জাহীদ রেজা নূর

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, সে কথা জানিয়ে বললাম, ‘আজ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকী!’
‘আজ নাকি! তাইতো!’ বলে মৃদু হাসলেন।
বললাম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু বলবেন?’
বললেন, ‘সবই তো লিখেছি। আর এখন কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’
আমরা যারা সন্জীদা খাতুনের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি, তাদের অনেকেই জানি, সেই ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন তিনি। আবেদনপত্রের যে শর্তাবলি ছিল, তার একটি ছিল মেয়েদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে। আর যদি কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নাও ঠেলা সামলাও!
খুবই কঠিন শর্ত। কিন্তু ভর্তি হতে হলে শর্ত তো মানতেই হবে। মেয়েদের পড়াশোনা তখনো খুব সহজ কিছু ছিল না। সন্জীদা খাতুনের পড়ালেখার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তাই সেই শর্তে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য প্রযোজক নাজির আহমেদের বোন শামসুন্নাহার সন্জীদা খাতুনের এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। তিনি একদিন সন্জীদাকে বললেন, ‘চলো আমরা বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে কিছু একটা করি।’
তিনি চাইছিলেন শাপমোচন নাটকটি করতে। সেই নাটকের গানগুলো যেন সন্জীদা করেন, সেটাই তিনি চাইছিলেন। পুরো নাটক নয়, কোনো কোনো অংশের সঙ্গে কিছু পাঠ, কিছু অভিনয় মিলিয়ে তৈরি করেছিলেন শাপমোচন। অভিনয় হয়েছিল হুদা হাউজের একতলার একটি ঘরে চৌকি এদিক-ওদিক করে।
সে সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। প্রদীপ জোগাড় করা হলো। সলতেও পাওয়া গেল। কিন্তু তেল পাওয়া যাবে কোথায়। নেপালি একটি মেয়ে প্রতিদিন এক চামচ করে সরষের তেল খেত। ওর নাম ফ্লোরা জেমস। প্রদীপের জন্য মেয়েটি তার খাঁটি সরষের তেল দিয়ে সাহায্য করল মেয়েদের।
অনুষ্ঠান খারাপ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের করা দুটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সনজীদা খাতুন। তখন যে নিয়ম ছিল, তার অন্যথা অবশ্য হয়নি। মেয়েদের নাটকে মেয়েরাই অভিনয় করত, আর ছেলেদের নাটকে ছেলেরা। অর্থাৎ মেয়েদের নাটকে পুরুষ চরিত্রগুলো করত মেয়েরাই, আবার ছেলেদের নাটকে নারী চরিত্রগুলো করত ছেলেরা। রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকে সনজীদা খাতুন সেজেছিলেন সখা দেবদত্ত। কুলসুম হুদা সেজেছিলেন রাজা বিক্রম দেব, সাবেরী মোস্তফা হয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ত্রিবেদী, সাফিয়া খাতুন হয়েছিলেন নরেশ।
সে নাটকের মহড়ায় প্রম্পট করছিলেন মনিমুন্নেসা। মহড়ার সময় রাজা বিক্রম দেব বলবেন, ‘এবার তাকে ডাকবো প্রকাশ্যে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে—মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে!’
কুলসুম হুদা শেষ অংশটায় বলে উঠলেন, ‘ধ্বজা তুলে।’
মনিমুন্নেসা ফিসফিস করে বললেন, ‘হ্যাঁ এবার বললেই হলো ‘মাথা উড়িয়ে।’
সবার হাসাহাসিতে নাটকের মহড়া কিছুক্ষণ বন্ধ রইল।
শরৎচন্দ্রের দত্তা উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বিজয়া’ নামে করা হয়েছিল। এ নাটকে বিলাস বিহারী হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরীর ছোট বোন কনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের মা। সন্জীদা খাতুনের ভাগে পড়েছিল রাসবিহারী চরিত্রটি। সন্জীদা খাতুন বললেন, ‘সব ভূমিকার জন্য লোক পাওয়া যাবে, শুধু চাকরের ভূমিকায় কেউ অভিনয় করবে না। আমি ওই ভূমিকায় জন্য আছি।’
শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরের ভূমিকায় মহড়া করে গেলেন।
নাটকের সময় বেশ মজা হয়েছিল। শেষ দিকের এক দৃশ্যে বিলাস বিহারীকে পিতা রাসবিহারী প্রচণ্ড বকাবকি করবেন। রাসবিহারী চরিত্রে নাদিরা জোরে ধমক দিয়ে হাসতে শুরু করলেন। বিলাস বিহারী চরিত্রের কনা জবাব দিতে গিয়ে হাসতে লাগলেন। দারুণ হাসাহাসি হচ্ছিল। উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক সৈয়দ আলী আহসান স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে হাসতে লাগলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে শোনা যায় এক গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর প্রত্যেক ছাত্রকে দুটো পরীক্ষায় পাস করা ছিল আবশ্যিক। শরীরচর্চা, আর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে ছিল পরীক্ষা। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়েছেন আনিসুজ্জামান। শরীরচর্চা বিভাগের সহকারী পরিচালক বাঁশি বাজিয়ে নতুন ছাত্রদের দৌড়াতে বললেন, হাই জাম্প–লং জাম্প দিতে বললেন। আনিসুজ্জামানের এগুলো কিছুই ভালো লাগত না। তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, যারা প্রথমবার ফিরে যাচ্ছে, তাদের দ্বিতীয়বার আরও একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তৃতীয়বার সেটা হয়ে যাচ্ছে আরও কঠিন। খানিকটা ইচ্ছা করেই আনিসুজ্জামান দ্বিতীয়বারেই ব্যর্থ হলেন। সহকারী পরিচালক বললেন, নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। আর কোনো কাজ দিলেন না আনিসুজ্জামানকে।
খুশি মনে ফিরে এলেন আনিসুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল খুবই জরুরি বিষয়। ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই ডাকসু কমনরুমে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা নিয়ে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এমএ ক্লাসের ছাত্র মুজিবুর রহমান খান তখন ঢাকা বেতারের শিল্পী ছিলেন, তিনি ছিলেন এই সভার সভাপতি। প্রবন্ধকার আনিসুজ্জামান এবং আলোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। গোটা ১৫ শ্রোতা। কেউ একজন সেই সভার খবর পৌঁছে দিয়েছিল দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। সেখানে তা ছাপা হয়েছিল। তাতেই বাধল বিপত্তি। প্রক্টরিয়াল রুল ভঙ্গ করার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই কারণ দর্শানোর চিঠি এল আনিসুজ্জামানের হাতে। দেখা গেল একই চিঠি পেয়েছেন মুজিবুর রহমান খান ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
মুজিবুর রহমান খান অন্য দুজনকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, কথা যা বলার তিনি বলবেন। অন্য দুজন কেন চুপ করে থাকে।
তখন প্রক্টর ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের রিডার ডক্টর মজহারুল হক। খুব কড়া মানুষ।
তার সামনে গিয়ে মুজিবুর রহমান খান প্রক্টরের ছেলের শরীর–স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। ভাবলেন এভাবে পার পেয়ে যাবেন।
কিন্তু নির্বিকার মজহারুল হক ছেলের সংবাদ দেওয়ার পর বললেন, ‘তোমাদের এখানে আমি আমার ছেলের স্বাস্থ্যের সংবাদ জানাতে ডাকিনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমাদের কী বলার আছে সেটাই বলো।’
নানা কথা বলার চেষ্টা করলেন মুজিবুর রহমান খান। কোনোটাই আমলে নিলেন না প্রক্টর। আনিসুজ্জামানকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই আইন ভাঙা শুরু করেছ! পরে কী করবে?’
ধমক খেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও।
ভবিষ্যতে আর এমন করবে না—এই কথা দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে এলেন। বেঁচে গেলেন এ যাত্রা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছেলে এবং মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বেশ মজার কথা লিখেছেন। শিক্ষকেরা মেয়েদের কমনরুমের দরজা থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে আসতেন, আবার ক্লাস শেষে সেই দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। সেটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু আনিসুজ্জামানদের সময় সে নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হয়। শিথিল হয়। তখন ছাত্রীরা কমন রুমের বাইরে অপেক্ষা করত শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে তার পেছন পেছন ঢুকে যেত, আবার ক্লাস শেষ হলে তারই পেছন পেছন বেরিয়ে আসত। ক্লাসরুমে ছাত্রীদের জন্য সামনে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ খালি রাখা হতো; সেখানেই তারা বসত। প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন না করে এবং তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ছাত্র কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারত না। আর কথা বলতে হতো প্রক্টরের সামনেই।
ছেলেমেয়েরা ঠিকই কিছু উপায় বের করে নিত। মেয়েটা হাঁটত কয়েক পা আগে, ছেলেটা কয়েক পা পেছনে। কলাভবন প্রাঙ্গণে হাঁটতে-হাঁটতে তারা ফিসফিস করে কথা বলত। এক শিক্ষক কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতেন। তার দেখাদেখি কিছুদিন পর কয়েকজন ছাত্রছাত্রীও পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেন। এর পর আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘ওই শিক্ষক ও তাঁর ছাত্রীর মতো জোড়ায় জোড়ায় হণ্টন বিপ্লবীদের অনেকে পরে সংসার পাততে সমর্থ হয়েছিলেন!’
হায়াৎ মামুদের স্মৃতিচারণ নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি যে বেশ ডানপিটে ছিলেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনটাকে উপভোগ করেছেন নিজের মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি আহমদ শরীফের কথা দিয়ে শুরু করেছেন। আহমদ শরীফের মতো নিরীশ্বরবাদী পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়াবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি পড়াতেন সমাজের গড়ন ও বিন্যাসের রহস্য। যেহেতু তিনি পড়াতেন প্রাচীন ও মধ্যযুগ, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর হওয়ার কথা ছিল কূপমণ্ডূক প্রথানুরক্ত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আহমদ শরীফ ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ।
সে সময় বাংলা বিভাগের সর্বেসর্বা ছিলেন ড. মো. আব্দুল হাই। ইংরেজিতে ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। দর্শনে ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, যিনি সংক্ষেপে জিসি দেব নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করেছিল। ইতিহাসে ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ড. এ এইচ দানী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ছিলেন ড. আবু মোহামেদ হাবিবুল্লাহ। ড. নিউম্যান নামে পূর্ব ইউরোপের এক সাহেব অধ্যাপক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। অর্থনীতি বিভাগে ছিলেন ড. মাহমুদ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ড. নাজমুল করিম। আর ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন যেন জ্যান্ত বিগ্রহ, চলন্ত কিংবদন্তি। হায়াৎ মামুদ আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলছেন, ‘তিনি নিজের পড়াশোনা শখের রান্নাবান্না আর দাবা খেলার বাইরে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।’
হায়াৎ মামুদ একদিনের কথা বলছেন। এক দুপুরে সলিমুল্লাহ হল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মেরে রিকশায় করে তিনি ছুটেছেন ক্লাস করতে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটে টান দিয়ে দেখেন, রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে অধ্যাপক আবদুল হাই হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি একবার চোখ মেলে ছাত্রের কাণ্ড দেখলেন। এর পর সারা সপ্তাহ হায়াৎ মামুদের বুক ঢিপঢিপ ছিল। যদিও এই ঘটনার জবাবদিহির জন্য আবদুল হাই হায়াৎ মামুদকে আর ডাকেননি।
হায়াৎ মামুদেরই একটা গল্প দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা শেষ করব। এমএ ফাইনাল পরীক্ষার পর বাবাকে বলতে হবে একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তিনি। নিজে তো বলতে পারবেন না, তাই বলানো হবে বন্ধু জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে দিয়ে। কিন্তু এ সময় বাধল গোল। অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই তলব করলেন হায়াৎ মামুদকে। বকাঝকা করলেন। পার্সেন্টেজ নাই বলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দেবেন না বলে শাসালেন। তারপর উপদেশ দিলেন, সব স্যারের বাড়িতে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে পার্সেন্টেজ আদায় করো। তাহলেই কিছু করা যাবে।
আত্মহত্যা ছাড়া আর কী–বা করার থাকল হায়াৎ মামুদের? পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে বিয়েও পিছিয়ে যাবে। এ সময় যদি মেয়েটিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়! তবে আত্মহত্যার চেয়ে স্যারদের বাড়ি দৌড়ানো সহজ বলে তিনি সে কাজটাই করতে থাকলেন। শিক্ষকেরা যে যার মতো হাজিরা খাতার ঘরে টিক চিহ্ন দিতে থাকলেন; কিন্তু তাতে টেনেটুনে ৬০ শতাংশ হাজিরা পাওয়া গেল। ৭৫ শতাংশ না হলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।
বাংলা বিভাগে আলোচনা সভা বসেছে। যার এজেন্ডার একটি হচ্ছে হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে কি না। ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদ অল্প দিন আগে দেশে ফিরে এসেছেন, তাই হায়াৎ মামুদকে সেভাবে চেনেন না। প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেটা পড়াশোনায় কেমন? ফেল করবে নাকি?’
‘না না ফেল করবে কেন? ফেল কেউ করে নাকি?’ অন্য শিক্ষকদের একজন জবাব দিলেন।
‘তবে কি থার্ডক্লাস পাবে?’
‘থার্ডক্লাস পাওয়ার মতো ছাত্র নয়। থার্ড ক্লাস পাবে না।’ বললেন একজন শিক্ষক।
‘তা তো বটেই! গবেট টাইপের নয়। হয়তো একটা ভালো সেকেন্ড ক্লাসই পাবে।’ পরিষ্কার করলেন আরও একজন শিক্ষক।
আশ্চর্য, তাহলে একে নিয়ে এত কথা বলছি কেন? থাকলে তো ফের সামনের বছর জ্বালাবে। যত তাড়াতাড়ি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায়, আপদ গেল! আমাদের বাঁচোয়া!’ বললেন ড. কাজী দীন মোহাম্মদ।
এভাবেই ড. কাজী দীন মোহাম্মদ হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হায়াৎ মামুদ কথাটি শুনেছিলেন তাঁর শিক্ষক আনিসুজ্জামানের কাছে।

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম, সে কথা জানিয়ে বললাম, ‘আজ তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকী!’
‘আজ নাকি! তাইতো!’ বলে মৃদু হাসলেন।
বললাম, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু বলবেন?’
বললেন, ‘সবই তো লিখেছি। আর এখন কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছে করে না।’
আমরা যারা সন্জীদা খাতুনের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করেছি, তাদের অনেকেই জানি, সেই ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন তিনি। আবেদনপত্রের যে শর্তাবলি ছিল, তার একটি ছিল মেয়েদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে। আর যদি কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে হয়, তাহলে প্রক্টরের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। নাও ঠেলা সামলাও!
খুবই কঠিন শর্ত। কিন্তু ভর্তি হতে হলে শর্ত তো মানতেই হবে। মেয়েদের পড়াশোনা তখনো খুব সহজ কিছু ছিল না। সন্জীদা খাতুনের পড়ালেখার আগ্রহ ছিল ব্যাপক। তাই সেই শর্তে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য প্রযোজক নাজির আহমেদের বোন শামসুন্নাহার সন্জীদা খাতুনের এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। তিনি একদিন সন্জীদাকে বললেন, ‘চলো আমরা বাইশে শ্রাবণ উপলক্ষে কিছু একটা করি।’
তিনি চাইছিলেন শাপমোচন নাটকটি করতে। সেই নাটকের গানগুলো যেন সন্জীদা করেন, সেটাই তিনি চাইছিলেন। পুরো নাটক নয়, কোনো কোনো অংশের সঙ্গে কিছু পাঠ, কিছু অভিনয় মিলিয়ে তৈরি করেছিলেন শাপমোচন। অভিনয় হয়েছিল হুদা হাউজের একতলার একটি ঘরে চৌকি এদিক-ওদিক করে।
সে সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। প্রদীপ জোগাড় করা হলো। সলতেও পাওয়া গেল। কিন্তু তেল পাওয়া যাবে কোথায়। নেপালি একটি মেয়ে প্রতিদিন এক চামচ করে সরষের তেল খেত। ওর নাম ফ্লোরা জেমস। প্রদীপের জন্য মেয়েটি তার খাঁটি সরষের তেল দিয়ে সাহায্য করল মেয়েদের।
অনুষ্ঠান খারাপ হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের করা দুটি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সনজীদা খাতুন। তখন যে নিয়ম ছিল, তার অন্যথা অবশ্য হয়নি। মেয়েদের নাটকে মেয়েরাই অভিনয় করত, আর ছেলেদের নাটকে ছেলেরা। অর্থাৎ মেয়েদের নাটকে পুরুষ চরিত্রগুলো করত মেয়েরাই, আবার ছেলেদের নাটকে নারী চরিত্রগুলো করত ছেলেরা। রবীন্দ্রনাথের ‘তপতী’ নাটকে সনজীদা খাতুন সেজেছিলেন সখা দেবদত্ত। কুলসুম হুদা সেজেছিলেন রাজা বিক্রম দেব, সাবেরী মোস্তফা হয়েছিলেন রাজ পুরোহিত ত্রিবেদী, সাফিয়া খাতুন হয়েছিলেন নরেশ।
সে নাটকের মহড়ায় প্রম্পট করছিলেন মনিমুন্নেসা। মহড়ার সময় রাজা বিক্রম দেব বলবেন, ‘এবার তাকে ডাকবো প্রকাশ্যে, আসবেন দেবতার যোগ্য নিঃসংকোচে—মাথা তুলে ধ্বজা উড়িয়ে!’
কুলসুম হুদা শেষ অংশটায় বলে উঠলেন, ‘ধ্বজা তুলে।’
মনিমুন্নেসা ফিসফিস করে বললেন, ‘হ্যাঁ এবার বললেই হলো ‘মাথা উড়িয়ে।’
সবার হাসাহাসিতে নাটকের মহড়া কিছুক্ষণ বন্ধ রইল।
শরৎচন্দ্রের দত্তা উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বিজয়া’ নামে করা হয়েছিল। এ নাটকে বিলাস বিহারী হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরীর ছোট বোন কনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশের মা। সন্জীদা খাতুনের ভাগে পড়েছিল রাসবিহারী চরিত্রটি। সন্জীদা খাতুন বললেন, ‘সব ভূমিকার জন্য লোক পাওয়া যাবে, শুধু চাকরের ভূমিকায় কেউ অভিনয় করবে না। আমি ওই ভূমিকায় জন্য আছি।’
শেষ পর্যন্ত তিনি চাকরের ভূমিকায় মহড়া করে গেলেন।
নাটকের সময় বেশ মজা হয়েছিল। শেষ দিকের এক দৃশ্যে বিলাস বিহারীকে পিতা রাসবিহারী প্রচণ্ড বকাবকি করবেন। রাসবিহারী চরিত্রে নাদিরা জোরে ধমক দিয়ে হাসতে শুরু করলেন। বিলাস বিহারী চরিত্রের কনা জবাব দিতে গিয়ে হাসতে লাগলেন। দারুণ হাসাহাসি হচ্ছিল। উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে শিক্ষক সৈয়দ আলী আহসান স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে হাসতে লাগলেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কাছে শোনা যায় এক গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার পর প্রত্যেক ছাত্রকে দুটো পরীক্ষায় পাস করা ছিল আবশ্যিক। শরীরচর্চা, আর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে ছিল পরীক্ষা। নির্ধারিত দিনে হাজির হয়েছেন আনিসুজ্জামান। শরীরচর্চা বিভাগের সহকারী পরিচালক বাঁশি বাজিয়ে নতুন ছাত্রদের দৌড়াতে বললেন, হাই জাম্প–লং জাম্প দিতে বললেন। আনিসুজ্জামানের এগুলো কিছুই ভালো লাগত না। তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন, যারা প্রথমবার ফিরে যাচ্ছে, তাদের দ্বিতীয়বার আরও একটু কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তৃতীয়বার সেটা হয়ে যাচ্ছে আরও কঠিন। খানিকটা ইচ্ছা করেই আনিসুজ্জামান দ্বিতীয়বারেই ব্যর্থ হলেন। সহকারী পরিচালক বললেন, নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। আর কোনো কাজ দিলেন না আনিসুজ্জামানকে।
খুশি মনে ফিরে এলেন আনিসুজ্জামান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল খুবই জরুরি বিষয়। ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই ডাকসু কমনরুমে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা নিয়ে একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এমএ ক্লাসের ছাত্র মুজিবুর রহমান খান তখন ঢাকা বেতারের শিল্পী ছিলেন, তিনি ছিলেন এই সভার সভাপতি। প্রবন্ধকার আনিসুজ্জামান এবং আলোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। গোটা ১৫ শ্রোতা। কেউ একজন সেই সভার খবর পৌঁছে দিয়েছিল দৈনিক আজাদ পত্রিকায়। সেখানে তা ছাপা হয়েছিল। তাতেই বাধল বিপত্তি। প্রক্টরিয়াল রুল ভঙ্গ করার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই কারণ দর্শানোর চিঠি এল আনিসুজ্জামানের হাতে। দেখা গেল একই চিঠি পেয়েছেন মুজিবুর রহমান খান ও বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।
মুজিবুর রহমান খান অন্য দুজনকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, কথা যা বলার তিনি বলবেন। অন্য দুজন কেন চুপ করে থাকে।
তখন প্রক্টর ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের রিডার ডক্টর মজহারুল হক। খুব কড়া মানুষ।
তার সামনে গিয়ে মুজিবুর রহমান খান প্রক্টরের ছেলের শরীর–স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। ভাবলেন এভাবে পার পেয়ে যাবেন।
কিন্তু নির্বিকার মজহারুল হক ছেলের সংবাদ দেওয়ার পর বললেন, ‘তোমাদের এখানে আমি আমার ছেলের স্বাস্থ্যের সংবাদ জানাতে ডাকিনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমাদের কী বলার আছে সেটাই বলো।’
নানা কথা বলার চেষ্টা করলেন মুজিবুর রহমান খান। কোনোটাই আমলে নিলেন না প্রক্টর। আনিসুজ্জামানকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকেই আইন ভাঙা শুরু করেছ! পরে কী করবে?’
ধমক খেলেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরও।
ভবিষ্যতে আর এমন করবে না—এই কথা দিয়ে তাঁরা বেরিয়ে এলেন। বেঁচে গেলেন এ যাত্রা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছেলে এবং মেয়েদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বেশ মজার কথা লিখেছেন। শিক্ষকেরা মেয়েদের কমনরুমের দরজা থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে আসতেন, আবার ক্লাস শেষে সেই দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। সেটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু আনিসুজ্জামানদের সময় সে নিয়ম কিছুটা পরিবর্তন হয়। শিথিল হয়। তখন ছাত্রীরা কমন রুমের বাইরে অপেক্ষা করত শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলে তার পেছন পেছন ঢুকে যেত, আবার ক্লাস শেষ হলে তারই পেছন পেছন বেরিয়ে আসত। ক্লাসরুমে ছাত্রীদের জন্য সামনে বেশ কয়েকটি বেঞ্চ খালি রাখা হতো; সেখানেই তারা বসত। প্রক্টরের কাছে লিখিত আবেদন না করে এবং তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ছাত্র কোনো ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারত না। আর কথা বলতে হতো প্রক্টরের সামনেই।
ছেলেমেয়েরা ঠিকই কিছু উপায় বের করে নিত। মেয়েটা হাঁটত কয়েক পা আগে, ছেলেটা কয়েক পা পেছনে। কলাভবন প্রাঙ্গণে হাঁটতে-হাঁটতে তারা ফিসফিস করে কথা বলত। এক শিক্ষক কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রীর সঙ্গে পাশাপাশি হাঁটতেন। তার দেখাদেখি কিছুদিন পর কয়েকজন ছাত্রছাত্রীও পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেন। এর পর আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘ওই শিক্ষক ও তাঁর ছাত্রীর মতো জোড়ায় জোড়ায় হণ্টন বিপ্লবীদের অনেকে পরে সংসার পাততে সমর্থ হয়েছিলেন!’
হায়াৎ মামুদের স্মৃতিচারণ নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি যে বেশ ডানপিটে ছিলেন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনটাকে উপভোগ করেছেন নিজের মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানের পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি আহমদ শরীফের কথা দিয়ে শুরু করেছেন। আহমদ শরীফের মতো নিরীশ্বরবাদী পণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়াবার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তিনি পড়াতেন সমাজের গড়ন ও বিন্যাসের রহস্য। যেহেতু তিনি পড়াতেন প্রাচীন ও মধ্যযুগ, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁর হওয়ার কথা ছিল কূপমণ্ডূক প্রথানুরক্ত। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আহমদ শরীফ ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ।
সে সময় বাংলা বিভাগের সর্বেসর্বা ছিলেন ড. মো. আব্দুল হাই। ইংরেজিতে ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন। দর্শনে ডক্টর গোবিন্দ চন্দ্র দেব, যিনি সংক্ষেপে জিসি দেব নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা তাঁকে হত্যা করেছিল। ইতিহাসে ছিলেন কাশ্মীরি পণ্ডিত ড. এ এইচ দানী। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ছিলেন ড. আবু মোহামেদ হাবিবুল্লাহ। ড. নিউম্যান নামে পূর্ব ইউরোপের এক সাহেব অধ্যাপক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। অর্থনীতি বিভাগে ছিলেন ড. মাহমুদ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ড. নাজমুল করিম। আর ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন যেন জ্যান্ত বিগ্রহ, চলন্ত কিংবদন্তি। হায়াৎ মামুদ আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলছেন, ‘তিনি নিজের পড়াশোনা শখের রান্নাবান্না আর দাবা খেলার বাইরে কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।’
হায়াৎ মামুদ একদিনের কথা বলছেন। এক দুপুরে সলিমুল্লাহ হল থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মেরে রিকশায় করে তিনি ছুটেছেন ক্লাস করতে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটে টান দিয়ে দেখেন, রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে অধ্যাপক আবদুল হাই হেঁটে যাচ্ছেন। তিনি একবার চোখ মেলে ছাত্রের কাণ্ড দেখলেন। এর পর সারা সপ্তাহ হায়াৎ মামুদের বুক ঢিপঢিপ ছিল। যদিও এই ঘটনার জবাবদিহির জন্য আবদুল হাই হায়াৎ মামুদকে আর ডাকেননি।
হায়াৎ মামুদেরই একটা গল্প দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা শেষ করব। এমএ ফাইনাল পরীক্ষার পর বাবাকে বলতে হবে একটা মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন তিনি। নিজে তো বলতে পারবেন না, তাই বলানো হবে বন্ধু জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে দিয়ে। কিন্তু এ সময় বাধল গোল। অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই তলব করলেন হায়াৎ মামুদকে। বকাঝকা করলেন। পার্সেন্টেজ নাই বলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দেবেন না বলে শাসালেন। তারপর উপদেশ দিলেন, সব স্যারের বাড়িতে গিয়ে হাতে–পায়ে ধরে পার্সেন্টেজ আদায় করো। তাহলেই কিছু করা যাবে।
আত্মহত্যা ছাড়া আর কী–বা করার থাকল হায়াৎ মামুদের? পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে বিয়েও পিছিয়ে যাবে। এ সময় যদি মেয়েটিকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়! তবে আত্মহত্যার চেয়ে স্যারদের বাড়ি দৌড়ানো সহজ বলে তিনি সে কাজটাই করতে থাকলেন। শিক্ষকেরা যে যার মতো হাজিরা খাতার ঘরে টিক চিহ্ন দিতে থাকলেন; কিন্তু তাতে টেনেটুনে ৬০ শতাংশ হাজিরা পাওয়া গেল। ৭৫ শতাংশ না হলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।
বাংলা বিভাগে আলোচনা সভা বসেছে। যার এজেন্ডার একটি হচ্ছে হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে কি না। ডক্টর কাজী দীন মোহাম্মদ অল্প দিন আগে দেশে ফিরে এসেছেন, তাই হায়াৎ মামুদকে সেভাবে চেনেন না। প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলেটা পড়াশোনায় কেমন? ফেল করবে নাকি?’
‘না না ফেল করবে কেন? ফেল কেউ করে নাকি?’ অন্য শিক্ষকদের একজন জবাব দিলেন।
‘তবে কি থার্ডক্লাস পাবে?’
‘থার্ডক্লাস পাওয়ার মতো ছাত্র নয়। থার্ড ক্লাস পাবে না।’ বললেন একজন শিক্ষক।
‘তা তো বটেই! গবেট টাইপের নয়। হয়তো একটা ভালো সেকেন্ড ক্লাসই পাবে।’ পরিষ্কার করলেন আরও একজন শিক্ষক।
আশ্চর্য, তাহলে একে নিয়ে এত কথা বলছি কেন? থাকলে তো ফের সামনের বছর জ্বালাবে। যত তাড়াতাড়ি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা যায়, আপদ গেল! আমাদের বাঁচোয়া!’ বললেন ড. কাজী দীন মোহাম্মদ।
এভাবেই ড. কাজী দীন মোহাম্মদ হায়াৎ মামুদকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হায়াৎ মামুদ কথাটি শুনেছিলেন তাঁর শিক্ষক আনিসুজ্জামানের কাছে।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
৪ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
৪ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শোকের নীরবতায় থমকে গেল দেশ। আর কাঁপিয়ে দিয়ে গেল রাজনৈতিক-মানসিক ভূমিকম্পের সূক্ষ্ম রেখাগুলো। সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল; বিশ্বাসে দৃঢ় আর নেতৃত্বে অনমনীয়।
কারাগারের দেয়াল, হাসপাতালের শয্যা, রাজনীতির নির্মম অন্ধকার—সব মিলিয়ে দীর্ঘ বছর খালেদা জিয়া কাটিয়েছেন লড়াইয়ের ভার বহন করে; যে মানুষটি রাজপথে কখনো মাথানত করেননি। এমনিতে একটি লড়াই থেকে আরেকটিতে যাত্রা করতে করতে তাঁর শরীর হয়ে উঠেছিল ভঙ্গুর, মন ক্ষয়ে গিয়েছিল প্রতিহিংসার ধারাবাহিক আঘাতে। বিদেশে চিকিৎসা, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিবারের অসীম ব্যাকুলতা—সবই ছিল, সবই হলো; তবু তাঁকে আর ফেরানো গেল না।
তুমুল জনপ্রিয় এই নেত্রীর প্রস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নয়; এটি একটি যুগের সমাপ্তি। সেই যুগের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকারে তাঁর বন্দিত্ব, স্বামীর শাহাদাতে জীবনচক্রের ভেঙে পড়া, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অশ্রু, ওয়ান-ইলেভেনের নিঃসঙ্গ বন্দিত্ব, আর পুরান ঢাকার কারাগারের শীতল দেয়ালে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। সবকিছুর পরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—বাধা, ব্যথা আর ব্যর্থতা পেরিয়ে।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ। একদিকে তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের সংগ্রামের মুখ; অন্যদিকে সমালোচনাও তাঁর পিছু ছাড়েনি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গিয়ে যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি তীব্র বিরোধিতাও কম ছিল না। অনেক ভুলের দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর অটলতা, প্রতিকূলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা, আর ব্যক্তিজীবনের অবর্ণনীয় ক্ষতবিক্ষত অধ্যায় তাঁকে আলাদাভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে।
শোকের এই মুহূর্তে আমরা এক রাজনীতিককে নয়; এক দৃঢ় চরিত্র নারীকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁর জীবনের গল্প শুধু সংগ্রামের নয়, অবিচল থাকার অনুশাসনও বটে। একটি অন্তর্দীপ নিভে গেছে; কিন্তু তার আলো অনেক দিন ধরে পথ দেখাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে।
অসুস্থ শরীর নিয়েও যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন—দৃঢ়তা কীভাবে জন্ম নেয়। তাঁর কণ্ঠে ছিল সংগ্রামের ইতিহাস, নীরবতায় ছিল ত্যাগের গভীরতা। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্যতা শুধু রাজনীতিতে নয়, জাতির অনুভূতিতেও।
খালেদা জিয়া ছিলেন রাজনীতির এক অশ্বারোহিণী। যিনি প্রতিদিন আহত হন, প্রতিদিন অভিযুক্ত হন, আবার প্রতিদিনই ঘুরে দাঁড়ান। জয়-পরাজয়ের হিসাবের বাইরে ছিল তাঁর দৃঢ়তার বর্ণমালা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু যে অন্ধকার-আলো মেশানো উপস্থিতি তিনি রেখে গেলেন, তা বহুদিন পর্যন্ত রাজনীতির ভাষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বোঝাপড়া এবং ইতিহাসের নির্মোহ রেকর্ডে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—ভালোবাসা, বিতর্ক আর অবিচল সাহসের এক অনন্য নাম হিসেবে।
বিদায় খালেদা জিয়া।

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শোকের নীরবতায় থমকে গেল দেশ। আর কাঁপিয়ে দিয়ে গেল রাজনৈতিক-মানসিক ভূমিকম্পের সূক্ষ্ম রেখাগুলো। সংগ্রাম, কারাবাস, অসুস্থতা—সবকিছুর মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল; বিশ্বাসে দৃঢ় আর নেতৃত্বে অনমনীয়।
কারাগারের দেয়াল, হাসপাতালের শয্যা, রাজনীতির নির্মম অন্ধকার—সব মিলিয়ে দীর্ঘ বছর খালেদা জিয়া কাটিয়েছেন লড়াইয়ের ভার বহন করে; যে মানুষটি রাজপথে কখনো মাথানত করেননি। এমনিতে একটি লড়াই থেকে আরেকটিতে যাত্রা করতে করতে তাঁর শরীর হয়ে উঠেছিল ভঙ্গুর, মন ক্ষয়ে গিয়েছিল প্রতিহিংসার ধারাবাহিক আঘাতে। বিদেশে চিকিৎসা, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পরিবারের অসীম ব্যাকুলতা—সবই ছিল, সবই হলো; তবু তাঁকে আর ফেরানো গেল না।
তুমুল জনপ্রিয় এই নেত্রীর প্রস্থান শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নয়; এটি একটি যুগের সমাপ্তি। সেই যুগের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধের অন্ধকারে তাঁর বন্দিত্ব, স্বামীর শাহাদাতে জীবনচক্রের ভেঙে পড়া, সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের অশ্রু, ওয়ান-ইলেভেনের নিঃসঙ্গ বন্দিত্ব, আর পুরান ঢাকার কারাগারের শীতল দেয়ালে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস। সবকিছুর পরও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন—বাধা, ব্যথা আর ব্যর্থতা পেরিয়ে।
খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ঘাত-প্রতিঘাতে পূর্ণ। একদিকে তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের সংগ্রামের মুখ; অন্যদিকে সমালোচনাও তাঁর পিছু ছাড়েনি। গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে গিয়ে যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি তীব্র বিরোধিতাও কম ছিল না। অনেক ভুলের দায় তাঁকে বহন করতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর অটলতা, প্রতিকূলের মুখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা, আর ব্যক্তিজীবনের অবর্ণনীয় ক্ষতবিক্ষত অধ্যায় তাঁকে আলাদাভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে।
শোকের এই মুহূর্তে আমরা এক রাজনীতিককে নয়; এক দৃঢ় চরিত্র নারীকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। যাঁর জীবনের গল্প শুধু সংগ্রামের নয়, অবিচল থাকার অনুশাসনও বটে। একটি অন্তর্দীপ নিভে গেছে; কিন্তু তার আলো অনেক দিন ধরে পথ দেখাবে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসকে।
অসুস্থ শরীর নিয়েও যে মানুষটি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন, তিনি আমাদের শিখিয়ে গেলেন—দৃঢ়তা কীভাবে জন্ম নেয়। তাঁর কণ্ঠে ছিল সংগ্রামের ইতিহাস, নীরবতায় ছিল ত্যাগের গভীরতা। আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্যতা শুধু রাজনীতিতে নয়, জাতির অনুভূতিতেও।
খালেদা জিয়া ছিলেন রাজনীতির এক অশ্বারোহিণী। যিনি প্রতিদিন আহত হন, প্রতিদিন অভিযুক্ত হন, আবার প্রতিদিনই ঘুরে দাঁড়ান। জয়-পরাজয়ের হিসাবের বাইরে ছিল তাঁর দৃঢ়তার বর্ণমালা। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু যে অন্ধকার-আলো মেশানো উপস্থিতি তিনি রেখে গেলেন, তা বহুদিন পর্যন্ত রাজনীতির ভাষা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বোঝাপড়া এবং ইতিহাসের নির্মোহ রেকর্ডে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকবে। ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে—ভালোবাসা, বিতর্ক আর অবিচল সাহসের এক অনন্য নাম হিসেবে।
বিদায় খালেদা জিয়া।

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
০২ জুলাই ২০২১
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
৪ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
৪ ঘণ্টা আগেরাকিবুল ইসলাম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়। কেউ ক্ষমতার উষ্ণতা সহ্য করতে পারেনি, কেউ বিকৃত রাজনৈতিক বাস্তবতায় চরিত্রহীন হয়ে গিয়েছিল, কেউ আবার নিজের আগুনেই ভস্মীভূত হয়েছে। কিন্তু এমনও কিছু নেতৃত্ব আছেন, যাঁরা সময়ের দহনক্ষেত্র পেরিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে এক ‘ধারাবাহিক প্রতিরোধের আদর্শ’ হিসেবে। এই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক বাস্তবতায় যদি কারও নাম নেওয়া যায়, তিনি হলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মূলত এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড, বন্দিত্ব, দলন, চক্রান্ত, আন্দোলন, ক্ষমতা, পতন, প্রতিরোধ সব ধারাই তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেছে। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, তিনি শুরু করেছিলেন একদম সাধারণ নিরহংকারী গৃহবধূ থেকে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া ‘পুতুল’ নামের সেই মেয়ে জানতেও পারেননি, ভবিষ্যৎ তাঁকে কোন অগ্নিপরীক্ষার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। ক্ষমতার বাস্তবতা মানবজীবনে অনেক সময় নির্মম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি রাজনৈতিক দলকে নয়, পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখনো রাজনীতির ময়দানে খালেদা জিয়া অপরিচিত। কিন্তু ইতিহাস সেই শান্ত গৃহবধূকে ঘরেই থাকতে দিল না। দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক—সবাই তাঁকে ডাকলেন। ভেঙে পড়া থেকে একটি দলকে বাঁচাতে, একটি জাতির নেতৃত্বশূন্যতা রোধ করতে তাঁকে সামনে আসতেই হলো। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করলেন; ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; ১৯৮৪ সালে দলের সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন এরশাদ সরকারকে সরিয়ে দিলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নতুন দ্বারে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলো। দেশ পেল তার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশীয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক বিশাল অধ্যায়। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি যা করলেন, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভিত্তি স্থাপন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও ফ্রি টিউশন, বৃক্ষরোপণ আন্দোলন, সার্কে নেতৃত্ব, যমুনা সেতুর ভিত্তি—এসবই দেশের পরবর্তী উন্নয়ন ধারার মূল স্থপতির পদে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য ও বিরল কৃতিত্ব হলো, তাঁর অংশ নেওয়া প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয় পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এত ভিন্ন ভিন্ন আসনে একসঙ্গে জয়লাভের নজির আর কোনো নেতার নেই।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়। খালেদা জিয়ার তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাবকে সর্বোচ্চে নিয়ে যায়। এই মেয়াদে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যখন রাজনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নতুন অধ্যায় রচনা শুরু করে। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় শুরু হয় ২০১৮ সালে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি যান পুরোনো নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি একক সেলে। খালেদা জিয়ার বয়স, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা এবং নির্বাচনের আগমুহূর্তে হাজারো নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা—সব মিলিয়ে বিএনপি যেন এক অচেনা অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। আর তখন দলের প্রধান নেত্রীর অনুপস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য ভেঙে যায়।
অবশেষে ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রেক্ষাপটে ‘দণ্ড স্থগিত’ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, শর্ত সাপেক্ষে। তিনি বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না; বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। ফলে তিনি মুক্তি পেলেও তৈরি হয় নতুন একধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্ব।
এরপর ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তীব্রভাবে বদলে দেয়। পরদিন রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দমন-পীড়ন, কারাবাস, নিপীড়ন—সব পেরিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন রাজনৈতিক ময়দানে সেই দৃঢ়তার সঙ্গেই, যেভাবে তিনি জীবনের প্রতিটি সংকট মোকাবিলা করেছেন।
ইতিহাস তাঁদেরই শ্রদ্ধা জানায়, যাঁরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথানত করেন না। সেই ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নাম আলাদা লেখা থাকবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়। কেউ ক্ষমতার উষ্ণতা সহ্য করতে পারেনি, কেউ বিকৃত রাজনৈতিক বাস্তবতায় চরিত্রহীন হয়ে গিয়েছিল, কেউ আবার নিজের আগুনেই ভস্মীভূত হয়েছে। কিন্তু এমনও কিছু নেতৃত্ব আছেন, যাঁরা সময়ের দহনক্ষেত্র পেরিয়ে গিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে এক ‘ধারাবাহিক প্রতিরোধের আদর্শ’ হিসেবে। এই ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক বাস্তবতায় যদি কারও নাম নেওয়া যায়, তিনি হলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মূলত এমন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ, হত্যাকাণ্ড, বন্দিত্ব, দলন, চক্রান্ত, আন্দোলন, ক্ষমতা, পতন, প্রতিরোধ সব ধারাই তাঁর জীবনকে স্পর্শ করেছে। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, তিনি শুরু করেছিলেন একদম সাধারণ নিরহংকারী গৃহবধূ থেকে।
১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া ‘পুতুল’ নামের সেই মেয়ে জানতেও পারেননি, ভবিষ্যৎ তাঁকে কোন অগ্নিপরীক্ষার দিকে টেনে নিয়ে যাবে। ক্ষমতার বাস্তবতা মানবজীবনে অনেক সময় নির্মম। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে। সেই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি মানুষ, একটি পরিবার, একটি রাজনৈতিক দলকে নয়, পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তখনো রাজনীতির ময়দানে খালেদা জিয়া অপরিচিত। কিন্তু ইতিহাস সেই শান্ত গৃহবধূকে ঘরেই থাকতে দিল না। দল, নেতা-কর্মী, সমর্থক—সবাই তাঁকে ডাকলেন। ভেঙে পড়া থেকে একটি দলকে বাঁচাতে, একটি জাতির নেতৃত্বশূন্যতা রোধ করতে তাঁকে সামনে আসতেই হলো। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি বিএনপির সদস্যপদ গ্রহণ করলেন; ১৯৮৩ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান; ১৯৮৪ সালে দলের সর্বোচ্চ নেতা চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলন এরশাদ সরকারকে সরিয়ে দিলে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নতুন দ্বারে দাঁড়ায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলো। দেশ পেল তার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত নারী প্রধানমন্ত্রী। এই অর্জন শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশীয় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এক বিশাল অধ্যায়। তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি যা করলেন, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভিত্তি স্থাপন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি ও ফ্রি টিউশন, বৃক্ষরোপণ আন্দোলন, সার্কে নেতৃত্ব, যমুনা সেতুর ভিত্তি—এসবই দেশের পরবর্তী উন্নয়ন ধারার মূল স্থপতির পদে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের এক অনন্য ও বিরল কৃতিত্ব হলো, তাঁর অংশ নেওয়া প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয় পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এত ভিন্ন ভিন্ন আসনে একসঙ্গে জয়লাভের নজির আর কোনো নেতার নেই।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়। খালেদা জিয়ার তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাবকে সর্বোচ্চে নিয়ে যায়। এই মেয়াদে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যখন রাজনীতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নতুন অধ্যায় রচনা শুরু করে। কিন্তু সবচেয়ে নির্মম অধ্যায় শুরু হয় ২০১৮ সালে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি যান পুরোনো নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি একক সেলে। খালেদা জিয়ার বয়স, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা এবং নির্বাচনের আগমুহূর্তে হাজারো নেতা-কর্মীর গ্রেপ্তার, মামলা, হামলা—সব মিলিয়ে বিএনপি যেন এক অচেনা অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। আর তখন দলের প্রধান নেত্রীর অনুপস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য ভেঙে যায়।
অবশেষে ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রেক্ষাপটে ‘দণ্ড স্থগিত’ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়, শর্ত সাপেক্ষে। তিনি বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না; বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। ফলে তিনি মুক্তি পেলেও তৈরি হয় নতুন একধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্ব।
এরপর ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তীব্রভাবে বদলে দেয়। পরদিন রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ দমন-পীড়ন, কারাবাস, নিপীড়ন—সব পেরিয়ে তিনি আবার ফিরে আসেন রাজনৈতিক ময়দানে সেই দৃঢ়তার সঙ্গেই, যেভাবে তিনি জীবনের প্রতিটি সংকট মোকাবিলা করেছেন।
ইতিহাস তাঁদেরই শ্রদ্ধা জানায়, যাঁরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মাথানত করেন না। সেই ইতিহাসে খালেদা জিয়ার নাম আলাদা লেখা থাকবে।

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
০২ জুলাই ২০২১
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
৪ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
৪ ঘণ্টা আগেআব্দুল্লাহ নাজিম আল মামুন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকেও প্রদানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করে দেন। তবে চলতি বছর অন্তর্বর্তী সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার পুনরায় বহাল রেখেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার চালু করেন।
প্রতিপক্ষের প্রতি কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে ভূষিত হওয়া পুরস্কার বাতিল করা হয়, তা আমরা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই দেখতে পেয়েছি। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ছিলেন উদারতার মূর্ত প্রতীক। শত্রুকেও বুকে টেনে নিতেন। ন্যায়ের ভাষায় কথা বলতেন। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অপ্রতিরোধ্য। তিনি ছিলেন আপসহীন। আপস করেননি কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। এমনকি গণতন্ত্র রক্ষার্থে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়াই যেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে আরও জোরদার করেছিল, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর অন্যতম উপায়। যুগে যুগে দেখা গেছে, কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকতে পারেনি। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিএনপির ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। রাজনীতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল।
সেই অনুরাগ ভাঙাতে এগিয়ে আসেন দলের একাংশের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁদের অনুরোধে খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া, ১৯৮৩ সালে। তিনি প্রথমে এককভাবে এবং পরে ৭ দলীয় জোট গঠন করে তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান এরশাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে বিরোধিতা করেন, যা তৎকালীন বিরোধীদের মধ্যে দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে এবং আপসহীনতার স্পষ্টতা ফুটে ওঠে। এরপর ১৯৮৭-৯০ সাল পর্যন্ত টানা হরতাল, মিছিল, সমাবেশ, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটে, যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়ী হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথরেখায় এটি ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
খালেদা জিয়াই প্রথম গণভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন তিনি, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তনের অন্যতম বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং স্বল্পতম সময়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে শান্তিপূর্ণভাবে। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তন।
এরপর ২০০১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু নারী বলে নয়; একজন দৃঢ়চেতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব স্বীকৃত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন কখনো সহজ ছিল না। তিনি হয়েছেন কারাবন্দী, হয়েছেন গৃহবন্দী। তাঁর ওপর চাপানো হয়েছে মামলার পাহাড়, স্বাস্থ্য নিয়ে করা হয়েছে অবহেলা। তবু তিনি কখনো নিজের নীতিতে আপস করেননি। তাঁর ‘আপসহীন’ তকমাটি শুধু কাগুজে নয়, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি অভিধা।
২০১৮ সালের পর থেকে বারবার অসুস্থ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে যে অমানবিকতা দেখিয়েছে, তা বহুবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি ছিল তাঁর প্রাপ্য মৌলিক অধিকার।
এই দেশের মা, মাটির প্রতি খালেদা জিয়ার ছিল আবেগ ও অসম্ভব ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশই হলো আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি আর মানুষই আমার সবকিছু’—এই আবেগমাখা উচ্চারণ ছিল তাঁর।
তিনি চলে গেলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাঁর অদম্য প্রজ্ঞা, সাহসিকতা, মানবিকতা, উদারতা ও আপসহীনতা। এভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়—ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জিয়াউর রহমানকেও প্রদানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে ২০১৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার বাতিল করে দেন। তবে চলতি বছর অন্তর্বর্তী সরকার জিয়াউর রহমানের পুরস্কার পুনরায় বহাল রেখেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম স্বাধীনতা পুরস্কার চালু করেন।
প্রতিপক্ষের প্রতি কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ হলে ভূষিত হওয়া পুরস্কার বাতিল করা হয়, তা আমরা শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই দেখতে পেয়েছি। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ছিলেন উদারতার মূর্ত প্রতীক। শত্রুকেও বুকে টেনে নিতেন। ন্যায়ের ভাষায় কথা বলতেন। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অপ্রতিরোধ্য। তিনি ছিলেন আপসহীন। আপস করেননি কোনো অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে। এমনকি গণতন্ত্র রক্ষার্থে তিনি নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়াই যেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে আরও জোরদার করেছিল, যা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর অন্যতম উপায়। যুগে যুগে দেখা গেছে, কোনো অগণতান্ত্রিক সরকার দীর্ঘস্থায়ীভাবে টিকতে পারেনি। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিএনপির ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তিনি কিছুটা ভেঙে পড়েন। রাজনীতির প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল।
সেই অনুরাগ ভাঙাতে এগিয়ে আসেন দলের একাংশের কিছু নেতা-কর্মী। তাঁদের অনুরোধে খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির নেতৃত্বে আসেন খালেদা জিয়া, ১৯৮৩ সালে। তিনি প্রথমে এককভাবে এবং পরে ৭ দলীয় জোট গঠন করে তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান এরশাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করে বিরোধিতা করেন, যা তৎকালীন বিরোধীদের মধ্যে দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে এবং আপসহীনতার স্পষ্টতা ফুটে ওঠে। এরপর ১৯৮৭-৯০ সাল পর্যন্ত টানা হরতাল, মিছিল, সমাবেশ, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন ঘটে, যার মূল নেতৃত্বে ছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে সামরিক শাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়ী হয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথরেখায় এটি ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
খালেদা জিয়াই প্রথম গণভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন, যা গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। ১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল থেকে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালু করেন তিনি, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পরিবর্তনের অন্যতম বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং স্বল্পতম সময়ে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে শান্তিপূর্ণভাবে। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তন।
এরপর ২০০১ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু নারী বলে নয়; একজন দৃঢ়চেতা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব স্বীকৃত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন কখনো সহজ ছিল না। তিনি হয়েছেন কারাবন্দী, হয়েছেন গৃহবন্দী। তাঁর ওপর চাপানো হয়েছে মামলার পাহাড়, স্বাস্থ্য নিয়ে করা হয়েছে অবহেলা। তবু তিনি কখনো নিজের নীতিতে আপস করেননি। তাঁর ‘আপসহীন’ তকমাটি শুধু কাগুজে নয়, সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি অভিধা।
২০১৮ সালের পর থেকে বারবার অসুস্থ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে যে অমানবিকতা দেখিয়েছে, তা বহুবার আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি ছিল তাঁর প্রাপ্য মৌলিক অধিকার।
এই দেশের মা, মাটির প্রতি খালেদা জিয়ার ছিল আবেগ ও অসম্ভব ভালোবাসা। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। দেশই হলো আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি আর মানুষই আমার সবকিছু’—এই আবেগমাখা উচ্চারণ ছিল তাঁর।
তিনি চলে গেলেও আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে তাঁর অদম্য প্রজ্ঞা, সাহসিকতা, মানবিকতা, উদারতা ও আপসহীনতা। এভাবেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, ইতিহাসের পাতায়—ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
০২ জুলাই ২০২১
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
৪ ঘণ্টা আগে
আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই...
৪ ঘণ্টা আগেসেলিম জাহান

আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ সালের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এই হিসাব মেলানোর একটি বিরাট তাৎপর্য আছে; আমাদের অর্জনগুলোর উদ্যাপন এবং আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেগুলো একটি পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকে পুরো বছরটি নানা উদ্বেগ, শঙ্কার, আশা-নিরাশার মধ্যে ছিল। জনগণের কাছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল না। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন দল প্রাধান্য পাচ্ছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা সারা বছর ধরে ছিল। জনমনে, বিশেষত নারীদের মনে প্রশ্ন ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নারী-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে কি না। নির্বাচন হবে, নাকি হবে না, তা নিয়েও নানান মহল প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের তারিখ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। নানা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছিল সম্ভাব্য নির্বাচন সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা সময়কালের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ বলছিল না। অবস্থাটা এমনই ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কথা বলেছিলেন নানা বিজ্ঞজন। জনমনে একটা বড় জিজ্ঞাসা ছিল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন। সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত ছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সেই সব শঙ্কা-আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও বেরোচ্ছে। তারেক রহমানও কদিন আগে দেশে ফিরেছেন। সুতরাং রাজনীতির অঙ্গনে নানান বিষয়ে একটা স্বস্তি এবং ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যদিও বিভিন্ন দিকে নানা অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান। এসব অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন, কোনো কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর। রাজনীতি-সম্পৃক্ত সহিংসতা বেশ ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে নানান জায়গায় সন্ত্রাসও চলছে। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো যথার্থ রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি এবং গণতন্ত্রের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতি বিষয়টিই সাধারণ মানুষের মনের বিরাট অংশ জুড়ে ছিল। ২০২৫ সালে তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু চিন্তাও তাদের কম ছিল না। সে প্রত্যাশা আর চিন্তা আবর্তিত হয়েছে তাদের জীবনের অর্থনীতি নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, ঋণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সহিংসতা ইত্যাদি।
শেষ হয়ে যাওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছিল অনেকটাই নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রবহমান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দারিদ্র্য ও অসমতা। গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে উঠে গেছে। আজকে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার হুমকিতে আছে। দারিদ্র্য-বহির্ভূত মানব-বঞ্চনা আরও তীব্রতর হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি মানুষের নিরাপদ সুপেয় জলের সুবিধা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ৫৭ শতাংশ শিশু দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। গত ছয় বছরে শিশুশ্রম বেড়ে গেছে—২০১৯ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৬ শতাংশ, যার মানে, ১৮ বছর অনূর্ধ্ব প্রতি দুজনের একজনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অন্যতম বাস্তবতা হচ্ছে অসমতা ও বৈষম্য। বাংলাদেশের উচ্চতম ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, আর দেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ (দেশের অর্ধেক লোক) ৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। দেশের উচ্চতম ২০ শতাংশ পরিবারে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ২০, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সে হার হচ্ছে হাজারে ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও গ্রামীণ বাংলায় আয় অসমতা স্থিতিশীল রয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে তা বেড়ে গেছে।
কর্মবিহীন প্রবৃদ্ধি, বিপুল বেকারত্ব, খেলাপি ঋণ, উল্লেখযোগ্য মানব-বঞ্চনা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১১ লাখ কর্মসংস্থান চলে গেছে। এই সময়কালে পোশাকশিল্পের রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান স্থবিরই থেকে গেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক বেকারত্বের হারের দ্বিগুণ। দেশের আর্থিক খাত একটি গভীর সংকটের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বর্তমানে ৬ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঋণভার এবং ঋণ পরিশোধের দায়ভার একটি সংকটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের অনুপাত ১৯২ শতাংশ, যেখানে এই অনুপাত ১৮০ শতাংশ হলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি শ্লথতা ছিল। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এখনো প্রার্থিত স্তরে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট এবং সেই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা এই উৎপাদন স্তরকে আরও বিপর্যস্ত করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের যাপিত জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশে বিনিয়োগ নিম্নস্তরে রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নানা নাজুকতা ও ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে। পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বহু উদ্যোক্তা সক্রিয় নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা আছে। ফলে দেশের উৎপাদন ভিত্তিও দুর্বল এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে। একদিকে উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় একটি সমস্যা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকিও একটি ভাবনার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি উৎপাদনে আমদানি করা উপকরণের ওপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি খাতে যথাযথ সমন্বয়ের অনুপস্থিতি এবং সেই সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতে যে বিপুলভর্তুকি দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই ভোগ করে সমাজের ধনাঢ্য এবং সম্পদশালী অংশ। আমাদের জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকির ৫৪ শতাংশই যায় দেশের ৪০ শতাংশ সবচেয়ে সম্পদশালী গোষ্ঠীর কাছে।
২০২৫ সালের বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম বাস্তবতা ছিল নানান বিষয়ে বৈশ্বিক চাপ। প্রথমত, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রবৃদ্ধি-শ্লথতায় ভুগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশ্বের নানান জায়গার যুদ্ধ এবং সংঘাতের প্রভাবও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যদিও উত্তরণ সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে, কিন্তু সম্ভবত ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু কিছু সুযোগ হারাবে। যেমন স্বল্প বা শূন্য শুল্কে রপ্তানি সুবিধা, অনুদান সুবিধা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশ পর্যায়ে উন্নীত হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব আসন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা এবং সেই বিপৎসংকুল পথযাত্রায় বিজ্ঞতা, সংনম্যতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে সেই বিপদ মোকাবিলা করে সব সংকট উতরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে কি না।
অসমতা বা বৈষম্য তো শুধু অর্থনৈতিক নয়, তা ব্যাপ্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বলয়েও। বৈষম্য শুধু ফলাফলে নয়, তা পরিস্ফুট হয়েছে সুযোগেও। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত।
নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বাংলাদেশি সমাজের অসমতার অন্যতম বাস্তবতা। সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়, যা প্রতিফলিত হয় ফলাফলে। ঘরে-বাইরে নানা হয়রানি আর সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। সেসব নির্যাতনের অংশ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গৃহাভ্যন্তরের সহিংসতা এবং ধর্ষণ।
২০২৫ সালে একধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সমাজের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে অব্যাহত ছিল। সেই সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং মবতন্ত্রের ফলে এ দেশের সমাজ একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করেছে। ‘মব ভায়োলেন্সকে’ ‘মব জাস্টিস’ বলে যৌক্তিকতা দানের প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে অন্যায়। ন্যায্যতা অনেক উঁচু মার্গের বিষয়। সহিংসতার মতো বিকৃত একটি পন্থা দিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌক্তিক, অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক অনেক পন্থা আছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সেগুলোর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ‘মব ভায়োলেন্সকে’ কিছুতেই ‘মবোক্রেসির’ সমার্থক বলা যায় না। একটি হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ‘ডেমোক্রেসির’ সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়। চূড়ান্ত বিচারে, ‘মব ভায়োলেন্স’ হিংস্র সহিংসতা ভিন্ন কিছুই নয়।
দুই মাসের কম সময়ে বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি সেই দিকে। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পথযাত্রার শুরু করুক, গতিময়তা আনুক, সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক, সেটাই আমরা চাই। ২০২৬ সাল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমবৃদ্ধির সুবাতাস নিয়ে আসুক।

আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ সালের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এই হিসাব মেলানোর একটি বিরাট তাৎপর্য আছে; আমাদের অর্জনগুলোর উদ্যাপন এবং আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেগুলো একটি পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকে পুরো বছরটি নানা উদ্বেগ, শঙ্কার, আশা-নিরাশার মধ্যে ছিল। জনগণের কাছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল না। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন দল প্রাধান্য পাচ্ছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা সারা বছর ধরে ছিল। জনমনে, বিশেষত নারীদের মনে প্রশ্ন ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নারী-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে কি না। নির্বাচন হবে, নাকি হবে না, তা নিয়েও নানান মহল প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের তারিখ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। নানা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছিল সম্ভাব্য নির্বাচন সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা সময়কালের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ বলছিল না। অবস্থাটা এমনই ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কথা বলেছিলেন নানা বিজ্ঞজন। জনমনে একটা বড় জিজ্ঞাসা ছিল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন। সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত ছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সেই সব শঙ্কা-আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও বেরোচ্ছে। তারেক রহমানও কদিন আগে দেশে ফিরেছেন। সুতরাং রাজনীতির অঙ্গনে নানান বিষয়ে একটা স্বস্তি এবং ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যদিও বিভিন্ন দিকে নানা অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান। এসব অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন, কোনো কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর। রাজনীতি-সম্পৃক্ত সহিংসতা বেশ ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে নানান জায়গায় সন্ত্রাসও চলছে। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো যথার্থ রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি এবং গণতন্ত্রের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতি বিষয়টিই সাধারণ মানুষের মনের বিরাট অংশ জুড়ে ছিল। ২০২৫ সালে তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু চিন্তাও তাদের কম ছিল না। সে প্রত্যাশা আর চিন্তা আবর্তিত হয়েছে তাদের জীবনের অর্থনীতি নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, ঋণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সহিংসতা ইত্যাদি।
শেষ হয়ে যাওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছিল অনেকটাই নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রবহমান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দারিদ্র্য ও অসমতা। গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে উঠে গেছে। আজকে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার হুমকিতে আছে। দারিদ্র্য-বহির্ভূত মানব-বঞ্চনা আরও তীব্রতর হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি মানুষের নিরাপদ সুপেয় জলের সুবিধা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ৫৭ শতাংশ শিশু দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। গত ছয় বছরে শিশুশ্রম বেড়ে গেছে—২০১৯ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৬ শতাংশ, যার মানে, ১৮ বছর অনূর্ধ্ব প্রতি দুজনের একজনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অন্যতম বাস্তবতা হচ্ছে অসমতা ও বৈষম্য। বাংলাদেশের উচ্চতম ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, আর দেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ (দেশের অর্ধেক লোক) ৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। দেশের উচ্চতম ২০ শতাংশ পরিবারে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ২০, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সে হার হচ্ছে হাজারে ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও গ্রামীণ বাংলায় আয় অসমতা স্থিতিশীল রয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে তা বেড়ে গেছে।
কর্মবিহীন প্রবৃদ্ধি, বিপুল বেকারত্ব, খেলাপি ঋণ, উল্লেখযোগ্য মানব-বঞ্চনা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১১ লাখ কর্মসংস্থান চলে গেছে। এই সময়কালে পোশাকশিল্পের রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান স্থবিরই থেকে গেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক বেকারত্বের হারের দ্বিগুণ। দেশের আর্থিক খাত একটি গভীর সংকটের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বর্তমানে ৬ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঋণভার এবং ঋণ পরিশোধের দায়ভার একটি সংকটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের অনুপাত ১৯২ শতাংশ, যেখানে এই অনুপাত ১৮০ শতাংশ হলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি শ্লথতা ছিল। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এখনো প্রার্থিত স্তরে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট এবং সেই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা এই উৎপাদন স্তরকে আরও বিপর্যস্ত করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের যাপিত জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশে বিনিয়োগ নিম্নস্তরে রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নানা নাজুকতা ও ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে। পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বহু উদ্যোক্তা সক্রিয় নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা আছে। ফলে দেশের উৎপাদন ভিত্তিও দুর্বল এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে। একদিকে উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় একটি সমস্যা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকিও একটি ভাবনার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি উৎপাদনে আমদানি করা উপকরণের ওপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি খাতে যথাযথ সমন্বয়ের অনুপস্থিতি এবং সেই সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতে যে বিপুলভর্তুকি দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই ভোগ করে সমাজের ধনাঢ্য এবং সম্পদশালী অংশ। আমাদের জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকির ৫৪ শতাংশই যায় দেশের ৪০ শতাংশ সবচেয়ে সম্পদশালী গোষ্ঠীর কাছে।
২০২৫ সালের বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম বাস্তবতা ছিল নানান বিষয়ে বৈশ্বিক চাপ। প্রথমত, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রবৃদ্ধি-শ্লথতায় ভুগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশ্বের নানান জায়গার যুদ্ধ এবং সংঘাতের প্রভাবও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যদিও উত্তরণ সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে, কিন্তু সম্ভবত ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু কিছু সুযোগ হারাবে। যেমন স্বল্প বা শূন্য শুল্কে রপ্তানি সুবিধা, অনুদান সুবিধা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশ পর্যায়ে উন্নীত হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব আসন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা এবং সেই বিপৎসংকুল পথযাত্রায় বিজ্ঞতা, সংনম্যতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে সেই বিপদ মোকাবিলা করে সব সংকট উতরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে কি না।
অসমতা বা বৈষম্য তো শুধু অর্থনৈতিক নয়, তা ব্যাপ্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বলয়েও। বৈষম্য শুধু ফলাফলে নয়, তা পরিস্ফুট হয়েছে সুযোগেও। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত।
নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বাংলাদেশি সমাজের অসমতার অন্যতম বাস্তবতা। সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়, যা প্রতিফলিত হয় ফলাফলে। ঘরে-বাইরে নানা হয়রানি আর সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। সেসব নির্যাতনের অংশ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গৃহাভ্যন্তরের সহিংসতা এবং ধর্ষণ।
২০২৫ সালে একধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সমাজের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে অব্যাহত ছিল। সেই সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং মবতন্ত্রের ফলে এ দেশের সমাজ একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করেছে। ‘মব ভায়োলেন্সকে’ ‘মব জাস্টিস’ বলে যৌক্তিকতা দানের প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে অন্যায়। ন্যায্যতা অনেক উঁচু মার্গের বিষয়। সহিংসতার মতো বিকৃত একটি পন্থা দিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌক্তিক, অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক অনেক পন্থা আছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সেগুলোর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ‘মব ভায়োলেন্সকে’ কিছুতেই ‘মবোক্রেসির’ সমার্থক বলা যায় না। একটি হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ‘ডেমোক্রেসির’ সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়। চূড়ান্ত বিচারে, ‘মব ভায়োলেন্স’ হিংস্র সহিংসতা ভিন্ন কিছুই নয়।
দুই মাসের কম সময়ে বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি সেই দিকে। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পথযাত্রার শুরু করুক, গতিময়তা আনুক, সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক, সেটাই আমরা চাই। ২০২৬ সাল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমবৃদ্ধির সুবাতাস নিয়ে আসুক।

কাজ করছি সন্ধ্যাবেলায়। হঠাৎ সন্জীদা খাতুনের ফোন। বহুদিন পর ফোন করলেন তিনি। কুশল সংবাদের পর জানা গেল, কিশোরদের নিয়ে লেখা তাঁর একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার উচ্ছ্বাসে তিনিও হাসলেন। জানালেন, এখন চোখ আর পা সমস্যা করছে। বহুদিন কিছু লিখতে পারছেন না।
০২ জুলাই ২০২১
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে নিভে গেল আরেকটি আলো। এত দীর্ঘ লড়াই, এত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী এই নারী শেষ বাঁকে এসে আর পারলেন না।
৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে বহু তারকা জ্বলে উঠেছে, বহু তারা আবার নিভে গেছে ক্ষমতার কালো ধোঁয়ায়।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশ হারাল একজন দেশপ্রেমী, অকুতোভয়, নির্ভীক ও আপসহীন নেত্রীকে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে তিনি ভালোবাসতেন এই দেশকে, এ দেশের মাটি ও মানুষকে। তিনি ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ২০০৩ সালে (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার...
৪ ঘণ্টা আগে