Ajker Patrika

পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা

  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হওয়াকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলছেন বিশ্লেষকেরা।
  • সব মিলিয়ে একটি ভালো সফর হয়েছে: প্রেস সচিব
  • ইউনূস-তারেক বৈঠককে রাজনীতির জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ০৮: ২৭
ছবি: পিআইডি
ছবি: পিআইডি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি মাসে চার দিনের সরকারি সফরে লন্ডন ঘুরে এসেছেন। মূল উপলক্ষ ‘কিং চার্লস থ্রি হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ হলেও পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি কর্মসূচির কারণে বেশ আলোচনায় এসেছে তাঁর এই সফর। প্রধান উপদেষ্টার আলোচিত এই লন্ডন সফরের অর্জন নিয়ে যেমন কথা হচ্ছে, তেমনি কিছু বিষয়ে কূটনৈতিক ব্যর্থতাও দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি সফরে ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডন ছিলেন। এই চার দিনে তিনি ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও পার্লামেন্টের স্পিকার ডেভিড হোয়েলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কিং চার্লস থ্রি হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ এবং চ্যাথাম হাউসে বক্তৃতা করেন। এর বাইরে তাঁকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১৫টি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি ছিল। তবে তাঁর এই সফরে রাজনৈতিক কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক। দুজনের এই বৈঠককে দেশের রাজনীতির জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে গত রোববার বলেন, বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানসহ বড় ধরনের যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, কিং চার্লস থ্রি হারমনি অ্যাওয়ার্ডটি তার একটি স্বীকৃতি। ব্রিটিশ রাজা চার্লস ও স্পিকারের সঙ্গে সরকারপ্রধানের মতবিনিময় হয়েছে। একান্ত বৈঠক হওয়ায় এই দুই বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। এর বাইরে পাচার হওয়া অর্থসম্পদ ফেরানোর বিষয়ে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রীর (সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ) ব্রিটেনের সম্পদ জব্দের ঘোষণা এসেছে। আর প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠকটি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভালো বার্তা দেবে। সব মিলিয়ে একটি ভালো সফর হয়েছে।

প্রেস সচিব অর্জনগুলো তুলে ধরলেও প্রধান উপদেষ্টার এই লন্ডন সফরে কিছু কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছিল বলে মনে করে কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা। আর এই মূল্যায়নটি এসেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক না হওয়াকে ঘিরে।

১০ মাস আগে গত আগস্টে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাজ্যে যাওয়া ছিল মুহাম্মদ ইউনূসের ১১তম সফর। এসব সফরের প্রায় সবগুলোই ছিল বহুপক্ষীয় কর্মসূচিতে যোগদান। এমন কর্মসূচিতে চীনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক এবং জাপানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে ইউনূসের। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও লন্ডনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না হওয়ায় বেকায়দা পরিস্থিতি তৈরি হয় এবার।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চূড়ান্ত না করে এ নিয়ে ‘আওয়াজ’ তুলে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর।

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে কিয়ার স্টারমারের অস্বীকৃতি জানানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন অতিথি সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানানো সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্যদিকে, দেশটির ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি ও নিজের নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন [সাবেক] মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলে তা ফেরত চাওয়া হতে পারে—এমন আশঙ্কা দেখলে যুক্তরাজ্যের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে রাজি হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই তাঁর কার্যালয় নিশ্চিত করার আগেই বৈঠক হওয়ার কথা বলে বেড়ানো ছিল কূটনৈতিক বিচারে বড় রকম ভুল।

সরকারি কয়েকটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘সাক্ষাৎ হওয়ার’ বিষয়টি আগেই নিশ্চিত করা ছিল। লন্ডনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ সাক্ষাতের স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেন ব্রিটিশরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা সরকারপ্রধানের জন্য শোভন নয়, এটা ব্রিটিশদের জানানো হয়। অন্যদিকে ল্যামি হোটেলে এসে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি হননি। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটিশরা তৃতীয় একটি স্থানে ইউনূসের সঙ্গে ল্যামির সাক্ষাতের প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁদের আর সাক্ষাৎ হয়নি। ল্যামি অবশ্য পরে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টকে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে হোটেলে সাক্ষাতের জন্য পাঠান।

কেন এ দুটি বৈঠক হলো না, এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষ প্রশ্ন তুললে ব্রিটিশরা কূটনৈতিক চ্যানেলে জানান, সফরটি মূলত কিং চার্লস থ্রি হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের জন্য। তারপরও বাংলাদেশ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য ব্রিটিশ রাজা ও পার্লামেন্টের স্পিকারের সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের সুযোগ চাওয়ায় সে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ অন্য কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হোটেলে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এর বাইরে যেহেতু সফরটি দ্বিপক্ষীয় নয়, সে কারণে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বৈঠক করবেন না। একই কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোটেলে গিয়ে সফরকারী অতিথির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না।

যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও লেবার পার্টিতে টিউলিপ, স্টারমার ও ল্যামির অবস্থান একই ঘরানায়। এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, কিয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে কারণে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেননি; একই কারণে ডেভিড ল্যামিও সাক্ষাৎ করেননি। প্রধানমন্ত্রী যা করেননি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি কেন তা করে রাজনৈতিক ঝুঁকি নেবেন?

এদিকে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক তাঁর নিজের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থান করাকে একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হিসেবে দেখছেন। গত রোববার এক এক্স পোস্টে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত সপ্তাহে লন্ডনে অবস্থান করাকে বিস্ময়কর ব্যাপার হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই সফরে গণতান্ত্রিক সংস্কার, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, জলবায়ু, রোহিঙ্গা সমস্যাসহ পারস্পরিক আগ্রহের অনেক বিষয় আলোচনায় এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা 
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় আজ রোববার পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেছেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের উপদেষ্টা সম্পাদক কামাল আহমেদ, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠান দুটির ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদ থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সহিংসতা ও হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় সরকার এর ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকা উচিত। দেশ গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকা প্রকাশের সক্ষমতা বড় সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের পরিচয়। মিডিয়া সত্য তুলে ধরবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়াবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে থাকা ‘সন্তানের আয়’ দেখানোর বাধ্যবাধকতা বিষয়ে স্পষ্টতা চেয়ে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এর পরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

আজ রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আরপিওতে না থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্রে সন্তানেরও আয়ের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে। যেটা নিয়ে সব জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেকের সন্তানেরা নিজেরাই উপার্জনক্ষম এবং তাঁরা নির্ভরশীল নন। অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। অনেকেই নিজেরা আলাদাভাবেই ট্যাক্স দেন। এই বিষয়টা নিয়ে একটা জটিলতা হয়ে গেছে। যার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি এবং কথা বললাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন নির্ভরশীল সন্তানদের বুঝিয়েছেন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দেবেন যে, এই ‘সন্তান’ শব্দটার অর্থ হলো ‘নির্ভরশীল সন্তান’।

সিইসির সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠকের পর বিষয়টি স্পষ্ট করে বিকেলে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হলফনামার ক্রম ১০-এ আয়কর সংক্রান্ত তথ্যে সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন জমার বিবরণ অংশে প্রদত্ত ছকের ক্রমিক ২,৩ ও ৪ এ উল্লিখিত যথাক্রমে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও নির্ভরশীলদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক মর্মে বিবেচিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, হাদি হত্যার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে (৭ জানুয়ারি) এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি ইতিমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ না করলেও উপদেষ্টা বেশ কিছু অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু এবং প্রেমিকা মারিয়া আক্তার লিমা রয়েছেন। এ ছাড়া মো. কবির, নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসিম, মো. আমিনুল ইসলাম রাজু এবং মো. আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জন এবং ৪ জন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা এবং ভুয়া নম্বর প্লেটসহ একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য আলামত পুলিশের হাতে রয়েছে।

তদন্তে ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মোট ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুষ্কৃতকারীরা ওত পেতে আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করব—দলের ভেতরে খোলস পাল্টানো সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করুন। তাঁরা যেন আপনাদের দলে আশ্রয় না পায় সে বিষয়ে সচেতন হোন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন।’

কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। উপদেষ্টা জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে (অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২) এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম।

উপদেষ্টা ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় র‍্যাব ও পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষ্মীপুর নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের মূল আসামি রুবেল এবং খুলনায় শ্রমশক্তি নেতা মোতালেব সিকদারকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘হাদি হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অনবরত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির খুনিদের আশ্রয় দেওয়া দুই ভারতীয়কে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ: ডিএমপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৭
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার ঘটনায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি বলেছে, ‘এই হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে গেছে। ভারতে তাদের যারা আশ্রয় দিয়েছিল, সেই দুজনকে আটক করেছে মেঘালয় পুলিশ।’

আজ রোববার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এবং অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ফয়সাল করিম দাউদ ওরফে রাহুল ও তার সহযোগী আলমগীর শেখের সহযোগী ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, চারজন সাক্ষী হয়েছেন।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী ছিল—এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, তদন্তে যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, সেই মোতাবেক এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল, মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছে। আমাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পাচারে সহায়তার অভিযোগে সেখানকার দুজনকে আটক করেছে।’

মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামে ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে বলে জানান নজরুল ইসলাম।

এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাদির হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার পর ফয়সাল ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে সিএনজিতে (অটোরিকশা) করে আমিনবাজারে যান। সেখান থেকে গাড়িতে করে কালামপুড়ে যান। কালামপুর থেকে আরেকটি গাড়িতে করে ময়মনসিংহ সীমান্তে যান। সেখানে ফয়সাল ও আলমগীরকে গ্রহণ করে ফিলিপ স্নাল ও সঞ্জয়। তাঁরা সীমান্তে অবৈধভাবে মানুষ পারাপার করেন। পরে ফিলিপ দুজনকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে নিয়ে যান।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ফিলিপ ফয়সাল ও আলমগীরকে ভারতের তুরা নামক স্থানে নিয়ে যান। সেখানে ভারতীয় নাগরিক পুর্তির কাছে দুজনকে পৌঁছে দেন। পরে সামী নামের এক ব্যক্তির গাড়িতে করে সেখান থেকে পালিয়ে যান তাঁরা।

একই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট (২০২৪) যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারাই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত