দেশের সক্রিয় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় না। কিন্তু কী উপায়ে দলটিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে, সেই কৌশল নিয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে। এ ছাড়া অপরাধে জড়িত না থাকা ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন কোনো কোনো রাজনীতিক।
আজাদুর রহমান চন্দন

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা এবং সর্বোপরি আন্দোলনকারীদের দমাতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ব্যাপক হত্যা-নৃশংসতার জন্য এতটুকু অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি। উল্টো তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে বলেছিলেন, দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আইনসংগত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জয় দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় রাজনৈতিক দল বলতে নিজের দল আওয়ামী লীগকে বুঝিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘না শুধরে কি পাবে আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে এক নিবন্ধে তখনই লিখেছিলাম, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপযোগী করে নিজেদের শুধরে নেওয়ার বদলে অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু নিজেদের শোধরানোর উদ্যোগ না নিলে তাঁদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি না, সেই প্রশ্নও রেখেছিলাম।
আমার মতো এক নগণ্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বা অভিমতের বিষয়ে একটি বড় রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকেরা সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন—এমন আশা কস্মিনকালেও পোষণ করি না। তবে গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা নানা বিষয়ে যেসব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাতে তাঁদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপের লেশমাত্রও দেখা যায়নি। উল্টো তাঁরা আদৌ কোনো অপরাধ বা ভুল করেছেন কি না, সে বিষয়ে জনমত জানতে আগে তাঁদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়ার সুযোগ চান দলটির কোনো কোনো নেতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ভুল-ত্রুটি সামনে এনেই রাজনীতিতে এবং জনগণের কাছে ফিরতে চায় তাঁদের দল।
নাছিম আরও বলেন, ‘আমরা যদি ভুল করি, মানুষ খারাপ বললে সেই সমালোচনা মেনে নিয়ে আমরা শোধরাবার চেষ্টা করব। অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও সমৃদ্ধ কাজ করার চেষ্টা করব। আমরা খারাপটাকে বর্জন করব। খারাপ যদি করে থাকি, সেটার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমরা দলীয় মূল্যায়ন করে দেশের মানুষের কাছে গিয়ে তুলে ধরব।’
দলীয় বা সরকারি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার যাঁরা করেছেন, তাঁদের মনোভাব এমন হলেও সাধারণ অনেক কর্মী-সমর্থকের কাছ থেকে শোধরানোর পক্ষেই মত পেয়েছি। ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এমনকি সরাসরি আলাপচারিতায় চেনাজানা বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগারের কাছ থেকে এমন অভিমত পাই। আমার নিজ এলাকার একজন সুপরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিষ্ঠাবান আওয়ামী লীগার তো ফেসবুকে মন্তব্যের ঘরে সরাসরি লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারক মহলের ভাববার সময় এখনই’।
আওয়ামী লীগারদের প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, লেখাটি ছাপা হওয়ার পর একদা বামপন্থী দু-একজন বন্ধু কিন্তু আমার ওপর বেজায় চটেছিলেন। একজন লিখেছিলেন, ‘আপনাদের লজ্জা করে না ইনিয়ে-বিনিয়ে, প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের মতো একটা দুর্বৃত্ত দলের পক্ষে কথা বলতে?’ ওই বন্ধুটির কাছে আওয়ামী লীগকে শোধরানোর তাগিদ দেওয়ার মানে হলো ‘প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের মতো একটা দুর্বৃত্ত দলের পক্ষে কথা’ বলা!
পুরোনো প্রসঙ্গটি টেনে আনলাম ‘রিফাইন্ড (পরিশীলিত বা সংশোধিত) আওয়ামী লীগ’ নিয়ে হঠাৎ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে। রাজনীতিতে এই নতুন উত্তাপ দেখা দিয়েছে মূলত ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই’ বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক মন্তব্যের পর। ড. ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের কাছে ওই মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার বেশ কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তরপাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।’ এর ঘণ্টাখানেক পর আরেকটি বড় পোস্টে হাসনাত দাবি করেন, ভারতের পরিকল্পনায় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি লেখেন, ‘আমিসহ আরও দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর ২: ৩০-এ। আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই।’ হাসনাত আরও লেখেন, ‘আমাদের আরও বলা হয়, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে—এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’
দেশের সক্রিয় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় না। কিন্তু কী উপায়ে দলটিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে, সেই কৌশল নিয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে। এ ছাড়া অপরাধে জড়িত না থাকা ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন কোনো কোনো রাজনীতিক। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘যাঁরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী, তাঁদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না কেন?’ তাঁর এই বক্তব্য নিয়েও দেখলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করছেন বিএনপিরও কিছু লোক। রিজভী কিন্তু আওয়ামী লীগের অপরাধী নেতাদের বিচারের বিপক্ষে কিছু বলেননি। তাঁর বক্তব্যেও মূলত পরিশীলিত আওয়ামী লীগের ধারণারই সমর্থন মেলে। কিন্তু তাঁকে জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির শিকার বানানোর চেষ্টা চলছে। কিছু মহল বিষয়টিকে ফ্যাসিস্ট দলের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করে নিজস্ব গোষ্ঠীস্বার্থে সাধারণ মানুষকে পক্ষে টানার চেষ্টায় লিপ্ত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টায়ও আছে কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী। কেউ কেউ এই ইস্যুতে নিরাপত্তা বাহিনীকেও জনগণের প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছে। এতে যে সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না চিন্তাবিদ তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও।
হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর দ্বিতীয় পোস্টের একেবারে শেষে লিখেছেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’ যদিও একটি বিষয়েই শুধু নয়, বরং সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্যই অপরিহার্য ছিল ঐক্য। কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টোটা। শুরু থেকেই উপেক্ষা করা হতে থাকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল-সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের। দিনে দিনে নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে মতভেদও প্রকাশ পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকারের। এমনকি গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নানা ইস্যুতে বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসা ব্যক্তি-সংগঠনকেও কখনো ‘শাহবাগি’, কখনো ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে মব লেলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ‘শক্তি-সামর্থ্য’ কম বলেই বোধ করি বিষয়টি অনেকের কাছে ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু একপর্যায়ে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সঙ্গেও মতভিন্নতা দেখা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত এনসিপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের। রাষ্ট্রপতিকে সরানো, গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ, জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে এই মতভেদ দেখা যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো শনিবারও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে কিংবা নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে—এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। জাতীয় সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত।
আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আগাগোড়াই আন্দোলনে ছিল বিএনপি ও তার সমমনা বিভিন্ন দল, সিপিবি-বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ অনেক রাজনৈতিক দল। আন্দোলনকারী অনেক দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে নিজেদের সুবিধামতো ঐক্যের ডাক কতটা ফলদায়ক হবে সেটা অচিরেই স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা এবং সর্বোপরি আন্দোলনকারীদের দমাতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ব্যাপক হত্যা-নৃশংসতার জন্য এতটুকু অনুশোচনা প্রকাশ পায়নি। উল্টো তিনি গত ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে বলেছিলেন, দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে আইনসংগত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জয় দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বড় রাজনৈতিক দল বলতে নিজের দল আওয়ামী লীগকে বুঝিয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘না শুধরে কি পাবে আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে এক নিবন্ধে তখনই লিখেছিলাম, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপযোগী করে নিজেদের শুধরে নেওয়ার বদলে অনুকূল সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু নিজেদের শোধরানোর উদ্যোগ না নিলে তাঁদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কি না, সেই প্রশ্নও রেখেছিলাম।
আমার মতো এক নগণ্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি বা অভিমতের বিষয়ে একটি বড় রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকেরা সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন—এমন আশা কস্মিনকালেও পোষণ করি না। তবে গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা নানা বিষয়ে যেসব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাতে তাঁদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপের লেশমাত্রও দেখা যায়নি। উল্টো তাঁরা আদৌ কোনো অপরাধ বা ভুল করেছেন কি না, সে বিষয়ে জনমত জানতে আগে তাঁদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়ার সুযোগ চান দলটির কোনো কোনো নেতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ভুল-ত্রুটি সামনে এনেই রাজনীতিতে এবং জনগণের কাছে ফিরতে চায় তাঁদের দল।
নাছিম আরও বলেন, ‘আমরা যদি ভুল করি, মানুষ খারাপ বললে সেই সমালোচনা মেনে নিয়ে আমরা শোধরাবার চেষ্টা করব। অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও সমৃদ্ধ কাজ করার চেষ্টা করব। আমরা খারাপটাকে বর্জন করব। খারাপ যদি করে থাকি, সেটার জন্য অবশ্যই উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমরা দলীয় মূল্যায়ন করে দেশের মানুষের কাছে গিয়ে তুলে ধরব।’
দলীয় বা সরকারি পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার যাঁরা করেছেন, তাঁদের মনোভাব এমন হলেও সাধারণ অনেক কর্মী-সমর্থকের কাছ থেকে শোধরানোর পক্ষেই মত পেয়েছি। ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এমনকি সরাসরি আলাপচারিতায় চেনাজানা বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগারের কাছ থেকে এমন অভিমত পাই। আমার নিজ এলাকার একজন সুপরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিষ্ঠাবান আওয়ামী লীগার তো ফেসবুকে মন্তব্যের ঘরে সরাসরি লিখেছেন, ‘এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারক মহলের ভাববার সময় এখনই’।
আওয়ামী লীগারদের প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, লেখাটি ছাপা হওয়ার পর একদা বামপন্থী দু-একজন বন্ধু কিন্তু আমার ওপর বেজায় চটেছিলেন। একজন লিখেছিলেন, ‘আপনাদের লজ্জা করে না ইনিয়ে-বিনিয়ে, প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের মতো একটা দুর্বৃত্ত দলের পক্ষে কথা বলতে?’ ওই বন্ধুটির কাছে আওয়ামী লীগকে শোধরানোর তাগিদ দেওয়ার মানে হলো ‘প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের মতো একটা দুর্বৃত্ত দলের পক্ষে কথা’ বলা!
পুরোনো প্রসঙ্গটি টেনে আনলাম ‘রিফাইন্ড (পরিশীলিত বা সংশোধিত) আওয়ামী লীগ’ নিয়ে হঠাৎ রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে। রাজনীতিতে এই নতুন উত্তাপ দেখা দিয়েছে মূলত ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই’ বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক মন্তব্যের পর। ড. ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের কাছে ওই মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার বেশ কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তরপাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।’ এর ঘণ্টাখানেক পর আরেকটি বড় পোস্টে হাসনাত দাবি করেন, ভারতের পরিকল্পনায় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি লেখেন, ‘আমিসহ আরও দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর ২: ৩০-এ। আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই।’ হাসনাত আরও লেখেন, ‘আমাদের আরও বলা হয়, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে—এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’
দেশের সক্রিয় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় না। কিন্তু কী উপায়ে দলটিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে, সেই কৌশল নিয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে। এ ছাড়া অপরাধে জড়িত না থাকা ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন কোনো কোনো রাজনীতিক। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘যাঁরা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী, তাঁদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে না কেন?’ তাঁর এই বক্তব্য নিয়েও দেখলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল করছেন বিএনপিরও কিছু লোক। রিজভী কিন্তু আওয়ামী লীগের অপরাধী নেতাদের বিচারের বিপক্ষে কিছু বলেননি। তাঁর বক্তব্যেও মূলত পরিশীলিত আওয়ামী লীগের ধারণারই সমর্থন মেলে। কিন্তু তাঁকে জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির শিকার বানানোর চেষ্টা চলছে। কিছু মহল বিষয়টিকে ফ্যাসিস্ট দলের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করে নিজস্ব গোষ্ঠীস্বার্থে সাধারণ মানুষকে পক্ষে টানার চেষ্টায় লিপ্ত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টায়ও আছে কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠী। কেউ কেউ এই ইস্যুতে নিরাপত্তা বাহিনীকেও জনগণের প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছে। এতে যে সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না চিন্তাবিদ তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও।
হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর দ্বিতীয় পোস্টের একেবারে শেষে লিখেছেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’ যদিও একটি বিষয়েই শুধু নয়, বরং সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্যই অপরিহার্য ছিল ঐক্য। কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টোটা। শুরু থেকেই উপেক্ষা করা হতে থাকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল-সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবীদের। দিনে দিনে নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে মতভেদও প্রকাশ পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকারের। এমনকি গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নানা ইস্যুতে বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসা ব্যক্তি-সংগঠনকেও কখনো ‘শাহবাগি’, কখনো ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে মব লেলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ‘শক্তি-সামর্থ্য’ কম বলেই বোধ করি বিষয়টি অনেকের কাছে ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু একপর্যায়ে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির সঙ্গেও মতভিন্নতা দেখা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত এনসিপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের। রাষ্ট্রপতিকে সরানো, গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ, জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে এই মতভেদ দেখা যায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো শনিবারও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে কিংবা নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে—এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। জাতীয় সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত।
আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে আগাগোড়াই আন্দোলনে ছিল বিএনপি ও তার সমমনা বিভিন্ন দল, সিপিবি-বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চাসহ অনেক রাজনৈতিক দল। আন্দোলনকারী অনেক দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করে নিজেদের সুবিধামতো ঐক্যের ডাক কতটা ফলদায়ক হবে সেটা অচিরেই স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১২ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১২ ঘণ্টা আগে
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে...
১২ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে। এ দিনে পৃথিবীতে যিশুখ্রিষ্টের আগমন, শান্তি আর সৎপথের বার্তা নিয়ে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাই দিনটি বিশেষ।
আজ বড়দিন। যিশুর অনুসারী তথা খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পবিত্র এ দিনটি আজ বিশ্বজুড়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বহুবিধ সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করছে যিশুর জন্মদিন। গির্জা কিংবা ঘরোয়া পার্বণ—সবখানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই যিশুকে, যিনি বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন। স্মরণ করা হচ্ছে তাঁর জন্মের পবিত্র লগ্নকে।
আজ যিশুর বন্দনা গাওয়ার দিন। কারণ, এই দিনে ধরণিতে তাঁর আবির্ভাব হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে—ত্রাতা হিসেবে। তিনি অন্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন পাপ-পঙ্কিলতা বর্জন করে করুণা, পবিত্রতা ও সুন্দর পথে কীভাবে জীবন পরিচালনা করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এনে মুক্তির পথ খুঁজতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বড়দিনে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জায় এবং বাড়িতে বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এ দিনে চলে গানবাজনা, নামসংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস। এসব উৎসব-আয়োজনের চেয়েও বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে নিজেদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস। তাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের পূর্ববর্তী চার সপ্তাহব্যাপী ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সুসম্পর্ক গড়তে সচেষ্ট হন।
ঈশ্বরের মহান বার্তাবাহক যিশুকে অনুসরণ করলে কতই না সুন্দর একটি সমাজ গঠন করা যায়! অথচ পাপাচারের পৃথিবীতে সেই সমাজ থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে বাস করি। মানবজাতির জন্য এ এক দুর্ভাগ্য! এ রকম সংকটের মুহূর্তেই যিশুর বাণী, বড়দিনের বার্তা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে—মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও একতার বীজ বুনতে হবে; ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কোনো জাতি, ধর্ম বা তার অনুসারীর প্রতিই বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি দিনটিতে প্রিয় স্বদেশের মঙ্গল কামনার জন্য খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতে ভোলেন না। এই প্রার্থনা আর শান্তিরাজ যিশুর দেখানো পথে চলার প্রয়াসই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বড়দিন সবাইকে বারবার সুযোগ দেয় দুর্নীতি, অনাচার, পাপাচার বর্জন করে সৎপথে চলার। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। বরং কাজে লাগিয়ে গড়তে হবে একতার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে মিথ্যা অপবাদে কাউকে হত্যা করা হবে না—সে যে কেউ হোক।
সবার জীবনে বড়দিন শান্তি বয়ে আনুক। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।

দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে। এ দিনে পৃথিবীতে যিশুখ্রিষ্টের আগমন, শান্তি আর সৎপথের বার্তা নিয়ে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য তাই দিনটি বিশেষ।
আজ বড়দিন। যিশুর অনুসারী তথা খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পবিত্র এ দিনটি আজ বিশ্বজুড়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। বহুবিধ সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলে উদ্যাপন করছে যিশুর জন্মদিন। গির্জা কিংবা ঘরোয়া পার্বণ—সবখানে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই যিশুকে, যিনি বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্মেছিলেন। স্মরণ করা হচ্ছে তাঁর জন্মের পবিত্র লগ্নকে।
আজ যিশুর বন্দনা গাওয়ার দিন। কারণ, এই দিনে ধরণিতে তাঁর আবির্ভাব হয় বিশেষ উদ্দেশ্যে—ত্রাতা হিসেবে। তিনি অন্যকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন পাপ-পঙ্কিলতা বর্জন করে করুণা, পবিত্রতা ও সুন্দর পথে কীভাবে জীবন পরিচালনা করা যায়। ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এনে মুক্তির পথ খুঁজতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বড়দিনে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের কাহিনি পাঠ ও ধ্যান করা হয়। সেই কাহিনি অবলম্বনে গির্জায় এবং বাড়িতে বাড়িতে গোশালা নির্মাণ করে ফুলপাতা দিয়ে সাজানো হয়। এ দিনে চলে গানবাজনা, নামসংকীর্তন, ভোজন, আনন্দ-উল্লাস। এসব উৎসব-আয়োজনের চেয়েও বড় ব্যাপার হয়ে ওঠে নিজেদের হৃদয়-মন ও অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস। তাই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বড়দিনের পূর্ববর্তী চার সপ্তাহব্যাপী ধ্যান-অনুধ্যান, মন পরীক্ষা, ব্যক্তিগত পাপ স্বীকার, সমবেত পুনর্মিলন বা ক্ষমা-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে-মানুষে সুসম্পর্ক গড়তে সচেষ্ট হন।
ঈশ্বরের মহান বার্তাবাহক যিশুকে অনুসরণ করলে কতই না সুন্দর একটি সমাজ গঠন করা যায়! অথচ পাপাচারের পৃথিবীতে সেই সমাজ থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে বাস করি। মানবজাতির জন্য এ এক দুর্ভাগ্য! এ রকম সংকটের মুহূর্তেই যিশুর বাণী, বড়দিনের বার্তা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে—মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও একতার বীজ বুনতে হবে; ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সবার প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কোনো জাতি, ধর্ম বা তার অনুসারীর প্রতিই বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের পাশাপাশি দিনটিতে প্রিয় স্বদেশের মঙ্গল কামনার জন্য খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা করতে ভোলেন না। এই প্রার্থনা আর শান্তিরাজ যিশুর দেখানো পথে চলার প্রয়াসই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। বড়দিন সবাইকে বারবার সুযোগ দেয় দুর্নীতি, অনাচার, পাপাচার বর্জন করে সৎপথে চলার। সেই সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। বরং কাজে লাগিয়ে গড়তে হবে একতার বাংলাদেশ; যে বাংলাদেশে ধর্মকে পুঁজি করে মিথ্যা অপবাদে কাউকে হত্যা করা হবে না—সে যে কেউ হোক।
সবার জীবনে বড়দিন শান্তি বয়ে আনুক। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা...
২৪ মার্চ ২০২৫
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১২ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১২ ঘণ্টা আগে
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে...
১২ ঘণ্টা আগেরাজিউল হাসান

গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৫ সালেও ছিল। এ বছরেও গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রাণ গেছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডাসের তথ্য বলছে, বিদ্বেষ ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ২০২৫ সালেও সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক শুধু প্রাণই দেননি, তাঁরা হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছেন।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, বিগত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকসহ ৬৭ জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই প্রাণ দিয়েছেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিংবা অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে। এই ৬৭ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই প্রাণ গেছে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে সাংবাদিকদের। আফ্রিকার দেশ সুদান সাংবাদিকদের জন্য হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী যুদ্ধক্ষেত্র। মেক্সিকোয় অপরাধী চক্রের হাতে প্রাণ গেছে ৯ সাংবাদিকের। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিকে বলা হয় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক রাষ্ট্র।
সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু প্রাণই দিচ্ছেন না, তাঁরা আটক-গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫০৩ জন সাংবাদিক কারান্তরীণ হয়ে আছেন।
কেবল অপরাধ চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ দেশ কিংবা যুদ্ধকবলিত দেশই নয়, গণতন্ত্রের চর্চার দাবি করা দেশেও সাংবাদিকেরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন নামের অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তা গত তিন বছরের মোট সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনার সংখ্যার বেশি।
ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সাংবাদিক কেন আক্রান্ত হন? বিশ্বজুড়েই দেখা যায়, যখন কোথাও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়, সাংবাদিক সেখানে যান পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করতে। তিনি কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কাজ করেন না। শুধু জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টায় কোনো না কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় সেই পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।
আবার অপরাধী চক্র সাংবাদিককে আক্রমণ করে তাদের গোমর ফাঁসের ভয়ে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের বালাই থাকে না। মাঠের পরিস্থিতি যেন বিশ্বমানবতা জানতে না পারে, সে চেষ্টার অংশ হিসেবে আক্রমণ করা হয় সাংবাদিককে।
কখনো কখনো শুধু রোষের বশেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা হয়। শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী না, কখনো কখনো রাষ্ট্রও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরে। সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, এর উদাহরণ বিশ্বজুড়েই রয়েছে। নতুন করে আর কোনো দেশের নামোল্লেখ করতে চাই না।
কিন্তু গণমাধ্যম সরকার ও সমাজের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল সমাজের নানা ত্রুটি তুলে ধরে গণমাধ্যম রাষ্ট্র গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যম সে প্রচেষ্টা করেও যাচ্ছে। গণমাধ্যমের শাসক কিংবা কোনো গোষ্ঠীর ‘দাসে’ পরিণত হওয়ার রেকর্ড যদিও আছে, কিন্তু সেটা হাতে গোনা বলা চলে। বাকি গণমাধ্যমগুলো সমাজকে সঠিক পথ দেখাতেই নিরন্তর কাজ করে চলেছে। উদাহরণও আছে ভূরি ভূরি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ভূমিকা রেখেছিল, তা যুগ যুগ ধরে আলোচনা হবে। কিংবা হাল আমলে যুক্তরাজ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনাকালীন ভূমিকা বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ সে দেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে প্রকাশ করেছিল, সেটাও বড় উদাহরণ।
একটি জাতি গঠন কিংবা সমাজ গঠন—যে গঠনের কথাই বলা হোক না কেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা কিছুতেই খাটো করে দেখা যাবে না। সমাজের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরাই সাংবাদিকের কাজ। এমনকি শাসক দল যখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়, তখন গণমাধ্যমই তাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরে। অথচ এমনও দেখা গেছে, সেই বিরোধী দল যখন সরকারে যায়, তারাও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুগে যুগে সংবাদমাধ্যমকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
আমরা যদি একটু গভীরে ভাবি, তাহলে দেখব, সাংবাদিক যে পারিশ্রমিক পান, সে তুলনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে ঝুঁকি নেন, তা অনেক অনেক বেশি। কার এমন দায় পড়েছে নগণ্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নেবেন। তারপরও তিনি ঝুঁকি নেন দায়িত্বের জায়গা থেকে, তিনি ঝুঁকি নেন জনসাধারণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার নেশা থেকে। এই নেশাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত, দমন করা উচিত নয়। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ মানে একটি সমাজের মৃত্যুর ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া। সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একবার ভাবুন, একটি দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠ যদি পুরোদমে রোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের অবস্থা কী হবে। কেবল ‘বাতাবি লেবুর রেকর্ড ফলনেরই’ গান শুনতে হবে পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়। কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কেউ থাকবে না কথা বলার।
কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সবার জন্যই জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতার সুযোগে সে দূর করতে পারে সমাজের পঙ্কিলতা। বিরোধীরা চাইলে সেই স্বাধীনতার সুযোগে সরকারের অন্ধকার দিকগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারবে। এভাবে পুরো সমাজ-রাষ্ট্রে নিশ্চিত হতে পারে জবাবদিহি।
কিন্তু বিশ্বে গণমাধ্যম নিয়ে এমন নীতি খুব কমই দেখা যায়। বরং উল্টো ঘটনাই বেশি ঘটছে। তারপরও গণমাধ্যম তার কাজ করে চলেছে, যাবে। কারণ, গণমাধ্যম হলো ফিনিক্স পাখির মতো। সে আক্রান্ত হবে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, তারপর সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। গণমাধ্যম এমন একটি শিল্প, এমন একটি দায়বদ্ধতা, যা কখনো কোনো দিন কোনো হামলা, হুমকি, ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না।

গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে। সেই ধারাবাহিকতা ২০২৫ সালেও ছিল। এ বছরেও গণমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে, সাংবাদিকদের প্রাণ গেছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডাসের তথ্য বলছে, বিদ্বেষ ও দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে ২০২৫ সালেও সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এ বছর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক শুধু প্রাণই দেননি, তাঁরা হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তুও হয়েছেন।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, বিগত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকসহ ৬৭ জন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৫৩ জনই প্রাণ দিয়েছেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিংবা অপরাধী চক্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে। এই ৬৭ জনের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই প্রাণ গেছে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধেও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে সাংবাদিকদের। আফ্রিকার দেশ সুদান সাংবাদিকদের জন্য হয়ে উঠেছে প্রাণঘাতী যুদ্ধক্ষেত্র। মেক্সিকোয় অপরাধী চক্রের হাতে প্রাণ গেছে ৯ সাংবাদিকের। উত্তর আমেরিকার এই দেশটিকে বলা হয় সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় বিপজ্জনক রাষ্ট্র।
সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুধু প্রাণই দিচ্ছেন না, তাঁরা আটক-গ্রেপ্তারেরও শিকার হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫০৩ জন সাংবাদিক কারান্তরীণ হয়ে আছেন।
কেবল অপরাধ চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ দেশ কিংবা যুদ্ধকবলিত দেশই নয়, গণতন্ত্রের চর্চার দাবি করা দেশেও সাংবাদিকেরা দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকের ওপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন নামের অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তা গত তিন বছরের মোট সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনার সংখ্যার বেশি।
ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিপীড়নের শিকার সাংবাদিকদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সাংবাদিক কেন আক্রান্ত হন? বিশ্বজুড়েই দেখা যায়, যখন কোথাও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয়, সাংবাদিক সেখানে যান পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহ করতে। তিনি কারও পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কাজ করেন না। শুধু জনসাধারণকে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টায় কোনো না কোনো পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় সেই পক্ষের উদ্দেশ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে।
আবার অপরাধী চক্র সাংবাদিককে আক্রমণ করে তাদের গোমর ফাঁসের ভয়ে। যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। কারণ, এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকারের বালাই থাকে না। মাঠের পরিস্থিতি যেন বিশ্বমানবতা জানতে না পারে, সে চেষ্টার অংশ হিসেবে আক্রমণ করা হয় সাংবাদিককে।
কখনো কখনো শুধু রোষের বশেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা হয়। শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী না, কখনো কখনো রাষ্ট্রও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরে। সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, এর উদাহরণ বিশ্বজুড়েই রয়েছে। নতুন করে আর কোনো দেশের নামোল্লেখ করতে চাই না।
কিন্তু গণমাধ্যম সরকার ও সমাজের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল। কথা ছিল সমাজের নানা ত্রুটি তুলে ধরে গণমাধ্যম রাষ্ট্র গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। গণমাধ্যম সে প্রচেষ্টা করেও যাচ্ছে। গণমাধ্যমের শাসক কিংবা কোনো গোষ্ঠীর ‘দাসে’ পরিণত হওয়ার রেকর্ড যদিও আছে, কিন্তু সেটা হাতে গোনা বলা চলে। বাকি গণমাধ্যমগুলো সমাজকে সঠিক পথ দেখাতেই নিরন্তর কাজ করে চলেছে। উদাহরণও আছে ভূরি ভূরি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ভূমিকা রেখেছিল, তা যুগ যুগ ধরে আলোচনা হবে। কিংবা হাল আমলে যুক্তরাজ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনাকালীন ভূমিকা বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ সে দেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে প্রকাশ করেছিল, সেটাও বড় উদাহরণ।
একটি জাতি গঠন কিংবা সমাজ গঠন—যে গঠনের কথাই বলা হোক না কেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা কিছুতেই খাটো করে দেখা যাবে না। সমাজের ভুলত্রুটিগুলো তুলে ধরাই সাংবাদিকের কাজ। এমনকি শাসক দল যখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়, তখন গণমাধ্যমই তাদের কথা সবার সামনে তুলে ধরে। অথচ এমনও দেখা গেছে, সেই বিরোধী দল যখন সরকারে যায়, তারাও গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুগে যুগে সংবাদমাধ্যমকে বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
আমরা যদি একটু গভীরে ভাবি, তাহলে দেখব, সাংবাদিক যে পারিশ্রমিক পান, সে তুলনায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যে ঝুঁকি নেন, তা অনেক অনেক বেশি। কার এমন দায় পড়েছে নগণ্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনি জীবনের ঝুঁকি নেবেন। তারপরও তিনি ঝুঁকি নেন দায়িত্বের জায়গা থেকে, তিনি ঝুঁকি নেন জনসাধারণকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার নেশা থেকে। এই নেশাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিত, দমন করা উচিত নয়। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ মানে একটি সমাজের মৃত্যুর ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া। সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একবার ভাবুন, একটি দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠ যদি পুরোদমে রোধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সেই রাষ্ট্রের অবস্থা কী হবে। কেবল ‘বাতাবি লেবুর রেকর্ড ফলনেরই’ গান শুনতে হবে পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়। কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হলে কেউ থাকবে না কথা বলার।
কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সবার জন্যই জরুরি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গণমাধ্যমের সেই স্বাধীনতার সুযোগে সে দূর করতে পারে সমাজের পঙ্কিলতা। বিরোধীরা চাইলে সেই স্বাধীনতার সুযোগে সরকারের অন্ধকার দিকগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারবে। এভাবে পুরো সমাজ-রাষ্ট্রে নিশ্চিত হতে পারে জবাবদিহি।
কিন্তু বিশ্বে গণমাধ্যম নিয়ে এমন নীতি খুব কমই দেখা যায়। বরং উল্টো ঘটনাই বেশি ঘটছে। তারপরও গণমাধ্যম তার কাজ করে চলেছে, যাবে। কারণ, গণমাধ্যম হলো ফিনিক্স পাখির মতো। সে আক্রান্ত হবে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, তারপর সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। গণমাধ্যম এমন একটি শিল্প, এমন একটি দায়বদ্ধতা, যা কখনো কোনো দিন কোনো হামলা, হুমকি, ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা...
২৪ মার্চ ২০২৫
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১২ ঘণ্টা আগে
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে...
১২ ঘণ্টা আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস। আজ তথ্যই শক্তি, ডেটাই অস্ত্র এবং নেটওয়ার্কই নতুন ফ্রন্টলাইন। রাষ্ট্রের অর্থনীতি, সামরিক সক্ষমতা, কূটনীতি, এমনকি নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর।
সাইবার যুদ্ধ এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়; এটি বাস্তব, চলমান এবং ক্রমাগত বিস্তৃত এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা অচল করা, ব্যাংকিং সিস্টেমে অনুপ্রবেশ, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, ভুয়া তথ্য ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—সবকিছুই আজ সাইবার আক্রমণের আওতায় পড়ে। এসব আক্রমণ কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই, কোনো গুলির শব্দ ছাড়াই একটি রাষ্ট্রকে কার্যত অচল করে দিতে পারে। ফলে সামরিক শক্তির পাশাপাশি সাইবার সক্ষমতা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এরই সঙ্গে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নজরদারি প্রযুক্তি। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ডেটা বিশ্লেষণের দিকে ঝুঁকছে। ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক ডেটা, মেটাডেটা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবকিছুই নজরদারির আওতায় চলে আসছে। এতে একদিকে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও তীব্র হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে—সে প্রশ্ন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সাইবার অস্ত্র প্রতিযোগিতা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব, তথ্যনির্ভর আধিপত্য এবং প্রযুক্তিগত অসমতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেখানে প্রযুক্তিকে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, সেখানে উন্নয়নশীল ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলো পড়ছে নতুন ধরনের ঝুঁকির মুখে।
এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির উদ্ভব, রাষ্ট্রীয় কৌশলে এর প্রভাব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকাঠামোর ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিফলন বিশ্লেষণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হবে—নিরাপত্তার নামে কতটা নজরদারি গ্রহণযোগ্য এবং এই অদৃশ্য যুদ্ধের যুগে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থার কৌশলগত আচরণে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে এই অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য, ডেটা এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণই হয়ে উঠেছে প্রভাব বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বহুজাতিক করপোরেশন, হ্যাকার গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত সাইবার ইউনিটগুলোও সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করছে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে।
এই প্রেক্ষাপটে সাইবার হামলা, ডিজিটাল স্পাইয়িং, তথ্য চুরি, গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা আধুনিক সংঘাতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি দেশের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, আর্থিক খাত, সামরিক যোগাযোগ বা নির্বাচনব্যবস্থায় সামান্য ডিজিটাল হস্তক্ষেপও তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই ধরনের আক্রমণ প্রায়ই অজ্ঞাতনামা, সীমান্তহীন এবং যুদ্ধ ঘোষণার বাইরে সংঘটিত হয়, যা প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তাকাঠামোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফলস্বরূপ, সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আজ আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা নীতি এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রগুলো শুধু আক্রমণ প্রতিরোধেই নয়, বরং আগাম হুমকি শনাক্তকরণ, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বিশ্লেষণ এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই প্রযুক্তির ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে। এর পাশাপাশি, সাইবার সক্ষমতা এখন আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব, সামরিক জোট এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে এই বাস্তবতা শুধু প্রযুক্তিগত বা সামরিক সক্ষমতার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়। সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার জিওপলিটিকসের সামগ্রিক কাঠামো, রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। ক্ষমতার ভারসাম্য, সার্বভৌমত্বের ধারণা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবকিছুই নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এই ডিজিটাল যুগে।
এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক সাইবার ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব রাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত সতর্কতা, নীতি সমন্বয় এবং বহুপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারত্বের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আধুনিক জিওপলিটিকসের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি আর শুধু প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের হাতিয়ার নয়; বরং রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রভাব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার মূল নির্ধারণকারী। প্রতিটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, তথ্যপ্রবাহ এবং নজরদারি সক্ষমতা আজ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে—এটি শুধু প্রযুক্তির নয়, ক্ষমতারও খেলা।
এই বাস্তবতায় রাষ্ট্রগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে কৌশলগত সতর্কতা, তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এবং বহুপক্ষীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ন্যায্য এবং নিয়ন্ত্রিত সাইবার ক্ষমতার ব্যবহার আজ শুধু প্রতিরক্ষা নয়; এটি রাষ্ট্রের কূটনীতি, শক্তি ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে।
ফলস্বরূপ আধুনিক জিওপলিটিকসে সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি শুধু এক হাতিয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি রক্ষার এক অদৃশ্য, কিন্তু শক্তিশালী ভিত্তি। প্রযুক্তির অদৃশ্য স্রোতগুলোর মধ্যে আজ রাষ্ট্রের ক্ষমতা, নিরাপত্তা এবং প্রভাবের মান নির্ধারিত হচ্ছে—এটি আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা, যা দীর্ঘদিন আমাদের স্মৃতিতে এবং নীতিতে টেকসই রেশ রেখে যাবে।

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস। আজ তথ্যই শক্তি, ডেটাই অস্ত্র এবং নেটওয়ার্কই নতুন ফ্রন্টলাইন। রাষ্ট্রের অর্থনীতি, সামরিক সক্ষমতা, কূটনীতি, এমনকি নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর।
সাইবার যুদ্ধ এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়; এটি বাস্তব, চলমান এবং ক্রমাগত বিস্তৃত এক বৈশ্বিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা অচল করা, ব্যাংকিং সিস্টেমে অনুপ্রবেশ, নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, ভুয়া তথ্য ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ—সবকিছুই আজ সাইবার আক্রমণের আওতায় পড়ে। এসব আক্রমণ কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই, কোনো গুলির শব্দ ছাড়াই একটি রাষ্ট্রকে কার্যত অচল করে দিতে পারে। ফলে সামরিক শক্তির পাশাপাশি সাইবার সক্ষমতা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এরই সঙ্গে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে নজরদারি প্রযুক্তি। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে রাষ্ট্রগুলো নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর ডেটা বিশ্লেষণের দিকে ঝুঁকছে। ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক ডেটা, মেটাডেটা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবকিছুই নজরদারির আওতায় চলে আসছে। এতে একদিকে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধ দমনের সম্ভাবনা তৈরি হলেও, অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোপনীয়তা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও তীব্র হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কোন পথে যাচ্ছে—সে প্রশ্ন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। সাইবার অস্ত্র প্রতিযোগিতা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব, তথ্যনির্ভর আধিপত্য এবং প্রযুক্তিগত অসমতা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করছে। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেখানে প্রযুক্তিকে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, সেখানে উন্নয়নশীল ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলো পড়ছে নতুন ধরনের ঝুঁকির মুখে।
এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির উদ্ভব, রাষ্ট্রীয় কৌশলে এর প্রভাব এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকাঠামোর ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিফলন বিশ্লেষণ করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলা হবে—নিরাপত্তার নামে কতটা নজরদারি গ্রহণযোগ্য এবং এই অদৃশ্য যুদ্ধের যুগে মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতা আদৌ টিকে থাকবে কি না।
আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থার কৌশলগত আচরণে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রচলিত কাঠামোর বাইরে গিয়ে এই অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে তথ্য, ডেটা এবং ডিজিটাল অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণই হয়ে উঠেছে প্রভাব বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার। রাষ্ট্রের পাশাপাশি বহুজাতিক করপোরেশন, হ্যাকার গোষ্ঠী, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত সাইবার ইউনিটগুলোও সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করছে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে।
এই প্রেক্ষাপটে সাইবার হামলা, ডিজিটাল স্পাইয়িং, তথ্য চুরি, গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা আধুনিক সংঘাতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কোনো একটি দেশের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা, আর্থিক খাত, সামরিক যোগাযোগ বা নির্বাচনব্যবস্থায় সামান্য ডিজিটাল হস্তক্ষেপও তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এই ধরনের আক্রমণ প্রায়ই অজ্ঞাতনামা, সীমান্তহীন এবং যুদ্ধ ঘোষণার বাইরে সংঘটিত হয়, যা প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তাকাঠামোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ফলস্বরূপ, সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আজ আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত সক্ষমতা, প্রতিরক্ষা নীতি এবং নিরাপত্তা পরিকল্পনার একটি কেন্দ্রীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রগুলো শুধু আক্রমণ প্রতিরোধেই নয়, বরং আগাম হুমকি শনাক্তকরণ, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বিশ্লেষণ এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই প্রযুক্তির ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে। এর পাশাপাশি, সাইবার সক্ষমতা এখন আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব, সামরিক জোট এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে এই বাস্তবতা শুধু প্রযুক্তিগত বা সামরিক সক্ষমতার প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়। সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তার জিওপলিটিকসের সামগ্রিক কাঠামো, রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলছে। ক্ষমতার ভারসাম্য, সার্বভৌমত্বের ধারণা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবকিছুই নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে এই ডিজিটাল যুগে।
এই প্রেক্ষাপটে আধুনিক সাইবার ক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব রাষ্ট্রগুলোর জন্য কৌশলগত সতর্কতা, নীতি সমন্বয় এবং বহুপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারত্বের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা কোন পথে অগ্রসর হচ্ছে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই কলামে সাইবার যুদ্ধ ও নজরদারি প্রযুক্তির বহুমাত্রিক প্রভাব বিশ্লেষণের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি আধুনিক জিওপলিটিকসের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এটি আর শুধু প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের হাতিয়ার নয়; বরং রাষ্ট্রগুলোর কৌশলগত প্রভাব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার মূল নির্ধারণকারী। প্রতিটি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক, তথ্যপ্রবাহ এবং নজরদারি সক্ষমতা আজ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী বা দুর্বল করতে পারে—এটি শুধু প্রযুক্তির নয়, ক্ষমতারও খেলা।
এই বাস্তবতায় রাষ্ট্রগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে কৌশলগত সতর্কতা, তথ্যভিত্তিক নীতিনির্ধারণ এবং বহুপক্ষীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ন্যায্য এবং নিয়ন্ত্রিত সাইবার ক্ষমতার ব্যবহার আজ শুধু প্রতিরক্ষা নয়; এটি রাষ্ট্রের কূটনীতি, শক্তি ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে।
ফলস্বরূপ আধুনিক জিওপলিটিকসে সাইবার যুদ্ধ এবং নজরদারি প্রযুক্তি শুধু এক হাতিয়ার নয়; এটি রাষ্ট্রগুলোর ভবিষ্যৎ, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং শান্তি রক্ষার এক অদৃশ্য, কিন্তু শক্তিশালী ভিত্তি। প্রযুক্তির অদৃশ্য স্রোতগুলোর মধ্যে আজ রাষ্ট্রের ক্ষমতা, নিরাপত্তা এবং প্রভাবের মান নির্ধারিত হচ্ছে—এটি আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা, যা দীর্ঘদিন আমাদের স্মৃতিতে এবং নীতিতে টেকসই রেশ রেখে যাবে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা...
২৪ মার্চ ২০২৫
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১২ ঘণ্টা আগে
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে...
১২ ঘণ্টা আগেআব্দুর রহমান

আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে প্রভাব বাড়ানোর একধরনের নিয়ন্ত্রিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা কমে আসা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত দ্বিধা এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাসের ভেতর তুরস্ক নিজেকে এমন এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে তাকে পুরোপুরি গ্রহণ করাও কঠিন, আবার উপেক্ষা করাও অসম্ভব। গাজা থেকে লিবিয়া, কাতার থেকে সুদান—সর্বত্রই এখন তুরস্কের প্রভাব রয়েছে।
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা সরাসরি সামরিক নয়, কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লোহিতসাগর অঞ্চলে সুদানের অবস্থান তুরস্ককে দীর্ঘদিন আকর্ষণ করে আসছে। সাওয়াকিন দ্বীপ পুনর্গঠনের আগ্রহ, মানবিক সহায়তা এবং অবকাঠামো সহযোগিতার মাধ্যমে আঙ্কারা সেখানে একটি উপস্থিতি তৈরি করেছে। কেবল তা-ই নয়, সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধেও তুরস্ক সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে আঙ্কারা বিদ্যমান সরকার ও সেনাবাহিনীর—যা সুদান আর্মড ফোর্সেস বা এসএএফ নামে পরিচিত—পক্ষ নিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসএএফ এখন তুরস্ক ও মিসরের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে।
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছেন। তবে এটি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য অস্বস্তিকর। কারণ, তারা সুদানকে নিজেদের নিরাপত্তাবলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তুরস্ক এখানে সংঘাতে না গিয়ে ভবিষ্যতের বিকল্প তৈরি করছে, যা দেশটিকে সরাসরি হুমকি নয়, কিন্তু সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
গাজা ইস্যুতে তুরস্কের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হলেও সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত। আঙ্কারা ফিলিস্তিন প্রশ্নে উচ্চকিত অবস্থান নিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের কঠোর সমালোচনা করেছে এবং মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। এতে আরব জনমতের বড় অংশে তুরস্ক নৈতিকভাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাস্তবে তুরস্ক গাজায় সামরিকভাবে জড়ায়নি এবং জড়াতে চায়ও না। কারণ, সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা মানে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার সংঘাত, যা তুরস্কের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কিন্তু গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে যুদ্ধবিরতি অর্জিত হয়েছে, তাতে তুরস্কের সক্রিয় ভূমিকা আছে। ফলে গাজা তুরস্কের জন্য নৈতিক পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্র, সামরিক আধিপত্য বিস্তারের নয়। এই অবস্থান মিসর ও জর্ডানের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ তারা গাজা ইস্যুতে ঐতিহাসিক মধ্যস্থতার ভূমিকা হারানোর ঝুঁকি অনুভব করে। এই অবস্থায় গাজায় তুরস্কের ভূমিকা শুধু ত্রাণ নয়, এটি তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্গঠনে একটি কেন্দ্রীয় কূটনৈতিক ভূমিকায় বসাবে। এতে এই অঞ্চলে তুরস্কের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াবে।
লিবিয়ায় তুরস্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করেছে। এখানে আঙ্কারা প্রমাণ করেছে যে, দেশটি কেবল কথায় সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তব সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত। ২০১৯-২০ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারকে তুরস্কের ড্রোন, সামরিক উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণ সহায়তা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোন ব্যবহার করে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয় তুরস্ক। এটি শুধু লিবিয়ার যুদ্ধের ফলাফল বদলায়নি, বরং পুরো আরব বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তুরস্ক চাইলে আঞ্চলিক সংঘাতে নির্ধারক ভূমিকা নিতে পারে। এই কারণেই লিবিয়ায় তুরস্ক অনেক আরব শাসকের চোখে সরাসরি হুমকি।
মিসরের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ছিল তীব্র বৈরিতায় ভরা। মুসলিম ব্রাদারহুড প্রশ্ন, লিবিয়ার যুদ্ধ এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গ্যাসকেন্দ্রিক রাজনীতি এই দ্বন্দ্বকে গভীর করে তোলে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগিয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, নিরাপত্তা সংলাপ এবং যৌথ নৌ-মহড়ার আলোচনা দেখায় যে উভয় পক্ষই বুঝেছে—স্থায়ী বৈরিতা উভয়ের কৌশলগত স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি কোনো আদর্শগত সমঝোতা নয়, বরং শীতল বাস্তববাদ। মিসর তুরস্ককে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না, তুরস্কও মিসরকে বন্ধু মনে করে না, কিন্তু উভয়ই জানে সংঘাতের ব্যয় অনেক বেশি।
ইরানের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক আরও জটিল। একদিকে পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমন্বয়, অন্যদিকে সিরিয়া, ইরাক ও ককেশাসে প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইরান তুরস্ককে সুন্নি প্রভাব বিস্তারের একটি সম্ভাব্য বাহক হিসেবে দেখে, যা শিয়া-বলয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবু দুই দেশই সরাসরি সংঘাতে যায় না, কারণ সংঘাত মানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বহিরাগত শক্তির জন্য সুযোগ তৈরি করা। এই কারণে ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে সাম্প্রতিক সময়ে।
তবে তুরস্কের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সিরিয়ায় দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটিয়ে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারাকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করার মাধ্যমে। ২০১৭ সাল থেকেই তুরস্ক আল-শারার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তারপর ক্রমান্বয়ে আল-শারার বাহিনীকে সামরিক ও কৌশলগত সহায়তা দিয়ে সিরিয়ার মসনদ পর্যন্ত তাদের পৌঁছে দেয় আঙ্কারা। তুরস্ক মূলত দুটি কারণে আল-শারার বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছে। এক. সিরিয়ায় নিজের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করা এবং দুই. দেশটি থেকে বিশেষ করে আল-শারার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইদলিব থেকে যেন শরণার্থীর ঢেউ নিজ ভূখণ্ডে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করা। তুরস্ক কেবল আল-শারা এবং তাঁর বাহিনীকে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতেই সহায়তা করেনি, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার যোগাযোগেরও মাধ্যম ছিল তারা।
আরব দুনিয়াজুড়ে এই ভূমিকাগুলোকে একসূত্রে বাঁধে তুরস্কের সামরিক শিল্প। গত এক দশকে তুরস্ক প্রতিরক্ষা খাতে যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে, সেটিই তার ভূরাজনৈতিক সক্রিয়তার ভিত্তি। কাতার, মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া এমনকি কিছু উপসাগরীয় দেশ তুরস্কের ড্রোন ও সাঁজোয়া যান কিনেছে বা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। এর কারণ কেবল দাম নয়, পশ্চিমা অস্ত্র কেনার সঙ্গে রাজনৈতিক শর্ত, মানবাধিকার প্রশ্ন ও দীর্ঘ ডেলিভারি সময় জড়িত থাকে। তুরস্ক এই জায়গায় নিজেকে একটি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে, যেখানে প্রযুক্তি যথেষ্ট আধুনিক, দাম তুলনামূলক কম এবং রাজনৈতিক শর্ত সীমিত। এতে আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুরস্ক শুধু অস্ত্র সরবরাহকারী নয়, বরং কৌশলগত বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই সামরিক শিল্পের প্রভাব আরব বিশ্বে দ্বিমুখী। একদিকে কিছু রাষ্ট্র তুরস্ককে অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। কাতারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। কাতারে তুর্কি সামরিক ঘাঁটি, যৌথ মহড়া এবং অস্ত্র সরবরাহ একটি গভীর নিরাপত্তা অংশীদারত্ব তৈরি করেছে। অন্যদিকে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো তুরস্কের সামরিক শিল্পকে একটি সুপ্ত হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ, এই শিল্প তুরস্ককে কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যের শক্তি দেয় না, বরং প্রয়োজনে সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও দেয়, যেমনটি লিবিয়ায় দেখা গেছে।
আরব বিশ্বে তুরস্কের সামরিক শিল্পের আরেকটি প্রভাব হলো আত্মবিশ্বাসের রাজনীতি। বহু দশক ধরে আরব রাষ্ট্রগুলো সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তুরস্কের উত্থান দেখিয়েছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশও পরিকল্পিত বিনিয়োগ, রাষ্ট্রীয় সমর্থন এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বমানের সামরিক প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে। এটি আরব সমাজের ভেতরে একধরনের অনুপ্রেরণা তৈরি করেছে, যদিও শাসকগোষ্ঠীর কাছে তা সব সময় স্বস্তিকর নয়।
তুরস্ক ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির শূন্যতা পূরণের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইরানের প্রভাব কিছুটা ক্ষয়ের দিকে, তখন সেই জায়গা দখলে তুরস্ক দ্রুতলয়ে এগিয়ে আসছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের প্রভাব যখন কমে গেছে, তুরস্ক তা ব্যবহার করে পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অভিলাষ জাহির করছে। এটি শুধুই প্রতিরক্ষা নয়; সমগ্র অঞ্চলই নিজ প্রভাববলয়ে আনার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান তুরস্ক নতুন করে কোনো অটোমান বা ওসমানি সালতানাত গড়ছে না, কিন্তু প্রভাব বিস্তার করছে। দেশটি পুরো ব্যবস্থাকে ভাঙছে না, কিন্তু নিয়ম বদলাচ্ছে। এই নিয়ন্ত্রিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সক্ষমতাই তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে তুরস্কের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো, এটিকে নস্টালজিক ‘নব্য ওসমানি খেলাফত’ বলে উড়িয়ে দেওয়া। বাস্তবে তুরস্ক আজ যে রাজনীতি করছে, তা আবেগের নয়, সুচিন্তিত হিসাবের। তুরস্কের এই রাজনীতি সাম্রাজ্য ফেরানোর চেষ্টা নয়, বরং শক্তির শূন্যতা কাজে লাগিয়ে প্রভাব বাড়ানোর একধরনের নিয়ন্ত্রিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা কমে আসা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত দ্বিধা এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাসের ভেতর তুরস্ক নিজেকে এমন এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে তাকে পুরোপুরি গ্রহণ করাও কঠিন, আবার উপেক্ষা করাও অসম্ভব। গাজা থেকে লিবিয়া, কাতার থেকে সুদান—সর্বত্রই এখন তুরস্কের প্রভাব রয়েছে।
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা সরাসরি সামরিক নয়, কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লোহিতসাগর অঞ্চলে সুদানের অবস্থান তুরস্ককে দীর্ঘদিন আকর্ষণ করে আসছে। সাওয়াকিন দ্বীপ পুনর্গঠনের আগ্রহ, মানবিক সহায়তা এবং অবকাঠামো সহযোগিতার মাধ্যমে আঙ্কারা সেখানে একটি উপস্থিতি তৈরি করেছে। কেবল তা-ই নয়, সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধেও তুরস্ক সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে আঙ্কারা বিদ্যমান সরকার ও সেনাবাহিনীর—যা সুদান আর্মড ফোর্সেস বা এসএএফ নামে পরিচিত—পক্ষ নিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসএএফ এখন তুরস্ক ও মিসরের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে।
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছেন। তবে এটি সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য অস্বস্তিকর। কারণ, তারা সুদানকে নিজেদের নিরাপত্তাবলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। তুরস্ক এখানে সংঘাতে না গিয়ে ভবিষ্যতের বিকল্প তৈরি করছে, যা দেশটিকে সরাসরি হুমকি নয়, কিন্তু সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
গাজা ইস্যুতে তুরস্কের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হলেও সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত। আঙ্কারা ফিলিস্তিন প্রশ্নে উচ্চকিত অবস্থান নিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের কঠোর সমালোচনা করেছে এবং মানবিক সহায়তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। এতে আরব জনমতের বড় অংশে তুরস্ক নৈতিকভাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাস্তবে তুরস্ক গাজায় সামরিকভাবে জড়ায়নি এবং জড়াতে চায়ও না। কারণ, সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা মানে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার সংঘাত, যা তুরস্কের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কিন্তু গাজায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে যুদ্ধবিরতি অর্জিত হয়েছে, তাতে তুরস্কের সক্রিয় ভূমিকা আছে। ফলে গাজা তুরস্কের জন্য নৈতিক পুঁজি সংগ্রহের ক্ষেত্র, সামরিক আধিপত্য বিস্তারের নয়। এই অবস্থান মিসর ও জর্ডানের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ তারা গাজা ইস্যুতে ঐতিহাসিক মধ্যস্থতার ভূমিকা হারানোর ঝুঁকি অনুভব করে। এই অবস্থায় গাজায় তুরস্কের ভূমিকা শুধু ত্রাণ নয়, এটি তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্গঠনে একটি কেন্দ্রীয় কূটনৈতিক ভূমিকায় বসাবে। এতে এই অঞ্চলে তুরস্কের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াবে।
লিবিয়ায় তুরস্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন আচরণ করেছে। এখানে আঙ্কারা প্রমাণ করেছে যে, দেশটি কেবল কথায় সীমাবদ্ধ নয়, বাস্তব সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত। ২০১৯-২০ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারকে তুরস্কের ড্রোন, সামরিক উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণ সহায়তা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোন ব্যবহার করে মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত হাফতার বাহিনীর অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয় তুরস্ক। এটি শুধু লিবিয়ার যুদ্ধের ফলাফল বদলায়নি, বরং পুরো আরব বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে তুরস্ক চাইলে আঞ্চলিক সংঘাতে নির্ধারক ভূমিকা নিতে পারে। এই কারণেই লিবিয়ায় তুরস্ক অনেক আরব শাসকের চোখে সরাসরি হুমকি।
মিসরের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ছিল তীব্র বৈরিতায় ভরা। মুসলিম ব্রাদারহুড প্রশ্ন, লিবিয়ার যুদ্ধ এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরের গ্যাসকেন্দ্রিক রাজনীতি এই দ্বন্দ্বকে গভীর করে তোলে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগিয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, নিরাপত্তা সংলাপ এবং যৌথ নৌ-মহড়ার আলোচনা দেখায় যে উভয় পক্ষই বুঝেছে—স্থায়ী বৈরিতা উভয়ের কৌশলগত স্বার্থের বিরুদ্ধে। এটি কোনো আদর্শগত সমঝোতা নয়, বরং শীতল বাস্তববাদ। মিসর তুরস্ককে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না, তুরস্কও মিসরকে বন্ধু মনে করে না, কিন্তু উভয়ই জানে সংঘাতের ব্যয় অনেক বেশি।
ইরানের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক আরও জটিল। একদিকে পশ্চিমা চাপ মোকাবিলায় বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সমন্বয়, অন্যদিকে সিরিয়া, ইরাক ও ককেশাসে প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইরান তুরস্ককে সুন্নি প্রভাব বিস্তারের একটি সম্ভাব্য বাহক হিসেবে দেখে, যা শিয়া-বলয়ের জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবু দুই দেশই সরাসরি সংঘাতে যায় না, কারণ সংঘাত মানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বহিরাগত শক্তির জন্য সুযোগ তৈরি করা। এই কারণে ইরান-তুরস্ক সম্পর্ক সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে সাম্প্রতিক সময়ে।
তবে তুরস্কের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে সিরিয়ায় দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটিয়ে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারাকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করার মাধ্যমে। ২০১৭ সাল থেকেই তুরস্ক আল-শারার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তারপর ক্রমান্বয়ে আল-শারার বাহিনীকে সামরিক ও কৌশলগত সহায়তা দিয়ে সিরিয়ার মসনদ পর্যন্ত তাদের পৌঁছে দেয় আঙ্কারা। তুরস্ক মূলত দুটি কারণে আল-শারার বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছে। এক. সিরিয়ায় নিজের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করা এবং দুই. দেশটি থেকে বিশেষ করে আল-শারার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইদলিব থেকে যেন শরণার্থীর ঢেউ নিজ ভূখণ্ডে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করা। তুরস্ক কেবল আল-শারা এবং তাঁর বাহিনীকে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতেই সহায়তা করেনি, পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার যোগাযোগেরও মাধ্যম ছিল তারা।
আরব দুনিয়াজুড়ে এই ভূমিকাগুলোকে একসূত্রে বাঁধে তুরস্কের সামরিক শিল্প। গত এক দশকে তুরস্ক প্রতিরক্ষা খাতে যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে, সেটিই তার ভূরাজনৈতিক সক্রিয়তার ভিত্তি। কাতার, মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া এমনকি কিছু উপসাগরীয় দেশ তুরস্কের ড্রোন ও সাঁজোয়া যান কিনেছে বা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। এর কারণ কেবল দাম নয়, পশ্চিমা অস্ত্র কেনার সঙ্গে রাজনৈতিক শর্ত, মানবাধিকার প্রশ্ন ও দীর্ঘ ডেলিভারি সময় জড়িত থাকে। তুরস্ক এই জায়গায় নিজেকে একটি বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে, যেখানে প্রযুক্তি যথেষ্ট আধুনিক, দাম তুলনামূলক কম এবং রাজনৈতিক শর্ত সীমিত। এতে আরব রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুরস্ক শুধু অস্ত্র সরবরাহকারী নয়, বরং কৌশলগত বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই সামরিক শিল্পের প্রভাব আরব বিশ্বে দ্বিমুখী। একদিকে কিছু রাষ্ট্র তুরস্ককে অংশীদার হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। কাতারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। কাতারে তুর্কি সামরিক ঘাঁটি, যৌথ মহড়া এবং অস্ত্র সরবরাহ একটি গভীর নিরাপত্তা অংশীদারত্ব তৈরি করেছে। অন্যদিকে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো তুরস্কের সামরিক শিল্পকে একটি সুপ্ত হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ, এই শিল্প তুরস্ককে কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যের শক্তি দেয় না, বরং প্রয়োজনে সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও দেয়, যেমনটি লিবিয়ায় দেখা গেছে।
আরব বিশ্বে তুরস্কের সামরিক শিল্পের আরেকটি প্রভাব হলো আত্মবিশ্বাসের রাজনীতি। বহু দশক ধরে আরব রাষ্ট্রগুলো সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তুরস্কের উত্থান দেখিয়েছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশও পরিকল্পিত বিনিয়োগ, রাষ্ট্রীয় সমর্থন এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বমানের সামরিক প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে। এটি আরব সমাজের ভেতরে একধরনের অনুপ্রেরণা তৈরি করেছে, যদিও শাসকগোষ্ঠীর কাছে তা সব সময় স্বস্তিকর নয়।
তুরস্ক ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির শূন্যতা পূরণের একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইরানের প্রভাব কিছুটা ক্ষয়ের দিকে, তখন সেই জায়গা দখলে তুরস্ক দ্রুতলয়ে এগিয়ে আসছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের প্রভাব যখন কমে গেছে, তুরস্ক তা ব্যবহার করে পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অভিলাষ জাহির করছে। এটি শুধুই প্রতিরক্ষা নয়; সমগ্র অঞ্চলই নিজ প্রভাববলয়ে আনার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান তুরস্ক নতুন করে কোনো অটোমান বা ওসমানি সালতানাত গড়ছে না, কিন্তু প্রভাব বিস্তার করছে। দেশটি পুরো ব্যবস্থাকে ভাঙছে না, কিন্তু নিয়ম বদলাচ্ছে। এই নিয়ন্ত্রিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সক্ষমতাই তুরস্ককে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছিলেন কেবল সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের সেসব বক্তব্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি, নির্বাচনের নামে বারবার তামাশা...
২৪ মার্চ ২০২৫
দেখতে দেখতেই যেন বছরটা শেষ হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের হতাশা-প্রত্যাশার হিসাব কষতে কষতে বড়দিন কড়া নেড়ে দিল দরজায়। সব হতাশা ভুলে প্রত্যাশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিতে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগমন হয়, ভালোবাসা ও একতার বাণী ছড়িয়ে।
১২ ঘণ্টা আগে
গণমাধ্যমকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে চোখ রাখলে সমাজ তার অন্ধকার দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারে, ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ পায়। এ কারণেই যুগে যুগে সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া ব্যক্তিরা গণমাধ্যমকে ‘শত্রু’ মনে করে এসেছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তি দিয়ে তারা সমাজের এই দর্পণের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে।
১২ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধের ধারণা আমূল বদলে গেছে। রাষ্ট্রের সীমান্ত, সেনাবাহিনী কিংবা প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর একমাত্র ক্ষমতার মানদণ্ড নয়; বরং অদৃশ্য, নীরব ও প্রযুক্তিনির্ভর এক নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সাইবার স্পেস।
১২ ঘণ্টা আগে