Ajker Patrika

দখিনা দুয়ার খুলছে আজ

রাশেদ নিজাম, ঢাকা
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১০: ৩৫
দখিনা দুয়ার খুলছে আজ

সেদিনও ছিল শনিবার, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। যেদিন পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসেছিল। আজ ২৫ জুন ২০২২, কাকতালীয় হলেও আবার সেই শনিবার। এ যাত্রার শুরুতে বোধ হয় শনিই ভর করেছিল। কিন্তু প্রমত্তা নদীর পানি যেভাবে সব নুড়িপাথর নিচে ফেলে এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে, সেভাবেই কেটে গেছে শনির দশা, পদ্মাকে রুখতে চাওয়ার ষড়যন্ত্রও। পদ্মার-এ প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত এখন ছোঁয়া যাবে হাওয়ার বেগে, তা-ও সড়ক, রেল একই সঙ্গে।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসানোর আগে প্রতিটি স্প্যানের ভাঁজে ভাঁজে জমা পড়েছিল হাজারো গল্প। কত মা সন্তানকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে পারেননি, বাবার মরদেহটা

দেখা হয়নি শেষবারের মতো, নবজাতক সন্তানের মুখটা দেখতে নদী পার হওয়ার অপেক্ষা। বোনের বিয়ে, চাকরির পরীক্ষা মিস করা। বছরের পর বছর সেই মন খারাপের গল্পগুলো নতুন করে লিখবে একটি সেতু, যার নাম পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের সেই স্বপ্নের সেতুর শুভ উদ্বোধন আজ।

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ, অর্থায়ন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সরে যাওয়া, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ, বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা—সবই এখন ইতিহাস। পদ্মায় হচ্ছে না সেতু, সেই সমালোচকদের জবাব দিচ্ছে খোদ স্থাপনাই। এ খবর যখন পাঠকের হাতে যাবে, ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করে ফেলেছেন। তবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের গর্বের পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে কাল থেকে।

 ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই আজ সকাল ১০টায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের পর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন পদ্মা সেতুর। এরপর জাজিরা প্রান্তে হবে জনসভা। জমকালো এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে আয়োজন করা হয়েছে সুধী সমাবেশের। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ৩ হাজার ৫০০ জনের মতো অতিথিকে দাওয়াত দিয়েছে সেতু বিভাগ। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কর্মকর্তারা থাকবেন। বিদেশি রাষ্ট্রদূত, সরকারি আমলা, রাজনৈতিক নেতারা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ নানা উন্নয়ন-সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া থাকছেন সেতুর কাজে যুক্ত থাকা বিদেশি এবং দেশের বড় বড় প্রকৌশলী। সেতু বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) মো. রুপম আনোয়ার বললেন, গর্বের দিনে এই অতিথিরা উপস্থিত থেকে সাক্ষী হবেন নতুন ইতিহাসের।

স্বপ্ন দেখা শুরু
১৯৯৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বুনেছিলেন এই স্বপ্নের বীজ। তবে শুরুতে এ যাত্রা ছিল বন্ধুর। বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের ৩০ জুন পদ্মা সেতুর ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তি বাতিল করে। তাদের দেখাদেখি নিজেদের সরিয়ে নেয় জাইকা, এডিবি ও আইডিবি। ঋণদাতাদের চাপ, দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনার মুখে সরিয়ে দেওয়া হয় ওই সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের দিকেও অভিযোগের আঙুল ওঠে। প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের নাম কাটা পড়ে। ওই সময়ের সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌসকে যেতে হয় কারাগারে। মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরাও আসে তদন্তে। এরপর ২০১২ সালের জুলাইতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করবে বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে—পারবে তো বাংলাদেশ?

২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর শুরু হলো পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। পদ্মা সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল এর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতুর কাজ শুরুর পর দেখা গেল, নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে, তা পিলার গেঁথে রাখার উপযোগী নয়। এ অবস্থায় দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, পাইল নিয়ে যেতে হবে আরও গভীরে। কত গভীরে? ১৩০ মিটার। বাকি থাকে দ্বিতীয় বিকল্প। আর তা হলো—গভীরতা কমিয়ে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া। গোটা বিশ্বে এই পদ্ধতি প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।

পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে ১২০ থেকে ১২২ মিটার গভীরে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি। এর মধ্যে সর্বোচ্চটি ১৫০ দশমিক ১২ মিটার বা ৪৯২ দশমিক ৫ ফুট। অর্থাৎ, সেতুটি নির্মাণের জন্য এমনকি প্রায় ৫০ তলা ভবনের উচ্চতার সমান দৈর্ঘ্যের পিলার স্থাপন করতে হয়েছে।

আরেকটি রেকর্ড হলো এতে ব্যবহৃত বেয়ারিং। পদ্মা সেতু নির্মাণে পিলার ও স্প্যানের মাঝে প্রতিটি ১০০ টন ওজনের ৯৬টি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে এর আগে এত বড় বিয়ারিং আর কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। এখন রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে সেতুটি।

নদীশাসনের কাজেও হয়েছে রেকর্ড। এই সেতু নির্মাণে ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এই নদীশাসনের কাজটি করেছে চায়না সিনোহাইড্রো করপোরেশন। কোনো সেতু নির্মাণে নদীশাসনের জন্য এখন পর্যন্ত এত বড় চুক্তি আর কোথাও হয়নি।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত ক্রেনটিও রেকর্ড করেছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে, সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে এত দীর্ঘ সময় ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। ক্রেনটির বাজারদর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

মূল সেতুতে ৩০টি উপকরণের ব্যবহার বেশি হয়েছে। পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট লেগেছে আড়াই লাখ টনের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে তৈরি রড ব্যবহৃত হয়েছে ৯২ হাজার টনের বেশি। সেতুতে বালু লেগেছে সাড়ে তিন লাখ টন। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার জন্য সোয়া ৪ কোটি লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়েছে। বিটুমিন লেগেছে দুই হাজার টনের বেশি। দেশে তৈরি বিদ্যুতের কেব্‌ল ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ মিটার এবং পাইপ ১ লাখ ২০ হাজার মিটার। পদ্মা সেতুর পাইলিংয়ের ওপরের অংশে মাটিকে বেশি ওজন বহনে সক্ষম করতে একধরনের বিশেষ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়, যাকে মাইক্রোফাইন বা অতি মিহি সিমেন্ট বলা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে আনা ২ হাজার টন এই সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। কংক্রিটের পথের ওপর প্রথমে দুই মিলিমিটারের পানিনিরোধক একটি স্তর বসানো হয়েছে, যা ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন নামে পরিচিত। ৫৬০ টন পানিনিরোধক উপকরণ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। সেতুর পাশে রেলিংয়ের অ্যালুমিনিয়ামও এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে।

যেকোনো সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেই এতে চলাচলকারী যানবাহনের নিরাপত্তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোথাও ধাতব রেলিং দিয়েই কাজ সারা হয়। আবার কোথাও ব্যবহার করা হয় কংক্রিটের দেয়াল। বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে সাধারণত কংক্রিটের দেয়ালকেই বেছে নেওয়া হয়, যাকে প্রকৌশলের ভাষায় প্যারাপেট ওয়াল বলে। পদ্মা সেতুতে এই প্যারাপেট ওয়াল ব্যবহার করা হয়েছে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতুর দুই পাশে এমন দেয়াল রয়েছে মোট ১২ হাজার ৩৯০টি। সঙ্গে অবশ্য স্টিলের রেলিংও বসছে। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর পাশাপাশি সেতুর ভায়াডাক্টেও এই প্যারাপেট ওয়াল আছে। শুধু সেতুর সড়কপথেই নয়, নিচের রেললাইনের দুই পাশেও একই ধরনের প্যারাপেট ওয়াল বসানো হয়েছে।

শ্রমিক-প্রকৌশলীসহ প্রায় ১২ হাজার কর্মীর মেধা ও শ্রমে তৈরি হয়েছে পদ্মা সেতু। যদি দেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি ধরা হয়, তার অর্ধেকের উপকারে এলেও সাড়ে সাত শ মানুষের স্বপ্নপূরণের জন্য শ্রম দিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করা একেকজন মানুষ।

সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ শুরুর পর এক দিনের জন্যও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়নি। লোকবলের মধ্যে চীনের শ্রমিক-প্রকৌশলী ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন। এর বাইরে সবাই ছিলেন বাংলাদেশের।

পদ্মা সেতু রিখটার স্কেলে প্রায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। ধাক্কা সামলানোর শক্তি আছে চার হাজার ডেড ওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ক্ষমতার জাহাজেরও। এমনকি ৬২ মিটার মাটি সরে যাওয়া, আট মাত্রার ভূমিকম্প ও জাহাজের ধাক্কা—এই তিনটি একসঙ্গে ঘটলেও সেতুর কোনো সমস্যা হবে না। 

মাওয়ায় হবে পদ্মা সেতু জাদুঘর
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরতে এর মাওয়া প্রান্তে নির্মাণ করা হবে জাদুঘর, যার নাম হবে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’। এ জাদুঘরের জন্য এরই মধ্যে দুই হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বছর এই জাদুঘরের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

যোগাযোগের অপার সম্ভাবনা 
পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, এই স্থাপনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে তিন গুণ অর্থ যোগ হবে বলে হিসাব দেখিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। ২১ জুন জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব শীর্ষক অর্থনীতিবিদদের সংলাপে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এই সেতুর ফলে আমাদের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে।’

দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন আলো নিয়ে এসেছে পদ্মা সেতু। সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়ন বেগবান হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার ৩ কোটি মানুষ সরাসরি উপকার পাবেন। দৈনিক এই সেতু দিয়ে পার হতে পারবে ৭৫ হাজার যানবাহন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্তত ২০টি দেশের মানুষ সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ১০টি দেশের বিপুল উপকরণ এবং প্রায় ৫০টি দেশের কিছু না কিছু উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব দেশের মানুষেরাও জানবেন বাংলাদেশের স্বপ্ন এবং বাস্তবতার গল্প। যে গল্পের নাম পদ্মা সেতু। 

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট

ব্যালট পেলেন পৌনে ২ লাখ প্রবাসী, সর্বোচ্চ নিবন্ধন সৌদি আরব থেকে

বাসস, ঢাকা  
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে ভোট দিতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৭২ হাজার ১২ জন ভোটার নিবন্ধন করেছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নিজ এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীরা নিবন্ধন করছেন।

ইতিমধ্যে প্রবাসীদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত পাঁচ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ জন প্রবাসী ভোটারের কাছে ব্যালট পাঠানো হয়েছে জানিয়েছেন ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি-এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান।

আজ বুধবার সকাল ১১টায় ইসির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ২১ হাজার ৮০০ জন এবং নারী ভোটার ৫০ হাজার ২১০ জন।

পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপ নিবন্ধনকারী প্রবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবের। দেশটি থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া কাতারে ৫৬ হাজার ১৪৪ জন, ওমানে ৪১ হাজার ৭৩৭ জন, মালয়েশিয়ায় ৩৯ হাজার ১০৫ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০ হাজার ১০০ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪ হাজার ৮৪৯ জন, কুয়েতে ২২ হাজার ১২৩ জন, যুক্তরাজ্যে ২০ হাজার ২০৯ জন ও সিঙ্গাপুরে ১৭ হাজার ৩৪৬ জন নিবন্ধন করেছেন।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো শুরু হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার কাতারে ২১ হাজার, ওমানে ৩ হাজার ৬০০, সৌদি আরবে ১০ হাজার ৫০০, কুয়েতে ১ হাজার, ইতালিতে ৫ হাজার, পর্তুগালে ১ হাজার ৫০০, ফ্রান্সে ১ হাজার এবং জার্মানিতে ১ হাজার ব্যালট পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া, গত সোমবার অস্ট্রেলিয়ায় ৬ হাজার ৭৭৯, মালয়েশিয়ায় ১৬ হাজার ৫৬৮, ওমানে ১৮ হাজার এবং কাতারে ১১ হাজার ব্যালট পাঠানো হয়। এরপর গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ায় ৮৯২, যুক্তরাজ্যে ৫৭৩ এবং মালয়েশিয়ায় ৬ হাজার ২৪৬ ব্যালট পাঠানো হয়।

গত শনিবার সন্ধ্যায় মোট সাতটি দেশে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার ৪৮০, চীনে ৬৮১, কুয়েতে ১ হাজার ৩১০, কাতারে ২ হাজার ৭৩৭, সৌদি আরবে ৭ হাজার ৩৪৩, জাপানে ৫ হাজার ৬০০ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭ হাজার ৬৮১টি ব্যালট পাঠানো হয়।

এছাড়া, গত রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ১১৬, যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার ৭১৮, কানাডায় ৯ হাজার ৪৪৩, ইতালিতে ৫ হাজার ৬৮৬, জার্মানিতে ২ হাজার ১২৬ এবং ফ্রান্সে ৩ হাজার ৩২১টি ব্যালট পাঠানো হয়।

আগামী ২১ জানুয়ারি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেবে ইসি। প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটাররা অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে প্রার্থীর তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যালট পেপারে প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক বা ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

সালীম আহমাদ খান জানান, প্রবাসীদের কেউ যদি (আগে থেকে প্রার্থীর বিষয় নিশ্চিত হয়ে) প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোট দেন সেক্ষেত্রে তাঁর ভোট বাতিল হবে না। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন প্রবাসীরা।

তিনি আরও জানান, প্রবাসীদের নিবন্ধনের শেষ সময় ২৫ ডিসেম্বর। এর পর আর সময় বাড়ানো হবে না।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী ভোটাররা যে দেশ থেকে ভোট দেবেন, অবশ্যই সে দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে।

অন্যদিকে, দেশে অবস্থানরত ভোটারদের মধ্যে ‘ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫০ জন।

জেলাভিত্তিক নিবন্ধনে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা, ৬৪ হাজার ১৩২ জন। ঢাকায় ৫৫ হাজার ৬৪০ জন, চট্টগ্রামে ৫৪ হাজার ৭৬৯ জন, নোয়াখালীতে ৩৬ হাজার ৫৯০ জন, সিলেটে ২৬ হাজার ৭৪৯ জন ও চাঁদপুরে ২৫ হাজার ৩১৮ জন নিবন্ধন করেছেন।

আসনভিত্তিক হিসেবে ফেনী-৩ আসনে ৯ হাজার ৬১১ জন নিবন্ধন করেছেন, যা সর্বোচ্চ। এছাড়া, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ৮ হাজার ৯৩০ জন, কুমিল্লা-১০ আসনে ৮ হাজার ৪৩৮ জন ও নোয়াখালী-১ আসনে ৮ হাজার ৩৮৪ জন ভোটার পোস্টাল ভোট দিতে নিবন্ধন করেছেন।

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ১৮ থেকে ২৫ ডিসেম্বর, আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর এবং নিজ ভোটার এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবীরা ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

ইসি জানায়, পোস্টাল ব্যালট পেতে হলে নিবন্ধনের সময় ভোটারের অবস্থানকালীন দেশের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিতে হবে। প্রয়োজনে কর্মস্থল বা পরিচিতজনের ঠিকানাও ব্যবহার করা যাবে। তবে ভুল ঠিকানা দিলে ব্যালট পাঠানো সম্ভব হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। ছবি: ফেসবুক
আতাউর রহমান বিক্রমপুরী। ছবি: ফেসবুক

আলোচিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিন মাসের আটকাদেশ দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে আজ বুধবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লা আল মামুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ রাখা হয়েছে।

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী, আসাদুল্লাহ বা আতাউর নামেও পরিচিত। তাঁর বাবার নাম হুমায়ুন সর্দার, মা রোকেয়া বেগম।

আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ী উপজেলার আমতলী গ্রামে। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ইস্তা গ্রামে অবস্থিত মারকাজুল হুনাফা আল মুসলিমিন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ)। এ ছাড়া হুনাফা ইসলামীক স্কুলেরও প্রিন্সিপাল।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২৪ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা এফআইআর (নং- ১৮ / ৭৭)-এর এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।

মাওলানা আতাউর রহমান বিক্রমপুরী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ সক্রিয়। রাজধানীতেও বিভিন্ন আন্দোলন বিক্ষোভের সময় তাঁকে সামনের সারিতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, আতাউর রহমান, আযাদী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং জাতীয় খতীব ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শানে সাহাবা পদে রয়েছেন।

গত অক্টোবরে গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলায় হিন্দু যুবক কর্তৃক মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। একই মাসে গাজীপুরের একটি মসজিদের ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহ মিয়াজীর কথিত ‘অপহরণ’ ঘটনা সারা দেশে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। দুটি ঘটনা নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎপর ছিলেন আতাউর রহমান। এ দুটি বিষয় নিয়ে সশরীরে থানা-পুলিশ করেন তিনি। যদিও মুহিবুল্লাহ মিয়াজীর ঘটনাটি পরে ‘অপহরণ’ নয় বলে জানায় পুলিশ।

সর্ব সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পর প্রতিবাদে ঢাকার শাহবাগে আয়োজিত বিক্ষোভের একটি অংশে আতাউর রহমান বিক্রমপুরীকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। যদিও অন্য বিক্ষোভকারীরা তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখায় তিনি মাঝপথে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে চলে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচন ও গণভোটের প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হলেন আলী রীয়াজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৯
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।

এতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট-সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ছিলেন আলী রীয়াজ। পরে তাঁকে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্যুৎ খাতে ৯৬ শতাংশ বিনিয়োগই জীবাশ্ম জ্বালানিতে: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫২
বিদ্যুৎ খাতে ৯৬ শতাংশ বিনিয়োগই জীবাশ্ম জ্বালানিতে: টিআইবি

দেশে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল বিনিয়োগ হলেও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর কার্যত থমকে আছে। ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হলেও এর ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে। বিপরীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুশাসনের ঘাটতি, নীতিগত দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে আজ বুধবার সকালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। এটি উপস্থাপন করেন নেওয়াজুল মওলা ও আশনা ইসলাম।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৮ হাজার ৬১৬ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ মাত্র ১ হাজার ৩১৪ দশমিক ৭ মেগাওয়াট; যা মোট সক্ষমতার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮-এ ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে তিন গুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং দ্বিগুণ জ্বালানি দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে দেশগুলো একমত হয়। এই অঙ্গীকার কপ-২৯ ও কপ-৩০ সম্মেলনেও বহাল রয়েছে।

টিআইবি বলছে, দেশে বর্তমানে মাত্র ১৭টি গ্রিড-সংযুক্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প রয়েছে, যার মোট সক্ষমতা ১ হাজার ২২১ দশমিক ৪ মেগাওয়াট। ভূমি স্বল্পতাকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রসারে ‘প্রধান বাধা’ হিসেবে দেখানো হলেও সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো একে ‘মিথ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত সৌরশক্তি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবর্তে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রবণতা বাড়ছে। অধিকাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পই আনসলিসিটেড, অর্থাৎ প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই আইপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে; যা সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

জ্বালানি খাত থেকে কার্বন নিঃসরণও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ছিল ৪১ মিলিয়ন টন, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৯ মিলিয়ন টনে। অর্থাৎ ১১৮ শতাংশ বৃদ্ধি। ২০৩০ সালে এই নিঃসরণ ১৭০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা ২০০৮ সালের তুলনায় ৪১৫ শতাংশ বেশি।

টিআইবির মতে, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ প্যারিস চুক্তি, জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) ও জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পরিপন্থী। একই সঙ্গে আমদানিনির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থার কারণে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ক্রমেই ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, জ্বালানি মিশ্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান ক্ষুদ্র অবদান এবং চলমান প্রকল্পগুলোর ধীর অগ্রগতি ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক নয়।

গবেষণায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৮ থেকে ২০২৫ সাল সময়কালে আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করা হয়।

পাশাপাশি ২০১২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে গৃহীত নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির ধরন পর্যালোচনা করা হয়।

টিআইবি মনে করে, ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ন্যায়সংগত জ্বালানি রূপান্তরের জন্য বিদ্যমান নীতি পুনর্মূল্যায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত