Ajker Patrika

রিকশার গতিতে মোটরসাইকেল চললেই কি দুর্ঘটনা কমবে

সুপ্রিয় সিকদার, ঢাকা
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৩৪
রিকশার গতিতে মোটরসাইকেল চললেই কি দুর্ঘটনা কমবে

শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের গতি হবে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার, মহাসড়কে যাত্রী নেওয়া যাবে না, আর উৎসবে মহাসড়কে থাকবে নিষিদ্ধ। এমন খসড়া নীতিমালা করেছে সরকার।

তবে মহাসড়কে কমপক্ষে ১২৬ সিসির মোটরসাইকেল বাধ্যতামূলক করার বিধিটি ছাড়া অন্যগুলো নিয়ে ব্যাপক আপত্তি দেখা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, শহরের রিকশার গতিই ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার থাকে। মোটরসাইকেলের জন্য এই গতি বেঁধে দেওয়া হাস্যকর! এ ছাড়া এতে যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়বে।

মূলত বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ ’-এর খসড়া তৈরি করেছে সরকার।

 পরিবহন বিভাগের যুগ্ম সচিব আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের কমিটি এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করেছে। খসড়া নীতিমালা নিয়ে আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মোটরসাইকেলের গতি কমানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেলে বয়স্ক ও শিশুকে যাত্রী না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদিত উন্নতমানের হেলমেটসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম চালককে পরার কথা বলা হয়েছে।’ 

এই যুগ্ম সচিব আরও বলেন, ‘বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত করতে অংশীজনদের সঙ্গে সভা হবে। এরপর মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।’ 

এই নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মোটরসাইকেল চালকেরা। সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা-সংলগ্ন রাস্তায় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এই নীতিমালা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকেরাও। 

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘একটা স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কালো আইন তৈরি করে যুবসমাজকে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

দ্য ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মুর্তোজা এক ভিডিও বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দিনে দিনে মোটরসাইকেলের গুরুত্ব বাড়ছে। তবে সরকারের এই নীতিমালার খসড়া দেখে মনে হচ্ছে, তারা মোটরসাইকেলের ওপর বিরক্ত। মোটরসাইকেবিরোধী একটা মনোভাব নিয়ে এই নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে।’ এই নীতিমালার খসড়া কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

 রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শুধু রাজধানীর হিসাব করলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, গণপরিবহন কোনোটিই ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। সেটি নিয়ন্ত্রণ না করে শুধু মোটরসাইকেলকেন্দ্রিক নীতিমালা প্রণয়ন করলে কোনো সুফল আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মোটরসাইকেলচালক মো. জামাল হোসেন। বাড়ি ভোলায়। থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করে আয় করেন। দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা মোটরসাইকেল চালালে সব খরচ বাদ দিয়ে থাকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এই দিয়েই চলে তাঁর ৫ সদস্যের সংসার।

খসড়া এই নীতিমালা নিয়ে জামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে রিকশাও চলে ৩০ কিলোমিটার গতিতে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলাচল করে। প্রাইভেট কার, গণপরিবহন আরও বেশি গতিতে চলাচল করে। সে অনুযায়ী ৩০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চললে সড়ক দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।’ 

প্রতিদিনের আয়ে টান পড়বে জানিয়ে জামাল হোসেন দাবি করেন, ‘এই নীতিমালা করা হয়েছে পুলিশকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। আমি ৩০-এ চালাব না ৪০-এ, সেটা না দেখেই পুলিশ মামলা দেবে। আগে পুলিশের ২ হাজার টাকার মামলা থেকে বাঁচতে ৫০০ টাকা ঘুষ দিতাম। এখন আরও বেশি দিতে হবে।’

এই খসড়া নীতিমালার উপযুক্ততা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাস্তাভেদে যানবাহনের জন্য গতিসীমা ঠিক করা যেতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কোনো যানবাহনের জন্য গতিসীমা ঠিক করে দেওয়ার মতো সংস্কৃতি এখনো আমাদের দেশে আসেনি। বিভিন্ন দেশে লেন বিভাজন আছে। লেন অনুযায়ী বিভিন্ন গতিতে গাড়ি চলাচল করে। তবে আমাদের এখানে লেনের সংস্কৃত নেই। সেজন্য নির্দিষ্ট একটি যানবাহনের জন্য গতি নির্দিষ্ট করা ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে এই নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।’

একই লেনে যখন একটি নির্দিষ্ট গতির গাড়ি চলবে, আর অন্যগুলো তাদের নিজেদের গতিতে চলবে—এতে করে সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও মনে করেন এই সহকারী অধ্যাপক। 

দিনাজপুরের সাইদ আল মামুন। থাকেন বনশ্রীতে। অন্য পেশার পাশাপাশি রাইড শেয়ার করে উপার্জন করেন। এই নীতিমালা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা স্রেফ অন্যান্য গাড়ির মালিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। গত ঈদেও অনেক মানুষ মোটরসাইকেলে পরিবার নিয়ে বাড়িতে গেছে। তখন বাসমালিকদের ব্যবসা হয়নি। আবার এখন অনেকেই মোটরসাইকেল কেনায় গণপরিবহনের ভাড়া উঠছে না ঠিকমতো। এই মালিকদের সুবিধা দিতেই সরকার এই নীতিমালা করছে।’

তবে মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সিসি লিমিট নির্ধারণ নিয়ে সন্তুষ্ট সাইদ। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক আছে। বেশি সিসির মোটরসাইকেল হলে মহাসড়কে অন্য গাড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা যাবে।’

বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ এ ব্যাপারে বলেন, ‘ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) পুরো পৃথিবীতে রিস্ক ভালনারেবল গ্রুপের মধ্যে তিনটি আর্টিকেল ইনক্লুড করেছে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল। পুরো পৃথিবীতেই মোটরসাইকেলকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। অনেক দেশেই মোটরসাইকেল চলাচলে সিসি লিমিট করে দেওয়া। আমাদের দেশে এমন ছিল না। তবে নীতিমালায় সিসি লিমিটের কথা বলা হয়েছে। এটাকে আমি স্বাগত জানাই। কেননা, সিসি মানেই গতি না, সিসি অনেক বেশি স্ট্যাবিলিটিও দেয়। সিসি বেশি হলে ব্রেকিং পাওয়ারও অনেক ভালো থাকে।’

আরেক মোটরসাইকেল চালক নূরুন্নবী বলেন, ‘যদি মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এই নীতিমালা কিছুটা হলেও কার্যকর হতে পারে।’

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তানভীর ইসলাম। মিরপুর থেকে বনানী প্রতিদিন মোটরসাইকেল নিয়ে অফিস করেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি আইন-নীতিমালা করার আগে সরকার একটা মাঠ জরিপ করে। আমার কাছে মনে হচ্ছে সে জন্যই এই নীতিমালার খসড়ার আংশিক অংশ প্রকাশ করা হয়েছে।’

 ৩০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন করা হলে আর মোটরসাইকেলই চালাবেন না ক্ষুব্ধ তানভীর। তানভীর বলেন, ‘বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালক নিয়ন্ত্রণ না করে সবার জন্য মোটরসাইকেলের অযৌক্তিক নীতিমালা করা হচ্ছে।’

মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩ নিয়ে মোটরসাইকেল অ্যাসেমব্লার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সাংবাদিকদের জানিয়েছে, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালার খসড়ার আগে তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি। বিধিনিষেধ এলে ৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়বে। ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। 

সংবাদকর্মী রজত কান্তি রায় বলেন, ‘প্রতিদিন রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে অফিসে আসি। গতি ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিলে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়বে। যেখানে সড়কে সাধারণ গতি ৪০ কিলোমিটার, সেখানে শুধু মোটরসাইকেলে গতি ৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিলে দুর্ঘটনা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’

রজত কান্তির মতে, শুধু মোটরসাইকেল চালকদের নিরাপত্তা, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য এই আইন করা হচ্ছে না। একটি পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। কারণ, ঢাকা সিটিতে যানজট বাদে একটি বাসের গতি যদি ৪৫ কিলোমিটার, একটি ব্যক্তিগত গাড়ির গতি যদি ৫০ কিলোমিটার আর সিএনজি অটোরিকশার গতি ৪০ কিলোমিটার হয় আর সেই সড়কে যদি ৩০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনার প্রবণতা বেড়ে যায়। বাড়বে যানজটও।

মহাসড়কে পিলিয়ন নিয়ে মোটরসাইকেল চালানো নিয়ে কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এই নীতিমালাটা মূলত করা হচ্ছে, হতাহতের হার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। একটা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পড়লে দুজনই আহত হয়। দুজন থাকলে দুজনই আহত হয়। সেক্ষেত্রে হতাহতের হার বেড়ে যায়।’

এদিকে গতকাল সোমবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এই নীতিমালার খসড়া এখনো আমার টেবিলে আসেনি। খসড়া হলেই সেটি ফাইনাল নয়। আমি এটি দেখব। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণের মনের ভাষা, চোখের ভাষা আমরা বুঝি।’

মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক, ক্রেতা-বিক্রেতা, চালক মোটদাগে এই নীতিমালার যারা অংশীজন তাঁদের কারও সঙ্গে আলাপ না করে করা এই নীতিমালা শেষ পর্যন্ত গৃহীত হয় কি না দেখার অপেক্ষা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত