অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস
ডয়চে ভেলে

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের ৩ মাস
ডয়চে ভেলে

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান দিচ্ছে এই সরকার। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি?
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়৷ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে গণপিটুনি বা তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৬৮ জন। অথচ, গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালে পুরো বছরে ওভাবে নিহত হন ৫১ জন।
আসকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২০ জন৷ আর চলতি বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওভাবে নিহত হন সাত জন৷ চলতি নভেম্বরেও একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷
এবিষয়ে জানতে চাইলে মানবাধিকার কর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এখন আমরা দেখছি মব জাস্টিসের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ভয়াবহভাবে ফিরে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে।’
আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসের তুলনায় বর্তমান সরকারের তিন মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিসের নামে হত্যা বেড়েছে।’
এই সময়ে যারা কথিত গণপিটুনি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইছেন না৷
গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে ইয়াকুব ও আলমগীর নামে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের চাচা আব্দুল হালিম ফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পিটিয়ে হত্যার পর আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেন হত্যা করা হয়েছে, কারা হত্যা করেছে তার কিছুই আমরা জানি না।’
পুলিশের ভাষ্য, উত্তেজিত জনতা ‘ছিনতাইকারী’ বলে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বোনের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রূপমকে (৩৪) গতকাল সোমবার সকালে খুলনায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মত্যু নিয়ে কথা বলতে চাননি তার চাচা এস এম মাহমুদ৷ আজ মঙ্গলবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমরা এখন তাঁর দাফন নিয়ে ব্যস্ত, কথা বলা সম্ভব নয়। কারা মেরেছে, কেন মেরেছে বলতে পারছি না। আর পুলিশের কাছে যেয়ে কী হবে?’
গত ৩০ অক্টোবর নড়াইলে মাইকিং করে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ১ নভেম্বর ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তথাকথিত গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
এর আগের তথাকথিত মব জাস্টিসের শিকার হয়ে বেশকিছু মৃত্যু দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে৷ গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে ‘চোর’ সন্দেহের ধরে নিয়ে গিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তোফায়েলের খিদে পেলে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়। ভাত খাওয়ার পর আবার তাকে পেটানো হয়। হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নেচে-গেয়ে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ হত্যার এক মাস পর ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়৷
কয়েকদিন পর আবারো পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷
নূর খান বলেন, ‘একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে একজনকে হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় আর কোনো গ্রেপ্তারের খবর আমার জানা নাই৷’
গুম কমিশন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় এক হাজার ৬০০ গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে৷ এগুলো গত সরকারের আমলের ঘটনা৷ এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
৪০০ অভিযোগের মধ্যে ১৭২টি অভিযোগের সঙ্গে র্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে৷ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৩৭টি অভিযোগের সঙ্গে৷ ডিবির (গোয়েন্দা পুলিশ) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ৫৫টির সঙ্গে৷ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৬টির সঙ্গে৷ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে ২৫টি অভিযোগের সঙ্গে৷
অন্যদিকে ২০০৪ সালে র্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২০ বছরে অন্তত দুই হাজার ৯৫৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে আসক।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না৷ আগের সরকারের আমলে হয়েছে, এখন আবার হচ্ছে৷ এটা তো জট পাকিয়ে যাচ্ছে৷ আগের বিচারই হচ্ছে না৷ এখনকার বিচার কে, কখন করবে?’
এলিনা খান মনে করেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমত৷ কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। আগে বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ছিল আর এখন বিচার ব্যবস্থার কাঠামোই নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে৷ তা-ও করা হচ্ছে না।’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে ‘নতুন আলামত’ তুলে ধরে মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘আগে করতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, এখন সেটা মব জাস্টিসের নামে করা হচ্ছে; গণপিটুনির নামে হচ্ছে— এটা আরো ভয়াবহ আকারে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও নিহত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এইসব বন্ধ এবং বিচারের জন্য সরকারের কমিটমেন্ট খুব জরুরি। কিন্তু সেটা দৃশ্যমান নয়। বিচারের আওতায় আনা, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া খুব জরুরি৷’
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এই অল্প সময় (তিন মাসের) তুলনা করলে আগের সরকারের চেয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব জাস্টিস বেড়েছে। এটা হয়েছে সরকারের কমিটমেন্টের অভাবে। সরকার মুখে বলছে, কিন্তু কাজে করছে না। এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা সুদূরপরাহত।’
আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘মব জাস্টিসের নামে যা চলছে তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার— এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হলে ওইসব অপরাধ বন্ধ করতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সময়ে যা দেখেছি, এখনো তা দেখতে চাই না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ হবে না। এজন্যই তো আমরা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনা সম্পর্কে চেষ্টা করেও পুলিশ সদর দপ্তরের বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে এর আগে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মব জাস্টিস বন্ধ করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। দেশের থানাসহ সব পুলিশ ইউনিটকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা কোথাও ঘটলে পুলিশকে দ্রুত খবর দিতে জনসাধারণকে বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে রেসপন্স করবে। আর পুলিশ যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার।
১ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
২ ঘণ্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
২ ঘণ্টা আগে
ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
৩ ঘণ্টা আগেমানবতাবিরোধী অপরাধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশে এই প্রথম কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের ফাঁসির সাজা হলো। শেখ হাসিনা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এই মামলায় পতিত শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাঁচ অভিযোগের দুটিতে এ দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অপর তিন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই দুজনের সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে জুলাই শহীদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অপর আসামি এবং পরে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল দুজনেই পলাতক।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে এই রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এটিই ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছে। রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে সরকার সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রায় ঘোষণা শুরুর আগেই ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আসন না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জড়ো হন জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্য, জুলাই যোদ্ধা, বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা চৌধুরী মামুনকে এজলাসে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা শুরু হয় দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনানো হয়। রায় ঘোষণা শেষ হয় বেলা ২টা ৫০ মিনিটে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হতেই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আহত জুলাই যোদ্ধাদের অনেকে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। শহীদ পরিবারের অনেককেও কাঁদতেও দেখা যায়। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটা আদালত। উচ্ছ্বাস বা যেকোনো প্রতিক্রিয়া ট্রাইব্যুনালের বাইরে দেখাতে হবে।’ পরে সবাই শান্ত হন। পুরোটা সময় নিশ্চুপ ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
অভিযোগ গঠনের চার মাস পর এই মামলার রায়
রায়ের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটররা, তিন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও জিএস এস এম ফরহাদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী, শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল এবং এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় সেনাসদস্য, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সময় সবাইকে তল্লাশি করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেও কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইনে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।
রায় ঘোষণার শুরুতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান প্রসিকিউশন টিম, তদন্ত সংস্থা, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। স্মরণ করেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের। পরে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের আইন, রোম স্ট্যাটিউট ও অভিযোগগুলো পড়ে শোনান। এরপর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু ও ঢাবির তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের টেলিফোন কথোপকথন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন, সাক্ষীদের বক্তব্য, দুই পক্ষের উপস্থাপন করা যুক্তি তুলে ধরেন। বিদেশে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সরওয়ার এবং মুশফিকুল ফজল আনসারীর অবদান উল্লেখ করা হয়।
সব শেষে সাজার অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। রায়ে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে যেসব কল রেকর্ড শোনানো হয়েছে, তা সঠিক। বিষয়টি ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। আন্দোলন দমনে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় তিন আসামি যৌথভাবে দায়ী; যা চৌধুরী মামুন স্বীকার করেছেন।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এই মামলার পাঁচটি অভিযোগকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য, ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন করে আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলে উসকানি, আদেশ এবং অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা না দেওয়া এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা তাপস এবং পরবর্তী সময়ে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনে ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি এবং লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ, অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা না দেওয়া; ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা এবং ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী মামুনের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণে সহায়তা করায় তাঁর শাস্তির মাত্রা কম বলে জানান ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রসিকিউটররা জানান, পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাচ্ছেন না শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রায়ের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায় ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়—সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করেছে। সরকার আরও স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, যেকোনো ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলাভঙ্গের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, আজকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়ের দিন।’ তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই রায়ে সন্তুষ্ট। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তাজা, অকাট্য, জোরালো, বিস্তৃত প্রমাণ রয়েছে, তাতে পৃথিবীর যেকোনো আদালতে বিচার হলেই সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার কথা।
আসিফ নজরুল বলেন, তাঁরা যত দিন আছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্য পূর্ণ বেগে চলবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এই দুই মামলায় সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডসহ আরও কয়েকটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের আমলে গত ১৪ বছরে ৫৫টি রায় দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। ২০২৩ সালের ১৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার অবসরে যাওয়ার পর বিচারকাজ বন্ধ ছিল ট্রাইব্যুনালের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্টের প্রায় দেড় হাজার নিহত এবং ৩০ হাজার আহত হওয়ার ঘটনার বিচার করতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে তিনজনকে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। পরে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরেকটি বাড়ানো হয়।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এই মামলায় চলতি বছরের ১ জুন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানি জারি করা হয়। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপরও হাজির না হলে ২৪ জুন তাঁদের দুজনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন চৌধুরী মামুন।
৩ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। এই মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। ২৩ অক্টোবর এই মামলার শুনানি শেষ হয়। ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ তারিখ দিন ধার্য করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশে এই প্রথম কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের ফাঁসির সাজা হলো। শেখ হাসিনা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এই মামলায় পতিত শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাঁচ অভিযোগের দুটিতে এ দুজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অপর তিন অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই দুজনের সব সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে জুলাই শহীদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অপর আসামি এবং পরে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল দুজনেই পলাতক।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে এই রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এটিই ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছে। রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে সরকার সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রায় ঘোষণা শুরুর আগেই ট্রাইব্যুনালের এজলাসকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আসন না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জড়ো হন জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্য, জুলাই যোদ্ধা, বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা চৌধুরী মামুনকে এজলাসে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা শুরু হয় দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনানো হয়। রায় ঘোষণা শেষ হয় বেলা ২টা ৫০ মিনিটে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা হতেই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আহত জুলাই যোদ্ধাদের অনেকে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। শহীদ পরিবারের অনেককেও কাঁদতেও দেখা যায়। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটা আদালত। উচ্ছ্বাস বা যেকোনো প্রতিক্রিয়া ট্রাইব্যুনালের বাইরে দেখাতে হবে।’ পরে সবাই শান্ত হন। পুরোটা সময় নিশ্চুপ ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
অভিযোগ গঠনের চার মাস পর এই মামলার রায়
রায়ের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটররা, তিন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম ও জিএস এস এম ফরহাদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী, শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল এবং এর আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় সেনাসদস্য, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সময় সবাইকে তল্লাশি করা হয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেও কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ অনলাইনে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।
রায় ঘোষণার শুরুতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান প্রসিকিউশন টিম, তদন্ত সংস্থা, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। স্মরণ করেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের। পরে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের আইন, রোম স্ট্যাটিউট ও অভিযোগগুলো পড়ে শোনান। এরপর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু ও ঢাবির তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের টেলিফোন কথোপকথন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন, সাক্ষীদের বক্তব্য, দুই পক্ষের উপস্থাপন করা যুক্তি তুলে ধরেন। বিদেশে অবস্থানরত লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, ড. কনক সরওয়ার এবং মুশফিকুল ফজল আনসারীর অবদান উল্লেখ করা হয়।
সব শেষে সাজার অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। রায়ে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে যেসব কল রেকর্ড শোনানো হয়েছে, তা সঠিক। বিষয়টি ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। আন্দোলন দমনে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় তিন আসামি যৌথভাবে দায়ী; যা চৌধুরী মামুন স্বীকার করেছেন।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এই মামলার পাঁচটি অভিযোগকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য, ওই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন করে আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাদের ফাঁসি দেওয়ার কথা বলে উসকানি, আদেশ এবং অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা না দেওয়া এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা তাপস এবং পরবর্তী সময়ে হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনে ড্রোন ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয়, আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি এবং লেথাল উইপন ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ, অপরাধ সংঘটনে অধীনস্থদের বাধা না দেওয়া; ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা এবং ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জনকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী মামুনের পাঁচ বছরের সাজা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণে সহায়তা করায় তাঁর শাস্তির মাত্রা কম বলে জানান ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রসিকিউটররা জানান, পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাচ্ছেন না শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রায়ের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায় ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়—সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করেছে। সরকার আরও স্পষ্ট করে জানাচ্ছে, যেকোনো ধরনের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা বা জনশৃঙ্খলাভঙ্গের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, আজকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়ের দিন।’ তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই রায়ে সন্তুষ্ট। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তাজা, অকাট্য, জোরালো, বিস্তৃত প্রমাণ রয়েছে, তাতে পৃথিবীর যেকোনো আদালতে বিচার হলেই সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার কথা।
আসিফ নজরুল বলেন, তাঁরা যত দিন আছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকার্য পূর্ণ বেগে চলবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এই দুই মামলায় সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডসহ আরও কয়েকটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের আমলে গত ১৪ বছরে ৫৫টি রায় দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। ২০২৩ সালের ১৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার অবসরে যাওয়ার পর বিচারকাজ বন্ধ ছিল ট্রাইব্যুনালের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্টের প্রায় দেড় হাজার নিহত এবং ৩০ হাজার আহত হওয়ার ঘটনার বিচার করতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে তিনজনকে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। পরে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আরেকটি বাড়ানো হয়।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এই মামলায় চলতি বছরের ১ জুন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সেদিন অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানি জারি করা হয়। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপরও হাজির না হলে ২৪ জুন তাঁদের দুজনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনালে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে আবেদন করেন চৌধুরী মামুন।
৩ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের পর শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। এই মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। ২৩ অক্টোবর এই মামলার শুনানি শেষ হয়। ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ তারিখ দিন ধার্য করে দেন ট্রাইব্যুনাল।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
২ ঘণ্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
২ ঘণ্টা আগে
ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
দুজনেই পলাতক থাকায় মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেত চাইলে চিফ প্রসিকিউটর মোহামামদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্র দুই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। একটি হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ২০১৩ সালের যে অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে ফেরত চাইবে। তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত আনার মাধ্যমে সাজা কার্যকর করা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে এনে সেই সাজা কার্যকর করা যেতে পারে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আসামিরা চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করতে পারবেন। কিন্তু পলাতকরা আপিল করতে পারবেন না। কারণ পলাতক ব্যক্তির আইনগত অধিকার থাকে না। আপিল করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশে এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর কারাগারে গিয়ে দণ্ডিত ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারবেন।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
দুজনেই পলাতক থাকায় মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেত চাইলে চিফ প্রসিকিউটর মোহামামদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্র দুই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। একটি হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ২০১৩ সালের যে অপরাধীর বহিঃসমর্পণ চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে বাংলাদেশ ভারত সরকারের কাছে ফেরত চাইবে। তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত আনার মাধ্যমে সাজা কার্যকর করা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে এনে সেই সাজা কার্যকর করা যেতে পারে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আসামিরা চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করতে পারবেন। কিন্তু পলাতকরা আপিল করতে পারবেন না। কারণ পলাতক ব্যক্তির আইনগত অধিকার থাকে না। আপিল করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশে এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর কারাগারে গিয়ে দণ্ডিত ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করতে পারবেন।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার।
১ ঘণ্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
২ ঘণ্টা আগে
ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সারা দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করেছে—যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ ও এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বছরের পর বছর নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে—তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন ও সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ—মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা শুধুই সংখ্যা নন; তাঁরা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি—এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও—ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাঁদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।
‘বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকেরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।’
এতে আরও বলা হয়, ‘সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে—তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, আজ বাংলাদেশের আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা সারা দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনঃনিশ্চিত করেছে—যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষ ও এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এই রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বছরের পর বছর নিপীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে—তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন ও সরকার–নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ—মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁরা শুধুই সংখ্যা নন; তাঁরা ছিলেন আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি—এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও—ব্যবহার করা হয়েছিল। এই রায় তাঁদের ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং আমাদের বিচারব্যবস্থায় অপরাধীদের জবাবদিহির নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করে।
‘বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহির ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকেরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাঁদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।’
এতে আরও বলা হয়, ‘সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি। প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে—তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামমাত্র টিকে থাকবে না; এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার।
১ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
২ ঘণ্টা আগে
ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার (১৯–২০ নভেম্বর) দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সপ্তম ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে’ নামে এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন খলিলুর রহমান। গতবছর অভুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ভারত সফর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তাঁর ওপর পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এর আগেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনার এসেছে।
অভুত্থানের সামনের সারিতে থাকা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা উপদেষ্টা ‘শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন’ বলে তাঁর আশা।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা জোর দাবি জানাব—এই রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। অবিলম্বে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে। সেটার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা শুনতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা আশা করব, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।’
কিন্তু নাহিদের এই আশার ভিত্তি কতটা? জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের ভারত সফরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, তা সরকারের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এই সম্মেলনে কী কী আলোচনা হবে সে বিষয়ে এর আগে সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে।
নয়াদিল্লির সম্মেলনে কী হবে
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯ থেকে ২০ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সপ্তম ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ’ নামে আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিতে খলিলুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মরিশাসের সঙ্গে গত বছর বাংলাদেশ পঞ্চম সদস্য হিসেবে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে যোগ দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থার বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বিমসটেকের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে জোরালোভাবে কাজ করছেন।
এর আগে চীনের কুনমিংয়ে চীন-ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ফোরামে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর অংশগ্রহণ করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পারস্পরিকভাবে লাভজনক আঞ্চলিক সহযোগিতা লালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে প্রচেষ্টা, নয়াদিল্লির কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে তার অংশগ্রহণ সেটিরই ধারাবাহিকতা।’

ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলের পাঁচ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মিলিত হচ্ছেন নয়াদিল্লিতে। এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের আমন্ত্রণে তিনি ভারত সফরে যাচ্ছেন।
আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার (১৯–২০ নভেম্বর) দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সপ্তম ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে’ নামে এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন খলিলুর রহমান। গতবছর অভুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এমন সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ভারত সফর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তাঁর ওপর পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এর আগেই বাংলাদেশ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় বিষয়টি নতুন করে আলোচনার এসেছে।
অভুত্থানের সামনের সারিতে থাকা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা উপদেষ্টা ‘শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন’ বলে তাঁর আশা।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা জোর দাবি জানাব—এই রায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। অবিলম্বে দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হবে। সেটার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা শুনতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা আশা করব, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।’
কিন্তু নাহিদের এই আশার ভিত্তি কতটা? জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের ভারত সফরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, তা সরকারের কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এই সম্মেলনে কী কী আলোচনা হবে সে বিষয়ে এর আগে সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে।
নয়াদিল্লির সম্মেলনে কী হবে
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯ থেকে ২০ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় সপ্তম ‘কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ’ নামে আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিতে খলিলুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও মরিশাসের সঙ্গে গত বছর বাংলাদেশ পঞ্চম সদস্য হিসেবে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে যোগ দেয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থার বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বিমসটেকের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে জোরালোভাবে কাজ করছেন।
এর আগে চীনের কুনমিংয়ে চীন-ভারত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ফোরামে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর অংশগ্রহণ করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পারস্পরিকভাবে লাভজনক আঞ্চলিক সহযোগিতা লালনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে প্রচেষ্টা, নয়াদিল্লির কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে তার অংশগ্রহণ সেটিরই ধারাবাহিকতা।’

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যাপক সমালোচিত। এই সরকারের বিরুদ্ধে পূঞ্জীভূত ক্ষোভের জমিনে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার অভুত্থানের ফসল হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাস পার করতে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার র
০৬ নভেম্বর ২০২৪
প্রায় দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চলে গেছেন ভারতে। সেই গণ-অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হলো আজ সোমবার।
১ ঘণ্টা আগে
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারাদেশে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আজ সোমবার রায় ঘোষণার সময় তাঁরা কেউ হাজির ছিলেন না, দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন।
২ ঘণ্টা আগে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের মধ্য দিয়ে ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ কথাটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
২ ঘণ্টা আগে