Ajker Patrika

কোটাবিরোধী আন্দোলন: ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, দেশজুড়ে অবরোধ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯: ১০
কোটাবিরোধী আন্দোলন: ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, দেশজুড়ে অবরোধ আজ

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জোর আন্দোলন করে যাচ্ছেন দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে অঘোষিতভাবে কয়েক দিনের মতো গতকাল শনিবারও রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।

তাতেই সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ বেহাল। এতেও কাজ না হওয়ায় আজ রোববার তাঁরা ঘোষণা দিয়ে মহাসড়ক অবরোধে নামছেন। আর রাজধানীতে তাঁরা কর্মসূচি দিয়েছেন ‘বাংলা ব্লকড’। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে হরতাল কর্মসূচিরও হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এত আন্দোলনের পরও কোটার বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর এই আন্দোলনকে ‘ন্যায্য’ ও ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি।

অন্যদিকে, আন্দোলনে অংশ নিতে গতকালও শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর শাহবাগে গতকাল বিকেলে অবরোধ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কাল (আজ) বেলা তিনটা থেকে বাংলা ব্লকড কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, ঢাকা শহরের সায়েন্স ল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে সড়কে নেমে এসেছেন দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল সদরে নগর জলপাই এলাকায়দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষকেরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’

এর আগে গতকাল বেলা আড়াইটার পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন। অন্যদিকে মধুর ক্যানটিনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আন্দোলনে অংশ না নিতে এদিনও বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাস্টারদা সূর্য সেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সূর্য সেনসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, অমর একুশে হল, স্যার এ এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে যোগ দিতে বাধা দিয়েছেন।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে নয়, নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা মধুর ক্যানটিনে জড়ো হয়েছেন।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বিভিন্ন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, বকশীবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর, ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিকস কলেজ, নীলক্ষেত মোড় ঘুরে পুনরায় রাজু ভাস্কর্য হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শাহবাগে অবস্থান নেয়।

শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার আগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছিল। তবে তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়নি। শাহবাগ অবরোধের ফলে চারপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এক ঘণ্টা অবরোধ শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

আর বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা রায়সাহেব বাজার পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। আড়াই ঘণ্টা তাঁতীবাজার মোড় অবরোধের ফলে সদরঘাট, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। 

সারা দেশে মহাসড়ক অবরোধ
গত পাঁচ দিনের মতো গতকালও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শেষে পার্শ্ববর্তী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বিভিন্ন মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। কিছু সময়ের জন্য রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নগরজলপাই বাইপাস অবরোধ করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ ২৪ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় মহাসড়কে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

চট্টগ্রামে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নগরীর ২ নং গেট এলাকার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে তিনটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের রাস্তার দুই পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

উত্তরবঙ্গের মতো শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে সড়ক যোগাযোগ কিছু সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পড়েছিল দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জেলাতেও। বেলা ১১টার কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে বিকেল ৫টায় খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনার সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে পুরো খুলনা শহরের যান চলাচল কার্যত অচল হয়ে যায়। 

সরকার ও বিএনপির অবস্থান
আন্দোলনের এমন প্রেক্ষাপটে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। কোটার বিষয়ে সরকারের কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কাজই হচ্ছে অন্যদের ইস্যুর ওপর ভর করা। এখন শিক্ষকদের আন্দোলনের ওপর ভর করবে। আবার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো (কোটা) কোর্টের রায়ের ব্যাপার। আমরা তো কোথাও এই কোটা রাখিনি। আমাদের ব্যবস্থা ছিল কোটামুক্ত। আদালতে কারা মামলা করেছে? আদালতের রায়। সেখানে আমাদের কী বলার আছে? সরকারের কী দোষ?

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ‘ন্যায্য’ ও ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান অবৈধ, অনির্বাচিত, কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে, অর্থাৎ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো দমিয়ে রাখার ঘৃণ্য পুরোনো কৌশলেই ছাত্রসমাজের ন্যায্য আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’ 

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এই কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর ফলে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়।

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ফলে কোটা বহাল হয়ে যায়।

এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। কোটা বাতিলের দাবিতে আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা। ঈদুল আজহার আগে কয়েক দিন বিক্ষোভের পর দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ১ জুলাই থেকে জোর আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির খুনিদের আশ্রয় দেওয়া দুই ভারতীয়কে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ: ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার ঘটনায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে গেছে। ভারতে তাদের যারা আশ্রয় দিয়েছিল সেই দুজনকে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এবং অপারেশন) এস এন মো. নজরুল নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ফয়সাল করীম দাউদ ওরফে রাহুল ও তার সহযোগী আলমগীর শেখের সহযোগী ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন, চারজন সাক্ষী হয়েছেন।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, তদন্তে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে সেই মোতাবেক এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছে। আমাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পাচারে সহায়তার অভিযোগে সেখানকার দুজনকে আটক করেছে।’

মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।

এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাদির হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পিত। ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে সিএনজিতে (অটোরিকশা) করে আমিনবাজারে যান। সেখান থেকে গাড়িতে করে কালামপুড়ে যান। কালামপুর থেকে আরেকটি গাড়িতে করে ময়মনসিংহ সীমান্তে যান। সেখানে ফয়সাল ও আলমগীরকে গ্রহণ করে ফিলিপ স্নাল ও সঞ্জয়। তারা সীমান্তে অবৈধভাবে মানুষ পারাপার করেন। পরে ফিলিপ দুজনকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে নিয়ে যান।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ফিলিপ ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতের তুরা নামক স্থানে নিয়ে যান। সেখানে ভারতীয় নাগরিক পুর্তি কাছে দুজনকে পৌঁছে দেন। পরে সামী নামের এক ব্যক্তির গাড়িতে করে সেখান থেকে পালিয়ে যান তারা।

একই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট (২০২৪) যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারাই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী ভারতে পালিয়েছেন—জানাল ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৫
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল গভীর ও পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ (ওরফে রাহুল দাউদ) এবং তাঁর এক সহযোগী ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আজ রোববার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর এক সহযোগী ময়মনসিংহের দুর্গম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। পুলিশি নজরদারি এড়াতে তাঁরা স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তা নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, এটি ছিল সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো একটি পরিকল্পনা। ডিএমপি এ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, যেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভ এবং পরিকল্পনার খুঁটিনাটি প্রকাশ করেছে।’ ডিএমপি আশা করছে, আগামী ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এই মামলার একটি পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর হামলার শিকার হন ওসমান হাদি। ওই দিন বেলা আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর এক সহযোগী চলন্ত অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।

গুলিবিদ্ধ হাদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং পরে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। প্রাথমিক এজাহারে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও হাদির মৃত্যুর পর ২০ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদের নির্দেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৪
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আজ রোববার বঙ্গভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

শপথ অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, অন্যান্য উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইনসচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজকোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত