Ajker Patrika

ব্যাংককে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন ইউনূস-মোদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ২৯
ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: প্রেস উইং
ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শুক্রবার থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বৈঠক করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই সরকারপ্রধান পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংলাপের জন্য উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। তাঁদের ৪০ মিনিটের আলোচনা খোলামেলা, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক ছিল।

বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব আন্তসম্পর্কিত ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক আত্মীয়তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭১ সালে আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অবিচল সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’

যদিও এই দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে এটি ছিল প্রথম সরাসরি বৈঠক, অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, গত আট মাসে দুই দেশ অসংখ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় জড়িত ছিল।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আমাদের উভয় জনগণের স্বার্থে সম্পর্ককে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’

বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণকারী অধ্যাপক ইউনূস এই গোষ্ঠীর সাত সদস্যের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চেয়েছেন।

তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নয়াদিল্লি সব সময় ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ দিয়েছে। তিনি বলেন, দুই প্রতিবেশীর ইতিহাস জটিলভাবে জড়িত এবং এটি বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের বৈশ্বিক মর্যাদার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভারত সব সময় একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশকে সমর্থন করবে।

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে না। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে জনগণের।’

শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সাড়া মেলেনি। এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস জানতে চান।

তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমে উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন এবং বাংলাদেশে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন, যা ভারত তাঁর প্রতি যে আতিথেয়তা দেখিয়েছে, তার অপব্যবহার বলে মনে হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করছি, ভারত সরকার যেন সেখানে থাকাকালীন শেখ হাসিনা যাতে এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

অধ্যাপক ইউনূস ওএইচসিএইচআরের ফ্যাক্টফাইন্ডিং রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেন। ওই প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীরা যে গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন করেছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে।

ড. ইউনূস বলেন, ওএইচসিএইচআরের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, আন্দোলনের সময় ১ হাজার ৪০০টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যুক্তিসংগত কারণ পাওয়া গেছে যে বিক্ষোভের সময় নির্বিচার হত্যা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বিশেষভাবে তাঁদের ‘হোতাদের গ্রেপ্তার, হত্যা এবং তাদের লাশ লুকিয়ে রাখার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক একটি দেশের সঙ্গে, কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নয়।

অধ্যাপক ইউনূস সীমান্ত হত্যার বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, প্রাণহানি কমাতে একসঙ্গে কাজ করলে তা কেবল অনেক পরিবারের চরম কষ্ট লাঘব করবে না, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটলে আমি সব সময় কষ্ট পাই।’ এই ঘটনাগুলো প্রতিরোধ করার ‘উপায় ও মাধ্যম’ খুঁজে বের করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্ত সেনারা শুধু আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

দুই নেতা এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের দায়িত্ব সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় এবং আশা করে, সংস্থাটি এই অঞ্চলের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত সত্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে, যা তাদের বিশ্বজুড়ে পণ্য রপ্তানি ও আমদানির জন্য একটি দক্ষ পথ দেবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবরগুলো ব্যাপকভাবে অতিরঞ্জিত এবং ‘এগুলোর অধিকাংশই ছিল ভুয়া খবর’। তিনি নরেন্দ্র মোদিকে কথিত হামলা ঘটনাগুলোর তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা তৈরি করেছেন এবং তাঁর সরকার এ ধরনের ঘটনার যেকোনো সংঘটন বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

দুই নেতা একে অপরের সুস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত মঙ্গল কামনা করেন এবং উভয় দেশের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভকামনা জানিয়ে তাঁদের সংলাপ শেষ করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে যেতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৭
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে তিনি ‘লজ্জিত’ বলে জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই কথা বলেন।

শফিকুল আলমের ইংরেজিতে শেয়ার করা পোস্টের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘গত রাতে, ডেইলি স্টার আর প্রথম আলোর সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে যখন সাহায্যের আকুল আবেদন জানানো ফোন পাচ্ছিলাম, তখন তাঁদের গলা কান্নায় বুজে আসছিল। বন্ধুরা আমার, আপনাদের কাছে আমি বড় অপরাধী; আমি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না।’

তিনি বলেন, ‘যাঁদের জানানো প্রয়োজন, তাঁদের সবাইকে বারবার ফোন করেছি যাতে দ্রুত সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু কোনো সাহায্যই শেষ পর্যন্ত সময়মতো এসে পৌঁছাল না। ভোর পাঁচটায় যখন ঘুমাতে গেলাম, তখন শুধু এটুকুই জেনেছি যে—ডেইলি স্টারের (ভবনের) ভেতরে আটকে পড়া সব সাংবাদিক উদ্ধার পেয়েছেন, তাঁরা নিরাপদ। তবে ততক্ষণে এই দুই পত্রিকা অফিস দেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে অন্যতম এক বর্বরোচিত হামলা আর অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

প্রেস সচিব লিখেন, ‘কী বলে যে আপনাদের সান্ত্বনা দেব, আমার জানা নেই। একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি—আমি লজ্জিত। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, যদি বড় একটা কবর খুঁড়ে নিজেকে লজ্জায় সেখানে পুতে যেতে পারতাম!’

এর আগে, গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ভবন দুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই অবস্থায় দেশের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি আজ সর্বমহলের। নির্মম হামলায় তরুণ রাজনীতিবিদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকে দেশে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর মব তৈরি করে হেনস্তা করার ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে। একই সঙ্গে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির ধ্বংসাবশেষে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, রাজশাহী ও খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের নামে জমায়েত এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় উপহাইকমিশনের সামনে রাতের বেলা অবস্থান—সব মিলিয়ে একটি সুপরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই ধারাবাহিকতায় একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।

আসক মনে করে, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর এ ধরনের সমন্বিত হামলা দেশে উগ্র ও সহিংস চিন্তার বিপজ্জনক বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। ছায়ানট দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত; সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রমাণ করে যে, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতার একটি অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কেন সময়মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

আসক আরও মনে করে, সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যে সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, তা দুঃখজনক।

আসক অবিলম্বে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠ‍ু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তসহ মব সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং জুলাই আন্দোলনের তরুণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় এই ধারাবাহিক সহিংসতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিসর এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী সংকট হিসেবে থেকে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির জানাজা আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৯
শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল জোহর নামাজের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ফ্লাইটটির আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। আর তাঁর জানাজা হবে আগামীকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর সংসদ ভবন এলাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজা হবে। এর আগে ওসমান হাদির গড়া প্রতিষ্ঠান ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, আগামীকাল জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ওসমান হাদির জানাজা হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে (ঢাকার সময় বেলা ২টা ৩ মিনিটে) ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ উড্ডয়ন করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিমানটি সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।

বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, মরদেহটি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে গভীর শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।

আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান গ্রহণ করব। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে শোকাহত ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩২
হাদির মৃত্যুতে শোকাহত ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ঢাকার ইউরোপীয় ইউনিয়ন দূতাবাস। আজ শুক্রবার দূতাবাস তাদের নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা এক পোস্টে এই শোক প্রকাশ করে।

পোস্টে বলা হয়, ‘শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং শোকসন্তপ্ত সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক সমবেদনা।’

এদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছে। ফ্লাইটটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩ মিনিটে (ঢাকার সময় বেলা ২টা ৩ মিনিটে) ফ্লাইট বিজি ৫৮৫ উড্ডয়ন করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিমানটি সন্ধ্যা আনুমানিক ৫টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।

বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, মরদেহটি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ ইনকিলাব মঞ্চের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে গভীর শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান গ্রহণ করব। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।’

ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, আগামীকাল শনিবার জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ওসমান হাদির জানাজা হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত