Ajker Patrika

নির্বাচনে প্রার্থীর প্রচারে পোস্টার থাকছে না

  • জাতীয় সংসদ আচরণ বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের
  • কাপড়ের ব্যানার আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে
  • মানহানিকর প্রচার করলে সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তির বিধান
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা বদলে যাচ্ছে। প্রার্থীর প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বাতিল করে শুধু কাপড়ের ব্যানার বহাল রাখা হচ্ছে। আচরণবিধিতে প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার।

প্রস্তাবিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০২৫-এর খসড়ায় এসব বিধান রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আগামী সংসদ নির্বাচন নতুন আচরণবিধিতে করতে চায় ইসি।

খসড়া অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার আচরণবিধিতে যুক্ত হলে ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে সব ধরনের অনলাইন প্রচার বন্ধ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে মানহানিকর প্রচার করলে ডিজিটাল বা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি এবং উপকারভোগী পর্যায়ে আলোচনাবিষয়ক কমিটি প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার আচরণ বিধিমালায় যুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, খসড়া আচরণ বিধিমালার নির্বাচনী প্রচারের অংশে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের আগে গণসংযোগ এবং ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার ছাড়া অন্য কোনো প্রকার প্রচার শুরু করতে পারবেন না। ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে প্রার্থী বা তাঁর এজেন্ট বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডি প্রচার শুরুর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি, কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লৈঙ্গিক, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া, কনটেন্ট বানানো বা প্রচার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে বিধি লঙ্ঘন করলে ডিজিটাল বা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে।

জানা যায়, খসড়া আচরণ বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় উপদেষ্টা ও তাঁদের সমমর্যাদার ব্যক্তিদের যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী ও তাঁদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ সমপর্যায়ের ব্যক্তি। ফলে তাঁরা নির্বাচনের সময় সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অনুকূলে অনুদান ঘোষণা বা বরাদ্দ বা অর্থ অবমুক্ত করতে পারবেন না। সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে পারবেন না।

আচরণ বিধিমালার খসড়ায় জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগে ও পরের সময়কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। খসড়ায় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন থেকে তফসিল পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’; তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের সময়কে ‘নির্বাচনকালীন সময়’ এবং ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচন-পরবর্তী সময়’ উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০৮ সালে আচরণ বিধিমালা তৈরির সময় সংসদ ভেঙে যাওয়া থেকে নির্বাচনের পরবর্তী সময় পর্যন্ত পুরোটাকেই ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ গণ্য করা হয়েছিল। তখন এই পুরো সময়েই আচরণ বিধিমালা কার্যকর থাকার বিধান ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে সংবিধান সংশোধনের পর তৎকালীন ইসি নির্বাচন-পূর্ব সময়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনে। প্রস্তাবিত খসড়া আচরণ বিধিমালায় আগের নিয়ম বহাল রাখা হয়েছে।

খসড়ায় প্রচারে পোস্টার বাতিল করে ব্যানার শব্দ রাখা হয়েছে। ব্যানারের অর্থ বোঝানো হয়েছে কাপড়ের তৈরি প্রচারপত্র। প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত ব্যানার হবে সাদা-কালো ও আয়তন হবে অনধিক ৩ মিটার গুণ ১ মিটার। এতে শুধু প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক ব্যবহার করা যাবে। তবে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হলে এর সঙ্গে দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে। ব্যানারে কোনো অনুষ্ঠান, জনসভায় নেতৃত্বদান, প্রার্থনারত অবস্থার ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রচারে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করা যাবে। তবে এসব প্রচারপত্রে পলিথিনের আবরণ বা প্লাস্টিক ব্যানার (পিবিসি ব্যানার) লেমিনেটিং ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রকার স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড ভূমি বা অন্য কোনো কাঠামো বা বৃক্ষ ইত্যাদিতে স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না।

জনসভার দিন, সময় ও স্থানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যূনতম ৭২ ঘণ্টা আগে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। জনসভার কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানাতে হবে। আগের আচরণবিধিতে শুধু ৪৮ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানানোর নিয়ম ছিল।

খসড়া আচরণ বিধিমালায় আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত হয়েছে। আরপিওতে এই ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে। মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের মান ৬০ ডেসিবেল রাখার এবং বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়। প্রার্থীকে প্রতি সাত দিন পর পর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারা ইসলাম সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় কিছু সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। আচরণ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে কাজ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির খুনিদের আশ্রয় দেওয়া দুই ভারতীয়কে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ: ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৭
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার ঘটনায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি বলেছে, ‘এই হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে গেছে। ভারতে তাদের যারা আশ্রয় দিয়েছিল, সেই দুজনকে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এবং অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ফয়সাল করিম দাউদ ওরফে রাহুল ও তার সহযোগী আলমগীর শেখের সহযোগী ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, চারজন সাক্ষী হয়েছেন।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল—এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, তদন্তে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, সেই মোতাবেক এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছে। আমাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পাচারে সহায়তার অভিযোগে সেখানকার দুজনকে আটক করেছে।’

মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।

এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাদির হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে সিএনজিতে (অটোরিকশা) করে আমিনবাজারে যান। সেখান থেকে গাড়িতে করে কালামপুড়ে যান। কালামপুর থেকে আরেকটি গাড়িতে করে ময়মনসিংহ সীমান্তে যান। সেখানে ফয়সাল ও আলমগীরকে গ্রহণ করে ফিলিপ স্নাল ও সঞ্জয়। তাঁরা সীমান্তে অবৈধভাবে মানুষ পারাপার করেন। পরে ফিলিপ দুজনকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে নিয়ে যান।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ফিলিপ ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতের তুরা নামক স্থানে নিয়ে যান। সেখানে ভারতীয় নাগরিক পুর্তির কাছে দুজনকে পৌঁছে দেন। পরে সামী নামের এক ব্যক্তির গাড়িতে করে সেখান থেকে পালিয়ে যান তাঁরা।

একই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট (২০২৪) যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারাই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী ভারতে পালিয়েছেন—জানাল ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৫
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তে অগ্রগতি নিয়ে ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল গভীর ও পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ (ওরফে রাহুল দাউদ) এবং তাঁর এক সহযোগী ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আজ রোববার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ফয়সাল করিম মাসুদ এবং তাঁর এক সহযোগী ময়মনসিংহের দুর্গম সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন। পুলিশি নজরদারি এড়াতে তাঁরা স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তা নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, এটি ছিল সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো একটি পরিকল্পনা। ডিএমপি এ পর্যন্ত এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, যেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভ এবং পরিকল্পনার খুঁটিনাটি প্রকাশ করেছে।’ ডিএমপি আশা করছে, আগামী ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এই মামলার একটি পূর্ণাঙ্গ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর হামলার শিকার হন ওসমান হাদি। ওই দিন বেলা আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে মতিঝিল মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে অনুসারীদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে পৌঁছামাত্র মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর এক সহযোগী চলন্ত অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।

গুলিবিদ্ধ হাদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং পরে ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। প্রাথমিক এজাহারে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও হাদির মৃত্যুর পর ২০ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদের নির্দেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৪
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। আজ রোববার বঙ্গভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

শপথ অনুষ্ঠানে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, অন্যান্য উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইনসচিব লিয়াকত আলী মোল্লার সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

১৯৮৫ সালে জুবায়ের রহমান চৌধুরী জজকোর্টে এবং ১৯৮৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হন জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১১
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ১৩০ কোটি খরচ না করায় ক্ষতি ৩০০০ কোটি টাকা

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সাড়ে চার বছর বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাবে দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অথচ যে জেনারেটরের অভাবে উৎপাদন চালু করা যাচ্ছে না সেটি প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান অবস্থায় নতুন জেনারেটর ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুনরায় উৎপাদনে যেতে অন্তত আরও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে কেন্দ্রটির লোকসানের অঙ্ক আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।

বিপিডিবি সূত্র জানায়, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫ মেগাওয়াট। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন হয় প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ৪৪ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ৫ টাকা ৪০ পয়সা। বিপরীতে বিদ্যুতের বর্তমান বিক্রয়মূল্য আবাসিক খাতে ৮ টাকা ৫৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে ১৩ টাকা ১ পয়সা। সব মিলিয়ে গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৭৭ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে কেন্দ্রটির গড় লাভ হয় ৫ টাকা ৩৩ পয়সা। এই হিসাবে কেন্দ্রটি চালু থাকলে মাসে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে লাভ হতো প্রায় ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

জেনারেটরসহ অন্যান্য যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে গত সাড়ে চার বছরে বিপুল এই সম্ভাব্য আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংশ্লিষ্ট হিসাব অনুযায়ী, এ সময় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি উৎপাদন শুরু করে। প্রায় ১৩ বছর নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জেনারেটর ও অন্যান্য যন্ত্রাংশে গুরুতর ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিক মেরামতের পর উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ২০২৩ সালের আগস্টে কেন্দ্রটির জেনারেটর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশেষজ্ঞরা মত দেন, জেনারেটর ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আর মেরামতযোগ্য নয়। নতুন যন্ত্রপাতি ছাড়া কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস টারবাইন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনা হলেও জেনারেটর সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেগুলো এখনো স্থাপন করা যায়নি।

শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম হায়দার তালুকদার জানান, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ২১০০তম সভায় নতুন জেনারেটর কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন আরোপিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০২৫ অনুসরণ করে জেনারেটর ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেনারেটর কেনায় বিলম্ব ও দীর্ঘদিন প্ল্যান্ট বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টে আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরপরই জেনারেটর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে জার্মানির সিমেন্সের বিশেষজ্ঞ দল আসতে দেরি হয়। পরবর্তীকালে তারা মত দেয়, জেনারেটরটি আর মেরামতযোগ্য নয়। এরপর বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে নতুন জেনারেটর কেনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পিপিআর-২০২৫ কার্যকর হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। এতে অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

কেন্দ্রসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শিডিউলভিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে টারবাইন, কম্প্রেসার ও কম্বাশন চেম্বারের মেজর ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রের ভান্ডারে মজুত রয়েছে। তবে জেনারেটর সমস্যার কারণে টারবাইন অংশের ওভারহোলিং শেষ করা সম্ভব হয়নি।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নতুন জেনারেটর কিনতে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে জেনারেটর স্থাপন শেষে পুনরায় উৎপাদনে গেলে কেন্দ্রটি থেকে আগের মতোই বছরে প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বন্ধের প্রভাব ২২৫ মেগাওয়াট প্ল্যান্টেও বিপিডিবির অধীনে চট্টগ্রামে মোট সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অবস্থিত, যার দুটি ১৫০ ও ৬০ মেগাওয়াটের পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং একটি ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্ট। এর মধ্যে ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে এবং ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ আছে গত সাড়ে চার বছর ধরে। বর্তমানে শুধু কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দীর্ঘদিন ১৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় পার্শ্ববর্তী ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপরও চাপ বেড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওভারহোলিং প্রয়োজন হলেও বিদ্যুতের চাহিদার কারণে গত পাঁচ বছর কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখতে হয়েছে। ফলে ওভারহোলিং করা সম্ভব হয়নি।

বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট এড়াতে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ওভারহোলিং নিশ্চিত করতে হলে ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি দ্রুত উৎপাদনে আনা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত