অভিজ্ঞতা বিচারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা বলে মনে হয়।
আবার এই আদালতের বেশিরভাগ বিচারক বেশ কয়েক বছরে কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলার বিচারক ছিলেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও, এর কার্যপদ্ধতি এবং বিচারিক মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যদি প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকে বা অভিযুক্তের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
শুরু থেকেই অনেকে বলছিলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হওয়াই ভাল। এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও তা বলা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করলে যদিও তার রায় পেতে সময় বেশি লাগতো, কিন্তু প্রক্রিয়াটি স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেতো, যেটি বিচারের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বাড়িয়ে তুলতো। এমনকি আইসিসি যদি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতো, তাহলে সেটির রাজনৈতিক প্রভাব অনেক ব্যাপক হতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল ঘটে, তাহলে রায়ের কোনো পরিবর্তন করা যেতো না।
‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না’— এই নীতিবাক্যটি গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি। তবে, এই নীতিকে বাস্তবায়িত করতে হলে বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই অস্থিতিশীল। এই অবস্থায় একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের নিঃসন্দেহে একটি সংবেদনশীল বিষয়।
এই ট্রাইব্যুনালের আগে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত হলেও এর এখতিয়ার ও কার্যকারিতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক দেখা গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ধরন এবং তার আইনি প্রক্রিয়া এই ট্রাইব্যুনালের ভবিষ্যতের কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপরও প্রভাব ফেলবে। আদালতের বিচার কাজ সরাসরি সম্প্রচার করে, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে হয়তো এক পক্ষের বাহবা পাওয়া যেতে পারে; কিন্তু সেটি কোনোভাবেই বিচারের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারে না। যদি ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে না পারে তাহলে আইনের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। দেশটির জাতীয় ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ওপর ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। [সিন্ডিকেটেড কনটেন্ট হিসেবে ডয়চে ভেলে থেকে প্রকাশিত]
লেখক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য।
আবু তাহের খান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
১০ জুন ২০২৫
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেশাইখ সিরাজ

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
১০ জুন ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
১০ জুন ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
২ দিন আগেগণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে।
আজাদুর রহমান চন্দন

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক তরুণ প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জেঁকে বসে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত, তার ছিদ্রটা হাঁ হয়ে যায় ওই একটি ঘটনায়। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিনের মাথায় বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গুলিবিদ্ধ তরুণের মৃত্যুর খবরজনিত ক্ষোভ-উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমের ওপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালানো হয়। আক্রান্ত হয় বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রধান কার্যালয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এবং শিশু-কিশোরদের জন্য সংস্কৃতি-সমন্বিত ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার কার্যক্রম। পরদিনই হামলা চালানো হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ৫০-৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে ছায়ানট ভবনে হামলা করে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। মিলনায়তনে হামলাকারীরা যা পেয়েছে তা-ই ভাঙচুর করে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে কোনো বাদ্যযন্ত্রই অক্ষত রাখা হয়নি। ভাঙচুর করা ছাড়াও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তছনছ করা হয়েছে বই-কাগজপত্র। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্পকর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশির ভাগ আসবাব। ওই হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এসব ঘটনায় কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে এর আসল উদ্দেশ্যটা কী! এরা আসন্ন নির্বাচন বানচাল করে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় দলটি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, হাদি হত্যাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক অগ্নিসংযোগ করে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ ছাড়া ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনে করে, এসব ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র। একই রকম বক্তব্য বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলেরও।
সংবাদমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সরকারের দুর্বলতার কারণেই ‘মবতন্ত্র’ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এটি কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে রোববার দুপুরে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি। কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে?’ গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন রোববার ক্ষতিগ্রস্ত ডেইলি স্টার ভবন পরিদর্শনকালে বলেন, দুটি গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো ব্যক্তিরা গণবিরোধী শক্তি, তারা দেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানজনিত পরিস্থিতি দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সেই ন্যায্য ক্ষোভকে ভিত হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চরম ডানপন্থী অগণতান্ত্রিক শক্তি নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত একটি বিকল্প রাজনৈতিক অবয়ব গড়ার চেষ্টাও তাদের আছে বলে মনে করা যেতে পারে। দেশে প্রতিবেশী বড় দেশের কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা মূলত সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের পক্ষে জনমত ধরে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকের আশঙ্কা, ওসমান হাদির ভাবমূর্তি এবং তাঁর হত্যাজনিত ক্ষোভের পাটাতনে দাঁড়িয়ে অচিরেই একটি তথাকথিত বিপ্লবী সরকারের ধারণা উপস্থাপন করার তোড়জোড় চলছে।
দেশে এখন যে সরকার আছে তা গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি অন্তর্বর্তী সরকার। গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনেরও প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের কাছে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না তাঁদেরও অনেকের মতে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারেক রহমানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিপ্লবী সরকারের ধারণা বেশ দুরভিসন্ধিমূলক।
কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার ওপর। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের দুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহির অভাব। বিএনপি জুলাই আন্দোলনের বছরখানেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব হাজির করলেও দলের ভেতরে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার ঘটানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রস্তাবগুলো তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১১ থেকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তখনকার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বা রূপরেখা উপস্থাপন করে। রূপরেখাটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত—প্রথম ভাগে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব এবং দ্বিতীয় ভাগে অর্থনীতি ও সমাজসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নীতি-সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা প্রতিষ্ঠা ও ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ—এগুলো জনগণের যতটা নজর কাড়ার কথা ছিল, বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ, প্রতিশ্রুতির বিষয়ে দলটির আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ। এই সন্দেহ অনেকাংশে নিরসন করা যেত দলের ভেতরে সংস্কার শুরু করে।
অস্বীকার করা যাবে না, আন্দোলনের সময় বিএনপিকে মিত্রদের যতটা গুরুত্ব দিতে দেখা যেত, গণ-অভ্যুত্থানের পর তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এ নিয়ে হতাশাও ভর করছে মিত্র দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। ঝড়ঝঞ্ঝার এই দেশের মানুষ সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। রাজনীতিতেও বারবার জয় পেয়েও হারিয়ে ফেলার নজির আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ভয় কতটা দূর করতে পারবেন, তার ওপর দেশের মঙ্গলও অনেকখানি নির্ভরশীল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদ্যাপন যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ও মহাসমারোহে হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। বড় একটা ছন্দপতন ঘটে গেছে। অথচ বিজয়ের এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক তরুণ প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জেঁকে বসে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত, তার ছিদ্রটা হাঁ হয়ে যায় ওই একটি ঘটনায়। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিনের মাথায় বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গুলিবিদ্ধ তরুণের মৃত্যুর খবরজনিত ক্ষোভ-উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমের ওপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ চালানো হয়। আক্রান্ত হয় বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের প্রধান কার্যালয়। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এবং শিশু-কিশোরদের জন্য সংস্কৃতি-সমন্বিত ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নালন্দার কার্যক্রম। পরদিনই হামলা চালানো হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ৫০-৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে গিয়ে ছায়ানট ভবনে হামলা করে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। মিলনায়তনে হামলাকারীরা যা পেয়েছে তা-ই ভাঙচুর করে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে কোনো বাদ্যযন্ত্রই অক্ষত রাখা হয়নি। ভাঙচুর করা ছাড়াও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তছনছ করা হয়েছে বই-কাগজপত্র। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হয় সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্পকর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশির ভাগ আসবাব। ওই হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এসব ঘটনায় কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে এর আসল উদ্দেশ্যটা কী! এরা আসন্ন নির্বাচন বানচাল করে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা আগামী জাতীয় নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত শুক্রবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় দলটি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, হাদি হত্যাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মাঝরাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক অগ্নিসংযোগ করে। কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজের সম্পাদক দেশবরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ ছাড়া ছায়ানটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করে বিএনপি বলেছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরোনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকারকে তারা নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চায়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনে করে, এসব ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র। একই রকম বক্তব্য বাংলাদেশ জাসদসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলেরও।
সংবাদমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, সরকারের দুর্বলতার কারণেই ‘মবতন্ত্র’ প্রশ্রয় পেয়েছে এবং এটি কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে রোববার দুপুরে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে গণমাধ্যমের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি। কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে?’ গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন রোববার ক্ষতিগ্রস্ত ডেইলি স্টার ভবন পরিদর্শনকালে বলেন, দুটি গণমাধ্যমে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো ব্যক্তিরা গণবিরোধী শক্তি, তারা দেশের মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এ ধরনের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানজনিত পরিস্থিতি দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সেই ন্যায্য ক্ষোভকে ভিত হিসেবে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুপ্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চরম ডানপন্থী অগণতান্ত্রিক শক্তি নিজেদের নীলনকশা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত একটি বিকল্প রাজনৈতিক অবয়ব গড়ার চেষ্টাও তাদের আছে বলে মনে করা যেতে পারে। দেশে প্রতিবেশী বড় দেশের কূটনৈতিক কেন্দ্রগুলোতে হামলা মূলত সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের পক্ষে জনমত ধরে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত এক প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকের আশঙ্কা, ওসমান হাদির ভাবমূর্তি এবং তাঁর হত্যাজনিত ক্ষোভের পাটাতনে দাঁড়িয়ে অচিরেই একটি তথাকথিত বিপ্লবী সরকারের ধারণা উপস্থাপন করার তোড়জোড় চলছে।
দেশে এখন যে সরকার আছে তা গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি অন্তর্বর্তী সরকার। গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপ্রত্যাশী জনগণ চাইছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সরকার আসুক। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় সেই জনপ্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনেরও প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের কাছে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন অভাবনীয় আবেগ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। ব্যক্তিগতভাবে যাঁরা তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না তাঁদেরও অনেকের মতে, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারেক রহমানের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিপ্লবী সরকারের ধারণা বেশ দুরভিসন্ধিমূলক।
কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চার ওপর। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের দুরবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহির অভাব। বিএনপি জুলাই আন্দোলনের বছরখানেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব হাজির করলেও দলের ভেতরে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার ঘটানোর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রস্তাবগুলো তেমন বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১১ থেকে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ তখনকার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব বা রূপরেখা উপস্থাপন করে। রূপরেখাটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত—প্রথম ভাগে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব এবং দ্বিতীয় ভাগে অর্থনীতি ও সমাজসংক্রান্ত নানা বিষয়ে নীতি-সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, সম্প্রীতিমূলক সমন্বিত রাষ্ট্রসত্তা প্রতিষ্ঠা ও ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ—এগুলো জনগণের যতটা নজর কাড়ার কথা ছিল, বাস্তবে তেমনটা দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ, প্রতিশ্রুতির বিষয়ে দলটির আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ। এই সন্দেহ অনেকাংশে নিরসন করা যেত দলের ভেতরে সংস্কার শুরু করে।
অস্বীকার করা যাবে না, আন্দোলনের সময় বিএনপিকে মিত্রদের যতটা গুরুত্ব দিতে দেখা যেত, গণ-অভ্যুত্থানের পর তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এ নিয়ে হতাশাও ভর করছে মিত্র দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। ঝড়ঝঞ্ঝার এই দেশের মানুষ সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। রাজনীতিতেও বারবার জয় পেয়েও হারিয়ে ফেলার নজির আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই ভয় কতটা দূর করতে পারবেন, তার ওপর দেশের মঙ্গলও অনেকখানি নির্ভরশীল।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। সেখানে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের কিছু অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও সমাধান খোঁজা জরুরি।
১০ জুন ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১৭ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১৭ ঘণ্টা আগে