আমীন আল রশীদ
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেদিন (৮ আগস্ট) দেশে এলেন, সেদিন বিমানবন্দরে তিনি গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, ‘আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, ধর্ম, রীতিনীতি থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই একটা পরিবারের সদস্য।’
সম্প্রতি নানা কারণে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়েন এবং বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস গত বুধবার রাজনৈতিক দল এবং পরদিন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যে সংলাপ করলেন, সেখানেও তিনি মতানৈক্যসহ ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। আমাদের পার্থক্য থাকলেও, আমরা কেউ কারও শত্রু নই। আমরা বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক কাতারে।’
বস্তুত ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশ যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে এখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে এবং এখানে কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে যেসব প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য ছাড়া তার সঠিক জবাব দেওয়া কঠিন। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই যদি এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যায় যে, যার যে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয় থাকুক না কেন, দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ; দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নেই এবং বাংলাদেশ সংকটে পড়ে গেলে সবাই তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয় ভুলে ১৯৭১ সালের মতো আবারও অস্ত্র হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত—তাহলেই কেবল যেকোনো প্রোপাগান্ডার জবাব দেওয়া সহজ।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যে অনিরাপদ নন এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও যে সেটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক চিত্র নয়—এই বার্তাটি খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই এসেছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং দেশের কয়েকটি সীমান্তে ভারতীয় উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন হিন্দুধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। ২ ডিসেম্বর রাতে তাঁরা হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি। এটা আমাদের পরিচয়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবার একটাই পরিচয়, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা এক।’
বাংলাদেশের মানুষের এই শক্তির কথা আমরা পাই জীবনানন্দের কবিতায়ও:
‘মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে-পুণ্য ভারতপুরে
পূজার ঘণ্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে-সুরে!’
সুতরাং, হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলমান যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক বজায় রেখেছে, শুধু রাজনৈতিক মত-ভিন্নমতের কারণে সেই সম্প্রীতিতে চিড় ধরবে বা শুধু ভোটের রাজনীতির কাছে এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য হেরে যাবে—তা হতে পারে না।
রাজনৈতিক মতভেদ, ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ধর্ম ও আদর্শের মানুষেরা একই প্ল্যাটফর্মে বসে সম্মিলিতভাবে যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তখনই কেবল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব। যিনি যে দলের, যে ধর্মের, যে অঞ্চলের কিংবা আদর্শের মানুষই হন না কেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে তিনি নিরাপস থাকবেন, এটিই কাঙ্ক্ষিত। আবার ভিন্নমত পোষণ করলেই যে সব সময় সব মতামত গ্রহণ করা যায়, তা-ও নয়। নয় বলেই সারা পৃথিবীতেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বলে একটা কথা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে যখন নতুন রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করা হলো, তখনো খোদ সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির ছয়জন সদস্য সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ওপর তাঁদের মতভিন্নতাসূচক বক্তব্য বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। কেননা, তাঁরা যেসব মতামত দিয়েছিলেন, সেগুলো গণপরিষদে গৃহীত না হলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে জানতে পারে যে তাদের পূর্বপুরুষদের কেউ কেউ এই বিষয়ে কী অবস্থান নিয়েছিলেন বা তাঁরা কোন কোন বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই ভিন্নমত দেওয়ার কারণে তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়নি বা তাঁরা কোনো ধরনের আক্রমণেরও শিকার হননি। এটাই গণতন্ত্র। এটাই রাজনীতি। আমরা স্মরণ করতে পারি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের (১৯৪২-২০২২) কথা—যিনি ইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু এই ভিন্নমত পোষণের কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়নি।
ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা তথা সব মতামতকে আমলে নিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেটি বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত—সে রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি সরকার বা সরকারি দলের বিরোধী বলেই সব বিষয়ে বিরোধিতা করতে হবে, এই চিন্তাটিও ক্ষতিকর। দেশ ও মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন সরকারের সহযোগী হতে হয়, তেমনি সরকারও যদি মনে করে যে বিরোধীমতের কারও কাছ থেকে তারা কোনো পরামর্শ না নিয়ে নিজেদের মতো করে একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে—সেটিও ক্ষতিকর।
যেকোনো ভিন্নমত বা সমালোচনা ব্যক্তিমানুষকে তো বটেই, সরকারকেও সঠিক লাইনে রাখতে সহযোগিতা করে। সরকার যদি মনে করে রাষ্ট্রের সব মানুষ, সব গণমাধ্যম, সব লেখক শুধু তাদের প্রশংসাই করবে—তাহলে সেটি সরকারের ভিত দুর্বল করে দেয়। সরকারের উচিত মানুষের কথা বলা তথা তার বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিতে এমন একটি স্বাধীন ও নির্ভয় পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া, যেখানে যেকোনো মত ও আদর্শের মানুষ যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে ভয় না পায়। ভয় পেলে সে ভেতরে ভেতরে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ হতে থাকে। সুতরাং সরকারের নিজের স্থিতিশীলতার জন্যও নাগরিক ও গণমাধ্যমকে চাপ ও ভয়মুক্ত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে সরকারকে এই বার্তাটিও তার অংশীদারদের দেওয়া উচিত যে শুধু মতপ্রকাশের জন্য, তাতে সেই মতামতটি যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, কাউকে আক্রমণ করা যাবে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যাগিং এখন একটি বিরাট অসুখ। এই অসুখ ভেতরে ভেতরে পুরো জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলছে। মানুষের মধ্যে রাগ ও ক্ষোভের বোমা তৈরি হচ্ছে—যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। অতএব সব রাজনৈতিক, ধর্মীয়, আদর্শিক ও লৈঙ্গিক ভিন্নতাসহ সারা দেশের মানুষ যে একটি পরিবার এবং শুধু ভিন্নমতের কারণে কেউ যে কারও শত্রু হতে পারে না—এই বোধটি সবার মধ্যে জাগ্রত হওয়া জরুরি।
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেদিন (৮ আগস্ট) দেশে এলেন, সেদিন বিমানবন্দরে তিনি গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, ‘আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, ধর্ম, রীতিনীতি থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই একটা পরিবারের সদস্য।’
সম্প্রতি নানা কারণে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়েন এবং বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস গত বুধবার রাজনৈতিক দল এবং পরদিন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যে সংলাপ করলেন, সেখানেও তিনি মতানৈক্যসহ ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ‘নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। আমাদের পার্থক্য থাকলেও, আমরা কেউ কারও শত্রু নই। আমরা বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক কাতারে।’
বস্তুত ৫ আগস্টের পরে বাংলাদেশ যে ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে এখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অত্যাচার হচ্ছে এবং এখানে কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে যেসব প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য ছাড়া তার সঠিক জবাব দেওয়া কঠিন। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই যদি এই বার্তাটি পৌঁছে দেওয়া যায় যে, যার যে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয় থাকুক না কেন, দেশের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ; দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নেই এবং বাংলাদেশ সংকটে পড়ে গেলে সবাই তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিচয় ভুলে ১৯৭১ সালের মতো আবারও অস্ত্র হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত—তাহলেই কেবল যেকোনো প্রোপাগান্ডার জবাব দেওয়া সহজ।
আশার কথা হলো, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যে অনিরাপদ নন এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও যে সেটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক চিত্র নয়—এই বার্তাটি খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই এসেছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং দেশের কয়েকটি সীমান্তে ভারতীয় উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন হিন্দুধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। ২ ডিসেম্বর রাতে তাঁরা হল থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি। এটা আমাদের পরিচয়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সবার একটাই পরিচয়, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা এক।’
বাংলাদেশের মানুষের এই শক্তির কথা আমরা পাই জীবনানন্দের কবিতায়ও:
‘মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে-পুণ্য ভারতপুরে
পূজার ঘণ্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে-সুরে!’
সুতরাং, হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলমান যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক বজায় রেখেছে, শুধু রাজনৈতিক মত-ভিন্নমতের কারণে সেই সম্প্রীতিতে চিড় ধরবে বা শুধু ভোটের রাজনীতির কাছে এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য হেরে যাবে—তা হতে পারে না।
রাজনৈতিক মতভেদ, ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ধর্ম ও আদর্শের মানুষেরা একই প্ল্যাটফর্মে বসে সম্মিলিতভাবে যখন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তখনই কেবল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব। যিনি যে দলের, যে ধর্মের, যে অঞ্চলের কিংবা আদর্শের মানুষই হন না কেন, দেশ ও মানুষের স্বার্থে তিনি নিরাপস থাকবেন, এটিই কাঙ্ক্ষিত। আবার ভিন্নমত পোষণ করলেই যে সব সময় সব মতামত গ্রহণ করা যায়, তা-ও নয়। নয় বলেই সারা পৃথিবীতেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বলে একটা কথা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে যখন নতুন রাষ্ট্রের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করা হলো, তখনো খোদ সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির ছয়জন সদস্য সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের ওপর তাঁদের মতভিন্নতাসূচক বক্তব্য বা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। কেননা, তাঁরা যেসব মতামত দিয়েছিলেন, সেগুলো গণপরিষদে গৃহীত না হলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে জানতে পারে যে তাদের পূর্বপুরুষদের কেউ কেউ এই বিষয়ে কী অবস্থান নিয়েছিলেন বা তাঁরা কোন কোন বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই ভিন্নমত দেওয়ার কারণে তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়নি বা তাঁরা কোনো ধরনের আক্রমণেরও শিকার হননি। এটাই গণতন্ত্র। এটাই রাজনীতি। আমরা স্মরণ করতে পারি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের (১৯৪২-২০২২) কথা—যিনি ইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু এই ভিন্নমত পোষণের কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়নি।
ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা তথা সব মতামতকে আমলে নিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেটি বাস্তবসম্মত ও যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত—সে রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন সরকারের দায়িত্ব, তেমনি সরকার বা সরকারি দলের বিরোধী বলেই সব বিষয়ে বিরোধিতা করতে হবে, এই চিন্তাটিও ক্ষতিকর। দেশ ও মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন সরকারের সহযোগী হতে হয়, তেমনি সরকারও যদি মনে করে যে বিরোধীমতের কারও কাছ থেকে তারা কোনো পরামর্শ না নিয়ে নিজেদের মতো করে একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে—সেটিও ক্ষতিকর।
যেকোনো ভিন্নমত বা সমালোচনা ব্যক্তিমানুষকে তো বটেই, সরকারকেও সঠিক লাইনে রাখতে সহযোগিতা করে। সরকার যদি মনে করে রাষ্ট্রের সব মানুষ, সব গণমাধ্যম, সব লেখক শুধু তাদের প্রশংসাই করবে—তাহলে সেটি সরকারের ভিত দুর্বল করে দেয়। সরকারের উচিত মানুষের কথা বলা তথা তার বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিতে এমন একটি স্বাধীন ও নির্ভয় পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া, যেখানে যেকোনো মত ও আদর্শের মানুষ যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে ভয় না পায়। ভয় পেলে সে ভেতরে ভেতরে হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ হতে থাকে। সুতরাং সরকারের নিজের স্থিতিশীলতার জন্যও নাগরিক ও গণমাধ্যমকে চাপ ও ভয়মুক্ত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে সরকারকে এই বার্তাটিও তার অংশীদারদের দেওয়া উচিত যে শুধু মতপ্রকাশের জন্য, তাতে সেই মতামতটি যতই অযৌক্তিক হোক না কেন, কাউকে আক্রমণ করা যাবে না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যাগিং এখন একটি বিরাট অসুখ। এই অসুখ ভেতরে ভেতরে পুরো জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলছে। মানুষের মধ্যে রাগ ও ক্ষোভের বোমা তৈরি হচ্ছে—যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। অতএব সব রাজনৈতিক, ধর্মীয়, আদর্শিক ও লৈঙ্গিক ভিন্নতাসহ সারা দেশের মানুষ যে একটি পরিবার এবং শুধু ভিন্নমতের কারণে কেউ যে কারও শত্রু হতে পারে না—এই বোধটি সবার মধ্যে জাগ্রত হওয়া জরুরি।
আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও লেখক
২০০৫ সালে আমি ভিয়েতনামের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথম ড্রাগন ফলের চিত্র তুলে ধরেছিলাম। তখন দেশের মানুষের কাছে ড্রাগন ফল তেমন পরিচিত ছিল না। তারও ১২-১৩ বছর পর বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হতে থাকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে অচেনা ফল ছিল ড্রাগন।
১৬ ঘণ্টা আগেআমাদের এই অঞ্চলের গ্রামের একটি প্রবাদ বাক্য আছে—পেটে খেলে পিঠে সয়। অর্থাৎ আপনি যদি কাউকে পেট ভরে ভাত দেন, তারপর যদি কোনো কাজ দেন, কোনো কাজের জন্য তাকে চাপ দেন অথবা বকাঝকা করেন, সে নির্দ্বিধায় এই কাজ করতে পারে। এখনো আমাদের দেশ কেমন চলছে, আমরা কেমন আছি, আমাদের সমাজব্যবস্থা কেমন চলছে
১৬ ঘণ্টা আগেপৃথিবী তার অক্ষকে কেন্দ্র করে যে অভিমুখে ঘুরছে, তার অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটি ঘুরছে ঠিক তার বিপরীত অভিমুখে। সম্প্রতি নেচার জিয়োসায়েন্সের একটি গবেষণায় বিষয়টিকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কিছুদিন আগেই পৃথিবীর কেন্দ্র ঘোরা থামিয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকেই এটি উল্টোমুখে ঘোরা শুরু করেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে১৭ জানুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদের জমানায় শিকারি সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয় আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে