জুবায়ের হাসান

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত করে লিখছে ‘মোল্লা মুহাম্মদ ইউনুস’। আফগান তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের নামের সঙ্গে মিল রেখেই এমন নামকরণ করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং গত ৫ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের লক্ষ্মৌয়ে তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি ভারতের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারদেরকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উদাহরণ হিসাবে টানেন রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কথা। রাজনাথ সিংয়ের এসব কথা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করেছে। গণঅভুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে বলতে গিয়ে ইসরায়েল-হামাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি মূলত বাংলাদেশের জনগণ ও বর্তমান সরকারকে চরম হুমকি দিয়েছেন।
ইসরাইল যেভাবে ও যে উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিন দখল করেছে তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। কিন্তু রাশিয়া কোন্ অজুহাতে ক্রিমিয়া দখল করল এবং পরে সমগ্র ইউক্রেন দখলের জন্য হামলা করল, সে সম্পর্কে অনেকেই বিশেষ অবগত নয়। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। পাল্টাপাল্টি বিপ্লবে রুশপন্থী ও পাশ্চাত্য ইউরোপীয়-মার্কিনপন্থী প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটছিল। ২০০৪ সালের নভেম্বরে ‘অরেঞ্জ রেভলিউশন’ বা কমলা বিপ্লবের মাধ্যমে ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসেন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। এর ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাশ্চাত্যপন্থীদের সমর্থনে ইউক্রেনে সংঘটিত হয় ‘ময়দান বিপ্লব’। ক্ষমতাসীন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে যান রাশিয়ায়। এতে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রুশপন্থী কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নিভে যায়; ক্ষিপ্ত হয় রাশিয়া। ফলশ্রুতিতে প্রথমে রাশিয়ার মদদে রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের দোনবাস (লুহানস্ক-দোনেস্ক) অঞ্চলে শুরু হয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদিতার বা স্বাধীনতার যুদ্ধ। অতঃপর ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে ক্রিমিয়া। এর কয়েক বছর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল ইউক্রেন দখলের অভিযানে নামে রাশিয়া। কিন্তু সহজে সেটা করতে পারে না। তবে সেই থেকে এখনো চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এতে ইউক্রেন হারিয়েছে তার ভুমি, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা। রাজনীতিবিদদের মসনদের লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ভোট চুরি, দুর্নীতি, ব্লকপন্থী রাজনীতি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিপ্লব আর পাল্টা বিপ্লবে ইউক্রেনের হয়েছে এ পরিণতি। রুশ-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন রুশভাষী বহু নাগরিক। রাশিয়া একে পুঁজি করেই ইউক্রেনের অভ্যন্তরে গোলযোগ তৈরি করতে পেরেছে এবং অবশেষে ইউক্রেনের কাছ থেকে বিরাট আয়তনের ভূমি দখল করেছে।
যাহোক, বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কথা বলছিলাম। তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন। বরং সুচতুর ও ঝানু রাজনীতিবিদ। শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতির জন্যই বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি সেসব কথা বলেননি। অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি যথেষ্ট স্বপ্ন দেখেন। এদিকে বিজেপির শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বাংলাদেশকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর (২০২৪) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের নির্বাচনী জনসভায় তিনি ওই রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করে উল্টো ঝুলিয়ে রাখার হুমকি দেন। এর আগে ২০১৮ সালে তিনি কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ বলেছিলেন, আরেকবার তাদেরকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের হুমকি দেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ক্ষোভপ্রকাশের মিছিলে যোগ দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি গত ২ অক্টোবর ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী ভাষণের সময় কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর গত ২৯ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী সফরে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমকে এএনআইকে বলেন, ঝাড়খণ্ড শিগগিরই মিনি বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। কেননা সেখানে কথিত বাংলাদেশি মুসলমানদের অনুপ্রবেশ ঘটায় তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাতে আদিবাসী সাঁওতাল উপজাতিদের আনুপাতিক সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালে ৬ সেপ্টেম্বর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অখণ্ড ভারত গঠনের জন্য বিরোধী দল কংগ্রেসকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার ওই বক্তব্য প্রদানের সময় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হয় না হিমন্ত শর্মার বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ; আর আমাদের দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও হয় না তেমন সমালোচনা। এদেশের মিডিয়া হিমন্ত শর্মার উক্তিকে চিত্রায়িত করে ভোটের রাজনীতির কৌশল হিসাবে। এভাবে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো আড়াল করে ফেলে বিজেপি কিংবা হিমন্ত শর্মার অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার অভিলাষকে। আগামী ১৩ ও ২০ নভেম্বর দুই দফায় ঝাড়খণ্ডের ৮১টি বিধানসভা আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ বহু বিজেপি নেতা সেখানে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে ঝাড়খণ্ডের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। এ যুক্তিতে তাঁরা প্রকারান্তে বাংলাদেশ সম্পর্কে দিচ্ছেন নানা রকম উসকানি।
২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের বিহার রাজ্যের ছোট নাগপুর ও সাঁওতাল পরগনা নিয়ে গঠিত হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্য। বাংলাদেশে সংখ্যায় সর্ববৃহৎ উপজাতি হলো সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। এদেশের সাঁওতালদের আদি নিবাস হলো ঝাড়খণ্ড। সোয়া শত বছর আগে (১৯০০ সালের গোড়াতে) ইংরেজ নীলকরদের সূত্রে অনেক সাঁওতাল তাদের আদি নিবাস ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এসে বসতি গড়তে থাকেন।
এদেশে বহুদিন হল (বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আমলে) সাঁওতালদের নিয়ে চলেছে বিশেষ রাজনীতি। তাই ঝাড়খণ্ডে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কথিত বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের অজুহাত তুলে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের সাঁওতালদের মাঝেও তৈরি করতে পারে বিদ্বেষ। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারেন এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর।
বিজেপির রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশ সম্পর্কিত এসব বক্তব্যকে আমরা হালকাভাবে দেখতে পারি না। কেননা অতীতে তাদের বক্তব্য বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী ঢাকার একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে আর কখনো দিল্লির রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। এরপর গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) ভারত শেখ হাসিনার সহায়তায় বাংলাদেশকে কীভাবে তার ঔপনিবেশে পরিণত করেছিল, সে ইতিহাস সবারই জানা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানের পর বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য চলছে নানা ধরনের অপতৎপরতা। জুলাই গণবিপ্লবের পরাজিত শক্তি ও বিজেপি এসব অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের ইন্ধনদাতা। কথিত আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি ইত্যাদি নানাবিধ দাবি-দাওয়া সম্বলিত আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বিজেপি ও আওয়ামী মহলের উসকানিমূলক তৎপরতা। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আট দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জাগো জাগো, হিন্দু জাগো স্লোগান দিয়ে সারাদেশে হয়েছে কথিত হিন্দু সমাবেশ। ঐ জাগো হিন্দু সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক আওয়ামী নেতাকর্মী। এভাবে হিন্দু ব্যানারে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে ঘটাতে চাচ্ছে বিশৃঙ্খলা, খেলতে চাচ্ছে হিন্দু কার্ড। এদেশের সাধারণ হিন্দুদের বুঝতে হবে এই কুটিল সর্বনাশা আওয়ামী রাজনীতি। বস্তুত শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও বিজেপির দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে এদেশের হিন্দুদের কোনো লাভ নেই। বরং স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠলে তাতে এ দেশের হিন্দুরাও হতে পারেন যথেষ্ট উপকৃত। সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভাই-বোনদের বুঝতে হবে বাংলাদেশই তাদের জন্মভূমি। এখানকার মুসলমানদের মতোই বাংলাদেশ তাদের ঠিকানা। এদেশের হিন্দু-মুসলিমসহ কারোরই ঠিকানা আওয়ামী লীগ হতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ ও হিন্দু কিছুতেই হতে পারে না সমার্থক। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এদেশে কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রবর্তনের জন্যই হিন্দুদের ব্যবহার করছে। ফ্যাসিবাদের কোনো ধর্ম নাই। ফ্যাসিবাদী হিটলার প্রথমে নির্মূল করেছিলেন বামপন্থী কমিউনিস্টদের, তারপর খতম করেছিলেন ডানপন্থী প্রতিপক্ষদের। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি প্রথম ১০ বছর মুসলমানদের কোপালেন, অতঃপর খ্রিস্টান ও শিখদের, এরপর লক্ষ্য হবে দলিত হিন্দুরা, সবশেষে হবে প্রতিপক্ষ উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। এভাবেই ফ্যাসিবাদের কোনো ধর্ম থাকে না। ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদীরা শুধু নিজেকেই ভালোবাসে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাত্র কিছুকাল আগেও চীনবিরোধী অনেক বুলি আওড়াতেন। কিন্তু এবারের রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত (২২-২৪ অক্টোবর ২০২৪) ব্রিকস সম্মেলনে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। নরেন্দ্র মোদি একেবারে চীনের কোলে উঠে পড়লেন। এর আগে (১৫ অক্টোবর ২০২৪) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়সংকর ১৬ সদস্যের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে সফর করেছিলেন পাকিস্তান। এভাবে ভারত তার কল্পিত শত্রুদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেছে। কেননা শুধু হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে ভারতের বিজেপি সরকার জনগণকে চিরসুখী রাখতে পারবে না। ভারতের সকল মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণ করলেও তা সম্ভব নয়। এ কারণেই বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির এমন রঙ বদল। বর্তমানে ভারত নিজেই তার সমস্যার ভারে জর্জরিত। যেকোনো দিন, যেকোনো সময় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হতে পারে গণঅভ্যুত্থান। এমতাবস্থায় ভারতের বিজেপি সরকারের পক্ষে অন্য দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাববার প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের বিজেপি সরকার দেশে-বিদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী সম্পর্কে উচ্চাভিলাসী চটকদার যেসব কথাবার্তা বলে তা শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মতলব।
অতএব বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য উচিত কাজ হবে— এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করা ও গণতন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জুলাই গণআন্দোলনে বেশ কিছু সংখ্যক হিন্দু শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধারার আন্দোলনে আরো অনেককে করতে হবে সংযুক্ত। তাদেরকেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে করতে হবে ভারতীয় চক্রান্তের প্রতিবাদ। সেই সাথে ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধেও তাদেরকে হতে হবে সোচ্চার।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শেষ হতে পেরেছে হিন্দুদের শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব। নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে ডক্টর ইউনুস সরকার নিয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা; বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করেছে নিরলস পরিশ্রম। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন ছিল বিশেষ সক্রিয়। বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামী দলসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দিয়েছিলেন বিশেষ সাহস ও নিরাপত্তা। তাই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র ও উসকানি ব্যর্থ করে দিয়ে এদেশে সফল হতে পারল শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব। এটা ডক্টর ইউনুস সরকারের বিরাট কৃতিত্ব। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের চক্রান্ত। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে হিন্দুদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বিরাট মহাসমাবেশ। হিন্দু পুরোহিতদের নেতৃত্বে চলে বিশেষ আয়োজন। বুঝতে অসুবিধা নেই যে আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতেই এ আয়োজন। ওই হিন্দু সমাবেশে একদল দিকভ্রান্তরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে উড়িয়েছেন হিন্দুত্ববাদের গেরুয়া পতাকা। সনাতন জাগরণ মঞ্চ থেকে ডাক দেয়া হয় ঢাকা লংমার্চ কর্মসূচির। ওই সমাবেশে তারা চেয়েছেন সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন। কিন্তু তাদের চাওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশ সুরক্ষা আইন। আসলে এদেশের সাধারণ হিন্দুরা বিজেপির পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুদের উৎসব বা পার্বণ সংখ্যা অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে, হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। সুতরাং এসব পার্বণকে ঘিরে চলমান থাকতে পারে শান্তি-স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপতৎপরতা; ঘটতে পারে অনেক কিছু। হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে উসকে দিতে ইসলাম অবমাননার কৌশল নেয়া হতে পারে। কোথাও পবিত্র কোরআনের মর্যাদাহানি করা হতে পারে, আর কোথাওবা নবীজির (সা:) অবমাননা করা হতে পারে। এসব করে মুসলমানদেরকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ করে তোলা হতে পারে। তাই সাধারণ মুসলমানদেরকে ও তাদের ধর্মীয় ইমামদেরকে এমন ফাঁদ সম্পর্কে হতে হবে বিশেষ সচেতন ও ধৈর্যশীল। চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে এমন কিছু করা একেবারেই উচিত হবে না যাতে তাদেরই হিন্দু প্রতিবেশী ভাই-বোনদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। এদেশের মুসলমানদের উজ্জল ভাবমূর্তি নষ্ট করাই হল বিজেপি ও আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এজন্যই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছড়ানো হচ্ছে অনেক গুজব। কিন্তু গুজব সমুদ্রের মাঝেই আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে প্রকৃত ঘটনা; সত্য দিয়ে পরাজিত করতে হবে মিথ্যাকে। আর মিথ্যা তো পরাজিতই হয়।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত করে লিখছে ‘মোল্লা মুহাম্মদ ইউনুস’। আফগান তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের নামের সঙ্গে মিল রেখেই এমন নামকরণ করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং গত ৫ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের লক্ষ্মৌয়ে তিন বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের যৌথ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি ভারতের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারদেরকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ দেন। ওই বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উদাহরণ হিসাবে টানেন রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কথা। রাজনাথ সিংয়ের এসব কথা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বিরাট হুমকি তৈরি করেছে। গণঅভুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে বলতে গিয়ে ইসরায়েল-হামাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি মূলত বাংলাদেশের জনগণ ও বর্তমান সরকারকে চরম হুমকি দিয়েছেন।
ইসরাইল যেভাবে ও যে উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিন দখল করেছে তা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। কিন্তু রাশিয়া কোন্ অজুহাতে ক্রিমিয়া দখল করল এবং পরে সমগ্র ইউক্রেন দখলের জন্য হামলা করল, সে সম্পর্কে অনেকেই বিশেষ অবগত নয়। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। পাল্টাপাল্টি বিপ্লবে রুশপন্থী ও পাশ্চাত্য ইউরোপীয়-মার্কিনপন্থী প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটছিল। ২০০৪ সালের নভেম্বরে ‘অরেঞ্জ রেভলিউশন’ বা কমলা বিপ্লবের মাধ্যমে ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসেন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। এর ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাশ্চাত্যপন্থীদের সমর্থনে ইউক্রেনে সংঘটিত হয় ‘ময়দান বিপ্লব’। ক্ষমতাসীন রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে যান রাশিয়ায়। এতে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রুশপন্থী কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা নিভে যায়; ক্ষিপ্ত হয় রাশিয়া। ফলশ্রুতিতে প্রথমে রাশিয়ার মদদে রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের দোনবাস (লুহানস্ক-দোনেস্ক) অঞ্চলে শুরু হয় সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদিতার বা স্বাধীনতার যুদ্ধ। অতঃপর ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে ক্রিমিয়া। এর কয়েক বছর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল ইউক্রেন দখলের অভিযানে নামে রাশিয়া। কিন্তু সহজে সেটা করতে পারে না। তবে সেই থেকে এখনো চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এতে ইউক্রেন হারিয়েছে তার ভুমি, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা। রাজনীতিবিদদের মসনদের লোভ, ক্ষমতার অপব্যবহার, ভোট চুরি, দুর্নীতি, ব্লকপন্থী রাজনীতি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিপ্লব আর পাল্টা বিপ্লবে ইউক্রেনের হয়েছে এ পরিণতি। রুশ-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন রুশভাষী বহু নাগরিক। রাশিয়া একে পুঁজি করেই ইউক্রেনের অভ্যন্তরে গোলযোগ তৈরি করতে পেরেছে এবং অবশেষে ইউক্রেনের কাছ থেকে বিরাট আয়তনের ভূমি দখল করেছে।
যাহোক, বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কথা বলছিলাম। তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন। বরং সুচতুর ও ঝানু রাজনীতিবিদ। শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতির জন্যই বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি সেসব কথা বলেননি। অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা নিয়ে তিনি যথেষ্ট স্বপ্ন দেখেন। এদিকে বিজেপির শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও বাংলাদেশকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর (২০২৪) ঝাড়খণ্ড রাজ্যের নির্বাচনী জনসভায় তিনি ওই রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করে উল্টো ঝুলিয়ে রাখার হুমকি দেন। এর আগে ২০১৮ সালে তিনি কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ বলেছিলেন, আরেকবার তাদেরকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপের হুমকি দেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশাপাশি বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ক্ষোভপ্রকাশের মিছিলে যোগ দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি গত ২ অক্টোবর ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী ভাষণের সময় কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর গত ২৯ অক্টোবর আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী সফরে গিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমকে এএনআইকে বলেন, ঝাড়খণ্ড শিগগিরই মিনি বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। কেননা সেখানে কথিত বাংলাদেশি মুসলমানদের অনুপ্রবেশ ঘটায় তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাতে আদিবাসী সাঁওতাল উপজাতিদের আনুপাতিক সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালে ৬ সেপ্টেম্বর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অখণ্ড ভারত গঠনের জন্য বিরোধী দল কংগ্রেসকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার ওই বক্তব্য প্রদানের সময় বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই রাষ্ট্রীয় সফরে ছিলেন। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হয় না হিমন্ত শর্মার বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ; আর আমাদের দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও হয় না তেমন সমালোচনা। এদেশের মিডিয়া হিমন্ত শর্মার উক্তিকে চিত্রায়িত করে ভোটের রাজনীতির কৌশল হিসাবে। এভাবে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো আড়াল করে ফেলে বিজেপি কিংবা হিমন্ত শর্মার অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার অভিলাষকে। আগামী ১৩ ও ২০ নভেম্বর দুই দফায় ঝাড়খণ্ডের ৮১টি বিধানসভা আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ বহু বিজেপি নেতা সেখানে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে ঝাড়খণ্ডের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। এ যুক্তিতে তাঁরা প্রকারান্তে বাংলাদেশ সম্পর্কে দিচ্ছেন নানা রকম উসকানি।
২০০০ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের বিহার রাজ্যের ছোট নাগপুর ও সাঁওতাল পরগনা নিয়ে গঠিত হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্য। বাংলাদেশে সংখ্যায় সর্ববৃহৎ উপজাতি হলো সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। এদেশের সাঁওতালদের আদি নিবাস হলো ঝাড়খণ্ড। সোয়া শত বছর আগে (১৯০০ সালের গোড়াতে) ইংরেজ নীলকরদের সূত্রে অনেক সাঁওতাল তাদের আদি নিবাস ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এসে বসতি গড়তে থাকেন।
এদেশে বহুদিন হল (বিশেষ করে আওয়ামী লীগ আমলে) সাঁওতালদের নিয়ে চলেছে বিশেষ রাজনীতি। তাই ঝাড়খণ্ডে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কথিত বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের অজুহাত তুলে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের সাঁওতালদের মাঝেও তৈরি করতে পারে বিদ্বেষ। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারেন এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর।
বিজেপির রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশ সম্পর্কিত এসব বক্তব্যকে আমরা হালকাভাবে দেখতে পারি না। কেননা অতীতে তাদের বক্তব্য বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায় চৌধুরী ঢাকার একটি পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে আর কখনো দিল্লির রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। এরপর গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) ভারত শেখ হাসিনার সহায়তায় বাংলাদেশকে কীভাবে তার ঔপনিবেশে পরিণত করেছিল, সে ইতিহাস সবারই জানা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানের পর বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য চলছে নানা ধরনের অপতৎপরতা। জুলাই গণবিপ্লবের পরাজিত শক্তি ও বিজেপি এসব অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের ইন্ধনদাতা। কথিত আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মবিরতি ইত্যাদি নানাবিধ দাবি-দাওয়া সম্বলিত আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বিজেপি ও আওয়ামী মহলের উসকানিমূলক তৎপরতা। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আট দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জাগো জাগো, হিন্দু জাগো স্লোগান দিয়ে সারাদেশে হয়েছে কথিত হিন্দু সমাবেশ। ঐ জাগো হিন্দু সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বিপুলসংখ্যক আওয়ামী নেতাকর্মী। এভাবে হিন্দু ব্যানারে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে ঘটাতে চাচ্ছে বিশৃঙ্খলা, খেলতে চাচ্ছে হিন্দু কার্ড। এদেশের সাধারণ হিন্দুদের বুঝতে হবে এই কুটিল সর্বনাশা আওয়ামী রাজনীতি। বস্তুত শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও বিজেপির দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে এদেশের হিন্দুদের কোনো লাভ নেই। বরং স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠলে তাতে এ দেশের হিন্দুরাও হতে পারেন যথেষ্ট উপকৃত। সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভাই-বোনদের বুঝতে হবে বাংলাদেশই তাদের জন্মভূমি। এখানকার মুসলমানদের মতোই বাংলাদেশ তাদের ঠিকানা। এদেশের হিন্দু-মুসলিমসহ কারোরই ঠিকানা আওয়ামী লীগ হতে পারে না। আর আওয়ামী লীগ ও হিন্দু কিছুতেই হতে পারে না সমার্থক। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এদেশে কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদ পুনঃপ্রবর্তনের জন্যই হিন্দুদের ব্যবহার করছে। ফ্যাসিবাদের কোনো ধর্ম নাই। ফ্যাসিবাদী হিটলার প্রথমে নির্মূল করেছিলেন বামপন্থী কমিউনিস্টদের, তারপর খতম করেছিলেন ডানপন্থী প্রতিপক্ষদের। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি প্রথম ১০ বছর মুসলমানদের কোপালেন, অতঃপর খ্রিস্টান ও শিখদের, এরপর লক্ষ্য হবে দলিত হিন্দুরা, সবশেষে হবে প্রতিপক্ষ উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। এভাবেই ফ্যাসিবাদের কোনো ধর্ম থাকে না। ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদীরা শুধু নিজেকেই ভালোবাসে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মাত্র কিছুকাল আগেও চীনবিরোধী অনেক বুলি আওড়াতেন। কিন্তু এবারের রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত (২২-২৪ অক্টোবর ২০২৪) ব্রিকস সম্মেলনে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। নরেন্দ্র মোদি একেবারে চীনের কোলে উঠে পড়লেন। এর আগে (১৫ অক্টোবর ২০২৪) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়সংকর ১৬ সদস্যের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে সফর করেছিলেন পাকিস্তান। এভাবে ভারত তার কল্পিত শত্রুদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেছে। কেননা শুধু হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে ভারতের বিজেপি সরকার জনগণকে চিরসুখী রাখতে পারবে না। ভারতের সকল মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণ করলেও তা সম্ভব নয়। এ কারণেই বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির এমন রঙ বদল। বর্তমানে ভারত নিজেই তার সমস্যার ভারে জর্জরিত। যেকোনো দিন, যেকোনো সময় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হতে পারে গণঅভ্যুত্থান। এমতাবস্থায় ভারতের বিজেপি সরকারের পক্ষে অন্য দেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাববার প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের বিজেপি সরকার দেশে-বিদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী সম্পর্কে উচ্চাভিলাসী চটকদার যেসব কথাবার্তা বলে তা শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মতলব।
অতএব বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য উচিত কাজ হবে— এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করা ও গণতন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জুলাই গণআন্দোলনে বেশ কিছু সংখ্যক হিন্দু শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধারার আন্দোলনে আরো অনেককে করতে হবে সংযুক্ত। তাদেরকেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে করতে হবে ভারতীয় চক্রান্তের প্রতিবাদ। সেই সাথে ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিম নিপীড়নের বিরুদ্ধেও তাদেরকে হতে হবে সোচ্চার।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে বাংলাদেশে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শেষ হতে পেরেছে হিন্দুদের শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব। নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে ডক্টর ইউনুস সরকার নিয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা; বাংলাদেশ সেনাবাহিনী করেছে নিরলস পরিশ্রম। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন ছিল বিশেষ সক্রিয়। বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামী দলসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দিয়েছিলেন বিশেষ সাহস ও নিরাপত্তা। তাই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র ও উসকানি ব্যর্থ করে দিয়ে এদেশে সফল হতে পারল শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব। এটা ডক্টর ইউনুস সরকারের বিরাট কৃতিত্ব। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের চক্রান্ত। গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে হিন্দুদের নিয়ে আয়োজন করা হয় বিরাট মহাসমাবেশ। হিন্দু পুরোহিতদের নেতৃত্বে চলে বিশেষ আয়োজন। বুঝতে অসুবিধা নেই যে আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতেই এ আয়োজন। ওই হিন্দু সমাবেশে একদল দিকভ্রান্তরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে উড়িয়েছেন হিন্দুত্ববাদের গেরুয়া পতাকা। সনাতন জাগরণ মঞ্চ থেকে ডাক দেয়া হয় ঢাকা লংমার্চ কর্মসূচির। ওই সমাবেশে তারা চেয়েছেন সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন। কিন্তু তাদের চাওয়া উচিত ছিল বাংলাদেশ সুরক্ষা আইন। আসলে এদেশের সাধারণ হিন্দুরা বিজেপির পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুদের উৎসব বা পার্বণ সংখ্যা অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে, হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। সুতরাং এসব পার্বণকে ঘিরে চলমান থাকতে পারে শান্তি-স্থিতিশীলতা বিনষ্টের অপতৎপরতা; ঘটতে পারে অনেক কিছু। হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে উসকে দিতে ইসলাম অবমাননার কৌশল নেয়া হতে পারে। কোথাও পবিত্র কোরআনের মর্যাদাহানি করা হতে পারে, আর কোথাওবা নবীজির (সা:) অবমাননা করা হতে পারে। এসব করে মুসলমানদেরকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ করে তোলা হতে পারে। তাই সাধারণ মুসলমানদেরকে ও তাদের ধর্মীয় ইমামদেরকে এমন ফাঁদ সম্পর্কে হতে হবে বিশেষ সচেতন ও ধৈর্যশীল। চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে এমন কিছু করা একেবারেই উচিত হবে না যাতে তাদেরই হিন্দু প্রতিবেশী ভাই-বোনদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে। এদেশের মুসলমানদের উজ্জল ভাবমূর্তি নষ্ট করাই হল বিজেপি ও আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এজন্যই বিজেপি ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছড়ানো হচ্ছে অনেক গুজব। কিন্তু গুজব সমুদ্রের মাঝেই আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে প্রকৃত ঘটনা; সত্য দিয়ে পরাজিত করতে হবে মিথ্যাকে। আর মিথ্যা তো পরাজিতই হয়।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৫ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
২ দিন আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান, ছাত্র সংসদ, ছাত্ররাজনীতির গতিধারা এবং শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত ক
০১ নভেম্বর ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৫ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
২ দিন আগেসৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন—নির্বাচন হবে। কবে হবে? সে উত্তরটাও সুনির্ধারিতভাবে পাওয়া গেছে বছরের শেষ দিকে এসে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আকাঙ্ক্ষিত তফসিল। সারা বছর যাঁরা ‘নির্বাচন কবে হবে’—এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করেছেন, তাঁরা নির্বাচনের তারিখটা জেনে নিশ্চয়ই স্বস্তি পেয়েছেন। এবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনটা আসছে বছর ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেই ব্যাপারটা সোনায় সোহাগা হবে!
ভবিষ্যতের কথা থাক। লেখাটা আসলে এ বছরের আলোচিত ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দিতে ছাপা হয়েছে, যেন অতীতের ভুল শুধরে নতুন বছরে আমরা ভালো কিছু করে এর সুফল ভোগ করতে পারি। ২০২৫ সালে এত ঘটনা ঘটে গেছে যে একে ‘ঘটনার ঘনঘটার বছর’ বললে নিশ্চয়ই দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ হবে না! দেখুন তো পাঠক, নিচের ঘটনাগুলো আপনার মনে পড়ছে কি না।
২. ২০২৫। সালটা ভীষণ উদ্বেগ নিয়ে কেটেছে অনেকের। শিশু ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি—কী হয়নি এ বছর? অপরাধ যে কয়েক গুণ বেড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মাগুরার আট বছর বয়সী শিশুর ধর্ষণের বিচার চেয়েছিলাম। বছরের শুরুতে সেই শিশুর ওপর নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পুরো দেশ। তবু ঢাকার কেরানীগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। রাঙামাটিতে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ষাট বছরের বৃদ্ধ। ঝিনাইদহে চকলেটের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হয় চার বছর বয়সী শিশু।
৩. ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাথা থেঁতলে মেরে ফেলা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল নেট দুনিয়ায়। ফুটেজটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাস্তব ঘটনার সাক্ষী এটি। তবে এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় একই রকমভাবে একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। এলাকাবাসী সেদিন সাহসের পরিচয় দিয়ে রুখে দিয়েছেন হামলাকারীকে। চাঁদাবাজি নিয়ে মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল বলে দেশের মানুষ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল তখন।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বছরের শুরুর দিকেই এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্যসচিব এহতেশামুল হক হামলার শিকার হন। পরে বেরিয়ে আসে এই হামলার পেছনে হাত রয়েছে চব্বিশের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর। কারাগারে থাকতেই যেখানে তাঁরা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা যায়, সেখানে তাঁদের জামিন দেওয়া কতটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে, তা ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই জনগণ নির্ধারণ করে ফেলেছে।
৪. সোনার দাম যেভাবে এ বছর বেড়েছে, তা এক ব্যাপার বটে! এর চেয়েও বড় ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল যখন এক ব্যবসায়ী নিজের সোনার দোকানে নিজেই ডাকাতি করিয়ে ‘কট’ খেয়ে যান। মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টি এলাকায় শুভ দাস লোক ভাড়া করে নিজের দোকানে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি তাঁর এই চালাকি।
তবে রাজধানীর বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক ছিল। আনোয়ার হোসেন নামে এক সোনার ব্যবসায়ীকে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে ১৬০ ভরি সোনা ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত।
৫. আপনারা হয়তো কোনো কমেডি সিনেমায় দেখে থাকবেন, ছিনতাইকারী শুধু টাকাপয়সা বা ফোন ছিনতাই করে না, গায়ের জামা-পায়ের জুতা সবই নিয়ে চলে যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে সত্যিই যখন এ রকম একটি ঘটনা ঘটল, তখন এর সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও চাপাতি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইকারী চক্রটি চাপাতি ও মোটরসাইকেল ভাড়া দেয় মাঠপর্যায়ে ছিনতাইকারীদের। প্রতিদিন ঢাকার একাধিক এলাকায় চাপাতি আর মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালায় চক্রটি। চাপাতি-মোটরসাইকেলের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হয় না তাদের, ছিনতাই শেষে মালপত্র বিক্রির পর ভাড়া দিতে হয়। এমনকি ছিনতাইয়ের মালপত্র বিক্রিও করতে হয় ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতাদের কাছে। ছিনতাই করার এক আধুনিক প্যাকেজ বটে!
বছরজুড়ে মোহাম্মদপুর এলাকাটিও কিন্তু ছিনতাইয়ের ঘটনার জন্য এক আতঙ্কের জায়গা হয়ে রয়েছে। যখন-তখন চাপাতি নিয়ে তেড়ে আসা তরুণেরা এলাকাটির ত্রাস। পুলিশ তৎপরতা না বাড়ালে সেখানকার অপরাধ চলতেই থাকবে।
৬. বছরের আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড ছিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ড। শুধু হাসির ‘অপরাধে’ প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।
বাড্ডায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপির নেতা কামরুল আহসান সাধনকে। পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পল্লবীতে একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে প্রবেশ করে মুখোশ ও হেলমেট পরা সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়াকে। চট্টগ্রামে চলন্ত প্রাইভেট কার থামিয়ে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে বিএনপি-সমর্থিত এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কারণ নাকি ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে—সবই জটিল রহস্যে মুড়ে আছে।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু পুরো দেশকেই মর্মাহত করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা বর্বরতার সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে গেছে। কবর থেকে উঠিয়ে নুরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে তথাকথিত মব কী অর্জন করতে পেরেছে, তা এক রহস্য। মবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংবাদমাধ্যমও। একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছে সংবাদকর্মীরা।
নাটকীয় কায়দায় যেভাবে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দিনদুপুরে গুলি করা হলো, তা এই বছরটির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদির মৃত্যুর পর সারা দেশ এখনো জনরোষে ফুঁসছে, বিচার চাইছে সবাই। কিন্তু বিচার কার হবে? পলাতক হত্যাকারীকে অবিলম্বে খুঁজে বের করা হোক। তবেই না হবে বিচার।
৭. ২০২৫ সালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনা কোনটি? এর উত্তরে বলতে হয়—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৩১৪ দিন পর দেশে ফিরেছেন। ফিরেই মাটির স্পর্শ নিয়েছেন। জানিয়েছেন দেশ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাঁকে সংবর্ধনা দিতে মানুষের যে ঢল নেমেছিল ঢাকার পূর্বাচলের পথে, তা প্রত্যাবর্তনের এক অভূতপূর্ব দৃশ্য বলে মেনে নিতে হয়।
আবার সেই নির্বাচনে ফিরে আসা যাক। তারেক রহমানের আগমনে দেশের রাজনৈতিক পট কতটা আর কীভাবে পরিবর্তন হবে, তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনের ওপর কেমন আর কতটা প্রভাব পড়বে, তা-ও সময়ই বলে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বলতে পারবেন এ বছর যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা নতুন বছরে ঠেকানো যাবে কি না। কারণ,
দেশের হাল যাঁরা ধরবেন, দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা তো তাঁদেরই হাতে থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা থাকবেন জনগণের হৃদয়ে। হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া কি খুব কঠিন?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত ক
০১ নভেম্বর ২০২৪
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৫ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে। এই চিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য হলো নির্বাচনের ব্যয়।
সুস্থ গণতন্ত্রের প্রধান অন্তরায় হলো টাকার রাজনীতি। নির্বাচনী ব্যয় যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ, নির্বাচনের পেছনে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, বিজয়ীরা ক্ষমতায় গিয়ে সুদে-আসলে সেই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই আদায় করার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশন অনেকগুলো যুগোপযোগী সুপারিশ করেছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) এই সুপারিশগুলোর একটি বড় অংশই উপেক্ষা করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যয় মনিটরিং কমিটি গঠন করে নিবিড় নজরদারি করার প্রস্তাবটি গৃহীত না হওয়া একটি বড় ক্ষতির জায়গা তৈরি করতে পারে ভবিষ্যতে।
‘মনোনয়ন-বাণিজ্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সংস্কৃতি আগে থেকেই শিকড় গেড়ে আছে। যখন একজন প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে মনোনয়ন কেনেন এবং নির্বাচনে লড়েন, তখন জনসেবা নয় বরং ‘বিনিয়োগের মুনাফা’ তোলাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মূল উৎস।
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয় উপেক্ষার কারণে ভবিষ্যতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায়।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যেরও কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে বুঝতে হবে যে, লোকদেখানো সংস্কার দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, তা কেবল কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রায়ণ এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের সচেতন মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার হয়তো নির্বাচনী ব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার করা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের বৈঠকে বিভিন্ন দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার জন্য চা-নাশতা বাবদ রাষ্ট্রের টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল যে আসেনি, তা পরবর্তী সময়ে কমিশনের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হওয়া গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিরসন করা সম্ভব না হলে নির্বাচনের পরে সেগুলো নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কোনো বিলাসিতার বিষয় নয়। এটি রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার অপরিহার্য শর্ত। সরকারকে নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের বাকি সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে একটি প্রকৃত অর্থবহ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অন্যথায় ভোটের নামে অর্থের খেলা চলবেই এবং দুর্নীতি নামক দানবটি আমাদের শাসনব্যবস্থাকে কুরে কুরে খেতে থাকবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত ক
০১ নভেম্বর ২০২৪
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৫ ঘণ্টা আগে
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নকে ভারতের বিজেপি সরকার কিছুতেই মানতে পারছে না। এ কারণে বিজেপি হয়ে উঠেছে বিশেষভাবে বাংলাদেশবিরোধী। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু তথা হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলছে। তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারপ্রধানের নাম বিকৃত ক
০১ নভেম্বর ২০২৪
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের হাল ধরার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলেছে। বাড়ির খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে মুরব্বিদের আড্ডায় এ নিয়ে নানা জটিল প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া না গেলেও ২০২৫ সালের শুরু থেকে প্রধান উপদেষ্টা মোটামুটি জোর কণ্ঠেই বলে গেছেন...
১৫ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজন আয়োজিত ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার: অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাস্তবতার এক করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
১৫ ঘণ্টা আগে