বিভুরঞ্জন সরকার

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই প্রশ্ন আমাদের হৃদয় ঝাঁজরা করে দিচ্ছে, কেন এমন হলো? নিষ্পাপ শিশুদের পুড়িয়ে দিল কোন পাপ? কার পাপ?
২১ জুলাই দুপুরটা যে এমন ভয়াবহ হবে, সেটা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেউই কল্পনাও করেননি। আকাশে বিমান উড়লেও ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারও চোখ কৌতূহলী হয়ে ওঠে না। কারণ বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় অনেক বিমান ওঠানামা নিয়মিত দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় কৌতূহল নিবৃত্ত হয়েছে। কিন্তু ২১ জুলাই বেলা ১টার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছেলেমেয়েরা, যারা ক্লাসরুমের বাইরে ছিল, তাদের কেউ কেউ দেখতে পায় আকাশ থেকে আগুন নেমে আসছে। জুলাইয়ের শেষ দিকের সোমবারের দুপুরটা ছিল একেবারেই সাধারণ। কারও ক্লাস শেষ হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায়, কেউ বন্ধু-সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলছে, কারও কারও আবার ক্লাসও চলছিল। বিমানের শব্দে সচরাচর যাদের চোখ আকাশের দিকে ওঠে না, তারাই হকচকিয়ে গেল একটি বিমানের গর্জে ওঠার শব্দে। আকাশে উড়ে যাওয়ার কথা যে বিমানের, সেই বিমান মুহূর্তেই তার গতিপথ বদলে গোত্তা খেয়ে পড়ল মাইলস্টোনের প্রাঙ্গণে। এরপর একটা বিকট শব্দ, বিস্ফোরণ, আগুন। ছোটাছুটি। হাহাকার। আর্তনাদ। কান্না। শেষ হয়ে গেল কয়েকটি জীবন, চিরবিচ্ছেদ ঘটে গেল মা-বাবা আর সন্তানের, শিক্ষক আর তাঁর ছাত্রের মাঝে। আহত ও দগ্ধদের আর্তনাদে রাজধানীর বাতাস ভারী। রাজধানীর এক আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হলো শোকস্তব্ধ শ্মশানে।
এ দৃশ্য কোনো চলচ্চিত্রের নয়, কোনো সাহিত্যিক কল্পনার ভরকেন্দ্রও নয়—এটা বাস্তবতা। একদম নির্মম, হৃদয়বিদারক বাস্তবতা। যে বাস্তবতায় যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে একটি স্কুলের ভবনের ওপর, যেখানে শিশুরা ছিল নিরাপদ আশ্রয়ে। পরদিন জাতি শোক পালন করল, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হলো। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এসব আনুষ্ঠানিকতা কি পরিবারগুলোর হাহাকার মুছে দিতে পারে? যে মা সকালবেলা সন্তানের টিফিন বেঁধে দিয়েছিলেন, দুপুরেই তাঁর বুকে গাঁথা হলো মৃত্যুসংবাদ—তাঁর শোকের কি কোনো রাষ্ট্রীয় জবাব আছে?
এই তো কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি ভারতের আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা। কিন্তু এবার ঘটল আমাদের দেশেই। এ রকম নির্মমতা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। নিহতদের অনেকেই শিক্ষার্থী, যারা যুদ্ধের কথা জানে পাঠ্যবইয়ে, বিমানকে চেনে শুধুই টয় প্লেন আর ছবি দেখে। অথচ তাদের শেষ মুহূর্তটি কেটেছে দগ্ধ শরীর নিয়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায়। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যুর ছায়া নেমে এল তাদের ওপর, যারা নিজেরা হয়তো কখনো আকাশে ওড়ার কল্পনাও করেনি।
বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, যা প্রশিক্ষণকালীন উড্ডয়নের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ছিলেন নতুন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁর প্রথম একক উড্ডয়ন ছিল এটি। যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কা প্রবলভাবে উত্থাপিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিমানটি কি উড্ডয়নের আগে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল? আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও একজন নবীন পাইলটকে দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করানো হলো কেন? এটা কি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ছিল? প্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং নীতিগত দায় কার?
‘জেটটা আমার চোখের সামনেই ভেঙে পড়েছে, মাত্র ১০ ফুট দূরে... আমি শুধু আগুন আর ধোঁয়া দেখেছি’ বলে জানিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এক অভিভাবক কাঁদছিলেন স্কুলের গেটের বাইরে: ‘ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও।’
এক অভিভাবিকা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘স্কুল তো নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা ছিল, সেটা কীভাবে মৃত্যুফাঁদ হয়ে গেল?’
এ ধরনের অনেকের বক্তব্য আর কান্না এখন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। হাসপাতালের বারান্দায় বসে কেউ কাঁদছেন, কেউ কেবিনে ছুটে যাচ্ছেন, কেউ চিকিৎসকের পেছনে হাঁটছেন—এ দৃশ্য যেন একটি জাতির উদ্ধারকাজ ও নিরাপত্তাব্যবস্থার অসহায়ত্বের দলিল।
বাংলাদেশে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। গত ৩৪ বছরে প্রশিক্ষণ ও রুটিন অভিযানে ৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন মডেলের বিমান নিয়ে। গড়ে প্রতিবছর একটি করে বিমান দুর্ঘটনায় পড়ছে। এর মধ্যে তিনবার চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজের বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কেন এই বিমানগুলো বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে? চীন কি মানসম্পন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ দিয়ে বিমানগুলো সরবরাহ করেছে? তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? যে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কি আগাম শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না?
বলা হচ্ছে, পাইলট তৌকির ইসলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বিমানটিকে জনবসতির বাইরে নিয়ে যেতে। এমন আত্মত্যাগ একজন সৈনিকের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হলেও এটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এসব সতর্কতা তো উড্ডয়নের আগের বিষয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা, প্রটোকল আর প্রযুক্তিগত সতর্কতা যথেষ্ট থাকলে ওড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিল কীভাবে? একজন নবীন পাইলট জীবন দিয়ে দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিলেন বটে, কিন্তু তাঁর জীবন দেওয়ায় কি অন্যদের অবহেলার দায় ঘোচে?
আরও ভয়ংকর হলো ঘটনাস্থল। কেন একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে স্কুল, কলেজ, আবাসিক ভবন, হাসপাতাল—সবই আছে, তার ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান ওড়ানো হচ্ছে? আবার এই প্রশ্নও করতে হয়, বিমানবন্দরের আশপাশে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে বহুতল স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি কেন দেওয়া হলো? আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকে, যেখানে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি নেই। বাংলাদেশে কেন এর ব্যত্যয় ঘটে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এটা জানে না?
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য যদি এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, কে দেবে সেই মায়ের কোলের শূন্যতার মূল্য? কে ফিরিয়ে দেবে সেই শিক্ষার্থীর সহপাঠীকে, যে এখনো জানে না কেন তার পাশে বসার জায়গাটি খালি? রাষ্ট্র যদি চিরন্তন অভ্যস্ততার মতো ঘুরে দাঁড়ায় ‘তদন্ত কমিটি’ আর ‘রুটিন বিবৃতি’ দিয়ে, তবে শোক নয়, ক্ষোভ জমে উঠবে জাতির হৃদয়ে।
এ দুর্ঘটনা আবার প্রমাণ করল, আমরা যতই উন্নয়ন, প্রযুক্তি আর আধুনিকতার বুলি আওড়াই, ততটাই পিছিয়ে নিরাপত্তা, মানবিক মূল্যবোধ আর জবাবদিহির জায়গায়। উন্নত দেশগুলোতে একটিমাত্র সামান্য দুর্ঘটনার পরই পুরো বাহিনী কেঁপে ওঠে, পুরো ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশে? দুর্ঘটনার পর শোক দিবস পালিত হয়, তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, আর তারপর মানুষ সব ভুলে যায়। এমনটাই যেন চিরন্তন চিত্র।
বিমানবাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখন শুধু প্রতিরক্ষার প্রশ্ন নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তা ও নৈতিকতার প্রশ্ন। যুদ্ধবিমান একধরনের শক্তির প্রতীক, আর প্রশিক্ষণ তার ভবিষ্যতের পাথেয়। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ যদি বেসামরিক শিশু ও নিরপরাধ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, তাহলে তার নাম কি ‘প্রশিক্ষণ’, না ‘অভিশাপ’?
আমরা বারবার শুনি, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা, ইচ্ছাকৃত নয়।’ কিন্তু বারবার এই একই দুর্ঘটনা হলে সেটাকে আর দুর্ঘটনা বলা যায় না, সেটা হয়ে যায় অবহেলার ফল। ৩৪ বছরে ৩২টি দুর্ঘটনা মানে প্রায় প্রতিবছর আমরা প্রস্তুত থাকি আরেকটি কান্নার জন্য? প্রস্তুত থাকি আরও অনেক মায়ের বুক খালি হওয়ার সংবাদ পাওয়ার জন্য? এটা কি রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি নয়?
এ ঘটনার দায় একা বিমানবাহিনী কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। দায় রাষ্ট্রের, সমাজের, আমাদের সবার। কারণ আমরা এসব ঘটনা ভুলে যেতে শিখে গেছি। আমরা জানি ‘তদন্ত চলছে’, ‘পাইলট বীরত্ব দেখিয়েছেন’, ‘সরকার সহানুভূতিশীল’—এসব বাক্য আমাদের সান্ত্বনা দেয়, প্রতিবাদের শক্তি কেড়ে নেয়। দুর্ঘটনাস্থল কোনো বুলেটপ্রুফ অপারেশনক্ষেত্র ছিল না, এটা ছিল একটি স্কুল, ছিল অসংখ্য শিশু-কিশোর। প্রশিক্ষণের জন্য একটি যুদ্ধবিমান, যেটা আকাশে ওড়ার কথা ছিল গৌরব নিয়ে, সেটা বিধ্বস্ত হলো মাথা নুইয়ে। বিমান হলো গতির প্রতীক। সেই বিমান যেন মানুষের জীবনে চির যতি টেনে দেওয়ার উপকরণ না হয়।
এখন প্রয়োজন আত্মসমালোচনা। প্রয়োজন সাহসিকতার সঙ্গে স্বীকার করা যে আমাদের ব্যবস্থায় গলদ আছে। প্রয়োজন পুরো বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের, যেখানে প্রতিটি যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণ হবে আন্তর্জাতিক মানে, প্রতিটি উড্ডয়নের আগে পর্যবেক্ষণ করা হবে প্রযুক্তিগতভাবে, আর প্রশিক্ষণ হবে জনবসতিহীন এলাকায়।
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ তোমাদের জন্য কান্না থামে না। তোমরা ঘুমিয়ে আছো, অথচ তোমাদের জন্য এই জাতি জেগে আছে ভেজা চোখে। মাইলস্টোন স্কুলে যে বেদনার বর্ণরেখা আঁকা হয়েছে, তা শুধু একটি স্কুলের নয়, তা এ দেশের প্রতিটি শিশুর মুখ থেকে হাসি কেড়ে নিয়েছে। আজ এই শহর, এই দেশ, এই আকাশ—সবাই নীরব শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সেই কচি প্রাণগুলোর প্রতি, যাদের জীবন থেমে গেছে ঠিক তখনই, যখন জীবন কেবল শুরু হচ্ছিল।
শোক প্রকাশের ভাষা আজ আমাদের নেই। আজ শুধু বলি—ক্ষমা করো আমাদের। আমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারিনি। তোমাদের চোখে যে স্বপ্ন ছিল, তা যেন অন্তত এই ধ্বংসের মাটির ভেতরেও একটি নতুন দিশা দেখায়। যেন এই শোক আমাদের ঘুম না ভাঙার দায়ে না ফেলে, বরং জাগিয়ে রাখে।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই প্রশ্ন আমাদের হৃদয় ঝাঁজরা করে দিচ্ছে, কেন এমন হলো? নিষ্পাপ শিশুদের পুড়িয়ে দিল কোন পাপ? কার পাপ?
২১ জুলাই দুপুরটা যে এমন ভয়াবহ হবে, সেটা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেউই কল্পনাও করেননি। আকাশে বিমান উড়লেও ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারও চোখ কৌতূহলী হয়ে ওঠে না। কারণ বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় অনেক বিমান ওঠানামা নিয়মিত দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় কৌতূহল নিবৃত্ত হয়েছে। কিন্তু ২১ জুলাই বেলা ১টার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছেলেমেয়েরা, যারা ক্লাসরুমের বাইরে ছিল, তাদের কেউ কেউ দেখতে পায় আকাশ থেকে আগুন নেমে আসছে। জুলাইয়ের শেষ দিকের সোমবারের দুপুরটা ছিল একেবারেই সাধারণ। কারও ক্লাস শেষ হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায়, কেউ বন্ধু-সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলছে, কারও কারও আবার ক্লাসও চলছিল। বিমানের শব্দে সচরাচর যাদের চোখ আকাশের দিকে ওঠে না, তারাই হকচকিয়ে গেল একটি বিমানের গর্জে ওঠার শব্দে। আকাশে উড়ে যাওয়ার কথা যে বিমানের, সেই বিমান মুহূর্তেই তার গতিপথ বদলে গোত্তা খেয়ে পড়ল মাইলস্টোনের প্রাঙ্গণে। এরপর একটা বিকট শব্দ, বিস্ফোরণ, আগুন। ছোটাছুটি। হাহাকার। আর্তনাদ। কান্না। শেষ হয়ে গেল কয়েকটি জীবন, চিরবিচ্ছেদ ঘটে গেল মা-বাবা আর সন্তানের, শিক্ষক আর তাঁর ছাত্রের মাঝে। আহত ও দগ্ধদের আর্তনাদে রাজধানীর বাতাস ভারী। রাজধানীর এক আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিণত হলো শোকস্তব্ধ শ্মশানে।
এ দৃশ্য কোনো চলচ্চিত্রের নয়, কোনো সাহিত্যিক কল্পনার ভরকেন্দ্রও নয়—এটা বাস্তবতা। একদম নির্মম, হৃদয়বিদারক বাস্তবতা। যে বাস্তবতায় যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে একটি স্কুলের ভবনের ওপর, যেখানে শিশুরা ছিল নিরাপদ আশ্রয়ে। পরদিন জাতি শোক পালন করল, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হলো। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এসব আনুষ্ঠানিকতা কি পরিবারগুলোর হাহাকার মুছে দিতে পারে? যে মা সকালবেলা সন্তানের টিফিন বেঁধে দিয়েছিলেন, দুপুরেই তাঁর বুকে গাঁথা হলো মৃত্যুসংবাদ—তাঁর শোকের কি কোনো রাষ্ট্রীয় জবাব আছে?
এই তো কিছুদিন আগেই আমরা দেখেছি ভারতের আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা। কিন্তু এবার ঘটল আমাদের দেশেই। এ রকম নির্মমতা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। নিহতদের অনেকেই শিক্ষার্থী, যারা যুদ্ধের কথা জানে পাঠ্যবইয়ে, বিমানকে চেনে শুধুই টয় প্লেন আর ছবি দেখে। অথচ তাদের শেষ মুহূর্তটি কেটেছে দগ্ধ শরীর নিয়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায়। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মৃত্যুর ছায়া নেমে এল তাদের ওপর, যারা নিজেরা হয়তো কখনো আকাশে ওড়ার কল্পনাও করেনি।
বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান, যা প্রশিক্ষণকালীন উড্ডয়নের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ছিলেন নতুন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁর প্রথম একক উড্ডয়ন ছিল এটি। যান্ত্রিক ত্রুটির আশঙ্কা প্রবলভাবে উত্থাপিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিমানটি কি উড্ডয়নের আগে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল? আন্তর্জাতিক আইনে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও একজন নবীন পাইলটকে দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে উড্ডয়ন করানো হলো কেন? এটা কি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত ছিল? প্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং নীতিগত দায় কার?
‘জেটটা আমার চোখের সামনেই ভেঙে পড়েছে, মাত্র ১০ ফুট দূরে... আমি শুধু আগুন আর ধোঁয়া দেখেছি’ বলে জানিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এক অভিভাবক কাঁদছিলেন স্কুলের গেটের বাইরে: ‘ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও।’
এক অভিভাবিকা চিৎকার করে বলছিলেন, ‘স্কুল তো নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা ছিল, সেটা কীভাবে মৃত্যুফাঁদ হয়ে গেল?’
এ ধরনের অনেকের বক্তব্য আর কান্না এখন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। হাসপাতালের বারান্দায় বসে কেউ কাঁদছেন, কেউ কেবিনে ছুটে যাচ্ছেন, কেউ চিকিৎসকের পেছনে হাঁটছেন—এ দৃশ্য যেন একটি জাতির উদ্ধারকাজ ও নিরাপত্তাব্যবস্থার অসহায়ত্বের দলিল।
বাংলাদেশে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়। গত ৩৪ বছরে প্রশিক্ষণ ও রুটিন অভিযানে ৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন মডেলের বিমান নিয়ে। গড়ে প্রতিবছর একটি করে বিমান দুর্ঘটনায় পড়ছে। এর মধ্যে তিনবার চীনের তৈরি এফ-৭ সিরিজের বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কেন এই বিমানগুলো বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে? চীন কি মানসম্পন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ দিয়ে বিমানগুলো সরবরাহ করেছে? তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে? যে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো কি আগাম শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না?
বলা হচ্ছে, পাইলট তৌকির ইসলাম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন বিমানটিকে জনবসতির বাইরে নিয়ে যেতে। এমন আত্মত্যাগ একজন সৈনিকের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হলেও এটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এসব সতর্কতা তো উড্ডয়নের আগের বিষয়। নিরাপত্তাব্যবস্থা, প্রটোকল আর প্রযুক্তিগত সতর্কতা যথেষ্ট থাকলে ওড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিল কীভাবে? একজন নবীন পাইলট জীবন দিয়ে দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিলেন বটে, কিন্তু তাঁর জীবন দেওয়ায় কি অন্যদের অবহেলার দায় ঘোচে?
আরও ভয়ংকর হলো ঘটনাস্থল। কেন একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, যেখানে স্কুল, কলেজ, আবাসিক ভবন, হাসপাতাল—সবই আছে, তার ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান ওড়ানো হচ্ছে? আবার এই প্রশ্নও করতে হয়, বিমানবন্দরের আশপাশে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে বহুতল স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি কেন দেওয়া হলো? আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকে, যেখানে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি নেই। বাংলাদেশে কেন এর ব্যত্যয় ঘটে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এটা জানে না?
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য যদি এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, কে দেবে সেই মায়ের কোলের শূন্যতার মূল্য? কে ফিরিয়ে দেবে সেই শিক্ষার্থীর সহপাঠীকে, যে এখনো জানে না কেন তার পাশে বসার জায়গাটি খালি? রাষ্ট্র যদি চিরন্তন অভ্যস্ততার মতো ঘুরে দাঁড়ায় ‘তদন্ত কমিটি’ আর ‘রুটিন বিবৃতি’ দিয়ে, তবে শোক নয়, ক্ষোভ জমে উঠবে জাতির হৃদয়ে।
এ দুর্ঘটনা আবার প্রমাণ করল, আমরা যতই উন্নয়ন, প্রযুক্তি আর আধুনিকতার বুলি আওড়াই, ততটাই পিছিয়ে নিরাপত্তা, মানবিক মূল্যবোধ আর জবাবদিহির জায়গায়। উন্নত দেশগুলোতে একটিমাত্র সামান্য দুর্ঘটনার পরই পুরো বাহিনী কেঁপে ওঠে, পুরো ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশে? দুর্ঘটনার পর শোক দিবস পালিত হয়, তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, আর তারপর মানুষ সব ভুলে যায়। এমনটাই যেন চিরন্তন চিত্র।
বিমানবাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখন শুধু প্রতিরক্ষার প্রশ্ন নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তা ও নৈতিকতার প্রশ্ন। যুদ্ধবিমান একধরনের শক্তির প্রতীক, আর প্রশিক্ষণ তার ভবিষ্যতের পাথেয়। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ যদি বেসামরিক শিশু ও নিরপরাধ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, তাহলে তার নাম কি ‘প্রশিক্ষণ’, না ‘অভিশাপ’?
আমরা বারবার শুনি, ‘এটা নিছক দুর্ঘটনা, ইচ্ছাকৃত নয়।’ কিন্তু বারবার এই একই দুর্ঘটনা হলে সেটাকে আর দুর্ঘটনা বলা যায় না, সেটা হয়ে যায় অবহেলার ফল। ৩৪ বছরে ৩২টি দুর্ঘটনা মানে প্রায় প্রতিবছর আমরা প্রস্তুত থাকি আরেকটি কান্নার জন্য? প্রস্তুত থাকি আরও অনেক মায়ের বুক খালি হওয়ার সংবাদ পাওয়ার জন্য? এটা কি রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি নয়?
এ ঘটনার দায় একা বিমানবাহিনী কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। দায় রাষ্ট্রের, সমাজের, আমাদের সবার। কারণ আমরা এসব ঘটনা ভুলে যেতে শিখে গেছি। আমরা জানি ‘তদন্ত চলছে’, ‘পাইলট বীরত্ব দেখিয়েছেন’, ‘সরকার সহানুভূতিশীল’—এসব বাক্য আমাদের সান্ত্বনা দেয়, প্রতিবাদের শক্তি কেড়ে নেয়। দুর্ঘটনাস্থল কোনো বুলেটপ্রুফ অপারেশনক্ষেত্র ছিল না, এটা ছিল একটি স্কুল, ছিল অসংখ্য শিশু-কিশোর। প্রশিক্ষণের জন্য একটি যুদ্ধবিমান, যেটা আকাশে ওড়ার কথা ছিল গৌরব নিয়ে, সেটা বিধ্বস্ত হলো মাথা নুইয়ে। বিমান হলো গতির প্রতীক। সেই বিমান যেন মানুষের জীবনে চির যতি টেনে দেওয়ার উপকরণ না হয়।
এখন প্রয়োজন আত্মসমালোচনা। প্রয়োজন সাহসিকতার সঙ্গে স্বীকার করা যে আমাদের ব্যবস্থায় গলদ আছে। প্রয়োজন পুরো বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের, যেখানে প্রতিটি যুদ্ধবিমান রক্ষণাবেক্ষণ হবে আন্তর্জাতিক মানে, প্রতিটি উড্ডয়নের আগে পর্যবেক্ষণ করা হবে প্রযুক্তিগতভাবে, আর প্রশিক্ষণ হবে জনবসতিহীন এলাকায়।
প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ তোমাদের জন্য কান্না থামে না। তোমরা ঘুমিয়ে আছো, অথচ তোমাদের জন্য এই জাতি জেগে আছে ভেজা চোখে। মাইলস্টোন স্কুলে যে বেদনার বর্ণরেখা আঁকা হয়েছে, তা শুধু একটি স্কুলের নয়, তা এ দেশের প্রতিটি শিশুর মুখ থেকে হাসি কেড়ে নিয়েছে। আজ এই শহর, এই দেশ, এই আকাশ—সবাই নীরব শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সেই কচি প্রাণগুলোর প্রতি, যাদের জীবন থেমে গেছে ঠিক তখনই, যখন জীবন কেবল শুরু হচ্ছিল।
শোক প্রকাশের ভাষা আজ আমাদের নেই। আজ শুধু বলি—ক্ষমা করো আমাদের। আমরা তোমাদের রক্ষা করতে পারিনি। তোমাদের চোখে যে স্বপ্ন ছিল, তা যেন অন্তত এই ধ্বংসের মাটির ভেতরেও একটি নতুন দিশা দেখায়। যেন এই শোক আমাদের ঘুম না ভাঙার দায়ে না ফেলে, বরং জাগিয়ে রাখে।

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১ দিন আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১ দিন আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১ দিন আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
২ দিন আগে
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।
অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই...
২৩ জুলাই ২০২৫
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১ দিন আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১ দিন আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
২ দিন আগেরুশো তাহের

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই...
২৩ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১ দিন আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১ দিন আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই...
২৩ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১ দিন আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১ দিন আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

প্রতিদিন সূর্য ওঠে, শিশুরা ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়। ব্যাগে বই-খাতার ফাঁকে ছোট ছোট স্বপ্ন থাকে—কেউ হবে বৈজ্ঞানিক, কেউ বলে ‘আমি পাইলট হব’, কারও চোখে ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা। কেউ কারও প্রিয় বন্ধু, কেউ ভাইয়ের মতো, কেউ স্কুলে প্রথম হয়ে মা-বাবার গর্ব হবে বলে শপথ করে। কিন্তু আজ...সব ভুলে গিয়ে শুধু একটাই...
২৩ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১ দিন আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১ দিন আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১ দিন আগে