ফজলুল কবির

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির পরিচয়ও ঘুচে গেল। পেছনে ততক্ষণে পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে গেছেন। নারী-পুরুষ সবাই এক লাইনে। তখনো জানি না, এমন লাইন আরও কপালে আছে। আর লাইনের শেষে অপেক্ষা করছে ‘ব্যাকরণ ক্লাস’।
মনে ঘাঁটি গাড়া ওই ‘কিন্তু কিন্তু’র কাছে হার মানতে হলো শেষে। সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে জায়গাটা দেখার কথা বলে সিঁড়ি ধরে প্রথমবারের মতো দোতলায় গিয়ে এক হুজ্জতের দেখা মিলল। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত কিছু লোক পুরো দেশ-জাতি উদ্ধারে ব্যস্ত। তাঁরা আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে আগ্রহী নন। জটলা পাকিয়ে ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যবস্থার’ গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। এর মধ্যেই সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বেশ চোটপাট করতে দেখা গেল একজন আনসার সদস্যকে। বেলা তখন ১২টা ৫০। লাইনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তেজনা। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শুরু হবে। আশঙ্কা সত্যি হলো। বিরতি শুরু হলো, কিন্তু শেষ হলো না। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লাইনে ‘নো নড়ন-চড়ন’।
এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে দুশ্চিন্তায় জেরবার হয়ে গেল। কারণ, প্রত্যেকেরই আবেদন ফরমে একটা নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ আছে, যা অনেক আগেই অতিক্রান্ত। আর যাঁদের সময় হয়েছে, তাঁরা পড়েছেন অনেক পেছনে। এক কথায় মোটা দাগে সবাই হতবিহ্বল। এর মধ্য আরেকটি অংশ পাওয়া গেল, যাঁরা টানা কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। নিজ দায়িত্বে তাঁরা বাকিদের এখানকার নিয়ম-রীতি বিষয়ে নসিহত করছেন।
আড়াইটায় লাইন সচল হওয়ার পর অবশ্য বেশ অল্প সময়েই ভেতরে ডাক পড়ল। সেখানে একজন কর্মকর্তা ফরম দেখছেন। প্রতি দফায় দুজন করে ভেতরে ডাক পাচ্ছেন। একজন দাঁড়িয়ে থাকছেন, অন্যজনের কাগজপত্র দেখে দিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। অনেকটা হেডমাস্টারের রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, সেভাবে। বেশ লাগল। ডাক পড়তেই এগিয়ে দিলাম ফরমসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। সেগুলো দেখে ওই কর্মকর্তা জানালেন, এনআইডি ও আগের পাসপোর্টে মায়ের নাম আলাদা আছে। ঠিক করতে হবে। আরেকটি কক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত ফরম নিয়ে তা পূরণ করে জমা দিতে বললেন। দ্রুত ছুটতে হলো। কিন্তু সহজ ছিল না। কারণ, ওই রুম থেকে বেরোতেই দু-তিনজন ছেঁকে ধরলেন। তাঁদের সরাসরি প্রস্তাব—এত টাকার বিনিময়ে সব ঠিক করে দেওয়া হবে। সঙ্গে অভয়—ভাববেন না। যদিও সভয়ে তখন মনে পড়ল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সম্প্রতি প্রকাশিত খানা জরিপে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের তালিকার শীর্ষ তিনে পাসপোর্ট দপ্তরের অবস্থানের কথা।
সেসব ডিঙিয়ে অন্য কক্ষ থেকে সংশোধনীর আবেদন ফরম নেওয়ার সময় তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিলাম, মায়ের নামের প্রমাণপত্র হিসেবে কী কী জমা দিতে হবে? সব জেনে বোঝা গেল, এর জন্য নিজের একাডেমিক সনদ ও মায়ের এনআইডি জমা দিলেই হবে। সেসব সঙ্গে নেই। কিন্তু এতেই হবে কি না, জানতে আবার আগের কক্ষে যেতে হলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারও সেই একই লাইন, যার লেজ কেন যেন সব সময় সিঁড়িতেই থাকে। যখন ওই কক্ষে প্রবেশের সৌভাগ্য হলো, তখন বিকেল পৌনে ৫টা। সেখানকার কর্মকর্তা তখন যাই যাই করছেন। এক ঝলক কাগজপত্র দেখে যা জানালেন, তাতে বোঝা গেল যে আগের জানা-বোঝায় কোনো গরমিল নেই।
পরদিন আবার যাত্রা। সুদূর কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্টের পাসপোর্ট অফিসে, যেখানে ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকদের পাসপোর্টের কাজ করা হয়। আবারও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হলো। দেখে-শুনে মনে হলো—এখানে লোকে শুধু লাইন দিতে ভোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন, যার সঙ্গে তাল মেলানো সহজ নয়। সে যাক। এবার সব কাগজ হাতে আছে। সংশ্লিষ্ট অন্য সবকিছু সঙ্গে নিয়ে এসেছি; ফলত কিছুটা নির্ভয় বলা যায়। এর মধ্যেই বেশ একটা হট্টগোল শুরু হলো। এক উত্তেজিত তরুণ বেশ ইংরেজিতে বকছে। তরুণটিকে চিনি। রাজধানীর যে এলাকায় থাকি, সেখানকারই অনুজ। ঠিক-ভুল ইংরেজিতে সে যা বলছে, তা হলো—সে একজন ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা (জানামতে তথ্যটি ভুল) হয়েও এমন হেনস্তার শিকার কেন হতে হবে? দায়িত্বরত আনসার সদস্যটিকে বেশ নরম হতে দেখা গেল। তিনি এবার স্বভাবের (অন্তত দুই দিনে যেমনটা দেখেছি তাঁকে) বাইরে গিয়ে ওই তরুণকে ম্যানেজ করতে ব্যস্ত। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেককেই তরুণের এই প্রশ্নকে খুবই যৌক্তিক বলে মেনে নিতে দেখা গেল। কিন্তু কেউ এই প্রশ্ন করলেন না যে, হয়রানি যদি সাধারণের বাস্তবতা হয়, তবে ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা কেন সেই বাস্তবতায় থাকবেন না? যাক, এই গ্যাঞ্জাম নিয়ে দু-একজন অবশ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উদাস। তরুণটির সঙ্গে চোখাচোখি হলো একবার। ছেলেটি লজ্জা পেল।
দীর্ঘ লাইন শেষে আবার সেই কর্মকর্তার কক্ষে ছাত্ররূপ দাঁড়িয়ে। তাঁর কপালে বিরক্তির ভাঁজ। লহমার বিরতিতে মনে হলো—তবে কি পোশাক বা চেহারায় কোনো গড়বড়? একটা আয়না থাকলে বেশ হতো। কিন্তু হায়, পাসপোর্ট অফিসে তো আর আয়না থাকে না।
সে যাক, আবার ওই কর্মকর্তা সব কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখলেন। দেখে বললেন—
-এমনিতে ঠিক আছে সব। তবে অ্যাফিডেভিট লাগবে।
-আমি তো সনদ দিলাম। সেখানে সব ঠিক আছে।
-যা বলছি করেন।
-এই নিয়ে তিনবার এলাম। প্রতিবার একটি করে অসংগতির কথা বলছেন। একবারে কেন বলেন না? আর যাদের প্রমাণ দেওয়ার মতো কাগজ নেই বা থাকলেও সেখানে একেকটিতে একেক রকম তথ্য, তাদের জন্য অ্যাফিডেভিট লাগতে পারে। আমার কেন লাগবে?
-ঠিক আছে। আপনি পাঁচতলায় পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যদি লিখে দেন, তাহলে লাগবে না।
বেশ বিরক্তি নিয়েই শেষ কথাগুলো বললেন ওই কর্মকর্তা। বের হতেই এবার অ্যাফিডেভিট করে দেওয়ার জন্য কয়েকজন সাহায্যের হাত বাড়াল। দু-একজন তাদের কার্ড গছিয়ে দিল হাতে। বুঝলাম, পাসপোর্ট অফিসের রাস্তায় ঢোকার মুখে যে ফটোকপি দোকানগুলো আছে, যারা পাসপোর্ট ফিসহ নানা কাজে গায়ে পড়ে সাহায্য করতে উদ্গ্রীব থাকে, তাদেরই প্রতিনিধি এরা। নিজের কিছু কাগজ ফটোকপি করানোর সময় তাদের বিস্তর সেবা-তালিকা নজরে পড়েছে। কিন্তু আমিও নাছোড়। কার্ড নিলাম, কিন্তু কথা দিলাম না।
এবার সেই পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, নাতিদীর্ঘ লাইন ডিঙিয়েই ঢুকতে হলো সেই কক্ষে। অবশ্য সেই কক্ষের ভেতরেও একটি বাচ্চা-লাইন আছে। বেলাইন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই একেবারে। কাচে ঘেরা বিরাট টেবিল নিয়ে পরিচালক বসে আছেন। কক্ষটি সুপরিসর। সোফায় বেশ কয়েকজন বসে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। বোঝা গেল, সোফায় উপবিষ্টরা পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়।
অবশেষে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ এল। ফরমটি দেখালাম। উদাসভাবে বললেন—
-অ্যাফিডেভিট কই?
-কেন লাগবে?
-লাগবে।
-তাহলে সংশোধনের আবেদন ফরমে তার উল্লেখ নেই কেন?
-বাংলা পড়তে পারেন না? পরিষ্কার লেখা আছে।
-ফরমে বলা আছে, সংশোধনের প্রমাণপত্র হিসেবে তালিকায় থাকা ছয়টি বিকল্পের যেকোনোটি দিলেই হবে। আমি দুটি দিয়েছি।
-সেখানে অ্যাফিডেভিটের কথাও বলা আছে।
-কিন্তু এটা যে অবশ্যই দিতে হবে—এমন বলা নেই। আমি তিনবার লাইনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়তলা থেকে জেনেছি, এটা লাগবে। এটা একবারে বলা যাবে না কেন?
-আপনি বাংলা কথা বোঝেন না? এটা লাগবে।
-কেন? যদি লাগেই, তবে কেন তা স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকবে না? নির্দেশনাটি কেন ঠিকভাবে লেখা হবে না?? এর জন্য হয়রানি হচ্ছে। অনেকেই এমন হয়রানির শিকার।
-আমরা হয়রানি করি না।
-কিন্তু আমি তো হয়রান বোধ করছি।
-আপনি হয়রানি হননি।
-আশ্চর্য! আমি হয়রান হয়েছি কি না, তাও আপনি ঠিক করে দেবেন?
-আমি বাংলায় লেটার পাওয়া ছাত্র। আপনার চেয়ে ভালো বাংলা জানি।
আচমকা এ কথায় একটু দমে যেতে হলো। বিরাট বিপদে পড়েছি বলে মনে হলো। পেছনে লোক জমে যাচ্ছে। সোফায় উপবিষ্ট পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়রা উসখুস করছেন। এসব দেখেও মুখ ফসকেই বেরিয়ে গেল—
-আপনি ভালো বাংলা জানেন—এই দাবি আপনি করতে পারেন। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কি না, সে দাবি আপনি করতে পারেন না। কারণ, আমি কতটা জানি, তা আপনি জানেন না।
-আমি বাংলায় লেটার পেয়েছি।
-সে আপনি পেতেই পারেন। কিন্তু আমি পেয়েছিলাম কি না, তা তো আপনি জানেন না। যখন জানেন না, তখন তুলনা কীভাবে করবেন?
-বলেন—এক পাল হাতি আকাশে উড়ে যাচ্ছে। এই বাক্যে ভুল কোথায়?
-যোগ্যতায়।
এবার মহামান্য সেই পরিচালক রীতিমতো অগ্নিশর্মা। তিনি ভুল বুঝে হয়তো ভেবে নিলেন—আমি তাঁর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু আদতে তাঁর বলা বাক্যটিতে ব্যাকরণ বিবেচনায় ‘যোগ্যতা’রই অভাব। এবার তাঁর বন্ধুস্থানীয়রা মঞ্চে হাজির হলেন। পাশের কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তা এলেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। এর মধ্যেই বলে ফেললাম, ‘আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’ আন্তরিক সেই পরিচালক বললেন, ‘বলুন।’
মনে ততক্ষণে যথেষ্ট ক্ষোভ জমা হয়েছে, যা বিক্ষোভে রূপান্তরের অপেক্ষায়। ফলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম—
-বিক্ষোভ শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে?
-কী?
-বিক্ষোভ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?
কিছুক্ষণ ভাবলেন পরিচালক মহোদয়। তারপর তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ‘গ্রিক থেকে।’ উত্তরে আমি শুধু নই, অনেকেই নড়ে উঠলেন বলে মনে হলো। আমার চোখ বিস্ফারিত। আবার প্রশ্ন—কী? তিনি অটল—গ্রিক থেকে। এমন উত্তরে আমার পায়ে যেন খিল পড়ে গেছে। নড়া যাচ্ছে না। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তবে ভুল বলেছেন! এমন নানা কিছু যখন ভাবছি, পাশের কক্ষ থেকে আসা অন্য কর্মকর্তাটি তখন আমাকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘স্যার, দেখি কী সমস্যা? আমি দেখে দিচ্ছি।’ আমার মুখে তখন কি একটু হাসির রেখা দেখা দিয়েছিল—সেটা অন্যরা বলতে পারবে। তবে তাদের অস্বস্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি।
ঘটনা এখানে শেষ নয়। এরপর পরিচালকের পাশের ঘরে বসা অন্য কর্মকর্তাটি আমাকে বললেন, ‘অ্যাফিডেভিট ছাড়া দিলেও হয়। তবে হেড অফিস ঝামেলা করতে পারে। আপনি অ্যাফিডেভিট ছাড়াই জমা দিন। ওরা চাইলে পরে আপনাকে অবশ্য এসে অ্যাফিডেভিট জমা দিতে হবে।’ বললাম, ‘আমি আজই জমা দেব।’
এরপর গন্তব্য জমাকক্ষের সামনে। সেখানে তখন বিস্তর লোক গোমড়া মুখে বসে ও দাঁড়িয়ে। একটা টেবিলে ফরম জমা হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে সিরিয়াল করে ভেতরে ডাক পড়ে। সুতরাং ওই টেবিলে জমা দিয়ে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ানো গেল। কিন্তু ডাক আর আসে না। সন্ধ্যা পেরিয়ে ছবি তোলার কক্ষে প্রবেশ। সেখানে পাঁচ-সাতজন লাইনে দাঁড়ানো। ছবি তোলার জন্য চারটি টেবিল দেখা গেল। যদিও লোক আছেন দুজন। দুজন মিলেই এত লোককে সামাল দিচ্ছেন। দিন বৃহস্পতিবার বলে তাঁদের মধ্যেও তাড়া দেখা গেল। অফিস আওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু লাইনে থাকা লোকেদের সবারটা শেষ করে তবেই তাঁরা যেতে পারবেন। আমার পালা এল—কাগজ দেখে বললেন—করেছেন কী? আপনাকে তো আরও টাকা জমা দিতে হবে। কেউ বলেনি?
-না।
-এখন তো ব্যাংক বন্ধ। পারবেন না। আহা, পুরা দিন দাঁড়াইলেন!
-এখন?
-আপনি রোববার আসেন। আপনার ফরম আমার কাছেই থাক। ওই দিন লাইন ধরবেন না। গেটে বলবেন, ভেতরে আপনার ফরম আছে।
তর্ক বা অন্য কিছুর আর প্রবৃত্তি হলো না। নিজেকে গাড়ল মনে হলো। বেরিয়ে আসছি, এ সময় ওই ব্যক্তি ডেকে আমিসহ আরও কয়েকজনকে বললেন, ‘আপনারা একসঙ্গে যাবেন। বের হয়ে একসঙ্গে গিয়ে সিএনজি বা অটোতে উঠবেন।’
-কেন?
-এলাকা ভালো না। ছিনতাই হয়। বাইরেই দাঁড়ানো থাকে। পুলিশও থাকে না। একলা থাকলে বিপদ হতে পারে। আমরাও রাতে যারা বের হই, একসাথে বের হই।
কারও মুখে আর কথা সরল না। তখন রাত পৌনে ৮টা। আমার সঙ্গে যাঁরা বের হলেন, তাঁরা একই পরিবারের। দুটি মেয়ে ও একটি ছেলেসন্তান নিয়ে মা-বাবা এসেছেন পাসপোর্ট করাতে। তাঁদের চোখে ভয়। আর আমি ভাবছি—এটুকুই বাকি ছিল কপালে। বেরিয়ে তাঁদের অটো ঠিক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আমার গন্তব্য আলাদা। মনে তখন গ্রিক দেশ থেকে আগত ‘বিক্ষোভ’ শব্দটি কেবলই নড়ছে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির পরিচয়ও ঘুচে গেল। পেছনে ততক্ষণে পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে গেছেন। নারী-পুরুষ সবাই এক লাইনে। তখনো জানি না, এমন লাইন আরও কপালে আছে। আর লাইনের শেষে অপেক্ষা করছে ‘ব্যাকরণ ক্লাস’।
মনে ঘাঁটি গাড়া ওই ‘কিন্তু কিন্তু’র কাছে হার মানতে হলো শেষে। সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে জায়গাটা দেখার কথা বলে সিঁড়ি ধরে প্রথমবারের মতো দোতলায় গিয়ে এক হুজ্জতের দেখা মিলল। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত কিছু লোক পুরো দেশ-জাতি উদ্ধারে ব্যস্ত। তাঁরা আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে আগ্রহী নন। জটলা পাকিয়ে ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যবস্থার’ গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। এর মধ্যেই সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বেশ চোটপাট করতে দেখা গেল একজন আনসার সদস্যকে। বেলা তখন ১২টা ৫০। লাইনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তেজনা। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শুরু হবে। আশঙ্কা সত্যি হলো। বিরতি শুরু হলো, কিন্তু শেষ হলো না। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লাইনে ‘নো নড়ন-চড়ন’।
এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে দুশ্চিন্তায় জেরবার হয়ে গেল। কারণ, প্রত্যেকেরই আবেদন ফরমে একটা নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ আছে, যা অনেক আগেই অতিক্রান্ত। আর যাঁদের সময় হয়েছে, তাঁরা পড়েছেন অনেক পেছনে। এক কথায় মোটা দাগে সবাই হতবিহ্বল। এর মধ্য আরেকটি অংশ পাওয়া গেল, যাঁরা টানা কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। নিজ দায়িত্বে তাঁরা বাকিদের এখানকার নিয়ম-রীতি বিষয়ে নসিহত করছেন।
আড়াইটায় লাইন সচল হওয়ার পর অবশ্য বেশ অল্প সময়েই ভেতরে ডাক পড়ল। সেখানে একজন কর্মকর্তা ফরম দেখছেন। প্রতি দফায় দুজন করে ভেতরে ডাক পাচ্ছেন। একজন দাঁড়িয়ে থাকছেন, অন্যজনের কাগজপত্র দেখে দিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। অনেকটা হেডমাস্টারের রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, সেভাবে। বেশ লাগল। ডাক পড়তেই এগিয়ে দিলাম ফরমসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। সেগুলো দেখে ওই কর্মকর্তা জানালেন, এনআইডি ও আগের পাসপোর্টে মায়ের নাম আলাদা আছে। ঠিক করতে হবে। আরেকটি কক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত ফরম নিয়ে তা পূরণ করে জমা দিতে বললেন। দ্রুত ছুটতে হলো। কিন্তু সহজ ছিল না। কারণ, ওই রুম থেকে বেরোতেই দু-তিনজন ছেঁকে ধরলেন। তাঁদের সরাসরি প্রস্তাব—এত টাকার বিনিময়ে সব ঠিক করে দেওয়া হবে। সঙ্গে অভয়—ভাববেন না। যদিও সভয়ে তখন মনে পড়ল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সম্প্রতি প্রকাশিত খানা জরিপে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের তালিকার শীর্ষ তিনে পাসপোর্ট দপ্তরের অবস্থানের কথা।
সেসব ডিঙিয়ে অন্য কক্ষ থেকে সংশোধনীর আবেদন ফরম নেওয়ার সময় তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিলাম, মায়ের নামের প্রমাণপত্র হিসেবে কী কী জমা দিতে হবে? সব জেনে বোঝা গেল, এর জন্য নিজের একাডেমিক সনদ ও মায়ের এনআইডি জমা দিলেই হবে। সেসব সঙ্গে নেই। কিন্তু এতেই হবে কি না, জানতে আবার আগের কক্ষে যেতে হলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারও সেই একই লাইন, যার লেজ কেন যেন সব সময় সিঁড়িতেই থাকে। যখন ওই কক্ষে প্রবেশের সৌভাগ্য হলো, তখন বিকেল পৌনে ৫টা। সেখানকার কর্মকর্তা তখন যাই যাই করছেন। এক ঝলক কাগজপত্র দেখে যা জানালেন, তাতে বোঝা গেল যে আগের জানা-বোঝায় কোনো গরমিল নেই।
পরদিন আবার যাত্রা। সুদূর কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্টের পাসপোর্ট অফিসে, যেখানে ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকদের পাসপোর্টের কাজ করা হয়। আবারও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হলো। দেখে-শুনে মনে হলো—এখানে লোকে শুধু লাইন দিতে ভোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন, যার সঙ্গে তাল মেলানো সহজ নয়। সে যাক। এবার সব কাগজ হাতে আছে। সংশ্লিষ্ট অন্য সবকিছু সঙ্গে নিয়ে এসেছি; ফলত কিছুটা নির্ভয় বলা যায়। এর মধ্যেই বেশ একটা হট্টগোল শুরু হলো। এক উত্তেজিত তরুণ বেশ ইংরেজিতে বকছে। তরুণটিকে চিনি। রাজধানীর যে এলাকায় থাকি, সেখানকারই অনুজ। ঠিক-ভুল ইংরেজিতে সে যা বলছে, তা হলো—সে একজন ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা (জানামতে তথ্যটি ভুল) হয়েও এমন হেনস্তার শিকার কেন হতে হবে? দায়িত্বরত আনসার সদস্যটিকে বেশ নরম হতে দেখা গেল। তিনি এবার স্বভাবের (অন্তত দুই দিনে যেমনটা দেখেছি তাঁকে) বাইরে গিয়ে ওই তরুণকে ম্যানেজ করতে ব্যস্ত। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেককেই তরুণের এই প্রশ্নকে খুবই যৌক্তিক বলে মেনে নিতে দেখা গেল। কিন্তু কেউ এই প্রশ্ন করলেন না যে, হয়রানি যদি সাধারণের বাস্তবতা হয়, তবে ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা কেন সেই বাস্তবতায় থাকবেন না? যাক, এই গ্যাঞ্জাম নিয়ে দু-একজন অবশ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উদাস। তরুণটির সঙ্গে চোখাচোখি হলো একবার। ছেলেটি লজ্জা পেল।
দীর্ঘ লাইন শেষে আবার সেই কর্মকর্তার কক্ষে ছাত্ররূপ দাঁড়িয়ে। তাঁর কপালে বিরক্তির ভাঁজ। লহমার বিরতিতে মনে হলো—তবে কি পোশাক বা চেহারায় কোনো গড়বড়? একটা আয়না থাকলে বেশ হতো। কিন্তু হায়, পাসপোর্ট অফিসে তো আর আয়না থাকে না।
সে যাক, আবার ওই কর্মকর্তা সব কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখলেন। দেখে বললেন—
-এমনিতে ঠিক আছে সব। তবে অ্যাফিডেভিট লাগবে।
-আমি তো সনদ দিলাম। সেখানে সব ঠিক আছে।
-যা বলছি করেন।
-এই নিয়ে তিনবার এলাম। প্রতিবার একটি করে অসংগতির কথা বলছেন। একবারে কেন বলেন না? আর যাদের প্রমাণ দেওয়ার মতো কাগজ নেই বা থাকলেও সেখানে একেকটিতে একেক রকম তথ্য, তাদের জন্য অ্যাফিডেভিট লাগতে পারে। আমার কেন লাগবে?
-ঠিক আছে। আপনি পাঁচতলায় পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যদি লিখে দেন, তাহলে লাগবে না।
বেশ বিরক্তি নিয়েই শেষ কথাগুলো বললেন ওই কর্মকর্তা। বের হতেই এবার অ্যাফিডেভিট করে দেওয়ার জন্য কয়েকজন সাহায্যের হাত বাড়াল। দু-একজন তাদের কার্ড গছিয়ে দিল হাতে। বুঝলাম, পাসপোর্ট অফিসের রাস্তায় ঢোকার মুখে যে ফটোকপি দোকানগুলো আছে, যারা পাসপোর্ট ফিসহ নানা কাজে গায়ে পড়ে সাহায্য করতে উদ্গ্রীব থাকে, তাদেরই প্রতিনিধি এরা। নিজের কিছু কাগজ ফটোকপি করানোর সময় তাদের বিস্তর সেবা-তালিকা নজরে পড়েছে। কিন্তু আমিও নাছোড়। কার্ড নিলাম, কিন্তু কথা দিলাম না।
এবার সেই পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, নাতিদীর্ঘ লাইন ডিঙিয়েই ঢুকতে হলো সেই কক্ষে। অবশ্য সেই কক্ষের ভেতরেও একটি বাচ্চা-লাইন আছে। বেলাইন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই একেবারে। কাচে ঘেরা বিরাট টেবিল নিয়ে পরিচালক বসে আছেন। কক্ষটি সুপরিসর। সোফায় বেশ কয়েকজন বসে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। বোঝা গেল, সোফায় উপবিষ্টরা পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়।
অবশেষে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ এল। ফরমটি দেখালাম। উদাসভাবে বললেন—
-অ্যাফিডেভিট কই?
-কেন লাগবে?
-লাগবে।
-তাহলে সংশোধনের আবেদন ফরমে তার উল্লেখ নেই কেন?
-বাংলা পড়তে পারেন না? পরিষ্কার লেখা আছে।
-ফরমে বলা আছে, সংশোধনের প্রমাণপত্র হিসেবে তালিকায় থাকা ছয়টি বিকল্পের যেকোনোটি দিলেই হবে। আমি দুটি দিয়েছি।
-সেখানে অ্যাফিডেভিটের কথাও বলা আছে।
-কিন্তু এটা যে অবশ্যই দিতে হবে—এমন বলা নেই। আমি তিনবার লাইনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়তলা থেকে জেনেছি, এটা লাগবে। এটা একবারে বলা যাবে না কেন?
-আপনি বাংলা কথা বোঝেন না? এটা লাগবে।
-কেন? যদি লাগেই, তবে কেন তা স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকবে না? নির্দেশনাটি কেন ঠিকভাবে লেখা হবে না?? এর জন্য হয়রানি হচ্ছে। অনেকেই এমন হয়রানির শিকার।
-আমরা হয়রানি করি না।
-কিন্তু আমি তো হয়রান বোধ করছি।
-আপনি হয়রানি হননি।
-আশ্চর্য! আমি হয়রান হয়েছি কি না, তাও আপনি ঠিক করে দেবেন?
-আমি বাংলায় লেটার পাওয়া ছাত্র। আপনার চেয়ে ভালো বাংলা জানি।
আচমকা এ কথায় একটু দমে যেতে হলো। বিরাট বিপদে পড়েছি বলে মনে হলো। পেছনে লোক জমে যাচ্ছে। সোফায় উপবিষ্ট পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়রা উসখুস করছেন। এসব দেখেও মুখ ফসকেই বেরিয়ে গেল—
-আপনি ভালো বাংলা জানেন—এই দাবি আপনি করতে পারেন। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কি না, সে দাবি আপনি করতে পারেন না। কারণ, আমি কতটা জানি, তা আপনি জানেন না।
-আমি বাংলায় লেটার পেয়েছি।
-সে আপনি পেতেই পারেন। কিন্তু আমি পেয়েছিলাম কি না, তা তো আপনি জানেন না। যখন জানেন না, তখন তুলনা কীভাবে করবেন?
-বলেন—এক পাল হাতি আকাশে উড়ে যাচ্ছে। এই বাক্যে ভুল কোথায়?
-যোগ্যতায়।
এবার মহামান্য সেই পরিচালক রীতিমতো অগ্নিশর্মা। তিনি ভুল বুঝে হয়তো ভেবে নিলেন—আমি তাঁর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু আদতে তাঁর বলা বাক্যটিতে ব্যাকরণ বিবেচনায় ‘যোগ্যতা’রই অভাব। এবার তাঁর বন্ধুস্থানীয়রা মঞ্চে হাজির হলেন। পাশের কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তা এলেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। এর মধ্যেই বলে ফেললাম, ‘আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’ আন্তরিক সেই পরিচালক বললেন, ‘বলুন।’
মনে ততক্ষণে যথেষ্ট ক্ষোভ জমা হয়েছে, যা বিক্ষোভে রূপান্তরের অপেক্ষায়। ফলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম—
-বিক্ষোভ শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে?
-কী?
-বিক্ষোভ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?
কিছুক্ষণ ভাবলেন পরিচালক মহোদয়। তারপর তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ‘গ্রিক থেকে।’ উত্তরে আমি শুধু নই, অনেকেই নড়ে উঠলেন বলে মনে হলো। আমার চোখ বিস্ফারিত। আবার প্রশ্ন—কী? তিনি অটল—গ্রিক থেকে। এমন উত্তরে আমার পায়ে যেন খিল পড়ে গেছে। নড়া যাচ্ছে না। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তবে ভুল বলেছেন! এমন নানা কিছু যখন ভাবছি, পাশের কক্ষ থেকে আসা অন্য কর্মকর্তাটি তখন আমাকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘স্যার, দেখি কী সমস্যা? আমি দেখে দিচ্ছি।’ আমার মুখে তখন কি একটু হাসির রেখা দেখা দিয়েছিল—সেটা অন্যরা বলতে পারবে। তবে তাদের অস্বস্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি।
ঘটনা এখানে শেষ নয়। এরপর পরিচালকের পাশের ঘরে বসা অন্য কর্মকর্তাটি আমাকে বললেন, ‘অ্যাফিডেভিট ছাড়া দিলেও হয়। তবে হেড অফিস ঝামেলা করতে পারে। আপনি অ্যাফিডেভিট ছাড়াই জমা দিন। ওরা চাইলে পরে আপনাকে অবশ্য এসে অ্যাফিডেভিট জমা দিতে হবে।’ বললাম, ‘আমি আজই জমা দেব।’
এরপর গন্তব্য জমাকক্ষের সামনে। সেখানে তখন বিস্তর লোক গোমড়া মুখে বসে ও দাঁড়িয়ে। একটা টেবিলে ফরম জমা হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে সিরিয়াল করে ভেতরে ডাক পড়ে। সুতরাং ওই টেবিলে জমা দিয়ে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ানো গেল। কিন্তু ডাক আর আসে না। সন্ধ্যা পেরিয়ে ছবি তোলার কক্ষে প্রবেশ। সেখানে পাঁচ-সাতজন লাইনে দাঁড়ানো। ছবি তোলার জন্য চারটি টেবিল দেখা গেল। যদিও লোক আছেন দুজন। দুজন মিলেই এত লোককে সামাল দিচ্ছেন। দিন বৃহস্পতিবার বলে তাঁদের মধ্যেও তাড়া দেখা গেল। অফিস আওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু লাইনে থাকা লোকেদের সবারটা শেষ করে তবেই তাঁরা যেতে পারবেন। আমার পালা এল—কাগজ দেখে বললেন—করেছেন কী? আপনাকে তো আরও টাকা জমা দিতে হবে। কেউ বলেনি?
-না।
-এখন তো ব্যাংক বন্ধ। পারবেন না। আহা, পুরা দিন দাঁড়াইলেন!
-এখন?
-আপনি রোববার আসেন। আপনার ফরম আমার কাছেই থাক। ওই দিন লাইন ধরবেন না। গেটে বলবেন, ভেতরে আপনার ফরম আছে।
তর্ক বা অন্য কিছুর আর প্রবৃত্তি হলো না। নিজেকে গাড়ল মনে হলো। বেরিয়ে আসছি, এ সময় ওই ব্যক্তি ডেকে আমিসহ আরও কয়েকজনকে বললেন, ‘আপনারা একসঙ্গে যাবেন। বের হয়ে একসঙ্গে গিয়ে সিএনজি বা অটোতে উঠবেন।’
-কেন?
-এলাকা ভালো না। ছিনতাই হয়। বাইরেই দাঁড়ানো থাকে। পুলিশও থাকে না। একলা থাকলে বিপদ হতে পারে। আমরাও রাতে যারা বের হই, একসাথে বের হই।
কারও মুখে আর কথা সরল না। তখন রাত পৌনে ৮টা। আমার সঙ্গে যাঁরা বের হলেন, তাঁরা একই পরিবারের। দুটি মেয়ে ও একটি ছেলেসন্তান নিয়ে মা-বাবা এসেছেন পাসপোর্ট করাতে। তাঁদের চোখে ভয়। আর আমি ভাবছি—এটুকুই বাকি ছিল কপালে। বেরিয়ে তাঁদের অটো ঠিক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আমার গন্তব্য আলাদা। মনে তখন গ্রিক দেশ থেকে আগত ‘বিক্ষোভ’ শব্দটি কেবলই নড়ছে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১২ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১২ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১২ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগে
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।
অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির
০১ অক্টোবর ২০২২
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১২ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১২ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেরুশো তাহের

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির
০১ অক্টোবর ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১২ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১২ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির
০১ অক্টোবর ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১২ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১২ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির
০১ অক্টোবর ২০২২
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
১২ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
১২ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
১২ ঘণ্টা আগে