অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস
ডয়চে ভেলে

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
১ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
৫ ঘণ্টা আগে
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রথম ধাপে দাফন করা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের লাশ উত্তোলন ও শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে সিআইডি। সিআইডি সূত্র জানায়, এই কবরস্থানে বেশ কয়েকটি অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানে দাফন করা লাশগুলো থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং স্বজনদের হাতে লাশ হস্তান্তরের লক্ষ্যেই এই বৃহৎ পরিসরের ফরেনসিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে জানান, নিহত অজ্ঞাতনামাদের লাশ দ্রুত শনাক্ত করতে একটি বিশেষ আন্তবিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে দেশি বিশেষজ্ঞ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি লাশের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করবেন। এরপর নিখোঁজ পরিবারগুলোর সদস্যদের সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার সঙ্গে এই প্রোফাইলগুলো ম্যাচ করে দেখা হবে।
এই ফরেনসিক তদন্তপ্রক্রিয়ায় সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা করতে রয়েছেন খ্যাতনামা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. লুইস ফন্ডব্রাইডার। ফরেনসিক সায়েন্স ও ডিএনএ অ্যানালাইসিসে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল ও দ্রুত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্রে আরও জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১১৪ জন অজ্ঞাতপরিচয় নিহত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছিল। এই ১১৪ জনের লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য সিআইডি কাজ শুরু করেছে।
লাশ শনাক্তকরণের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ স্বজনের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে। সিআইডি নিখোঁজ পরিবারগুলোর সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ঘোষণা করবে, যাতে তাঁরা সরকারি নির্দেশিকা মেনে দ্রুত নমুনা জমা দিতে পারেন এবং তাঁদের প্রিয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রথম ধাপে দাফন করা অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের লাশ উত্তোলন ও শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে সিআইডি। সিআইডি সূত্র জানায়, এই কবরস্থানে বেশ কয়েকটি অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্থানে দাফন করা লাশগুলো থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং স্বজনদের হাতে লাশ হস্তান্তরের লক্ষ্যেই এই বৃহৎ পরিসরের ফরেনসিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে জানান, নিহত অজ্ঞাতনামাদের লাশ দ্রুত শনাক্ত করতে একটি বিশেষ আন্তবিভাগীয় টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে দেশি বিশেষজ্ঞ ছাড়াও আন্তর্জাতিক মানের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। তাঁরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি লাশের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করবেন। এরপর নিখোঁজ পরিবারগুলোর সদস্যদের সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার সঙ্গে এই প্রোফাইলগুলো ম্যাচ করে দেখা হবে।
এই ফরেনসিক তদন্তপ্রক্রিয়ায় সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতা করতে রয়েছেন খ্যাতনামা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. লুইস ফন্ডব্রাইডার। ফরেনসিক সায়েন্স ও ডিএনএ অ্যানালাইসিসে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল ও দ্রুত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্রে আরও জানা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১১৪ জন অজ্ঞাতপরিচয় নিহত ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছিল। এই ১১৪ জনের লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য সিআইডি কাজ শুরু করেছে।
লাশ শনাক্তকরণের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ স্বজনের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে। সিআইডি নিখোঁজ পরিবারগুলোর সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ঘোষণা করবে, যাতে তাঁরা সরকারি নির্দেশিকা মেনে দ্রুত নমুনা জমা দিতে পারেন এবং তাঁদের প্রিয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
৫ ঘণ্টা আগে
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ঢাকার একটি আদালতের আদেশ অনুযায়ী রোববার রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই শহীদদের মরদেহ উত্তোলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
জসিম উদ্দিন জানান, রোববার সকালে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হবে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো যথাযথ মর্যাদায় পুনরায় দাফন করা হবে।
সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি (প্রধান) মো. সিবগত উল্লাহ আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে মরদেহ উত্তোলন শুরুর আগে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। এই কার্যক্রমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুই ফন্দেব্রাইডার এবং ফরেনসিক নৃবিজ্ঞানীদের একটি দল উপস্থিত থাকবে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভাগটির অপরাধ দৃশ্য ইউনিট কবরস্থানে তাঁবু ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপন করেছে, যাতে মরদেহ উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়।
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত শহীদদের পরিচয় শনাক্তের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন শহীদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য সঠিক আইনগত প্রক্রিয়ায় মরদেহ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ জরুরি।’
আবেদনে আরও বলা হয়, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে হস্তান্তর করাও প্রয়োজন।’

রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন খান বলেন, ‘ঢাকার একটি আদালতের আদেশ অনুযায়ী রোববার রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই শহীদদের মরদেহ উত্তোলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।’
জসিম উদ্দিন জানান, রোববার সকালে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হবে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো যথাযথ মর্যাদায় পুনরায় দাফন করা হবে।
সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি (প্রধান) মো. সিবগত উল্লাহ আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে মরদেহ উত্তোলন শুরুর আগে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। এই কার্যক্রমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুই ফন্দেব্রাইডার এবং ফরেনসিক নৃবিজ্ঞানীদের একটি দল উপস্থিত থাকবে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বিভাগটির অপরাধ দৃশ্য ইউনিট কবরস্থানে তাঁবু ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম স্থাপন করেছে, যাতে মরদেহ উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়।
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত শহীদদের পরিচয় শনাক্তের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন শহীদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য সঠিক আইনগত প্রক্রিয়ায় মরদেহ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ জরুরি।’
আবেদনে আরও বলা হয়, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে হস্তান্তর করাও প্রয়োজন।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
১ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
৫ ঘণ্টা আগে
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শুক্রবারই খালেদা জিয়াকে নিয়ে চিকিৎসকদের লন্ডনে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল ঘোষণা করা হয়। আজ রোববার যাত্রা করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী বলেছেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সবিষয়ক প্রস্তুতি সম্পন্ন। মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিলেই ঢাকায় চলে আসবে কাতারের আমিরের ব্যবস্থা করা অ্যাম্বুলেন্সটি।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদ্রোগের জটিলতায় তাঁর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য জুবাইদা রহমান যুক্তরাজ্য থেকে শুক্রবার ঢাকায় এসে চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। লন্ডনে থাকতেও চিকিৎসা কার্যক্রমে ভূমিকা রেখে আসছিলেন জুবাইদা রহমান।
সার্বিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও বিষয়টি মূলত তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সব সময় প্রস্তুত আছে। তবে চিকিৎসাগত দিক থেকে উনার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরাও উনার শারীরিক অবস্থার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘(কাতারের আমিরের) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের যান্ত্রিক ত্রুটি যেমন ছিল, একইভাবে মেডিকেল বোর্ডও সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। ভবিষ্যতে হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে, উনাকে কখন বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু উনার স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সেহেতু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তদারকির পাশাপাশি চিকিৎসকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়া, গুজবে কান না দেওয়া এবং গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যখন বিমানে ফ্লাই করবেন, তখন মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না। বিষয়টি খেয়াল রেখে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে কাতার সরকার এবং অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা করছে বলেও জানান খালেদা জিয়ার চিকিৎসক।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সবুজসংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। বাসস জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে তিনিই কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে, তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে এবং খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে।
বিকল্প এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।’
মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্য বাসসকে জানিয়েছেন, গত দুদিনে বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুই দফা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শুক্রবারই খালেদা জিয়াকে নিয়ে চিকিৎসকদের লন্ডনে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা বাতিল ঘোষণা করা হয়। আজ রোববার যাত্রা করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী বলেছেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সবিষয়ক প্রস্তুতি সম্পন্ন। মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিলেই ঢাকায় চলে আসবে কাতারের আমিরের ব্যবস্থা করা অ্যাম্বুলেন্সটি।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদ্রোগের জটিলতায় তাঁর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। খালেদা জিয়ার বড় পুত্রবধূ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য জুবাইদা রহমান যুক্তরাজ্য থেকে শুক্রবার ঢাকায় এসে চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। লন্ডনে থাকতেও চিকিৎসা কার্যক্রমে ভূমিকা রেখে আসছিলেন জুবাইদা রহমান।
সার্বিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও বিষয়টি মূলত তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সব সময় প্রস্তুত আছে। তবে চিকিৎসাগত দিক থেকে উনার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরাও উনার শারীরিক অবস্থার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘(কাতারের আমিরের) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের যান্ত্রিক ত্রুটি যেমন ছিল, একইভাবে মেডিকেল বোর্ডও সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। ভবিষ্যতে হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে, উনাকে কখন বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু উনার স্বাস্থ্য আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সেহেতু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তদারকির পাশাপাশি চিকিৎসকদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, তাঁকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়া, গুজবে কান না দেওয়া এবং গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা যখন বিমানে ফ্লাই করবেন, তখন মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না। বিষয়টি খেয়াল রেখে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে কাতার সরকার এবং অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা করছে বলেও জানান খালেদা জিয়ার চিকিৎসক।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সবুজসংকেত দিলেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে কাতারের ব্যবস্থা করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। বাসস জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে তিনিই কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে, তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে এবং খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে।
বিকল্প এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, ‘আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।’
মেডিকেল বোর্ডের কয়েকজন সদস্য বাসসকে জানিয়েছেন, গত দুদিনে বোর্ড কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। সেগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুই দফা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠক হয়। প্রতিদিনই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
১ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পাকা করার কৌশলে ভোটের আগ দিয়ে জোট গড়ার আলাপ বরাবরের মতো এবারও ছিল শুরু থেকে। কিন্তু সেই আলাপ যেন কোনো পরিণতিতে গড়াচ্ছে না।
যদিও সমন্বিতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা এখনো বলে যাচ্ছে ছোট কয়েকটি দল। কিন্তু প্রথাগত নির্বাচনী জোটের ঘোষণা এখনো আসেনি কারও পক্ষ থেকে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এই প্রধান তিন শক্তি এবং তাদের মিত্র দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, নির্বাচনী জোট বলতে যা বোঝায়, তা যে হচ্ছে না, সেটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত ছোট ছোট অনেক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে এসেছে বিএনপি। ভোটের আলাপ শুরু হওয়ার পর থেকে দলটি তাই রাজপথের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং জয়ী হলে সমন্বিতভাবে সরকার গঠনের কথা বলে আসছে। এখনো ওই অবস্থানে থেকেই মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, শরিকদের অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সবার আগে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। দলের ভেতরে ও বাইরে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সামনে আনছেন তাঁরা। নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, মিত্রদের সঙ্গে শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, নির্বাচনের পরেও এই সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং সবাইকে নিয়েও সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু তার আগে দরকার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। কারণ, নির্বাচনে বিজয়ী না হলে সব চেষ্টাই বৃথা হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদিও এরই মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শরিকদের অনেকের মধ্যে। ২৭২টি আসনে বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি তুলেছে তারা।
গত শুক্রবার বিএনপির অন্যতম মিত্র ১২ দলীয় জোট সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপির দুই ধাপে সংসদীয় আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জোটের নেতারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন এবং সরকার গঠনের যে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২৭২টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণার মাধ্যমে তার বরখেলাপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আগামীকাল সোমবার সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরার কথা বলেছেন জোটের নেতারা।
শরিকদের এসব অভিযোগের বিপরীতে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। শরিক দলগুলোকে কতটি আসন ছাড়া হবে, তার আগে দেখছেন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। এ ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধ্যবাধকতা শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় আরও বেশি বিপাকে ফেলেছে বিএনপিকে। নিবন্ধিত শরিক দলের প্রার্থীরা তাঁদের নিজ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে পারবেন—এমন ভরসা রাখতে পারছে না বিএনপি।
নির্বাচনী জোট নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে গতকাল শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাঁরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, তাঁদের অনেক এলাকা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এখনো ২৮টা আসন তো বাকি আছে। জোটের আলোচনা তো এখনো শেষ হয়নি।’
আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে নতুন বাস্তবতায় এবার বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আটটি দল একযোগে সক্রিয় মাঠের আন্দোলনে। জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আটটি ইসলামপন্থী দল থাকলেও ভোটের জোট বা নির্বাচনে আসন সমঝোতার ঘোষণা এখনো আসেনি তাদের দিক থেকে।
জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হবে। সমন্বিত কৌশলে ভোটযুদ্ধে লড়ার পরিকল্পনা চলছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তো আগেই নিজেদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। এখন যেহেতু অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে...এখানে আলাপ আলোচনার অনেক বিষয় আছে।’
এবার বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির কোনো জোট হয় কি না, বড় করে সেদিকেই শুরু থেকে সবার নজর। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই; বরং সংস্কারের পক্ষে থাকা মধ্যপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোটের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এনসিপি। তৃতীয় শক্তি বা তৃতীয় জোট গঠন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চাইছে বলে জানিয়েছেন এনসিপির একাধিক নেতা।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ মধ্যমপন্থী রাজনীতি এবং সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোর সমন্বয়ে জোটের বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
তবে জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব। তবে জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’
এনসিপির একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, জোট নিয়ে এনসিপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আটকে আছে দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের ওপর। এর মধ্যে একজন উপদেষ্টা মনে করেন, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোট না করে এককভাবে নির্বাচন করলেও সুবিধাভোগী হবে জামায়াতে ইসলামী। আর জোট করলে পুরো সুবিধাই জামায়াত পাবে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। দলটি রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান তৈরি করতে পারবে না বলেও মনে করেন ওই উপদেষ্টা। যে কারণে দলটিতে থাকা দুই উপদেষ্টার অনুসারীরা এনসিপিকে বিএনপির দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দলটির নেতাদের একটা অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। জোট নিয়ে নেতাদের মতভেদের কারণে এনসিপির মধ্যে বিভক্তি চলছে বলে জানা গেছে। দুই উপদেষ্টা এনসিপিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘তাঁদের (দুই উপদেষ্টা) জন্য দলের দরজা খোলাই আছে। তাঁরা চাইলেই এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন এবং নির্বাচন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আইনি বিধিনিষেধ নেই।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল জাতীয় পার্টি। দলটিকে নিষিদ্ধের সঙ্গে ভোটে অযোগ্য ঘোষণার দাবিতে রাজপথে একাধিক দল আন্দোলনও করেছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন করা জাপার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন দেখা দেয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে একটি অংশ সম্মেলন করে নতুন কমিটি দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে এরই মধ্যে। দলটি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বোধীন আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল সোমবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট নামে নতুন জোটের ঘোষণা দিতে পারেন তাঁরা। এ জোটে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জনতা পার্টিসহ আরও ১৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
অন্যদিকে গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূল অংশ এখনো নির্বাচনী জোট তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেনি। তবে কোনো দল তাদের আমন্ত্রণ জানালে জোট করতে আগ্রহী তাঁরা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে জোট গঠনে জাপা উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন করলে কোনো একটা জোট হতেই পারে। জোট গঠন নিয়ে আমরা কারও সঙ্গে আলোচনা শুরু করেনি। তবে আমাদের ভোটব্যাংক রয়েছে, তাই অনেকে আমাদের জোটে নিতে আগ্রহী হবে। কারণ, আমাদের ভোট অনেক আসনে ফলাফল নির্ধারণ করবে।’
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বামপন্থী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার ৯টি দল নিয়ে নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ করার ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থী দলগুলো। দলগুলো হলো—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ (মাহবুব) ও সোনার বাংলা পার্টি। গতকাল শনিবার এক রাজনৈতিক কনভেনশনের মাধ্যমে এই নতুন জোটের ঘোষণা করেন তাঁরা। নেতারা বলছেন, জোটের কলেবর বাড়াতে ঐক্য ন্যাপ, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চাসহ আরও কয়েকটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এই জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি রতন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ঘোষণা করেছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বামপন্থী গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা চলমান। একই সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি জনতার সনদ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।’

সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই হয়ে যেতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এর পরেই পুরোদমে ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়বে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলগুলোর মধ্যে ভোটের মেরুকরণে তেমন কোনো বড় নড়চড় চোখে পড়ছে না। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পাকা করার কৌশলে ভোটের আগ দিয়ে জোট গড়ার আলাপ বরাবরের মতো এবারও ছিল শুরু থেকে। কিন্তু সেই আলাপ যেন কোনো পরিণতিতে গড়াচ্ছে না।
যদিও সমন্বিতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা এখনো বলে যাচ্ছে ছোট কয়েকটি দল। কিন্তু প্রথাগত নির্বাচনী জোটের ঘোষণা এখনো আসেনি কারও পক্ষ থেকে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—এই প্রধান তিন শক্তি এবং তাদের মিত্র দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে, নির্বাচনী জোট বলতে যা বোঝায়, তা যে হচ্ছে না, সেটা এখন অনেকটাই স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত ছোট ছোট অনেক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে এসেছে বিএনপি। ভোটের আলাপ শুরু হওয়ার পর থেকে দলটি তাই রাজপথের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং জয়ী হলে সমন্বিতভাবে সরকার গঠনের কথা বলে আসছে। এখনো ওই অবস্থানে থেকেই মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, শরিকদের অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সবার আগে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। দলের ভেতরে ও বাইরে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সামনে আনছেন তাঁরা। নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য অনুযায়ী, মিত্রদের সঙ্গে শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, নির্বাচনের পরেও এই সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং সবাইকে নিয়েও সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু তার আগে দরকার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। কারণ, নির্বাচনে বিজয়ী না হলে সব চেষ্টাই বৃথা হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদিও এরই মধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শরিকদের অনেকের মধ্যে। ২৭২টি আসনে বিএনপির ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি তুলেছে তারা।
গত শুক্রবার বিএনপির অন্যতম মিত্র ১২ দলীয় জোট সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে বিএনপির দুই ধাপে সংসদীয় আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জোটের নেতারা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন এবং সরকার গঠনের যে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২৭২টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণার মাধ্যমে তার বরখেলাপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে আগামীকাল সোমবার সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরার কথা বলেছেন জোটের নেতারা।
শরিকদের এসব অভিযোগের বিপরীতে বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। শরিক দলগুলোকে কতটি আসন ছাড়া হবে, তার আগে দেখছেন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। এ ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাধ্যবাধকতা শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় আরও বেশি বিপাকে ফেলেছে বিএনপিকে। নিবন্ধিত শরিক দলের প্রার্থীরা তাঁদের নিজ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে পারবেন—এমন ভরসা রাখতে পারছে না বিএনপি।
নির্বাচনী জোট নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে গতকাল শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাঁরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, তাঁদের অনেক এলাকা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এখনো ২৮টা আসন তো বাকি আছে। জোটের আলোচনা তো এখনো শেষ হয়নি।’
আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে নতুন বাস্তবতায় এবার বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে আটটি দল একযোগে সক্রিয় মাঠের আন্দোলনে। জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আটটি ইসলামপন্থী দল থাকলেও ভোটের জোট বা নির্বাচনে আসন সমঝোতার ঘোষণা এখনো আসেনি তাদের দিক থেকে।
জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হবে। সমন্বিত কৌশলে ভোটযুদ্ধে লড়ার পরিকল্পনা চলছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা তো আগেই নিজেদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। এখন যেহেতু অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে...এখানে আলাপ আলোচনার অনেক বিষয় আছে।’
এবার বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির কোনো জোট হয় কি না, বড় করে সেদিকেই শুরু থেকে সবার নজর। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই; বরং সংস্কারের পক্ষে থাকা মধ্যপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোটের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এনসিপি। তৃতীয় শক্তি বা তৃতীয় জোট গঠন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার প্রশ্নে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চাইছে বলে জানিয়েছেন এনসিপির একাধিক নেতা।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ মধ্যমপন্থী রাজনীতি এবং সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলোর সমন্বয়ে জোটের বিষয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
তবে জোটের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব। তবে জোট নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।’
এনসিপির একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, জোট নিয়ে এনসিপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আটকে আছে দুই ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের ওপর। এর মধ্যে একজন উপদেষ্টা মনে করেন, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে জোট না করে এককভাবে নির্বাচন করলেও সুবিধাভোগী হবে জামায়াতে ইসলামী। আর জোট করলে পুরো সুবিধাই জামায়াত পাবে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। দলটি রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান তৈরি করতে পারবে না বলেও মনে করেন ওই উপদেষ্টা। যে কারণে দলটিতে থাকা দুই উপদেষ্টার অনুসারীরা এনসিপিকে বিএনপির দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে দলটির নেতাদের একটা অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। জোট নিয়ে নেতাদের মতভেদের কারণে এনসিপির মধ্যে বিভক্তি চলছে বলে জানা গেছে। দুই উপদেষ্টা এনসিপিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘তাঁদের (দুই উপদেষ্টা) জন্য দলের দরজা খোলাই আছে। তাঁরা চাইলেই এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন এবং নির্বাচন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আইনি বিধিনিষেধ নেই।’
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল জাতীয় পার্টি। দলটিকে নিষিদ্ধের সঙ্গে ভোটে অযোগ্য ঘোষণার দাবিতে রাজপথে একাধিক দল আন্দোলনও করেছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন করা জাপার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জাতীয় পার্টিতে আরেক দফা ভাঙন দেখা দেয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে একটি অংশ সম্মেলন করে নতুন কমিটি দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে এরই মধ্যে। দলটি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বোধীন আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল সোমবার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট নামে নতুন জোটের ঘোষণা দিতে পারেন তাঁরা। এ জোটে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জনতা পার্টিসহ আরও ১৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
অন্যদিকে গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মূল অংশ এখনো নির্বাচনী জোট তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেনি। তবে কোনো দল তাদের আমন্ত্রণ জানালে জোট করতে আগ্রহী তাঁরা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে জোট গঠনে জাপা উদ্যোগ নেবে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন করলে কোনো একটা জোট হতেই পারে। জোট গঠন নিয়ে আমরা কারও সঙ্গে আলোচনা শুরু করেনি। তবে আমাদের ভোটব্যাংক রয়েছে, তাই অনেকে আমাদের জোটে নিতে আগ্রহী হবে। কারণ, আমাদের ভোট অনেক আসনে ফলাফল নির্ধারণ করবে।’
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বামপন্থী, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ধারার ৯টি দল নিয়ে নতুন জোট ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ করার ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থী দলগুলো। দলগুলো হলো—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ (মাহবুব) ও সোনার বাংলা পার্টি। গতকাল শনিবার এক রাজনৈতিক কনভেনশনের মাধ্যমে এই নতুন জোটের ঘোষণা করেন তাঁরা। নেতারা বলছেন, জোটের কলেবর বাড়াতে ঐক্য ন্যাপ, গণমুক্তি ইউনিয়ন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চাসহ আরও কয়েকটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এই জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি রতন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট ঘোষণা করেছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বামপন্থী গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা চলমান। একই সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি জনতার সনদ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সহিংসতায় নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করার জন্য অবশেষে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হাইকোর্টের নির্দেশে ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার পর আজ রোববার থেকে প্রক্রিয়াটি শুরু হলো।
১ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনের সময় নিহত ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা শহীদের মরদেহ শনাক্তের লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উড়োজাহাজে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সক্ষম না হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাঁর লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
৫ ঘণ্টা আগে