Ajker Patrika

নেত্র নিউজের অনুসন্ধান

এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি: কে এই রহস্যময় ‘মিস্টার জি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৫৬
এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি এই রহস্যময় ‘জি’ সম্পর্কে দেশে কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি। ছবি: নেত্র নিউজ
এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি এই রহস্যময় ‘জি’ সম্পর্কে দেশে কোনো তথ্য প্রকাশ হয়নি। ছবি: নেত্র নিউজ

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে একটি বৈঠকে ফরাসি প্রযুক্তি সংস্থা ওবার্থারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক রহস্যময় ব্যক্তিকে, যার কোড নাম ছিল ‘মিস্টার জি’। আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ হলেও, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রকল্পের বিষয়ে তাদের সহযোগিতা অনেক আগেই নীরবে শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই ‘মিস্টার জি’, যিনি কোটি কোটি টাকা ঘুষ পকেটে ভরতে প্রস্তুত ছিলেন, তিনিই একটি বহুস্তরীয়, সুসংগঠিত দুর্নীতির নেটওয়ার্ককে একসূত্রে গেঁথেছিলেন।

এই লন্ডন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়ার অন্তত এক মাস পর। বিশ্বব্যাংক এই নেটওয়ার্কের ওপর নজর রাখে। এখানে তারা যোগসাজশ ও ঘুষের সন্দেহ করছিল। ওবার্থারের একজন কর্মী বিশ্বব্যাংককে জানিয়েছিলেন, ‘মিস্টার জি’-কে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল এবং অনুমান করা যেতে পারে এই ব্যক্তির কিছু প্রভাব রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাত সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এবং একটি ফরাসি নিষ্পত্তি নথিতে তাঁকে কেবল ‘জি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জড়িতদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ চিঠিপত্রে তাঁকে ‘জেনারেল’ বলা হতো। তিনি মূলত একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, যিনি প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা হয়েছিলেন এবং ট্রেডমার্ক গোঁফের জন্য পরিচিত ছিলেন। তবে ‘মিস্টার জি’-এর নাম কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

এই ‘মিস্টার জি’ কে?

বাংলাদেশি সাংবাদিকদের পরিচালিত সুইডেন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ বছরের পর বছর ধরে, ওয়াশিংটন, প্যারিস, লন্ডন, জেনেভা এবং ঢাকা জুড়ে এই ঘটনার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেছে। তারা একটি আন্তর্জাতিক দুর্নীতির পরিকল্পনার প্রতিটি অংশকে এক জায়গায় জড়ো করেছে। হাজার হাজার পৃষ্ঠার আদালতের নথি, সম্পত্তির রেকর্ড, করপোরেট পাবলিকেশন, সরকারি মেমো এবং সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে, পরিচালিত অনুসন্ধানে তারা একটি আন্তর্জাতিক ঘুষের ঘটনা উন্মোচিত করেছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ দেশের ভেতরে প্রায় অজানাই থেকে গেছে। যদিও এটি বিদেশে উন্মুক্ত রেকর্ড ও নথিপত্র এবং আইনি সিদ্ধান্তে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে দেখেছে, ঘটনা পরম্পরা ও ব্যক্তির বিবরণ শুধু একজন ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মেলে, তিনি মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় এবং ১৫ বছর ধরে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সাতজন আনুষ্ঠানিক উপদেষ্টার মধ্যে—যাদের সবাই মন্ত্রীর পদমর্যাদার ছিলেন—তারেক সিদ্দিকীই একমাত্র সামরিক বাহিনীর ব্যক্তি ছিলেন। সেই সময়ে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যার গোঁফ ছিল!

বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারীরা কোড-নেমটিকে ই-মেল, টেক্সট মেসেজ এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য ব্যবহার করে একজন বাস্তব ব্যক্তির সঙ্গে মিলিয়েছেন। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সতর্ক করার পর ফরাসি প্রসিকিউটররা ওবার্থারের প্যারিস সদর দপ্তরে অভিযান চালান এবং আরও প্রমাণ জব্দ করেন।

যেভাবে দুর্নীতি হয়

এনআইডি প্রকল্পের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় ২০১১ সালে। ওই সময় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ডিজিটালাইজড বায়োমেট্রিক ভোটার-নিবন্ধন প্রকল্পের জন্য ১৯৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন করে। যদিও নির্বাচন কমিশন এই চুক্তির তদারকি করছিল, এর প্রকল্প ইউনিটে মূলত সামরিক কর্মকর্তারা বেসামরিক দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। এই সামরিক ব্যাক-চ্যানেলটি পরে সিদ্ধান্তমূলক ছিল বলে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ, নেপথ্যে থেকে তাঁরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।

কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক কাজ করার পর, কমিশন ২০১৪ সালের এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করে। প্যারিস-ভিত্তিক নিরাপত্তা-মুদ্রণ সংস্থা ওবার্থার টেকনোলজিস এই কাজ পায়। এর বাংলাদেশি সাব-কন্ট্রাক্টর ছিল টাইগার আইটি। এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন জনৈক জিয়াউর রহমান। বিশ্বব্যাংকের তদন্তকারীরা পরে আবিষ্কার করেন, প্রথম দরপত্র জমা দেওয়ার অনেক আগেই সবকিছু সাজানো হয়ে গিয়েছিল।

দরপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আট মাস আগে, জিয়াউর রহমান ওবার্থার এবং অন্য একটি সরবরাহকারীকে ভবিষ্যতের চুক্তির গোপনীয় শর্তাবলি ও বিবরণের একটি অনুলিপি ই-মেইল করেছিলেন। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠেকিয়ে দেওয়া যায় এমন ধারাগুলোতে তাদের মতামত চাওয়া হয়। তিনি উভয় কোম্পানিকে কাজে লাগিয়ে দরপত্রটিকে এত সুনির্দিষ্টভাবে পুনর্গঠন করেছিলেন যে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলো শর্তাবলি পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হবে।

তদন্তকারীরা উপসংহারে পৌঁছেছেন, জিয়াউর রহমানের এই বিশেষ অভ্যন্তরীণ তথ্য প্রাপ্তি তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কারণে সম্ভব হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের একজন আত্মীয় নেত্র নিউজকে জানিয়েছেন, তিনি সেই সময় জেনারেল সিদ্দিকীর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না থাকা সত্ত্বেও, তারেক সিদ্দিকী সেনাবাহিনী-পরিচালিত এই প্রকল্পের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন।

নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চুক্তিটি চূড়ান্ত করে এবং এক মাস পরে স্বাক্ষর করে। এর পরপরই, তারেক সিদ্দিকী মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিশ্চিত করেন, যাতে কার্ডের অর্ডার ৭০ মিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৯০ মিলিয়ন করা যায়। এর বিনিময়ে, ওবার্থার ৭ লাখ ৩০ হাজার ইউরো ঘুষ দিতে সম্মত হয়। কৌশল হিসেবে এই বিলটি ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর নামে দেওয়ার কথা হয়, যদিও কোনো প্রশিক্ষণ হয়নি। ফরাসি তদন্তকারীরা এই অর্থ প্রদানের তথ্য ২০১৫ সালের মার্চে খুঁজে পান।

বিশ্বব্যাংক এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষের নথি অনুসারে, সেই সেপ্টেম্বরে একটি দ্বিতীয় এবং আরও লাভজনক চুক্তি হয়। ওবার্থার প্রাথমিকভাবে জাল-বিরোধী হলোগ্রামের জন্য ২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ইউরো দেয়, এই খরচ ছিল বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। এই অর্থ প্রদান জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন একটি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডেকাটুরের ব্রিটিশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফরাসি আদালতের নথিপত্র এই কৌশলটি ব্যাখ্যা করেছে এভাবে: ‘এই সেট-আপ টাইগার আইটি এবং ডেকাটুরকে ওবার্থারের কাছে উচ্চ মূল্যে উপকরণ বিক্রি করতে এবং অতিরিক্ত অর্থ “জি” হিসাবে চিহ্নিত একজন বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে সহায়তা করে।’

১০ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরোর হলোগ্রাম চুক্তির প্রায় অর্ধেক—প্রায় ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউরো—তারেক সিদ্দিকীর জন্য নির্ধারিত ছিল বলে ফরাসি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, ওবার্থারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা পুরো অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিলেন। অভ্যন্তরীণ ই-মেইলগুলোতে দেখা গেছে, একজন নির্বাহী অন্যকে সতর্ক করেছিলেন: ‘আমাদের শেষ পর্যন্ত কিছু সুবিধা ধরে রাখতে হবে।’ অন্যথায়, তিনি সতর্ক করেছিলেন, জেনারেল ‘আর কোনো কিছু পরোয়া করবেন না।’ সেই অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে চারটি কিস্তিতে মোট ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে সেই পর্যায়ে তারেক সিদ্দিকীর সম্ভাব্য ভাগ ছিল প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরো।

এদিকে, প্যারিস এবং লন্ডনে, যখন আইনজীবীরা এবং পুলিশ হিসাবপত্র এবং যোগাযোগের চেইন নিয়ে কাজ করছিল, তখন তাদের নিজ নিজ সরকার সেই জেনারেলকেই প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। ২০২০ সালের প্রথম দিকে—একটি চলমান দুর্নীতি তদন্তের কয়েক বছর পরেও—ফ্রান্সের বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাভিন ঢাকা সফর করেন এবং তারেক সিদ্দিকীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেন। এই সফরই পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লির ঢাকা সফর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর পারস্পরিক রাষ্ট্রীয় সফর, ড্যাসল্ট রাফাল যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির জন্য ফ্রান্সের আগ্রাসী প্রচেষ্টার অংশ ছিল। তারেক সিদ্দিকী, কার্যত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের কেনাকাটার আলোচনায় তিনি নির্ধারক প্রভাব রাখতেন।

ব্রিটিশ সরকারও বেশ তৎপর ছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে, বিশ্বব্যাংকের রেফারেলের ভিত্তিতে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জিয়াউর রহমানের মালিকানাধীন লন্ডনের অফিস এবং দুটি ফ্ল্যাটের একটিতে অভিযান চালায়। টাইগার আইটি অস্বীকার এই অভিযানের কথা অস্বীকার করলেও স্বীকার করে যে, এনসিএ সেই সময় জিয়াউর রহমানের কাঠ থেকে নথি ‘সংগ্রহ’ করেছিল। এই সম্পত্তিগুলো—যার মধ্যে ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি ফ্ল্যাটও ছিল—তাঁর কোম্পানি এনআইডি চুক্তি জেতার অল্প সময়ের মধ্যে অর্জিত হয়েছিল। এনসিএ কয়েক মাস পরে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে যখন সতর্ক করে, তখন তারা তদন্ত আরও জোরালো করে। তাদের তদন্ত আরও প্রায় পাঁচ বছর ধরে সমান্তরালভাবে চলতে থাকে। তারা লাখ লাখ কাগজের নথি এবং ইলেকট্রনিক নথি পরীক্ষা করে।

এনসিএ-এর তদন্তের অগ্রগতি সত্ত্বেও, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ২০১৯ সালের শেষ থেকে ২০২০ সালের প্রথম দিকের মধ্যে অন্যান্য ইউরোপীয় দূতের সঙ্গে মিলে তারেক সিদ্দিকীকে ইউরোফাইটার টাইফুন কেনার তদবির করার জন্য চাপ দেন। এটি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেনের যৌথ নির্মিত একটি কনসোর্টিয়াম যুদ্ধবিমান। তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস আরও এক ধাপ এগিয়ে শেখ হাসিনাকে বরাবর একটি চিঠির অনুমোদন করেন। নেত্র নিউজ সেই চিঠি দেখেছে। বাংলাদেশ এই বিমানটি কিনলে, ‘শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা’র প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে।

এই মামলার আইনি লড়াই দীর্ঘায়িত ছিল এবং একাধিক বিচারব্যবস্থায় বিস্তৃত ছিল। কারণ উভয় কোম্পানি নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী নিয়োগ করে। ফলে প্রসিকিউটরদের মামলার নথি তৈরিতে বেগ পেতে হয়।

২০১৬ সাল নাগাদ, ওবার্থার এবং টাইগার আইটির মধ্যে অংশীদারত্ব—যা পাঁচ বছর আগে একটি অনুরূপ সরকারি প্রকল্পের সহযোগিতার মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল—ভেঙে পড়তে শুরু করে। বিশ্বব্যাংক বিষয়টি জানালে, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে এবং বছরের শেষ নাগাদ, জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে নথি চায়।

এ সময় টাইগার আইটি দ্রুত ঢাকায় তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়। যেখানে ওই সময় ঢাকায় প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক প্রভাব সবখানে বিস্তার লাভ করেছে। ২০১৭ সালের প্রথম দিকে, কোম্পানিটি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি স্থানীয় আদালতে ব্যবসায়িক অংশীদারের বিরুদ্ধে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের মামলা করে।

কয়েক মাসের মধ্যে, এনসিএ বিষয়টি ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করে। এরপর তারা দ্রুত ওবার্থারের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে।

পরে ২০১৯ সালে, বিশ্বব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা বোর্ড তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রায় প্রকাশ করে, ঘুষের পরিকল্পনাটি বিশদভাবে তুলে ধরে। টাইগার আইটিকে নয় বছরেরও বেশি সময়, ওবার্থারকে তিন বছরের জন্য এবং জিয়াউর রহমানকে—তাঁর বেশ কয়েকটি বিদেশি-নিবন্ধিত কোম্পানিসহ—নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।

তবে, তারেক আহমেদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে, জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামীর ভাই। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁকেও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এর কোনোটিই এনআইডি সংক্রান্ত মামলা নয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিল নেত্র নিউজ। কিন্তু তারেক সিদ্দিকী মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

বিশ্বব্যাংকের ইনটিগ্রিটি ভাইস-প্রেসিডেন্সি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে। ওবার্থারের উত্তরসূরি আইডিইএমআইএ জানিয়েছে, কোম্পানিটি তদন্তে সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করেছে এবং দোষ স্বীকার না করেই মামলা নিষ্পত্তি করেছে। টাইগার আইটি জানিয়েছে, তারা ‘দৃঢ়ভাবে যেকোনো ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে।’

এদিকে, তারেক সিদ্দিকীর পরিবার দেশে এবং বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। গত জানুয়ারিতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকী, তাঁর এবং তাঁদের মেয়ের জন্য একাধিক ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক স্টেটমেন্টে তাঁর নামে ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার দেখিয়ে গোল্ডেন ভিসা পাওয়া চেষ্টা করেছিলেন। নেত্র নিউজ অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব যাচাই করেছে এবং তাঁর নামে মালয়েশিয়ান আরও রিয়েল-এস্টেট হোল্ডিং খুঁজে পেয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ভূমি রেজিস্ট্রি রেকর্ড অনুযায়ী, তাঁদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকী ২০১৮ সালে তাঁর স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি বাড়ি কিনেছিলেন। কলেজ শেষ করার মাত্র দুই বছর পর এবং একটি ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শেষ করার কয়েক মাস পরেই এটি কেনা হয়। তবে, কথিত ঘুষের টাকায় সম্পত্তিটি কেনা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেত্র নিউজ পায়নি।

এদিকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক উপদেষ্টা হিসেবে তারেক সিদ্দিকীর বেতন বছরে ৪০ হাজার ডলারের বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ তিনি রাজধানীর দুটি অভিজাত এলাকা, বারিধারা এবং গুলশানে একটি বহুতল বাড়ি এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরায় তিনটি আবাসিক প্লট, দুটি বাংলো এবং রাজধানীর উপকণ্ঠে ১৬ একর জমির মালিক হয়েছে। সরকারিভাবে, এই সম্পদের মূল্য ৩৮ কোটি টাকা বলে অনুমান করা হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষিণ সুদানে যাত্রা করলেন নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান’ (আনমিস)-এ নিয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ জন নৌসদস্য আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে রওনা হন। এই কন্টিনজেন্ট সেখানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এর আগে ৯ ডিসেম্বর প্রথম গ্রুপে ৯৯ জন নৌসদস্য এই মিশনে যোগ দিতে দেশ ছাড়েন।

দক্ষিণ সুদানের প্রতিকূল ও দুর্গম এলাকায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—নীল নদের নৌপথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা। নৌপথে জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণ ও তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। স্থানীয় জনগণের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা এবং বেসামরিক নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ উদ্ধার এবং মিশনে নিয়োজিত সামরিক-বেসামরিক সদস্যদের রসদসামগ্রী দুর্গম স্থানে পৌঁছে দেওয়া।

এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর
এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। নীল নদের ১ হাজার ৩১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখন পর্যন্ত ৭১টি লজিস্টিক অপারেশন (অপারেশন লাইফ লাইন) সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন নৌসদস্যরা।

দক্ষিণ সুদান ছাড়াও লেবাননের ভূমধ্যসাগরে উপমহাদেশের একমাত্র মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’ নিয়োজিত রয়েছে। নৌবাহিনীর এই গৌরবময় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম উজ্জ্বল করছে।

উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই-তে সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউএন ঘাঁটি আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত ও আটজন আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানুয়ারির মাঝামাঝি সাংবাদিকদের মহাসম্মেলনের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ।

তিনি জানিয়েছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুন এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে এ মহাসম্মেলন করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আজ সোমবার প্রতিবাদ সভায় এ কে আজাদ এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যমের কার্যালয়ে যখন হামলা হলো, তখন ডেইলি স্টার সম্পাদক সরকারের সব সংস্থাকে অনুনয় করেছিলেন নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু কারও সাহায্য তিনি পাননি।

সভায় নোয়াব সভাপতি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম আলোতে প্রথম আগুন দেওয়া হয়। তখনই ডেইলি স্টার সম্পাদক আশঙ্কা করেছিলেন এরপরে হামলাকারীরা ডেইলি স্টারে যাবে। তখন তিনি সরকারের এমন কোনো সংস্থা নাই, এমন কোনো ব্যক্তি নাই, যাকে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করেন নাই যে আপনারা ডেইলি স্টারের সামনে ‘প্রোটেকশন’ দেন। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য সাড়া পাননি। যখন পেয়েছেন পোড়ার পরে পেয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ কে আজাদ আরও বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক যখন অসহায়ের মতো নিচে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর সামনে দিয়ে লুটকারীরা কম্পিউটার, চেয়ার, মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে তখন আইনশৃঙ্খলার সমস্ত বাহিনী ছিল। কিন্তু বাহিনীগুলোর কেউ একটা প্রতিবাদ করেনি।

নোয়াব সভাপতি আরও বলেন, সেই রাতে ডেইলি সম্পাদক তাঁকে জানান, ভবনটিতে ২৮ থেকে ২৯ জন আটকা পড়েছিল। আর ১৫ মিনিট আগুন জ্বললে তাদের অনেকেই সেই ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেত।

একে আজাদ বলেন, আমরা এভাবে মারা যেতে চাই না। এভাবে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না।

প্রতিবাদ সভায় জানানো হয়, সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মহাসম্মেলন আয়োজন করা হবে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উদীচী, ছায়ানটে যারা আগুন দিয়েছে যত দিন তাদের বিচার না হবে, সাংবাদিকেরা যত দিন মত প্রকাশের স্বাধীনতা না পাবে, তত দিন পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে শুধু প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নয়, আজকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। তাই গণতন্ত্রী সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার, প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন স্টাফ ভবনের ভেতরে আটকে ছিল, ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল।

প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

বাসস, ঢাকা  
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সোমবার ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব নিরসন করা প্রয়োজন। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, রাশিয়া দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। খোজিন বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হওয়া উচিত।’ বর্তমান পরিস্থিতিকে আর বাড়তে না দেওয়ার বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক করেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। রাষ্ট্রদূত খোজিন আশা প্রকাশ করেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচনের আগে দেশে একটি অনুকূল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়া এ বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য তারা এখন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

২০২৬ সালের হজে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধনকারীদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত হজ-১ শাখা থেকে জারিকৃত পত্রে বলা হয়েছে, ‘হজ ২০২৬-এর সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমাদানপূর্বক প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইন ২০২৬ অনুযায়ী প্রত্যেক হজযাত্রীকে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে জমা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, হজ ২০২৬ এর যে সকল হজযাত্রী নির্বাচিত প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ জমা প্রদান করেননি তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ জমা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ সময়ের মধ্যে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা না দিলে সেই হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত